27-02-2020, 07:27 PM
(Update No. 70)
পরদিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ একটা পলিথিনের ব্যাগ হাতে নিয়ে একজন আটাশ ঊণত্রিশ বছরের সুপুরুষ যুবককে দেখা গেল রাস্তার একটা বিশেষ জায়গায় বারবার এদিক ওদিক ঘোরা ফেরা করছে। দু’একবার সে চোখ তুলে একটা তালাবন্ধ ঘরের দিকেও তাকাচ্ছিল। কিন্তু তার বেশী নজর ছিল একটা বন্ধ ঝুপড়ি দোকান ঘরের ওপর। কিছুক্ষণ বাদেই ঝুপড়ি দোকানটার দরজা খুলতে দেখেই যুবকটি পাশের চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ল। এক কাপ চা খেয়ে মিনিট দশেক বাদেই চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে এসে সে ওই ঝুপড়ি দোকানটায় এসে দেখে বছর চল্লিশেকের গাট্টাগোট্টা চেহারার একটা লোক বসে বসে হাতে খৈনী ডলছে। যুবক ছেলেটা কাউন্টার ঘেঁসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “ভাইয়া, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব”?
ভেতরের লোকটা কৌতুহলী চোখে ছেলেটার দিকে চেয়ে বলল, “হ্যা বলুন”।
যুবকটি বলল, “দেখুন আমি এ এলাকায় নতুন। দেড় দু’মাস হল এসেছি মাত্র” বলে হাত দিয়ে একদিকে দেখিয়ে বলল, “ওই ওদিকে তিন নম্বর গলির ভেতর একটা ঘর ভাড়া নিয়েছি। আমার কিছু শার্ট প্যান্ট ইস্ত্রি করতে হবে”।
দোকানের লোকটা বলল, “কি ইস্তিরি করবেন, দেখি”।
ছেলেটা নিজের হাতের ব্যাগটার ভেতর থেকে দুটো শার্ট আর দুটো প্যান্ট বের করে কাউন্টারের ওপর রেখে বলল, “এই যে, এই দু’জোড়া শার্ট আর প্যান্ট”।
লোকটা খৈনী মুখে দিয়ে হাত ঝেড়ে কাউন্টারের কাছে এসে ছেলেটার শার্ট প্যান্টগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে বলল, “ঠিক আছে বাবুজী। হয়ে যাবে। আপনি বিকেলের দিকে ডেলিভারি পেয়ে যাবেন” বলে শার্ট প্যান্টগুলোতে ট্যাগ লাগাতে লাগাতে বলল, “আপনার নামটা বলুন তো বাবুজী”।
ছেলেটা বলল, “শঙ্কর, শঙ্কর পাণ্ডে আমার নাম”।
লোকটা ট্যাগে কিছু একটা লিখে বলল, “তো। আপনিও তাহলে বিহারেরই লোক”?
ছেলেটা বলল, “হ্যা তা ঠিক। কিন্তু আপনিও কি বিহারী”?
লোকটা বলল, “হাঁ বাবুজী। আমিও বিহারী। আমার নাম সরজু পাসোয়ান। তবে পাসোয়ান বলে এখন আর আমাকে কেউ চেনে না। সরজু লণ্ড্রীওয়ালা বলেই সবাই জানে”।
শঙ্কর এবার বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল, “ক্যা? আপনিই সরজু লণ্ড্রীওয়ালা? সত্যি বলছেন”?
এবার সরজুও খানিকটা অবাক হয়ে বলল, “হাঁ বাবুজী। আমিই সরজু লণ্ড্রীওয়ালা? কিন্তু আপনি তো এখানে নতুন এসেছেন বললেন। আপনি আমার নাম কোথায় শুনলেন”?
শঙ্কর বলল, “সরজু ভাইয়া, আপনার নাম তো এখানে প্রায় সকলেই জানে। তবে আমি প্রথম আপনার নাম শুনেছি লচ্ছু ভাইয়ের মুখে”।
সরজু জিজ্ঞেস করল, “কৌন লচ্ছু ভাই? ওই সামনের মার্কেটের ফলওয়ালা লছমন”?
শঙ্কর বলল, “হাঁ হাঁ বো হি”।
সরজু হেসে বলল, “আপনি ওকে চেনেন নাকি বাবুজী? লচ্ছু তো আমার অনেক পুরানা বন্ধু আছে”।
শঙ্করও মুচকি হেসে বলল, “হাঁ সরজু ভাইয়া। লচ্ছু ভাইয়ের কাছ থেকে তো আমি রোজই ফল কিনি। তার সাথে ভাল দোস্তীও হয়ে গেছে আমার। লচ্ছু ভাই আপনাদের দোস্তীর কথা আমাকে অনেক বলেছে। ভাবীর কথাও বলেছে সে। সে’সব কথা শুনে আমারও তো মন চাইছিল আপনার সাথে দোস্তী করতে”।
সরজু বলল, “কৌন ভাবীর কথা শুনেছেন ওর কাছে বাবুজী? বিন্দিয়া ভাবী”?
শঙ্কর বলল, “না না সরজু ভাইয়া, বিন্দিয়া ভাবী বুঝি আপনার বিবি হবেন? কিন্তু না লচ্ছু ভাই তো আমাকে অনুপমা ভাবীর কথা বলেছে”।
সরজু বলল, “ও, অব সমঝা বাবুজী। আপনি অনুপমা ভাবীর কথা শুনেছেন। ঠিক আছে। কিন্তু বিন্দিয়া ভাবীকেও আমার বিবি ভেবে ভুল করবেন না। অনুপমা ভাবী আর বিন্দিয়া ভাবী দু’জনেই আমার কাছে এক সমান”।
শঙ্কর বলল, “আরে সরজু ভাইয়া, আপনি কি বাবুজী বাবুজী রট লাগাচ্ছেন বলুন তো? আপনি লচ্ছু ভাইয়ের দোস্ত, আর লচ্ছু ভাই আমার দোস্ত। তাহলে আমিও তো আপনার দোস্ত কা দোস্ত হলাম না? ফির কেন বাবুজী বাবুজী বলছেন? আমাকে শঙ্কর ভাই বলে ডাকুন না”।
সরজু একটু হেসে বলল, “ঠিক হ্যায় শঙ্কর ভাইয়া। ওই হবে। তাহলে একটু ভেতরে এসে বসুন না। একটু গল্প সল্প করে আমাদের দোস্তীকে পাক্কা করে নিই”।
শঙ্কর খুশী হয়ে বলল, “হাঁ এবার ঠিক কথা বলেছেন আপনি সরজু ভাইয়া। কিন্তু কোথায় ঢুকতে বলছেন? আপনার দোকানের ভেতর? কিন্তু ঢুকব কোন দিক দিয়ে”?
সরজু দোকানের বাঁদিকে ঈশারা করে বলল, “এই দিকে একটা ছোট গলি আছে দেখুন। ওটা দিয়ে চলে আসুন। আমি আমার দোকানের পেছনের দরজা খুলে দিচ্ছি”।
শঙ্কর গলিটা দিয়ে ঢুকে খানিকটা ভেতরে যেতেই বাঁ পাশে একটা ছোট দরজা খুলে যেতে দেখল। সে দরজাটার সামনে থামতেই সরজুকে দেখতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল। পেছনের দরজা দিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে দেখে একদিকে দুটো চেয়ার রাখা আছে। সরজু শঙ্করকে একটা চেয়ারে বসতে দিয়ে বলল, “এখানে বসুন শঙ্কর ভাই। আর বলুন, ধন্দা ওয়ান্দা কি করেন আপনি”।
শঙ্কর চেয়ারে বসে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে বলল, “আপনার চলে তো সরজু ভাইয়া? নিন একটা” বলে সরজুর হাতে একটা সিগারেট দিয়ে নিজেও একটা হাতে নিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটাকে আবার পকেটের ভেতর রাখতে রাখতে বলল, “আমি তো অর্ডার সাপ্লাইয়ের বেওসা করি সরজু ভাইয়া। নানা ধরণের জিনিস কলকাতা থেকে নিয়ে বিহারের কিছু কিছু এলাকার সরকারী আর প্রাইভেট অফিসে সাপ্লাই করি। যার যা প্রয়োজন তাকে সেটাই সাপ্লাই করি। আমার বাড়ি বিহারের কিষনগঞ্জে। কিন্তু বেওসার কাজে আমাকে দো হফতে মে একবার কলকাতায় আসতেই হয়। কখনও কখনও সাতদিনও থাকতে হয় এখানে অর্ডারি সামান জোটাতে। তাই দেড় মাস আগে এখানে একটা ছোট ঘর ভাড়া নিয়েছি রাতে শোবার জন্যে। খানা পিনা সব এখানে হোটেলে করি। তবে ঘরে শুধু ফল কিনে রাখি। লচ্ছু ভাইয়ের সাথে তখন থেকেই আমার দোস্তী হয়েছে”।
সরজু বলল, “বাহ বাহ, খুব ভাল কথা। তা শঙ্কর ভাই, আপনি বিয়েশাদি করেছেন কি না”?
শঙ্কর একটু হেসে বলল, “করেছি সরজু ভাইয়া। সাত আট মাস হল। কিন্তু এখানে আসবার সময় তো আর বিবিকে সাথে আনতে পারি না। একবার এনেছিলাম। তখন আমি এখানে ঘর ভাড়া নিই নি। হোটেলে উঠেছিলাম। আমি সারাদিন বেওসার কাজে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছি। আর ও বেচারী একা একা হোটেলের রুমে বসে টিভি দেখতে দেখতে হয়রান হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে আর ও এখানে আসতেই চায় না। তাই আমি এখন একাই আসি। আর হরবার এসে ছয় সাত দিন করে থাকতে হয় বলে এখানে একটা ঘর ভাড়া করলাম। হোটেলে থাকলে মুনাফার অনেকটাই খরচ হয়ে যায়। আর এবার তো মনে হয় দস পন্দ্র দিন থাকতে হবে আমাকে। বহত সামান খরিদ করতে হবে”।
সরজু বলল, “খুব ভাল করেছেন শঙ্কর ভাই। খুন পসিনার কামাই যদি হোটেলের পেছনেই চলে যায় তাহলে পরিবার চলবে কেমন করে। আর এখানে তো কোন জিনিসের অভাব নেই। যা যা চাইবেন সব কিছু পাবেন। কিন্তু নতুন নতুন সাদি করেছেন। বিবিকে ছেড়ে রাত কাটাতে হয়ত ভাল লাগবে না। অবশ্য তেমন কষ্ট হলে টেম্পোরারি বিবি পেতে কোন অসুবিধা নেই। আর এখানে সে’সব চাইলেই পাবেন”।
শঙ্কর চোখ বড় বড় করে শ্বাস চেপে বলল, “আরে হাঁ, সরজু ভাইয়া। অভি অভি আপনি দোকান খুলবার আগে আমি এই পাশের দোকানে চা খেতে ঢুকেছিলাম। বয়টা আমাকে চা দিয়ে কি বলল জানেন? বলে কি বাবুজী রাত কে লিয়ে সাথী চাহিয়ে ক্যা? জ্যাদা নহী সির্ফ দো শ রুপিয়া মে মিল জায়েগা”।
সরজু একটু হেসে বলল, “ঝুট বলেনি শঙ্কর ভাই। এখানে দো শ তিন শ টাকায় সারা রাতের জন্য অনেক মেয়েমানুষ পেয়ে যাবেন। আমিও এক সময় ও’সব ধন্দা করেছি। কিন্তু সস্তার মেয়ে মানুষগুলোকে নিয়ে খুব ঝামেলা হয়। তাই এখন ও’সব ছেড়ে দিয়েছি”।
শঙ্কর বলল, “হাঁ সরজু ভাইয়া। সস্তার মেয়েগুলো কেমন হয় সেটা আমিও জানি। কিন্তু লচ্ছু ভাই তো আমাকে বলেছিল যে সে নাকি আপনার কাছ থেকেই অনুপমা ভাবীর টিকট নেয়! অনুপমা ভাবি নাকি খুব বঢ়িয়া সার্ভিস দেয়। আর সে তো আমাকেও বলেছিল যে আপনার কাছ থেকে অনুপমা ভাবীর একটা টিকিট নিতে”।
সরজু একটু হেসে বলল, “হাঁ সেটা তো ঠিকই শঙ্কর ভাই। কিন্তু অনুপমা ভাবী তো সস্তার মাল নয়। বহত কিমতি। তার একটা টিকিটে আমি কমিশন পাই ডের শ। আর এখানে আপনি ডের শ টাকায় আসল মালই পেয়ে যাবেন। অনুপমা ভাবী সাদিশুদা ঘর গিরহস্তী করনেওয়ালী ঔরত। দেখনে সুননে মে ভি লাজবাব। সার্ভিসকে বারে মে তো লচ্ছুর মুখেই শুনেছেন। তাই পয়সাও বহত খরচা করতে হবে”।
শঙ্কর বলল, “সরজু ভাই, সস্তার মাল আমি চাই না। আর রোজ রোজ আমার দরকারও নেই। আজ চার দিন হল, বিবিকে ছেড়ে আছি। খুব কষ্ট হচ্ছে। অনুপমা ভাবীর রেট কত? আমাকে একটা টিকিট দিন না”।
সরজু বলল, “কিন্তু শঙ্কর ভাই। অনুপমা ভাবীর টিকিট তো আপনাকে দিতে পারব না আমি এখন। তবে আপনি চাইলে আমি বিন্দিয়া ভাবীর একটা টিকিট আপনাকে দিতে পারি। অনুপমা ভাবীর চেয়ে একটু সস্তাই হবে”।
শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “এই বিন্দিয়া ভাবী আবার কে সরজু ভাই? লচ্ছু ভাই তো আমাকে অনুপমা ভাবীর কথা বলেছে। আর তার মুখে অনুপমা ভাবীর সব কথা শুনে আমি তার টিকিটই নিতে চাইছিলাম”।
সরজু বলল, “শঙ্কর ভাই, লচ্ছু ভাই বোধ হয় খবরটা জানে না। আসলে অনুপমা ভাবী আমার দোকানের কাছেই কামেশ্বরজীর ঘরে ভাড়া থাকত। পাঁচ দিন আগে তারা এখান থেকে বড়বাজারের দিকে একটা জায়গায় চলে গেছে। আর তার ফোন নাম্বারে ফোন করেও তাকে পাচ্ছি না। আর নতুন জায়গায় গিয়ে সে আবার বেওসা সুরু করেছে কি না সেটাও জানিনা আমি। তার সাথে কথা না হওয়া পর্যন্ত তো আমি তার জন্য টিকিট দিতে পারব না। তাই আপনাকে বলছি আপনি বিন্দিয়া ভাবীর একটা টিকিট নিন। আমার কাছে তো শুধু এই দু’জনের টিকিটই পাবেন। বিন্দিয়া ভাবীও খুব ভাল মাল আছে। সার্ভিসও ভাল পাবেন। কিন্তু তার বয়সটা একটু বেশী। চুয়াল্লিশ সাল। কিন্তু সে-ও খুব গরম চীজ। অনুপমা ভাবী তো মাত্র তেইশ বছরের। আর অনুপমা ভাবীর রেট হচ্ছে তিন হজার আর পাঞ্চ হজার। আর বিন্দিয়া ভাবীর টিকিটের দাম ঢাই হজার। কিন্তু আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি শঙ্কর ভাই। বিন্দিয়া ভাবীও আপনাকে ভরপুর খুশী দেবে”।
শঙ্কর মনে মনে একটু ভেবে জিজ্ঞেস করল, “সরজু ভাইয়া, অনুপমা ভাবীর তো দুটো রেট বললেন। তিন হজার আর পাঞ্চ হজার। কিন্তু বিন্দিয়া ভাবীর শুধু একটাই রেট বললেন কেন আপনি”?
সরজু হেসে বলল, “আপনি বোধহয় এ লাইন সম্বন্ধে খুব বেশী কিছু জানেন না শঙ্কর ভাই। তাই আপনি বোঝেন নি। আচ্ছা আমি আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। অনুপমা ভাবীকে একঘন্টার জন্য নিলে তার দুটো আলাদা আলাদা রেট আছে। যদি তার নিজের ঘরে একঘন্টা কাটান তাহলে তিন হজার দিতে হবে। আর আপনি যদি তাকে নিয়ে কোন হোটেলে বা আপনার নিজের ঘরে ডেকে আনতে চান তাহলে আপনাকে পাঞ্চ হজার দিতে হবে। আর বিন্দিয়া ভাবী শুধু তার নিজের ঘরেই বেওসা করে, সে বাইরে কোথাও যায় না। সে একঘন্টার জন্যে ঢাই হজার নেয়। এটাই হল কথা”।
শঙ্কর শুনে বলল, “ও, এক ঘন্টার ঘরে আর বাইরের রেট আলাদা আলাদা। কিন্তু সরজু ভাইয়া, যদি আমি সারা রাতের জন্য চাই, তাহলে”?
সরজু জবাব দিল, “সারা রাতের জন্য বিন্দিয়া ভাবীর বুকিং করলে আপনাকে দস হজার দিতে হবে। আর অনুপমা ভাবীর ঘরে হোল নাইটের টিকিট সব সময় আপনি পাবেন না। তার হাজবেণ্ড বাইরে থাকলেই সে শুধু হোল নাইটের বুকিং দেয়। তখন তার ঘরে হলে বারহ হজার, আর বাইরে হলে পন্দ্রহ হজার”।
শঙ্কর এবার জিজ্ঞেস করল, “আর বিন্দিয়া ভাবীর হোল নাইটের টিকট সব দিন পাওয়া যায়”?
সরজু বলল, “বেশীর ভাগ সময়েই পাবেন। তবে হোল নাইট মানে রাত দশটা থেকে ভোর পাঞ্চটা পর্যন্ত। আর আগে থেকে কারুর বুকিং কনফার্ম করা না থাকলে পেয়ে যাবেন। আপনি কি হোল নাইটের জন্য নিতে চান”?
শঙ্কর একটু দ্বিধান্বিত ভাবে বলল, “না প্রথমেই হোল নাইটের জন্য চাই না আমি। কিন্তু সরজু ভাইয়া, আমি যে অনুপমা ভাবীর টিকিটই নিতে চাইছিলাম। একটু চেষ্টা করে দেখুন না, যদি একটা টিকিট দিতে পারেন। শুধু একঘন্টার জন্যে হলেও চলবে”।
সরজু বলল, “সেটাই তো মুস্কিল শঙ্কর ভাইয়া। আমিও তো তার সাথে কথা বলতে পাচ্ছি না। মনে হয় সে তার সিমকার্ড চেঞ্জ করেছে। রোজ অনেক কাস্টমার তার বুকিং নিতে আমার কাছে আসছে। কিন্তু কাউকে টিকিট দিতে পারছি না। তাই আমারও ইনকাম হচ্ছে না। তবে আমি তাকে অনেক কাস্টমার দিয়েছি। তাই আমার মনে হয় অনুপমা ভাবী নতুন নাম্বার নিয়ে থাকলে আমাকে নিশ্চয়ই ফোন করবে। তার সাথে কথা বলার পরই জানতে পারব সে আর বুকিং নেবে কি না। তার আগে তো আমার কিছু করার নেই”।
শঙ্কর একটু মনমরা হয়ে বলল, “ওহ, তাহলে তো আর এ ব্যাপারে কথা বলে লাভ নেই। ঠিক আছে সরজু ভাইয়া, আমি তাহলে এখন চলি”।
সরজু বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, একটু বসুন না। আজ প্রথম আপনার সাথে দোস্তি হল। এককাপ চা তো খেয়ে যাবেন। একটু বসুন। আমি পাশের দোকানে একটু বলে আসছি। এক মিনিট”।
শঙ্করের খুব একটা বসবার ইচ্ছে না থাকলেও সে উঠল না। সরজু বাইরে বেরিয়ে গিয়ে মিনিট দুয়েক বাদেই আবার ফিরে এসে বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, চায় আ জায়েগা। আপনি বলুন তো আপনার কাম ধান্দা সব ঠিক চলছে তো”?
শঙ্কর বলল, “হাঁ সরজু ভাইয়া, কাম ধন্দা তো ঠিকই চলছে। আরা এবার তো ভাল অর্ডার পেয়েছি। তাই তো এখানে দস পন্দ্রহ দিন থাকতে হবে”।
সরজু বলল, “বাহ খুব ভাল কথা। আমার তো লণ্ড্রীর বেওসাটা ঠিকই চলছে। কিন্তু এটা থেকে তো খুব বেশী কিছু ইনকাম হয় না। কোন কোন দিন তো একশ রুপিয়াও হয় না। গেল চার পাঁচ দিনে অনুপমা ভাবীর কোন টিকিট বেচতে পারছি না। আর এদিকে বিন্দিয়া ভাবীর ডিমাণ্ড অনুপমা ভাবীর মত নয়। তবু রোজ একটা দুটো করে বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট বেচতে পারছি। ওটাই তো আমার আসলি ইনকাম। কিন্তু অনুপমা ভাবীর টিকিট দিতে না পেরে খুব লোকশান হচ্ছে”।
দোকানের সামনে একজন লোক এসে দাঁড়াতে সরজু কথা থামিয়ে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হাঁ বাবুজী বলুন। কিছু ইস্ত্রী করবেন”?
লোকটা কাউন্টারের ওপর একটু ঝুঁকে আস্তে করে বলল, “সিনেমার টিকিট আছে? আজকের শোর”।
সরজুও গলা নামিয়ে বলল, “অনুপমা হল এখন বন্ধ আছে ক’দিন থেকে। বিন্দিয়া হলের টিকিট পাবেন”।
লোকটা বলল, “ঠিক আছে একটা টিকিট দিন। বিকেল চারটের শো-র”।
সরজু বলল, “আজকের টিকিট হবে না বাবুজী। কালকের টিকিট দিতে পারি। তবে কনফার্মেশন কিন্তু কাল সকালে পাবেন, আসলে অনুপমা হল বন্ধ বলেই বিন্দিয়া হলে ভিড় বেশী হচ্ছে তো”।
লোকটা পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে করতে বলল, “ঠিক আছে। কাল বিকেল চারটের শো-র একটা টিকিট দিন” বলে সরজুর হাতে টাকা দিল। সরজু টাকাটা দেখে পকেটে রেখে পকেট থেকে একটা ডাইরী বের করে সেটা খুলে লোকটাকে দেখিয়ে বলল, “দেখুন তো বাবুজী। এটাই তো আপনার নম্বর। তাই না”?
লোকটা ডাইরীর দিকে দেখে বলল, “হ্যা ওটাই আমার নম্বর”।
সরজু এবার তাকে বলল, “ঠিক আছে বাবুজী, আমি কাল সকালে আপনাকে ফোন করব”।
লোকটা আর কিছু না বলে চলে যেতেই চায়ের দোকানের একটা ছেলে দু’কাপ চা কাউন্টারে রেখে বলল, “লিজিয়ে সরজু ভাই। আপনার চা”।
ছেলেটা চলে যেতেই সরজু চায়ের কাপ হাতে ভেতরে এসে শঙ্করের দিকে এক কাপ চা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “আরে বাহ, শঙ্কর ভাইয়া, আপনি তো আমার জন্যে খুব লাকি আছেন। আপনি আছেন বলেই সকাল সকাল একটা টিকিট বেচতে পারলাম। ডের শ রুপিয়া ইনকাম হয়ে গেল আমার”।
শঙ্কর ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারলেও না বোঝার ভাণ করে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি সিনেমার টিকিটও ব্ল্যাক করেন নাকি সরজু ভাইয়া”।
সরজু নিজের চেয়ারে বসে চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “আরে না শঙ্কর ভাইয়া। সবাই তো আর আপনার মত নতুন খিলাড়ি নয়। এ আমার পুরানা কাস্টমার। তাই অল্প কথায় কাজ সাড়া হয়ে গেল। এই লোকটা বিন্দিয়া ভাবীর একটা টিকিট নিল। এ’সব ধান্দা করতে গেলে সবার সামনে তো সব কথা খুলে বলা যায় না। একটু রেখে ঢেকেই কথা বলতে হয়। অনুপমা হল আর বিন্দিয়া হলের টিকিটই এখানে পাওয়া যায়। আর সবাই সে ভাবেই সিনেমার টিকিট কিনতে আসে আমার কাছে”।
শঙ্কর খুশী হয়ে বলল, “বাহ, খুব সুন্দর সিস্টেম বানিয়েছেন তো আপনি”?
সরজু হেসে বলল, “আমার ধান্দা তো এভাবেই করতে হয় শঙ্কর ভাই। আচ্ছা এক মিনিট দাঁড়ান। একটা ফোন করে নিই” বলেই নিজের পকেট থেকে মোবাইল বের করে একজনকে ফোন করে বলল, “হাঁ রাকেশ জী। সুনিয়ে। আপকা টিকট কনফার্ম হো গয়া। আজ শাম পাঞ্চ বজে কা। আপকা কোড নাম্বার হোগা সরজু এক শ নব্বই। ঠিক হ্যায়”? বলে কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বলল, “হাঁ হাঁ, একদম পাক্কা। আপ বেফিক্র রহিয়ে। সব কনফার্ম হো গয়া হ্যায়। পর আগে ভি মুঝসে মিলিয়েগা জরুর। ওকে রাকেশ জী”।
ফোন রেখে শঙ্করের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “এই লোকটা কাল বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট নিয়েছিল। আজ টিকিট কনফার্ম করে দিলাম”।
শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “তার মানে এ লোকটা আগে টিকিট নিয়েছিল আপনার কাছ থেকে”?
সরজু বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া। এ লোকটা কাল টিকিট কিনেছিল। আপনি তো এ লাইনে নতুন। তাই সবটা ভাল বুঝতে পারছেন না। আসলে আমার এখানে এটাই সিস্টেম। ধরুন আপনি এখন কাল দুপুর দুটোয় একঘন্টার জন্যে বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট চাইলেন আমার কাছে। তাহলে আপনাকে তো এখন ডেরশ রুপিয়া দিতে হবে। কিন্তু আপনার টিকিট কিন্তু এখনই কনফার্ম হবে না। রাতে আমার বিন্দিয়া ভাবীর সাথে কথা হবে। সে যদি কাল দুপুর দুটোয় ফ্রি থাকে তবেই তো আপনার টিকিট কনফার্ম করে আপনাকে সেখানে পাঠাতে পারব আমি। আর যদি বিন্দিয়া ভাবী কাল দুপুর দুটোয় অন্য কাস্টমার নিয়ে থাকেন তাহলে তো আপনি আর তাকে ওই সময় পাবেন না। তাই আপনার টিকিটও কনফার্ম করতে পারব না। আর তখন আপনার ডেরশ রুপিয়া আপনি আমার কাছ থেকে কাল সকালে ফেরত পেয়ে যাবেন। পরে চাইলে আপনাকে আবার নতুন করে টিকিট নিতে হবে। তবে আমি কনফার্ম করে দেবার পর আপনি সিনেমা দেখুন বা না দেখুন, এই ডেরশ রুপিয়া কিন্ত আর ফেরত পাবেন না। আপনি সেখানে সময় মত যেতে না পারলে আপনার বুকিং কেনসিল হয়ে যাবে। ঠিক টাইমে আপনাকে সেখানে হাজির হতে হবে। টাইমিং কিন্তু চেঞ্জ করা যায় না। কারন একঘন্টা বাদে ভাবীদের অন্য কাস্টমার থাকবে। তাই টাইমিং মিস হলে আপনার শো দেখা ক্যানসিল হয়ে যাবে আর এই ডেরশ রুপিয়াও কিন্তু বরবাদ হয়ে যাবে”।
শঙ্কর কিছু একটা বলতে যেতেই সরজুর পকেটের মোবাইলটা আবার বেজে উঠল। সরজু পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে শঙ্করকে বলল, “শঙ্কর ভাইয়া, চুপ রহিয়ে গা। এক অঞ্জান নাম্বার থেকে ফোন এসেছে” বলে কলটা রিসিভ করে বলল, “হ্যালো, কৌন বোল রহে হ্যায় আপ”?
একটু চুপ করে থেকেই সরজুর চোখ মুখ চকচক করে উঠল। সে খুশী গলায় বলে উঠল, “আরে ভাবীজী আপনি? আপনাকে তো আমি চার পাঞ্চ দিন থেকে ফোন করে পাচ্ছিই না”।
আবার কিছুক্ষণ অন্যদিকের কথা শুনে বলল, “আরে ভাবীজী, আপনার মার্কেটে কী ডিমাণ্ড আছে সে কি আপনি জানেন না? রোজ তিন চারজন করে কাস্টমার ফিরিয়ে দিচ্ছি আমি। আপনার সাথে কন্টাক্ট করতে না পারলে আমি কি করে তাদের টিকিট দেব বলুন তো? আর তাছাড়া আপনি কোথায় আছেন, সেখানে বেওসা করছেন কি না, এসব তো আমি কিছুই জানি না। ফোন করেও বার বার শুনছি সুইচ অফ” বলে আবার থেমে গিয়ে কিছুক্ষণ ও’পাশের কথা মন দিয়ে শুনে বলল, “আরে ভাবিজী আজ সকালেও তো একজন আমার কাছে এসেছিল আপনার বুকিং নেবার জন্য। আমি তো তাকে ফিরিয়ে দিলাম। কিন্তু হতে পারে সে হয়ত আশে পাশেই আছে। বাইরে গিয়ে দেখতে হবে”।
তারপর অনেকক্ষণ ফোন কানে ধরে খুব মন দিয়ে কথাগুলো শুনে বলল, “ঠিক আছে ভাবীজী, আমি দেখছি। তবে আমি যদি তাকে দেখতে পাই তাহলে কোন টাইমের জন্য তাকে কনফার্ম করে দেব বলুন”।
আবার প্রায় মিনিট দুয়েক ও’পাশের কথা শুনে বলল, “ঠিক আছে ভাবীজী, আমি দেখছি। আপনাকে পরে ফোন করছি তাহলে”।
______________________________