29-02-2020, 09:41 AM
এক
রাস্তার পাশের আবছা অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ছোট্ট একটা ঘরে বসে দেশি মদ গিলছিল কালু। এটা আসলে একটা হোটেল, সকালে রুটি-তড়কা, ডিমসিদ্ধ বা অমলেট, চা পাওয়া যায়। দুপুরে ভাত, ডাল, সবজি, মাছ বা মাংস, কখনও চাটনিও থাকে। রাতেও তাই, তবে বাড়তি আইটেম হিসেবে রুটি থাকে। তবে যে জিনিসের জন্য এখানে রাতে ভিড় হয়, সে হল দেশি মদ। হোটেল এর আশপাশ থেকে তখন ভুরভুরিয়ে চুল্লুর গন্ধ ভেসে আসে। এই এলাকায় বেশিরভাগ লোক শ্রমিক শ্রেণীর, কারখানায় মজুরগিরি করে। সারাদিনের পরিশ্রমের পর সন্ধ্যে হলেই একে একে সবাই এসে জমায়েত হয়, আসর জমে ওঠে। হই হুল্লোড় সমানে চলতে থাকে।
হোটেলের ঘরে দুটো অল্প পাওয়ারের বাল্ব টিমটিম করে জ্বলছিল।আবছা আঁধারে কাউকে ঠিকমত চেনার উপায় নেই। তা নিয়ে অবশ্য কারো বিশেষ মাথাব্যাথা নেই। কি দরকার? সবাই এখানে একটাই কারণে জমা হয়, বিশেষ করে এই সময়। রাত এখন সাড়ে দশটা। খাবার দাবারের পাট চুকে গেছে এই কিছুক্ষণ হল। হালকা হৈ হল্লার শব্দ ভেসে আসছে। মাঝে মাঝে জোরালো আওয়াজ। এর মধ্যেই কয়েকজন টেবিলের ওপর ঢলে পড়েছে, ঘুমাচ্ছে না বেহুঁশ, বোঝা যাচ্ছে না।
বড় রাস্তা থেকে খুব বেশি দূরে নয় দোকানটা। একটা সরু গলির মত ছোট রাস্তা দিয়ে একটু এগোলেই হাতের বাঁ দিকে। আশেপাশের দোকানগুলো বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। দুই একটার ঝাঁপ ফেলার তোড়জোড় চলছে। শহর থেকে খানিকটা দূরে মফঃস্বল এলাকা, লোকজন খুব বেশি রাত জাগে না। বড় রাস্তার শব্দও অনেক কমে এসেছে, মাঝে মাঝে দুই একটা লরির হর্নের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
সময়টা পুজোর শেষের। অন্য বছরে এই সময়ে ঠাণ্ডা পড়ে যায়, হিমের পরশ লাগে সন্ধ্যের পর। কিন্তু এ বছরে কি হয়েছে, শীত যেন আসি আসি করেও ফাঁকি দিচ্ছে বারবার। চাদর গায়ে দেবার মত অবস্থা আসেনি এখনও, বুড়োদের কথা অবশ্য আলাদা। তাদের তো বারো মাসেই শীত। আজ হয়তো একটু ঠাণ্ডা পড়বে, বিকেল থেকেই আকাশের মুখ ভার। সন্ধ্যে হবার পর হালকা ভাবে মেঘ ডাকতে শুরু করেছে, এখন তো রীতিমত গর্জন শুরু হয়েছে। তার সঙ্গী হয়েছে বিদ্যুতের চমক। কোথাও নিশ্চয়ই নিম্নচাপ শুরু হয়েছে। বৃষ্টি নামবে খুব তাড়াতাড়ি, মাঝে মাঝেই বেশ ঠাণ্ডা হাওয়ার ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে হয়ত।
ঘরের কোণের একটা টেবিলে বসে ছিল কালু। মদ গিলছিল ঠিকই, কিন্তু অন্য দিনের মত নয়। তার সতর্ক চোখ চারপাশে নজর রাখছিল। মাঝে মাঝে দরজার ওপরে রাখা দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছিল। দশটা পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ, এগারোটা বাজতে আর দুই মিনিট বাকি। সময় তো হয়ে এসেছে, আসছে না কেন? বিশেষ করে যখন মনটুদা বার বার ঠিক এগারোটার কথাই বলে দিয়েছিল। পরিষ্কার বলে দিয়েছিল ঠিক এগারোটার সময় আসবে, সতর্ক থাকিস, ঘরের ডান দিকের শেষ কোণার টেবিলটায় বসবি। মুখ ঢেকে আসবে... বুঝতেই পারছিস, নিজের পরিচয় দিতে চায় না। পরিচয় জানার চেষ্টা করিস না। যা বলবে চুপচাপ শুনে যাবি।
কালু ভাবছিল এত সতর্কভাবে আসার কারণ কি? এখানে, এই আসরে যারা আসে সবাই সবাইকে চেনে, কেউ মুখ ঢেকে আসে না, অবশ্য ঢাকার মত মুখ তাদের আছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। কথাটা মনে হতেই নিজের মনে হেসে উঠল সে। এমন কেউ আসবে যে কিনা এই আসরের রেগুলার মুখ নয়, যার মুখ গোপন রাখার মত, বাইরের দুনিয়ার কাছে সে অপরিচিত থাকবে। তার কাছে আসবে মানে কোন ঝামেলার ব্যাপার, উদ্ধার করতে হবে। খুন খারাপির কেস হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। কোন ভদ্দরলোকের ব্যাটা তো আর তার আছে আসবে না, কোন মাস্টারমশাই তো আর সাধ করে তার কাছে আসতে যাবে না। তাহলে এত রাখ ঢাকের কি আছে? মুখ ঢাকা কোন ইজ্জতদার লোকের এখানে পায়ের ধুলা পরতে চলেছে?
চারপাশটায় একবার হালকা ভাবে চোখ বুলিয়ে নিল কালু। হই হট্টগোল অনেকটাই কমে এসেছে। দোকান কিছুটা ফাঁকা হয়েছে, অনেকেই বাড়িতে চলে গেছে। কেউ কেউ ওঠার জন্য তোড়জোড় করছে। দোকানদার হয়ত একটু পরেই তাড়া লাগাবে। অবশ্য কালুর ব্যাপার আলাদা। তাকে ভুল করেও কেউ তাড়া লাগাবে না।
কালু এই এলাকায় অতি পরিচিত মুখ। মুখ তার সুদর্শন নয় যদিও। তার সম্বন্ধে লোকজন যত কম জানবে, ততই যেন মঙ্গল। সাধ করে কালুর সামনে পড়তে চায় না কেউ, ছায়া দেখলেও অনেকের চোখ বুজে আসে। তার পুরানো ইতিহাস বড় ভয়ানক, বড় কুৎসিত। হেন কুকর্ম নেই যা সে করেনি। চুরি, ছিনতাই দিয়ে যার জীবনের প্রথম অধ্যায় লেখা হয়েছিল, আজ সে তোলাবাজি, হুমকি, অপহরণ, ;., করে করে জীবনের চল্লিশটা বসন্ত কাটিয়ে দিয়েছে। মস্তানি আর গুণ্ডামিতে এই এলাকায় তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। একসময় যাও বা ছিল, সেই কবেই ভ্যানিস করে দিয়েছে। গুণ্ডামিতে একছত্র অধিপতি হবার মাধ্যমে কালু এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের নজর কেড়েছে, তাদের খুব প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে। বার কয়েক তাকে জেল খাটতে হয়েছে অবশ্য, কিন্তু প্রত্যেকবারই জেল থেকে বেরিয়ে আসা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সৌজন্যে, রাজনীতির কারবারিদের অনুগ্রহ। নেতাদের বাড়িতে তার ঘন ঘন পায়ের ধুলা পরে, উঠতি বয়সের সেই দারিদ্র্যের কষ্ট আজ ঘুচে গেছে। পয়সার অভাব ঘুচলেও অবশ্য তার কদাকার মুখের বিভীষিকা কমে নি। সেই কবে মাস্তানি করার সময় দুই দলের ঝামেলায় তার গাল এসিডে পুড়ে গেছিল, আজও সেই ক্ষত রয়েছে। ডান দিকের গাল কুঁচকে গেছিল, অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল তার ডান চোখ। পোড়া গালের অংশ যেন গোটা মুখটাকেই যেন ডান দিকে টেনে ধরেছে। তার মুখ বড় ভয়ানক আর কুৎসিত।
দরজা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে, ঠিক তখুনি কেউ একজন দোকানে এসে ঢুকল। লম্বা স্বাস্থ্যবান কোন লোক। পাজামা পাঞ্জাবি পরা। কাল রঙের। মুখ দেখার কোন উপায় নেই, সারা শরীরে চাদরে ঢাকা, সেটাই মাথার ওপর এনে মুখ ঢেকে রেখেছে। চট করে সাবধান হয়ে গেল কালু। এক পলকের জন্য ঘড়িটার দিকে তাকাল, পাক্কা এগারোটা। এসেছে। যার জন্য এতক্ষনের অপেক্ষা, সে এসেছে। বলিষ্ঠ পায়ে আগন্তুক সোজা ডান দিকের কোণায় চলে এল। কালুর ঠিক সামনের চেয়ারটায় বসলো।
নিচু গলায় চাদরের ভেতর থেকে ভেসে এল “একটা খুন করতে পারবে? টাকার অভাব হবে না”। ফ্যাসফ্যাসে সর্দি বসা ঠাণ্ডা হিমশীতল গলা।
রাস্তার পাশের আবছা অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ছোট্ট একটা ঘরে বসে দেশি মদ গিলছিল কালু। এটা আসলে একটা হোটেল, সকালে রুটি-তড়কা, ডিমসিদ্ধ বা অমলেট, চা পাওয়া যায়। দুপুরে ভাত, ডাল, সবজি, মাছ বা মাংস, কখনও চাটনিও থাকে। রাতেও তাই, তবে বাড়তি আইটেম হিসেবে রুটি থাকে। তবে যে জিনিসের জন্য এখানে রাতে ভিড় হয়, সে হল দেশি মদ। হোটেল এর আশপাশ থেকে তখন ভুরভুরিয়ে চুল্লুর গন্ধ ভেসে আসে। এই এলাকায় বেশিরভাগ লোক শ্রমিক শ্রেণীর, কারখানায় মজুরগিরি করে। সারাদিনের পরিশ্রমের পর সন্ধ্যে হলেই একে একে সবাই এসে জমায়েত হয়, আসর জমে ওঠে। হই হুল্লোড় সমানে চলতে থাকে।
হোটেলের ঘরে দুটো অল্প পাওয়ারের বাল্ব টিমটিম করে জ্বলছিল।আবছা আঁধারে কাউকে ঠিকমত চেনার উপায় নেই। তা নিয়ে অবশ্য কারো বিশেষ মাথাব্যাথা নেই। কি দরকার? সবাই এখানে একটাই কারণে জমা হয়, বিশেষ করে এই সময়। রাত এখন সাড়ে দশটা। খাবার দাবারের পাট চুকে গেছে এই কিছুক্ষণ হল। হালকা হৈ হল্লার শব্দ ভেসে আসছে। মাঝে মাঝে জোরালো আওয়াজ। এর মধ্যেই কয়েকজন টেবিলের ওপর ঢলে পড়েছে, ঘুমাচ্ছে না বেহুঁশ, বোঝা যাচ্ছে না।
বড় রাস্তা থেকে খুব বেশি দূরে নয় দোকানটা। একটা সরু গলির মত ছোট রাস্তা দিয়ে একটু এগোলেই হাতের বাঁ দিকে। আশেপাশের দোকানগুলো বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। দুই একটার ঝাঁপ ফেলার তোড়জোড় চলছে। শহর থেকে খানিকটা দূরে মফঃস্বল এলাকা, লোকজন খুব বেশি রাত জাগে না। বড় রাস্তার শব্দও অনেক কমে এসেছে, মাঝে মাঝে দুই একটা লরির হর্নের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
সময়টা পুজোর শেষের। অন্য বছরে এই সময়ে ঠাণ্ডা পড়ে যায়, হিমের পরশ লাগে সন্ধ্যের পর। কিন্তু এ বছরে কি হয়েছে, শীত যেন আসি আসি করেও ফাঁকি দিচ্ছে বারবার। চাদর গায়ে দেবার মত অবস্থা আসেনি এখনও, বুড়োদের কথা অবশ্য আলাদা। তাদের তো বারো মাসেই শীত। আজ হয়তো একটু ঠাণ্ডা পড়বে, বিকেল থেকেই আকাশের মুখ ভার। সন্ধ্যে হবার পর হালকা ভাবে মেঘ ডাকতে শুরু করেছে, এখন তো রীতিমত গর্জন শুরু হয়েছে। তার সঙ্গী হয়েছে বিদ্যুতের চমক। কোথাও নিশ্চয়ই নিম্নচাপ শুরু হয়েছে। বৃষ্টি নামবে খুব তাড়াতাড়ি, মাঝে মাঝেই বেশ ঠাণ্ডা হাওয়ার ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে হয়ত।
ঘরের কোণের একটা টেবিলে বসে ছিল কালু। মদ গিলছিল ঠিকই, কিন্তু অন্য দিনের মত নয়। তার সতর্ক চোখ চারপাশে নজর রাখছিল। মাঝে মাঝে দরজার ওপরে রাখা দেওয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছিল। দশটা পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ, এগারোটা বাজতে আর দুই মিনিট বাকি। সময় তো হয়ে এসেছে, আসছে না কেন? বিশেষ করে যখন মনটুদা বার বার ঠিক এগারোটার কথাই বলে দিয়েছিল। পরিষ্কার বলে দিয়েছিল ঠিক এগারোটার সময় আসবে, সতর্ক থাকিস, ঘরের ডান দিকের শেষ কোণার টেবিলটায় বসবি। মুখ ঢেকে আসবে... বুঝতেই পারছিস, নিজের পরিচয় দিতে চায় না। পরিচয় জানার চেষ্টা করিস না। যা বলবে চুপচাপ শুনে যাবি।
কালু ভাবছিল এত সতর্কভাবে আসার কারণ কি? এখানে, এই আসরে যারা আসে সবাই সবাইকে চেনে, কেউ মুখ ঢেকে আসে না, অবশ্য ঢাকার মত মুখ তাদের আছে কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। কথাটা মনে হতেই নিজের মনে হেসে উঠল সে। এমন কেউ আসবে যে কিনা এই আসরের রেগুলার মুখ নয়, যার মুখ গোপন রাখার মত, বাইরের দুনিয়ার কাছে সে অপরিচিত থাকবে। তার কাছে আসবে মানে কোন ঝামেলার ব্যাপার, উদ্ধার করতে হবে। খুন খারাপির কেস হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। কোন ভদ্দরলোকের ব্যাটা তো আর তার আছে আসবে না, কোন মাস্টারমশাই তো আর সাধ করে তার কাছে আসতে যাবে না। তাহলে এত রাখ ঢাকের কি আছে? মুখ ঢাকা কোন ইজ্জতদার লোকের এখানে পায়ের ধুলা পরতে চলেছে?
চারপাশটায় একবার হালকা ভাবে চোখ বুলিয়ে নিল কালু। হই হট্টগোল অনেকটাই কমে এসেছে। দোকান কিছুটা ফাঁকা হয়েছে, অনেকেই বাড়িতে চলে গেছে। কেউ কেউ ওঠার জন্য তোড়জোড় করছে। দোকানদার হয়ত একটু পরেই তাড়া লাগাবে। অবশ্য কালুর ব্যাপার আলাদা। তাকে ভুল করেও কেউ তাড়া লাগাবে না।
কালু এই এলাকায় অতি পরিচিত মুখ। মুখ তার সুদর্শন নয় যদিও। তার সম্বন্ধে লোকজন যত কম জানবে, ততই যেন মঙ্গল। সাধ করে কালুর সামনে পড়তে চায় না কেউ, ছায়া দেখলেও অনেকের চোখ বুজে আসে। তার পুরানো ইতিহাস বড় ভয়ানক, বড় কুৎসিত। হেন কুকর্ম নেই যা সে করেনি। চুরি, ছিনতাই দিয়ে যার জীবনের প্রথম অধ্যায় লেখা হয়েছিল, আজ সে তোলাবাজি, হুমকি, অপহরণ, ;., করে করে জীবনের চল্লিশটা বসন্ত কাটিয়ে দিয়েছে। মস্তানি আর গুণ্ডামিতে এই এলাকায় তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। একসময় যাও বা ছিল, সেই কবেই ভ্যানিস করে দিয়েছে। গুণ্ডামিতে একছত্র অধিপতি হবার মাধ্যমে কালু এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের নজর কেড়েছে, তাদের খুব প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছে। বার কয়েক তাকে জেল খাটতে হয়েছে অবশ্য, কিন্তু প্রত্যেকবারই জেল থেকে বেরিয়ে আসা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সৌজন্যে, রাজনীতির কারবারিদের অনুগ্রহ। নেতাদের বাড়িতে তার ঘন ঘন পায়ের ধুলা পরে, উঠতি বয়সের সেই দারিদ্র্যের কষ্ট আজ ঘুচে গেছে। পয়সার অভাব ঘুচলেও অবশ্য তার কদাকার মুখের বিভীষিকা কমে নি। সেই কবে মাস্তানি করার সময় দুই দলের ঝামেলায় তার গাল এসিডে পুড়ে গেছিল, আজও সেই ক্ষত রয়েছে। ডান দিকের গাল কুঁচকে গেছিল, অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল তার ডান চোখ। পোড়া গালের অংশ যেন গোটা মুখটাকেই যেন ডান দিকে টেনে ধরেছে। তার মুখ বড় ভয়ানক আর কুৎসিত।
দরজা থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে, ঠিক তখুনি কেউ একজন দোকানে এসে ঢুকল। লম্বা স্বাস্থ্যবান কোন লোক। পাজামা পাঞ্জাবি পরা। কাল রঙের। মুখ দেখার কোন উপায় নেই, সারা শরীরে চাদরে ঢাকা, সেটাই মাথার ওপর এনে মুখ ঢেকে রেখেছে। চট করে সাবধান হয়ে গেল কালু। এক পলকের জন্য ঘড়িটার দিকে তাকাল, পাক্কা এগারোটা। এসেছে। যার জন্য এতক্ষনের অপেক্ষা, সে এসেছে। বলিষ্ঠ পায়ে আগন্তুক সোজা ডান দিকের কোণায় চলে এল। কালুর ঠিক সামনের চেয়ারটায় বসলো।
নিচু গলায় চাদরের ভেতর থেকে ভেসে এল “একটা খুন করতে পারবে? টাকার অভাব হবে না”। ফ্যাসফ্যাসে সর্দি বসা ঠাণ্ডা হিমশীতল গলা।