01-03-2020, 02:57 AM
(This post was last modified: 04-03-2020, 08:09 AM by Biddut Roy. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গল্প= দিদির বান্ধবী যখন বউ
লেখক- মেঘলা আকাশ
পর্ব-১
শীত কাল, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। গুন গুন করছে ঠাণ্ডা, আকাশে ঝলমল রোদের কিরণে বাতাস বেশ গরমই আছে। সকাল থেকেই সারা বাড়িতে হইচই। সানাই বেজে চলেছে এক সুরে। বাড়িতে লোকের পা ফেলার মতন জায়গা নেই। বেশির ভাগ, আত্মীয় সজ্জন এসে গেছেন। স্যামন্তক একটা ট্রাক সুটের জ্যাকেট পরে, খাওয়ার জায়গার প্যান্ড্যাল টার তদারকি করতে ব্যাস্ত। আজ তার জ্যাঠতুত দিদি পুবালির বিয়ে। ছোটো বেলা থেকে ও আর দিদি খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল। বড়দির পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়ে যায়। পুবালি ওর চেয়ে বছর দুই বড়। স্যামন্তক বাড়ির বড় ছেলে ওর দিদি নেই আর পুবালি বাড়ির ছোটো মেয়ে ওর কোনও ভাই নেই। সেই কারনে দুই ভাই বোনের মধ্যে এক নিবিড় ভালবাসা জন্মায় ছোটো বেলা থেকে। প্যান্ড্যালের তদারকি করতে করতে চোখের এক কোনে এক ফোঁটা জল চলে আসে স্যামন্তকের। দিদি চলে যাবে বিয়ে করে বম্বে। জামাই ওখানে এক তেল কম্পানির ম্যানেজার।
স্যামন্তক সেন্ট জেভিয়ারস কলেজের ফিজিক্*স এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, বয়স বাইশ। ওর দিদি পুবালির বয়স চব্বিশ, শান্তিনিকেতন থেকে নাচে স্নাতক। ছোটো বেলায় কত না শিমুল ফুল তুলেছে ও দিদির জন্য। পুবালি যখন কলকাতায় ওর কাকুর বাড়ি যেত তখন স্যামু এক দিনের জন্যও দিদির পাশ ছারত না। ছোটো বেলায় যখন ঘুমত তখন দিদির আঁচল নিজের মুঠির মধ্যে নিয়ে শুত ও পাছে রাতের বেলায় দিদি ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। স্যামন্তক জানে যে দিদির সাথে আবার কবে দেখা হবে তার নেই ঠিক। স্যামন্তক থাকে কলকাতায় আর ওর জেঠুর বাড়ি দুর্গাপুরে। দিদি হয়তো আসবে ফিরে, ও হয়তো থাকবে না। আবার কবে ওর দিদির সাথে দেখা হবে সেটা তার জানা নেই।
এমন সময় ওপর থেকে ডাক পরে স্যামন্তকের। জেঠিমা হাক পাড়ে—“শ্যামু শুনছিস বাবা। একদিকে একটু আসবি।“
না তাকিয়েই উত্তর দেয়—“কি হল দেখতে পাওনা আমি এখন ব্যাস্ত।”
জেঠি জানে ওর মখ্যম অস্ত্র না ছারলে ও কারু কথা শুনবে না—“তোর দিদি তোকে ডাকছে।”
দিদি ডাকছে মানে, ওর কাছে যদি যমরাজ ও এসে বলে “তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি।” ও তাকে বলবে “একটু দাঁড়াও দিদি ডাকছে।”
স্যামন্তক দৌড়াতে দৌড়াতে পুবালির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে—“কি হয়েছে ডাকছিস কেন?”
পুবালি এক ভাবে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে ছেলে হয়তো এক কোনায় লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছিল। ও উঠে এসে স্যামন্তকের হাথ ধরে বলল—“তুই কি কাঁদছিলি?”
জোরে মাথা নাড়ায় স্যামন্তক—“ধুর আমি কোথায় কাঁদছিলাম, তুই কি যে বলিস না। ছাড়, বল কি হয়েছে?”
—“আমার এক বান্ধবী আসবে, তোকে তাকে আনতে স্টেশানযেতে হবে।”
—“ধুর এই সময় আমি কেন যাবো, তুই অন্য কাউকে পাঠা না। আমি এখন কোথাও যেতে পারবোনা।”
—“তুই যা না সোনা আমার লক্ষ্মী ভাইটি। তারপরে আমার মুখ এঁকে ও দিতে হবে।”
জল ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তক পুবালির দিকে—“আমি তোর মুখ আঁকতে পারবোনা। প্লিস সেটা আমাকে করতে বলিস না।”
মাথায় হাথ বুলিয়ে পুবালি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে—“আমায় শেষ বারের মতন সাজিয়ে দিবি না।”
পুবালি আর স্যামন্তক দুই জনের চোখে জল টলমল করে। পুবালির মা পেছনে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনতে শুনতে আনমনে কেঁদে ফেললেন।
পুবালি বলে—“আচ্ছা তুই যদি আমার বান্ধবী কে আনতে যাস তো তোকে আমি সেই টা আবার খেতে দেবো।”
জড়িয়ে ধরে ও ওর দিদি কে—“সত্যি বলছিস?” মাথা নাড়ায় পুবালি “হ্যাঁ”
হাসতে হাসতে ও দিদির কানে কানে বলে—“তোর বান্ধবী না বান্দরি যেই হোক, সুন্দরী দেখতে কি? আমি চিনবো কি করে বা ও আমায় চিনবে কি করে?”
মাথায় গাঁট্টা মেরে পুবালি ওকে সাবধান করতে করতে বলে—“এই কিছু করতে যাস না যেন, ও আমার সব থেকে ভাল বান্ধবী।”
—“নামটা তো বল আগে।”
“বন্দনা, বন্দনা সরকার। আসাম থাকে, হাওড়া হয়ে আসছে।” বলে পুবালি ওর হাথে একটা ফটো ধরিয়ে দেয়।
ফটোর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে মাথা চুলকায় স্যামন্তক। দুই তিন বার বির বির করে বলে ওঠে “বন্দনা, বন্দনা হাঁ হাঁ তোর সাথে আরও ফটোতে দেখছি আমি।” ঠোঁট উল্টে বলে ও—“তুই আমার জন্যে তৈরি করে রাখিস আমি তোর বন্দনা কে আনতে চললাম।” স্যামন্তক বন্দনাকে স্টেশান থেকে আনতে বেরিয়ে যায়।
গায়ে হলুদ হয়ে গেছে পুবালির। ও একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ী পরে ঘরে বসে নিজের ঘর টাকে শেষ বারের মতন দেখতে থাকে। আস্তে আস্তে ও রান্না ঘরে ঢোকে, একটা ছোটো কড়াই এ অল্প সুজি নিয়ে গ্যাস ওভেনে চাপিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওকে রান্না ঘরে ঢুকতে দেখে, ওর মা কাকিমা সবাই হই ছই করে ওঠে “কি করছিস কি করছিস, আজ তোর বিয়ে আর তুই রান্না ঘরে?”
চোখের কোল মুছতে মুছতে পুবালি ওদের দিকে তাকিয়ে বলে—“আমার ভাই আমার হাথের সুজি খেতে চেয়েছে, আমি কি সে টুকু বানিয়ে দিতে পারিনা।”
ওর কথা শুনে কারুর মুখ থেকে কোনও আওয়াজ বের হয় না। বাড়ির সবাই জানে, দিদি যদি তার ভাইয়ের জন্যও কিছু করার মনস্থির করে তাহলে, কেউ বাধা দিতে সাহস পায় না।
পুবালির মা, ওকে তাও একবার বলে—“তুই রেস্ট নে, আমি বানিয়ে দিচ্ছি। ও তো আর দেখতে যাচ্ছে না কে বানিয়েছে।”
কান্না জড়ানো গলায় পুবালি বলে ওঠে—“ও না দেখলে ও কি হয়েছে, আমি তো জানি যে আমি বানাইনি। আমি ওকে খাওয়াবো কি করে? যাই হোক তোমরা কিছু বলতে এস না, লাভ হবে না।”
ওর কাকিমা, স্যামন্তকের মা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি বলে উঠলেন—“দিদি ছেড়ে দাও ওকে, ও আজ কারু কথা শুনবেনা।” তারপরে পুবালির দিকে তাকিয়ে বলেন “করছিস কর সাবধানে করিস।”
স্যামন্তক গাড়িতে বসে একমনে ভাবতে থাকে বন্দনার কথা, ভাবতে ভাবতে একটা সিগারেট জ্বালায় ও। বুক ভরে এক টান মারে সিগারেটে, তারপরে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে দিদির পাশে দাঁড়ানো সুন্দরী তন্বী তারুনির মুখ। গায়ের রঙ যদিও দিদির মতন অতটা ফর্সা নয় তবে শ্যাম বর্ণ বললেও একটু ভুল হবে। ডিম্বাকৃতি মুখবয়াব, বেশ মিষ্টি গাল দুটি, থুতনি তে এক ক্ষীণ কাটা দাগ সৌন্দর্য টাকে যেন বেশি বর্ধিত করে তোলে। চোখ দুটি ছোটো ছোটো হলেও যেন অনেক কথা বলে, ভুরু দুটি যেন কোনও পালের তুলি দিয়ে আঁকা। মাথা ভর্তি চুল, একটা খোঁপা করা, ঘাড়ের পেছনে এলিয়ে দেওয়া। পরনে একটা গেঞ্জি, ভরাট বুকের বেশির ভাগটাই ঢাকা। এক হাথে জড়িয়ে ধরে আছে পুবালি কে ফটো তে বুক পর্যন্ত ছবি, তাই বেশি কিছু দেখতে পারেনি ও। স্যামন্তক ভাবতে থাকে, যদি দিদির জায়গায় ও থাকতে পারত, নিজের অজান্তেই হেসে ফেলে ও।
ওর স্টেশান পৌঁছতে একটু দেরি হল, রাস্তায় জ্যাম ছিল। স্যামন্তক দৌরতে দৌরতে প্লাটফর্মে ঢোকে। ঢুকে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়ায়, কোথায় গেলো বন্দনা। একবার হাথের ফটোর দিকে তাকায় একবার চারদিকে তাকায়। এতো সুন্দরী তন্বী তরুনি, একা একা দাঁড়িয়ে থাকবে এটা ভেবেই ওর বুক টা কেমন একটা করে ওঠে।
বন্দনা জানেনা ওকে কে নিতে আসছে, ও শুধু এই টুকুই জানে যে ওর জন্যে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে স্টেশানের বাইরে। এদিকে ওদিকে তাকায় বন্দনা, কেউ কি ওর খোঁজ করছে? কই কাউ কে দেখতে তো পায় না।
স্যামন্তক হটাত দেখতে পায় বন্দনা কে, পরনে একটা হাল্কা নীল রঙের হাথ-কাটা আঁটো সালওয়ার কামিজ। গলার চারদিকে জড়ানো একটা নীল রঙের শাল পেছন থেকে বুকের ওপরে নেমে এসেছে। ছোটো ডিমের আকারের মুখ বয়াব, বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে। দু চোখে মাখা একটা মিষ্টি চাহনি। কপালে ছোটো একটা নীল টিপ, দুই ভুরুর মাঝে আঁকা। ভরাট বুক দুটি বন্ধন মুক্ত হবার অধির আগ্রহে অগ্র ভাগের সৌন্দর্য বর্ধিত করছে। মাথার চুল সাপের মতন একটা বেনুনি করা, পিঠের ওপরে দুলছে। পাতলা কোমরের পরে সুডৌল বলয় দ্বয়ের ওপরে এঁটে বসে কামিজটা, টান টান হয়ে বলয়ের আকার প্রস্ফুটিত করে তুলেছে। এক হাথে একটা ছোটো কালো ব্যাগ এবং একটা সুটকেস নিয়ে দাঁড়িয়ে। ডান হাথের কব্জি তে একটা সোনার ঘড়ি, বাম কব্জি তে কয়েকটা সোনার চুড়ি।
বন্দনা লক্ষ্য করে, এক সুঠাম পুরুষ চোখে চশমা, মাথার চুল একটু এলোমেলো, পরনে একটা কালো রঙের পাঞ্জাবি তার দিকে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। একটু ইতস্তত করে বন্দনা। উচ্চতায় প্রায় পাঁচ ফুট দশ ইঞ্ছি খানিক হবে ছেলেটা। কোনও দিন আগে ও দেখেনি, এক অজানা অচেনা পুরুষ তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে একটু ভয় পেয়ে যায় বন্দনা।
স্যামন্তক ডান হাথ বাড়িয়ে বন্দনা কে আভিনন্দন জানায়—“তুমি নিশ্চয় বন্দনা।”
ইতস্তত ভাবে বন্দনা মাথা নাড়ায়, ভেবে কুল পায় না কে এই ব্যাক্তি। বন্দনার ইতস্তত ভাব দেখে স্যামন্তক হাসি চাপতে পারেনা। ও হেসে ওঠে—“আমি পুবালির ভাই, স্যামন্তক। আমি তোমাকে নিতে এসেছি।”
হাঁপ ছেড়ে, হেসে ওঠে বন্দনা—“বাঃবা আমি তো ভাবলাম কে না কে আমার দিকে ঐ রকম ভাবে তাকিয়ে নির্লজ্জর মতন হাসছে।”
স্যামন্তক সুটকেসটা হাতে নিয়ে ওকে বলে—“চল তাহলে, দিদি তোমার জন্যও ওয়েট করছে। বেশি দেরি হলে দিদি আমাকে মেরে ফেলবে।”
বন্দনা স্যামন্তকের দিকে একবার তাকিয়ে বলে—“তোমার কথা অনেক শুনেছি তোমার দিদির মুখে। দেখিনি তোমাকে কোনও দিন।”
—“ব্যাস দেখা হয়ে গেলো, আবার কি।”
—“তুমি সেন্ট জেভিয়ারসে পড়, তাই না?”
“হ্যাঁ। আর তুমি তো নাচ শিখতে দিদির সাথে শান্তিনিকেতনে। আমি তোমাকে ফটো তে দেখেছি।” এই বলে স্যামন্তক ফটো টা বন্দনার হাতে ধরিয়ে দেয়।
—“বাঃ বা, আমাকে ফটো নিয়ে খোঁজা হচ্ছিলো। জানতামনা যে আমি এতো ইম্পরট্যান্ট।”
হেসে ওঠে স্যামন্তক—“আমার দিদির বান্ধবী যখন, তখন ইম্পরট্যান্ট না হয়ে হয় না। তা কখন বেরিয়েছ বাড়ি থেকে?”
পাশা পাশি হাঁটতে হাঁটতে, ওদের হাথ দুটি মাঝে মাঝে ঠোকর খাচ্ছিল পরস্পরের সাথে। স্যামন্তক, বন্দনার নরম হাথের পরশে যেন একটা বিজলি বাতির আভাস পায়। বন্দনার গা থেকে, ঘাম এবং পারফিউমের মিলিত একটা মধুর গন্ধ স্যামন্তকের নাশিকা কে মাতাল করে তোলে।
ঘাড়ের পাছনে একটু হাথ বুলিয়ে বন্দনা বলে—“আর বোলোনা, দুই দিন ট্রেনে। আমি আর পারছিনা, খুব টায়ার্ড হয়ে গেছি বুঝলে।”
হাঁটতে হাঁটতে ওরা প্লাটফর্মের বাইরে চলে আসে। গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল, বন্দনা কে গাড়িতে উঠতে বলে সুটকেস টা ডিকি তে রেখে দিল স্যামন্তক। একটা সিগারেট ধরাবে ভাবল স্যামন্তক, এই রকম একটা তন্বী নারীর পাশে বসে যেতে হবে এই ভেবেই ওর বুক টা কেমন যেন করে উঠলো। নারীর স্পর্শ আগে ও পায়নি সেই রকম নয়, কলেজে ওর অনেক বান্ধবী আছে। তাদের পরশ ও গায়ে মেখেছে। মাস তিনেক আগে পর্যন্ত ওর আর শ্যামলীর মধ্যে একটা এফেয়ার ছিল, অনেক কাছাকাছি ওরা এসেছে। শ্যামলী নিজেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং স্যামন্তক তার আবেদনে সারাও দিয়েছে। কিন্তু শ্যামলীর চোখে একটা কামনার ক্ষুধা ছিল, মিষ্টতা বা মাদকতা ছিলনা। সেই কামিনি রূপ পাগল করে দিয়েছিল স্যামন্তককে, অবশেষে একদিন ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো কোনও এক কারনে। বন্দনা রূপে একটা অজানা মিষ্টতা খুঁজে পেল স্যামন্তক, সেই মিষ্টতার সাথে একটা মাধুর্য লুকিয়ে ছিল বন্দনার চোখে মুখে।
দেরি দেখে, বন্দনা বলে ওঠে—“আরে, আমরা যাবো কখন, দেরি হয়ে যাচ্ছেনা?”
—“এই যাচ্ছি, একটা সিগারেট খেয়ে নেই তারপরে।”
হেসে ওঠে খিল খিল করে বন্দনা, হাশিতে যেন দু পাটি দাঁত মুক্তর মতন ঝিলিক মারে গোলাপি ঠোঁটের আড়াল থেকে—“আমার সামনে সিগারেট খেতে লজ্জা করবে না তোমার?”
কথাটা শুনে একটু লজ্জায় পরে গেলো স্যামন্তক, মাথা চুলকিয়ে সিগারেটটা ফেলে দেয়। বন্দনা কে জিজ্ঞেস করে—“তুমি কিছু খাবে নাকি? অনেক্ষন তো হল বেরিয়েছ?”
মরালীর ন্যায় গ্রীবায় হাথ বুলিয়ে করুন চোখে তাকায় স্যামন্তকের দিকে বন্দনা—“গলাটা শুকিয়ে গেছে, একটা কোল্ড ড্রিংক পেলে বড় ভাল হতো।”
—“বাঃ রে, দিদির বান্ধবী তায় এতো হেসিটেসান, বল্লেই পারতে আগে।”
হেসে বলে বন্দনা—“এই তো বললাম এবারে তো এনে দেবে নাকি।”
পাশের দোকান থেকে কোল্ড ড্রিংক কিনে বন্দনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে—“এই নাও, তোমার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আর কি করতে পারি” বলতে বলতে একটা চোরা হাসি হাসে স্যামন্তক।
বন্দনা ওর চোখের চাহনি দেখে একটু মজা পায়। বোতলে একটা বড় চুমুক দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলে—“আর কি করতে পারো তুমি?”
এটা ঠিক আশা করেনি স্যামন্তক, ও ভেবেছিল বন্দনা হয়তো লজ্জা পাবে এবং একটা লাজুক হাসি হেসে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকবে। যেটা হল সেটা একদম উলটো, বন্দনা ওকে লজ্জায় ফেলে দিল।
“কিছুনা এবারে চলা যাক কি বলো।” স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে বন্দনা কে। বন্দনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
গাড়িতে উঠে পাশাপাশি বসে ওরা। স্যামন্তক বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে—“আগেও তো এসেছ এখানে, তো আজ কেন একা আসতে পারলে না?”
“একাই আসতাম আমি, পুবালি বলল ও গাড়ি পাঠাবে তাই” স্যামন্তকের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল।
—“তো তুমি আসামের কোথায় থাকো? তোমাকে দেখে তো অখমীয়া বলে মনে হয় না।”
স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায় বন্দনা—“বাবা চাকরি সুত্রে দিব্রুগরে থাকেন। আমাদের বাড়ি কৃষ্ণনগর। তুমি তো কলকাতায় থাকো তাই না?”
বন্দনার দিকে আলতো মাথা নাড়িয়ে বলে—“হ্যাঁ”
বন্দনা ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে স্যামন্তককে নিরীক্ষণ করতে থাকে, বেশ সুঠাম গড়ন, চওড়া কাঁধ, প্রসস্থ বুক। বুকের পেশি গুলো যেন পাঞ্জাবি ভেদ করে বেরিয়ে আসবে। হাথ দুটি দেখলে মনে হয় যেন দুটো লোহার মুদ্গল। কাউকে যদি ভুল বশত চাঁটি মারে তাহলে হয়তো দ্বিতিয় বার জল চাইবেনা। চশমার পেছনে লুকিয়ে থাকা বড় বড় দুটি চোখ ওকে যেন মেপে নিতে চাইছে। বন্দনার চোখ হটাত করে স্যামন্তকের সাথে মিলে যায়। চার চোখ এক হতেই বন্দনা লাজুক হেসে চোখ নামিয়ে ফেলে।
গালে একটু উষ্ণত্বরা ভাব দেখা দেয় একি ভাবছে ও, নিভৃতে এক সুঠাম পুরুষের পাশে বসে কি ওর বর্তমান, নিরুপম কে ভুলে গেছে? ছি ছি, বন্দনা। নিজের মনেই হেসে ফেলে। সেই শান্তিনিকেতনে দেখা নিরুপমের সাথে, খুব ভাল আঁকে নিরুপম। দিল্লিতে বাড়ি, খুবই সম্পন্ন ঘরের ছেলে ও, মাঝে মাঝেই আসে ওর সাথে দেখা করতে ডিব্রুগরে। শান্তিনিকেতনের কত অলিগলিতে ওদের প্রেমের উপাখ্যান ছড়িয়ে আছে। বনেরপুকুরডাঙার পাশে কোপাই নদীর তীরে প্রথম মেলে ধরে বন্দনা, নিভৃতে খোলা আকাশের মাঝে নিজের মাধুর্য হারিয়ে ভেসে যায় ও এবং নিরুপম। তার পরে থেমে থাকার পথ ওরা আর খোঁজেনি। নিরুপম থাকতো একটা ঘর ভাড়া করে, আর সেই ঘরের মধ্যে তাদের খেলা চলত, দিন দপুর রাত। কখনও বিছানায়, কখনও মেঝেতে, কখনও রান্না ঘরে। সময় বা স্থান ভুলে তারা রতি ক্রীড়ায় মগ্ন থাকতো বেশির ভাগ সময়।
বন্দনার বাবা মার ও নিরুপম কে বিশেষ পছন্দ নয়, এক কারন, ছেলেটা কেমন যেন লম্পট স্বভাবের। এক বার দেখেই বুঝে গেছিলো বন্দনার মা। মেয়েকে সাবধান করেছিলেন কিন্তু, বন্দনা তখন প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে বয়ে চলেছে। যারাই তাকে সাবধান বানী শোনায় তাদেরি তার শত্রু বলে মনে হয়।
পুবালিরও নিরুপমের স্বাভাব কোনোদিন ভাল লাগেনি। নিরুপমকে পুবালি ভাল চোখে দেখতে পারতোনা। সব সময় যেন চোখে একটা বাসনার ক্ষুধা মেখে তাকিয়ে থাকতো ও। ঐ চোখ দেখে অনেক বার সাবধান করেছে বন্দনাকে, কিন্তু বন্দনা কোনও কথা কানে দেয় নি, আজও পুবালির কথা ও শোনেনি। পুবালি বার বার বন্দনা কে সাবধান করেছে “দ্যাখ বন্দনা, একদিন ও অন্য কোনও মেয়ে দেখে তোকে ছেড়ে দেবে। ও শুধু মাত্র তোর দেহ টাকে নিয়ে খেলছে।” কান দেয়নি বন্দনা। সেই নিয়ে অনেক মনমালিন্য ঘটে পুবালির সাথে। অনেক দিন কথা বন্দ থাকে, তারপরে কলেজ শেষ হয়ে যায়। বন্দনা ফিরে যায় আসাম। ফোনে মাঝে মাঝে কথা হয়। তারপরে একদিন পুবালির বিয়ের নিমন্ত্রন পায় বন্দনা। সেই নিমন্ত্রন উপেক্ষা করতে পারেনা। ফোনে দুই বান্ধবির পুরনো ভালবাসা আবার জেগে ওঠে, সেই টানে হাজার মাইল পাড় করে বন্দনা উপস্থিত ওর প্রানের বান্ধবীর বিয়েতে।
বন্দনা একভাবে গাড়ির বাইরে তাকিয়ে এই সব ভাবতে থাকে। অনেকক্ষণ ধরে কেউ কোনও কথা বলেনা, কারুরই বিশেষ কিছু বলার ছিলোনা।
বন্দনা কে চুপ করে থাকতে দেখে, স্যামন্তক বলে—“কি ভাবছ বলত এতো, বেশ একটু আনমনা দেখাচ্ছে। কি হল।”
হটাত করে স্যামন্তকের আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে বন্দনা। মাথা ঝাঁকিয়ে বলে ওঠে—“কই কিছু নাতো।”
“হুম… না মানে মুখটা কেমন কেমন লাগছিলো তাই জিজ্ঞেস করলাম” শ্যেন দৃষ্টি হেনে স্যামন্তক বন্দনাকে বলল।
বন্দনা সারা মুখে জরিপ করার ন্যায় এক বার চোখ বুলিয়ে দেখতে চেষ্টা করলো স্যামন্তক কি ওকে ধরে ফেলেছে? না ওর মনের কথা স্যামন্তক কি করে বুঝবে। বন্দনা এক বার ভাবল, একটু খেলে দেখা যাক স্যামন্তকের সাথে, ক্ষতি কি, বেশি দূর এগবে না। একটু খানি ফ্লারট করতে তো পারেই ও। বিয়ে বাড়ি বলে ব্যাপার, আরও কত ছেলে থাকবে।
গাড়ি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামতে নামতে, পেছনে একবার ঘুরে দেখে বন্দনা, একটা মিষ্টি হেসে স্যামন্তকের ঘুম কেড়ে নিয়ে চলে যায়। স্যামন্তক ঐ হাসি দেখে আর থাকতে পারেনা, মনে মনে নেচে ওঠে “লরকি হাসি তো ফসি।” এমন একটা বিজয়ী ভাব নিয়ে তাকায় ও বন্দনার দিকে।
ওপরে উঠতে উঠতে স্যামন্তক চেয়ে দেখে বন্দনার চলন। মত্ত হস্তিনির ন্যায় চাল, দদুল্যমান চালে পশ্চাৎ গোলায় ঢেউ লাগে। বেনুনি টা যেন এঁকে বেকে একটা সাপের ন্যায় দুলতে থাকে চওড়া পিঠের মাঝে। বন্দনা চলনের সাথে সাথে বিয়ে বাড়ির অর্ধেক পুরুষের মন যেন ছলক ছলক করে উঠছে।
চলবে.....
লেখক- মেঘলা আকাশ
পর্ব-১
শীত কাল, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। গুন গুন করছে ঠাণ্ডা, আকাশে ঝলমল রোদের কিরণে বাতাস বেশ গরমই আছে। সকাল থেকেই সারা বাড়িতে হইচই। সানাই বেজে চলেছে এক সুরে। বাড়িতে লোকের পা ফেলার মতন জায়গা নেই। বেশির ভাগ, আত্মীয় সজ্জন এসে গেছেন। স্যামন্তক একটা ট্রাক সুটের জ্যাকেট পরে, খাওয়ার জায়গার প্যান্ড্যাল টার তদারকি করতে ব্যাস্ত। আজ তার জ্যাঠতুত দিদি পুবালির বিয়ে। ছোটো বেলা থেকে ও আর দিদি খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল। বড়দির পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়ে যায়। পুবালি ওর চেয়ে বছর দুই বড়। স্যামন্তক বাড়ির বড় ছেলে ওর দিদি নেই আর পুবালি বাড়ির ছোটো মেয়ে ওর কোনও ভাই নেই। সেই কারনে দুই ভাই বোনের মধ্যে এক নিবিড় ভালবাসা জন্মায় ছোটো বেলা থেকে। প্যান্ড্যালের তদারকি করতে করতে চোখের এক কোনে এক ফোঁটা জল চলে আসে স্যামন্তকের। দিদি চলে যাবে বিয়ে করে বম্বে। জামাই ওখানে এক তেল কম্পানির ম্যানেজার।
স্যামন্তক সেন্ট জেভিয়ারস কলেজের ফিজিক্*স এর ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, বয়স বাইশ। ওর দিদি পুবালির বয়স চব্বিশ, শান্তিনিকেতন থেকে নাচে স্নাতক। ছোটো বেলায় কত না শিমুল ফুল তুলেছে ও দিদির জন্য। পুবালি যখন কলকাতায় ওর কাকুর বাড়ি যেত তখন স্যামু এক দিনের জন্যও দিদির পাশ ছারত না। ছোটো বেলায় যখন ঘুমত তখন দিদির আঁচল নিজের মুঠির মধ্যে নিয়ে শুত ও পাছে রাতের বেলায় দিদি ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। স্যামন্তক জানে যে দিদির সাথে আবার কবে দেখা হবে তার নেই ঠিক। স্যামন্তক থাকে কলকাতায় আর ওর জেঠুর বাড়ি দুর্গাপুরে। দিদি হয়তো আসবে ফিরে, ও হয়তো থাকবে না। আবার কবে ওর দিদির সাথে দেখা হবে সেটা তার জানা নেই।
এমন সময় ওপর থেকে ডাক পরে স্যামন্তকের। জেঠিমা হাক পাড়ে—“শ্যামু শুনছিস বাবা। একদিকে একটু আসবি।“
না তাকিয়েই উত্তর দেয়—“কি হল দেখতে পাওনা আমি এখন ব্যাস্ত।”
জেঠি জানে ওর মখ্যম অস্ত্র না ছারলে ও কারু কথা শুনবে না—“তোর দিদি তোকে ডাকছে।”
দিদি ডাকছে মানে, ওর কাছে যদি যমরাজ ও এসে বলে “তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি।” ও তাকে বলবে “একটু দাঁড়াও দিদি ডাকছে।”
স্যামন্তক দৌড়াতে দৌড়াতে পুবালির কাছে এসে জিজ্ঞেস করে—“কি হয়েছে ডাকছিস কেন?”
পুবালি এক ভাবে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে ছেলে হয়তো এক কোনায় লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছিল। ও উঠে এসে স্যামন্তকের হাথ ধরে বলল—“তুই কি কাঁদছিলি?”
জোরে মাথা নাড়ায় স্যামন্তক—“ধুর আমি কোথায় কাঁদছিলাম, তুই কি যে বলিস না। ছাড়, বল কি হয়েছে?”
—“আমার এক বান্ধবী আসবে, তোকে তাকে আনতে স্টেশানযেতে হবে।”
—“ধুর এই সময় আমি কেন যাবো, তুই অন্য কাউকে পাঠা না। আমি এখন কোথাও যেতে পারবোনা।”
—“তুই যা না সোনা আমার লক্ষ্মী ভাইটি। তারপরে আমার মুখ এঁকে ও দিতে হবে।”
জল ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে স্যামন্তক পুবালির দিকে—“আমি তোর মুখ আঁকতে পারবোনা। প্লিস সেটা আমাকে করতে বলিস না।”
মাথায় হাথ বুলিয়ে পুবালি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে—“আমায় শেষ বারের মতন সাজিয়ে দিবি না।”
পুবালি আর স্যামন্তক দুই জনের চোখে জল টলমল করে। পুবালির মা পেছনে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনতে শুনতে আনমনে কেঁদে ফেললেন।
পুবালি বলে—“আচ্ছা তুই যদি আমার বান্ধবী কে আনতে যাস তো তোকে আমি সেই টা আবার খেতে দেবো।”
জড়িয়ে ধরে ও ওর দিদি কে—“সত্যি বলছিস?” মাথা নাড়ায় পুবালি “হ্যাঁ”
হাসতে হাসতে ও দিদির কানে কানে বলে—“তোর বান্ধবী না বান্দরি যেই হোক, সুন্দরী দেখতে কি? আমি চিনবো কি করে বা ও আমায় চিনবে কি করে?”
মাথায় গাঁট্টা মেরে পুবালি ওকে সাবধান করতে করতে বলে—“এই কিছু করতে যাস না যেন, ও আমার সব থেকে ভাল বান্ধবী।”
—“নামটা তো বল আগে।”
“বন্দনা, বন্দনা সরকার। আসাম থাকে, হাওড়া হয়ে আসছে।” বলে পুবালি ওর হাথে একটা ফটো ধরিয়ে দেয়।
ফটোর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে মাথা চুলকায় স্যামন্তক। দুই তিন বার বির বির করে বলে ওঠে “বন্দনা, বন্দনা হাঁ হাঁ তোর সাথে আরও ফটোতে দেখছি আমি।” ঠোঁট উল্টে বলে ও—“তুই আমার জন্যে তৈরি করে রাখিস আমি তোর বন্দনা কে আনতে চললাম।” স্যামন্তক বন্দনাকে স্টেশান থেকে আনতে বেরিয়ে যায়।
গায়ে হলুদ হয়ে গেছে পুবালির। ও একটা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ী পরে ঘরে বসে নিজের ঘর টাকে শেষ বারের মতন দেখতে থাকে। আস্তে আস্তে ও রান্না ঘরে ঢোকে, একটা ছোটো কড়াই এ অল্প সুজি নিয়ে গ্যাস ওভেনে চাপিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওকে রান্না ঘরে ঢুকতে দেখে, ওর মা কাকিমা সবাই হই ছই করে ওঠে “কি করছিস কি করছিস, আজ তোর বিয়ে আর তুই রান্না ঘরে?”
চোখের কোল মুছতে মুছতে পুবালি ওদের দিকে তাকিয়ে বলে—“আমার ভাই আমার হাথের সুজি খেতে চেয়েছে, আমি কি সে টুকু বানিয়ে দিতে পারিনা।”
ওর কথা শুনে কারুর মুখ থেকে কোনও আওয়াজ বের হয় না। বাড়ির সবাই জানে, দিদি যদি তার ভাইয়ের জন্যও কিছু করার মনস্থির করে তাহলে, কেউ বাধা দিতে সাহস পায় না।
পুবালির মা, ওকে তাও একবার বলে—“তুই রেস্ট নে, আমি বানিয়ে দিচ্ছি। ও তো আর দেখতে যাচ্ছে না কে বানিয়েছে।”
কান্না জড়ানো গলায় পুবালি বলে ওঠে—“ও না দেখলে ও কি হয়েছে, আমি তো জানি যে আমি বানাইনি। আমি ওকে খাওয়াবো কি করে? যাই হোক তোমরা কিছু বলতে এস না, লাভ হবে না।”
ওর কাকিমা, স্যামন্তকের মা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি বলে উঠলেন—“দিদি ছেড়ে দাও ওকে, ও আজ কারু কথা শুনবেনা।” তারপরে পুবালির দিকে তাকিয়ে বলেন “করছিস কর সাবধানে করিস।”
স্যামন্তক গাড়িতে বসে একমনে ভাবতে থাকে বন্দনার কথা, ভাবতে ভাবতে একটা সিগারেট জ্বালায় ও। বুক ভরে এক টান মারে সিগারেটে, তারপরে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে দিদির পাশে দাঁড়ানো সুন্দরী তন্বী তারুনির মুখ। গায়ের রঙ যদিও দিদির মতন অতটা ফর্সা নয় তবে শ্যাম বর্ণ বললেও একটু ভুল হবে। ডিম্বাকৃতি মুখবয়াব, বেশ মিষ্টি গাল দুটি, থুতনি তে এক ক্ষীণ কাটা দাগ সৌন্দর্য টাকে যেন বেশি বর্ধিত করে তোলে। চোখ দুটি ছোটো ছোটো হলেও যেন অনেক কথা বলে, ভুরু দুটি যেন কোনও পালের তুলি দিয়ে আঁকা। মাথা ভর্তি চুল, একটা খোঁপা করা, ঘাড়ের পেছনে এলিয়ে দেওয়া। পরনে একটা গেঞ্জি, ভরাট বুকের বেশির ভাগটাই ঢাকা। এক হাথে জড়িয়ে ধরে আছে পুবালি কে ফটো তে বুক পর্যন্ত ছবি, তাই বেশি কিছু দেখতে পারেনি ও। স্যামন্তক ভাবতে থাকে, যদি দিদির জায়গায় ও থাকতে পারত, নিজের অজান্তেই হেসে ফেলে ও।
ওর স্টেশান পৌঁছতে একটু দেরি হল, রাস্তায় জ্যাম ছিল। স্যামন্তক দৌরতে দৌরতে প্লাটফর্মে ঢোকে। ঢুকে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়ায়, কোথায় গেলো বন্দনা। একবার হাথের ফটোর দিকে তাকায় একবার চারদিকে তাকায়। এতো সুন্দরী তন্বী তরুনি, একা একা দাঁড়িয়ে থাকবে এটা ভেবেই ওর বুক টা কেমন একটা করে ওঠে।
বন্দনা জানেনা ওকে কে নিতে আসছে, ও শুধু এই টুকুই জানে যে ওর জন্যে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে স্টেশানের বাইরে। এদিকে ওদিকে তাকায় বন্দনা, কেউ কি ওর খোঁজ করছে? কই কাউ কে দেখতে তো পায় না।
স্যামন্তক হটাত দেখতে পায় বন্দনা কে, পরনে একটা হাল্কা নীল রঙের হাথ-কাটা আঁটো সালওয়ার কামিজ। গলার চারদিকে জড়ানো একটা নীল রঙের শাল পেছন থেকে বুকের ওপরে নেমে এসেছে। ছোটো ডিমের আকারের মুখ বয়াব, বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে। দু চোখে মাখা একটা মিষ্টি চাহনি। কপালে ছোটো একটা নীল টিপ, দুই ভুরুর মাঝে আঁকা। ভরাট বুক দুটি বন্ধন মুক্ত হবার অধির আগ্রহে অগ্র ভাগের সৌন্দর্য বর্ধিত করছে। মাথার চুল সাপের মতন একটা বেনুনি করা, পিঠের ওপরে দুলছে। পাতলা কোমরের পরে সুডৌল বলয় দ্বয়ের ওপরে এঁটে বসে কামিজটা, টান টান হয়ে বলয়ের আকার প্রস্ফুটিত করে তুলেছে। এক হাথে একটা ছোটো কালো ব্যাগ এবং একটা সুটকেস নিয়ে দাঁড়িয়ে। ডান হাথের কব্জি তে একটা সোনার ঘড়ি, বাম কব্জি তে কয়েকটা সোনার চুড়ি।
বন্দনা লক্ষ্য করে, এক সুঠাম পুরুষ চোখে চশমা, মাথার চুল একটু এলোমেলো, পরনে একটা কালো রঙের পাঞ্জাবি তার দিকে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে। একটু ইতস্তত করে বন্দনা। উচ্চতায় প্রায় পাঁচ ফুট দশ ইঞ্ছি খানিক হবে ছেলেটা। কোনও দিন আগে ও দেখেনি, এক অজানা অচেনা পুরুষ তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে একটু ভয় পেয়ে যায় বন্দনা।
স্যামন্তক ডান হাথ বাড়িয়ে বন্দনা কে আভিনন্দন জানায়—“তুমি নিশ্চয় বন্দনা।”
ইতস্তত ভাবে বন্দনা মাথা নাড়ায়, ভেবে কুল পায় না কে এই ব্যাক্তি। বন্দনার ইতস্তত ভাব দেখে স্যামন্তক হাসি চাপতে পারেনা। ও হেসে ওঠে—“আমি পুবালির ভাই, স্যামন্তক। আমি তোমাকে নিতে এসেছি।”
হাঁপ ছেড়ে, হেসে ওঠে বন্দনা—“বাঃবা আমি তো ভাবলাম কে না কে আমার দিকে ঐ রকম ভাবে তাকিয়ে নির্লজ্জর মতন হাসছে।”
স্যামন্তক সুটকেসটা হাতে নিয়ে ওকে বলে—“চল তাহলে, দিদি তোমার জন্যও ওয়েট করছে। বেশি দেরি হলে দিদি আমাকে মেরে ফেলবে।”
বন্দনা স্যামন্তকের দিকে একবার তাকিয়ে বলে—“তোমার কথা অনেক শুনেছি তোমার দিদির মুখে। দেখিনি তোমাকে কোনও দিন।”
—“ব্যাস দেখা হয়ে গেলো, আবার কি।”
—“তুমি সেন্ট জেভিয়ারসে পড়, তাই না?”
“হ্যাঁ। আর তুমি তো নাচ শিখতে দিদির সাথে শান্তিনিকেতনে। আমি তোমাকে ফটো তে দেখেছি।” এই বলে স্যামন্তক ফটো টা বন্দনার হাতে ধরিয়ে দেয়।
—“বাঃ বা, আমাকে ফটো নিয়ে খোঁজা হচ্ছিলো। জানতামনা যে আমি এতো ইম্পরট্যান্ট।”
হেসে ওঠে স্যামন্তক—“আমার দিদির বান্ধবী যখন, তখন ইম্পরট্যান্ট না হয়ে হয় না। তা কখন বেরিয়েছ বাড়ি থেকে?”
পাশা পাশি হাঁটতে হাঁটতে, ওদের হাথ দুটি মাঝে মাঝে ঠোকর খাচ্ছিল পরস্পরের সাথে। স্যামন্তক, বন্দনার নরম হাথের পরশে যেন একটা বিজলি বাতির আভাস পায়। বন্দনার গা থেকে, ঘাম এবং পারফিউমের মিলিত একটা মধুর গন্ধ স্যামন্তকের নাশিকা কে মাতাল করে তোলে।
ঘাড়ের পাছনে একটু হাথ বুলিয়ে বন্দনা বলে—“আর বোলোনা, দুই দিন ট্রেনে। আমি আর পারছিনা, খুব টায়ার্ড হয়ে গেছি বুঝলে।”
হাঁটতে হাঁটতে ওরা প্লাটফর্মের বাইরে চলে আসে। গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল, বন্দনা কে গাড়িতে উঠতে বলে সুটকেস টা ডিকি তে রেখে দিল স্যামন্তক। একটা সিগারেট ধরাবে ভাবল স্যামন্তক, এই রকম একটা তন্বী নারীর পাশে বসে যেতে হবে এই ভেবেই ওর বুক টা কেমন যেন করে উঠলো। নারীর স্পর্শ আগে ও পায়নি সেই রকম নয়, কলেজে ওর অনেক বান্ধবী আছে। তাদের পরশ ও গায়ে মেখেছে। মাস তিনেক আগে পর্যন্ত ওর আর শ্যামলীর মধ্যে একটা এফেয়ার ছিল, অনেক কাছাকাছি ওরা এসেছে। শ্যামলী নিজেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং স্যামন্তক তার আবেদনে সারাও দিয়েছে। কিন্তু শ্যামলীর চোখে একটা কামনার ক্ষুধা ছিল, মিষ্টতা বা মাদকতা ছিলনা। সেই কামিনি রূপ পাগল করে দিয়েছিল স্যামন্তককে, অবশেষে একদিন ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো কোনও এক কারনে। বন্দনা রূপে একটা অজানা মিষ্টতা খুঁজে পেল স্যামন্তক, সেই মিষ্টতার সাথে একটা মাধুর্য লুকিয়ে ছিল বন্দনার চোখে মুখে।
দেরি দেখে, বন্দনা বলে ওঠে—“আরে, আমরা যাবো কখন, দেরি হয়ে যাচ্ছেনা?”
—“এই যাচ্ছি, একটা সিগারেট খেয়ে নেই তারপরে।”
হেসে ওঠে খিল খিল করে বন্দনা, হাশিতে যেন দু পাটি দাঁত মুক্তর মতন ঝিলিক মারে গোলাপি ঠোঁটের আড়াল থেকে—“আমার সামনে সিগারেট খেতে লজ্জা করবে না তোমার?”
কথাটা শুনে একটু লজ্জায় পরে গেলো স্যামন্তক, মাথা চুলকিয়ে সিগারেটটা ফেলে দেয়। বন্দনা কে জিজ্ঞেস করে—“তুমি কিছু খাবে নাকি? অনেক্ষন তো হল বেরিয়েছ?”
মরালীর ন্যায় গ্রীবায় হাথ বুলিয়ে করুন চোখে তাকায় স্যামন্তকের দিকে বন্দনা—“গলাটা শুকিয়ে গেছে, একটা কোল্ড ড্রিংক পেলে বড় ভাল হতো।”
—“বাঃ রে, দিদির বান্ধবী তায় এতো হেসিটেসান, বল্লেই পারতে আগে।”
হেসে বলে বন্দনা—“এই তো বললাম এবারে তো এনে দেবে নাকি।”
পাশের দোকান থেকে কোল্ড ড্রিংক কিনে বন্দনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে—“এই নাও, তোমার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আর কি করতে পারি” বলতে বলতে একটা চোরা হাসি হাসে স্যামন্তক।
বন্দনা ওর চোখের চাহনি দেখে একটু মজা পায়। বোতলে একটা বড় চুমুক দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বলে—“আর কি করতে পারো তুমি?”
এটা ঠিক আশা করেনি স্যামন্তক, ও ভেবেছিল বন্দনা হয়তো লজ্জা পাবে এবং একটা লাজুক হাসি হেসে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকবে। যেটা হল সেটা একদম উলটো, বন্দনা ওকে লজ্জায় ফেলে দিল।
“কিছুনা এবারে চলা যাক কি বলো।” স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে বন্দনা কে। বন্দনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
গাড়িতে উঠে পাশাপাশি বসে ওরা। স্যামন্তক বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে—“আগেও তো এসেছ এখানে, তো আজ কেন একা আসতে পারলে না?”
“একাই আসতাম আমি, পুবালি বলল ও গাড়ি পাঠাবে তাই” স্যামন্তকের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল।
—“তো তুমি আসামের কোথায় থাকো? তোমাকে দেখে তো অখমীয়া বলে মনে হয় না।”
স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায় বন্দনা—“বাবা চাকরি সুত্রে দিব্রুগরে থাকেন। আমাদের বাড়ি কৃষ্ণনগর। তুমি তো কলকাতায় থাকো তাই না?”
বন্দনার দিকে আলতো মাথা নাড়িয়ে বলে—“হ্যাঁ”
বন্দনা ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে স্যামন্তককে নিরীক্ষণ করতে থাকে, বেশ সুঠাম গড়ন, চওড়া কাঁধ, প্রসস্থ বুক। বুকের পেশি গুলো যেন পাঞ্জাবি ভেদ করে বেরিয়ে আসবে। হাথ দুটি দেখলে মনে হয় যেন দুটো লোহার মুদ্গল। কাউকে যদি ভুল বশত চাঁটি মারে তাহলে হয়তো দ্বিতিয় বার জল চাইবেনা। চশমার পেছনে লুকিয়ে থাকা বড় বড় দুটি চোখ ওকে যেন মেপে নিতে চাইছে। বন্দনার চোখ হটাত করে স্যামন্তকের সাথে মিলে যায়। চার চোখ এক হতেই বন্দনা লাজুক হেসে চোখ নামিয়ে ফেলে।
গালে একটু উষ্ণত্বরা ভাব দেখা দেয় একি ভাবছে ও, নিভৃতে এক সুঠাম পুরুষের পাশে বসে কি ওর বর্তমান, নিরুপম কে ভুলে গেছে? ছি ছি, বন্দনা। নিজের মনেই হেসে ফেলে। সেই শান্তিনিকেতনে দেখা নিরুপমের সাথে, খুব ভাল আঁকে নিরুপম। দিল্লিতে বাড়ি, খুবই সম্পন্ন ঘরের ছেলে ও, মাঝে মাঝেই আসে ওর সাথে দেখা করতে ডিব্রুগরে। শান্তিনিকেতনের কত অলিগলিতে ওদের প্রেমের উপাখ্যান ছড়িয়ে আছে। বনেরপুকুরডাঙার পাশে কোপাই নদীর তীরে প্রথম মেলে ধরে বন্দনা, নিভৃতে খোলা আকাশের মাঝে নিজের মাধুর্য হারিয়ে ভেসে যায় ও এবং নিরুপম। তার পরে থেমে থাকার পথ ওরা আর খোঁজেনি। নিরুপম থাকতো একটা ঘর ভাড়া করে, আর সেই ঘরের মধ্যে তাদের খেলা চলত, দিন দপুর রাত। কখনও বিছানায়, কখনও মেঝেতে, কখনও রান্না ঘরে। সময় বা স্থান ভুলে তারা রতি ক্রীড়ায় মগ্ন থাকতো বেশির ভাগ সময়।
বন্দনার বাবা মার ও নিরুপম কে বিশেষ পছন্দ নয়, এক কারন, ছেলেটা কেমন যেন লম্পট স্বভাবের। এক বার দেখেই বুঝে গেছিলো বন্দনার মা। মেয়েকে সাবধান করেছিলেন কিন্তু, বন্দনা তখন প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে বয়ে চলেছে। যারাই তাকে সাবধান বানী শোনায় তাদেরি তার শত্রু বলে মনে হয়।
পুবালিরও নিরুপমের স্বাভাব কোনোদিন ভাল লাগেনি। নিরুপমকে পুবালি ভাল চোখে দেখতে পারতোনা। সব সময় যেন চোখে একটা বাসনার ক্ষুধা মেখে তাকিয়ে থাকতো ও। ঐ চোখ দেখে অনেক বার সাবধান করেছে বন্দনাকে, কিন্তু বন্দনা কোনও কথা কানে দেয় নি, আজও পুবালির কথা ও শোনেনি। পুবালি বার বার বন্দনা কে সাবধান করেছে “দ্যাখ বন্দনা, একদিন ও অন্য কোনও মেয়ে দেখে তোকে ছেড়ে দেবে। ও শুধু মাত্র তোর দেহ টাকে নিয়ে খেলছে।” কান দেয়নি বন্দনা। সেই নিয়ে অনেক মনমালিন্য ঘটে পুবালির সাথে। অনেক দিন কথা বন্দ থাকে, তারপরে কলেজ শেষ হয়ে যায়। বন্দনা ফিরে যায় আসাম। ফোনে মাঝে মাঝে কথা হয়। তারপরে একদিন পুবালির বিয়ের নিমন্ত্রন পায় বন্দনা। সেই নিমন্ত্রন উপেক্ষা করতে পারেনা। ফোনে দুই বান্ধবির পুরনো ভালবাসা আবার জেগে ওঠে, সেই টানে হাজার মাইল পাড় করে বন্দনা উপস্থিত ওর প্রানের বান্ধবীর বিয়েতে।
বন্দনা একভাবে গাড়ির বাইরে তাকিয়ে এই সব ভাবতে থাকে। অনেকক্ষণ ধরে কেউ কোনও কথা বলেনা, কারুরই বিশেষ কিছু বলার ছিলোনা।
বন্দনা কে চুপ করে থাকতে দেখে, স্যামন্তক বলে—“কি ভাবছ বলত এতো, বেশ একটু আনমনা দেখাচ্ছে। কি হল।”
হটাত করে স্যামন্তকের আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে বন্দনা। মাথা ঝাঁকিয়ে বলে ওঠে—“কই কিছু নাতো।”
“হুম… না মানে মুখটা কেমন কেমন লাগছিলো তাই জিজ্ঞেস করলাম” শ্যেন দৃষ্টি হেনে স্যামন্তক বন্দনাকে বলল।
বন্দনা সারা মুখে জরিপ করার ন্যায় এক বার চোখ বুলিয়ে দেখতে চেষ্টা করলো স্যামন্তক কি ওকে ধরে ফেলেছে? না ওর মনের কথা স্যামন্তক কি করে বুঝবে। বন্দনা এক বার ভাবল, একটু খেলে দেখা যাক স্যামন্তকের সাথে, ক্ষতি কি, বেশি দূর এগবে না। একটু খানি ফ্লারট করতে তো পারেই ও। বিয়ে বাড়ি বলে ব্যাপার, আরও কত ছেলে থাকবে।
গাড়ি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামতে নামতে, পেছনে একবার ঘুরে দেখে বন্দনা, একটা মিষ্টি হেসে স্যামন্তকের ঘুম কেড়ে নিয়ে চলে যায়। স্যামন্তক ঐ হাসি দেখে আর থাকতে পারেনা, মনে মনে নেচে ওঠে “লরকি হাসি তো ফসি।” এমন একটা বিজয়ী ভাব নিয়ে তাকায় ও বন্দনার দিকে।
ওপরে উঠতে উঠতে স্যামন্তক চেয়ে দেখে বন্দনার চলন। মত্ত হস্তিনির ন্যায় চাল, দদুল্যমান চালে পশ্চাৎ গোলায় ঢেউ লাগে। বেনুনি টা যেন এঁকে বেকে একটা সাপের ন্যায় দুলতে থাকে চওড়া পিঠের মাঝে। বন্দনা চলনের সাথে সাথে বিয়ে বাড়ির অর্ধেক পুরুষের মন যেন ছলক ছলক করে উঠছে।
চলবে.....