Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#48
(Update No. 68)

রচনা নিজের পোশাক বদলাতে বদলাতে বলল, “হ্যা সোনা, তুমি বোধ হয় ঠিকই বলেছ। কিন্তু ছেলেটা কে হতে পারে বল তো? আমাদের ব্যাপারে এত কিছু সে জানল কি করে”?

রতীশও নিজের পোশাক চেঞ্জ করে বলল, “সারা রাস্তা আসতে আসতে তো ছেলেটার কথাই ভাবছিলুম আমি সোনা। কিন্তু এত ভেবেও কোন হদিশ করে উঠতে পাচ্ছি না”।
 

রচনা জিজ্ঞেস করল, “তোমার কি ছেলেটাকে পুলিশের ইনফর্মার বলে মনে হয়”?
 

রতীশ একটু অবাক হয়ে বলল, “পুলিশের ইনফর্মার! পুলিশ আমাদের পেছনে লোক লাগিয়েছে বলছ তুমি”?
 

রচনা বলল, “একটু ভেবে দেখ তো সোনা। ছেলেটা যতটুকু বলেছে তাতে এটা তো স্পষ্ট যে সে ঘটণাটার সব কিছুই জানে। যে ঘটণাটা আমাদের সাথে ঘটেছে, সেটা পুলিশ ছাড়া আর কে জানে? হ্যা, ওই বদমাশ রবিশঙ্কর আর তার সাথের ওই লোকটা জানে। আর জানে বিমল আগরওয়ালা, যে তোমার মুখ থেকে সেটা শুনেছে। কিন্তু ছোটকাকু যে আমাদের জন্যে কিছু পাঠাবেন, আর আমরা তার অপেক্ষায় আছি, এ’কথা তো পুলিশও জানে না এখনও। আর রবিশঙ্কররা বা বিমল আগরওয়ালা কিভাবে জেনে যাবে? অথচ ছেলেটা জানে! এটা কী করে সম্ভব হয়”?

রতীশ বলল, “সেটা আমিও ভেবে পাচ্ছি না সোনা। তবে আমরা যে রবিশঙ্করের খোঁজ করতে আর কোথাও যাব না, এটা আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। টাকাটা গেছে, যাক। আর কিছু খোয়াতে রাজি নই আমি। তবে আজকের কথাটা মন্তিকে জানাতেই হবে। ও পুলিশ অফিসার। হয়ত কিছু বুঝতে পারবে”।
 

*************

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর রচনা আর রতীশ বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করতে করতে রচনা জিজ্ঞেস করল, “তাহলে সোনা, এখন কী করবে বলে ভাবছ বল তো? বিমল আগরওয়ালার ওই বন্ধুর সেন্টারেই কাজে যোগ দেবে? না অন্য কিছু ভাবছ”?
 

রতীশ রচনাকে নিজের বুকের ওপর টেনে নিয়ে বলল, “আর কিছু নিয়ে তো আর ভাবিই নি সোনা। আমি তো ভাবছি মন্তির কথা মত, একবার বিমল আগরওয়ালার বন্ধুর ইনস্টিটিউট থেকে ঘুরেই আসি। তুমি কি বলছ”?

রচনা স্বামীর বুকে গাল ঘসতে ঘসতে বলল, “আমি কি আর তোমার ইচ্ছের বিরূদ্ধে যেতে পারি সোনা? কিন্তু দিদিভাইয়ের কথাগুলো মনে রেখ। দিদিভাই কাল যে’সব কথা বলল, তা শুনে তো আমার মনে মনে বেশ ভয় হচ্ছে। তেমন কোন অসামাজিক কাজের সাথে তুমি জড়িয়ে পড়লে আমি কী করব”?
 

রতীশ রচনার কাঁধে আর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “স্বেচ্ছায় যে ও’সব কাজে জড়িয়ে পড়ব না, এ’কথা তো বলাই বাহুল্য। তিন বছর ধরে তো আমাকে দেখছ তুমি। তোমার কি মনে হয় আমি জেনে বুঝে অমন পাপ কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলব”?
 

রচনা স্বামীর বুকে চুমু খেয়ে বলল, “তুমি জেনে বুঝে যে কখনই ও’সব কাজ করবে না, এ ব্যাপারে আমার মনে কোন সন্দেহই নেই সোনা। কিন্তু দিদিভাই যে কথাগুলো বলেছে সে’গুলোও তো ঠিক। তুমি যে খুব সহজেই সবাইকে বিশ্বাস করে ফেল। আর কাউকে মুখের ওপর কোন ব্যাপারে ‘না’ বলতে পার না। আর যার ইনস্টিটিউটে তুমি কাজ করবে তার আদেশ তো তোমাকে মানতেই হবে। চাকরি কথাটার মানেই তো পরাধীনতা। রুলস রেগুলেশনস, টার্মস কণ্ডিশনস এসব তো মেনে চলতেই হবে। নিজের মর্জি মাফিক তো কিচ্ছুটি করতে পারবে না। আবার মন সায় না দিলেও মালিকের বা বসের হুকুম তোমায় তো মানতেই হবে। তারা যদি তোমাকে অমন কোন আদেশ দেন, তাহলে তুমি কী করবে”?

রতীশ বলল, “তেমন হলে তো সেখানে কাজ ছেড়ে দিতেই হবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় মুস্কিলটা যে অন্য জায়গায় রচু। আমার মত হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট ছেলে কলকাতার রাস্তা ঘাটে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক’জনের কপালে আর সরকারী চাকরি জোটে বল। অনেক উচ্চ শিক্ষিত ছেলেও পেটের দায়ে অনেক হীন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু আমি যেমন পরিবারের ছেলে, আমি তো তা করতে পারব না। কোন বিজনেস ফার্মে বা দোকানেও কর্মচারি হতে পারব না। আর যোগা নিয়ে ছোটবেলা থেকেই মনে মনে যে স্বপ্নটা দেখে বেড়াচ্ছি, সেটা যেন আমায় তাড়া করছে অবিরত। তাই আমি যে সে লাইনেই থাকতে চাই”।

রচনা স্বামীর বুকের একপাশে নিজের মাথা রেখে একহাতে স্বামীর বুকের আরেক পাশে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “তুমি যদি তা-ই করতে চাও, তাহলে বিমল আগরওয়ালার সাথে কথা বলে দেখ। কিন্তু আমার একটা কথা শুনবে”?

রতীশ বলল, “তুমি আর মন্তি ছাড়া আমি আর কার কথা শুনব বল তো? ছোটবেলা থেকে বিয়ের আগে পর্যন্ত মন্তির প্রতিটা কথা শুনেছি। বিয়ের পর থেকে তোমার কথাই তো মেনে আসছি। বল না কী বলবে”?

রচনা স্বামীর বুকে হাতের ভর রেখে নিজের মাথাটা তুলে রতীশের চোখে চোখ রেখে বলল, “তুমি আমাকে কথা দাও। সেখানে ও’সব কাজে তুমি কখনও নিজেকে জড়াবে না। যদি তেমন কিছু বুঝতে পার, তাহলে সাথে সাথে সেখানে কাজ করা ছেড়ে দেবে। আর এখানে কিছু করতে না পারলে তুমি আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। সেখানে যাহোক কিছু একটা তুমি করতেই পারবে। আর কিছু হোক না হোক বাবা কাকাদের মত কোন একটা দোকান তো খুলে বসতে পারবে। আর আমি তো তোমার কাছে টাকা পয়সা গয়না গাটি এসব চাই না। আমি শুধু তোমার ভালবাসা নিয়েই সারা জীবন সুখে কাটিয়ে দিতে পারব। তুমি, তোমার ভাইবোনেরা যেভাবে ও বাড়িতে বড় হয়ে উঠেছ, ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানও সেভাবেই না হয় বড় হবে। তাতে তো ক্ষতির কিছু নেই। না-ই বা রইল প্রাচুর্য্য। আমরা যদি সুখে থাকতে পারি, তাহলে আর কী চাই আমাদের বল? আর আমাদের পুরো পরিবারটা তো আমাদের পাশে আছেই। আর ওই যোগা ইনস্টিটিউটে যা কিছু ঘটণা ঘটবে, সে সব কথা তুমি আমাকে খুলে বলবে। কখনও কোন কথা গোপন করে যাবে না। এই দুটো কথা তুমি আমাকে দাও”।
 

রতীশ রচনার কথার জবাব দেবার আগেই তার মোবাইল বেজে উঠল। রচনাই হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে বলল, “নাও দিদিভাই ফোন করেছে। কথা বল”।

রতীশ ফোনের স্পীকার অন করে বলল, “হ্যা মন্তি বল। টিফিন করেছিস”?

ও’পাশ থেকে সীমন্তিনী জবাব দিল, “এই জাস্ট খেতে বসেছি রে দাদাভাই। তোদের খাওয়া হয়েছে তো”?

রতীশ জবাব দিল, “হ্যারে আমরা মিনিট পনের আগেই খেয়েছি”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা দাদাভাই, একটা কথা বল তো। রবিশঙ্কর যে লোকটাকে বিল্ডিঙের মালিক সাজিয়ে এনেছিল সে লোকটা দেখতে কেমন ছিল রে”?
 

রতীশ জবাব দিল, “সে লোকটা তো লম্বায় প্রায় ছ’ফুটের কাছাকাছি ছিল। রোগা পাতলা চেহারা, মাথার সামনের দিকে টাক, বয়স বেয়াল্লিশ তেতাল্লিশ হবে বোধ হয়। আর যে দু’ তিন দিন তাকে আমি দেখেছি, সে সব সময় সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পড়েছিল। কিন্তু লোকটাকে দেখে আমার কিন্তু কখনই তাকে মারোয়ারী বলে মনে হয়নি। বরং তাকে আমার বিহারী লোক বলেই মনে হচ্ছিল। এ ছাড়া আর বেশী কিছু তো মনে পড়ছে না। ও হ্যা, আরেকটা কথা মনে পড়েছে। লোকটার বা হাতের কব্জির ঠিক ওপরে একটা পুরোন কাটা দাগ আছে”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “এ’কথা গুলো তুই থানায় বলেছিস তো”?

রতীশ বলল, “হ্যা, সবকিছুই বলেছি। কিন্তু তুই আবার এসব কথা জানতে চাইছিস কেন রে মন্তি? তুই কি অতদুর থেকেই এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবি”?
 

সীমন্তিনী বলল, “কিছু করতে যে পারবই একথা তো জোর দিয়ে বলতে পারছিনা রে দাদাভাই। কিন্তু একটু চেষ্টা করতে দোষ কিসের বল? আচ্ছা ও’কথা ছাড়। আজ সকাল থেকে কি কি করলি তোরা দু’জনে? রচু কি ঘুমিয়েছে”?
 

রতীশ জবাব দেবার আগেই রচনা বলে উঠল, “আমি যে দিনের বেলায় ঘুমোতে ভালবাসি না, একথাটাও ভুলে গেছ দিদিভাই”?

সীমন্তিনী বলল, “রচু সোনা আমার। তোর কোনও কথা আমি ভুলে যেতে পারি রে? এতক্ষণ ধরে তোর সাড়া পাচ্ছিলাম না ভেবেই দাদাভাইকে ও’কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। তা কেমন আছিস রে বোন? ভাল আছিস তো তোরা দুটিতে”?

রচনা বলল, “হ্যাগো দিদিভাই। এমনিতে তো ভালই আছি। কিন্তু ওই ঘটণাটাকে তো ভুলতে পাচ্ছি না গো। ওহ, দিদিভাই শোনো। আজ তোমার দাদাভাইকে নিয়ে আমি রবিশঙ্করের বাড়ি গিয়েছিলুম। মানে সে আগে যে বাড়িতে থাকত। সেখানে তার বাড়ির মালিকের সাথে কথা হল। কিন্তু সে লোকটাও রবিশঙ্করের বর্তমান ঠিকানা বলতে পারল না। কিন্তু দিদিভাই, একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গেছে, জানো? আমরা যখন ওখান থেকে ফিরে আসছিলুম তখন একটা ছেলে এসে আমাদের খুব করে ধমকে দিয়ে হঠাতই উধাও হয়ে গেল। কী অদ্ভুত না”?
 

সীমন্তিনী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি বলছিস? একটা অজানা অচেনা ছেলে এসে তোদের ধমকে গেল”?

রচনা এবার সব কথা খুলে বলল। সব শুনে সীমন্তিনী বলল, “ছেলেটা কিন্তু অন্যায় কিছু করেনি রে রচু। কলকাতায় পথে ঘাটে চোর গুণ্ডা বদমাশদের বড় বড় গ্যাং আছে। রবিশঙ্করও তেমন কোন গ্যাঙের সাথে জড়িত থাকতে পারে। এমনও হতে পারে যে তোরা যখন কামেশ্বর মিশ্রের সাথে কথা বলছিলিস, তখন হয় তো তাদের গ্যাঙের অন্য কেউ তোদের ওপর নজর রাখছিল। ছেলেটা তোদের যেভাবে সাবধান করে দিল, তাতে মনে হয় সে-ও তোদের ওপর নজর রাখছিল। তবে শোন রচু, সোনা বোন আমার। তোরা এমন করে নিজেদের বিপদে ফেলিস না। তোদের কোথাও যাবার দরকার নেই। পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছিস, এখন তো যা করবার পুলিশেরই করবার কথা। আর দেখ, ওই দু’লাখ টাকা রবিশঙ্কর আর ওই লোকটা যে খেয়ে হাপিস করে দিয়েছে এতক্ষণে, সেটা তো আশা করাই যায়। তাই তাদেরকে ধরতে পারলেও তাদের কাছ থেকে টাকাটা উদ্ধার হবার সম্ভাবনা প্রায় নেইই বলা যায়। তাই, যা হয়েছে, সেটার পেছনে তোরা আর কোন ছোটাছুটি করিস না। তাতে হিতের চেয়ে বিপদই বেশী হবে। বুঝেছিস”?

রচনা বলল, “হ্যা দিদিভাই। আমি আর তোমার দাদাভাই বাড়ি ফিরে আসতে আসতে এসব কথাই তো ভেবেছি। আমরাও ভেবেছি আর কোথাও নিজেরা গিয়ে খোঁজ খবর করব না। তুমি দুশ্চিন্তা কোর না”।
 

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা শোন। তোরা এরপর কী করবি বলে ভাবছিস দাদাভাই? ওই ইনস্টিটিউটের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিস কিছু”?
 

রতীশ বলল, “আমি আর রচু এই নিয়েই কথা বলছিলাম রে এতক্ষণ। আমি ভাবছি বিমল আগরওয়ালার সাথে কথা বলব। তিনি যদি আমাকে ইনস্টিটিউটের ঠিকানাটা বলে দেন, তাহলে সেখানে গিয়ে সব কিছু দেখে শুনে আসি একবার। তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। তোর আপত্তি নেই তো”?

সীমন্তিনী বলল, “খোঁজ খবর নিয়ে দেখবি, তাতে আপত্তি করার কী আছে দাদাভাই। কাজে যোগ দেবার আগে সেটাই তো তোকে করতে হবে। তুই একবার নিজে গিয়ে সবকিছু দেখে শুনে আয়। তারপর আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু শোন দাদাভাই, রচুকে সঙ্গে নিয়ে যাস নে কিন্তু। বিমল আগরওয়ালার কাছে বা তার বন্ধুর ইনস্টিটিউটে রচুকে নিয়ে যাবি না এখন। তুই একা গিয়ে তাদের সাথে কথা বলিস। তবে একটা কথা মাথায় রাখবি। প্রাইভেট ফার্মের চাকরিতে অনেক সময় সার্ভিস কন্ট্রাক্ট বা বন্ড সাইন করতে হয়। সার্ভিস কন্ট্রাক্টে বা বন্ডে যদি এমন কিছু উল্লেখ করা থাকে যে চাকরিতে ঢোকার পর এতদিন বা এত বছরের মধ্যে তুই সে চাকরি ছেড়ে যেতে পারবিনা, তাহলে তুই কিন্তু সে চাকরিতে ঢুকবি না। মানে কোনরকম প্রমিজ বা মেয়াদী প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার চুক্তি শর্ত থাকলে তোর সেখানে কাজে ঢুকে দরকার নেই। বুঝেছিস তো”?

রতীশ বললো, “ঠিক আছে, তোর কথা মনে রাখব”।

এবার সীমন্তিনী বললো, “আচ্ছা রচু, তোর সাথে আরেকটা কথা বলার আছে আমার”।

রচনা বলল, “হ্যা দিদিভাই, বল। আমি শুনছি”।

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা শোন না। তোদের কালচিনির বাড়ির সামনে আমি মেসোর জন্যে একটা দোকান খুলে দেবার কথা ভাবছি। এরিয়াটা তো বেশ ভালই। বাজারের কাছাকাছি। আর সামনের রাস্তায় লোক চলাচলও বেশ ভালই হয়। আমি ভাবছি সেখানে ছোটখাটো মুদি দোকান বা একটা ষ্টেশনারী দোকান দিলে ভালই হবে। আসলে কি জানিস। ভাইয়ের সাথে আর মাসি মেসোর সাথে তো মাঝে মধ্যেই কথা হয় আমার। আর মাসি এখন প্রায়ই বলেন যে মেসোর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। অবশ্য আমার কথায় মেসো আলিপুরদুয়ার গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছেন। ডাক্তারের সাথেও আমি ফোনে কথা বলেছি। ডাক্তার বলছে, মেসোর টেনশনের জন্যেই তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর দিনে দিনে বয়সও তো বাড়ছে। আমি চাই না মেসো এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে পুজো আচ্চা করে বেড়াক এ বয়সে। তাই এমনটা ভাবছি। তোর কোন আপত্তি নেই তো এ ব্যাপারে”?

রচনা বলল, “হ্যা দিদিভাই মা আর ভাই আমাকে সব কথাই বলেছে। কিন্তু আমি আর কী বলব তোমাকে? তুমি তো চার বছর আগে থেকেই তাদের আরেকটা মেয়ে হয়ে গেছ। আমরা দু’বোন তো বাবা-মার জন্য কিছু করতে পারিনি। যেদিন থেকে তুমি আমাদের জীবনে এসেছ সেদিন থেকেই তুমি তো তাদের জন্য অনেক কিছু করে আসছ দিদিভাই। সে’সব কথা বললে তো তুমিই রেগে যাও আমার ওপরে। তবে তোমার কোন কাজে আমি আগেও কখনও প্রতিবাদ করিনি, আজও করছি না। তুমি যা করবে, তাদের সকলের ভালোর জন্যেই তো করবে। আমার এতে আপত্তি হবে কেন”।

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা বেশ, তাহলে তুই বল দেখি কোনটা করলে ভাল হবে? মুদি দোকান না ষ্টেশনারী দোকান”?
 

রচনা জবাব দিল, “দিদিভাই দুটো মিলিয়ে মিশিয়েও তো করা যায়। গালামালের সাথে কিছু ষ্টেশনারী সামগ্রীও তো রাখা যেতেই পারে, তাই না”?
 

সীমন্তিনী বলল, “হ্যা মন্দ বলিস নি তুই। ঠিক আছে। আমি মেসোর সাথে একবার কথা বলে দেখি। আর শোন, রবিশঙ্করের ব্যাপার নিয়ে ভেবে তোরা দুটিতে আর টেনশন নিয়ে মন আর শরীর খারাপ করিস না। আচ্ছা এখন রাখছি রে। পরে কথা হবে আবার” বলে ফোন কেটে দিল।

****************

রাতে চন্দ্রকান্তবাবু ফোনে জানালেন রবিশঙ্করের ছবি আর কয়েকটা আলাদা আলাদা কোম্পানীর শো রুমের বিল আর ক্যাশমেমোর ফটোকপি তিনি কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাজের কথা সারা হবার পর রচনা জিজ্ঞেস করল, “ছোটকাকু, চন্দু কেমন আছে গো? ও ঠিকমত খাচ্ছে দাচ্ছে তো”?

চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তুমি তো জানই বৌমা। তুমি এ বাড়ির বৌ হয়ে আসবার পর থেকে তুমিই তো ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলে। তোমরা কলকাতা চলে যাবার পর ওকে সামলাতে বাড়ি শুদ্ধ সবাই প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছিল। সব সময় কান্নাকাটি করত। খেত না। কলেজে যেতে চাইত না। এমন কি বাড়িতেও পড়তে বসত না। বলত যে বৌমণি না এলে সে কিচ্ছু করবে না। কিন্তু মা, বললে তুমি বিশ্বাস করবে কি না জানিনা। গতকাল বাড়ির সকলে রবিশঙ্করের ব্যাপারটা নিয়ে যখন আলোচনা করছিল, তখন থেকেই ও হঠাৎ করেই কেমন শান্ত হয়ে গেছে যেন। আজ সকালে লক্ষ্মী মেয়ের মত কলেজে গেছে, টিফিন খেয়েছে। বিকেলে বাড়ি ফিরেও নাকি চুপচাপই ছিল। আমি একটু আগে বাড়ি ফিরে দেখি ও পড়াশোনা করছে। হঠাৎ করে কী যে হল ওর কে জানে। যে মেয়ে যতক্ষন বাড়ি থাকে ততক্ষন সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে চিৎকার চেঁচামেচি করে। সে মেয়ের মুখে কাল থেকে টু শব্দটি পর্যন্ত নেই”।

এ কথা শুনে রচনার চোখ জলে ভরে এল। সে প্রায় রুদ্ধ গলায় বলল, “ছোটকাকু, আমাকে একটু ওর সাথে কথা বলতে দেবে”?
 

চন্দ্রকান্তবাবু খুব খুশী হয়ে বললেন, “তুমি ওর সাথে কথা বলবে বৌমা? দাঁড়াও আমি ঘরে যাচ্ছি, তুমি ওকে একটু বুঝিয়ে দাও বৌমা। কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে বলতে তো তুমিও ওদিকে কেঁদে ভাসাবে। মন্তি বাড়ির সবাইকে বলে দিয়েছে চন্দু যেন কখনও তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে না পারে, সেদিকে যেন সবাই নজর রাখে। অবশ্য মন্তি ভেবেচিন্তেই কথাটা বলেছে। কিন্তু কাল থেকে ও এমন চুপচাপ হয়ে গেছে আমিও মনে মনে ভাবছিলাম একবার তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারলে ও বোধহয় খানিকটা শান্ত হত। আচ্ছা ধর মা, চন্দুর সাথে কথা বল”।

রচনা শ্বাস বন্ধ করে ফোন কানে লাগিয়ে পাশে বসে থাকা স্বামীর মুখের দিকে চাইল। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে চন্দ্রকান্তবাবুর গলা শোনা গেল। তিনি চন্দ্রিকাকে বলছেন, “চন্দু মা, দেখ তোর বৌমণি ফোন করেছে। তোর সাথে কথা বলবে। নে নে, কথা বল”।

পরক্ষনেই চন্দ্রিকার চিৎকার শোনা গেল, “বৌমণি ই ই ই! দাও দাও বাবা। আমি জানি তো, তোমরা আমাকে বৌমণির সাথে কথা বলতে না দিলে কী হবে। বৌমণিই আমার সাথে কথা বলবে”। পরক্ষণেই চন্দ্রিকা বলে উঠল, “বৌমণি, আমি চন্দু বলছি গো। তুমি কেমন আছ বৌমণি? শুনতে পাচ্ছ তুমি”?

রচনা নিজের গলার কাছটা একহাতে চেপে ধরে বলল, “হ্যা সোনা বোন আমার, আমরা ভাল আছি। কিন্তু তুমি ওখানে কান্নাকাটি করছ, খেতে চাইছ না, পড়তে চাইছ না, এসব শুনেই তো কান্না পাচ্ছে আমার। তুমি এভাবে কাঁদলে আমি কি ভাল থাকব বল সোনা”?

চন্দ্রিকা এবার খানিকটা সংযত গলায় বলল, “না গো বৌমণি। আমি তো আজ সারাদিনে একটুও কাঁদি নি গো। তুমি মাকে জিজ্ঞেস করে দেখো। আজ আমি কলেজে টিফিনও খেয়েছি। তবে কলেজ থেকে ফিরে আজ বিকেলে খেলতে যাইনি। ভাল লাগছিল না”।

রচনা বলল, “কেন বোন? বন্ধুদের সাথে একটু খেললে তো তোমার ভালই লাগবে। তাহলে যাও নি কেন”?

চন্দ্রিকা বলল, “তুমি আর বড়দা ওখানে মন খারাপ করে আছ। এখানে বাড়ির সবাই তোমাদের কথাই শুধু বলে যাচ্ছে। বাড়ির সকলেরই মন খারাপ। আর আমি বন্ধুদের সাথে মজা করে খেলতে যাব? আমি তো তক্কে তক্কে আছি। ওই বদমাশটাকে আমি যেখানেই দেখতে পাব পাথর ছুঁড়ে ওর মাথা ফাটিয়ে ফেলব আমি, তুমি দেখে নিও”।
 

রচনা চন্দ্রিকার কথা শুনে আঁতকে উঠে বলল, “না না বোন। অমনটি কোর না তুমি। তুমি তো ওর ছবি খুঁজে বের করেছ। বাবা সেটা আমাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমরা সেটা পেলেই পুলিশের হাতে দিয়ে দেব। আর পুলিশ ওকে চট করে ধরে ফেলবে। তোমাকে আর কিচ্ছু করতে হবে না। কিন্তু তুমি নাকি আজ বাড়ির কারো সাথে কথা বলছ না? কেন সোনা? কী হয়েছে তোমার? আমায় বলবে না”?
 

চন্দ্রিকা বলল, “নাগো বৌমণি, তোমায় বলব না কেন? আসলে আমি তো এতদিন ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারিনি। বড়দাকে ঠকিয়ে ওই বদমাশটা টাকাগুলো নিয়ে নেবার পর বাড়ির সকলের মুখে শুনে বুঝেছি যে বড়দার কত কষ্ট হচ্ছে। বড়দার সাথে তুমি চলে যাবার পর আমার খুব দুঃখ হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল বড়দা আর তুমি আমার কথাটা একটুও ভাবনি। তাই তো এ ক’দিন ধরে শুধু কান্নাকাটি করে যাচ্ছিলুম আমি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, বড়দার সাথে তুমি না থাকলে কে তাকে এ’সময় সামলাত? এখানে তো বাড়ি শুদ্ধ লোক আছে আমাকে সামলাবার। কিন্তু বড়দা যে সেখানে একা। তার কাছে তো তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। আর তখনই আমার মনে হল, বড়দার সাথে তোমার চলে যাওয়াটা ঠিকই হয়েছে। তাই এখন আর কান্নাকাটি করছি না। আমার খুব ইচ্ছে করত তোমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু কেউ আমাকে ফোনে হাত দিতে দেয় না। বলে যে আমি ফোন করলে নাকি তুমি কাঁদবে। কিন্তু এখন তুমি আমার সাথে কথা বলছ বলে আমার খুব ভাল লাগছে। এখন আমার মনটা খুশী খুশী লাগছে। তুমি যে আমায় ভুলে যাও নি, এটা জেনেই আমি খুশী হয়েছি গো বৌমণি। কিন্তু পাঁচ ছ’দিন ধরে তোমাকে দেখতে পাচ্ছিনা বলেই মনটা আবার খারাপ হয়ে যাচ্ছে”।

রচনা বলল, “এমন মিষ্টি সোনা বোনটাকে আমি কখনও ভুলতে পারি? কিন্তু সোনা, তুমি কিন্তু আর মন খারাপ করে থাকবে না। আমি মাঝে মাঝে তোমার সাথে ফোনে কথা বলব। কিন্তু আমি যদি শুনি, তুমি ভাল করে খাওয়া দাওয়া করছ না, মন দিয়ে পড়াশোনা করছ না, তাহলে কি আমার ভাল লাগবে বল”?

চন্দ্রিকা বলল, “না বৌমণি, আমি তোমার নামে দিব্যি করে বলছি, আমি ভাল ভাবে থাকব। মন দিয়ে পড়া শোনা করব। ভাল করে খাব। কিন্তু তোমাকে যে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে গো। কবে আসবে তোমরা”?

রচনা বলল, “এই তো সোনা, তোমার বড়দা একটা কাজ টাজ কিছু শুরু করলেই আমরা একবার বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসতে পারব। আর দু’ তিনমাস বাদেই তো পুজো। তোমার বড়দা আর আমি পুজোর সময় তো বাড়ি যাবই সোনা”।
 

চন্দ্রিকা জিজ্ঞেস করল, “বড়দা কোথায় গো বৌমণি? সে কি এখনও বাড়ি ফেরে নি”?

রচনা বলল, “তোমার বড়দা তো ঘরেই আছে বোন। বড়দার সাথে কথা বলবে”?

চন্দ্রিকা বলল, “একটু দাও না”।

রচনার হাত থেকে ফোন নিয়ে রতীশ “হ্যালো চন্দু সোনা” বলতেই চন্দ্রিকা বলল, “বড়দা, তুমি মন খারাপ করে বসে থেক না। বৌমণি তোমার সাথে আছে। তুমি ভেব না, সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তুমি দেখে নিও, ওই বদমাশ লোকটা ঠিক ধরা পড়বে পুলিশের হাতে”।

রতীশ বলল, “হ্যা বোন, তুই যখন বলছিস, সে নিশ্চয়ই ধরা পড়বে। কিন্তু আমি তোর বৌমণিকে নিয়ে এসেছি বলে তুই আমার ওপর রাগ করে থাকিস না সোনা। আমি কিছু একটা কাজ শুরু করতে পারলেই তোর বৌমণিকে তোর কাছে নিয়ে যাব একবার। ততদিন তুই কিন্তু লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকবি। মন দিয়ে পড়াশোনা করবি, ভাল করে খাওয়া দাওয়া করবি, আর মা-র কথা শুনবি। ঠিক আছে সোনা”?

চন্দ্রিকা বলল, “হ্যা বড়দা। ঠিক আছে। তুমিও সময় মত খাওয়া দাওয়া কোর”।

রতীশ বলল, “লক্ষ্মী সোনা বোন আমার। এবার তাহলে তুই মন দিয়ে পড়। আর আমার আদর নিস” বলে একটা চুমু খেয়ে ফোন বন্ধ করল।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রচনা বলল, “যাক, চন্দুটা যে কান্নাকাটি বন্ধ করেছে, এটা শুনে বেশ ভাল লাগল। ছোটকাকু বলছিলেন কাল থেকে ও নাকি কান্নাকাটি না করে একেবারে চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হয় আমাদের সাথে কথা বলে ওর মনটা একটু ভাল হবে। তা সোনা, তুমি কি আজ ফোন করবে তোমার ওই বিমল আগরওয়ালাকে”?
 

রতীশ জবাব দিল, “কাল সকালের দিকে ফোন করে দেখব। কিন্তু তার সাথে দেখা করতে গেলে তো সন্ধ্যের দিকে যেতে হবে। সকাল ন'টা নাগাদ একবার ফোন করে দেখি কী বলেন”।

*************

___________________________________________
ss_sexy
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 27-02-2020, 07:25 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)