02-03-2020, 01:21 PM
পর্ব-৬
স্যামন্তক আর বন্দনা বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে। বাইকে স্টার্ট দিয়ে বন্দনাকে পেছনে বসতে ইশারা করে স্যামন্তক। বন্দনা বাইকের পেছনে চেপে বসলো, আলতো করে ডান হাথটা ওর কাঁধে রেখে নিজেকে ব্যালেন্স করে বসে একটু দুরত্ব রেখে। কারুর মুখে কোনও কথা নেই, দুজনেই চুপ। রাত তখন এগারোটা বাজে। জিটি রোড ধরে বাইক চালায় স্যামন্তক, সামনে থেকে পেছন থেকে শুধু ট্রাক আসা যাওয়া করছে। ভারি ট্রাকের ঘড়ঘড় আওয়াজে রাতের নিস্তব্ধতা খানখান হয়ে যাচ্ছে। চারদিকের হিমেল হাওয়া বন্দনার উষ্ণতা উরিয়ে নিয়ে যায়। ওর পরনের কার্ডিগান টা ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা কে রুখে রাখতে পারেনা। পেছনে বসে কাঁপতে থাকে বন্দনা, তাও নিজেকে স্যামন্তকের সাথে জড়িয়ে ধরতে চায়না। দুজনের মাঝের শীতল নীরবতা, বন্দনার হৃদয়ে পেরেকের মতন ফুটতে থাকে।
স্যামন্তক ভাবে, “যা হবার হয়ে গেছে একবারের জন্যও মাফ করে দাও।“ ইচ্ছে করেই একটু ব্রেক দেয় স্যামন্তক, আলতো করে স্যামন্তকের ডান কাঁধে চাপ দেয় বন্দনা, সামনের দিকে একটু ঝুঁক পরে কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে নেয় বন্দনা ওর ওপরে পরে যাবার আগে। স্যামন্তক বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারে বন্দনার মনের আলোড়ন।
গান্ধী মোড়ের কাছে এসে বাঁক নেবার আগে, স্যামন্তক বাইকটা আস্তে করে নেয়। বন্দনা তখনও চুপ করে বসে থাকে। একবারের জন্যও মনে হয় জিজ্ঞেস করে “কেনও থামাচ্ছো? সোজা বাড়ি চলো।“ বড় রাস্তা থেকে বাঁ দিকে মুড়ে বাইক থামিয়ে দেয় স্যামন্তক। বন্দনার নিজের চোয়ালটা শক্ত করে ফেলে একটু রাগ হয়। হেলমেটটা খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে বন্দনার দিকে তাকায় এক করুন চোখে। বন্দনার চোখ দিয়ে তখন আগুনের ফুল্কি ঝরে পরে ওর চাহনি দেখে, মনে মনে বলে ওঠে “আদিখ্যেতা দেখাচ্ছ না দয়া দেখাচ্ছ তুমি আমার ওপরে? তুমি কি ভাব নিজেকে।”
স্যামন্তক নিচু স্বরে বলে ওঠে—“আই এম সরি।”
“সরি বললে সব শেষ হয়ে যায়, তাই না।” ঝাঁঝিয়ে ওঠে বন্দনা।
“কি করতে হবে আমাকে বলো, আমি সেটা করবো।” কাতর স্বরে বলে স্যামন্তক।
“আমার সাথে কি নরমাল ব্যাবহার টুকু করা যায়না? আজ সকাল থেকে তুমি আমার সাথে এমন বিহেভ করছও যেন আমি অচ্ছুত কন্যা” বলতে বলতে গলা ধরে আসে বন্দনার। নিজের অজান্তেই স্যামন্তকের ডান কাঁধটা খামছে ধরে “আমি কি এমন করেছি তোমার সাথে যে তুমি আমার সাথে ঐ রকম বিহেভ করছও?”
বন্দনার ধরা গলা শুনে স্যামন্তকের মনটা কেমন গলে যায়। বাঁ হাতটা পেছনে বাড়িয়ে দিয়ে বন্দনার কোমরটা আলতো করে ছোঁয়। কোমরে স্যামন্তকের হাথের পরশ ও নিজের রাগটা ভুলে যায়, বুকের ভেতরটা একটু কেঁপে ওঠে, শিরশিরয়ে ওঠে ওর কোমল শরীর।
“আচ্ছা বাবা নরমাল বিহেভ করবো আমি। আজকের ব্যাবহারের জন্যও ক্ষমা করে দাও, প্লিস। ভুলে যাও আমি রাতে যা বলেছি বা জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে।” নিচু গলায় কাতর স্বরে বলে স্যামন্তক।
“হুম, ঠিক আছে ভুলে যাবো, এক সর্তে, যদি কাল আমার সাথে পুবালির বাড়িতে সারাদিন থাকো” বন্দনা বলে।
“কি যে বল না তুমি, সেটা কখন পসিবেল নয়। কাল বাড়িতে আমার অনেক কাজ, তত্ব সাজানো, কনেযাত্রীর গাড়ি, আর তুমি বল যে তোমার সাথে কাল থাকতে? মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার?” গলায় অবিস্বাসের সুর, স্যামন্তকের।
“যাও তাহলে আর কথা বলবো না।” অভমানি সুরে বলে বন্দনা, ডান হাত দিয়ে আলতো করে একটা চাঁটি মারে স্যামন্তকের মাথায়।
—“আরে বাবা একটু বুঝতে চেষ্টা করো আমার অবস্থা।”
—“তাহলে আমিও যাবনা।”
—“সেটা তোমার আর দিদির ব্যাপার। তবে এখন যদি আমরা বাড়ির দিকে না যাই তাহলে আমরা ঠাণ্ডায় জমে যাবো।”
ডান হাতটা কাঁধ থেকে নামিয়ে স্যামন্তকের কোমর জড়িয়ে ধরে বন্দনা, মনে মনে একটা কিন্তু নিন্তু ভাব থেকে যায়। বাঁ কাঁধের উপরে নিজের থুতনিটা রেখে নিচু গলায় বলে “চলো ঠাণ্ডা লাগছে।”
হেসে ওঠে স্যামন্তক, পিঠের ওপরে বন্দনার শরীরের হাল্কা উষ্ণতা ওর শরীরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয় “একদম পাগলী মেয়ে একটা তুমি।”
বাড়ি পৌঁছেই দেখে বড়দি দাঁড়িয়ে ওদের জন্য। বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করে—“কিরে এতো দেরি হল কেনও তোদের, পুবালি ফোন করে জানাল যে তোরা নাকি অনেকক্ষণ হল বেড়িয়েছিস?”
বন্দনা একবার স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বড়দির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ টিপে হাসতে থাকে। স্যামন্তক কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না—“বাইক পানচার হয়ে গেছিলো তাই দেরি হোল।” অগত্যা একটা অজুহাত দেখাতে হোল।
“তোরা কি খেয়ে এসেছিস ওদের বাড়ি থেকে?” বড়দি জিজ্ঞেস করে বন্দনাকে।
“না খাইনি এখনো।” বন্দনা উত্তর দেয়।
“তারাতারি খেয়েনে তোরা, সবার খাওয়া হয়ে গেছে” তারপরে বড়দি স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলল “পুবালিকে একটা ফোন করে দিস যে তোরা পৌঁছে গেছিস। কি যে করিস না তোরা।” বলে ভেতরে চলে গেলো বড়দি।
দিদিকে ফোন করতেই, পুবালি ঝাঁজিয়ে ওঠে—“দেরি কেন রে তোর।”
“টায়ার পানচার হয়ে গেছিলো তাই” একই অজুহাত দেখাতে হয় ওকে।
“টায়ার পানচার না তুই পানচার। বাড়ির এক মাত্র ছেলে, আমার একটি মাত্র ভাই সেটা একটু মনে রাখিস। ধুর তোর সাথে আমার এখন কথা বলতেও ইচ্ছে করছেনা।” দিদির বকা শুনে স্যামন্তক কি বোলবে কিছু ভেবে পেল না।
“আরে বাবা শোন তো আমার কথা, আমি কিছু করছি না বা কিছু ধরে বসিনি। আমি সব ঠিক করে নেবো, প্লিস তুই রাগ করিসনা সোনা মনা দিদি আমার।” একটু আব্দারের সুরে দিদি কে ঠাণ্ডা করার জন্য বলে স্যামন্তক।
“ঠিক আছে ঠিক আছে, বিশ্বাস করলাম। যা করবি কর তবে যেন একটা দুরত্ব বজায় থাকে সেটা মাথায় রাখিস।” সাবধান বানী শুনিয়ে পুবালি ফোন রেখে দেয়।
বন্দনা ড্রেস চেঞ্জ করে নেয়, একটা ঢোলা টি-শার্ট তার নিচে একটা লম্বা স্কার্ট। গায়ে একটা কালো রঙের শাল চাপিয়ে খাবার টেবিলে বসে পরে। স্যামন্তক হাত ধুয়ে খেতে বসে পরে। সবার খাওয়া দাওয়া আগেই শেষ, তাই ওরা দুজনে একা একা খেতে বসে টেবিলএ। চাকরটা খাবার রেখে যাবার পরে, বন্দনা থালাতে ভাত বেড়ে দেয়, তার সাথে ডাল তরকারি।
স্যামন্তক চুপচাপ দেখতে থাকে বন্দনাকে, ঝুঁকে পরিবেশন করার সময় স্যামন্তকের নজর বন্দনার সুডৌল বুকের ওপরে পরে, নরম ময়দার তালের মতন বলদ্বয় দেখে ওর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায় এক মুহূর্তে “মেয়েটা নিশ্চয় নিচে কিছু পরেনি তাই এতো নরম বুক দুটি ফেটে বের হচ্ছে।“
বন্দনার চোখ হটাৎ করে স্যামন্তকের দিকে পরে, ওর নজরটা দেখে কান, গাল গরম হয়ে ওঠে বন্দনার “আমাকে পুড়িয়ে দেবে নাকি ঐ দৃষ্টি দিয়ে?” বন্দনার বুকের ওপরে এক আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। চাদরটা একটু ভাল ভাবে জড়িয়ে নেয় বুকের ওপরে। স্যামন্তক চোখ নিচু করে ফেলে, ধরা পরে গেছে ও।
মা একবার উঠে দেখে যায়, জিজ্ঞেস করে—“তোর তো এই ক দিন দেখা নেই।“
“হ্যাঁ, তোমার মেয়ের বিয়েটা তো গাছ থেকে আম পারার মতন করে হয়ে গেলো তাই তো।” মায়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় স্যামন্তক।
“আমার পান শেষ। তোকে বলতে ভুলে গেছিলাম।” স্যামন্তকের মা স্যামন্তককে বলে।
“রাত বারোটায় মাথা খারাপ কোরোনা তো, পান না খেয়ে আজ শুয়ে পরো কাল এনে দেবো।” রেগে গিয়ে স্যামন্তক মা কে উত্তর দেয়।
খাওয়ার পালা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে স্যামন্তক টিভি চালিয়ে দেখতে থাকে। সবাই যে যার ঘরে শুয়ে পরেছে, ওর ঘরটা খালি। বন্দনা কিছুক্ষণ রান্না ঘরে বাসন পত্র সিঙ্কে রেখে ওর ডান পাশে একটু দুরত্ব রেখে বসে পরে।
কিছুক্ষণ পরে বন্দনা জিজ্ঞেস করে—“আমি শোবো কোথায়? কাল তো বড়দির ঘরে শুয়েছিলাম। তোমার যা দুটো দুষ্টু ভাগ্নি, বাবা রে বাবা। আজ আমি আর যাচ্ছি না ওখানে, আমার অন্য জায়গায় ব্যাবস্থা করো।”
“আমার ভাগ্নি দুটি মিষ্টি, দুষ্টু তো অন্য কেউ।” চোখ টিপে বন্দনাকে খ্যাপানোর জন্য বলে।
—“ও কে বাবা, ঠিক আছে আমি না হয় দুষ্টু। কাল তুমি কোথায় শুয়েছিলে?”
—“সোফায়, আবার কোথায় শোবো, সুবিমলদা আর সিতাভ্রদার বন্ধুরা মিলে তো আমার রুম তা কব্জা করে নিয়েছিলো কাল রাতে।”
“তাহলে আজ আমি তোমার রুমে শুয়ে পড়ি, প্লিস।” নাক মুখ কুঁচকে বন্দনা আবদার করে স্যামন্তকের কাছে।
মাথায় যেন বাজ পড়ল স্যামন্তকের, “মেয়েটা বলে কি, আমার রুমে শোবে মানে?” ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হাসে বন্দনার দিকে। চোখ নাচিয়ে বলে—“আর রাতে যদি ভুতে ধরে তখন টের পাবে।”
পা দুটি গুটিয়ে সোফার উপরে গুটিসুটি মেরে বসে, হাত দুটি দিয়ে নিজের হাঁটু জড়িয়ে ধরে বন্দনা। হাঁটুর ওপরে থুতনি রেখে স্যামন্তককে বলে “ঠাণ্ডা টা বেশ জম্পেশ পরেছে কি বলো?”
স্যামন্তক হাত দুটি কে ছড়িয়ে দেয় সোফার মাথার ওপরে, ডান বাজু বন্দনার পিঠের পেছনে আলতো করে ছুঁইয়ে দেয়। ছোঁয়া পেয়ে ভুরু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে বন্দনা। স্যামন্তক ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে “কি হোলও?”
স্যামন্তকের খুব সিগারেট খাবার ইচ্ছে করে, ও বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে “আমি সিগারেট খেতে ওপরে যাচ্ছি তুমি কি যাবে আমার সাথে?”
বন্দনা মাথা নাড়িয়ে বলে—“চলো যাই এতো রাতে টিভি দেখে কি করবো। তুমি বললে নাতো আমি কোথায় শোবো।”
চলবে....
স্যামন্তক আর বন্দনা বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে। বাইকে স্টার্ট দিয়ে বন্দনাকে পেছনে বসতে ইশারা করে স্যামন্তক। বন্দনা বাইকের পেছনে চেপে বসলো, আলতো করে ডান হাথটা ওর কাঁধে রেখে নিজেকে ব্যালেন্স করে বসে একটু দুরত্ব রেখে। কারুর মুখে কোনও কথা নেই, দুজনেই চুপ। রাত তখন এগারোটা বাজে। জিটি রোড ধরে বাইক চালায় স্যামন্তক, সামনে থেকে পেছন থেকে শুধু ট্রাক আসা যাওয়া করছে। ভারি ট্রাকের ঘড়ঘড় আওয়াজে রাতের নিস্তব্ধতা খানখান হয়ে যাচ্ছে। চারদিকের হিমেল হাওয়া বন্দনার উষ্ণতা উরিয়ে নিয়ে যায়। ওর পরনের কার্ডিগান টা ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা কে রুখে রাখতে পারেনা। পেছনে বসে কাঁপতে থাকে বন্দনা, তাও নিজেকে স্যামন্তকের সাথে জড়িয়ে ধরতে চায়না। দুজনের মাঝের শীতল নীরবতা, বন্দনার হৃদয়ে পেরেকের মতন ফুটতে থাকে।
স্যামন্তক ভাবে, “যা হবার হয়ে গেছে একবারের জন্যও মাফ করে দাও।“ ইচ্ছে করেই একটু ব্রেক দেয় স্যামন্তক, আলতো করে স্যামন্তকের ডান কাঁধে চাপ দেয় বন্দনা, সামনের দিকে একটু ঝুঁক পরে কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে নেয় বন্দনা ওর ওপরে পরে যাবার আগে। স্যামন্তক বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারে বন্দনার মনের আলোড়ন।
গান্ধী মোড়ের কাছে এসে বাঁক নেবার আগে, স্যামন্তক বাইকটা আস্তে করে নেয়। বন্দনা তখনও চুপ করে বসে থাকে। একবারের জন্যও মনে হয় জিজ্ঞেস করে “কেনও থামাচ্ছো? সোজা বাড়ি চলো।“ বড় রাস্তা থেকে বাঁ দিকে মুড়ে বাইক থামিয়ে দেয় স্যামন্তক। বন্দনার নিজের চোয়ালটা শক্ত করে ফেলে একটু রাগ হয়। হেলমেটটা খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে বন্দনার দিকে তাকায় এক করুন চোখে। বন্দনার চোখ দিয়ে তখন আগুনের ফুল্কি ঝরে পরে ওর চাহনি দেখে, মনে মনে বলে ওঠে “আদিখ্যেতা দেখাচ্ছ না দয়া দেখাচ্ছ তুমি আমার ওপরে? তুমি কি ভাব নিজেকে।”
স্যামন্তক নিচু স্বরে বলে ওঠে—“আই এম সরি।”
“সরি বললে সব শেষ হয়ে যায়, তাই না।” ঝাঁঝিয়ে ওঠে বন্দনা।
“কি করতে হবে আমাকে বলো, আমি সেটা করবো।” কাতর স্বরে বলে স্যামন্তক।
“আমার সাথে কি নরমাল ব্যাবহার টুকু করা যায়না? আজ সকাল থেকে তুমি আমার সাথে এমন বিহেভ করছও যেন আমি অচ্ছুত কন্যা” বলতে বলতে গলা ধরে আসে বন্দনার। নিজের অজান্তেই স্যামন্তকের ডান কাঁধটা খামছে ধরে “আমি কি এমন করেছি তোমার সাথে যে তুমি আমার সাথে ঐ রকম বিহেভ করছও?”
বন্দনার ধরা গলা শুনে স্যামন্তকের মনটা কেমন গলে যায়। বাঁ হাতটা পেছনে বাড়িয়ে দিয়ে বন্দনার কোমরটা আলতো করে ছোঁয়। কোমরে স্যামন্তকের হাথের পরশ ও নিজের রাগটা ভুলে যায়, বুকের ভেতরটা একটু কেঁপে ওঠে, শিরশিরয়ে ওঠে ওর কোমল শরীর।
“আচ্ছা বাবা নরমাল বিহেভ করবো আমি। আজকের ব্যাবহারের জন্যও ক্ষমা করে দাও, প্লিস। ভুলে যাও আমি রাতে যা বলেছি বা জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে।” নিচু গলায় কাতর স্বরে বলে স্যামন্তক।
“হুম, ঠিক আছে ভুলে যাবো, এক সর্তে, যদি কাল আমার সাথে পুবালির বাড়িতে সারাদিন থাকো” বন্দনা বলে।
“কি যে বল না তুমি, সেটা কখন পসিবেল নয়। কাল বাড়িতে আমার অনেক কাজ, তত্ব সাজানো, কনেযাত্রীর গাড়ি, আর তুমি বল যে তোমার সাথে কাল থাকতে? মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোমার?” গলায় অবিস্বাসের সুর, স্যামন্তকের।
“যাও তাহলে আর কথা বলবো না।” অভমানি সুরে বলে বন্দনা, ডান হাত দিয়ে আলতো করে একটা চাঁটি মারে স্যামন্তকের মাথায়।
—“আরে বাবা একটু বুঝতে চেষ্টা করো আমার অবস্থা।”
—“তাহলে আমিও যাবনা।”
—“সেটা তোমার আর দিদির ব্যাপার। তবে এখন যদি আমরা বাড়ির দিকে না যাই তাহলে আমরা ঠাণ্ডায় জমে যাবো।”
ডান হাতটা কাঁধ থেকে নামিয়ে স্যামন্তকের কোমর জড়িয়ে ধরে বন্দনা, মনে মনে একটা কিন্তু নিন্তু ভাব থেকে যায়। বাঁ কাঁধের উপরে নিজের থুতনিটা রেখে নিচু গলায় বলে “চলো ঠাণ্ডা লাগছে।”
হেসে ওঠে স্যামন্তক, পিঠের ওপরে বন্দনার শরীরের হাল্কা উষ্ণতা ওর শরীরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দেয় “একদম পাগলী মেয়ে একটা তুমি।”
বাড়ি পৌঁছেই দেখে বড়দি দাঁড়িয়ে ওদের জন্য। বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করে—“কিরে এতো দেরি হল কেনও তোদের, পুবালি ফোন করে জানাল যে তোরা নাকি অনেকক্ষণ হল বেড়িয়েছিস?”
বন্দনা একবার স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বড়দির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ টিপে হাসতে থাকে। স্যামন্তক কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না—“বাইক পানচার হয়ে গেছিলো তাই দেরি হোল।” অগত্যা একটা অজুহাত দেখাতে হোল।
“তোরা কি খেয়ে এসেছিস ওদের বাড়ি থেকে?” বড়দি জিজ্ঞেস করে বন্দনাকে।
“না খাইনি এখনো।” বন্দনা উত্তর দেয়।
“তারাতারি খেয়েনে তোরা, সবার খাওয়া হয়ে গেছে” তারপরে বড়দি স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলল “পুবালিকে একটা ফোন করে দিস যে তোরা পৌঁছে গেছিস। কি যে করিস না তোরা।” বলে ভেতরে চলে গেলো বড়দি।
দিদিকে ফোন করতেই, পুবালি ঝাঁজিয়ে ওঠে—“দেরি কেন রে তোর।”
“টায়ার পানচার হয়ে গেছিলো তাই” একই অজুহাত দেখাতে হয় ওকে।
“টায়ার পানচার না তুই পানচার। বাড়ির এক মাত্র ছেলে, আমার একটি মাত্র ভাই সেটা একটু মনে রাখিস। ধুর তোর সাথে আমার এখন কথা বলতেও ইচ্ছে করছেনা।” দিদির বকা শুনে স্যামন্তক কি বোলবে কিছু ভেবে পেল না।
“আরে বাবা শোন তো আমার কথা, আমি কিছু করছি না বা কিছু ধরে বসিনি। আমি সব ঠিক করে নেবো, প্লিস তুই রাগ করিসনা সোনা মনা দিদি আমার।” একটু আব্দারের সুরে দিদি কে ঠাণ্ডা করার জন্য বলে স্যামন্তক।
“ঠিক আছে ঠিক আছে, বিশ্বাস করলাম। যা করবি কর তবে যেন একটা দুরত্ব বজায় থাকে সেটা মাথায় রাখিস।” সাবধান বানী শুনিয়ে পুবালি ফোন রেখে দেয়।
বন্দনা ড্রেস চেঞ্জ করে নেয়, একটা ঢোলা টি-শার্ট তার নিচে একটা লম্বা স্কার্ট। গায়ে একটা কালো রঙের শাল চাপিয়ে খাবার টেবিলে বসে পরে। স্যামন্তক হাত ধুয়ে খেতে বসে পরে। সবার খাওয়া দাওয়া আগেই শেষ, তাই ওরা দুজনে একা একা খেতে বসে টেবিলএ। চাকরটা খাবার রেখে যাবার পরে, বন্দনা থালাতে ভাত বেড়ে দেয়, তার সাথে ডাল তরকারি।
স্যামন্তক চুপচাপ দেখতে থাকে বন্দনাকে, ঝুঁকে পরিবেশন করার সময় স্যামন্তকের নজর বন্দনার সুডৌল বুকের ওপরে পরে, নরম ময়দার তালের মতন বলদ্বয় দেখে ওর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায় এক মুহূর্তে “মেয়েটা নিশ্চয় নিচে কিছু পরেনি তাই এতো নরম বুক দুটি ফেটে বের হচ্ছে।“
বন্দনার চোখ হটাৎ করে স্যামন্তকের দিকে পরে, ওর নজরটা দেখে কান, গাল গরম হয়ে ওঠে বন্দনার “আমাকে পুড়িয়ে দেবে নাকি ঐ দৃষ্টি দিয়ে?” বন্দনার বুকের ওপরে এক আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। চাদরটা একটু ভাল ভাবে জড়িয়ে নেয় বুকের ওপরে। স্যামন্তক চোখ নিচু করে ফেলে, ধরা পরে গেছে ও।
মা একবার উঠে দেখে যায়, জিজ্ঞেস করে—“তোর তো এই ক দিন দেখা নেই।“
“হ্যাঁ, তোমার মেয়ের বিয়েটা তো গাছ থেকে আম পারার মতন করে হয়ে গেলো তাই তো।” মায়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয় স্যামন্তক।
“আমার পান শেষ। তোকে বলতে ভুলে গেছিলাম।” স্যামন্তকের মা স্যামন্তককে বলে।
“রাত বারোটায় মাথা খারাপ কোরোনা তো, পান না খেয়ে আজ শুয়ে পরো কাল এনে দেবো।” রেগে গিয়ে স্যামন্তক মা কে উত্তর দেয়।
খাওয়ার পালা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে স্যামন্তক টিভি চালিয়ে দেখতে থাকে। সবাই যে যার ঘরে শুয়ে পরেছে, ওর ঘরটা খালি। বন্দনা কিছুক্ষণ রান্না ঘরে বাসন পত্র সিঙ্কে রেখে ওর ডান পাশে একটু দুরত্ব রেখে বসে পরে।
কিছুক্ষণ পরে বন্দনা জিজ্ঞেস করে—“আমি শোবো কোথায়? কাল তো বড়দির ঘরে শুয়েছিলাম। তোমার যা দুটো দুষ্টু ভাগ্নি, বাবা রে বাবা। আজ আমি আর যাচ্ছি না ওখানে, আমার অন্য জায়গায় ব্যাবস্থা করো।”
“আমার ভাগ্নি দুটি মিষ্টি, দুষ্টু তো অন্য কেউ।” চোখ টিপে বন্দনাকে খ্যাপানোর জন্য বলে।
—“ও কে বাবা, ঠিক আছে আমি না হয় দুষ্টু। কাল তুমি কোথায় শুয়েছিলে?”
—“সোফায়, আবার কোথায় শোবো, সুবিমলদা আর সিতাভ্রদার বন্ধুরা মিলে তো আমার রুম তা কব্জা করে নিয়েছিলো কাল রাতে।”
“তাহলে আজ আমি তোমার রুমে শুয়ে পড়ি, প্লিস।” নাক মুখ কুঁচকে বন্দনা আবদার করে স্যামন্তকের কাছে।
মাথায় যেন বাজ পড়ল স্যামন্তকের, “মেয়েটা বলে কি, আমার রুমে শোবে মানে?” ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হাসে বন্দনার দিকে। চোখ নাচিয়ে বলে—“আর রাতে যদি ভুতে ধরে তখন টের পাবে।”
পা দুটি গুটিয়ে সোফার উপরে গুটিসুটি মেরে বসে, হাত দুটি দিয়ে নিজের হাঁটু জড়িয়ে ধরে বন্দনা। হাঁটুর ওপরে থুতনি রেখে স্যামন্তককে বলে “ঠাণ্ডা টা বেশ জম্পেশ পরেছে কি বলো?”
স্যামন্তক হাত দুটি কে ছড়িয়ে দেয় সোফার মাথার ওপরে, ডান বাজু বন্দনার পিঠের পেছনে আলতো করে ছুঁইয়ে দেয়। ছোঁয়া পেয়ে ভুরু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে বন্দনা। স্যামন্তক ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে “কি হোলও?”
স্যামন্তকের খুব সিগারেট খাবার ইচ্ছে করে, ও বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে “আমি সিগারেট খেতে ওপরে যাচ্ছি তুমি কি যাবে আমার সাথে?”
বন্দনা মাথা নাড়িয়ে বলে—“চলো যাই এতো রাতে টিভি দেখে কি করবো। তুমি বললে নাতো আমি কোথায় শোবো।”
চলবে....