Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance দিদির বান্ধবী যখন বউ (সম্পুর্ণ)
#4
পর্ব-৩



আত্মীয়দের ভিড় লেগে যায়, পুবালিকে দেখতে। ছেলেরা উঁকি ঝুঁকি মারতে থাকে, বন্দনার দর্শন পাবার জন্য। বাকি বান্ধবীদের সাথে বন্দনা বেশ মিলে যায়, গল্প করতে থাকে মন খুলে। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক মাথা উঠিয়ে খুঁজতে থাকে স্যমন্তককে, কোথায় গেলো ছেলেটা। মনের কোনও এক কোনে যেন খালি এক দুপুর গড়িয়ে এসেছে, হটাত করে বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে বন্দনার। কেন লাগে নিজেই জানেনা, এতো লোকের মাঝে বন্দনা নিজেকে বেশ একা বোধ করে।

বিয়ের লগ্ন আসন্ন। পুবালিকে পিড়িতে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বন্দনা, স্যামন্তককে দেখে। চোখা চুখি হতেই বন্দনা একটা মিষ্টি হাসি হাসে, যেন বলতে চায় “আমি আছি, আমাকে ও দেখো।” স্যামন্তক সামান্য একটু হেসে, অন্য দাদাদের সাথে পুবালিকে পিড়িতে বসিয়ে নিয়ে যায়। চারদিকে হই চই, বউ এসেছে এসেছে। স্যামন্তকের ঠাণ্ডা হাসি দেখে বন্দনার মনের কোনও এক কোনে একটা ছোটো কালো মেঘ জমে আসে হটাত করে। আনমনেই বন্দনা নিজের মাথায় চাঁটি মেরে বলে “কি রে পাগলী কি করছিস।”

আবার ব্যাস্ত হয়ে পরে স্যামন্তক। রাত ঘনিয়ে আসছে, বরযাত্রীর খাওয়া দাওয়া, অথিতি আপ্যায়ন করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে ও। এক সময় বরযাত্রীর দিকে দেখা শুনা, একবার বিয়ের জায়গার দেখা শুনা। কপালে ঘাম ছুটছে। এমন সময় কেউ এসে ডাক দেয় স্যামন্তককে, দিদি ডাকছে। দাঁত কিরমির করতে থাকে “এই মেয়েটার আবার কি হল?” দিদি ডেকেছে বলে কথা, যেতে তো হবেই। গিয়ে দেখে কন্যাদান শুরু হবে। পুবালি স্যামন্তকের দিকে তাকায়, হাথ নাড়িয়ে ওর পাশে বসতে বলে। সামনে স্যামন্তকের বাবা বসে, তিনি ভাইঝির কন্যাদান করবেন।
—“কি হয়েছে আবার তোর, ডাকছিস কেন?”
চোখ ভেজা, ঠোঁটে হাসি নিয়ে পুবালি স্যামন্তককে বলে—“একটু বস না আমার কাছে, সেই সন্ধেবেলা থেকে কাজ, কাজ আর কাজ করে যাচ্ছিস, মুখটা শুকিয়ে গেছে একেবারে।”
একটা চেয়ার টেনে পাশে বসে স্যামন্তক। ওদিকে, হাথে হাথ রেখে কন্যাদান পর্ব শুরু হয়ে যায়। বামনের মন্ত্র তার সাথে সাথে দিদির ঘন ঘন নাক মোছা, কেমন যেন হয়ে যায় স্যামন্তকের মনটা। পুবালির পিঠে হাথ রাখে স্যামন্তক, একটু যেন কেঁপে ওঠে ওর দিদি। ঘাড় ঘুরিয়ে কান্না ভেজা, হাসি হাসি চোখ নিয়ে তাকায়।
বন্দনা খানিক্ষন এদিক ওদিক দেখে, এক কোনায় বসে পরে। পুবালির অন্য সব বান্ধবীরা এক এক করে চলে যাবার উপক্রম। এমন সময় পুবালির পিসতুতো দাদা, সুবিমল এসে বন্দনার পাশে বসে। বন্দনা একটা ছোট্ট হাসি হেসে নমস্কার জানায়। সুবিমল অনকক্ষণ ধরে বন্দনাকে জরিপ করছিল, কখন একটু একা পেয়ে আলাপ পরিচয় করবে এই সুন্দরী তরুণীর সাথে।
বন্দনা বেশ বুঝতে পারে সুবিমল কেন ওর পাশে বসেছে। চোরা হাসি নিয়ে তাকায় বন্দনা সুবিমলের দিকে।
সুবিমল বলে—“আপনি পুবালির বন্ধু?”
আলতো করে মাথা নাড়ায় বন্দনা “হ্যাঁ।”
—“আমি সুবিমল, পুবালির পিসতুতো দাদা, আসানসোল থাকি।”
—“আচ্ছা, বেশ।”
—“আপনাকে আগে তো দেখিনি, বড়দির বিয়েতে।”
—“না তখন আমাদের পরিচয় হয়নি। আমি আর পুবালি শান্তিনিকেতনে এক সাথে নাচ শিখতাম।”
—“ও আচ্ছা এবারে বুঝেছি। আমি তো ভাবছিলাম আপনি ওর কলেজের বান্ধবী।”
বার্তালাপ বেশ অগ্রসর হতে থাকে, সুবিমল এবং বন্দনার মাঝে। কথার মাঝে বন্দনার চোখ থেকে থেকে স্যামন্তককে খোঁজে “গেলো কথায় ছেলেটা, এই লোকটা তো বড় হেজাচ্ছে।”
কথা বলতে বলতে এক সময় বন্দনা সুবিমলকে বলে—“খই ফেলার সময় হয়ে এসেছে মনে হয়, চলুননা মণ্ডপের দিকে এক বার ঘুরে আসি। দেখে আসি কি হচ্ছে।”
সুবিমল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়, কিছু তো করার নেই। দুই জনে হাঁটতে হাঁটতে, বিয়ের জায়গায় পৌঁছয়। স্যামন্তক তখনও পর্যন্ত দিদির পাশ ছারেনি। বর কনে, আগুনের চারদিকে সপ্তপদি শেষ করে খই আগুনে ঢালছে। বন্দনা স্যামন্তককে দেখতে পেয়ে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে “যাক বাবা, বেঁচে যাবো এই লোকটার কাছ থেকে।”
স্যামন্তক একমনে আগুনের দিকে তাকিয়ে বসে, একবার দিদি জামাইবাবুর দিকে দেখে, একবার জেঠিমার দিকে দেখে। বন্দনা স্যামন্তককে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে চমকে ওঠে, সাদা ব্লেজার আর নীল জিন্সএ ছেলেটাকে বেশ ভাল দেখতে লাগছে। ও কাছে এগিয়ে এসে স্যামন্তকের কাঁধে হাথ রাখে। স্যামন্তক একটু অন্যমনস্ক ছিল, তাই হাথের স্পর্শে চমকে ওঠে। কে রাখে কাঁধে হাথ? ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে বন্দনা ওর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি চোখে হাসছে। স্যামন্তক একটা ক্ষীণ হাসি ফেরত দেয়, মনটা ঠিক ভাল নেই।
“কি হল, কিছু বলছ না যে” বন্দনা জিজ্ঞেস করে স্যামন্তককে।
আওয়াজ শুনে যেন ঘুম থেকে উঠলো স্যামন্তক, এই রকম একটা চাহনি নিয়ে তাকায় বন্দনার দিকে, বলে—“কই কিছু নাতো। এই বসে আছি এখানে।”
একটু ঝুঁকে পরে বন্দনা ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে—“তোমাকে কতক্ষণ ধরে খুঁজছিলাম আমি, কোথাও পাইনা। আমাকে কেমন লাগছে?” স্যামন্তকের নাকে ভেসে আসে বন্দনার গায়ের গন্ধ, মন মাতানো পারফিউমের সুবাসের সাথে সাথে গায়ের গন্ধটা বেশ লাগে। ঘাড় ঘুরাতেই স্যামন্তকের মাথার সাথে ঠোকর খায় বন্দনার মাথা।
“উফফফফ…। কিযে করোনা তুমি।” মাথায় হাথ বুলাতে বুলাতে বলে ওঠে বন্দনা।
ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে স্যামন্তক, জরিপ করার ন্যায় গালে হাথ দিয়ে বলে—“হ্যাঁ সুন্দর দেখাচ্ছে। তবে আমাকে কেনও খুঁজছিলে সেটা বুঝতে পারলামনা।”
একটু অভিমানের সুরে উত্তর দেয়—“শুধু এইটুকু ব্যাস?”
—“আচ্ছা বাবা, একদম ফাটা ফাটি লাগছে তোমাকে, হয়েছে।”
রেগে যায় বন্দনা, ঝাঁজিয়ে ওঠে—“বলতে হয় বোলো না হলে বোলো না। আমি চললাম।”
স্যামন্তক বেগতিক দেখল, চারদিকে বাড়ির লোকজন, বাবা, মা, বড়দি, বোন, জেঠু, জেঠিমা। ও বুঝে পেলনা কি করবে। চোখ দিয়ে বন্দনাকে শান্ত হবার ইশারা করে। বন্দনা নাক কুঁচকে অভিমানি চাহনিতে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তকের দিকে। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ওর পাশে। সুবিমল কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বন্দনাকে খেতে ডাকে। বন্দনা সুবিমলকে বলে যে ও পুবালির সাথে খাবে। কিছু করার নেই দেখে সুবিমল খেতে চলে যায়।
বিয়ের পালা শেষ প্রায়, স্যামন্তক উঠে গিয়ে খাবার জায়গার তদারকি করতে যায়। অনেক রাত হয়ে গেছে, বাড়ির লোকজন ছাড়া বাইরের কোনও অথিতি নেই। শেষ পাতে বর কনে খাবে, বরের সাথে আসা কয়েক জন বন্ধুরা খাবেন আর স্যামন্তক এখনো খায়নি। স্যামন্তকের পেছন পেছন বন্দনাও চলে আসে।
হাথটা ধরে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা—“কই কি হোলও, বিকেল গড়িয়ে মাঝরাত হয়ে গেলো তোমার দেখা নেই কেন?”
বন্দনা এতো কাছে দাঁড়িয়ে যে স্যামন্তকের ডান বাজুর সাথে ওর নরম মুলায়ম বুক ছুঁয়ে যায়। শক্ত মাংসপেশির পরশে বন্দনা নরম বুক একটু কেঁপে ওঠে, স্যামন্তকের বাজুতে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়।
“আরে বাবা, আমি কি বিকেল থেকে বসে আছি নাকি যে তোমার গুনগান করবো। নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিলোনা আমার।” বন্দনার মুখপানে চেয়ে থেকে সান্তনা দেয়। এতো কাছে এতো সুন্দরী রমণীকে দেখে স্যামন্তকের বুকের মাঝে একটা ঝড় ওঠে। বন্দনার মুখ লাল হয়ে যায় স্যামন্তকের চোখের দিকে তাকিয়ে। ওর চাহনি যেন বুকের ধমনীর কোনো কোনা নাড়িয়ে দেয়। লাজুক হেসে ঠোঁট কামড়ে ধরে বন্দনা, নাকের অগ্রভাগ গরম হয়ে ওঠে।
স্যামন্তক পকেট থেকে একটা পেন বার করে বন্দনার থুতনিটা ধরে ওপরে করে নিজের দিকে। বন্দনা কেঁপে ওঠে, থুতনিতে স্যামন্তকের আঙ্গুলের স্পর্শ পেয়ে। ভাসা ভাসা চাহনি নিয়ে তাকায় ওর দিকে। পেন দিয়ে বন্দনার থুতনিতে তিনটে ছোটো ছোটো বিন্দু এঁকে দেয় স্যামন্তক। নিজের অজান্তেই হাথ দুটি মুঠি হয়ে যায় বন্দনার, গাল, কান গরম হয়ে ওঠে। সারা মুখের ওপরে স্যামন্তকের উষ্ণ নিঃশ্বাস ঢেউ খেলতে থাকে। তির তির করে কেঁপে ওঠে বন্দনার দেহ পল্লব। ঠোঁট দুটি অল্প ফাঁক হয়ে যায় নিজের অজান্তেই। পদ্মের পাপড়ির মতন ঠোঁট গুলো কেঁপে ওঠে, যেন দখিনা বাতাসে বইছে। স্যামন্তকের আঙ্গুল থুতনি থেকে গালের ওপরে চলে আসে। আলতো করে বুড়ো আঙ্গুলটা বোলায় নরম গালে, একটু ঝুঁকে পরে বন্দনার ফাঁক করা ঠোঁটের দিকে। চোখের পাতা দুটি ভারি হয়ে আসে বন্দনার “একি হতে চলেছে, আমি কি করছি?” নিজেকে প্রশ্ন করে, উত্তর পায়না।
স্যামন্তকের বুকের মাঝে মাথা চারা দিয়ে ওঠে আষাঢ়ের ঝড়। চোয়াল শক্ত করে নেয় নিজেকে সামলানোর জন্য। কতক্ষণ ওরা দুজনে একে অপরকে নিরীক্ষণ করছিলো ঠিক জানা নেই। সময় যেন থমকে দাঁড়িয়ে যায় দুজনার মাঝে।
নিচু স্বরে বন্দনা কে বলে—“এবারে বেশি সুন্দর লাগছে।”
স্যামন্তকের গলার স্বর শুনে সম্বিত ফিরে পায় বন্দনা। উষ্ণতার প্রলেপ মাখা মুখ নামিয়ে নেয়, চোখে চোখ রাখার মতন শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ও। নিথর হয়ে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে বন্দনা। স্যামন্তক কি করবে কিছু ভেবে পায়না। ওরা এতোটাই কাছা কাছি দাঁড়িয়ে যে, বন্দনার শরীরের উষ্ণতাটা পর্যন্ত স্যামন্তক উপলব্ধি করতে পারে।
“কি হোলও এবারে তুমি কিছু বলছ না যে।” নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক।
হরিণীর ন্যায় মাথা দোলায় বন্দনা, বলে ওঠে—“কিছু বলার নেই আমার।” ধির পায়ে স্যামন্তকের কাছ থেকে দূরে সরে যায় ও। চোখের কোনে এক ফোঁটা জল চলে আসে বন্দনার, বুকের মাঝে এক অজানা আলোড়ন মাথা চারা দিয়ে ওঠে। দ্বিমত দেখা দেয় হৃদয়ের এক কোনে “এতো মিষ্টি করেতো নিরুপম কোনও দিন আমাকে সাজিয়ে দেয়নি বা দেখেনি।”
স্যামন্তক বন্দনার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, ভাবতে থাকে কিছু কি ভুল করে ফেললও, যদি ও দিদি কে বলে দেয় তাহলে দিদি ওর চামড়া গুটিয়ে দেবে। ইচ্ছে করে তো কিছু করেনি ও, বন্দনাই তো ওর কাছে এসেছিলো, ওকি যেচে বন্দনার পাশে গেছিলো? একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে, খাবার আয়োজন করতে চলে যায়।
বন্দনা খাবার জায়গার এক কোনায় একটা চেয়ারে বসে পরে। বুকটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে বন্দনার। কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি। ও ভেবেছিল একটু মজা করতে, একটু ফ্লারট করতে ব্যাস। বাঁ পায়ের ওপরে ডান পা দিয়ে, ডান হাথের তালুতে থুতনিটা রেখে মনটাকে হারিয়ে ফেলে বন্দনা। ডিসেম্বরের মধ্য রাত্রেও ওর কান মাথা গরম হয়ে যায়। কে জানে কে ঠিক। “এ মন আমার হারিয়ে যায় কোনখানে, কেউ জানেনা শুধু আমার মন জানে, আজকে শুধু হারিয়ে যাওয়ার দিন, কেউ জানেনা শুধু আমার মন জানে।”
সুবিমলের খাওয়া শেষ, ও বন্দনাকে খুঁজতে খুঁজতে খাওয়ার জায়গায় এসে দ্যাখে, বন্দনা চুপচাপ এক কোনে একটা চেয়ারে বসে কিছু একটা ভাবছে।
সুবিমল বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে—“কি হোলও হটাত করে এতো টা চুপচাপ হয়ে গেছো। কেউ কিছু বলল নাকি?”
বন্দনা ওর দিকে তাকিয়ে বলে—“না না কিছু হয়নি আমার এমনি বসে ছিলাম। সবাই চলে গেছে তাই কি করবো ভাবছি।”
ওদিকে বর কোনে কে নিয়ে খাবার জায়গায় বাড়ির লোকেরা চলে আসে। সবাই আবার খেতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। বন্দনা পুবালির পাশে বসে যায়। স্যামন্তকের খাবার ইচ্ছেটা মরে যায়, পুবালির অনুরোধে ওর হাথ থেকে কিছু খেয়ে নেয়। খাওয়ার সময় পুবালি বন্দনার মুখ দেখে বুঝতে পারে যে কিছু একটা ঘটেছে বা ঘোটতে চলেছে। খাওয়ার পালা সেরে উঠে যাবার আগে পুবালি স্যামন্তককে জিজ্ঞেস করে যে বন্দনা এতো চুপ কেনো। স্যামন্তক মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় ও বন্দনার ব্যাপারে কিছু জানেনা।
বন্দনা খাবার সময় খুব বেশি চুপ ছিল, পুবালিকেও কিছু জানাল না। পুবালি ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারল যে বন্দনার ভেতরে একটা ঝড় উঠেছে আর ও প্রান পন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটাকে বন্দ করতে। খাবার পরে বন্দনা বাথরুমে ঢুকে পরে। আয়নার সামনে নিজের মুখটাকে অনেকক্ষণ ধরে দেখে। সত্যি কি ওর মধ্যে কিছু চলছে না ওটা ওর ভ্রান্তি। চোখে মুখে জলের ঝাপটা মেরে নিজেকে শান্ত করে চলে আসে বাসর ঘরে যেখানে পুবালি সিতাভ্র আর বাকিরা সবাই ছিল। ঘরে ঢোকার মুখে ওর বুক খুব জোরে ধুপ পুক করছিলো, ভেতরে তো স্যামন্তক বসে থাকবে, কি করে উর সাথে চোখ মিলিয়ে কথা বোলবে? কিন্তু ঘরে ঢুকে যখন দেখে যে স্যামন্তক নেই, তখন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে বন্দনা যাক একটা প্রবলেম সল্ভ হল।
রাতে বাসর জাগার পালা, বর কনে কাউকে ঘুমতে দেওয়া যাবেনা। খুব ইচ্ছে ছিল বাকি সবার সাথে বাসর জাগার, কিন্তু স্যামন্তক জানে যে বন্দনাও থাকবে সেখানে, ও আর চায়না আজ রাতে অন্তত বন্দনার সামনে আসতে। কাল সকালে দেখা যাবে। বাবা, মা, জেঠু, জেঠিমা এবং বাড়ির বাকি লোকজন শুয়ে পরে। এমনিতে সারা দিন খেটে খেটে স্যামন্তকের গা হাথ পা ব্যাথা করতে শুরু করে দিয়েছিলো। দিদির ঘরে বাসর বসবে, মানে ওকে মেজনাইনের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। জামা কাপড় ছেড়ে একটা পায়জামা আর টিশার্ট পরে লম্বা হয়ে যায় বিছানায়। মনে মনে ভাবতে থাকে স্যামন্তক ওকি আকৃষ্ট হয়ে পরছে বন্দনার মিষ্টি আলেয়ায়। কি করে নিজেকে বেঁধে রাখবে ও, বন্দনা তো কারুর বাগদত্তা। ও চায়না কারুর প্রেম ভেঙে নিজের করার। এমনিতে পুবালি বার বার করে বলে দিয়েছে বন্দনার কাছ থেকে একটু দূরে থাকতে।
পুবালি, জামাই সিতাভ্র, সুবিমল, সিতাভ্রর দুই বন্ধু, বন্দনা সবাই বেশ আরাম করে বসে গল্প করতে শুরু করে। দিদি এক বার খোঁজে ওর ভাইটা কোথায় গেলো? সুবিমল জানায় যে স্যামন্তক শুতে চলে গেছে। সেটা শুনে পুবালির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় “আমার ভাই আমার বাসর জাগবে না?”
সুবিমল কে পুবালি বলে—“একটু গিয়ে দ্যাখনা, বলবি যে আমি ডেকেছি, দেখবি ঠিক চলে আসবে।”
বন্দনা বলে ওঠে—“আমি গিয়ে দেখছি।”
পুবালি একটুখানি দৃঢ় চোখে বন্দনার দিকে তাকায়, সেই চাহনি দেখে বন্দনা মুখ নিচু করে ফেলে। ও বলে ওঠে—“আমি কাপড়টা পাল্টে আসছি।“
বন্দনা বেরিয়ে যাবার পরে, সুবিমল স্যামন্তকের খোঁজে মেজনাইনের ঘরে ঢুকে দ্যাখে যে স্যামন্তক বিছানায় শুয়ে পরেছে। ওকে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে তুলে বলে—“তোকে পুবালি ডাকছে আর তুই এখানে শুয়ে পরেছিস। কি ব্যাপার তোর তো এই রকম হবার কথা নয়।”
স্যামন্তক চমকে ওঠে—“আরে তুমি কি করছও এখানে? আমি খুব টায়ার্ড ছিলাম তাই শুয়ে পড়েছি। একটু খানি রেস্ট নিয়ে যেতাম তো। তুমি গিয়ে বোলো আমি আসছি।” এই বলে স্যামন্তক সুবিমলকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
কাপড় চেঞ্জ করে নেয় বন্দনা। পরনে একটা নাইট গাউন, তার ওপরে একটা শাল জড়িয়ে নেয় বন্দনা। পুবালির ঘরে ঢোকার আগে উঁকি মেরে দেখে নেয় যে স্যামন্তক এসেছে কিনা। স্যামন্তককে দেখতে না পেয়ে বুঝে যায় যে ও এখনো ওপরে শুয়ে আছে। পা টিপে টিপে, স্যামন্তকের ঘরে ঢোকে বন্দনা। ঢুকে দেখে যে ও চিত হয়ে শুয়ে, সিলিঙের দিকে তাকিয়ে আছে। গলা খাখরে জানান দেয় যে ও উপস্তিত। ঘাড় ঘুরিয়ে বন্দনার দিকে তাকায় স্যামন্তক। ওকে দেখেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, ভাবতে থাকে কেন এসেছে? ধিরে ধিরে খাটের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় বন্দনা। মৃদু আলোতে স্যামন্তকের মুখের ভাষা পড়তে প্রচেষ্টা চালায় বন্দনা। বুকের মধ্যে তুমুল ঝঞ্ঝা বইতে থাকে, নিজের অজান্তেই হাথ দুটি মুঠি হয়ে কোলের ওপরে চলে আসে।
“কি দেখছ এই রকম ভাবে” বন্দনা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে স্যামন্তককে।
“কিছু না।” একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ভাবতে থাকে স্যামন্তক, ওকি বলবে বন্দনাকে যে ওদের এতো কাছাকাছি আসা উচিত নয়, ওকি জানিয়ে দেবে যে বন্দনা কারুর বাগদত্তা ওর এই রকম করা উচিৎ নয়।
মুক চাহনি থেকে সব বুঝে যায় বন্দনা, পুবালি ওকে নিরুপমের কথা বলে দিয়েছে। বন্দনা স্যমন্তকের পাশে বসে পরে, হাজার ভোল্টের বিজলি লাগার মতন ঠিকরে উঠে পরে স্যামন্তক।
গম্ভির গলায় বলে ওঠে—“তোমার চলে যাওয়া উচিৎ, বন্দনা। দিদি, সিতাভ্রদা, সুবিমল সবাই তোমাকে খুঁজবে।”
কাঁপা গলায় উত্তর দেয়—“তোমাকেও তো পুবালি ডাকছে, তুমি কেনও যাচ্ছ না?”
—“তুমি চল আমি আসচ্ছি।“
—“তুমি গেলে আমি যাবো না হলে যাব না।”
—“বন্দনা, আমার যাওয়ার সাথে তোমার যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই, সুতরাং তুমি আগে চলো আমি একটু পরে আসছি।”
দাঁড়িয়ে পরে বন্দনা, হাসি কান্না সব কিছু ভুলে যায়, কি করবে বা কি করতে চায় মাথার মধ্যে সব গুবলেট হয়ে যায় ওর। দরজার দিকে যেতে যেতে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলে—“আমি অপেক্ষা করে থাকবো।”
দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবার পরে, স্যামন্তকের মনে হল যেন তানপুরার সব তার গুলো ছিঁড়ে গেছে। ঝনঝন করে ওঠে মাথার ভেতরটা। নিজের ওপরে ক্ষোভ জন্মায়, একি করলো ও, এক জনের বাগদত্তার ওপরে জেনে বুঝে ঝুঁকে পড়ল? দিদির বারন ও শুনল না। কিন্তু ওর কি দোষ, বন্দনা তো ওর কাছে এগিয়ে এসেছিলো। কে এগিয়েছিল, ও নিজেই তো আগ বাড়িয়ে পেন দিয়ে থুতনিতে আঁকতে গেছিলো। বন্দনা কি বলেছিল ওগো আমাকে সাজাও। শত চিন্তা করে কুল পায় না, কে ঠিক কে ভুল।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 1 user Likes Biddut Roy's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভালোবাসা কারে কয় (সম্পুর্ণ) - by Biddut Roy - 01-03-2020, 03:03 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)