27-02-2020, 07:22 PM
(Update No. 66)
বিকেলের দিকের বাকি কাজগুলো সেরে সীমন্তিনী একটু তাড়াতাড়িই অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। পাঁচটা নাগাদ ঘরে পৌঁছেই সে কাকুকে ফোন করল। চন্দ্রকান্তবাবু ফোন ধরতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কাকু তুমি কি খুব ব্যস্ত আছ নাকি গো”?
চন্দ্রকান্তবাবু জবাব দিলেন, “হ্যারে মা, এ’সময় তো রোজই দোকানে একটু বেশী ভিড় হয়। আর বড়বৌমা আমাদের সংসারে আসবার পর তো মা লক্ষ্মীর কৃপা আরও খানিকটা বেড়েই গেছে। তা তুই কি বলবি, বল না”?
সীমন্তিনী খুব শান্ত গলায় বলল, “এক কাজ করো কাকু। তোমার কর্মচারীটাকে খানিকক্ষণ ভিড় সামলাতে দিয়ে তুমি ভেতরের ঘরে চলে যাও। খুব সিরিয়াস কথা কিছু বলার আছে আমার”।
চন্দ্রকান্তবাবু একটু থমকে থেকে ব্যস্ত গলায় বললেন, “আচ্ছা মা। তুই একটু ফোনটা ধর” বলে প্রায় মিনিট খানেক চুপ থাকবার পর বললেন, “হ্যা মন্তি বল তো কী ব্যাপার? বড়বৌমা রতু ওরা সবাই ঠিক আছে তো? তুই ভাল আছিস তো”?
সীমন্তিনী বলল, “কাকু কাকু, তুমি এত উতলা হয়ো না। আমি ঠিক আছি। আর দাদাভাই আর রচুও ঠিক আছে। কিন্তু ওদের ব্যাপারেই কিছু কথা বলার আছে আমার। তুমি শান্ত হয়ে আগে আমার কথাটুকু শুনে নাও”।
চন্দ্রকান্তবাবু আবার বললেন, “কি হয়েছে রে বল মা আমায়। কাল থেকে রতুর ফোনে কম করেও কুড়ি পঁচিশ বার ফোন করেছি। কিন্তু প্রত্যেকবার শুনেছি ওর ফোন সুইচ অফ। আজ ঘন্টা খানেক আগেও তো একবার ফোন করলুম। কিন্তু একই অবস্থা”।
সীমন্তিনী বলল, “কাকু একটা বিপদ হয়ে গেছে গো। কিন্তু তুমি উতলা হয়ো না প্লীজ। ঠাণ্ডা মাথায় আমার কথাগুলো শোনো। আচ্ছা সবার আগে বল তো, রবিশঙ্করকে তোমরা কতদিন ধরে চিনতে”?
চন্দ্রকান্তবাবু প্রায় আঁতকে উঠে বললেন, “তুই রবিশঙ্করের কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন রে মা? ও কি রতুকে কোনভাবে বিপদে ফেলেছে”?
সীমন্তিনী আবার আগের চেয়েও বেশী শান্ত গলায় বলল, “কাকু, মাথা গরম কোরো না তুমি। ঘটণাটা ঘটেছে গত পরশু দিন। দাদাভাই সেদিন বুঝতেও পারেনি। কাল গোটা ব্যাপারটা বুঝেই সে একেবারে ভেঙে পড়েছে। তবে আমাদের রচু খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। দাদাভাইকে ও খুব ভালভাবে সামলাচ্ছে। রচুও কাল অব্দি কিছুই জানত না। দাদাভাই ওকে কিছু বলেনি কাল রাত অব্দি। আজ দুপুরের আগে আগে রচু গোটা ব্যাপারটা দাদাভাইয়ের মুখ থেকে শুনেছে। আমার সাথে দুপুরে ওদের কথা হয়েছে। আমি তখনই সব কিছু জানলুম। রচু তো তখনই তোমাকে আর বড়মাকে ফোন করে সবটা জানাতে চাইছিল। আমিই বারণ করেছি। কারন খবরটা শুনলেই তোমরা সকলে মাথায় হাত দিয়ে হাঁ হুতোশ করতে বসবে। তাই আমিই ওদের দু’জনকে ওদের ফোন বন্ধ রাখতে বলেছি। আর সবার আগে তোমাকে ঘটণাটা জানাচ্ছি”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “মন্তি মা আমার। তুই আর আমাকে টেনশনে রাখিস নে মা। খুলে বল মা আমায় সব কিছু”।
সীমন্তিনী আগাগোড়া ঘটণার বিবরণ শুনিয়ে থামতেই চন্দ্রকান্তবাবু বলে উঠলেন, “হায় হায়। রবিশঙ্কর আমাদের এভাবে ঠকাল? দশ বছর ধরে ওর সাথে আমি ব্যবসা করছি। কিন্তু ও যে ভেতরে ভেতরে এত শয়তান হতে পারে, সেটা তো আমি ঘূণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি রে মা? ইশ কী সর্বনাশটাই না করল আমাদের। ব্যাটা আবার আসুক। ওকে বাজারের লোক দিয়ে গণধোলাই দিয়ে সোজা পুলিশের হাতে তুলে দেব আমি, দেখিস তুই”।
সীমন্তিনী বলল, “সে সুযোগ তুমি পাবে বলে ভাবছ কাকু? ও তো আগে থেকে প্ল্যান করেই তোমাদের সবাইকে এভাবে ঠকাল। সে আর রাজগঞ্জে আসবে বলে ভেবো না। ও পরশুদিন দাদাভাইয়ের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে নেবার ঘন্টা খানেক বাদেই নিজের বৌ বাচ্চা আর ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে ওর বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। দাদাভাই কালই ওর বাড়ি গিয়ে এ খবর পেয়েছে”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তাই নাকি? ও ওর বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে? তা পুলিশের লোকেরা কি বলছে? ওদের ধরতে পারবে বলে মনে হয় তোর”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “দেখ কাকু, কলকাতা তো আর একটুখানি জায়গা নয়। আর দাদাভাই তো তোমার রবিশঙ্করের চেহারার বর্ণনা আর ওর বাড়ির ঠিকানা, ফোন নাম্বার ছাড়া আর কিছু পুলিশকে দিতে পারেনি। অন্য যে লোকটা ভুয়ো পরিচয় দিয়ে রবিশঙ্করের সাথে কমপ্লেক্সের মালিক সেজে এসেছিল, দাদাভাই তো তার আসল নাম ঠিকানা কিছুই জানে না। সে তো ওই বিল্ডিঙের মালিকই নয়। আর রবিশঙ্কর তো টাকা নিয়ে চলে যাবার সাথে সাথেই নিজের মোবাইলের সিমকার্ড হয়ত খুলে ফেলেছে। আর সে এখনও কলকাতায় আছে, না বাইরে কোথাও চলে গেছে কে জানে। একটা ছবিও যদি থাকত কারো সাথে তবুও সেটা পুলিশকে দিতে পারলে তারা কিছু একটা করতে পেত। কিন্তু এমন অবস্থায় ওদের খুঁজে বের করা তো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবু আমি এখান থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে ওখানকার পুলিশের সাথে কথা বলব। তবে কতটুকু কি হয় না হয় তা তোমরা পরে সবই জানতে পারবে। আপাততঃ তুমি জেঠু, বাবা আর মায়েদের সামলিও। নইলে সবাই মিলে কান্নাকাটি জুড়ে দেবে। আর দাদাভাই আর রচুর সাথে আমি সব সময় যোগাযোগ রাখছি। ওরা এরপর কি করবে না করবে এ’সব নিয়ে আমি রাতে ওদের সাথে কথা বলব”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “রতু আর বড়বৌমা বুদ্ধি করে এখন অব্দি বাড়িতে খবরটা না দিয়ে ভালই করেছে। নইলে বাড়িতে এতক্ষন হুলুস্থুল পড়ে যেত। সবাইকে শান্ত করতে আমাদের তিন ভাইকে নাকানি চোবানি খেতে হত। তুই ভাবিসনে মা। আমি এদিকে সামলে নেব। কিন্তু রতুটার এখন কী হবে বল তো? টাকাটা হাতে থাকলেও না হয়ে কয়েকদিনের মধ্যে আরেকটা জায়গা খুঁজে নিতে পারত। কিন্তু হাতে আর যেটুকু আছে, তা দিয়ে তো আর ও সে কাজটা শুরু করতে পারবে না। ও কি তাহলে আবার বাড়ি ফিরে আসবে? কিন্তু এখানে ফিরে এসেও কলেজের চাকরিটা তো আর পাচ্ছে না ও। তাহলে কি করবে”?
সীমন্তিনী বলল, “সেসব ব্যাপার পরে আলোচনা করে দেখা যাবে। কিন্তু আপাততঃ দাদাভাইকে সুস্থ আর স্বাভাবিক রাখাটাই বেশী দরকারি। ও তো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তবে রচুর ওপর আমার ভরসা আছে। ও ঠিক দাদাভাইকে সামলে নেবে। কাকু তুমি এখনই বাড়ি চলে যাও। আর সন্ধ্যে ছ’টার আগেই খবরটা জানিয়ে দিয়ে আমাকে জানিয়ে দিও। তারপর আমি দাদাভাই আর রচুকে ফোন খুলতে বলব। তারপর তোমরা ওদের সাথেও কথা বলতে পারবে। তবে কাকু, বাড়ির সবাইকে একটু বুঝিয়ে দিও, তারা যেন দাদাভাইকে কোন গালমন্দ না করেন। তোমরা তো জানোই কাকু, ও কত সহজ সরল। দাদাভাই নিজেই এমনিতেই খুব অনুতপ্ত আর লজ্জিত। বাড়ির লোকেরা ওর কাজে এখন ওকে আবার ছিঃ ছিঃ করলে রচুর খুব অসুবিধে হবে ওকে সামলাতে। তাই বাড়ির সবাইকে বলে দিও, তারা যেন দাদাভাইয়ের সাথে বেশী কথা না বলেন। রচুর সাথেই যেন বেশী কথা বলেন”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছেরে মা। আমি এখনই বেরোচ্ছি। দাদাদের নিয়ে বাড়ি গিয়ে এখনই সব কথা খুলে বলছি”।
*************
ফোন কেটে সীমন্তিনী দেখল বেলা পাঁচটা পঁয়ত্রিশ। রতীশ আর রচনার ফোন এখনও বন্ধই থাকবার কথা। সে মনে মনে ভাবল, এখন সবার আগে তাকে দাদাভাই আর রচুর সাথে কথা বলতে হবে। ফোনটা রেখে উঠতেই তার ঘরের কাজের ঝি লক্ষ্মী চা জলখাবার নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, “ওমা দিদিমণি, তুমি তো এখনও পোশাকও ছাড় নি! আমি যে তোমার খাবার নিয়ে এলুম গো”।
সীমন্তিনী লাগোয়া বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “তুমি ওগুলো টেবিলের ওপর রাখ লক্ষ্মীদি। আমি হাত মুখটা ধুয়ে আসছি”।
লক্ষ্মী সেন্টার টেবিলে খাবার গুলো রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি এখন আবার বেরোবে নাকি দিদিমণি”?
সীমন্তিনী হাত মুখ ধুয়ে টাওয়েল হাতে নিয়ে বলল, “নাগো লক্ষ্মীদি। এখন আর বেরোবার কথা নেই। তবে কিছু জরুরী কথা ছিল বলেই ফোনে কথা বলছিলাম। তাই ড্রেস খোলার সময় পাইনি। খাবারটা খেয়ে নিয়ে তারপর চেঞ্জ করব। দাও দেখি। খুব ক্ষিদে পেয়েছে গো, সত্যি”।
নুডলস খেয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই পাশের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে না করতেই ল্যাণ্ডলাইন ফোনটা বেজে উঠল। তাড়াহুড়ো করে পোশাক পাল্টাতে পাল্টাতে সে গলা তুলে বলল, “লক্ষ্মীদি, ফোনটা ধর তো আমি আসছি”।
ড্রেস চেঞ্জ করে আবার বেডরুমে ঢুকতেই লক্ষ্মী বলল, “বৌদিমণি ফোন করেছে গো দিদিমণি। এই ধর”।
সীমন্তিনী চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই ফোনের রিসিভার কানে লাগিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হ্যা রচু বল। বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেছিল”?
রচনা জবাব দিল, “না দিদিভাই আমাদের ফোন তো তুমিই সুইচড অফ করে রাখতে বলেছিলে। এখন অন করে প্রথম তোমাকেই ফোন করছি। কিন্তু আগে বল তো, তুমি কখন বাড়ি ফিরেছ? আর ফিরে এসে কিছু খেয়েছ তো”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যারে খেয়েছি। পাঁচটার আগেই বাড়ি এসেছি আজ। তারপর কাকুর সাথে সবকিছু নিয়ে আলাপ করে নুডলস খেয়েছি। এখন চা খাচ্ছি”।
রচনা জিজ্ঞেস করল, “ছোটকাকু কি রাতে বাড়ি ফিরে সবাইকে বলবেন খবরটা”?
সীমন্তিনী বলল, “নারে, কাকু আমার সাথে কথা বলেই বাড়ি যাবেন বলেছিলেন। এতক্ষণে হয়ত বাড়ির সবাই ঘটণাটা জেনে গেছে। দাদাভাইয়ের ফোনটা অন করতে বলে দে। একটু বাদেই বাড়ি থেকে তোদের কাছে ফোন যাবে দেখিস। তবে তোরা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেছিস তো? আর দাদাভাই কি করছে? দুপুরে ঘুমিয়েছিল একটু”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যা দিদিভাই, খেয়েছি। আর কাল রাতে তো কেউই ঘুমোতে পারিনি। তাই তোমার দাদাভাইকে জোর করেই শুইয়ে দিয়ে আমিও শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলুম। এলার্মের শব্দেই এখন ঘুম ভেঙেছে আমাদের। তা দিদিভাই, ছোটকাকু শুনে কী বললেন গো? তিনি কি তোমার দাদাভাইয়ের ওপর খুব রেগে গেছেন”?
সীমন্তিনী বলল, “আরে নারে পাগলী মেয়ে। রাগবেন কেন? একদম রাগেননি কাকু। বরং এত বছর ধরে ব্যবসা করলেও রবিশঙ্করের স্বরূপটাকে তিনি চিনতে পারেননি বলে দুঃখই করছিলেন। তুই ভাবিস না, কেউ দাদাভাইকে গালমন্দ করবে না দেখিস”।
রচনা বলল, “আচ্ছা দিদিভাই, ছোটকাকুর কাছে রবিশঙ্করের কোন ছবি আছে কি না জিজ্ঞেস করেছিলে”?
সীমন্তিনী বলল, “নারে, সে’কথাটা তখন জিজ্ঞেস করিনি। তবে রাতেই আবার তার সাথে কথা হবে আমার। এখন তো খবরটা শুনে সকলেরই মাথা গরম হয়ে যাবে। মাথাগুলো একটু ঠাণ্ডা হোক তাদের। তারপর সে’সব কথা বলব। আচ্ছা দাদাভাই কেমন আছে রে? একটু ধাতস্ত হয়েছে তো”?
রচনা বলল, “অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছে সে। আর আমিও সর্বক্ষণ তার সাথে সাথেই আছি। ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে নিয়েছে বলে চোখ মুখের চেহারা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এখন। কিন্তু কথাগুলো যে এখনও তার মনে বারবার ঘুরে ফিরে আসছে, সেটাও বুঝতে পাচ্ছি”।
সীমন্তিনী বলল, “সে তো হবেই। এত বড় একটা ধাক্কা ভুলতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। আচ্ছা শোন রচু। আমি ফোনটা রাখছি। একটু ঘরের কাজ সেরে নিই। তোরাও বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলে নে। ঘন্টা খানেক বাদে আমি তোকে আবার ফোন করছি। কেমন”?
রচনা বলল, “ঠিক আছে দিদিভাই। রাখছি তাহলে”।
পরের একঘন্টায় রতীশ আর রচনার সাথে বাড়ির প্রায় সকলেই দফায় দফায় কথা বলল। সকলের কথার মূল বিষয় একটাই, রবিশঙ্কর আর রতীশের দু’লাখ টাকা। সকলের সাথে কথা বলার পর রচনা ছোটকাকা চন্দ্রকান্তবাবুকে বলল, “ছোটকাকু, সকলের সাথে কথায় কথায় তো অনেক রাত হয়ে গেল। কিন্তু তোমার সাথে আমার আরও কিছু জরুরী কথা ছিল। তোমরা সবাই তো দোকান খোলা রেখে এসেছ। তাই বলছি কি দোকান বন্ধ করে এসে আমাকে একটু ফোন করবে তুমি”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তুমি কেমন কথা বলছ বড়বৌমা? তোমাদের এমন বিপদের দিনেও কি আমার দোকান সামলানোটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে? আমি আজ আর দোকানে যাচ্ছি না। দাদারা বেরোবে এখন। আমি তাদের কাছে খবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। কর্মচারীরাই দোকান বন্ধ করে দেবে’খন। তুমি যা বলতে চাও বল”।
রচনা বলল, “ছোটকাকু, আসলে এখানে থানায় আমরা ঘটণাটা জানিয়েছি বটে। কিন্তু রবিশঙ্করের বাড়ির ঠিকানা, ফোন নাম্বার, আর তার চেহারার বিবরণ ছাড়া আমরা তো পুলিশকে আর কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু পুলিশ অফিসার রবিশঙ্করের একটা ছবি চাইছিলেন। কিন্তু আমাদের কাছে তো তেমন কিছুই নেই। তবে লোকটা তো তোমার দোকানে প্রায়ই যেত। তোমার কি মনে হয়, রবিশঙ্করের কোন ছবি তোমাদের কারুর কাছে আছে”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “আমার তো তেমন কিছু মনে পড়ছে না বড়বৌমা। রবিশঙ্কর যখন রাজগঞ্জে থাকত তখন সে প্রায় রোজই সন্ধ্যের দিকে আমার দোকানে এসে আড্ডা দিত, সে’কথা ঠিক। কিন্তু কেউ ওর ছবি কখনও তুলেছে বলে মনে পড়ছেনা গো”।
রচনা কিছু বলবার আগেই আরেকজনের হাল্কা একটা আওয়াজ শোনা গেল, “না বাবা আছে। আমার কাছে আছে”।
রচনা কথাটা শুনে অবাক হল। গলাটা তো মনে হল চন্দ্রিকার। চন্দ্রিকার কাছে রবিশঙ্করের ফটো কী করে থাকবে, বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “কে কথা বলছে গো ছোটকাকু? চন্দু”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা বড়বৌমা। চন্দু তো আমার কোলে বসে তোমার কথা শুনছিল। ওর কাছে নাকি রবিশঙ্করের ছবি আছে বলছে। আমাদের ঘরে গেছে আনতে। দেখি সত্যি কিছু আছে নাকি”?
রচনা বলল, “ছোটকাকু, আরেকটা কথা ছিল। রবিশঙ্কর তোমাদের দোকানে যেসব মাল সাল্পাই করত এতদিন ধরে, সেসবের কোন বিল, ভাউচার বা ক্যাশমেমো এসব কিছু আছে”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা সে’সব তো আছেই। তবে ওর নিজের নামের কোন বিল ভাউচার নেই। ও যেসব কোম্পানীর মাল আমাদের দিত, সেসব কোম্পানীর কিছু কিছু বিল ক্যাশমেমো আছে আমার কাছে”।
রচনা বলল, “তাহলে ওই সব কাগজে যে সব কোম্পানীর মাল সে সাপ্লাই করত, সে’সব কোম্পানীর নাম ঠিকানা নিশ্চয়ই লেখা থাকবে, তাই না”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা সে তো আছেই। কিন্তু ও’গুলো দিয়ে কী হবে গো বড়বৌমা”?
রচনা বলল, “ও’গুলো থেকে পুলিশ তো বুঝতে পারবে যে ব্যবসার কাজে রবিশঙ্কর কলকাতার কোন কোন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। একটু উদ্যোগ নিলে তারা হয়ত সে’সব জায়গায় ওর হদিশ পেয়ে যেতে পারে”।
রচনার কথা শেষ হবার আগেই আবার চন্দুর গলা শোনা গেল, “বাবা এই দেখ, এ লোকটাই রবিশঙ্কর না”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা হ্যা এটা তো রবিশঙ্করই। আরে বড়বৌমা শুনছ? রবিশঙ্করের ছবি একটা সত্যি আছে চন্দুর কাছে। ছবিটা আসলে চন্দুরই। কিন্তু পেছনে একটা চেয়ারে রবিশঙ্করকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে”।
রচনা উল্লসিত হয়ে বলল, “তাহলে তো খুব ভাল কথা ছোটকাকু। তাহলে শোন না। কাল তুমি এ ছবিটার একটা কপি বানিয়ে নিয়ে আর আলাদা আলাদা দোকান বা কোম্পানীর ওই সব বিল ক্যাশমেমোগুলো কয়েকটা ফটোকপি করে কুরিয়ার করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারবে না”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “পারব না কেন মাগো? নিশ্চয়ই পারব। আমি কালই সব কিছু রেডি করে সম্ভব হলে কালই কুরিয়ারে দিয়ে দেব”।
রচনা বলল, “তাহলে সেটাই কোর। ও’সব পুলিশের হাতে দিলে তাদের একটু সুবিধে হতে পারে। আচ্ছা ছোটকাকু, অনেকক্ষণ ধরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কান গরম হয়ে গেছে গো। তাই ছাড়ছি এখন। তুমি জিনিসগুলো পাঠিও”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছে বৌমা, তুমি একদম ভেব না। আমি কালই পাঠাবার চেষ্টা করছি। আর তোমরা সাবধানে থেক মা। রতুকে বোল, ও যেন মন খারাপ না করে। আর যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে আমাকে ফোন কোর। আর রতু এরপর কি করতে চায় সেটা তোমরা দু’জনে মিলে আগে ভাল করে পরামর্শ করে নাও। তারপর আমাদের জানিও। একটা কথা মনে রেখো তোমরা দুজনেই বৌমা, বাড়ি থেকে দুরে আছো বলে তোমরা নিজেদের একদম একা বলে ভেবো না। আমরা সব সময় তোমাদের পাশে আছি মনে রাখবে। আচ্ছা রাখছি তাহলে”।
ফোন রেখে রচনা পাশে বসে থাকা স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে বলল, “সোনা শুনেছ তো? চন্দুর কাছে ওই রবিশঙ্করের একটা ছবি আছে। ছোটকাকু ওই ছবিটার একটা কপি বানিয়ে আর রবিশঙ্করের দেওয়া কিছু বিল আর ক্যাশমেমো ফটোকপি করে কুরিয়ারে আমাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবেন। ও’গুলো আমরা এখানে থানায় জমা দিলে পুলিশ এবার রবিশঙ্করের খোঁজ করতে পারবে”।
রতীশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “হ্যা, পুলিশ চাইলে ও’সব পেলে কিছু একটা করতেই পারে। কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু কি হবে কে জানে। কিন্তু টাকাগুলো কি আর ফেরত পাব আমরা”?
রচনা রতীশের একটা হাত ধরে বলল, “টাকা যে আমরা ফেরত পাব, তার সম্ভাবনা তো সত্যিই খুব কম। কিন্তু সোনা, লোকটার সাজা হওয়া তো উচিৎ” একটু থেমে বলল, “আচ্ছা তুমি চা খাবে তো? চল, তাহলে কিচেনে গিয়ে বসো। দিদিভাই হয়ত এখনই ফোন করবেন আবার। এসো” বলে দু’জনের মোবাইল হাতে নিয়ে রতীশকে সঙ্গে নিয়েই কিচেনের দিকে চলল।
সীমন্তিনী রতীশের ফোনে ফোন করল রাত সাড়ে আটটা নাগাদ। বলল, “দাদাভাই, তুই মন খারাপ করিস নে। যেটা হবার ছিল তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু এখন কি করবি বলে ভাবছিস, বল তো”?
রতীশ বলল, “সেটাই তো বুঝতে পারছিনা রে মন্তি। যেটা করব ভেবে এখানে এসেছিলুম সেটা তো আর সম্ভব হচ্ছে না। টাকাটা হাতে থাকলে তবু না হয় অন্য কোন কমপ্লেক্স খুঁজে বের করবার চেষ্টা করতে পারতুম। কিন্তু এখন কমপ্লেক্স একটা খুঁজে পেলেও ভাড়া দেবার পয়সা কোথায়? বাবা, কাকাদের কাছে আবার কোন মুখে আমি টাকা চাইব”?
সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, তোকে টাকার জন্য ভাবতে হবেনা রে। আর তুই কি জানিস না? তোর স্বপ্ন তো আমারও স্বপ্ন রে। তুই দেখিস আমরা দু’জন মিলে তোর স্বপ্ন অবশ্যই সাকার করে তুলতে পারব। তুই আমাকে একটু সময় দে। অন্ততঃ মাস ছয়েক। তারপর আমিই তোকে সেটা দিতে পারব। বাড়ির কারো কাছে তোকে চাইতে হবে না। কিন্তু এই ছ’টা মাস তুই কি বেকার বসে থাকবি কলকাতায়”?
ফোনের স্পীকার অন ছিল বলে চা করতে করতে রচনা দু’জনের সব কথাই শুনতে পাচ্ছিল। সে রতীশের কাছে এসে বলল, “দিদিভাই, তুমি আর কত করবে গো? আমার মা বাবার সংসারের সব আর্থিক দায়িত্বই তো তুমি নিজের হাতে তুলে নিয়েছ। ভাইয়ের লেখাপড়ার সমস্ত খরচও তুমিই বহন করছ। এখন আবার তুমি আমাদের ..”
সীমন্তিনী তার কথার মাঝপথে বাঁধা দিয়ে বলল, “তুই তো দেখছি দিনে দিনে খুব স্বার্থপর হয়ে উঠছিস রে রচু। খুব যে আমার আমার করছিস। তোর মা বাবা ভাই কি আমার কেউ না? আর তুই আর তোর বরও কি আমার কেউ নোস? আমি তো শুধু তোদের এই ক’টা লোককে নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই রে। তুই আমাকে সেটুকুও করতে দিবি না? সবাইকে তুই শুধু তোর নিজের করে রাখবি? এত স্বার্থপর তুই”?
রচনা অভিমানী গলায় বলল, “আমি কি তা-ই বলেছি নাকি দিদিভাই? তুমি চাকরি পাবার পর থেকেই তো আমার মা বাবা আর ......”
সীমন্তিনী এবার প্রায় ধমক দিয়ে বলল, “এই মেয়ে, তোকে আমার দাদাভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছি বলে তুই কি নিজেকে আমার গার্জিয়ান ভাবতে শুরু করেছিস? আর শোন, তোর সাথে আমি এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাইছি না এখন। তুই সরে যা, নিজের কাজ কর। আমাকে দাদাভাইয়ের সাথে কথা বলতে দে তো। আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি”।
রচনা মুখ ভার করে আবার স্টোভের কাছে চলে গেল। এমন সময় রতীশ বলল, “মন্তি শোন না। ওই কমপ্লেক্সটার আসল মালিক বিমল আগরওয়ালা আমাকে একটা কথা বলেছেন। যদিও আমি তার কথার কোন জবাব এখনও দিই নি। অবশ্য রচুকে বলেছি। কিন্তু রচুও বলেছে তোর সাথে আগে পরামর্শ করে নিতে”।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আসল বিমল আগরওয়ালা, মানে ওই বিল্ডার না প্রোমোটার? তা সে আবার কী বলেছে”?
______________________________
ss_sexy
বিকেলের দিকের বাকি কাজগুলো সেরে সীমন্তিনী একটু তাড়াতাড়িই অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। পাঁচটা নাগাদ ঘরে পৌঁছেই সে কাকুকে ফোন করল। চন্দ্রকান্তবাবু ফোন ধরতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কাকু তুমি কি খুব ব্যস্ত আছ নাকি গো”?
চন্দ্রকান্তবাবু জবাব দিলেন, “হ্যারে মা, এ’সময় তো রোজই দোকানে একটু বেশী ভিড় হয়। আর বড়বৌমা আমাদের সংসারে আসবার পর তো মা লক্ষ্মীর কৃপা আরও খানিকটা বেড়েই গেছে। তা তুই কি বলবি, বল না”?
সীমন্তিনী খুব শান্ত গলায় বলল, “এক কাজ করো কাকু। তোমার কর্মচারীটাকে খানিকক্ষণ ভিড় সামলাতে দিয়ে তুমি ভেতরের ঘরে চলে যাও। খুব সিরিয়াস কথা কিছু বলার আছে আমার”।
চন্দ্রকান্তবাবু একটু থমকে থেকে ব্যস্ত গলায় বললেন, “আচ্ছা মা। তুই একটু ফোনটা ধর” বলে প্রায় মিনিট খানেক চুপ থাকবার পর বললেন, “হ্যা মন্তি বল তো কী ব্যাপার? বড়বৌমা রতু ওরা সবাই ঠিক আছে তো? তুই ভাল আছিস তো”?
সীমন্তিনী বলল, “কাকু কাকু, তুমি এত উতলা হয়ো না। আমি ঠিক আছি। আর দাদাভাই আর রচুও ঠিক আছে। কিন্তু ওদের ব্যাপারেই কিছু কথা বলার আছে আমার। তুমি শান্ত হয়ে আগে আমার কথাটুকু শুনে নাও”।
চন্দ্রকান্তবাবু আবার বললেন, “কি হয়েছে রে বল মা আমায়। কাল থেকে রতুর ফোনে কম করেও কুড়ি পঁচিশ বার ফোন করেছি। কিন্তু প্রত্যেকবার শুনেছি ওর ফোন সুইচ অফ। আজ ঘন্টা খানেক আগেও তো একবার ফোন করলুম। কিন্তু একই অবস্থা”।
সীমন্তিনী বলল, “কাকু একটা বিপদ হয়ে গেছে গো। কিন্তু তুমি উতলা হয়ো না প্লীজ। ঠাণ্ডা মাথায় আমার কথাগুলো শোনো। আচ্ছা সবার আগে বল তো, রবিশঙ্করকে তোমরা কতদিন ধরে চিনতে”?
চন্দ্রকান্তবাবু প্রায় আঁতকে উঠে বললেন, “তুই রবিশঙ্করের কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন রে মা? ও কি রতুকে কোনভাবে বিপদে ফেলেছে”?
সীমন্তিনী আবার আগের চেয়েও বেশী শান্ত গলায় বলল, “কাকু, মাথা গরম কোরো না তুমি। ঘটণাটা ঘটেছে গত পরশু দিন। দাদাভাই সেদিন বুঝতেও পারেনি। কাল গোটা ব্যাপারটা বুঝেই সে একেবারে ভেঙে পড়েছে। তবে আমাদের রচু খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে। দাদাভাইকে ও খুব ভালভাবে সামলাচ্ছে। রচুও কাল অব্দি কিছুই জানত না। দাদাভাই ওকে কিছু বলেনি কাল রাত অব্দি। আজ দুপুরের আগে আগে রচু গোটা ব্যাপারটা দাদাভাইয়ের মুখ থেকে শুনেছে। আমার সাথে দুপুরে ওদের কথা হয়েছে। আমি তখনই সব কিছু জানলুম। রচু তো তখনই তোমাকে আর বড়মাকে ফোন করে সবটা জানাতে চাইছিল। আমিই বারণ করেছি। কারন খবরটা শুনলেই তোমরা সকলে মাথায় হাত দিয়ে হাঁ হুতোশ করতে বসবে। তাই আমিই ওদের দু’জনকে ওদের ফোন বন্ধ রাখতে বলেছি। আর সবার আগে তোমাকে ঘটণাটা জানাচ্ছি”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “মন্তি মা আমার। তুই আর আমাকে টেনশনে রাখিস নে মা। খুলে বল মা আমায় সব কিছু”।
সীমন্তিনী আগাগোড়া ঘটণার বিবরণ শুনিয়ে থামতেই চন্দ্রকান্তবাবু বলে উঠলেন, “হায় হায়। রবিশঙ্কর আমাদের এভাবে ঠকাল? দশ বছর ধরে ওর সাথে আমি ব্যবসা করছি। কিন্তু ও যে ভেতরে ভেতরে এত শয়তান হতে পারে, সেটা তো আমি ঘূণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি রে মা? ইশ কী সর্বনাশটাই না করল আমাদের। ব্যাটা আবার আসুক। ওকে বাজারের লোক দিয়ে গণধোলাই দিয়ে সোজা পুলিশের হাতে তুলে দেব আমি, দেখিস তুই”।
সীমন্তিনী বলল, “সে সুযোগ তুমি পাবে বলে ভাবছ কাকু? ও তো আগে থেকে প্ল্যান করেই তোমাদের সবাইকে এভাবে ঠকাল। সে আর রাজগঞ্জে আসবে বলে ভেবো না। ও পরশুদিন দাদাভাইয়ের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে নেবার ঘন্টা খানেক বাদেই নিজের বৌ বাচ্চা আর ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে ওর বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। দাদাভাই কালই ওর বাড়ি গিয়ে এ খবর পেয়েছে”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তাই নাকি? ও ওর বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে? তা পুলিশের লোকেরা কি বলছে? ওদের ধরতে পারবে বলে মনে হয় তোর”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “দেখ কাকু, কলকাতা তো আর একটুখানি জায়গা নয়। আর দাদাভাই তো তোমার রবিশঙ্করের চেহারার বর্ণনা আর ওর বাড়ির ঠিকানা, ফোন নাম্বার ছাড়া আর কিছু পুলিশকে দিতে পারেনি। অন্য যে লোকটা ভুয়ো পরিচয় দিয়ে রবিশঙ্করের সাথে কমপ্লেক্সের মালিক সেজে এসেছিল, দাদাভাই তো তার আসল নাম ঠিকানা কিছুই জানে না। সে তো ওই বিল্ডিঙের মালিকই নয়। আর রবিশঙ্কর তো টাকা নিয়ে চলে যাবার সাথে সাথেই নিজের মোবাইলের সিমকার্ড হয়ত খুলে ফেলেছে। আর সে এখনও কলকাতায় আছে, না বাইরে কোথাও চলে গেছে কে জানে। একটা ছবিও যদি থাকত কারো সাথে তবুও সেটা পুলিশকে দিতে পারলে তারা কিছু একটা করতে পেত। কিন্তু এমন অবস্থায় ওদের খুঁজে বের করা তো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবু আমি এখান থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে ওখানকার পুলিশের সাথে কথা বলব। তবে কতটুকু কি হয় না হয় তা তোমরা পরে সবই জানতে পারবে। আপাততঃ তুমি জেঠু, বাবা আর মায়েদের সামলিও। নইলে সবাই মিলে কান্নাকাটি জুড়ে দেবে। আর দাদাভাই আর রচুর সাথে আমি সব সময় যোগাযোগ রাখছি। ওরা এরপর কি করবে না করবে এ’সব নিয়ে আমি রাতে ওদের সাথে কথা বলব”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “রতু আর বড়বৌমা বুদ্ধি করে এখন অব্দি বাড়িতে খবরটা না দিয়ে ভালই করেছে। নইলে বাড়িতে এতক্ষন হুলুস্থুল পড়ে যেত। সবাইকে শান্ত করতে আমাদের তিন ভাইকে নাকানি চোবানি খেতে হত। তুই ভাবিসনে মা। আমি এদিকে সামলে নেব। কিন্তু রতুটার এখন কী হবে বল তো? টাকাটা হাতে থাকলেও না হয়ে কয়েকদিনের মধ্যে আরেকটা জায়গা খুঁজে নিতে পারত। কিন্তু হাতে আর যেটুকু আছে, তা দিয়ে তো আর ও সে কাজটা শুরু করতে পারবে না। ও কি তাহলে আবার বাড়ি ফিরে আসবে? কিন্তু এখানে ফিরে এসেও কলেজের চাকরিটা তো আর পাচ্ছে না ও। তাহলে কি করবে”?
সীমন্তিনী বলল, “সেসব ব্যাপার পরে আলোচনা করে দেখা যাবে। কিন্তু আপাততঃ দাদাভাইকে সুস্থ আর স্বাভাবিক রাখাটাই বেশী দরকারি। ও তো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তবে রচুর ওপর আমার ভরসা আছে। ও ঠিক দাদাভাইকে সামলে নেবে। কাকু তুমি এখনই বাড়ি চলে যাও। আর সন্ধ্যে ছ’টার আগেই খবরটা জানিয়ে দিয়ে আমাকে জানিয়ে দিও। তারপর আমি দাদাভাই আর রচুকে ফোন খুলতে বলব। তারপর তোমরা ওদের সাথেও কথা বলতে পারবে। তবে কাকু, বাড়ির সবাইকে একটু বুঝিয়ে দিও, তারা যেন দাদাভাইকে কোন গালমন্দ না করেন। তোমরা তো জানোই কাকু, ও কত সহজ সরল। দাদাভাই নিজেই এমনিতেই খুব অনুতপ্ত আর লজ্জিত। বাড়ির লোকেরা ওর কাজে এখন ওকে আবার ছিঃ ছিঃ করলে রচুর খুব অসুবিধে হবে ওকে সামলাতে। তাই বাড়ির সবাইকে বলে দিও, তারা যেন দাদাভাইয়ের সাথে বেশী কথা না বলেন। রচুর সাথেই যেন বেশী কথা বলেন”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছেরে মা। আমি এখনই বেরোচ্ছি। দাদাদের নিয়ে বাড়ি গিয়ে এখনই সব কথা খুলে বলছি”।
*************
ফোন কেটে সীমন্তিনী দেখল বেলা পাঁচটা পঁয়ত্রিশ। রতীশ আর রচনার ফোন এখনও বন্ধই থাকবার কথা। সে মনে মনে ভাবল, এখন সবার আগে তাকে দাদাভাই আর রচুর সাথে কথা বলতে হবে। ফোনটা রেখে উঠতেই তার ঘরের কাজের ঝি লক্ষ্মী চা জলখাবার নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, “ওমা দিদিমণি, তুমি তো এখনও পোশাকও ছাড় নি! আমি যে তোমার খাবার নিয়ে এলুম গো”।
সীমন্তিনী লাগোয়া বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “তুমি ওগুলো টেবিলের ওপর রাখ লক্ষ্মীদি। আমি হাত মুখটা ধুয়ে আসছি”।
লক্ষ্মী সেন্টার টেবিলে খাবার গুলো রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি এখন আবার বেরোবে নাকি দিদিমণি”?
সীমন্তিনী হাত মুখ ধুয়ে টাওয়েল হাতে নিয়ে বলল, “নাগো লক্ষ্মীদি। এখন আর বেরোবার কথা নেই। তবে কিছু জরুরী কথা ছিল বলেই ফোনে কথা বলছিলাম। তাই ড্রেস খোলার সময় পাইনি। খাবারটা খেয়ে নিয়ে তারপর চেঞ্জ করব। দাও দেখি। খুব ক্ষিদে পেয়েছে গো, সত্যি”।
নুডলস খেয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই পাশের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে না করতেই ল্যাণ্ডলাইন ফোনটা বেজে উঠল। তাড়াহুড়ো করে পোশাক পাল্টাতে পাল্টাতে সে গলা তুলে বলল, “লক্ষ্মীদি, ফোনটা ধর তো আমি আসছি”।
ড্রেস চেঞ্জ করে আবার বেডরুমে ঢুকতেই লক্ষ্মী বলল, “বৌদিমণি ফোন করেছে গো দিদিমণি। এই ধর”।
সীমন্তিনী চায়ের কাপটা হাতে নিয়েই ফোনের রিসিভার কানে লাগিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হ্যা রচু বল। বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেছিল”?
রচনা জবাব দিল, “না দিদিভাই আমাদের ফোন তো তুমিই সুইচড অফ করে রাখতে বলেছিলে। এখন অন করে প্রথম তোমাকেই ফোন করছি। কিন্তু আগে বল তো, তুমি কখন বাড়ি ফিরেছ? আর ফিরে এসে কিছু খেয়েছ তো”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যারে খেয়েছি। পাঁচটার আগেই বাড়ি এসেছি আজ। তারপর কাকুর সাথে সবকিছু নিয়ে আলাপ করে নুডলস খেয়েছি। এখন চা খাচ্ছি”।
রচনা জিজ্ঞেস করল, “ছোটকাকু কি রাতে বাড়ি ফিরে সবাইকে বলবেন খবরটা”?
সীমন্তিনী বলল, “নারে, কাকু আমার সাথে কথা বলেই বাড়ি যাবেন বলেছিলেন। এতক্ষণে হয়ত বাড়ির সবাই ঘটণাটা জেনে গেছে। দাদাভাইয়ের ফোনটা অন করতে বলে দে। একটু বাদেই বাড়ি থেকে তোদের কাছে ফোন যাবে দেখিস। তবে তোরা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেছিস তো? আর দাদাভাই কি করছে? দুপুরে ঘুমিয়েছিল একটু”?
রচনা জবাব দিল, “হ্যা দিদিভাই, খেয়েছি। আর কাল রাতে তো কেউই ঘুমোতে পারিনি। তাই তোমার দাদাভাইকে জোর করেই শুইয়ে দিয়ে আমিও শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলুম। এলার্মের শব্দেই এখন ঘুম ভেঙেছে আমাদের। তা দিদিভাই, ছোটকাকু শুনে কী বললেন গো? তিনি কি তোমার দাদাভাইয়ের ওপর খুব রেগে গেছেন”?
সীমন্তিনী বলল, “আরে নারে পাগলী মেয়ে। রাগবেন কেন? একদম রাগেননি কাকু। বরং এত বছর ধরে ব্যবসা করলেও রবিশঙ্করের স্বরূপটাকে তিনি চিনতে পারেননি বলে দুঃখই করছিলেন। তুই ভাবিস না, কেউ দাদাভাইকে গালমন্দ করবে না দেখিস”।
রচনা বলল, “আচ্ছা দিদিভাই, ছোটকাকুর কাছে রবিশঙ্করের কোন ছবি আছে কি না জিজ্ঞেস করেছিলে”?
সীমন্তিনী বলল, “নারে, সে’কথাটা তখন জিজ্ঞেস করিনি। তবে রাতেই আবার তার সাথে কথা হবে আমার। এখন তো খবরটা শুনে সকলেরই মাথা গরম হয়ে যাবে। মাথাগুলো একটু ঠাণ্ডা হোক তাদের। তারপর সে’সব কথা বলব। আচ্ছা দাদাভাই কেমন আছে রে? একটু ধাতস্ত হয়েছে তো”?
রচনা বলল, “অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছে সে। আর আমিও সর্বক্ষণ তার সাথে সাথেই আছি। ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে নিয়েছে বলে চোখ মুখের চেহারা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এখন। কিন্তু কথাগুলো যে এখনও তার মনে বারবার ঘুরে ফিরে আসছে, সেটাও বুঝতে পাচ্ছি”।
সীমন্তিনী বলল, “সে তো হবেই। এত বড় একটা ধাক্কা ভুলতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। আচ্ছা শোন রচু। আমি ফোনটা রাখছি। একটু ঘরের কাজ সেরে নিই। তোরাও বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলে নে। ঘন্টা খানেক বাদে আমি তোকে আবার ফোন করছি। কেমন”?
রচনা বলল, “ঠিক আছে দিদিভাই। রাখছি তাহলে”।
পরের একঘন্টায় রতীশ আর রচনার সাথে বাড়ির প্রায় সকলেই দফায় দফায় কথা বলল। সকলের কথার মূল বিষয় একটাই, রবিশঙ্কর আর রতীশের দু’লাখ টাকা। সকলের সাথে কথা বলার পর রচনা ছোটকাকা চন্দ্রকান্তবাবুকে বলল, “ছোটকাকু, সকলের সাথে কথায় কথায় তো অনেক রাত হয়ে গেল। কিন্তু তোমার সাথে আমার আরও কিছু জরুরী কথা ছিল। তোমরা সবাই তো দোকান খোলা রেখে এসেছ। তাই বলছি কি দোকান বন্ধ করে এসে আমাকে একটু ফোন করবে তুমি”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তুমি কেমন কথা বলছ বড়বৌমা? তোমাদের এমন বিপদের দিনেও কি আমার দোকান সামলানোটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে? আমি আজ আর দোকানে যাচ্ছি না। দাদারা বেরোবে এখন। আমি তাদের কাছে খবর পাঠিয়ে দিচ্ছি। কর্মচারীরাই দোকান বন্ধ করে দেবে’খন। তুমি যা বলতে চাও বল”।
রচনা বলল, “ছোটকাকু, আসলে এখানে থানায় আমরা ঘটণাটা জানিয়েছি বটে। কিন্তু রবিশঙ্করের বাড়ির ঠিকানা, ফোন নাম্বার, আর তার চেহারার বিবরণ ছাড়া আমরা তো পুলিশকে আর কিছু বলতে পারিনি। কিন্তু পুলিশ অফিসার রবিশঙ্করের একটা ছবি চাইছিলেন। কিন্তু আমাদের কাছে তো তেমন কিছুই নেই। তবে লোকটা তো তোমার দোকানে প্রায়ই যেত। তোমার কি মনে হয়, রবিশঙ্করের কোন ছবি তোমাদের কারুর কাছে আছে”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “আমার তো তেমন কিছু মনে পড়ছে না বড়বৌমা। রবিশঙ্কর যখন রাজগঞ্জে থাকত তখন সে প্রায় রোজই সন্ধ্যের দিকে আমার দোকানে এসে আড্ডা দিত, সে’কথা ঠিক। কিন্তু কেউ ওর ছবি কখনও তুলেছে বলে মনে পড়ছেনা গো”।
রচনা কিছু বলবার আগেই আরেকজনের হাল্কা একটা আওয়াজ শোনা গেল, “না বাবা আছে। আমার কাছে আছে”।
রচনা কথাটা শুনে অবাক হল। গলাটা তো মনে হল চন্দ্রিকার। চন্দ্রিকার কাছে রবিশঙ্করের ফটো কী করে থাকবে, বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “কে কথা বলছে গো ছোটকাকু? চন্দু”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা বড়বৌমা। চন্দু তো আমার কোলে বসে তোমার কথা শুনছিল। ওর কাছে নাকি রবিশঙ্করের ছবি আছে বলছে। আমাদের ঘরে গেছে আনতে। দেখি সত্যি কিছু আছে নাকি”?
রচনা বলল, “ছোটকাকু, আরেকটা কথা ছিল। রবিশঙ্কর তোমাদের দোকানে যেসব মাল সাল্পাই করত এতদিন ধরে, সেসবের কোন বিল, ভাউচার বা ক্যাশমেমো এসব কিছু আছে”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা সে’সব তো আছেই। তবে ওর নিজের নামের কোন বিল ভাউচার নেই। ও যেসব কোম্পানীর মাল আমাদের দিত, সেসব কোম্পানীর কিছু কিছু বিল ক্যাশমেমো আছে আমার কাছে”।
রচনা বলল, “তাহলে ওই সব কাগজে যে সব কোম্পানীর মাল সে সাপ্লাই করত, সে’সব কোম্পানীর নাম ঠিকানা নিশ্চয়ই লেখা থাকবে, তাই না”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা সে তো আছেই। কিন্তু ও’গুলো দিয়ে কী হবে গো বড়বৌমা”?
রচনা বলল, “ও’গুলো থেকে পুলিশ তো বুঝতে পারবে যে ব্যবসার কাজে রবিশঙ্কর কলকাতার কোন কোন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। একটু উদ্যোগ নিলে তারা হয়ত সে’সব জায়গায় ওর হদিশ পেয়ে যেতে পারে”।
রচনার কথা শেষ হবার আগেই আবার চন্দুর গলা শোনা গেল, “বাবা এই দেখ, এ লোকটাই রবিশঙ্কর না”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “হ্যা হ্যা এটা তো রবিশঙ্করই। আরে বড়বৌমা শুনছ? রবিশঙ্করের ছবি একটা সত্যি আছে চন্দুর কাছে। ছবিটা আসলে চন্দুরই। কিন্তু পেছনে একটা চেয়ারে রবিশঙ্করকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে”।
রচনা উল্লসিত হয়ে বলল, “তাহলে তো খুব ভাল কথা ছোটকাকু। তাহলে শোন না। কাল তুমি এ ছবিটার একটা কপি বানিয়ে নিয়ে আর আলাদা আলাদা দোকান বা কোম্পানীর ওই সব বিল ক্যাশমেমোগুলো কয়েকটা ফটোকপি করে কুরিয়ার করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারবে না”?
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “পারব না কেন মাগো? নিশ্চয়ই পারব। আমি কালই সব কিছু রেডি করে সম্ভব হলে কালই কুরিয়ারে দিয়ে দেব”।
রচনা বলল, “তাহলে সেটাই কোর। ও’সব পুলিশের হাতে দিলে তাদের একটু সুবিধে হতে পারে। আচ্ছা ছোটকাকু, অনেকক্ষণ ধরে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কান গরম হয়ে গেছে গো। তাই ছাড়ছি এখন। তুমি জিনিসগুলো পাঠিও”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছে বৌমা, তুমি একদম ভেব না। আমি কালই পাঠাবার চেষ্টা করছি। আর তোমরা সাবধানে থেক মা। রতুকে বোল, ও যেন মন খারাপ না করে। আর যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে আমাকে ফোন কোর। আর রতু এরপর কি করতে চায় সেটা তোমরা দু’জনে মিলে আগে ভাল করে পরামর্শ করে নাও। তারপর আমাদের জানিও। একটা কথা মনে রেখো তোমরা দুজনেই বৌমা, বাড়ি থেকে দুরে আছো বলে তোমরা নিজেদের একদম একা বলে ভেবো না। আমরা সব সময় তোমাদের পাশে আছি মনে রাখবে। আচ্ছা রাখছি তাহলে”।
ফোন রেখে রচনা পাশে বসে থাকা স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে বলল, “সোনা শুনেছ তো? চন্দুর কাছে ওই রবিশঙ্করের একটা ছবি আছে। ছোটকাকু ওই ছবিটার একটা কপি বানিয়ে আর রবিশঙ্করের দেওয়া কিছু বিল আর ক্যাশমেমো ফটোকপি করে কুরিয়ারে আমাদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবেন। ও’গুলো আমরা এখানে থানায় জমা দিলে পুলিশ এবার রবিশঙ্করের খোঁজ করতে পারবে”।
রতীশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “হ্যা, পুলিশ চাইলে ও’সব পেলে কিছু একটা করতেই পারে। কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু কি হবে কে জানে। কিন্তু টাকাগুলো কি আর ফেরত পাব আমরা”?
রচনা রতীশের একটা হাত ধরে বলল, “টাকা যে আমরা ফেরত পাব, তার সম্ভাবনা তো সত্যিই খুব কম। কিন্তু সোনা, লোকটার সাজা হওয়া তো উচিৎ” একটু থেমে বলল, “আচ্ছা তুমি চা খাবে তো? চল, তাহলে কিচেনে গিয়ে বসো। দিদিভাই হয়ত এখনই ফোন করবেন আবার। এসো” বলে দু’জনের মোবাইল হাতে নিয়ে রতীশকে সঙ্গে নিয়েই কিচেনের দিকে চলল।
সীমন্তিনী রতীশের ফোনে ফোন করল রাত সাড়ে আটটা নাগাদ। বলল, “দাদাভাই, তুই মন খারাপ করিস নে। যেটা হবার ছিল তা তো হয়েই গেছে। কিন্তু এখন কি করবি বলে ভাবছিস, বল তো”?
রতীশ বলল, “সেটাই তো বুঝতে পারছিনা রে মন্তি। যেটা করব ভেবে এখানে এসেছিলুম সেটা তো আর সম্ভব হচ্ছে না। টাকাটা হাতে থাকলে তবু না হয় অন্য কোন কমপ্লেক্স খুঁজে বের করবার চেষ্টা করতে পারতুম। কিন্তু এখন কমপ্লেক্স একটা খুঁজে পেলেও ভাড়া দেবার পয়সা কোথায়? বাবা, কাকাদের কাছে আবার কোন মুখে আমি টাকা চাইব”?
সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, তোকে টাকার জন্য ভাবতে হবেনা রে। আর তুই কি জানিস না? তোর স্বপ্ন তো আমারও স্বপ্ন রে। তুই দেখিস আমরা দু’জন মিলে তোর স্বপ্ন অবশ্যই সাকার করে তুলতে পারব। তুই আমাকে একটু সময় দে। অন্ততঃ মাস ছয়েক। তারপর আমিই তোকে সেটা দিতে পারব। বাড়ির কারো কাছে তোকে চাইতে হবে না। কিন্তু এই ছ’টা মাস তুই কি বেকার বসে থাকবি কলকাতায়”?
ফোনের স্পীকার অন ছিল বলে চা করতে করতে রচনা দু’জনের সব কথাই শুনতে পাচ্ছিল। সে রতীশের কাছে এসে বলল, “দিদিভাই, তুমি আর কত করবে গো? আমার মা বাবার সংসারের সব আর্থিক দায়িত্বই তো তুমি নিজের হাতে তুলে নিয়েছ। ভাইয়ের লেখাপড়ার সমস্ত খরচও তুমিই বহন করছ। এখন আবার তুমি আমাদের ..”
সীমন্তিনী তার কথার মাঝপথে বাঁধা দিয়ে বলল, “তুই তো দেখছি দিনে দিনে খুব স্বার্থপর হয়ে উঠছিস রে রচু। খুব যে আমার আমার করছিস। তোর মা বাবা ভাই কি আমার কেউ না? আর তুই আর তোর বরও কি আমার কেউ নোস? আমি তো শুধু তোদের এই ক’টা লোককে নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই রে। তুই আমাকে সেটুকুও করতে দিবি না? সবাইকে তুই শুধু তোর নিজের করে রাখবি? এত স্বার্থপর তুই”?
রচনা অভিমানী গলায় বলল, “আমি কি তা-ই বলেছি নাকি দিদিভাই? তুমি চাকরি পাবার পর থেকেই তো আমার মা বাবা আর ......”
সীমন্তিনী এবার প্রায় ধমক দিয়ে বলল, “এই মেয়ে, তোকে আমার দাদাভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছি বলে তুই কি নিজেকে আমার গার্জিয়ান ভাবতে শুরু করেছিস? আর শোন, তোর সাথে আমি এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাইছি না এখন। তুই সরে যা, নিজের কাজ কর। আমাকে দাদাভাইয়ের সাথে কথা বলতে দে তো। আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি”।
রচনা মুখ ভার করে আবার স্টোভের কাছে চলে গেল। এমন সময় রতীশ বলল, “মন্তি শোন না। ওই কমপ্লেক্সটার আসল মালিক বিমল আগরওয়ালা আমাকে একটা কথা বলেছেন। যদিও আমি তার কথার কোন জবাব এখনও দিই নি। অবশ্য রচুকে বলেছি। কিন্তু রচুও বলেছে তোর সাথে আগে পরামর্শ করে নিতে”।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আসল বিমল আগরওয়ালা, মানে ওই বিল্ডার না প্রোমোটার? তা সে আবার কী বলেছে”?
______________________________
ss_sexy