Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance দিদির বান্ধবী যখন বউ (সম্পুর্ণ)
#3
পর্ব-২



পুবালি বন্দনা কে দেখে দৌড়ে আসে। দুই বান্ধবীর প্রায় মাস ছয়েক পরে দ্যাখা। পুবালি জড়িয়ে ধরে বন্দনাকে—“কি রে মনে পড়ল তাহলে আমাকে।”
নাক কুঁচকে বন্দনা বলে—“আমি তো আর ভুলিনি তুই ভুলে গেছিস আমাকে। আমি তো তোকে সব সময় মনে করি।”

“যাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবেনা। চল আমার ঘরে গিয়ে বসবি। অনেক রাস্তা পাড় করে এসেছিস।” পুবালি বন্দনার হাথ ধরে বলে। যেতে যেতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে “ওর ব্যাগ গুলো নিয়ে আয়।” তারপরে বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে “কি রে আমার ভাই তোকে বেশি হয়রান করেনি তো?”

দিদির কথা শুনে, স্যামন্তক মাথা নিচু করে ফেলে। বন্দনা বেশ মজা পায় স্যামন্তকের লাজুক স্বভাব দেখে।

পুবালিকে কানে কানে বলে—“তোর ভাইটা একটা মস্ত গাধা।”

ভুরু কুঁচকে দিদি তাকায় ভাইয়ের দিকে, প্রশ্ন করে বন্দনাকে—“কি করেছে আমার ভাই? আমার ভাইয়ের মতন মানুষ হয় না।”

বন্দনা হাসি চেপে রাখতে পারেনা আর—“না না তোর ভাই কিছু করেনি। যাই হোক এবারে বল দেখি, জামাই কোথাকার?”

“ও বম্বেতে চাকরি করে। বিকেল বেলায় দেখতে পাবি।” তারপরে পুবালি স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “এই একটু দেখে আসবি, বিউটিসিয়ান কখন আসবে?”

একটু রেগে যায় স্যামন্তক—“ধুর এই তো এলাম, তোর বান্দরি কে নিয়ে, এই আমাকে আবার দৌর করাবি তুই। আমি আর যেতে পারবোনা তুই অন্য কাউকে পাঠা।”

বন্দনা নিজের নাম ‘বান্দরি’ শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে—“কি কি আমি বান্দরি, তাহলে তুমি শেয়াল।”

তিন জনেই হেসে ওঠে। পুবালি বেশ মজা পায় ওদের ন্যাকা ঝগড়া দেখে।

কাতর মিনতি করে পুবালি, স্যামন্তককে—“লক্ষ্মী ভাইটি আমার, এক বার ফোন করে দ্যাখ অন্তত।”

—“ওকে জো হুকুম আজ তো তেরা দিন হ্যায় না। তু জো বলেগি ওয় করনা পরেগা”

স্যামন্তক যেতে যেতে এক বার ফিরে তাকায় বন্দনার দিকে। বন্দনা পুবালির সাথে গল্পে মশগুল। বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, বিয়েতে কিছু একটা তো হবেই হবে।

ফোন করতে যাবে কি এই সময় দেখে বিউটিসিয়ান এসে হাজির। পুবালির মা, তাকে নিয়ে পুবালির ঘরে ঢোকে। তার সাথে পুবালির আরও কিছু বান্ধবীরাও ঢোকে। স্যামন্তক আবার নিচে নেমে যায়, প্যান্ড্যালের এক কোনে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরায়। বিকেল হয়ে আসছে, দিদির বিয়ের লগ্ন মিনিটে মিনিটে কাছে আসছে। মণ্ডপটা শেষ বারের মতন দেখে, ওর নিজে হাথে সাজানো বিবাহ মণ্ডপ। স্যামন্তক খুব ভাল সাজাতে জানে, তাই দিদির মণ্ডপও ঐ সাজিয়েছিল।

ওপরে পুবালির ঘরে বন্দনা ব্যাগ টা ছুঁড়ে ফেলে হাথ পা ছড়িয়ে বিছানায় এলিয়ে পরে।
একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে—“মন পাখী তুই মেলে ডানা উড়লি গগন মাঝে, আমার তরীর নাই ঠিকানা, মন বসেনা কাজে।”

পুবালি এক ভাবে তাকিয়ে বন্দনাকে বলে—“তুই নাই বা সেই সব কথা উঠালি।”
ওর দিকে মুখ করে বাম হাথের ওপরে মাথাটা রেখে পুবালি কেবলে—“না রে আমি ঐ সব নিয়ে তোর সাথে কোনও বিবাদে যেতে চাইনা। তোর বিয়ে তে মজা করতে এসেছি মজা করবো।”

পুবালির মা ওর সাজার সরঞ্জাম বের করে দিয়ে বলে “তারা তারি সাজতে বস” তারপরে বন্দনার দিকে দেখে জিজ্ঞেস করে “তুই কিছু খাবি তো? আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি তুই হাথ মুখ ধুয়ে নে।”

মাকে চলে যেতে দেখে পুবালি দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে “মাগো…” বলে একটা কান্না ভেজান সুরে ডেকে ওঠে। থাকতে না পেরে কেঁদে ওঠে মায়ের মন।
সাজার পালা শুরু, বিউটিসিয়ান বেস লাগিয়ে দেয় মুখে। পুবালি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কোথায় গেলো ওর ভাই। ও ছাড়া কেউ তো ওকে চন্দনে সাজাবে না। আধা সাজান অবস্থায় বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। বন্দনা এবং বাকি মেয়েরা একটু কিন্তু কিন্তু করে ওঠে। বাইরে বেরিয়ে পুবালির চোখ খুজতে থাকে ভাইকে। লোকেরা জিজ্ঞেস করে “কি হল? কাকে খুঁজছ।”

“শ্যামু কে দেখেছ কেউ?” বাড়ির চাকরটা কে বলে “এই দেখে আয়না শ্যামু কোথায়।”

স্যামন্তক প্যান্ড্যালে বসে একমনে গল্প করতে থাকে আরও কিছু আত্মীয় সজ্জনের সাথে। বাড়ির চাকরটা দৌরতে দৌরতে এসে বলে “তোমাকে দিদিমনি ডাকছে।”

দিদির ডাকে সারা না দিয়ে থাকা যায়না, বাকিদের বলে “আমি একটু দেখে আসছি, তোরা গল্প থামাস না।”

ওপরে উঠে দেখে পুবালি আধা সেজে বসে আছে। স্যামন্তককে দেখে রেগে চেঁচিয়ে ওঠে—“কোথায় ছিলিস তুই? আমার মুখ আঁকবে কে? তোর কোনও চিন্তা নেই?”
মাথা চুলকে চোরা হাসি হাসে শামু, দিদির দিকে দেখে বলে—“তুই আমার সুজি বানিয়েছিস কিনা আগে সেটা বল।”

মাথা নাড়ায় পুবালি—“হাঁ বাবা।” চাকরটাকে রান্না ঘর থেকে সুজির বাটিটা আনতে বলে।

বন্দনা এক ভাবে তাকিয়ে থাকে, ভাই বোনের দিকে। স্যামন্তকের সাথে একটু খুনসুটি করার ইচ্ছে জাগে—“ছেলে তো বড় হয়ে গেলো, দিদির আঁচল কবে ছাড়বে।”

পুবালি, শ্যামুর মাথায় হাথ বুলাতে বুলাতে বলে—“আমার ভাই কোনও দিনও বড় হবেনা, চিরটা কাল আমার ছোটো ভাই হয়ে থাকাবে।”

ঠোঁট উল্টে বন্দনা তিরস্কার স্বরে স্যামুকে বলে—“কিগো দিদির বিয়ের পরে কি করবে, কার আঁচল ধরবে? এই রকম ছেলেকে কে মেয়ে দেবে?”

পুবালি একটু অভিমান ভরা চোখে বন্দনার দিকে তাকিয়ে বলে—“আমার ভাইটাকে তো ছাড়। ও এখনো অনেক ছোটো।”

“ছোটো ছোটো বলেই ওকে মাথায় তুলে রাখলি। একটু যদি ছেড়ে দেখতিস তাহলে দেখতিস কত ধানে কত চাল।” বন্দনা স্যামন্তককে রাগাতে ছারেনা।

বন্দনার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তক। ড্রেস পাল্টে নিয়েছে ও। একটা গেঞ্জি আর ঢোলা একটা প্যান্ট পড়া। বুকের ওপরে লেখা “ডোন্ট মেস উইথ মি।”

বন্দনার বুকের ওপরে নজরটা রেখে স্যামু বলে—“চাল থেকে ভাত কি করে বানাতে হয় আমি জানি, এক বার হাথে পাই সেটাও শিখিয়ে দেবো তোমাকে।”

“বাঃ বাঃ ছেলে তো অনেক বড় হয়ে গেছে দেখছি।” বন্দনা ঠোঁট উল্টে কটাক্ষ সুরে বলে।

স্যামু বন্দনার দিকে এগিয়ে যায় হটাত করে, বন্দনা দুই পা পিছিয়ে যায়। চোখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে স্যামুর মুখের দিকে, বুঝতে চেষ্টা করে, কি করতে চলেছে ও। সদ্য সাবান দিয়ে হাথ মুখ ধুয়ে আসা, বন্দনার গা থেকে বেশ একটা সুন্দর সুবাস স্যামুর নাকে লাগে। স্যামু অজান্তেই চোখ বন্দ করে একটা জোরে নিঃশ্বাস নেয়। পুবালি দেখতে থাকে হাঁ করে, তার ছোটো ভাই অনেক বড় হয়ে গেছে দেখতে দেখতে।

বন্দনার কানের কাছে মুখ এনে স্যামন্তক বলে ওঠে—“দেবো নাকি ছাল ছাড়িয়ে, নুন মাখিয়ে…” বন্দনা ঠিক বুঝতে পারেনা স্যামন্তক কি বলতে চাইছে। একটু খানি থেমে স্যামন্তক বলে ওঠে “সশা…” বলেই ও হা হা করে হাসতে শুরু করে, ওর কথা শুনে পুবালিও হাসতে শুরু করে। বন্দনা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভাই বোন কে দেখতে থাকে।
ভুরু নাচিয়ে পুবালি বন্দনা কে বলে—“কি রে আমার ভাই বলে কথা।” তারপরে
স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে বলে “অনেক হল রে, এবারে আমায় সাজা।”

চাকরটা ও দিকে সুজির বাটি নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে। পুবালি ওর হাথ থেকে সুজির বাটি নিয়ে এক চামচ স্যামন্তকের মুখে দেয়। স্যামন্তক চামচিটা চেটে বলে—“তোর হাথের সুজি সব সময় ভাল খেতে। এবারে বসে পর। দেখি তোকে।”

স্যামন্তক দিদি কে খাটের ওপরে বসিয়ে, সামনে বসে পড়ে। বাঁ হাথে পোস্টার কালার আর চন্দন মিলিয়ে, একটা সরু তুলি দিয়ে দিদির কপালে আঁকতে শুরু করে। এক এক করে ছোটো ছোটো নক্সা ফুটতে থাকে, শেষ বারের মতন সাজানো। বুক টা দুরু দুরু করে কাঁপতে থাকে পুবালির, প্রানের ভাইটার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের চোখে জল এসে যাই। অজান্তেই এক ফোঁটা জল ছলকে পড়ে পুবালির চোখ থেকে। স্যামন্তক, আস্তে করে দিদির চোখ মুছিয়ে দেয়। পুবালি এক চামচ করে সুজি খাওয়াতে থাকে আর ভাই তার আঁকি কাটতে থাকে কপালে।

নিজের অজান্তেই বন্দনার চোখে জল এসে যায় ওদের দেখে। ধরা গলায় বলে ওঠে—“এই আমি কাপড় পড়তে যাচ্ছি। তোদের এই কান্না কাটি আমি আর দেখতে পারছিনা।” ও ভাবলও একটু খানি অন্তত মজা করা যাক স্যামন্তকের সাথে “পুবালির সাজানো হয়ে গেলে আমাকেও একটু সাজিয়ে দিয়।”

স্যামন্তক ঘাড় ঘুরিয়ে বন্দনাকে দেখে চোখ টিপে বলে—“সুন্দরী গো দোহাই তোমার মান কোরোনা, আজ নিশিথে কাছে ডেকো, ভুলে যেও না।”

বন্দনা স্যামন্তকের কথা শুনে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে, একটা চোরা হাসি হেসে বলে—“আমি দেখব খানে তুমি কত গভীর জলে থাকো।”

পুবালি ছোটো করে একটা থাপ্পর মারে স্যামন্তকের মাথায়—“কাকে কি বলছিস একবার দেখে অন্তত বলিস।”

—“বাঃ রে, তোর বান্দরি আমার সাথে মজা করতে পারে আর আমি করলেই যত দোষ।”

বন্দনা, পুবালিকে বলল—“এই আমি একটু আসছি রে বাথরুম থেকে।” বলে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
বন্দনা বেরিয়ে যেতেই পুবালি স্যামন্তককে জিজ্ঞেস করে—“এই কি করছিস তুই?”

অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে দিদির পানে—“কেন কি হল?”

—“ওর একজন বয়ফ্রেন্ড আছে, যদিও তাকে আমার বিশেষ ভাল লাগেনা, তবুও ওকে কিছু বলা যাবেনা। ও প্রেমে পাগল। একদিন বুঝবে ঠেলা।”

মাথা ঝাঁকিয়ে আসস্ত করে দিদিকে—“তুইও না, ছাড়রে ও সব কথা। আমি তো একটু মজা করছিলাম।”

—“মজা করতে করতে কিছু মনে ধরে বসিস না যেন। মেয়েটা খুব ভাল ছিল, কিন্তু নিরুপমের সাথে মিশে কেমন যেন হয়ে গেছে।”

—“ওকে বাবা, আমি কিছু করবোনা ব্যাস।”

পুবালি হেসে বলে—“তোর জন্য একটা ভাল মেয়ে দেখে বিয়ে দেবো, চিন্তা করিসনা। বাড়ির একমাত্র ছেলে বলে কথা।”

বড়দি হাঁক দেয় স্যামন্তককে—“কি রে তোদের সাজা হল? এতো কি করছিস তোরা।” ঘরে ঢুকে নিজের ছোটো বোন কে দেখে বলে “বাঃ বেশ সাজিয়েছে তো তোকে। আমার বিয়ের সময় এতো সুন্দর করে আঁকেনি ও।” তারপরে একটা গাঁট্টা মারে স্যামন্তকের মাথায় “তোর তো অনেক কাজ। তারা তারি বের হ।”

দিদিকে সাজিয়ে ওঠার পরে, বেশ কিছুক্ষণ ধরে দিদির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তক। পুবালি হাথ বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরে ভাইকে, কপালে ছোট্ট একটা চুমু খায়। তারপরে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে, স্যামন্তক। স্যামন্তক বেরিয়ে যাবার পরপরই বন্দনা ঢোকে। ঢুকে দেখে পুবালিকে সাজানো শেষ, কপালে আঁকা হয়ে গেছে।

স্যামন্তককে দেখতে না পেয়ে পুবালি কে জিজ্ঞেস করে—“কোথায় গেলো তোর ভাইটা?”

বিউটিসিয়ান পুবালি কে বাকি সাজ পরাতে ব্যাস্ত। সাজতে সাজতে পুবালি বন্দনা কে হেসে বলে—“আমার ভাইটা কে ছাড় তো, অন্তত। ওর পেছনে গিয়ে কি হবে।”

হেসে ফেলে বন্দনা, পুবালির কথা শুনে—“কি যে বলিস, আমি তো এমনি মজা করছিলাম রে।”

সন্ধ্যে নেমে আসে। দুর্গাপুরে শীতটা একটু বেশিই পরে। লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। এক এক করে আত্মীয় সজ্জন, বন্ধু বান্ধব সবাই আসছে। বাড়ি, প্যান্ড্যাল সব আলোকিত হয়ে উঠেছে। সানাইএর সাথে গান, হইহল্লায় মুখোর হয়ে উঠেছে বিয়ে বাড়ি।

স্যামন্তক একটা গাড় নীল জিন্স এর ওপরে একটা ক্রিম রঙের ব্লেজার চাপিয়েছে, নিচে একটা হাল্কা নীল রঙের টি-শার্ট। চোখে চশমা, চুলটা এলোমেলো হয়ে গেছে। বড় ব্যাস্ত স্যামন্তক। বাড়ির একমাত্র ছেলে, আত্মীয় সজ্জনের দেখাশুনা, কে এল, কে গেলো, কে খেতে বসেছে, কে কি খাবে। চিত্তরঞ্জনের পিসি নিরামিশ খাবেন, তার জন্যও রান্না ঘরে আলাদা রান্না করা আছে। বিউটিসিয়ানের কাজ শেষ হয়ে গেলে গাড়ির ব্যাবস্থা করে তাকে বাড়ি দিয়ে আসা। বাবা ওদিকে আবার কন্যাদান করতে বসবেন তার সব সররঞ্জাম দেখা। পুরুত এসে গেছেন অনেক আগেই, তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা। বরযাত্রী এক ঘণ্টার মধ্যে ঢুকে পরবে। জামাই বাবুর কিছু বন্ধুদের জন্য একটু সুরা পানের ব্যবস্থা করে রেখেছে এক কোনায়। তারা সিগারেট খেতে চাইলে তার পকেটে তিন প্যাকেট ক্লাসিক মাইল্ড রেখেছে। খাওয়ার জায়গার দরজায় দাঁড়িয়ে স্যামন্তক এক বার বিয়ের মণ্ডপের দিকে দেখে এক বার খাওয়ার জায়গার তদারকি তে লেগে পরে।

“আরে মাসিমা অনেক দিন পরে দেখা, কেমন আছেন, আপনার ছেলেটা তো বেশ বড় হয়ে গেছে? কোন ক্লাস”

“এই যে রতনদা তুমি একটু ওপরে গিয়ে মাকে বোলো দিদি কে নিয়ে তারা তারি আসতে। মোটামুটি লোকেরা আসতে শুরু করে দিয়েছে।“

“বেলা দি, তুমি আসতে পারলে? বাঃ বা, আমি তো ভাবছিলাম তুমি হয়তো মেয়েকে ছেড়ে আসতে পারবে না। ও মেয়ে ও এসেছে, ভাল ভাল, ওপরে যাও, দিদি একটু পরে আসবে নিচে।”

“এই ঝন্তু ওপরে গিয়ে দ্যাখ দেখি একবার, পিসিমার রান্না টা হল কিনা। দেরি করে খেলে তো তার আবার পেটে গ্যাস হয়ে যাবে। হয়ে গেলে ওপরেই খেতে বসিয়ে দিস।”

প্রায় পাগল হয়ে যাবার যোগাড়, তার মধ্যে দুটি ভাগ্নি মিলে মামাকে ধরেছে “মামা মামা, আমি গোলাপ ফুল নেবো। মামা প্লিস একটা গোলাপ দাও” তাদের শান্ত করতে গিয়ে দুটি গোলাপ যোগাড় করে দিতে হয় তাকে।

ওদিকে পুবালি লাল রঙের বেনারসি শারী পরে, ফুলে আর সোনার গয়নায় ঢেকে তৈরি। শেষ বারের মতন নিজের ঘরটাকে দু চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে। পা যেন আর চলতে চায়না, কেউ যেন পেরেক ঠুকে দিয়েছে মেঝেতে। বড়দি আর স্যামন্তকের মা মিলে, পুবালিকে আস্তে আস্তে বিবাহ মণ্ডপে নিয়ে আসে, পেছনে বন্দনা।

বন্দনা একটা গাড় নীল রঙের সাউথ সিল্কের মেখলা পরেছে। কাঁচুলিটার পিঠ খোলা, তিনটে পাতলা দড়ি দিয়ে বাঁধা পেছনে, মেরুদণ্ডর খাঁজ যেন তীস্তা নদী। সুউন্নত, সুডৌল কুচ যুগল, কাঁচুলির অভ্যন্তরে যেন হাঁপিয়ে উঠছে, চাইছে যেন ঠিকরে বেরিয়ে পরতে। চুলে একটা খোঁপা বাঁধা, খোঁপায় একটা সুন্দর হাথির দাঁতের ক্লিপ। গলায়, হাথে, কানে হায়দ্রাবাদি মুক্তর সেট ঝলমল করছে। চোখে কাজল, ঠোঁটে গাড় মেটে রঙের লিপস্টিকের প্রলেপ। ডান কব্জিতে সোনার ঘড়ি। দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনও স্বর্গের নর্তকী আজ নেমে এসেছে। চলনে যেন মত্ত হস্তিনির ছাপ, দোদুল্যমান নিতম্বের লয়ে অনেকের মুখ হাঁ হয়ে আছে। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে বন্দনা, ছেলেরা ওর দিকে বেশি করে তাকিয়ে। একটু বেশ মজা পায় বন্দনা, সবার অবাক চোখে তাকিয়ে থাকাটা বেশ উপলব্ধি করে তারিয়ে তারিয়ে।



চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 1 user Likes Biddut Roy's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভালোবাসা কারে কয় (সম্পুর্ণ) - by Biddut Roy - 01-03-2020, 03:00 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)