Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#47
(Update No. 67)

রতীশ বলল, “হ্যা সে ভদ্রলোকই। তুই কাল রাতে যখন আমাকে ফোন করেছিলিস, তখন আমি তো তার সাথেই কথা বলছিলাম। উনি বলছিলেন, দক্ষিণ কলকাতায় তার এক বন্ধুর একটা যোগা সেন্টার আছে। আর সেখানে নাকি একজন যোগা টিচারের প্রয়োজন। তাই উনি বলছিলেন যে আমি রাজি থাকলে তিনি তার বন্ধুর সাথে কথা বলে আমাকে সেখানে টিচার হিসেবে ঢুকিয়ে দিতে পারবেন। মাসে মাসে হয়ত কুড়ি বাইশ হাজারের মত বেতন দেবে। তুই কি বলছিস”?

সীমন্তিনী বলল, “যোগা সেন্টারের কাজ তো তোর পক্ষে ভালই হবে দাদাভাই। একটা ইনস্টিটিউট চালাবার অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারবি। কিন্তু দেখ দাদাভাই, একটা কথা মনে রাখিস। কলকাতায় অনেক জিম, ম্যাসেজ পার্লার, বিউটি পার্লার আর এমন ধরণের কিছু কিছু যোগা ট্রেনিং সেন্টারেও লোকচক্ষুর আড়ালে অনেক রকম দুষ্কর্ম হয়ে থাকে। আমি চাই না তুই ও’সবের সাথে জড়িয়ে পড়। তবে এ লাইনে থাকলেই তোর ভবিষ্যতের স্বপ্নের যোগা সেন্টার খোলার ব্যাপারে তুই অনেক কিছুই জানতে বুঝতে পারবি। কিন্তু দাদাভাই, আমার ভয় শুধু একটাই রে। তুই যে খুব সহজ সরল। তুই আবার কোন রকম ফাঁদে পড়ে যাবি না তো”?

রতীশ বলল, “ভদ্রলোকের সাথে তো কাল আমার দু’বার কথা হয়েছে রে মন্তি। তার সাথে কথা বলে কিন্তু আমার তেমন হয়নি। তবে ইনস্টিটিউটটা তো আর তার নয়। তার আরেক বন্ধুর। সে লোকটা কেমন হবে তা তো তার সাথে কথা না বললে বুঝতে পারব না। আর তুই যে’সব দুষ্কর্মের কথা বলছিস সে’সব তো আর বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। যদি সেখানে কাজটা পেয়েই যাই, তাহলে কিছুদিন সেখানে যাতায়াত করলে হয়ত এ’সব জানতে পারব। একটু সতর্ক থাকতে হবে এই যা। তেমন বুঝলে না হয় তখন ছেড়ে দেব”।
 

সীমন্তিনী বলল, “বাইরে থেকে যে বুঝতে পারবি না সে কথা তো বলাই বাহুল্য দাদাভাই। কিন্তু তোকে কিন্তু চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে সব সময়। তবে আমার মনে হয় আগেই বিমল আগরওয়ালার কথায় রাজি না হয়ে তার বন্ধুর ইনস্টিটিঊটে গিয়ে একবার দেখে শুনে আয়। তারপর না হয় ভেবে চিন্তে ডিসিশন নেওয়া যাবে”।

রচনা কাজ করতে করতেই তাদের কথা শুনে যাচ্ছিল। এবার সীমন্তিনীর কথা শেষ হতে সে ফোনের কাছে এসে বলল, “কিন্তু দিদিভাই, তুমি যতই বল না কেন, এই বিমল আগরওয়ালা লোকটাকেও কেন জানিনা আমার ঠিক সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না গো। আচ্ছা তুমিই বল, যে কমপ্লেক্সের চাবি একমাত্র তার লকারেই থাকে সে চাবি অন্য লোকের হাতে গেলে সে জানতে পারবে না? এটা কি কোন কথা হল? কিন্তু রবিশঙ্কর যে লোকটাকে কমপ্লেক্সের মালিক বলেছিল, সে তো চাবি দিয়ে তালা খুলেই তোমার দাদাভাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকেছিল। বিমল আগরওয়ালার অজান্তে তার হাতে চাবিটা গেল কী করে? আমার তো মনে হয় বিমল আগরওয়ালার সাথে রবিশঙ্কর আর ওই লোকটার নিশ্চয়ই জানাশোনা আছে। কিন্তু তোমার দাদাভাইকে তো সে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে রবিশঙ্কর নামের কাউকেই সে চেনেনা। আর চাবিও নাকি অন্য কারুর হাতে যায়নি। তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ায় ভেবেছ”?
 

সীমন্তিনী রচনার কথা শুনে বলল, “এ যুক্তিটা আমিও মানছি রে রচু। কিন্তু তোর এ ধারণা যে পুরোপুরি সত্যি সেটাও জোর দিয়ে বলা যায় না। কিছু কিছু এক্সপার্ট কারিগর আছে, যারা যে কোন তালার নকল চাবি বানিয়ে দিতে পারে। তেমন কাউকে দিয়েই রবিশঙ্কর বা ওই লোকটা হয়ত একটা নকল চাবি বানিয়ে নিয়েছিল। এমনটাও তো হতেই পারে। তাই তোর কথাই যে ঠিক হবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। তবে, রচু সোনা, তোর বুদ্ধির তারিফ না করে পারছিনা রে। কাকুকে তুই যা কিছু বলেছিস, সে’সব আমি শুনেছি। তুই একদম ঠিক ভেবেছিস। রবিশঙ্করের ছবি, আর ওই ক্যাশমেমো গুলো হাতে পেলে পুলিশের খুব সুবিধে হবে রবিশঙ্করকে খুঁজতে। তোর মাথায় কথাগুলো এল কী করে রে”?
 

রচনা একটু লাজুকভাবে বলল, “আমি তো সামান্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা একটা মেয়ে দিদিভাই। আমি কি আর তোমাদের মত ভাবতে পারি? কিন্তু মা আমার ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন যে বিপদ আপদের সময় শুধু হা হুতোশ করলে কোন লাভ হয় না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভেবেচিন্তে কাজ করতে হয়। আর দেখো, পুলিশ তো আর ভগবান নয় যে তুড়ি মেরেই অপরাধীকে ধরে ফেলবে। এত বড় একটা শহরে শুধু নাম ধরে খোঁজ করলেই কি রবিশঙ্কর ধরা পড়বে? এ শহরে হয়ত হাজারটা রবিশঙ্কর প্রসাদ খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু বিনা প্রমাণে তাদের কাউকে কি পুলিশ ধরতে পারবে? তাই ছোটকাকুকে ছবির কথা জিজ্ঞেস করেছিলুম। আর আমার মনে হয়েছিল যে’সব কোম্পানীর মাল রবিশঙ্কর সাপ্লাই দেয় সে’সব জায়গায় তার যাতায়াত থাকবেই। তাই পুলিশ ওই জায়গাগুলোতে নজর রাখলে হয়ত রবিশঙ্করকে পেয়েও যেতে পারে”।
 

সীমন্তিনী বলল, “তুই একদম ঠিক বলেছিস রচু। তুই যদি একজন গোয়েন্দা বা পুলিশ অফিসার হতিস তাহলে খুব নামডাক হত তোর। আচ্ছা শোন রচু, আমিও কাকুকে বলেছি, তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জিনিসগুলো পাঠিয়ে দেবেন। আর দাদাভাই, জিনিসগুলো পেলে বেশী দেরী না করে ওগুলো থানায় নিয়ে ইনভেস্টিগেটিং অফিসারের হাতে দিয়ে দিবি। ও হ্যা, আরেকটা কথা শোন দাদাভাই। তোর বোন যে একজন পুলিশ অফিসার এ’কথাটা থানায় না বলে ভালই করেছিস। আমি অন্যভাবে কলকাতার পুলিশের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তাই আমার রেফারেন্স আর থানায় দিস না। আর বিমল আগরওয়ালার কাছ থেকে তার বন্ধুর যোগা ইনস্টিটিউটের ঠিকানাটা জেনে নিয়ে একবার গিয়ে দেখে আয় সব কিছু। তবে আগেই কাজ করবি বলে কথা দিস না, বুঝেছিস। আর শোন দাদাভাই, ভেঙে পড়িস না। যা হবার ছিল তা হয়ে গেছে। এখন সে’সব ভুলে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের”।
 

রতীশ বলল, “সেটা ছাড়া আর করবার কি আছে বল। রবিশঙ্কর ধরা পড়লেও আমি যে আমার টাকা ফিরে পাব, এ আশা তো প্রায় নেই বললেই চলে। এখন একবার ওই ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখি। তারপর তোকে জানাব সব”।

সীমন্তিনী বলল, “হ্যা তাই কর। আর রচুর সাথে পরামর্শ না করে কিছু করবি না কিন্তু। ওর কাছে কোনও কথা গোপন করবি না। কোথায় যাচ্ছিস, কার সাথে তোর কি কথা হচ্ছে, সবকিছু রচুকে জানাবি। আচ্ছা রাখছি এখন। কাল আবার কথা হবে, গুডনাইট”।
 

রতীশ আর রচনাও গুডনাইট জানিয়ে কথা শেষ করল।


*************

পরদিন সকালে চা খেতে খেতে রচনা রতীশকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা সোনা, তুমি রবিশঙ্করের খোঁজে যখন তার বাড়ি গিয়েছিলে, তখন ওই বাড়িটা সম্বন্ধে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলে কি”?
 

রতীশ জবাব দিল, “আমার কি আর তখন মাথার ঠিক ছিল সোনা? ওর বাড়ির উল্টোদিকের দোকানের লোকটা শুধু আমাকে ও’টুকুই বলেছে। আমারও তখন আর অন্য কিছু জিজ্ঞেস করবার কথা মাথায় আসে নি”।
 

রচনা বলল, “আমাকে একটু নিয়ে যাবে সেখানে? আরেকটু গিয়ে দেখিই না যদি কোন হদিশ পাওয়া যায় লোকটার”।
 

রতীশ বলল, “সে তুমি যদি যেতে চাও, নিয়ে আমি যেতেই পারি। কিন্তু গিয়েও সত্যি কি আর কোন লাভ হবে”?
 

রচনা বলল, “টাকাটা যে ফিরে পাব, সে আশা তো প্রায় নেইই সোনা। কিন্তু বদমাশটাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিতে পারলে, মনের জ্বালা খানিকটা কমতো। আর আমার পক্ষে যদি সম্ভব হত, তাহলে ওকে এমন শাস্তি দিতুম যে আর কখনও কাউকে এভাবে ঠকাতে চেষ্টা করত না। কিন্তু আইন অনুসারেই ওর সাজা তো হওয়াই উচিৎ”।
 

রতীশ বলল, “লোকটাকে যদি আরেকবার চোখের সামনে পেতুম, তাহলে আমি শুধু ওকে জিজ্ঞেস করতুম যে আমরা ওর কী ক্ষতি করেছিলুম যে ও এভাবে আমাদের সর্বনাশ করল”।

রচনা বলল, “তাহলে চল না। তুমি তো আর অন্য কোথাও বেরোচ্ছ না আজ। চল না দুপুরের আগেই ঘুরে আসা যাক। সকালের খাবার খেয়েই বেরিয়ে পড়ি। একটু ঘুরে এলে, আর কিছু হোক বা না হোক, মনের ভেতরের একঘেয়ে চিন্তাগুলো থেকে তো একটু রেহাই পাব। ফিরে এসে দুপুরের রান্না করব”।

রতীশ বলল “বেশ চল। কিন্তু এ’সময়ে তোমাকে নিয়ে সিটি বাসে চড়া কিন্তু সম্ভব হবে না। একটা অটো টটো ভাড়া নিতে হবে। অফিস টাইমে সিটি বাসের ভিড়ে তোমাকে নিয়ে ওঠা অসম্ভব”।

বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ রতীশ আর রচনা রবিশঙ্করের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছল। রতীশ বাড়িটার দিকে হাতের ঈশারা করে বাড়িটা দেখিয়ে বলল, “ওই যে ওই বাড়িটায় ছিল ওরা। কিন্তু আজ তো দরজায় অন্য একটা তালা দেখতে পাচ্ছি। সেদিন অন্য একটা তালা লাগানো ছিল”।
 

আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে দেখতে রচনা জিজ্ঞেস করল, “সেদিন তুমি কোন দোকানের লোকের সাথে কথা বলেছিলে”?
 

রাস্তার উল্টোদিকের ওষুধের দোকানটার দিকে ঈশারা করে রতীশ জবাব দিল, “ওই যে ওষুধের দোকানটা দেখতে পাচ্ছ, সেখানে জিজ্ঞেস করেছিলুম”।

রচনা একবার ওষুধের দোকানটার দিকে দেখে আশে পাশের অন্যান্য দোকানগুলোকে দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে এগোতে লাগল। রবিশঙ্করের বাড়িটা পার হয়ে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে রাস্তার ডানদিকে একটা লণ্ড্রীর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। একজন বেঁটে মত বছর চল্লিশের গাট্টাগোট্টা চেহারার লোক লণ্ড্রীর ভেতর ইস্ত্রি করছে কিছু একটা।
 

রতীশকে সাথে নিয়ে রচনা সেখানে গিয়ে বলল, “দাদা শুনুন, এখানে রবিশঙ্কর বলে একজন থাকত ওই বাড়িটায়। আপনি কি তাদের সম্বন্ধে কিছু জানেন? মানে তারা এখান থেকে কোথায় গেছে”?

লণ্ড্রীর লোকটা মাথা উঠিয়ে রতীশ আর রচনাকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল, “রবিশঙ্কর মানে রবিশঙ্কর প্রসাদের কথা বলছেন কি”?

রচনা মাথা ঝাঁকিয়ে জবাব দিল, “হ্যা হ্যা, তাই। ওরা তো ওই বাড়িটাতেই থাকত তাই না”?
 

লণ্ড্রীর লোকটা জবাব দিল, “হ্যা ম্যাডাম। ওরা ও বাড়িতেই থাকত। কিন্তু তার সম্পর্কে কী জানতে চান বলুন তো”?

রচনা জিজ্ঞেস করল, “তার সাথে আমার দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু পরশু দিন আমার হাসব্যাণ্ড এসে জানতে পারলেন যে সে নাকি এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আপনি কি জানেন? ওরা কোথায় গেছে”?

লণ্ড্রীর লোকটা মনে মনে কিছু একটা ভেবে বলল, “ম্যাডাম, তারা কোথায় গেছে সেটা তো আমার জানা নেই। তবে ওই বাড়ির যে আসল মালিক, কামেশ্বর মিশ্র, সে পাশের চায়ের দোকানে বসে আছে। সে হয়ত জানলেও জানতে পারে। আপনারা বরং তার সাথেই কথা বলুন”।
 

রচনা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রতীশকে সঙ্গে নিয়ে চায়ের দোকানটার সামনে গিয়ে বলল, “সোনা এই দোকানের কাউন্টারে বসা লোকটাকে জিজ্ঞেস করে দেখ তো কামেশ্বর মিশ্র বলে কেউ সেখানে আছে কি না। আর থাকলে তাকে একটু বল যে আমি তার সাথে একটু কথা বলতে চাই, সে একটু বাইরে এসে আমার সাথে কথা বলবে কি না”।
 

কিছুক্ষণ বাদেই রতীশের সাথে একজন বয়স্ক বিহারী লোক রচনার দিকে এগিয়ে এসে বলল, “হ্যা বলুন ম্যাডাম। আমার সাথে আপনার কী কথা আছে”?

রচনা লোকটাকে নমস্কার করে বলল, “দেখুন আপনাকে বিরক্ত করছি বলে দুঃখিত। আমরা বাইরে থেকে এসেছি। রবিশঙ্কর প্রসাদ নামে যে লোকটা আপনাদের বাড়িতে ভাড়া থাকত, তার সাথে একটু কাজ ছিল। কিন্তু এখানে এসে শুনতে পেলুম যে তারা নাকি গত এক তারিখে আপনার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম, ওরা কোথায় গেছে সে ব্যাপারে কি আপনাকে কিছু বলেছে”?

কামেশ্বর বলল, “না ম্যাডাম, আমাকে এ ব্যাপারে তারা কেউ কিছু বলেনি। আসলে আমি তো এখানে থাকি না। আমার বাড়ি অন্য এলাকায়। রবিশঙ্করকে আমি মাস দুয়েক আগেই বাড়ি ছেড়ে দেবার নোটিশ দিয়েছিলাম। আগে কিছু না বললেও এক তারিখ দুপুর বেলা আমার বাড়িতে গিয়ে বলল যে ওরা অন্য জায়গায় ঘর ভাড়া নিয়েছে। তাই চলে যাচ্ছে। তবে ঘরের কিছু কিছু জিনিস সাথে করে নিয়ে যেতে পারেনি বলে ঘরে তালা লাগিয়ে গিয়েছিল। আজ সকালে ফোন করে আমাকে জানিয়েছে যে সে আজ সকালেই ঘর খালি করে দেবে। আমি খানিকক্ষণ আগেই এসেছি এখানে। ঘর খোলা ছিল। ঘরে ঢুকে দেখি জিনিসপত্র সব নিয়ে গেছে। তাই আমি একটা তালা কিনে লাগিয়ে দিলাম”।

রচনা বলল, “ও-ও। কিন্তু আমাকে সে এখানে এসে দেখা করবার কথা বলে আগেই ঘর ছেড়ে দিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেল! আশ্চর্য তো! তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে জেনেও আমাদের এখানে তার সাথে দেখা করবার কথা বলেছিল কেন তাহলে সোনা”? রচনা রতীশের দিকে চেয়ে কথাটা বলল।

রতীশ তার কথার জবাব দেবার আগেই রচনা আবার কামেশ্বরকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ওরা যে চলে যাবে, সে’কথা কি আগেই আপনাকে বলেছিল”?
 

কামেশ্বর বলল, “না ম্যাডাম, দু’মাস আগে তাকে আমি বাড়ি ছেড়ে দেবার কথা বললেও রবিশঙ্কর আমাকে আগে থেকে কিছু বলেনি। সেদিন হঠাতই আমার বাড়ি গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বাড়ি ছেড়ে যাবার কথাটা বলেই তারা চলে গেছে”।

রতীশ জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা কামেশ্বরবাবু, আপনাকে কি তার কোন কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে গেছে”?

কামেশ্বর বলল, “না স্যার, তারা আমাকে কোন কন্টাক্ট নাম্বার দেয়নি। আর আমিও তাদের কাছে সেটা চাইনি। আমার বাড়িটা যে তারা ছেড়ে চলে গেছে আমি এতেই খুব খুশী হয়েছি। প্রতিবেশীরা প্রায় রোজই কেউ না কেউ তাদের নামে আমার কাছে নালিশ করত। তাই তো আমি ওদের বাড়ি ছেড়ে দেবার নোটিস দিয়েছিলাম”।
 

রচনা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা কামেশ্বরবাবু, ওর আসল বাড়ি কোথায়, তার ঠিকানা কি আপনার জানা আছে”?
 

কামেশ্বর বলল, “বছর দুয়েক আগে যখন বাড়ি ভাড়ার এগ্রিমেন্ট করেছিলাম, তখন সে তার পার্মানেন্ট বাড়ির ঠিকানা একটা বলেছিল, যেটা এগ্রিমেন্টে লেখা ছিল। কিন্তু সেটা ঠিক আমার মনে নেই। বিহারের ওর দেশের বাড়ির কোন একটা ঠিকানা ছিল”।

রচনা মনে মনে একটু হতাশ হলেও জিজ্ঞেস করল, “ওই এগ্রিমেন্টটা দেখে সে ঠিকানাটা কি আমাদের জানাতে পারবেন আপনি”?
 

কামেশ্বর একটু হেসে বলল, “কি করে তা সম্ভব ম্যাডাম? আমি তো আগেই বললাম যে আমি এখানে থাকি না। আমার বাড়ি এখান থেকে অনেক দুরে। এগ্রিমেন্টটা না দেখলে তো সেটা বলা সম্ভব নয়। আর এখন তো সেটা অসম্ভব”।

রচনা বলল, “প্লীজ কামেশ্বর বাবু, আমাদের একটু সাহায্য করুন না। দেখুন ওর সাথে দেখা করাটা খুবই দরকার আমাদের। তবে আপনার কথাও আমি বুঝেছি। কিন্তু আপনি বাড়ি যাবার পর ওই এগ্রিমেন্টটা দেখে আমাকে সেটা জানিয়ে দিতে পারবেন না? আমি আমার ফোন নম্বর আপনাকে দিয়ে যাচ্ছি। দয়া করে প্লীজ এটুকু উপকার করুন আমাদের”।
 

কামেশ্বর বলল, “ঠিক আছে, আপনাদের নাম্বারটা বলুন। আমি বিকেলের দিকে কোন সময় আপনাদের ফোন করে জানিয়ে দেব”।

রচনা রতীশের ফোন নম্বরটা বলে দিয়ে আরেকবার অনুরোধ করল, “আপনাকে বিরক্ত করছি বলে খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু রবিশঙ্করের সাথে দেখা করাটা খুবই প্রয়োজন। তাই ওর বাড়ির ঠিকানাটা পেলেও সেখানে যোগাযোগ করে দেখতে পারব। আচ্ছা কামেশ্বরবাবু, আমরা তো তাকে ফোনেও পাচ্ছি না। কিন্তু আপনি একটু আগেই বলছিলেন যে রবিশঙ্কর আজ সকালে আপনাকে ফোন করেছিল। সে কোন নাম্বার থেকে ফোন করেছিল, সেটা একটু বলবেন প্লীজ”।

কামেশ্বর মিশ্র পকেট থেকে তার মোবাইলটা বের করে কিছুক্ষণ সেটা নিয়ে খুটখুট করে ফোনটা রচনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এই যে ম্যাডাম, এই নাম্বার থেকে ফোনটা এসেছিল, দেখুন”।

রচনা নিজের মোবাইলে নাম্বারটা নোট করে নিয়ে কামেশরবাবুকে বলল, “ধন্যবাদ কামেশ্বরবাবু। আমরা আসছি এখন। তবে একটা অনুরোধ করে যাচ্ছি। রবিশঙ্কর যদি আবার কখনও ফোনে বা অন্য কোনভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করে তাহলে দয়া করে আমাকে একটু জানাবেন”।
 

কামেশ্বরের সাথে কথা শেষ করে রচনাকে নিয়ে ফিরতি পথে এগোতে এগোতে রতীশ বলল, “বুঝেছ সোনা, বদমাশটা সমস্ত আটঘাট বেঁধেই আমাদের সর্বনাশটা করেছে”।

রচনা একটু সতর্কভাবে রতীশকে বাঁধা দিয়ে বলল, “সোনা চুপ কর। এখন আর কিছু বল না। জায়গাটা আমার খুব সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না। তাড়াতাড়ি ফেরা যাক। বাড়ি গিয়ে না হয় বাকি কথা ....”

রচনার কথা শেষ না হতেই পেছন থেকে একটা যুবক এসে প্রায় রতীশের গা ঘেঁসে হাঁটতে হাঁটতে বলল, “দাদা, একটা কথা বলার ছিল। যদি কিছু মনে না করেন”।

রচনা আর রতীশ দু’জনেই চমকে উঠল। দু’জনেই ছেলেটার মুখের দিকে তাকাল। রতীশ বলল, “কী ব্যাপারে বলুন তো? আমি তো আপনাকে চিনি না। আপনি কি আমাকে চেনেন”?
 

ছেলেটা বলল, “মাফ করবেন দাদা। আপনি আমায় চেনেন না। তবে আপনার সাথে পরিচয় না থাকলেও আমি আপনার ব্যাপারে কিছু কথা জানি। কিন্তু সে’সব কথা নিয়ে সময় নষ্ট না করে আসল কথাটাই বলি” এই বলে ছেলেটা একটা ফোন নাম্বার বলে জিজ্ঞেস করল, “এটাই তো আপনার ফোন নাম্বার তাই না”?

রতীশ চরম অবাক হয়ে বলল, “হ্যা এটা আমারই। কিন্তু আপনি কি করে.....”

ছেলেটা রতীশের কথার মাঝখানেই বলে উঠল, “দেখুন দাদা। আপনি যেমন আমায় চেনেন না। আমিও তেমনই আপনাকে চিনি না। কিন্তু আপনার ফোন নাম্বারটা আমি জেনে গেছি। এখন এই নাম্বারে ফোন করে আমি যদি আপনাকে কিছু উল্টোপাল্টা কথা বলি, বা আপনাকে কোথাও ডেকে পাঠাঁই এবং বলি যে রবিশঙ্করের ঠিকানা আমি জানি, তাহলে আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন? আমি যেখানে যেতে বলব, আপনি সেখানে যাবেন”?

রতীশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হাঁটা থামিয়ে বলল, “না মানে, এসব আপনি কী বলছেন? আমি আপনাকে চিনিনা জানিনা। আপনার কথায় আমি অচেনা জায়গায় যাবই বা কেন? আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন”?
 

ছেলেটা রতীশের পিঠে হাত দিয়ে তাকে একটু সামনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলল, “না না দাদা, থামবেন না এগিয়ে চলুন। আর শুনুন, আমি আপনার সাথে ঠাট্টাও করছিনা, আর অযথা ভয় দেখাবার চেষ্টাও করছি না দাদা। আর রবিশঙ্কর প্রসাদকেও আমি চিনি না। ওটা শুধুই কথার কথা ছিল। কিন্তু ওই কামেশ্বর মিশ্রের সাথে আপনারা যে’সব আলোচনা করলেন, সেগুলো আমিও শুনেছি। একজন হিতৈষী হিসেবেই বলছি। এভাবে যাকে তাকে নিজেদের ফোন নাম্বার দেবেন না। এ এলাকাটা খুব একটা সুবিধের নয়। বৌদিকে সঙ্গে এনে কাজটা একেবারে ঠিক করেন নি। কলকাতায় পা দিয়েই তো এক সর্বনাশ বাঁধিয়ে বসে আছেন। অন্য কোন বিপদ আর না-ই বা ডাকলেন। যে লোকটা আপনাদের সর্বনাশ করে পালিয়ে গেছে, সে কি তার ঠিকানা রেখে যাবে আপনার জন্য? আপনারা হয়তো ভাবছেন যে রবিশঙ্কর আজ সকালে যে নাম্বার থেকে কামেশ্বরকে কল করেছিল, সেই নাম্বারে আপনারা ওকে পেয়ে যাবেন। কিন্তু তা নয়। আমি নিশ্চিত জানি ওটা কোন পিসিও বা অন্য কোনও লোকের নাম্বার হবে। আর শুনুন, থানায় তো ডাইরী করেছেনই। তাহলে এবার যা করবার তা পুলিশকেই করতে দিন না। কেন অচেনা অজানা জায়গায় ঘুরে নিজেদের আবার নতুন করে বিপদে ফেলতে চাইছেন? বাড়ি থেকে যেসব ডকুমেন্ট পাবেন বলে অপেক্ষা করছেন, সেসব এলে সেগুলো পুলিশের হাতে তুলে দিন। নিজেরা গোয়েন্দাগিরি করে নিজেদের বিপদ আর বাড়াবেন না দয়া করে। আর এক মূহুর্তও দেরী না করে এখান থেকে চলে যান। এই অটোটাতে উঠে পড়ুন প্লীজ” বলেই হাত বাড়িয়ে একটা চলতি অটো থামিয়ে দিয়ে ছেলেটা তাদের দু’জনকে ঈশারা করল।
 

রচনা আর রতীশ ছেলেটার কথা শুনে বিস্ময়ে যেন বোবা হয়ে গেল। রচনা আর কোন কথা না বলে রতীশের হাত ধরে অটোয় উঠতে উঠতে বলল, “সোনা চল”।
 

অটো ড্রাইভারটা জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাবেন দাদা”?
 

রতীশ নিজের গন্তব্যের ঠিকানা বলে অটোর বাইরের দিকে তাকাল। কিন্তু ছেলেটাকে কোথাও দেখতে পেল না। রতীশ হাত বাড়িয়ে রচনার একটা হাত ধরে বলল, “ছেলেটা কোথায় গেল বল তো? আমরা অটোতে উঠে বসতে না বসতেই হাওয়া হয়ে গেল”!
 

বাড়ি ফিরে এসে রচনা যেন বুক ভরে শ্বাস নিতে পারল। রবিশঙ্করের বাড়ির ওখান থেকে অটোতে ওঠবার পর থেকে সে দুশ্চিন্তায় আর ভয়ে গুটিশুটি মেরে সারাটা রাস্তা কাটিয়ে এসেছে। অচেনা ছেলেটার বলা কথা গুলো যেন অনবরত তার কানে বেজে যাচ্ছিল। সারাটা রাস্তা আসতে আসতে সে ভেবেছে, ছেলেটা কে? আর তাদের ওপর যে বিপদ এসে পড়েছে সে বিপদের কথা সে জানল কিভাবে? কলকাতায় একমাত্র পুলিশ ছাড়া আর কাউকেই তো তারা এ ব্যাপারে কিছু বলেনি! অবশ্য বিমল আগরওয়ালাও পুরো ঘটণাটা জানে। তাহলে ছেলেটা কি বিমল আগরওয়ালার লোক? বিমল আগরওয়ালা কি তাদের পেছনে লোক লাগিয়েছে? না কি পুলিশের কোন চর! আর পুলিশ তাদের পেছনে লোক লাগাবে কেন? তারাই তো একটা অপরাধের শিকার হয়েছে। তবে ছেলেটার যে কোন বদ মতলব ছিল না তা তো বেশ ভালভাবেই বোঝা গেছে। সে তো রতীশকে ঠিক কথাই বলেছে। যাকে তাকে ফোন নাম্বার দিতে বারন করল সে। রচনার নিজেরও মনে হচ্ছিল জায়গাটা কেমন যেন। যতক্ষণ সেখানে ছিল ততক্ষন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল তার।
 

ফ্ল্যাটে ঢুকেই রতীশ রচনাকে বলল, “রচু, দেখ, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। টাকাটা যে আর আমরা ফিরে পাব না, এ’কথা তো সত্যি। তাই আমার মনে হয়, পুলিশ যা করার করুক। রবিশঙ্করকে তারা ধরতে পারলে পরে দেখা যাবে আমাদের টাকাটা নিয়ে সে কি করেছে। তবে এখন থেকে আমরা আর কোন খোঁজ খবর করব না। টাকার দুঃখ দু’দিন বাদে আর আমাদের কারুর মনে থাকবে না। কিন্তু তোমার কোন বিপদ হলে সে কষ্ট যে সারা জীবন বুকে করে বয়ে বেড়াতে হবে আমাকে। তুমি কিন্তু আর কোথাও যেতে টেতে চেও না প্লীজ”।

______________________________
 
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 27-02-2020, 07:24 PM



Users browsing this thread: 19 Guest(s)