Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#60
(Update No. 80)

পরিতোষ বলল, “একটা কারণ হতে পারে যে, তোমার দাদাভাই যে একজন যোগা এক্সপার্ট সেটা বিমল কোনভাবে জেনে গেছে। তাই তার লাইন অফ এক্টিভিটি হিসেবেই সে ওই যোগা ট্রেনিং সেন্টারে তোমার দাদাভাইকে ঢুকিয়ে দিতে চাইছে। তবে আরো একটা কারণ ভেতরে থাকতে পারে। বিমল আগরওয়ালা হয়ত চাইছে না যে তোমার দাদাভাই এভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যাক। আর এটাই যদি সত্যি হয়, তাহলে এর পেছনে দুটো কারণ থাকতে পারে। এক, তার কোন স্বার্থ আছে। আর দুই, সে নিঃস্বার্থ ভাবেই তোমার দাদাভাইকে সাহায্য করতে চাইছে। আচ্ছা ডার্লিং, একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। ডোন্ট টেক ইট আদারওয়াইজ। আমি তো তোমার বৌদি মানে তোমার রচু সোনাকে দেখেছি। খুবই সুন্দরী দেখতে সে। আচ্ছা তোমার কি ......”

পরিতোষের কথার মাঝেই সীমন্তিনী বাঁধা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আমার রচু সোনাকে দেখেছ”?

পরিতোষ বলল, “না দেখলে কি চলে ডার্লিং? যাদেরকে আমি আণ্ডার ভিজিলেন্স রাখছি, তাদের না দেখলে কি ভালভাবে কাজটা করতে পারব? কিন্তু কথার মাঝে কথা বলে আমাকে অফ ট্র্যাক করে দিও না প্লীজ। আমি তোমার কাছে জানতে চাইছি যে বিমল আগরওয়ালা কি তোমার রচুসোনাকে চাক্ষুষ দেখেছে? অথবা এমনটাও হতে পারে যে চাক্ষুষ না দেখলেও কোন ছবিতে তোমার রচুসোনাকে সে দেখেছে। তুমি কি এ ব্যাপারে কিছু জানো”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “বিমলের সাথে রচুসোনার যে দেখা হয়নি সেটা জানি। কিন্তু আজকাল মোবাইল ইন্টারনেটের যুগে কারুর ছবি দেখে ফেলাটা তো কঠিণ কিছু নয়। তাই জোর দিয়ে কিছু তো বলা যায় না”।

পরিতোষ বলল, “বিমল আগরওয়ালার পেছনেও আমার লোক লেগে আছে। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে লোকটার প্রচুর দু’নম্বরী ইনকাম আছে। বছরে কয়েক লক্ষ টাকা কর ফাঁকি দিচ্ছে। কিছু নারীসঙ্গের খবরও পেয়েছি। কিন্তু লোক ঠকিয়ে ব্যবসা করবার খবর এখনও পাইনি। তবে তুমি শুধু দাদাভাই আর তোমার রচু সোনার কাছ থেকেই যতটুকু যা জানতে পার সে চেষ্টা কোর। আর ইনফর্মেশন গুলো আমাকে দিও। আজ তাহলে ছাড়ছি ডার্লিং”।

সীমন্তিনী প্রায় সাথে সাথে বলে উঠল, “আরে শোন শোন। আমি যে কথাটা আগে বলেছিলাম সে ব্যাপারে তো কিছু বললে না”?

পরিতোষ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কোন ব্যাপারে”?

সীমন্তিনী মোলায়েম গলায় বলল, “ও, সেটাও ভুলে গেছ? বেশ, আমি তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলা বা শোনা কোনটাই পছন্দ করিনা। তাই .......”

পরিতোষ একটু হেসে বলল, “তোমার সে গুণের কথা আমার চাইতে আর কে বেশী জানে বল? আমার প্রথম আবেদনটাই তুমি এককথায় যেভাবে স্ট্রেট ড্রাইভ ওভার বাউণ্ডারী মেরে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলে, সেটা তো আমি সারা জীবনেও ভুলতে পারব না ডার্লিং”।

সীমন্তিনী একটু ধমকের সুরে বলল, “বাজে কথা রাখ পরি। সত্যি করে বল তো, পছন্দসই কাউকে তুমি খুঁজে পেয়েছ, কি না”?

পরিতোষ হেসে বলল, “সেটাও যথা সময়ে জানতে পারবেন দেবী। গুড নাইট” বলে ফোন কেটে দিল।
 

***************

বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পরিতোষ সীমন্তিনীর বলা কথাটা নিয়েই ভাবতে লাগল। পছন্দের মেয়ে! তার জীবনে তার পছন্দসই মেয়ে তো মাত্র সে দু’জনকেই দেখেছে। প্রায় ন’বছর আগের কথা। নবনীতাকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেছিল সে। কিন্তু নবনীতাকে বিয়ে করে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে যেদিন সে নিয়ে আসতে পারবে ভেবে খুশী হয়েছিল, সে দিনই তার সারাটা পৃথিবী যেন ওলট পালট হয়ে গিয়েছিল। মরুভূমির মরিচিকার মতো নবনীতা তার জীবন থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। তার জীবনের একমাত্র ভালবাসা আর তার সব স্বপ্ন যেন এক ঝটকায় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। দুটো বছর সে ওই মরীচিকা নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে রয়েছিল। কিন্তু সে মরীচিকা মিলিয়ে যাবার বছর দুয়েক পরে তার যেন মোহভঙ্গ হয়েছিল। সে বুঝতে পেরেছিল নবনীতাকে সে আর কোনদিন খুঁজে পাবে না। কিন্তু নবনীতার স্মৃতিগুলো যেন তাকে অবিরত তাড়া করে বেড়াত। তার জীবনের একমাত্র প্রেম নবনীতা তার জীবন থেকে হারিয়ে যাবার বছর চারেক বাদে সে সীমন্তিনীর দেখা পেয়েছিল। তাকে দেখে পরিতোষের ভাল লেগেছিল। কিন্তু কথায় আছে না? ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখেও ভয় পায়। তাই সীমন্তিনীকে নিয়ে মনে মনে কোন স্বপ্ন দেখবার আগেই সে তার সাথে কথা বলে দেখে নিতে চাইছিল। নতুন করে আর সে কোন মরীচিকার পেছনে ছুটতে রাজি ছিল না। সেটাই সে করেছিল। কিন্তু সীমন্তিনী তাকে খুবই ভদ্রোচিত ভাবেই প্রথম দিনেই নিজের জীবনের কিছু কথা খুলে বলে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তার হাতে শাখা নোয়া না থাকলেও, তার সিঁথির সিঁদুর কারুর চোখে না পড়লেও সে নিজেকে তার ছোটবেলা থেকেই বিবাহিতা বলে মনে করে। রোজ রাতে সে তার স্বামীর সাথে মানসিক ভাবে মিলিত হয়। তাই মনের ভেতরে একজন স্বামীকে নিয়ে সে পরিতোষকে আরেকটা স্বামী হিসেবে কখনোই মেনে নিতে পারবে না। বুদ্ধিমতী সীমন্তিনী ওই মূহুর্তেই বুঝে গিয়েছিল যে শুধু মুখের সামান্য ‘না’ শুনেই পরিতোষ শান্ত হবে না। তাই যে’কথাগুলো ততদিন পর্যন্ত সীমন্তিনীর অন্তরাত্মা ছাড়া আর কেউ জানতো না, সেই সমস্ত কথাগুলো অকপটে সেদিন সে পরিতোষকে খুলে বলেছিল। সীমন্তিনীর সব কথা শুনে সেদিন পরিতোষ আশা হত হলেও সীমন্তিনীর ভালবাসাকে সে শ্রদ্ধা না জানিয়ে পারেনি। সেদিন থেকেই চাকরির সুবাদে পরিতোষ সীমন্তিনীর থেকে চার বছরের সিনিয়র হওয়া সত্বেও তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠেছিল। তাদের ভেতর এখন দেখা সাক্ষাৎ না হলেও পরিতোষ সবসময় সীমন্তিনীর সমস্ত খবরাখবর রাখে।
 

তিনকূলে পরিতোষের নিজের বলতে কেউ নেই। বাবা-মার একমাত্র সন্তান সে। দু’ বছর বয়সেই সে নিজের মাকে হারিয়েছিল। বাবা পুলিশে চাকরি করতেন। অসাধারণ সৎ কনস্টেবল ছিলেন। দ্বিতীয় বিয়ে না করে একা হাতে সন্তানকে প্রতিপালিত করে বড় করে তুলেছিলেন তিনি। তার বাবার সাধ ছিল ছেলেকে বড় পুলিশ অফিসার বানাবেন। সৎ এবং নির্ভিক এক পুলিশ অফিসার, যে কখনও অন্যায়ের সাথে কোন রকম আপোষ করবে না। জীবনের একমাত্র আপনজনের ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে পরিতোষ ২০০৫ ব্যাচের আইপিএস হয়েছিল। ছেলের গায়ে পুলিশ অফিসারের উর্দি দেখে তার বাবার সেদিন খুশীর সীমা পরিসীমা ছিল না। চাকরি পাবার একমাসের মধ্যেই পরিতোষকে ট্রেনিং-এ যেতে হয়েছিল। কিন্তু মাস দু’য়েক যেতে না যেতেই ফোনে বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে পরিতোষ ভেঙে পড়েছিল। বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়েও তার দাহ সৎকার করবার জন্যে সে কলকাতা আসতে পারেনি। কিন্তু অনেক কষ্টে অনেক কাকুতি মিনতি করে সে ট্রেনিং থেকে সাত দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে বাবার অন্ত্যেস্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল। তখন তার পাশে ছিল শুধু নবনীতা। যাকে সে চাকরি পাবার বছর দুয়েক আগে থেকে ভালবাসতে শুরু করেছিল।
 

নবনীতা তার চেয়ে বছর পাঁচেকের ছোট ছিল। নবনীতার বাবা ছিল একটা চটকলের কর্মী। ওদের পরিবারে ওর বাবা, মা আর বখাটে বড়ভাইকে নিয়ে মোট চারজনের সংসার ছিল। নবনীতার বাবা যা মাস মাইনে পেত তাতে তাদের ছোট সংসারটা মোটামুটিভাবে চলে যাবার কথা ছিল। কিন্তু রোজ শুঁড়িখানায় গিয়ে মদ খেতে খেতে একটা সময় মদই তাকে এমনভাবে গ্রাস করেছিল যে, মাইনের অর্ধেকটা টাকাই সে মদের পেছনে উড়িয়ে দিত। ছেলেটা তো অনেক আগেই পড়াশুনোর পাট চুকিয়ে দিয়ে বদসঙ্গে পড়ে বখাটে হয়ে গিয়েছিল। নবনীতা যখন এগার ক্লাস পাশ করেছিল তখন তাকেও কলেজ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল। ঠিক অমন সময়েই নবনীতার সাথে পরিতোষের পরিচয় হয়েছিল। তখন পরিতোষ বেকার। গ্রাজুয়েট হয়ে সে আইপিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। শান্ত স্বভাবের মিষ্টি দেখতে নবনীতাকে প্রথম পরিচয়ের দিনটি থেকেই পরিতোষের ভাল লেগে গিয়েছিল। পরের দু’মাসের মধ্যেই নবনীতাও পরিতোষকে ভাল বেসেছিল। আইপিএস হবার পর ট্রেনিংএ যাবার আগে পরিতোষ নবনীতাকে বাড়ি এনে তার বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের দু’জনের ভালবাসার কথা খুলে বলেছিল। নবনীতা নিম্নবিত্ত কায়স্থ ঘরের মেয়ে হলেও পরিতোষের ', বাবা বিনা দ্বিধায় নবনীতাকে দেখে পছন্দ করেছিলেন। পরিতোষকে স্পষ্ট করে বলেও দিয়েছিলেন তিনি, যে পরিতোষের ট্রেনিং শেষ হলেই তিনি নবনীতাকে ঘরের বৌ করে নিজের সংসারে এনে তুলবেন। পরিতোষের মা চলে যাবার পর থেকেই তাদের ঘরটা যেন কেমন ছন্নছাড়া হয়ে উঠেছিল। বাবা ছেলের সংসারটা শ্রীহীন হয়ে উঠেছিল দিনে দিনে। নবনীতাকে ঘরের লক্ষী করে এনে তার শ্রীহীন সংসারের চেহারা পাল্টাতে চেয়েছিলেন পরিতোষের বাবা। কিন্তু তার মনের এ ইচ্ছেটাকে আর পূর্ণ করে যেতে পারেননি তিনি।
 

নবনীতার বাবা মা-ও মেয়ের বিয়ের জন্য কোমড় বেঁধে পাত্রের সন্ধান করতে শুরু করেছিল। নবনীতাও চাইছিল পরিতোষ একবার তার মা বাবার সাথে দেখা করে তাদের দু’জনের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলুক। পরিতোষের বাবার শ্রাদ্ধ শান্তি মিটে গেলে ছুটির শেষ দিনে পরিতোষ নবনীতার সাথেই তাদের বাড়ি গিয়েছিল। নবনীতার বাবা, মা ও দাদার কাছে তাদের দু’জনের সম্পর্কের কথা খুলে পরিস্কার ভাবে বলেছিল যে সে তাদের ঘরের মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। সুন্দর চেহারা, ভাল চাকরি, আর সদ্বংশের এমন একজন সুপাত্র পেয়ে নবনীতার পরিবারের সকলেই বিয়ের স্বপক্ষে মত দিয়েছিল। কিন্তু পরিতোষ তাদের বলেছিল যে বিয়েটা তার সদ্য প্রয়াত বাবার ইচ্ছানুসারেই সে করতে চায়। তাই ঠিক হয়েছিল যে ট্রেনিং শেষ হলেই সে নবনীতাকে বিয়ে করবে। ততদিনে তার কালাশৌচও শেষ হয়ে যাবে। নবনীতার পরিবারের সকলেও তার কথা মেনে নিয়েছিল।
 

পরদিনই পরিতোষ আবার তার ট্রেনিংএ চলে গিয়েছিল। হায়দ্রাবাদে আসবার দু’দিন পরেই তার এক বন্ধু তাকে ফোন করে জানিয়েছিল যে যেদিন পরিতোষ নবনীতাদের বাড়ি গিয়েছিল সে দিন রাত থেকেই নাকি নবনীতাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। আড়াই বছরের ট্রেনিং পেরিয়ডে কোন রকম ছুটি নেওয়াই বারণ। বাবার মৃত্যুতে ডিপার্টমেন্ট তাকে বিশেষ ছুটি মঞ্জুর করেছিল শুধু মাত্র বাবার পারলৌকিক কাজগুলো সম্পন্ন করবার জন্যে। পরিতোষ জানত, নিজের প্রেমিকা হারিয়ে গেছে বলে কেঁদে মরলেও সে আর ছুটি পাবে না। জেনে বুঝেও সে আবার ছুটি নিয়ে কলকাতা যাবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ডিপার্টমেন্ট তাকে আর ছুটি দিতে রাজী হয়নি। তাই শুধু ফোনে ফোনে খবরাখবর নেওয়া ছাড়া সে আর তখন কিছুই করে উঠতে পারেনি। কলকাতার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে সে যত রকম ভাবে সম্ভব নবনীতার খোঁজ খবর নেবার চেষ্টা করেছে। সব শেষে এটুকুই সে জানতে পেরেছিল যে, নবনীতাদের পাড়ার এবং বাড়ির লোকজনেরা বলছে যে বাড়ি থেকে মা বাবারা মেয়ের বিয়ে ঠিক করতেই মেয়ে নিজের পছন্দের কোন ছেলের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। কথাটা শুনে পরিতোষ একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। দু’বছর আগে থেকে তারা পরস্পরকে ভালবাসতে শুরু করেছিল। নবনীতার জীবনে অন্য কোনও পুরুষ থাকতে পারে, এটা তার কল্পনাতেও ছিল না। আর তাছাড়া নবনীতা নিজেও তো তাকে ভালবাসত। সে যদি কখনও জানতে বা বুঝতে পারত যে নবনীতা অন্য কাউকে ভালবাসে, তাহলে সে হাসিমুখেই তার জীবন থেকে সরে দাঁড়াত। কিন্তু ট্রেনিংএ যাবার আগে নবনীতা তো তার বাবার মনের ইচ্ছের কথা শুনে তাকে প্রণাম করে তার আশীর্বাদ নিয়েছিল। তারপর বাবার শ্রাদ্ধ আর মৎস্যমুখী মিটে যেতেই নবনীতাই তো পরিতোষকে বলতে গেলে টেনে নিয়ে গিয়েছিল তার মা বাবার সাথে বিয়ের কথা বলতে। ওর মা বাবা রাজি হতে পরিতোষের চেয়ে বেশী খুশী তো ওকেই দেখাচ্ছিল। আর সে রাতেই সে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল! আর কারো সাথে পালিয়েই যদি যাবে, তাহলে পরিতোষকে তার মা বাবার কাছে টেনে নিয়ে যাবার প্রয়োজন কি ছিল? আর কারো সাথে স্বেচ্ছায়ই যদি সে গিয়ে থাকে, তাহলে পরিতোষকে সেটা বলল না কেন সে? পরিতোষের ফোন নাম্বারও তো সে জানতো। সামনা সামনি সে’কথা বলতে যদি তার কোন সঙ্কোচ হয়ে থাকত, তবে তো সে ফোন করেও কথাটা বলতে পারতো!
 

তার জীবনের প্রথম ভালবাসাকে এভাবে জীবন থেকে হারিয়ে যেতে দেখে পরিতোষ খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিল। কলকাতায় আর তার ফিরে আসতে ইচ্ছে করছিল না। ২০০৭ সালের মাঝামাঝি তার ট্রেনিং শেষ হতেই ভাইজ্যাগে তার পোস্টিং হয়েছিল। ট্রেনিং শেষে দু’দিনের জন্য সে একবার কলকাতার বাড়িতে এসেছিল। লেটার বক্স খুলে প্রায় ন’মাস আগের লেখা নবনীতার একটা চিঠি পেয়েছিল সে। তাতে নবনীতা পরিতোষের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ভুলে যেতে অনুরোধ করেছিল। আর একটা ভাল মেয়েকে বিয়ে করে তাকে সংসারী হতে বলেছিল। কিন্তু সে কোথায় আছে, কেমন আছে বা কার সাথে আছে, এ’সব ব্যাপারে কিছুই জানায়নি সে।
 

সে ঘটণার প্রায় দু’বছর বাদে ২০০৯ সালে হায়দ্রাবাদ পুলিশ ট্রেনিং একাডেমীতে পরিতোষ প্রথম দেখতে পেয়েছিল সীমন্তিনীকে। পরিতোষ তখন সে একাডেমীতে ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে মাঝে মাঝে গিয়ে নতুন আইপিএস অফিসারদের বিহেভেরিয়াল সায়েন্সের ক্লাস নিত। সে ব্যাচে দেশের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলের চল্লিশ জন নতুন আইপিএস অফিসার ট্রেনিং নিতে এসেছিল। তার মধ্যে বাঙালী অফিসার ছিল চার জন। আর সীমন্তিনী ছিল একমাত্র বাঙালী মহিলা আইপিএস। উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড আর উত্তরপুর্ব রাজ্য গুলো থেকে আরোও পাঁচজন মহিলা ট্রেণী ছিল। কিন্তু অসাধারণ ব্যক্তিত্বময়ী মিতভাষী এবং সুন্দরী দীর্ঘাঙ্গীনি সীমন্তিনীকে প্রথম দেখেই পরিতোষ মুগ্ধ হয়ে পড়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে সীমন্তিনীর প্রখর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে আর তার অসাধারণ পারফর্মেন্স দেখে সে মনে মনে ভেবেছিল, এই মেয়েটিই বোধহয় তার মন থেকে নবনীতার স্মৃতিকে মুছে ফেলতে পারবে। কিন্তু সীমন্তিনী তার আবেদনে সাড়া দেয় নি। পরিতোষের মনের ইচ্ছে বুঝতে পেরেই সীমন্তিনী তাকে নিজের অতীত জীবনের সব কথা খুলে বলেছিল তাদের প্রথম ব্যক্তিগত সাক্ষাতের সময়েই। নিজের আপন জেঠতুতো দাদাকে ভালবেসে, তাকে কখনও সামাজিকভাবে বিয়ে করে স্বামী হিসেবে পাবেনা জেনেও মেয়েটা তাকেই তার স্বামী, তার জীবনের সর্বস্য বলে ভাবছে, এ কথা জেনে সে বয়সে বছর দুয়েকের বড় হলেও সে মনে মনে সীমন্তিনীকে প্রণাম করেছিল। সীমন্তিনীও পরিতোষকে নিজের প্রেমিক স্বামীর মর্য্যাদা না দিলেও পরিতোষের অনুরোধেই তার বন্ধুত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল।
 

২০১০ সালে সীমন্তিনী হায়দ্রাবাদে ট্রেনিংএ থাকতেই পরিতোষের ট্র্যান্সফার হয়েছিল কলকাতায়। তারপর থেকে এখন অব্দি সীমন্তিনীর সাথে তার আর কখনও দেখা সাক্ষাৎ না হলেও তাদের মাঝের বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট আছে।
 

ক’দিন আগে সীমন্তিনী যেদিন তাকে ফোন করে বলেছিল যে তার প্রেমাস্পদ দাদাভাই কলকাতায় এসে এক বিপদের মুখে পড়েছে, সে সেদিনই সীমন্তিনীর মত অসাধারণ একটা মেয়ের মনের মানুষকে দেখবার লোভ সামলাতে পারেনি। পরদিন সকালেই নিজের গাড়ি নিয়ে তাদের ফ্ল্যাটের খোঁজে বেড়িয়েই সে সীমন্তিনীর দাদাভাই এবং বৌদিকে দেখেছিল। আর ঠিক তখনই তাদের দু’জনকে কোথাও যেতে দেখে তার নেটওয়ার্কের একজনকে সে তাদের পেছনে ফলো করে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল। সীমন্তিনীকে ভালবেসে কাছে টেনে নেবার ইচ্ছে তার পূরণ না হলেও সীমন্তিনীর সাথে খুব ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক সে বজায় রেখেছে। সীমন্তিনীর ভালবাসার মানুষটাকে সে সব রকম বিপদ আপদ থেকে আগলে রাখবে বলে নিজের কাছেই নিজে শপথ করেছে।

**************

রবিবার সকালে রতীশ তার সার্টিফিকেট গুলো একটা ফাইলে নিয়ে বিমলের অফিসের সামনে এসে পৌঁছল দশটা বাজবার আগেই। রবিবার বলে এলাকার প্রায় সব দোকান পাটই বন্ধ। তবু রতীশ ওপরের দিকে মুখ করে বিমল আগরওয়ালার অফিসের দিকে একবার তাকাল। বিমলের অফিস বন্ধ তো বটেই, দেখে মনে হল গোটা বিল্ডিঙে বুঝি কোথাও কেউ নেই। একটা ঘরের ছায়ায় মিনিট দশেকের মত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবার পরেই একটা ঝকঝকে গাড়ি রতীশের প্রায় সামনে এসে থামল। পেছনের দিকের জানালা খুলে বিমল বাইরে মুখ বের করে বলল, “রতীশবাবু, উঠে আসুন” বলে পেছনের দরজা খুলে দিল। রতীশ কোন কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি আবার ছেড়ে দিল।
 

পেছনের সীটে বিমলের পাশে বসে রতীশ বলল, “সরি বিমলজী, আমার জন্যে আপনাকে এত কষ্ট করতে হচ্ছে দেখে আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে”।

বিমল হাসিমুখে বলল, “আরে ও’সব নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিন তো। আর আমি এমন কী করছি? আজ আমাকে এমনিতেও সেখানে যেতেই হত। আমার বন্ধুর সাথে বিশেষ একটা কাজ আছে। আর সেজন্যেই তো সেদিন বললাম যে রবিবারে গেলে আমাদের দু’জনের কাজই হবে। আপনার জন্যে তো আর আমাকে আলাদা করে গাড়ির তেল খরচ করতে হচ্ছে না”।

গাড়িটা দক্ষিণ কলকাতার দিকে এগিয়ে চলল। বিমল রতীশের লেখাপড়া, যোগ চর্চা আর কলকাতায় আসবার উদ্দেশ্য, এসব নিয়ে গল্প গল্প করতে করতেই মিনিট চল্লিশেক কাটিয়ে দিল। তারপর এক জায়গায় গাড়ি থামতেই বিমল বলল, “ব্যস আমরা এসে গেছি”।

রতীশ বিমলের সাথে গাড়ি থেকে নেমে দেখে গাড়িটা একটা আটতলা বিল্ডিঙের পেছনে থামানো হয়েছে। বিমল রতীশের পাশে দাঁড়িয়ে ওপরের দিকে হাত দেখিয়ে বলল, “এটার ছ’তলায় আমার বন্ধুর যোগা সেন্টার। অবশ্য এদিকটা পেছন দিক। বিল্ডিঙের ফ্রন্ট ও’পাশে। কিন্তু ও’দিকে গাড়ি পার্ক করবার অসুবিধে আছে বলে আমরা পেছন দিকে এসেছি। চলুন”।
 

রতীশ মাথা তুলে বিল্ডিঙের ওপরের দিকে একবার দেখেই ফাইল হাতে বিমলের পেছন পেছন চলতে লাগল। লিফটে চেপে ছ’তলায় এসে করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিমল নিজের ফোন থেকে একটা কল করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই বলল, “তোমাদের ব্যাকডোরটা খোলা আছে তো? আমরা কিন্তু পেছনের লিফট দিয়ে উঠেছি”।

একটু অন্য পাশের কথা শুনে বলল, “হ্যা হ্যা, তোমার এখানে কি আমি নতুন এলাম নাকি? এই তো এখনই ঢুকছি তোমার অফিসে। তা তুমি তোমার চেম্বারেই আছ তো”?

কথা বলতে বলতে বিমল একটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর ফোনে “ওকে” বলেই রতীশকে নিয়ে সে দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল। ভেতরেও অপেক্ষাকৃত সরু আরেকটা করিডোর দিয়ে খানিক এগিয়ে একটা দরজার সামনে থেমে বিমল রতীশকে বলল, “এদের ইনস্টিটিউটের লোকেরা সকাল সাড়ে দশটার দিকে সকলেই চলে যায়। তাই এখন পিওন বা স্টাফ কেউ আছে কিনা বলা মুস্কিল। আপনি এখানেই একটু অপেক্ষা করুন রতীশবাবু। আমি আগে ঢুকছি। তারপর আপনাকে ডেকে নেব, কেমন”?
 

রতীশ ঘাড় নেড়ে বলল, “ঠিক আছে বিমলজী”।

রতীশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করিডোরের এপাশ ওপাশ দেখতে লাগল। সরু করিডোরটার বাঁদিকে খানিক বাদে বাদে এক একেকটা দরজা। পাঁচ ছ’টা দরজা। কিন্তু ডানদিকে বিমল যে ঘরে ঢুকল সেটা বাদে আর শুধু একটা দরজাই দেখা যাচ্ছে। সবগুলো দরজাই বাইরের দিক থেকে তালা মারা। মিনিট তিন চারেক বাদেই একজন শার্ট প্যান্ট পড়া বছর ত্রিশেকের যুবক ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে রতীশকে জিজ্ঞেস করল, “আপনি ভেতরে যান স্যার”।

রতীশ ভেতরে ঢুকে একটা কাঠের পার্টিশান দেওয়া রুমের সামনে এসে প্রথামত জিজ্ঞেস করল, “মে আই কাম ইন স্যার”?

ভেতর থেকে অস্বাভাবিক মিষ্টি গলায় এক মহিলা কন্ঠের জবাব এল, “ইয়েস মিঃ ভট্টাচারিয়া, আসুন প্লীজ”।

মহিলা কন্ঠ শুনে রতীশ একটু চমকে গেলেও মূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল। একটা অর্ধগোলাকার টেবিলের ও’পাশে একজন অসামান্যা সুন্দরী মহিলা বসে আছে। রতীশের মনে হল ভদ্রমহিলা পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ বছর বয়সী হবে। আর টেবিলের উল্টোদিকে চার পাঁচখানা চেয়ারের একটায় বিমল আগরওয়ালা বসে আছে। বিমল ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকিয়ে বলল, “আসুন, আসুন রতীশবাবু”।

রতীশ বিমলের চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু করে বলল, “সরি ম্যাডাম, বিমলজী আমাকে বলেন নি যে তার বন্ধু একজন মহিলা। তাই স্যার বলে ঘরে ঢোকবার পারমিশান চাইছিলাম”।
 

ভদ্রমহিলা এতক্ষণ অবাক মুগ্ধ চোখে রতীশের দিকে তাকিয়েছিল। কিন্তু এবার চোখাচোখি হতেই সে অসম্ভব সুন্দর মিষ্টি করে হেসে বলল, “নো প্রব্লেম মিঃ ভট্টাচারিয়া। বসুন প্লীজ”।

রতীশ পাশের একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাম”।
 

এবার বিমল বলল, “ওয়েল রতীশবাবু, আপনাদের দু’জনের আলাপ করিয়ে দিই। ইনি হচ্ছেন আমার বন্ধু, মিসেস মহিমা সেন। এই যোগা ইনস্টিটিউটের মালকিন”।

মহিমা একটু হেসে বলল, “মহিমা মালহোত্রা সেন। জন্ম সূত্রে আমি পাঞ্জাবী”।

রতীশ বুকের কাছে হাত জোড় করে নমস্কার করে বলল, “নমস্কার ম্যাডাম। আমি রতীশ ভট্টাচার্যি”।

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 28-02-2020, 09:00 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)