27-02-2020, 10:21 AM
(25-02-2020, 09:01 PM)riank55 Wrote: Update No. 57 (date 27.7.2018)
সে’কথা শুনে সরলাদেবীর নিজের বুকটাও খুশীতে ভরে উঠেছিল সেদিন। মনে মনে তিনি আরেকবার
সীমন্তিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। সীমন্তিনী না থাকলে এ সোনার লক্ষ্মী প্রতিমা কি তাদের সংসারে আসতো?
সবাই দোকানে আর কলেজে চলে যাবার পর রচনার ফুরসত হয় সকালের চা খাবার। তার তিন শাশুড়িমাও সকালের চা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। রচনার সাথে একসাথে বসে চা খান তারা সবাই। তারপরই শুরু হয় রান্নাবান্নার কাজ। রান্নার রাঁধুনি থাকলেও, রচনা রোজ একটা না একটা কিছু রাঁধবেই। রান্নার হাতটাও বড় সুন্দর তাদের বড়বৌমার। যাই রাঁধুক সবই কেমন অপূর্ব সুস্বাদু হয়ে থাকে। সকলেই চেটে পুটে খায়। তিন শাশুড়িমার সাথে চা খেয়েই তাদেরকে আর রান্না ঘরে থাকতে দেয় না রচনা। তারা যে যার ঘরের কাজকর্ম করতে বাধ্য হয়। দুপুরে তিন শ্বশুরমশাইকে খেতে দিতে হয় রচনাকেই। বৌমার হাত ছাড়া আর কারুর হাত থেকে ভাতের থালা নিতে তারা প্রস্তুত নন কেউই।
রচনার মনে কিন্তু কোন ক্ষোভ নেই। সবার সব ফরমাস পুরো করে সেও খুব খুশী হয়। এমন সুন্দর স্বামী আর শ্বশুর বাড়ি পেয়ে সে রোজ ঠাকুর প্রণাম করবার সময় মনে মনে সে তার দিদিভাইকেও প্রণাম করে। দিদিভাই ছিলেন বলেই না এমন একটা শ্বশুর বাড়ি সে পেয়েছে। কিন্তু তাদের দ্বিরাগমনের পর আর একটা দিনের জন্যেও তার দিদিভাইয়ের সাথে তার দেখা হয়নি। দ্বিরাগমনে যাবার দিন সে তার দিদিভাইকে শেষবার দেখেছিল। বাপের বাড়ি থেকে ফিরে এসে সে আর তাকে দেখতে পায়নি। রচনার সাথে নিয়ম করে দু’বেলা ফোনে কথা বললেও সীমন্তিনী আর কখনো বাড়ি আসেনি। তাদের বিয়ের মাস চারেক বাদেই সীমন্তিনী আইপিএস পরীক্ষায় পাশ করে জলপাইগুড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল কোলকাতায়। সেখানে এক মাসের মত থেকেই সে হায়দ্রাবাদ চলে গিয়েছে আড়াই বছরের আইপিএসের ট্রেনিং নিতে।
শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকে রচনাকে যতটা ভালবেসেছে রচনাও ঠিক তেমনি করে সবাইকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে, ভালবাসে। সকলের সব প্রয়োজনের দিকে তার তীক্ষ্ণ নজর। বিয়ের মাস খানেকের মধ্যেই সে বুঝে গিয়েছিল কার কোন সময় কোন জিনিসটার প্রয়োজন হয়। তারা বলবার আগেই রচনা তাদের হাতের কাছে সে জিনিস পৌঁছে দেয়। তাই বাড়ির ছোট বড় প্রত্যেকজন সদস্যই কোন না কোন ভাবে রচনার ওপর কিছুটা হলেও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রচনা একটা দিন কোন কারনে বাড়ির বাইরে থাকলেই সকলে যেন চোখে অন্ধকার দেখে। সকাল থেকে শুরু করে রাত এগারটা অব্দি একটু সুস্থির হয়ে বসবার সুযোগ পায় না সে। কিন্তু তার যেন তাতে কোন ক্লান্তি নেই। সর্বদাই তার মুখে মিষ্টি একটা হাঁসি যেন লেগেই আছে। তার মনে শুধু একটাই দুঃখ ছিল। তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় দিদিভাইয়ের মুখটা সে দেখতে পাচ্ছে না। দিদিভাই বিয়ের আগেই তাকে বলেছিল, রচনা যেন বিয়ের পর গ্রাজুয়েশানটা করে নেয়। কিন্তু সেটা করতে গেলে তাকে জলপাইগুড়িতে গিয়ে থাকতে হবে। রতীশ তাকে বাঁধা দেয় নি। সে বলেছিল যে সেও জলপাইগুড়ি থেকেই রোজ আসা যাওয়া করে কলেজের চাকরী করতে পারবে। কিন্তু বাড়ির সকলেই সে’কথা শুনে মুখ ভার করেছিল। রচনাও বাড়ির সকলের মনে কষ্ট দিয়ে নিজের পড়াশোনা করতে চায়নি। তাই সে আর কলেজে ভর্তি হয় নি। নিজেকে পুরোপুরি গৃহবধূ বানিয়ে তুলেই সে পরম আনন্দে দিন কাটাচ্ছিল।
প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তিতে থাকলেও অল্প কিছু সময়েই বাড়ির অন্যান্য সকলের মত রতীশও রচনার ন্যাওটা হয়ে উঠেছিল। রচনার মিষ্টি কথায় আর ব্যবহারে রতীশও তাকে ভালবাসতে শুরু করেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল সীমন্তিনী বিয়ের আগে তাকে যে’সব কথা বলেছিল, কথাগুলো একেবারে খাঁটি ছিল। আর নিজের মন থেকে রচনাকে মেনে নিতে পেরে সে আরেকবার সীমন্তিনীকে মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। ফুলশয্যার রাতে বন্ধ ঘরে রচনার শরীরটাকে নিজের দু’হাতের মধ্যে নিয়ে রতীশ ভাববার চেষ্টা করেছিল সে যেন তার মন্তিকেই বুকে জড়িয়ে আছে। তাই আট বছরের পুরনো অভ্যেসেই সে শুধু জড়িয়ে ধরা, একটু আদর করা, আদর করে দু’ একটা চুমু খাওয়া এ সবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছিল। কারন মন্তির সাথে সেই ছোট্টবেলা থেকে সে এসবই করতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু ফুলশয্যার রাতে বেশ কিছুক্ষণ সময় কেটে যাবার পর বুদ্ধিমতী রচনা তার অনভিজ্ঞ স্বামীর সীমাবদ্ধতা বুঝে গিয়েছিল। তাই একটা সময় সে নিজেই সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। আর সে রাতেই রতীশ বুঝতে পেরেছিল, বান্ধবী বা প্রেমিকার থেকে একজন স্ত্রী তার পুরুষকে কতটা বেশী করে আপন করে নিতে পারে। তাদের প্রথম মিলনের পরেই রতীশ বুঝতে পেরেছিল যে মন্তি ছোটবেলা থেকে তার প্রেমিকা হয়ে থাকলেও, সে সব সময় রতীশকে একটা সীমার ভেতরেই বেঁধে রেখেছিল। সেই ফুলশয্যার রাতেই রতীশ বুঝতে পেরেছিল যে তার আর মন্তির মধ্যে যে আদর ভালবাসার সম্পর্ক ছিল সেটা একান্তভাবেই আত্মিক ছিল। মনের গভীরে শিকড় গেঁড়ে বসলেও শারীরিক ভাবে তারা কখনোই প্রকৃত স্বামী-স্ত্রীর মত আচরণ করেনি। কিন্তু মন্তি যে তাকেই নিজের স্বামী বলে মানে এ ব্যাপারটাও সে অনেক আগে থেকেই জানত। কিন্তু বুদ্ধিমতী মন্তি খুব সতর্ক ভাবেই নিজেকে এবং রতীশকে ওই সীমারেখার বাইরে চলে যেতে দেয়নি। সেই রাতে রতীশ নিজেই বুঝতে পেরেছিল যে রচনা যেভাবে তার হাতে নিজের সর্বস্ব তুলে দিয়েছিল, সেভাবে মন্তিও যদি নিজেকে উজার করে দিত, তাহলে তাদের জীবনে কতবড় বিপর্যয় নেমে আসত। তাই প্রথম রাতের ওই মিলনের শেষেই সে মন্তিকে মনে মনে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে মন্তির নির্দেশের কথা মাথায় রেখে রচনাকে আপন করে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর তার সে সিদ্ধান্ত বজায় রাখতে রচনাও কখনও কোনওরকম কার্পণ্য করেনি। তাই রচনাকে সে সর্বতোভাবেই একাত্ম করে নিয়েছিল। রচনার ইচ্ছেতেই মধুচন্দ্রিমা সারতে বিয়ের পরের মাসেই রচনা আর রতীশ ব্যাঙ্গালোর উটি আর চেন্নাই ঘুরে এসেছে।
সীমন্তিনী আইপিএস হয়ে ২০০৯ এর আগস্ট মাসে হায়দ্রাবাদ চলে গেছে আড়াই বছরের ট্রেনিং নিতে। ২০০৯ সালের দর্গাপূজোর দিন চারেক আগে চন্দ্রকান্তবাবুর দোকানে কুরিয়ারের লোক এসে একটা বিশাল বড় কার্টন ডেলিভারি দিয়ে গেল। চন্দ্রকান্তবাবু অমন বিশাল আকারের কার্টন দেখে একটু মনে মনে অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু প্রেরকের ঠিকানায় সীমন্তিনীর নাম দেখে তিনি ডেলিভারি নিয়েছিলেন। এতবড় কার্টনে সীমন্তিনী হায়দ্রাবাদ থেকে কী পাঠাতে পারে সেটা ভাবতে ভাবতেই তার মনে হল সীমন্তিনী নিশ্চয়ই সকলের জন্য পূজোর উপহার পাঠিয়েছে। প্রচণ্ড কৌতুহল হওয়া সত্বেও সে নিজেকে সম্বরন করে ভাবলেন রাতে বাড়ি ফিরেই না হয় সকলের সামনে সেটা খোলা যাবে।
সন্ধ্যের সময় চন্দ্রকান্তবাবুর পিসিওর নাম্বারে সীমন্তিনীর ফোন এল। চন্দ্রকান্তবাবু ফোন ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই সীমন্তিনী বলল, “কাকু আমি মন্তি বলছি”।
চন্দ্রকান্তবাবু মন্তির কথা শুনে খুব উৎফুল্ল ভাবে জিজ্ঞেস করলেন, “মন্তি মা তুই? তুই ভাল আছিস তো মা”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যা গো আমি ভাল আছি। কাকু শোন, তোমার দোকানের ঠিকানায় একটা প্যাকেট পাঠিয়েছি আমি এখান থেকে। তুমি ওটা পেলে .....”
চন্দ্রকান্তবাবু তার কথার মাঝখানেই বলে উঠলেন, “তুই এটাকে প্যাকেট বলছিস? এটা তো বিশাল সাইজের একটা কার্টন রে মা”!
সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তারমানে, তুমি সেটা পেয়ে গেছ? আমি তো ভেবেছিলুম তুমি সেটা আরও দু’একদিন বাদে পাবে হয়ত। আচ্ছা, শোনো না কাকু। আমার মনে একটা সাধ ছিল যে চাকরি পেয়ে বাড়ির সকলকে কিছু না কিছু দেব। কিন্তু সিলেকশন হবার সাথে সাথেই আমাকে কলকাতা চলে আসতে হয়েছিল। আর তার পরের মাসেই হায়দ্রাবাদ চলে আসতে হল আমাকে। এখন তো এ আড়াই বছরের ট্রেনিং শেষ না হওয়া অব্দি এখান থেকে অন্য কোথাও যেতেই পারব না। এদিকে সামনে পূজো। দাদাভাইয়ের বিয়ের পর এটাই প্রথম পূজো। তাই এখান থেকেই বাড়ির সকলের জন্য কিছু কাপড় জামা পাঠালুম। তোমরা সবাই এ’সব নেবে তো? না এ অলক্ষ্মী মেয়েটার দেওয়া উপহারও তোমরা নেবে না”?
চন্দ্রকান্তবাবু হা হা করে বলে উঠলেন, “এসব তুই কী বলছিস মা? এমন আজেবাজে কথা একদম ভাববি না তুই। আমি তোকে কথা দিচ্ছি মা, আমি মেজদা আর মেজবৌদিকে সামলে নেব। তুই কিচ্ছু ভাবিস না। সবাই তোর উপহার নেবে। কেউ আপত্তি করবে না”।
সীমন্তিনী বলল, “কাকু, ছোটবেলা থেকে তোমার কাছেই শুধু আব্দার করে এসেছি। আজও আরেকটা অনুরোধ আছে গো তোমার কাছে। তুমি সেটা কিন্তু অবশ্যই রাখবে”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “তুই এমন করে কেন বলছিস রে মা? বল না কী চাই তোর”?
সীমন্তিনী বলল, “তেমন কিছু চাইনে কাকু। শুধু সামান্য একটা অনুরোধ। এ প্যাকেটটা তুমি দোকানে বা বাড়িতে গিয়ে খুলে ফেল না। বাড়ি নিয়ে গিয়ে এটা রচুর হাতে দিয়ে বোল, রচু নিজে হাতে যেন এটা খোলে। তারপর যেন যার যার হাতে জিনিসগুলো তুলে দেয়”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছে রে মা। এ আর এমন কী কথা? বড়বৌমাই এটা খুলবে। তা তুই কি বড়বৌমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেছিস”?
সীমন্তিনী বলল, “না কাকু। রচুর সাথে কথা তো রোজই বলি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি ওকে কিছু বলিনি। কিন্তু আমি জানি, আমি মনে মনে যা ভাবছি রচু ঠিক তা-ই করবে। তোমাকেও ওকে আলাদা করে কিছু বলতে হবে না। শুধু গিয়ে বোল, ও যেন নিজে হাতে প্যাকেটটা খোলে। আর যখন ও প্যাকেটটা খুলবে তখন তোমরা বাড়ির সবাই বড়ঘরে থেকো। সতুও তো বাড়ি ফিরে এসেছে। ওকেও থাকতে বোল। তাহলেই হবে”।
চন্দ্রকান্তবাবু বললেন, “ঠিক আছেরে মা। তাই করব। তুই ভাবিসনা”।
অন্যান্য দিন চন্দ্রকান্ত বাবুদের তিন ভাইই রাত ন’টার পর দোকান বন্ধ করেন। কিন্তু আজ রাত আটটা বাজতেই চন্দ্রকান্তবাবু দোকান বন্ধ করবার সময় রতীশকে বললেন, “রতু, তুই দোকানে তালা লাগিয়ে দে। তবে এ প্যাকেটটা বাইরে বের করে রাখিস। এটা বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। আমি একটু দাদাদের সাথে কথা বলে আসছি”।
বড়দা আর মেজদার সাথে কথা বলে চন্দ্রকান্তবাবু ফিরে এসে একটা রিক্সা ডেকে কার্টনটাকে নিয়ে রতীশের সাথে রিক্সায় চেপে বসলেন। বাড়ি এসে রতীশের সাহায্যে কার্টনটাকে নিয়ে বড় ঘরে রেখে রচনাকে ডেকে বললেন, “বড়বৌমা, মন্তি হায়দ্রাবাদ থেকে এ প্যাকেটটা পাঠিয়েছে। কিন্তু ফোনে আমাকে বলেছে যে প্যাকেটটা যেন বাড়ির আর কেউ না খোলে। এটা খোলবার দায়িত্ব সে তোমাকে দিয়েছে। বড়দা মেজদা এলে আজ এ ঘরেই সবাইকে চা খেতে দিও। তারপর প্যাকেটটা খুলো”।
রচনা একটু অবাক হল ছোটকাকুর কথা শুনে। একটু আগেও তো দিদিভাই তার সাথে ফোনে কথা বলেছেন! কিন্তু এ ব্যাপারে তো কিছু বলেননি তিনি! আন্দাজ করাই যাচ্ছে যে তিনি হায়দ্রাবাদ থেকে বাড়ির লোকদের জন্যে কিছু পূজোর উপহার পাঠিয়েছেন। কিন্তু প্যাকেটটা তাকেই খুলতে বলেছেন ভেবে একটু অবাকই হল। প্যাকেটটার দিকে তাকিয়ে দেখল ছোটকাকুর নামেই প্যাকেটটা এসেছে। হঠাতই তার মনে হল, সে তার দিদিভাইয়ের মনের ইচ্ছেটা বুঝতে পেরেছে। নিজের মনের ভাব মনেই লুকিয়ে রেখে সে বলল, “ঠিক আছে ছোটকাকু। আমি আগে তোমাদের সবার জন্যে চা টা বানিয়ে আনি। তারপর এটা খুলছি। কিন্তু বাবা আর বড়কাকু বাড়ি এলেই তো এটা খুলব? নাকি”?
চন্দ্রকান্তবাবু নিজেদের ঘরের দিকে যেতে যেতে বললেন, “আমি দাদাদের বলে এসেছি। তারাও এক্ষুনি এসে পড়বেন মা”।
মিনিট দশেকের ভেতরেই বাড়ির সবাই এসে বড় ঘরে হাজির হল। বাড়ির তিন কর্তা হাত মুখ ধুয়ে সে ঘরে এসে হাজির হয়েছেন। বাড়ির তিন গিন্নী আর ভাইবোনেরাও চন্দ্রকান্তবাবুর নির্দেশ ওই ঘরে এসে বসেছে। রচনা মমতার সাথে সবার জন্য চা জল খাবার নিয়ে ঘরে এসে সকলের হাতে দিয়ে মেঝেয় পেতে রাখা মাদুরের ওপর বসে কার্টনটা খুলতে শুরু করল। কার্টনটার ভেতরে বড় ছোট নানা ধরণের অনেক গুলো প্যাকেট দেখা গেল। সবার ওপরের প্যাকেটটার গায়ে একটা স্টিকার লাগানো আছে। আর তাতে মার্কার পেন দিয়ে লেখা “জেঠু”। সে প্যাকেটটা বের করে শ্বশুর মশাইয়ের হাতে দিয়ে নিচু হয়ে তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।
রতিকান্তবাবু বললেন, “একি বড়বৌমা, তুমি প্রণাম করছ কেন”?
রচনা একটু হেসে বলল, “বাবা, দিদিভাই তো এজন্যেই আমাকে প্যাকেটটা খুলতে বলেছেন। তিনি জানেন যে আমি এ উপহারগুলো তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে তার হয়ে আমি তোমাদের প্রণাম করব। তাই আমার এ প্রণামটা স্বীকার করে তোমরা সবাই আশীর্বাদটা আমার দিদিভাইকে কোর। দিদিভাই মনে মনে এটাই চেয়েছেন”।
ঘরের প্রায় সকলেই রচনার কথা শুনে অবাক হল। বাড়ির বড়মেয়েটা আট দশ বছর ধরে বাড়ির বাইরে বাইরে কাটাচ্ছে। বাড়ির কেউ কেউ মেয়েটা ভাল আছে কি না, সুস্থ আছে কি না, এ কথা ভাবলেও তার ইচ্ছে অনিচ্ছার কথা কেউ ভেবে দেখেনি কোনদিন। আর তাদের বাড়ির সবচেয়ে নতুন সদস্য তাদের বড়বৌমা তাদের বড়খুকির মনের ইচ্ছেটা কত সহজেই না বুঝে ফেলল। রতিকান্তবাবু বড়বৌমার মাথায় হাত দিয়ে চোখ বুজে সীমন্তিনীকে আশীর্বাদ করলেন। সেই সঙ্গে তার বড়বৌমাকেও।
রচনা এরপর এক এক করে সকলের নাম লেখা প্যাকেটগুলো যার যার হাতে তুলে দিল। বয়োজ্যেষ্ঠ সবাইকে প্রণাম করল, আর ছোটদের কপালে চুমু খেয়ে আদর করল। মেজকাকু আর মেজমাও তাদের প্যাকেটগুলো নিয়ে রচনার প্রণাম স্বীকার করে দু’হাত কপালে ঠেকিয়ে ঈশ্বরের কাছে মনে মনে বুঝি কোন প্রার্থনা করলেন।
মমতাদির নামেও একটা প্যাকেট ছিল। আর বাগানের মালী আর ক্ষেতের কাজের দু’জনের জন্যেও দুটো প্যাকেট ছিল। সীমন্তিনীর দেওয়া উপহার সকলের হাতে তুলে দেবার পর রচনার নাম লেখা প্যাকেটটা বের হল। তারপর আরেকটা বড় প্যাকেট বের হল। তার গায়ে লেখা আছে কালচিনি। রচনা সেটা বুকে চেপে ধরে কেঁদে ফেলল। নিজের বুকের ভেতর থেকে উথলে ওঠা কান্নার বেগকে কোন ভাবেই আর সামলাতে পারল না সে। সরলাদেবী তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে দিতে বললেন, “কাঁদিস নে মা। কাঁদিস নে। জানি তো, তোর দিদিভাইকে না দেখে তুই মনে মনে খুব কষ্টে আছিস। আমরাও কি ওকে দুরে রেখে সুখে আছি রে মা? কিন্তু আমরা কে আর কি করতে পারি বল? ও যে নিজে স্বেচ্ছায় আমাদের সকলের কাছ থেকে দুরে চলে গেছে রে। তুই কাঁদিস নে মা”।
সতীশ পরিস্থিতি সামাল দিতে বলল, “আচ্ছা মা, দিদির এ উপহার পেয়ে আমারও তো তাকে প্রণাম করা উচিৎ। তোমরা তো বৌদিভাইকে আশীর্বাদ দিয়েই দিদিকে আশীর্বাদ করলে। তাহলে আমিও বৌদিভাইকে প্রণাম করলেই তো দিদি সে প্রণামটা পেয়ে যাবে তাই না”?
রচনা সতীশের এ কথা শুনেই সরলাদেবীর পেছনে লুকোতে লুকোতে বলল, “মামনি, তোমার এই ছোট ছেলেটাকে ভাল করে বুঝিয়ে দাও, আমি তার থেকে বয়সে ছোট। আর বয়সে ছোট না হলেও আমি তার প্রণাম নিতুম না। সূর্য্য, চঞ্চু, চন্দু ওদের সবাইকে আমি নিজের ভাই বোনের মত স্নেহ করি। তাই ওরাও যেন কেউ আমাকে প্রণাম না করে”।
এমন সময় সূর্য্য বলে উঠল, “কিন্তু বৌমণি, দিদির এ উপহারটা পেয়ে তাকে যে একবার খুব প্রণাম করতে ইচ্ছে করছে আমার”।
রচনা সূর্য্যর হাত ধরে বলল, “ভাই, তুমি ঠাকুরঘরে গিয়ে ঠাকুরকে প্রণাম কর। তাহলেই দিদিভাইকে প্রণাম করা হবে, যাও”।
চঞ্চল আর চন্দ্রিকাও সাথে সাথে লাফিয়ে উঠল, “আমরাও করব তাহলে”।
চন্দ্রাদেবী বললেন, “ঠিক আছে, তোমরা সবাই গিয়ে ঠাকুরকে প্রণাম করে বল ঠাকুর যেন তোমাদের বড়দিকে ভাল রাখেন। যাও”।
সরলাদেবী তার স্বামীকে বললেন, “হ্যাগো, একটা প্যাকেট তো বেয়াই বেয়ানদের জন্যেও পাঠিয়েছে মন্তি। পুজো তো সামনের সপ্তাহেই। তবে এটা কালচিনি পাঠাবার ব্যবস্থা কি করবে”?
রতিকান্তবাবু বললেন, “সতুকে কাল পাঠিয়ে দেব’খন। তাহলেই তো হল। কাল সকালে গিয়ে ও না’হয় কালই ফিরে আসবে। আর থাকতে চাইলে রাতটা না হয় থেকেই আসবে”।
______________________________
ss_sexy
speechless