Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#49
(Update No. 69)

পরদিন সকালে রতীশ বিমল আগরওয়ালাকে ফোন করে বলল, “বিমলজী, আপনি আপনার ওই বন্ধুর যোগা ইনস্টিটিউটের ঠিকানাটা বলবেন? আমি সেখানে গিয়ে একটু কথা বলতাম”।

বিমল বলল, “আপনি সেখানে কাজ করতে রাজি আছেন? আচ্ছা শুনুন রতীশবাবু। আমি আজ আমার বন্ধুর সাথে কথা বলে নিই। আপনি সন্ধ্যের দিকে আমার অফিসে চলে আসুন। নইলে সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টার পর আমাকে একবার ফোন করুন। আমি তখন আপনার সাথে কথা বলব। আমি এখন একটা জায়গায় যাচ্ছি। রাস্তায় আছি। তাই আপনি কিছু মনে করবেন না। সন্ধ্যের সময় কথা বলছি আমরা”।

রতীশ “আচ্ছা বিমলজী” বলে ফোন রেখে দিল। সারাটা দিন রতীশ বাড়িতেই কাটাল। সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা বাজতেই রতীশ বিমলকে ফোন করল। বিমল ফোন ধরেই বলল, “হ্যা রতীশবাবু শুনুন। আমি আমার বন্ধুর সাথে কথা বলেছি। আমার বন্ধু তো এমনিতে রাজি আছে। কিন্তু সে জানতে চাইছিল যে আপনি কি কোন যোগা ডিগ্রী টিগ্রী পেয়েছেন কি না”।

রতীশ বলল, “হ্যা বিমলজী, দেরাদুন আর ঋষিকেশের দু’তিনটে ইনস্টিটিউট থেকে আমি কয়েকটা ডিগ্রী পেয়েছি। সে’সব সার্টিফিকেটও আমার কাছে আছে। উনি চাইলে সে’সব দেখতেও পারবেন”।

বিমল খুশী হয়ে বলল, “বাহ, এ তো খুব ভাল কথা। তাহলে আপনি এক কাজ করুন। আজ তো বৃহস্পতি বার। আপনি রবিবার সকাল দশটার দিকে আমার অফিসে চলে আসুন। ওই সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে আসবেন সঙ্গে করে। আমি তার সাথে কথা বলে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখব। আমি সঙ্গে করেই আপনাকে নিয়ে যাব সেখানে। কোন অসুবিধে হবে না”।

রতীশ বলল, “হ্যা সে তো ঠিক আছে বিমলজী। কিন্তু রবিবারে যাওয়া মানে আমাকে তো আরও দুটো দিন বেকার বসে থাকতে হবে। তাই বলছিলাম, আপনি তো নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। আপনি যদি শুধু তার ঠিকানাটা আমাকে দিতেন, তাহলে আমি নিজে গিয়েও তার সাথে কথা বলতে পারতাম”।
 

বিমল বলল, “আরে আপনাকে কিছু ভাবতে হবে না রতীশবাবু। আপনার কাজ সেখানে হয়ে যাবেই। তবে আমার বন্ধুও তো খুব ব্যস্ত থাকে। আর সে বোধহয় ছোটখাট একটা ইন্টারভিউও নেবেন। রবিবার ছাড়া অন্য দিন ইন্টারভিউ নেবার সময় তার হয় না। তাই আপনাকে রবিবারেই সেখানে যেতে হবে। আর ওই বন্ধুর সাথে আমারও একটা পার্সোনাল কাজ আছে। তাই সেদিন একসাথে দুটো কাজই হয়ে যাবে। আর তাছাড়া আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস না করে আমি তার ফোন নাম্বার আপনাকে দিতেও পারব না। দুটো দিন আপনি একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। আশা করি রবিবারে আপনার কাজ হয়ে যাবে। আপনি সোমবার থেকেই সেখানে কাজ করতে পারবেন। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন এ ব্যাপারে”।
 

রতীশ বলল, “ঠিক আছে বিমলজী, আপনি যে আমার জন্যে এতটা করছেন তাতে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি রবিবার দশটার দিকে তাহলে আপনার অফিসে চলে যাব”।

বিমল বলল, “হ্যা রতীশবাবু, সেটাই ভাল হবে। তবে শুনুন। রবিবারে আমার অফিস কিন্তু খোলা পাবেন না। আপনি অফিসের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবেন। আমি দশটা থেকে সওয়া দশটার ভেতরই গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যাব সেখানে। তারপর আপনাকে নিয়ে আমার বন্ধুর ওখানে যাব। ঠিক আছে তো”?
 

রতীশ বলল, “ঠিক আছে বিমলজী। আমি সময় মত আপনার অফিসের সামনে পৌঁছে যাব”।
 

বিমল বলল, “ঠিক আছে রতীশবাবু। তাহলে রবিবার সকালে আপনার সাথে দেখা হচ্ছে। এখন ছাড়ছি তাহলে” বলে ফোন কেটে দিল।
 

*************

সীমন্তিনী সন্ধ্যের ঠিক আগে আগে তার কোয়ার্টারে ফিরে এসেছে। থানা থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সে রতীশের কথা ভাবছিল। রবিশঙ্কর এক তারিখে রতীশের কাছ থেকে টাকাগুলো নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। তিন তারিখে সে ব্যাপারটা জানতে পেরেছে। আর তিন তারিখেই সে পরিতোষকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে। পরিতোষ তার থেকে বয়সে মাত্র দু’বছরের বড় হলেও চাকুরির ক্ষেত্রে সে সীমন্তিনীর চার বছরের সিনিয়র। অস্বাভাবিক বুদ্ধিমান পরিতোষ খুব অল্প দিনের মধ্যেই পুলিশ ডিপার্টমেন্টে নিজের অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সীমন্তিনী আইপিএস হয়ে হায়দ্রাবাদে ট্রেনিং নিতে গিয়েই পরিতোষ সান্যালকে দেখেছিল। অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার লোকটাকে দেখেই সীমন্তিনী বুঝেছিল লোকটা অন্য আর দশটা পুলিশ অফিসারের মত নয়। সে সময় থেকেই নিজে না চাইলেও পরিতোষের সাথে তার একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তারপর থেকে পরিতোষের নানা কীর্তির কথা সে শুনেছে। সৎ পুলিশ অফিসারেরা বড়কর্তা আর রাজনৈতিক নেতাদের চাপে অনেক সময়ই আসল অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বা তাদের শাস্তি দিতে পারে না। কিন্তু পরিতোষ নিজের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দিতে না পারলেও, তার হাত থেকে কোন অপরাধীই রেহাই পায় নি। আইনের আওতার বাইরেও তার নিজস্ব একটা আলাদা গোপন নেটওয়ার্ক আছে। আর সেই নেটওয়ার্কের প্রতিটা সদস্যই কোন না কোন ভাবে পরিতোষের কাছে কৃতজ্ঞ। পরিতোষের একটা কথায় তারা নিজের প্রাণের বাজি ধরতেও দ্বিধা করেনা বিন্দুমাত্র। পরিতোষের সেই গোপন নেটওয়ার্কের সদস্যরা পরিতোষকে পুলিশ রবিনহুড বলে ডাকে। ডুয়ার্সে সীমন্তিনীর পোস্টিং হবার পর থেকে পরিতোষ মাঝেমধ্যেই ফোন করে সীমন্তিনীর খবরাখবর নিয়ে থাকে। রতীশ আর রচনার দেওয়া ইনফর্মেশনের ওপর ভিত্তি করে রবিশঙ্করকে কলকাতা পুলিশ যে ধরতে পারবে না এ’কথা সীমন্তিনী আগেই বুঝেছে। তাই সমস্ত ঘটণাটা সে পরিতোষকে খুলে বলেছে। তার বিশ্বাস পরিতোষ ছাড়া আর কেউ রবিশঙ্করকে খুঁজে বের করতে পারবে না। কিন্তু তিনদিন পেরিয়ে যাবার পরেও পরিতোষের কাছ থেকে কোন খবর না পেয়ে তার একটু চিন্তাই হচ্ছিল।
 

কোয়ার্টারে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে চা খেতে খেতে তার পার্সোনাল মোবাইলটা হাতে নিতেই মোবাইলটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে দেখা গেল ‘পরিতোষ কলিং’। ফোনটা রিসিভ করে কানে লাগিয়ে বলল, “হ্যা স্যার, বলুন”।

ও’পাশ থেকে পরিতোষ বলল, “আমি মানছি গত ঊণপঞ্চাশ ঘন্টায় আমি তোমাকে একটি বারও ফোন করিনি। কিন্তু তাই বলে তুমি আমাকে এভাবে গাল দেবে মুন ডার্লিং”?
 

সীমন্তিনী বলল, “ওমা? আমি তো আমার সিনিয়র অফিসারকে স্যার বলেছি শুধু। গাল কোথায় দিয়েছি”?
 

পরিতোষ বলল, “তিন বছর আগে তোমাকে নিজের করে নেবার জন্য কত সাধ্য সাধনা করেছি। ফুঁ মেরে আমার সে আবেদন উড়িয়ে দিলেও অনেক তোষামোদ করে তোমার বন্ধু হবার যোগ্যতাটুকু অর্জন করতে পেরেছিলাম। আজ সেই বন্ধুর মুখে যদি আমাকে স্যার ডাক শুনতে হয়, তবে সেটা কি আর গালিগালাজের চেয়ে কোন অংশে কম কিছু হয় ডার্লিং? যাক গে, আমার মনের দুঃখ তুমি আর কবেই বা বুঝেছ? তবে শোনো ডার্লিং। তোমার দাদাভাইয়ের কালপ্রিটেরা দুটো আলাদা আলাদা জয়গায় আছে। টার্গেট ওয়ান, রবিশঙ্কর প্রসাদ। তার তেইশ বছর বয়সী সুন্দরী স্ত্রী অনুপমা প্রসাদকে নিয়ে বড়বাজারে একটা নতুন ফ্ল্যাটে এ মাসের এক তারিখ থেকে থাকতে শুরু করেছে। দেড় বছরের একটি পুত্র সন্তান আর বছর তেরোর একটা কাজের মেয়ে গুড়িয়াকে নিয়ে সে ফ্ল্যাটে আছে। আর টার্গেট টু হচ্ছে দিবাকর প্রসাদ, বয়স বেয়াল্লিশ। বেলঘরিয়ার একটা বস্তিতে তার চেয়ে দু’বছরের বড় স্ত্রী বিন্দিয়া, পনের বছরের একটি কন্যা সন্তান, যার বাড়ির ডাকনাম হচ্ছে গুড্ডি, আর কুড়ি বছরের এক ছেলে নিয়ে থাকে। তাদের আরেকটি সন্তান চব্বিশ বছরের ছেলে বছরখানেক আগে বিয়ে করে আলাদা জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে। রবিশঙ্করের ব্যবসার কথা তো তুমি জানই। দিবাকর একজন দালাল। মূলতঃ মেয়ে মানুষের দালাল। নিজের স্ত্রীর জন্য গ্রাহক খুঁজে আনে। তবে একটা চমকপ্রদ খবর এই, যে দিবাকর প্রসাদ লোকটা নিজে হোমো হলেও তার দু’বছরের বড় স্ত্রী বিন্দিয়া তিন তিনটি সন্তানের মা”।

সীমন্তিনী এতটা শুনে প্রশ্ন করল, “রবিশঙ্করের সাথে দিবাকরই যে হাত মিলিয়ে দাদাভাইয়ের টাকাটা লুট করেছে, এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত”?

পরিতোষ বলল, “এ তুমি কেমন কথা জিজ্ঞেস করছ ডার্লিং? আমার রিপোর্টের ওপর তোমার ভরসা হচ্ছে না? শোনো, আমি এ ব্যাপারে একশ দশ শতাংশ নিশ্চিত। ওই দিবাকর প্রসাদকেই রবিশঙ্কর তোমার দাদাভাইয়ের কাছে বিমল আগরওয়ালা বলে পরিচয় করিয়েছিল। এরা দু’জনেই বিহারী। কিন্তু এদের স্ত্রীরা কেউই বিহারী নয়। বিহারীদের মত চালচলন হলেও এরা দু’জনেই বাঙালী। আর দু’জনেই দেহ ব্যবসায় লিপ্ত। অনুপমা তার দেহ ব্যবসার কথা স্বামীর কাছে গোপন রেখেছে। কিন্তু বিন্দিয়ার দেহ ব্যবসার খদ্দের তার স্বামীই খুঁজে এনে দেয়। অবশ্য তার অন্য এজেন্টও আছে। নিজেদের মধ্যে রক্তের কোন সম্পর্ক না থাকলেও রবিশঙ্কর দিবাকরকে চাচা বলে ডাকে। আর রবিশঙ্কর দিবাকর এবং আরো দু’তিনজন অসৎ লোকের সাথে হাত মিলিয়ে আরও কয়েকজন লোকের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এমন চার পাঁচটা কেসের ডিটেইলস জানতে পেরেছি”।

সীমন্তিনী চুপচাপ পরিতোষের কথা শুনে যাচ্ছিল। পরিতোষ আবার বলল, “দিবাকর নিজে এ ধরণের লোক ঠকিয়ে তাদের টাকা আত্মসাৎ করে না। সে শুধু স্ত্রীর জন্যে গ্রাহকের যোগান দেওয়া ছাড়া নিজের জন্য পুরুষ সঙ্গীও জুটিয়ে থাকে। কিন্তু রবিশঙ্করের সাথে হাত মিলিয়ে সে এমন অপারেশন দুটো করেছে। আর তোমার দাদাভাইয়ের কাছ থেকে লুট করা টাকাটা তারা দু’জন সমান সমানে ভাগ করে নিয়েছে। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার সাথে তাদের যোগাযোগ আছে কি না, সেটা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানতে পারিনি। অবশ্য আমার লোক বিমলের পেছনেও লেগে আছে। বিমল আমার লিস্টে টার্গেট থ্রি হিসেবে এনলিস্টেড আছে। কিন্তু বিমল, দিবাকর আর রবিশঙ্কর কেউ কারুর সঙ্গে গত দু’দিনে দেখা করেনি। কিন্তু আমার দৃঢ় ধারণা, দিবাকরের সাথে না হলেও রবিশঙ্করের সাথে বিমলের কোন না কোন যোগাযোগ নিশ্চয়ই আছে। সেটা খুঁজে বের করবার চেষ্টা করছি”।

একটু থেমে পরিতোষ আবার বলল, “তোমার দাদাভাইয়ের সাথে তোমার বৌদিও গতকাল রবিশঙ্করের পুরোন বাড়িতে খোঁজখবর করতে গিয়েছিল। সেখানে রবিশঙ্করের আগের ঘরের মালিক কামেশ্বর মিশ্রের সাথে তারা কথা বলেছে। এরিয়াটা একেবারেই ভাল নয়। গোটা এলাকাটাই অ্যান্টি সোশাল এলিমেন্টে ভরা। তোমার দাদাভাই বৌদিকে নিয়ে সেখানে গিয়ে ঠিক কাজ করেনি। অবশ্য আমার লোক সেদিন ওদের পেছনে ছিল। আর সে তাদেরকে সাবধান করে দিয়েছে। তুমিও একটু তোমার দাদাভাই আর বৌদিকে বুঝিয়ে দিও। তারা যেন কখনও আর সেখানে না যায়। রবিশঙ্কর ওখানে নেই বলে আমার লোকেরাও আর এখন ওখানে কেউ নেই এখন। ওই এরিয়া থেকে যতটুকু ইনফর্মেশন কালেক্ট করার ছিল সেটা করে তারা রবিশঙ্করের নতুন ঠিকানার পেছনে ধাওয়া করছে এখন। কিন্তু ওই পুরনো জায়গায় রবিশঙ্করের স্ত্রী অনুপমার চ্যানেল এখনও এফেক্টিভ আছে। সেখানে একজন বিহারী লোকের একটা লণ্ড্রী আছে। লোকটার নাম সরজু। সরজু অনুপমার ব্যবসার বুকিং এজেন্ট। তোমার দাদা আর বৌদি সেখানে গিয়েই রবিশঙ্করের খোঁজ করছিল প্রথমে। তাই রবিশঙ্করের কানে কথাটা চলে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। আর রবিশঙ্কর যদি বুঝতে পারে যে সে বিপদে পড়তে চলেছে, তাহলে সে আরও কোন বিপদ বাঁধাতে পারে। তাই তুমি....”

সীমন্তিনী পরিতোষকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “সে ঘটণাটা আমি শুনেছি পরিতোষ। আর শুনেই বুঝেছি যে তোমার কোন লোকই ওদের সতর্ক করে দিয়েছিল। তবে ওটা নিয়ে আর ভেবো না। আমি ওদের দু’জনকেই বুঝিয়ে দিয়েছি। ওরা ও’সব জায়গায় আর যাবে না”।
 

পরিতোষ বলল, “দ্যাটস ফাইন। তবে শোনো ডার্লিং। আমাকে ভুল বুঝো না। আমি কিন্তু তোমার দাদাভাইয়ের ওপর নজর রাখতে তাকে আমার লিস্টে টার্গেট নাম্বার ফোর হিসেবে রেখেছি। আমার মনে হয়েছে কিছুদিন তাদের ওপর ওয়াচ রাখা দরকার। না তুমি ভেবনা যে আমি তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছি বা অন্য কিছু সন্দেহ করছি। যে তোমার ভালবাসা পেয়েছে সে যে একেবারে খাঁটি সোনা এ ব্যাপারে আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এটা করছি জাস্ট অ্যাজ এ সিকিউরিটি মিজার। যাতে তারা নতুন কোন বিপদের মুখে পড়লে আমি তাদের সাহায্য করতে পারি। আশা করি তুমি আমার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পেরেছ”?
 

সীমন্তিনী খুব শান্তভাবে বলল, “তুমি এমন করে বলছ কেন পরিতোষ। আমি জানি তুমি আমার দাদাভাই আর রচু সোনার নিরাপত্তার জন্য সব কিছু করবে”।
 

পরিতোষ বলল, “এই দাঁড়াও দাঁড়াও ডার্লিং। তুমি কি তোমার বৌদি রচনাকে রচু সোনা বলে ডাকো”?
 

সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “ওর নাম যে রচনা, সেটাও জেনে ফেলেছ? তবে হ্যা, আমার দাদাভাইয়ের বিয়ের আগে থেকেই আমি ওকে ওই নামে ডাকি। কিন্তু সে’কথা আপাততঃ থাক। তুমি এবার আমাকে তোমার কোর্স অফ অ্যাকশন সম্বন্ধে বল দেখি”।
 

পরিতোষ বলল, “সরি ডার্লিং। নিজের অ্যাকশন প্ল্যান আমি কাউকে জানতে দিই না। আর তুমিও সেটা জানতে চেও না। তুমি শুধু আউটকাম সম্বন্ধে প্রশ্ন করবে আমাকে। তবে তোমার বন্ধু হিসেবে আপাততঃ শুধু এটুকু বলতে পারি যে ব্লু প্রিন্ট বানানো হয়ে গেছে। দুটো টার্গেটে কাজ কাল সকাল থেকেই শুরু হচ্ছে। মানে টার্গেট ওয়ান আর টুর ওপর। টার্গেট থ্রির অবজার্ভেশন চলছে। আর টার্গেট ফোরে ভোর চারটে থেকে রাত বারোটা অব্দি ওয়াচম্যানেরা নজর রেখে চলছে”।
 

সীমন্তিনী বলল, “ওকে পরিতোষ। তবে একটা অনুরোধ তোমায় করছি। দাদাভাইয়ের টাকাটা ফিরে পাই আর না পাই, সে কূকর্মটা যারা করেছে ওই বদমাশ গুলোকে কিন্তু শাস্তি দিতেই হবে। ওরা যেন বুঝতে পারে আমার দাদাভাইকে ঠকিয়ে ওরা কত বড় ভুল করেছে”?
 

পরিতোষ বলল, “ডার্লিং, তুমি ইমোশনাল হয়ে পড়ছ। আমাদের কাজে ইমোশনাল হয়ে পড়াটা কিন্তু খুব বিপজ্জনক, এ’কথাটা ভুলে গেলে”?

সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “মানে? কী বলতে চাইছ তুমি”?
 

পরিতোষ বলল, “একটু মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবে দেখ তো ডার্লিং। যে অপরাধ তারা করেছে, তাতে আইন মাফিক শাস্তি দিলে কি সেটা যথেষ্ট হবে বলে ভাবছ তুমি? এ অপরাধের জন্য কোর্ট কি তাদের মৃত্যুদণ্ড দেবে? কী শাস্তি হতে পারে তাদের, সেটা একটু ভেবে দেখ তো? এক দু’বছরের কারাবসের বেশী আর কি শাস্তি হবে তাদের? আর তাছাড়া ডিফেন্স লইয়াররাও কি ছেড়ে কথা কইবে? আর দু’বছর জেল খেটে বেরিয়ে এসে তারা যে আবার তোমার দাদাভাইয়ের ওপর কোন প্রতিহিংসামূলক কিছু করতে চাইবে না, তারও কি কোন গ্যারান্টি আছে”?

সীমন্তিনী একটু থতমত খেয়ে কোন রকমে বলল, “হ্যা, সে’কথা তো ঠিক। কিন্তু তাহলে কী হবে”?

পরিতোষ বলল, “হতাশ হবার মত কিছু নেই ডার্লিং। তোমার প্রাণের মানুষটার যে ক্ষতি ওরা করেছে তার অনেকগুণ বেশী শাস্তি ওরা পাবে। কিন্তু ওদেরকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে তোমার দাদাভাইকে ঠকিয়েছে বলেই ওরা এ শাস্তি পাচ্ছে। তাতে ভবিষ্যতে তোমার দাদাভাইয়ের ওপর আরও কোন বিপদ নেমে আসতে পারে। তুমি সেটা বরদাস্ত করতে পারবে”?
 

সীমন্তিনী প্রায় আঁতকে উঠে বলল, “না না পরিতোষ। প্লীজ এমন কথা বোল না তুমি”।

পরিতোষ বলল, “সে জন্যেই বলছি, আমার কথাটা মন দিয়ে শোন। তোমার দাদাভাইয়ের কাছ থেকে ওরা দু’লাখ টাকা লুটেছিল। আর আমি ওদের কাছ থেকে এর অনেকগুণ বেশী আদায় করে ছাড়ব। আর টার্গেট ওয়ানকে ইম্মোরাল ট্রাফিক অ্যাক্টে জেলে ঢোকাব। আর এমনভাবে কেসটা সাজাব যে অন্ততঃ পাঁচ বছরের জন্যে ওকে শ্রীঘরে বাস করতে হয়। টার্গেট টুকেও তেমনই আরেকটা ফলস কেসে কেমন ভাবে ফাঁসাচ্ছি তা তুমি সময় মত জানতে পারবে। তবে কোন না কোন সময় ওরা তো জেল থেকে ছাড়া পাবেই। কিন্তু ওরা এটা বুঝতেই পারবে না যে তোমার দাদাভাইকে লুট করেছে বলেই ওদের এমন শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। তাই তোমার দাদাভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নেবারও কোন সম্ভাবনাও থাকবে না। এবার বুঝতে পারছ তো”?
 

সীমন্তিনী শান্তগলায় জবাব দিল, “হ্যা পরিতোষ, তুমি ঠিক বলছ। আমি সত্যি ইমোশনাল হয়েই অমনটা ভেবেছিলাম। সরি”।
 

পরিতোষ বলল, “সরি বলার কি আছে ডার্লিং? আমি তো জানি তোমার দাদাভাই তোমার কাছে কী, আর কতখানি। আমি তোমাকে চেয়েও পাই নি। আর তুমি তাকে স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েও আঁকড়ে ধরে আছ। তোমার মনের সিংহাসনে তোমার দাদাভাই ছাড়া আর কেউ জায়গা পায়নি। আর এটাও জানি, তোমার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত সে-ই তোমার হৃদয়ের আসনের একমাত্র অধিকারী হয়ে থাকবে। তোমাকে আমি ভালবেসে নিজের করে পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার সাধনার কথা শুনে তোমাকে মনে মনে শুধু প্রণামই করে আসছি গত তিন বছর ধরে। এমনভাবে ক’জন ভালবাসতে পারে? আমার ভালবাসা পূর্ণতা না পেলেও তোমার ভালবাসাকে আমি কুর্ণিশ করতে বাধ্য হয়েছি ডার্লিং”।

সীমন্তিনী পরিতোষকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আমি তোমায় যদি আরেকটা অনুরোধ করি, তুমি আমার সে অনুরোধটাও রাখবে পরিতোষ”?
 

পরিতোষ বলল, “কী বলছ ডার্লিং! তোমার কথা রাখব না, এ কখনও হতে পারে? বল কি বলবে”।

সীমন্তিনী বলল, “আগে তুমি কথা দাও আমার অনুরোধটা রাখবে। প্লীজ পরি”।

পরিতোষ বলল, “আচ্ছা বাবা, ঠিক আছে। রাখব তোমার কথা। এবার বলে ফেল তো”।

সীমন্তিনী বলল, “এবার তুমি একটা পছন্দসই মেয়ে খুঁজে তাকে বিয়ে করে সংসারী হও না”।

পরিতোষ কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “ঠিক আছে আমার মুন ডার্লিং। চেষ্টা করব। আচ্ছা রাখছি এখন” বলেই ফোন কেটে দিল।
 

ফোনটা নামিয়ে রেখে পরিতোষ অনেকক্ষণ মাথা নিচু করে বসে নবনীতার কথা ভাবতে লাগল। কিন্তু মিনিট পাঁচেক বাদেই মাথা ঝাঁকি দিয়ে যেন সব ভাবনা ঝেরে ফেলে দিল। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিয়ে আবার মোবাইল থেকে কাউকে একটা ফোন করল। ও’পাশের সাড়া পেতেই সে বলল, “কিরে সব ঠিকঠাক আছে তো”? আর দু’সেকেণ্ড বাদে সে আবার বলে উঠল, “শোন, তোর অপারেশনটা কাল থেকেই শুরু করে দে। আর অপারেশনটা যে দুটো ফেজে পুরো হবে তা তো জানিসই। তোর পার্টটুকু করতেই সময় বেশী লাগবে। পরের পার্টের পুরো কাজটা তো একদিনেই শেষ হয়ে যাবে। তাই তুই আর দেরী না করে কাল সকাল থেকেই কাজে নেমে পর। তোর টিমের বাকিদেরও তৈরী করে নে। আর যে ভাবে প্ল্যানটা করে দিয়েছি, ঠিক ঠিক সেই ভাবেই স্টেপ বাই স্টেপ এগিয়ে যাবি। আর আমাকে সকাল বিকের দু’বেলা আপডেট দিয়ে যাবি। প্রয়োজনে প্ল্যানে হেরফের হতে পারে। আর সবটাই ডিপেণ্ড করবে তোর দেওয়া ফিডব্যাকের ওপর। তাই রোজ দু’বেলা লেটেস্ট আপডেট জানাবি আমাকে। ঠিক আছে”?
 

তারপর আরেকজনকে ফোন করে বলল, “এই বামুন ব্যাটা, ফিল্ডে নেমে পর। তবে দেখিস কোনরকম উল্টো পাল্টা যেন না হয়। ওরা যেন ঘূণাক্ষরেও জানতে না পারে যে এর পেছনে কে বা কারা আছে। আর যেভাবে ব্লু প্রিন্ট বানিয়ে দিয়েছি, সেটা ঠিক ঠাক ফলো করে চললে সবকিছু স্মুথলি হয়ে যাবে। আর কাজের শুরুটা ওই বাজার থেকে কর, ঠিক আছে”?
 

কয়েক সেকেণ্ড ও’পাশের কথা শুনে “ও কে বাই” বলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল।

****************
_______________________________________________
 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 27-02-2020, 07:26 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)