27-02-2020, 12:48 PM
(This post was last modified: 27-02-2020, 12:50 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
[২৫]
কাল রাতে বাড়ি ফিরে চিঠিটা পেল। খামের উপর লেখা AIIMS,New Delhi. মনোরমা চিঠিটা হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, কিসের চিঠিরে?ইচ্ছে করলেই মম চিঠিটা খুলতে পারতো কিন্তু অদম্য কৌতুহল সত্বেও খোলেনি।এইখানেই মমের বৈশিষ্ট্য। চিঠীটা খুলে ভাবে পল্টু কিভাবে খবরটা মমকে বলবে?কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে অনুমান করার চেষ্টা করে।
--মম তোমাকে ছেড়ে আমি যদি দিল্লী চলে যাই?
--তুই কি সেখানে মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিস?মমের চোখে মুখে খুশির ঝলক। দেখি তো চিঠিটা।
মনোরমা হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নিয়ে চোখ বোলাতে লাগল।তারপর মুখ তুলে বলল,ও ইণ্টারভিউ?
--তোমার একা থাকতে কষ্ট হবে না?
মনোরমা হেসে কি ভাবলো তারপর পল্টুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,তোকে জন্ম দেবার সময় কম কষ্ট পাইনি কিন্তু সেই কষ্টের মধ্যে একটা সুখের আকাঙ্খা ছিল। তুই বড় হ তোর বাপির কাছাকাছি যাবার চেষ্টা কর একজন মা আর বেশি কি চাইতে পারে।
কাল রাতে এইসব কথা হয়েছিল।মমকে দেখে খুবই সাদামাটা বাঙালি ঘরণী বলে মনে হয় কিন্তু কাছ থেকে না দেখলে মমের ব্যক্তিত্ব তেজস্বীতা কণামাত্র কেউ আন্দাজ করতে পারবে না।বাথরুমে ঢুকে শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে এই সব কথাই ভাবছিল পল্টু। গলার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে উপরে মামা এসেছে।
দেবব্রত বাজারের ব্যাগ নামিয়ে দিয়ে বলল,মনো তুই যে আমার মায়ের পেটের বোন এক একসময় আমার সন্দেহ হয়। দেবব্রত বলল।
মনোরমা দাদার দিকে তাকিয়ে হাসল।
--হাসির কথা নয়,আমি সোজাসুজি জানতে চাই আমরা একসঙ্গে থাকি তা কি তোর ইচ্ছে নয়।
মনোরমা গম্ভীর হয়ে দাদার আপাদ মস্তক লক্ষ্য করে,পল্টু বাথরুমে কান খাড়া মম কি বলে শোনার জন্য। মমের গলা শুনতে পেল।
--দ্যাখো দাদা তুমি নিজের ইচ্ছেতে এখানে এসেছো আমি তোমাকে ডাকিনি। এখন আমার চাওয়া না-চাওয়ার কথা আসছে কেন? তোমার যাতে ভাল হয় তুমি করবে আমি কে বাঁধা দিতে যাবো?
--ও যা শুনেছি তাহলে সেটা ভুল শুনিনি?
--কি শুনেছো আমি জানি না কিন্তু এখন যা বললাম তা তো তুমি নিজের কানে শুনলে।
--ঠিক আছে কাল থেকে আমি তোর বাজার করতে পারবো না। দেবব্রত হন হন করে নীচে নেমে গেল।
স্বামীকে ফিরতে দেখে বাসন্তী এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইল,হ্যা গো ঠাকুর-ঝি কি বললো?
--তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য--একটু মানিয়ে চলতে পারো না?
--ওমা আমি কি করলাম? বাসন্তী স্বামীর উত্তেজনার কারণ বুঝতে পারে না।
--এবার গাটের কড়ি খরচ করে বাজার করো,বলে না সুখে থাকতে ভুতে কিলোয়। গলা চড়িয়ে বলল,ঠিক আছে মানুষের ভাল করতে নেই।কি না করেছি আজ তার উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেয়ে গেলাম।
পল্টু বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলল,মম তুমি একী করলে? তাহলে তো সব ছেড়ে আমাকে বাড়ি বসে থাকতে হবে।
--তুমি থাকবে কেন ছোড়দা,কিচছু ভেবো না তোমার মিতা মাসী আছে কোন কামে?মিতা আর কথা বাড়ায় না মনোরমার সঙ্গে চোখাচুখি হতে।তার মালকিন একেবারে আলাদা ডাক্তারবাবু চলে যাবার পর মনের মধ্যে ঝড় উঠলেও বাইরে একেবারে শান্ত।
এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল অথচ মমকে দেখে বোঝার উপায় নেই। মিতামাসীকে বেশ খুশি মনে হল। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
--ছোড়দা তোমাকে ভাত দিই?মিতামাসী জিজ্ঞেস করে।
দেবব্রত মনে মনে ঠিক করে অবস্থা একটূ শান্ত হলে মনোকে বলে ব্যাপারটা মিটিয়ে নিতে হবে।বাসন্তী ভাবে রাতে শোবার আগে মেজাজ ঠাণ্ডা করে দেবে। ভগবান সব মেয়েকেই একটা ব্রহ্মাস্ত্র দিয়েছে, পুরুষ মানুষকে কি ভাবে ঠান্ডা করতে হয় তার ভালই জানা আছে।
কলেজে ক্লাস চলছে। কেতকি পিছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,এ্যাই রুমেলা ওয়াহিদা রেহমানকে দেখেছিস আজ?
রুমেলা মুচকি হেসে বলল,হেভি দেখতে লাগছে আজ মাইরি।কি ডায়েট করে ভাবছি একদিন জিজ্ঞেস করবো। হি-হি-হি।
ছাত্রীমহলে অঞ্জনা ম্যাম ওয়াহিদা রেহমান বলে পরিচিত। . বলেই সম্ভবত এই রকম নামকরণ।অবশ্য দেখতেও কম সুন্দরী নন।আড়ালে আবডালে বললেও অধ্যাপিকাদের কানেও এসেছে কথাটা।তাদের ধারণা স্বামী নেই বলেই মেয়েরা খাদিজাকে এই নাম দিয়েছে।
ক্লাস নেবার সময় খাদিজা আক্তার লক্ষ্য করেছে ছাত্রীরা কেমন হা-করে তার দিকে চেয়ে থাকে দেখে বোঝা যায় না তার কথা শুনছে না তাকে দেখছে।কালো চশমার আড়ালে চোখ ঢাকার মত এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখাই খাদিজার পছন্দ।কিন্তু সহ কর্মীদের বায়না যেভাবে উত্তরোত্তর বাড়ছে তার জন্য কিছু একটা না করলেই নয়।স্বামীকে দেখতে চায়,বললে তার বাড়ীতে যেতেও তাদের আপত্তি নেই।প্রথম প্রথম মজা লাগলেও ব্যাপারটা এমন গম্ভীর পর্যায়ে চলে যাবে আগে জানলে খাদিজা স্বামীর কথা বানিয়ে বানিয়ে বলতো না।
পল্টুর আউটডোরে ডিউটি ছিল বেয়ারা এসে জানালো,স্যার আপনার ফোন।
পল্টুর ভ্রু কুচকে গেল।সকালে মামার সঙ্গে মমের কি কথা হয়েছে কিছুটা শুনে এসেছে।আবার কি হল? দিন দিন মামা কেমন বদলে যাচ্ছে।পল্টু গিয়ে ফোন ধরে বলল,হ্যালো?কে মম?
--খাদিজা বেগম।
--ওহ তুমি? পল্টু স্বস্তির শ্বাস ফেলল।হ্যা বলো।
--কি করছো?
--গা চুলকাচ্ছি।
---হি-হি-হি।ইয়ার্কি না,তুমি একবার কলেজে আসতে পারবে?
--এখন?পল্টু বিস্মিত হয়।
--না না এখন নয় তুমি ফ্রি হলে।তুমি হাসপাতাল থেকে কখন বেরোবে?
--আমার ইন্টার্নিশিপ শেষ এখন অফশন্যাল ডিউটি করছি।কখন গেলে তোমার সুবিধে হয়?
কিছুক্ষণ নীরবতা তারপর শোনা গেল,দেব আছো তো?
--হ্যা আছি তাড়াতাড়ি বলো,আমি ডিউটি থেকে এসেছি।
--স্যরি,তুমি চারটের মধ্যে আসতে পারবে?
--ঠিক আছে।পল্টু ফোন ছেড়েদিল।
--হ্যালো -হ্যালো-হ্যালো--যাঃ ফোন ছেড়ে দিয়েছে।খাদিজা ভেবেছিল কেন আসতে বলছে তার কিছুটা আভাস দিয়ে রাখবে।
না হলে বোকাটা সব গড়বড় না করে দেয়। হাসি-হাসি মুখে ফিরতে মিসেস ব্যানার্জি জিজ্ঞেস করে,কি আসছে তো?
--বলল তো আসবে এখন হাসপাতালের রোগী ছেড়ে কখন আসবে....বলেছি চারটের পর হলে আসতে হবে না।
--তার মানে আবার সাসপেন্স?শ্রীময়ী বলল।
দেবমামা তাকে ভাবে অহঙ্কারি।আসলে পল্টু খাজুরে আলাপ করতে পারে না। আজ পর্যন্ত সে কখনও মামার অবাধ্য হয় নি। অহঙ্কারি নয় বলা যায় সবার মত মিশুকে নয়।এখন যে যেমনভাবে ব্যাখ্যা করে।কেউ যদি জিজ্ঞেস করে,কেমন আছো? তার উত্তর ভালো বড়জোর ভাল আছি। এর বেশি কি বলা যায় পল্টু জানে না।এখানেই লোকের বিরক্তি,একটু কথা বলতে গেল পাত্তাই দিল না।
চারটে বাজতে কয়েক মিনিট দুয়েকটা স্পেশাল ক্লাস হয়ত হচ্ছে,কলেজ ছুটি বলা যেতে পারে। খাদিজা অস্বস্তি বোধ করে। দিদিমণিরাও ব্যাগ গুছিয়ে তৈরী।আঙ্গুরদি এসে খবর,অঞ্জনাদি আপনাকে ডাকছে।
অঞ্জনা তড়িঘড়ি উঠে বাইরে বেরোতে দেখল উস্কোখুস্কো এলোমেল চুল মুর্তিমান দাড়িয়ে,অঞ্জনা কাছে গিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে ঠিক করে দিয়ে বলে,বেরোবার আগে আয়নায় একবার মুখ দেখে বেরোতে পারো না?সব সময় কে তোমার সঙ্গে থাকবে?
--তোমার কাছে আয়না আছে?পল্টু ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে।
অঞ্জনা মনে মনে ভাবে অসহ্য কাকে কি বলতে যাওয়া,মুখে বলে,শোনো আমার সহকর্মীরা স্বামীকে দেখতে চায়।তাই তোমাকে ডেকেছি।
পল্টুর মজা লাগে বলে,তাই?দ্যাখো কেমন অভিনয় করি।
--মানে? অভিনয় করি মানে?আমি তোমার বেগম নই?চোখ কটা করে তাকায় অঞ্জনা।
--স্যরি।আচ্ছা ওইটাই কিভাবে করি দেখো।লজ্জিত হয়ে পল্টু বলে।
উফ দেবকে ডাকা ভুল হয়েছে অঞ্জনা বুঝতে পারে,এখন সেকথা ভেবে লাভ নেই। অঞ্জনা বলল,তোমাকে কিছু করতে হবে না আমি যা বলবো তুমি সায় দেবে।
অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে এসে শ্রীময়ী অবাক এই কি অঞ্জনার স্বামী?অঞ্জনা সুন্দরী স্বীকার করছে তাই বলে ঐটুকু ছেলে ওর স্বামী?নাকি কাউকে ধরে স্বামী সাজিয়ে নিয়ে এল সিনেমার মতো?
ওরা ঘরে ঢুকলো। দেব তার গা ঘেষে রয়েছে অঞ্জনা মৃদু ঠেলে তাকে সরিয়ে দিয়ে বলল, ড.আনঙ্গ দেব সোম আর....।এইভাবে একে একে সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল অঞ্জনা।
একটা বিশাল টেবিল চারপাশে চেয়ার পাতা। একদিকে পল্টু এবং খাদিজা আক্তার পাশাপাশি বসে। অন্যান্য অধ্যাপিকারা তাদের ঘিরে বসেছে। আগে বলা ছিল আঙ্গুরদি সবাইকে চা দিয়ে গেল। খাদিজা বলল,আমরা চা খেয়ে উঠবো।
--দাড়ান ম্যাডাম অত ব্যস্ততার কি হল?
চায়ে চুমুক দিতে দিতে শ্রীময়ি জিজ্ঞেস করে,ড.সোম আপনি তো * ?
--হ্যা জন্ম সুত্রে আমি তাই।
--অঞ্জনা তো .।
--আপনার যা নাম আপনার স্বামীর নাম অবশ্যই ভিন্ন কিন্তু আপনারা স্বামী-স্ত্রী।
--নাম আর ধর্ম কি এক হল?
--এক নয় কিন্তু দুটোই আরোপিত। মানে আপনার অন্য নাম হতে পারতো বা আপনি অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারতেন।তাহলেও আপনি যা তাই থাকতেন। আপনারা যেমন তেমনি আমরাও স্বামী-স্ত্রী।পল্টূ হাতটা অঞ্জনার কাধে তুলে দিল।
সবার সামনে এভাবে কাধে দেওয়ায় বিব্রত অঞ্জনা হাত সরিয়ে দিয়ে মাথা নীচু করে ভাবছে বোকাটা বেশ কথা বলতে পারে।ব্যাপারটা সবার নজরে পড়ে মিসেস ব্যানার্জি পাশে বসা সরিতাদিকে চিমটি কেটে বুঝিয়ে দিল।
--ড.সোম শুনেছি আপনারা একসঙ্গে থাকেন না।সরিতা ম্যাডাম জিজ্ঞেস করে।
--ঠিক শুনেছেন।আমার বেগমের ইচ্ছে পোষ্ট গ্রাজুয়েট করার পর একসঙ্গে থাকবো। এই সপ্তাহে সেজন্য দিল্লী যাচ্ছি।
অঞ্জনা অবাক হল দেব তো তাকে এসব বলেনি।
--বেগমের ইচ্ছে? আপনার কোনো ইচ্ছে নেই?
--অবশ্যই আছে।সবারই স্বতন্ত্র ইচ্ছে থাকে।
--আপনাদের ইচ্ছের মধ্যে কখনো সংঘাত হয় না?
পল্টু একবার অঞ্জনার দিকে তাকালো তারপর বলল, আসলে কি জানেন আমি যখন ভাবি এইটা করবো আমার বেগম ঠিক তখন সেটাই করতে বলে। যার ফলে এখনো পর্যন্ত সংঘাতের অবকাশ হয়নি।
সবাই হো-হো করে হেসে উঠলো।অঞ্জনা উঠে দাড়ালো কোন কথা থেকে কোন কথা এসে পড়ে সারাক্ষণ সেই চিন্তায় ছিল শঙ্কিত।দেবকে নিয়েও তার ভয় কম ছিল না এমন সাদাসিধে কি বলতে কি বলে দেয়। ব্যাগ থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে লাগায়।
একসময় শ্রীময়ী কাছে এসে ফিস ফিস করে বলে,তোকে সামলাতে পারে তো?
খাদিজার কান লাল হয় তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,তোর কাছে পাঠাবো? পরীক্ষা করে দেখবি?
শ্রীময়ী দমবার পাত্রী নয় বলল,আমার আপত্তি নেই কিন্তু তুই কি পারবি পাঠাতে?
অঞ্জনা চোখ পাকায় শ্রীময়ী দুষ্টু হেসে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো।
পল্টুর হাতে ব্যাগ দিয়ে খাদিজা বাথরুমে গেল।শ্রীময়ীর কথাগুলো মনে মনে নাড়াচাড়া করে।বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল সবাই চলে গেছে।দুজনে নীচে নামল।
কাল রাতে বাড়ি ফিরে চিঠিটা পেল। খামের উপর লেখা AIIMS,New Delhi. মনোরমা চিঠিটা হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, কিসের চিঠিরে?ইচ্ছে করলেই মম চিঠিটা খুলতে পারতো কিন্তু অদম্য কৌতুহল সত্বেও খোলেনি।এইখানেই মমের বৈশিষ্ট্য। চিঠীটা খুলে ভাবে পল্টু কিভাবে খবরটা মমকে বলবে?কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে অনুমান করার চেষ্টা করে।
--মম তোমাকে ছেড়ে আমি যদি দিল্লী চলে যাই?
--তুই কি সেখানে মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিস?মমের চোখে মুখে খুশির ঝলক। দেখি তো চিঠিটা।
মনোরমা হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নিয়ে চোখ বোলাতে লাগল।তারপর মুখ তুলে বলল,ও ইণ্টারভিউ?
--তোমার একা থাকতে কষ্ট হবে না?
মনোরমা হেসে কি ভাবলো তারপর পল্টুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,তোকে জন্ম দেবার সময় কম কষ্ট পাইনি কিন্তু সেই কষ্টের মধ্যে একটা সুখের আকাঙ্খা ছিল। তুই বড় হ তোর বাপির কাছাকাছি যাবার চেষ্টা কর একজন মা আর বেশি কি চাইতে পারে।
কাল রাতে এইসব কথা হয়েছিল।মমকে দেখে খুবই সাদামাটা বাঙালি ঘরণী বলে মনে হয় কিন্তু কাছ থেকে না দেখলে মমের ব্যক্তিত্ব তেজস্বীতা কণামাত্র কেউ আন্দাজ করতে পারবে না।বাথরুমে ঢুকে শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে এই সব কথাই ভাবছিল পল্টু। গলার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে উপরে মামা এসেছে।
দেবব্রত বাজারের ব্যাগ নামিয়ে দিয়ে বলল,মনো তুই যে আমার মায়ের পেটের বোন এক একসময় আমার সন্দেহ হয়। দেবব্রত বলল।
মনোরমা দাদার দিকে তাকিয়ে হাসল।
--হাসির কথা নয়,আমি সোজাসুজি জানতে চাই আমরা একসঙ্গে থাকি তা কি তোর ইচ্ছে নয়।
মনোরমা গম্ভীর হয়ে দাদার আপাদ মস্তক লক্ষ্য করে,পল্টু বাথরুমে কান খাড়া মম কি বলে শোনার জন্য। মমের গলা শুনতে পেল।
--দ্যাখো দাদা তুমি নিজের ইচ্ছেতে এখানে এসেছো আমি তোমাকে ডাকিনি। এখন আমার চাওয়া না-চাওয়ার কথা আসছে কেন? তোমার যাতে ভাল হয় তুমি করবে আমি কে বাঁধা দিতে যাবো?
--ও যা শুনেছি তাহলে সেটা ভুল শুনিনি?
--কি শুনেছো আমি জানি না কিন্তু এখন যা বললাম তা তো তুমি নিজের কানে শুনলে।
--ঠিক আছে কাল থেকে আমি তোর বাজার করতে পারবো না। দেবব্রত হন হন করে নীচে নেমে গেল।
স্বামীকে ফিরতে দেখে বাসন্তী এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইল,হ্যা গো ঠাকুর-ঝি কি বললো?
--তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য--একটু মানিয়ে চলতে পারো না?
--ওমা আমি কি করলাম? বাসন্তী স্বামীর উত্তেজনার কারণ বুঝতে পারে না।
--এবার গাটের কড়ি খরচ করে বাজার করো,বলে না সুখে থাকতে ভুতে কিলোয়। গলা চড়িয়ে বলল,ঠিক আছে মানুষের ভাল করতে নেই।কি না করেছি আজ তার উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেয়ে গেলাম।
পল্টু বাথরুম থেকে বেরিয়ে বলল,মম তুমি একী করলে? তাহলে তো সব ছেড়ে আমাকে বাড়ি বসে থাকতে হবে।
--তুমি থাকবে কেন ছোড়দা,কিচছু ভেবো না তোমার মিতা মাসী আছে কোন কামে?মিতা আর কথা বাড়ায় না মনোরমার সঙ্গে চোখাচুখি হতে।তার মালকিন একেবারে আলাদা ডাক্তারবাবু চলে যাবার পর মনের মধ্যে ঝড় উঠলেও বাইরে একেবারে শান্ত।
এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল অথচ মমকে দেখে বোঝার উপায় নেই। মিতামাসীকে বেশ খুশি মনে হল। যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
--ছোড়দা তোমাকে ভাত দিই?মিতামাসী জিজ্ঞেস করে।
দেবব্রত মনে মনে ঠিক করে অবস্থা একটূ শান্ত হলে মনোকে বলে ব্যাপারটা মিটিয়ে নিতে হবে।বাসন্তী ভাবে রাতে শোবার আগে মেজাজ ঠাণ্ডা করে দেবে। ভগবান সব মেয়েকেই একটা ব্রহ্মাস্ত্র দিয়েছে, পুরুষ মানুষকে কি ভাবে ঠান্ডা করতে হয় তার ভালই জানা আছে।
কলেজে ক্লাস চলছে। কেতকি পিছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,এ্যাই রুমেলা ওয়াহিদা রেহমানকে দেখেছিস আজ?
রুমেলা মুচকি হেসে বলল,হেভি দেখতে লাগছে আজ মাইরি।কি ডায়েট করে ভাবছি একদিন জিজ্ঞেস করবো। হি-হি-হি।
ছাত্রীমহলে অঞ্জনা ম্যাম ওয়াহিদা রেহমান বলে পরিচিত। . বলেই সম্ভবত এই রকম নামকরণ।অবশ্য দেখতেও কম সুন্দরী নন।আড়ালে আবডালে বললেও অধ্যাপিকাদের কানেও এসেছে কথাটা।তাদের ধারণা স্বামী নেই বলেই মেয়েরা খাদিজাকে এই নাম দিয়েছে।
ক্লাস নেবার সময় খাদিজা আক্তার লক্ষ্য করেছে ছাত্রীরা কেমন হা-করে তার দিকে চেয়ে থাকে দেখে বোঝা যায় না তার কথা শুনছে না তাকে দেখছে।কালো চশমার আড়ালে চোখ ঢাকার মত এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখাই খাদিজার পছন্দ।কিন্তু সহ কর্মীদের বায়না যেভাবে উত্তরোত্তর বাড়ছে তার জন্য কিছু একটা না করলেই নয়।স্বামীকে দেখতে চায়,বললে তার বাড়ীতে যেতেও তাদের আপত্তি নেই।প্রথম প্রথম মজা লাগলেও ব্যাপারটা এমন গম্ভীর পর্যায়ে চলে যাবে আগে জানলে খাদিজা স্বামীর কথা বানিয়ে বানিয়ে বলতো না।
পল্টুর আউটডোরে ডিউটি ছিল বেয়ারা এসে জানালো,স্যার আপনার ফোন।
পল্টুর ভ্রু কুচকে গেল।সকালে মামার সঙ্গে মমের কি কথা হয়েছে কিছুটা শুনে এসেছে।আবার কি হল? দিন দিন মামা কেমন বদলে যাচ্ছে।পল্টু গিয়ে ফোন ধরে বলল,হ্যালো?কে মম?
--খাদিজা বেগম।
--ওহ তুমি? পল্টু স্বস্তির শ্বাস ফেলল।হ্যা বলো।
--কি করছো?
--গা চুলকাচ্ছি।
---হি-হি-হি।ইয়ার্কি না,তুমি একবার কলেজে আসতে পারবে?
--এখন?পল্টু বিস্মিত হয়।
--না না এখন নয় তুমি ফ্রি হলে।তুমি হাসপাতাল থেকে কখন বেরোবে?
--আমার ইন্টার্নিশিপ শেষ এখন অফশন্যাল ডিউটি করছি।কখন গেলে তোমার সুবিধে হয়?
কিছুক্ষণ নীরবতা তারপর শোনা গেল,দেব আছো তো?
--হ্যা আছি তাড়াতাড়ি বলো,আমি ডিউটি থেকে এসেছি।
--স্যরি,তুমি চারটের মধ্যে আসতে পারবে?
--ঠিক আছে।পল্টু ফোন ছেড়েদিল।
--হ্যালো -হ্যালো-হ্যালো--যাঃ ফোন ছেড়ে দিয়েছে।খাদিজা ভেবেছিল কেন আসতে বলছে তার কিছুটা আভাস দিয়ে রাখবে।
না হলে বোকাটা সব গড়বড় না করে দেয়। হাসি-হাসি মুখে ফিরতে মিসেস ব্যানার্জি জিজ্ঞেস করে,কি আসছে তো?
--বলল তো আসবে এখন হাসপাতালের রোগী ছেড়ে কখন আসবে....বলেছি চারটের পর হলে আসতে হবে না।
--তার মানে আবার সাসপেন্স?শ্রীময়ী বলল।
দেবমামা তাকে ভাবে অহঙ্কারি।আসলে পল্টু খাজুরে আলাপ করতে পারে না। আজ পর্যন্ত সে কখনও মামার অবাধ্য হয় নি। অহঙ্কারি নয় বলা যায় সবার মত মিশুকে নয়।এখন যে যেমনভাবে ব্যাখ্যা করে।কেউ যদি জিজ্ঞেস করে,কেমন আছো? তার উত্তর ভালো বড়জোর ভাল আছি। এর বেশি কি বলা যায় পল্টু জানে না।এখানেই লোকের বিরক্তি,একটু কথা বলতে গেল পাত্তাই দিল না।
চারটে বাজতে কয়েক মিনিট দুয়েকটা স্পেশাল ক্লাস হয়ত হচ্ছে,কলেজ ছুটি বলা যেতে পারে। খাদিজা অস্বস্তি বোধ করে। দিদিমণিরাও ব্যাগ গুছিয়ে তৈরী।আঙ্গুরদি এসে খবর,অঞ্জনাদি আপনাকে ডাকছে।
অঞ্জনা তড়িঘড়ি উঠে বাইরে বেরোতে দেখল উস্কোখুস্কো এলোমেল চুল মুর্তিমান দাড়িয়ে,অঞ্জনা কাছে গিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে ঠিক করে দিয়ে বলে,বেরোবার আগে আয়নায় একবার মুখ দেখে বেরোতে পারো না?সব সময় কে তোমার সঙ্গে থাকবে?
--তোমার কাছে আয়না আছে?পল্টু ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে।
অঞ্জনা মনে মনে ভাবে অসহ্য কাকে কি বলতে যাওয়া,মুখে বলে,শোনো আমার সহকর্মীরা স্বামীকে দেখতে চায়।তাই তোমাকে ডেকেছি।
পল্টুর মজা লাগে বলে,তাই?দ্যাখো কেমন অভিনয় করি।
--মানে? অভিনয় করি মানে?আমি তোমার বেগম নই?চোখ কটা করে তাকায় অঞ্জনা।
--স্যরি।আচ্ছা ওইটাই কিভাবে করি দেখো।লজ্জিত হয়ে পল্টু বলে।
উফ দেবকে ডাকা ভুল হয়েছে অঞ্জনা বুঝতে পারে,এখন সেকথা ভেবে লাভ নেই। অঞ্জনা বলল,তোমাকে কিছু করতে হবে না আমি যা বলবো তুমি সায় দেবে।
অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে এসে শ্রীময়ী অবাক এই কি অঞ্জনার স্বামী?অঞ্জনা সুন্দরী স্বীকার করছে তাই বলে ঐটুকু ছেলে ওর স্বামী?নাকি কাউকে ধরে স্বামী সাজিয়ে নিয়ে এল সিনেমার মতো?
ওরা ঘরে ঢুকলো। দেব তার গা ঘেষে রয়েছে অঞ্জনা মৃদু ঠেলে তাকে সরিয়ে দিয়ে বলল, ড.আনঙ্গ দেব সোম আর....।এইভাবে একে একে সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল অঞ্জনা।
একটা বিশাল টেবিল চারপাশে চেয়ার পাতা। একদিকে পল্টু এবং খাদিজা আক্তার পাশাপাশি বসে। অন্যান্য অধ্যাপিকারা তাদের ঘিরে বসেছে। আগে বলা ছিল আঙ্গুরদি সবাইকে চা দিয়ে গেল। খাদিজা বলল,আমরা চা খেয়ে উঠবো।
--দাড়ান ম্যাডাম অত ব্যস্ততার কি হল?
চায়ে চুমুক দিতে দিতে শ্রীময়ি জিজ্ঞেস করে,ড.সোম আপনি তো * ?
--হ্যা জন্ম সুত্রে আমি তাই।
--অঞ্জনা তো .।
--আপনার যা নাম আপনার স্বামীর নাম অবশ্যই ভিন্ন কিন্তু আপনারা স্বামী-স্ত্রী।
--নাম আর ধর্ম কি এক হল?
--এক নয় কিন্তু দুটোই আরোপিত। মানে আপনার অন্য নাম হতে পারতো বা আপনি অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারতেন।তাহলেও আপনি যা তাই থাকতেন। আপনারা যেমন তেমনি আমরাও স্বামী-স্ত্রী।পল্টূ হাতটা অঞ্জনার কাধে তুলে দিল।
সবার সামনে এভাবে কাধে দেওয়ায় বিব্রত অঞ্জনা হাত সরিয়ে দিয়ে মাথা নীচু করে ভাবছে বোকাটা বেশ কথা বলতে পারে।ব্যাপারটা সবার নজরে পড়ে মিসেস ব্যানার্জি পাশে বসা সরিতাদিকে চিমটি কেটে বুঝিয়ে দিল।
--ড.সোম শুনেছি আপনারা একসঙ্গে থাকেন না।সরিতা ম্যাডাম জিজ্ঞেস করে।
--ঠিক শুনেছেন।আমার বেগমের ইচ্ছে পোষ্ট গ্রাজুয়েট করার পর একসঙ্গে থাকবো। এই সপ্তাহে সেজন্য দিল্লী যাচ্ছি।
অঞ্জনা অবাক হল দেব তো তাকে এসব বলেনি।
--বেগমের ইচ্ছে? আপনার কোনো ইচ্ছে নেই?
--অবশ্যই আছে।সবারই স্বতন্ত্র ইচ্ছে থাকে।
--আপনাদের ইচ্ছের মধ্যে কখনো সংঘাত হয় না?
পল্টু একবার অঞ্জনার দিকে তাকালো তারপর বলল, আসলে কি জানেন আমি যখন ভাবি এইটা করবো আমার বেগম ঠিক তখন সেটাই করতে বলে। যার ফলে এখনো পর্যন্ত সংঘাতের অবকাশ হয়নি।
সবাই হো-হো করে হেসে উঠলো।অঞ্জনা উঠে দাড়ালো কোন কথা থেকে কোন কথা এসে পড়ে সারাক্ষণ সেই চিন্তায় ছিল শঙ্কিত।দেবকে নিয়েও তার ভয় কম ছিল না এমন সাদাসিধে কি বলতে কি বলে দেয়। ব্যাগ থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে লাগায়।
একসময় শ্রীময়ী কাছে এসে ফিস ফিস করে বলে,তোকে সামলাতে পারে তো?
খাদিজার কান লাল হয় তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,তোর কাছে পাঠাবো? পরীক্ষা করে দেখবি?
শ্রীময়ী দমবার পাত্রী নয় বলল,আমার আপত্তি নেই কিন্তু তুই কি পারবি পাঠাতে?
অঞ্জনা চোখ পাকায় শ্রীময়ী দুষ্টু হেসে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো।
পল্টুর হাতে ব্যাগ দিয়ে খাদিজা বাথরুমে গেল।শ্রীময়ীর কথাগুলো মনে মনে নাড়াচাড়া করে।বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল সবাই চলে গেছে।দুজনে নীচে নামল।