Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#41
(Update No. 63 dt. 29.7.2018)

রাস্তায় বেরিয়ে বাস স্টপের দিকে হাঁটতে হাঁটতে পকেট থেকে ফোন বের করে সেটাকে সুইচ অফ করে দিল। নিজে কাউকে ফোন না করলেও রচনা, মন্তি বা বাড়ির অনেকেই এখন ফোন করবে তাকে, সে সেটা জানে। এখানে রাস্তায় এ’সময় প্রচণ্ড ভিড়। সিটি বাসেও নিশ্চয়ই ভিড় হবে। তাই ফ্ল্যাটে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সে আর কারো সাথে কথা বলতে চাইল না। এবার তাকে বাড়ি ফিরতেই হবে। রচনা এসব ব্যাপার কিছু না জানলেও সে যে সকাল থেকেই খুব চিন্তায় আছে এটা তার অজানা নয়। আর দুপুরে খেতে গিয়ে যেভাবে রচনার সাথে চোখাচোখি না করে সে আবার বাইরে বেরিয়ে এসেছিল, তাতে রচনার উৎকণ্ঠা যে আরো বেড়েছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সারাটা দিন লুকিয়ে বেড়ালেও এখন তো তাকে বাড়ি ফিরে রচনার মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে। সিটিবাসে চেপে ফিরতে ফিরতে সে ভাবতে লাগল, রচনাকে সে কী বলবে, কতটা বলবে? একবার ভাবল টাকাটা কোনভাবে হারিয়ে গেছে বললেই বুঝি নিজের মান সম্মানটা বাঁচাতে পারবে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল, না না রচনার কাছে সে মিথ্যে কথা কিছুতেই বলতে পারবে না। মন্তির গায়ে হাত দিয়ে শপথ করার কথা তার মনে পড়ল। বিয়ের আগে সে মন্তিকে কথা দিয়েছিল রচনাকে সে কখনও কষ্ট দেবে না, কখনও তার কাছে কোন মিথ্যে কথা বলবে না, কখনও কিছু গোপন করবে না রচনার কাছে। আর তাছাড়া গত তিনটে বছরে রচনা তার বুকের সমস্ত জায়গাটাই নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছে। তাকে সে মিথ্যে কথা কিছুতেই বলতে পারবে না। কিন্তু সবকিছু খুলে বললে রচনা আবার তাকে পরিহাস করে অসম্মানজনক কিছু বলে বসবে না তো?
 

মনে মনে ভাবল করুক পরিহাস। করুক তাকে অসম্মান। সম্মান সম্বর্ধনা পাবার মত সে কি কিছু করতে পেরেছে? রচনা আর মন্তি পই পই করে বুঝিয়ে দেওয়া সত্বেও সে তাদের কথা মনে রাখে নি। সে ওই মূহুর্তে লোকটার ছেলেটা কলেজে ভর্তি হতে পারবে না ভেবেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে আর কিছুটা রবিশঙ্করের ছলনায় ভুলে টাকাটা সে বের করে দিয়ে একেবারেই ঠিক করেনি। পরিহাসই তার প্রাপ্য। আর সে যেমন কাজ করেছে তার প্রতিদানে পরিহাস আর অবমাননা ছাড়া সে আর কী পেতে পারে? করুক অপমান। সে অপমান আর পরিহাস তো তাকে শুধু একটা দিনই সইতে হবে। মিথ্যে কথা বলে রচনাকে ঠকিয়ে সে কি আর কখনও স্ত্রীর মুখের দিকে চাইতে পারবে? প্রতিটা দিন প্রতিটা মূহুর্তে রচনাকে মিথ্যে কথা বলার জন্যে সে নিজেকে অপরাধী বলে ভাবতে বাধ্য হবে। তারচেয়ে সব কিছু সত্যি সত্যি বলে দিয়ে নিজের ভেতরের যন্ত্রণাগুলোকে কিছুটা হলেও সে কমাতে পারবে।
 

রাত প্রায় ন’টা নাগাদ রতীশ বাড়ি ফিরে এল। রচনা দরজা খুলে “কিগো তুমি....” বলেই স্বামীর মুখের দিকে চেয়েই থেমে গেল। রতীশকে দেখে মনে হচ্ছে একদিনেই তার বয়স বুঝি কুড়ি বছর বেড়ে গেছে। মুখ চোখ শুকনো। চোখের কোলে কালি। রচনা তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে রতীশ ভেতরে না ঢুকে বসবার ঘরের সোফার ওপরেই বসে পড়েছে। সে স্বামীর কাছে এসে তার মুখটাকে দু’হাতে চেপে ধরতেই রতীশের ঘাড়ে গলার ঘামে তার হাত ভিজে উঠতে দেখে বলল, “ইশ মাগো। তুমি দেখি ঘেমে নেয়ে একসা হয়ে গেছ গো! যাও যাও, আগে হাত মুখটা ধুয়ে এস সোনা। ওঠো, তাড়াতাড়ি এসব কিছু খুলে বাথরুমে একপাশে রেখে দিও। আমি ভিজিয়ে দেব’খন পরে” বলতে বলতে বেডরুমের আলমারি খুলে ভেতর থেকে ধোয়া পাজামা টাওয়েল আর গেঞ্জী বের করে বাথরুমের হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রেখে ভেতরে ঢুকে বলল, “এখন এত রাতে কিন্তু স্নান করো না সোনা। ভেজা টাওয়েল দিয়ে শুধু গা টা ভাল করে স্পঞ্জ করে নাও। তারপর চা খেতে খেতে কথা বলা যাবে”।

রতীশ কোন কথা না বলে চুপচাপ পকেটের ভেতরের জিনিসগুলো আর মোবাইল বের করে খাটের পাশের সাইড টেবিলে রেখে বাথরুমে ঢুকে পড়ল। দরজা বন্ধ করে নিজের পোশাক পরিচ্ছদ সব খুলে বাথরুমের মেঝের ওপর ক্লান্ত শরীরটাকে নিয়ে বসে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকবার পর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে শাওয়ারের নবটা ঘুরিয়ে দিয়ে জলে ভিজতে শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ বাদে শাওয়ার বন্ধ করে টাওয়েল হাতে নিয়ে মুখ চোখ মুছতে মুছতেই দেয়ালের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চমকে উঠল। সারা দিনের হতাশা দুশ্চিন্তা দৌড়ঝাঁপ আর ধকলের সমস্ত চিহ্নই তার মুখে জমে আছে। তার মুখের এমন চেহারা দেখে রচনার নিশ্চয়ই বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে তার স্বামীর ওপর দিয়ে আজ কত ঝড় ঝাপটা বয়ে গেছে। কিন্তু সে ঝড়ের প্রকৃতি যখন সে জানতে পারবে, তখনই তো রতীশ তার প্রাপ্য অসম্মানটা পাবে।
 

গা, হাত, পা ভাল করে মুছে সে পাজামা গেঞ্জী পড়ে বাথরুম থেকে বেরিয়েই দেখে রচনা চা এনে সাইড টেবিলের ওপর রাখছে। রতীশের হাত ধরে ড্রেসিং টেবিলের কাছে নিয়ে যেতে যেতে রচনা বলল, “স্নানটা আর না করে থাকতে পারলে না, তাই না? যাক, গা টা ভাল করে মুছেছ তো? চুল তো এখনও জলে ভেজা আছে দেখছি। দাঁড়াও” বলে ছুটে বাথরুমে গিয়ে টাওয়েলটা এনে নিজেই স্বামীর মাথা ভাল করে মুছিয়ে তার চুল আঁচরে দিয়ে বলল, “নাও, এবার চা টা খাও। আমি ভেজা টাওয়েলটা ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে আসছি”।
 

ব্যালকনিতে টাওয়েলটা মেলে দিতে দিতে রচনা ভাবতে লাগল, আজ যা যা হবার কথা ছিল, সেসব নিশ্চয়ই হয়নি। হলে রতীশের মুখে চোখের এমন অবস্থা হত না। এমন কিছু হয়েছে যা হবার কথা ছিল না। হয়ত কমপ্লেক্সটা আজও লিজ নিতে পারেনি। আর এমন অপ্রত্যাশিত কিছু হয়েছে যে তার স্বামী তাকে বলতে পারছে না। সকাল থেকেই তার মনটা যেন কেমন করছিল। বিকেলে বাড়ি থেকে মামনি আর ছোটকাকু ফোন করে বলেছেন যে রতীশ তাদের ফোন ধরছে না। রতীশের খবর না পেয়ে তারা খুব চিন্তায় আছেন। রচনা তাদের বুঝিয়ে আশ্বস্ত করেছে যে রাতে তাদের ফোন করে জানাবে। রাত আটটা থেকে ন’টার ভেতরে রচনা নিজেও বেশ কয়েকবার স্বামীকে ফোন করেছে। কিন্তু তার ফোন সব সময় সুইচড অফ পেয়েছে। তখন থেকেই তার মনটা চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা অঘটন নিশ্চয়ই হয়েছে। কিন্তু রাত সাড়ে আটটা নাগাদ দিদিভাই তাকে ফোন করে বলেছিল যে রতীশ কমপ্লেক্সের মালিকের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত আছে বলে তার সাথে কথা বলতে পারেনি। কিন্তু তারপর থেকে রতীশের ফোন বারবার সুইচড অফ পেয়ে তার দুশ্চিন্তা বেড়েই গেছে। স্বামীকে বাড়ি ফিরে আসতে দেখে তার একটা দুশ্চিন্তা সরে গেলেও, তার মুখ চোখ দেখেই সে বুঝে গেছে যে আশাতীত কিছু একটাই ঘটেছে। কিন্তু স্বামীকে যতটা বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে, এখন তাকে কোন প্রশ্ন না করাই ভাল। তাকে নিজেকে একটু সামলে নেবার সুযোগ দেওয়া উচিৎ।

ভেতরের ঘরে নিজের মোবাইল বেজে ওঠার শব্দ শুনে সে তাড়াতাড়ি বেডরুমে এসে নিজের মোবাইলটা হাতে নিতে নিতে দেখল রতীশ বিছানায় বসে আস্তে আস্তে চা খেয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে মামনি ফোন করেছেন। কলটা রিসিভ করে সে সামনের বসবার ঘরে চলে এল।

ও’পাশ থেকে সরলাদেবী বলছেন, “হ্যারে রচু? খোকা কি বাড়ি ফেরেনি এখনও”?

রচনা জবাব দিল, “হ্যা মামনি। তোমার ছেলে মিনিট পনের হল ঘরে এসেছেন”।

সরলাদেবী এ’কথা শুনে বললেন, “যাক বাবা। বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছিল রে আমার। কিন্তু ও ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে কেন রে”?
 

রচনা জবাব দিল, “মামনি, ওনার ফোন অফ পেয়ে আমিও খুব চিন্তা করছিলাম। কিন্তু দিদিভাইয়ের সাথে ওনার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কথা হয়েছিল। দিদিভাইই আমাকে বলল যে উনি কমপ্লেক্সের মালিকের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত আছেন। সেজন্যেই বোধ হয় ফোনটা অফ করে রেখেছিলেন। আর তারপর সিটিবাসের ভিড়ে আর ফোনটা সুইচ অন করেননি হয়ত। তবে তুমি ভেব না মামনি। উনি এখন চা খাচ্ছেন”।

সরলাদেবী বললেন, “ফোনটা ওকে একটু দে তো মা”।

রচনা একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “হ্যা দিচ্ছি মামনি। কিন্তু ওনাকে খুব টায়ার্ড দেখাচ্ছে” বলতে বলতে সে বেডরুমে এসে রতীশকে বলল, “নাও। মামনি কথা বলতে চাইছেন তোমার সাথে”।
 

রতীশ হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলল, “হ্যা মা বল। তোমরা ভাল আছ তো সবাই”?
 

সরলাদেবী বললেন, “আমরা তো সবাই ঠিক আছিরে বাবা। কিন্তু দুপুরের পর থেকে তোকে তোর বাবা, ছোটকাকু আর আমি এতবার ফোন করে যাচ্ছি, তুই ফোন ধরছিলিস না কেন? আর রাত সাড়ে আটটার পর থেকে ফোনটা বন্ধই করে রেখেছিস। কেন রে? তোরা এমন করলে আমাদের বুঝি চিন্তা হয় না? আর এত রাত পর্যন্ত তুই বাইরে ছিলিস কেন? রচুর কথাটাও তো একটু ভাববি না কি? বেচারী সারাটা দিন একা একা ঘরের মধ্যে বন্দী হয়ে আছে। কথা বলবার একটা লোক পর্যন্ত ওর কাছে নেই। দুপুরে নাকি তুই সময় মত খেতেও আসিস নি। আর ওকে ফোন করে কিছু বলিসও নি। ভাল করে না খেয়েই নাকি উঠে আবার ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলিস। এমন করলে চলবে? রচুর খেয়াল তুই এভাবে রাখবি”?

রতীশ কোন রকমে বলল, “মা আমায় ক্ষমা কোর। আসলে আজ দুপুরের পর থেকে এত ব্যস্ত ছিলাম যে কাউকে ফোন করতে পারিনি। কাল থেকে আর এমনটা হবে না”।

সরলাদেবী বললেন, “হ্যা, কথাটা মনে রাখিস। আর তোর বাবা কাকুরা জানতে চাইছিলেন, ওই লিজ নেবার ব্যাপারটা মিটে গেছে কি না। কাজটা হয়েছে তো”?

রতীশ আমতা আমতা করে বলল, “সেটা নিয়েই তো এত ব্যস্ত থাকতে হয়েছে মা আজ সারা দিন। কিন্তু কাজটা আজও হয়নি গো। তাই মনটা ভাল লাগছে না”।
 

সরলাদেবী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ওমা, সে কিরে? আজও হয়নি কাজটা”?

রতীশ ক্লান্ত গলায় বলল, “মা, আমি খুব ক্লান্ত আছি গো এখন। একদম কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাই এখন আর কিছু জিজ্ঞেস কোর না আমাকে প্লীজ” বলে ফোনটা রচনার হাতে ফিরিয়ে দিল। রচনা ফোনটা কানে লাগিয়ে বলল, “হ্যা মামনি শোনো না। তোমার ছেলেকে সত্যি খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে গো। আমি তো দরজা খুলে ওনার মুখ চোখের অবস্থা দেখেই চুপ হয়ে গেছি। আমার মনে হয় ওনাকে আগে একটু বিশ্রাম নিতে দেবার সুযোগ দেওয়া খুব প্রয়োজন। তাই তোমরা কেউ ওনার ফোনে আজ আর ফোন কোর না। বাড়ির আর সবাইকেও কথাটা বলে দিও প্লীজ। প্রয়োজন হলে আমিই তোমাদের ফোন করব। আর ভেবো না। আমি ওনার সাথেই আছি। ওনার ওপর নজর রাখব”।

সরলাদেবী বললেন, “হ্যারে মা, ওর গলা শুনেই বুঝেছি ও খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ঠিক আছে, তুই ওর দিকে খেয়াল রাখিস মা। আর কিছু প্রয়োজন হলেই আমাদের ফোন করিস। ঠিক আছে রাখছি, হ্যা? তোরা দুটিতে ভাল থাকিস মা। তোদের দুটিকে নিয়ে সব সময় চিন্তা হচ্ছে আমার। দেখে শুনে থাকিস” বলে ফোন কেটে দিলেন।

রচনা বেডরুমে ঢুকে দেখে রতীশ বালিশে মুখ চেপে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ফোনটা রেখে খালি কাপ প্লেট উঠিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে গেল। মনে মনে ভাবল, আজও কমপ্লেক্সটা লিজ নেওয়া হল না কেন? কাল তো শুনেছিল যে কাল বিকেলের মধ্যেই এগ্রিমেন্টটা বানিয়ে ফেলা হবে। আজ সকালেই সেটা সাইন হবার কথা ছিল। তাহলে এমন কি হল যে আজ রাত ন’টা পর্যন্তও সে কাজটা শেষ হল না। তাহলে কি কমপ্লেক্সের মালিক সেটা আর রতীশকে লিজ দিতে চাইছেন না? কাল সকালে রতীশ ব্যাগে করে টাকাটা নিয়ে গিয়েছিল। টাকাটা কি মালিককে দিয়ে এসেছিল? না না, সেটা তো হবার কথা নয়। তার নিজের কথা না মানলেও দিদিভাইয়ের কথার অবাধ্যতা রতীশ কখনই করবে না। এগ্রিমেন্ট যখন এখনও সই করা হয়নি, তাহলে টাকা দেবার তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু রতীশ এ ব্যাপারে তাকে কিছুই বলে নি। হঠাতই তার মনে হল আজ সকালে যাবার সময় তো রতীশ ব্যাগটা নিয়ে যায় নি। কিন্তু টাকাটা তো আজই দেবার কথা ছিল! তাহলে সে ব্যাগ নিয়ে বেরোয়নি কেন? দু’লাখ টাকা কি সে প্যান্টের পকেটে পুরে বের হয়েছিল? প্যান্টটা তো খুলে বাথরুমে রেখে দিয়েছে। শার্ট আর প্যান্টের পকেট থেকে জিনিসগুলো বের করে সে তো পোশাকগুলো বাথরুমে রেখে দিয়েছে। কিন্তু টাকা তো বের করতে দেখেনি। সেটা কি ভুলে প্যান্টের পকেটেই রেখে দিয়েছে তাহলে?
 

কথাটা মনে হতেই সে তাড়াতাড়ি কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে বাথরুমে গিয়ে ঢুকল। রতীশের জামা প্যান্ট গুলো বাথরুমের এক কোনে জড় করা ছিল। রচনা প্যান্ট শার্ট উঠিয়ে পকেটগুলো ভাল করে চেক করে দেখল। না, টাকা নেই। তাহলে কি সে টাকা ছাড়াই বেরিয়েছিল আজ? কিন্তু আজই তো এগ্রিমেন্ট সই করবার কথা ছিল। টাকাও আজই দেবার কথা ছিল। তাহলে রতীশ খালি হাতে বেরিয়েছিল কেন আজ? বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে বিছানার দিকে তাকিয়ে বুঝল রতীশ ঘুমিয়ে পড়েছে। গভীর শ্বাস প্রশ্বাসে তার শরীরটা ওঠানামা করছে। রচনা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে আলমারির চাবিটা নিয়ে আলমারি খুলল। হ্যা, ব্যাগটা ভেতরেই আছে। কৌতুহলী হয়ে ব্যাগটা খুলে ভেতরে হাত ঢোকাল। ভেতরটা ফাঁকা। টাকা নেই তার ভেতরে। আলমারির লকারটা খুলে দেখল ভেতরে কিছু টাকা আছে। রচনা সে গুলো বের করে দেখল তাতে মোট দেড় লাখের মত আছে। রচনা জানত রতীশ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার কিছু বেশী নিয়ে এখানে এসেছিল। প্রথম দিনই লাখ খানেক টাকার আসবাব পত্র কেনা হয়েছে। টুকটাক বাজার করাও হয়েছে। কমপ্লেক্সের লিজের টাকা যদি দেওয়া না হয়ে থাকে, তাহলে তো সাড়ে তিন লাখের মত ঘরে থাকবার কথা। কিন্তু এখানে তো মোটে দেড় লাখ আছে। বাকি দু’লাখ টাকা রতীশ কোথায় রেখেছে? তাহলে কি সে দু’লাখ টাকা সে বিল্ডিঙের মালিককে দিয়ে দিয়েছে। আর টাকাটা দেবার পরেও তারা লিজ দিতে চাইছে না? হে ভগবান, এমন সর্বনাশই কি হল তাদের?
 

রচনার মাথার ভেতরটা যেন ঝিমঝিম করে উঠল। রতীশের মুখ চোখের অবস্থা দেখেই সে আন্দাজ করেছিল ভয়ঙ্কর কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু সেটা যে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেটা সে কল্পনাই করতে পারেনি। টাকাটা যখন ঘরে নেই, তার মানে তো এটাই যে টাকাটা কমপ্লেক্সের মালিককে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজও লিজ এগ্রিমেন্ট সই করা হয়নি! এতবার করে বলা সত্বেও রতীশ এগ্রিমেন্ট সই করবার আগেই টাকাটা তাদের হাতে তুলে দিয়েছে! আজ রতীশ টাকার ব্যাগটা সাথে নিয়েই যায়নি। সেটা নিয়ে গিয়েছিল আগের দিন। তার মানে আগের দিনই সে টাকাটা দিয়ে এসেছিল! কিন্তু কেন? আর আগের দিন টাকা দেওয়া সত্বেও আজও যখন এগ্রিমেন্ট সাইন হয় নি, তার মানে সে কমপ্লেক্সটা আর পাওয়া যাবে না। মালিক নিশ্চয়ই এখন আর লিজ দিতে চাইছে না। কিন্তু টাকাটা? সেটাও তো ফেরত আনে নি! বাবা আর কাকাদের কাছ থেকে চেয়ে আনা টাকাগুলো এভাবে নষ্ট হয়ে গেল! এতগুলো টাকা! হে ভগবান, এখন কী হবে? সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার যে স্বপ্ন চোখে নিয়ে তার স্বামী এ শহরে এসেছে সে স্বপ্ন শুরুতেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল?
 

টাকাটা থাকলে না হয় অন্য কোন কমপ্লেক্সের খোঁজ করা যেত। কিন্তু টাকাটা যদি হাতছাড়া হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তো আর কিছু করারই থাকবে না। এখন তাহলে রতীশ কী করবে? সব টাকা পয়সা খুইয়ে সে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাবে? নইলে তারা এ শহরে বেঁচে থাকবে কি করে? মাসে মাসে ফ্ল্যাটের ভাড়া কি করে দেবে সে? ভাবতে ভাবতে তার চিবুক আর কপাল বেয়ে ঘাম গড়াতে লাগল। বিছানার কোনায় বসে সে সাইড টেবিলের ওপর রাখা রতীশের পকেট থেকে বের করে রাখা জিনিসগুলো দেখতে লাগল। মোবাইল, মানিব্যাগ আর কয়েকটা কাগজ। কাগজগুলো খুলে খুলে দেখতে লাগল। একটা কাগজে দেখল রবিশঙ্করের বাড়ির ঠিকানা লেখা। বিমল আগরওয়ালার একটা ভিজিটিং কার্ড। আরেকটা কাগজে একটা লিস্ট। সেন্টার খুলবার জন্যে যেসব জিনিস কিনতে হবে, তার লিস্ট। মানিব্যাগের ভেতর শ’ তিনেক টাকা।

ঠিক এমন সময়েই রচনার মোবাইল আবার বেজে উঠল। রতীশের ঘুম ভেঙে যেতে পারে ভেবে সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে প্রায় ছুটে বসবার ঘরে গিয়ে সীমন্তিনীর কলটা রিসিভ করল। সীমন্তিনী উদবিঘ্ন গলায় ওদিক থেকে জিজ্ঞেস করল, “হ্যারে রচু? দাদাভাই কি এখনও বাড়ি ফেরেনি না কি রে? ওর ফোন যে এখনও সুইচড অফ পাচ্ছি”।
 

রচনা নিজের ভেতরের অস্থিরতা সামলাবার চেষ্টা করতে করতে জবাব দিল, “না দিদিভাই। তোমার দাদাভাই তো ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরে এসেছেন। তার ফোনটাও ঘরেই আছে। কিন্তু সেটা হয়ত অফ করেই রেখেছেন, আমি ঠিক দেখিনি”।

সীমন্তিনী খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে বলল, “আচ্ছা, তুই ওকে ফোনটা দে তো একটু সোনা”।

রচনা বলল, “দিদিভাই তুমি রাগ কোর না। উনি চা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন গো। চোখ মুখের খুব খারাপ অবস্থা। বলছিলেন খুব টায়ার্ড। বাড়ি থেকে কিছু আগে মামনি ফোন করেছিলেন। আমি তার সাথে কথা বলতে বলতেই তোমার দাদাভাই ঘুমিয়ে পড়েছেন। ওনার অবস্থা দেখে আমি আর এখন তাকে ডাকতে চাইছি না। ওনার এখন একটু বিশ্রাম নেওয়াটা খুবই প্রয়োজন মনে হচ্ছে আমার”।

সীমন্তিনী বলল, “ও তাই বুঝি? তাহলে থাক, ডাকতে হবে না। কিন্তু বাড়ি ফিরে এসে তোকে কিছু বলেছে কি”?

রচনা জবাব দিল, “নাগো দিদিভাই। উনি যখন বাড়ি ফিরলেন তখন তার চোখ মুখের অবস্থা দেখেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে তার ওপর দিয়ে খুব ঝড় বয়ে গেছে আজ। শার্ট গেঞ্জী ঘামে ভিজে একেবারে সপসপে হয়ে উঠেছিল। তাই কোন কিছু না বলে তাকে হাত মুখ ধোবার জন্য বাথরুমে পাঠিয়ে দিয়েছিলুম। বেশ কিছুক্ষণ পর স্নান করে বের হবার পর তাকে চা করে দিয়ে ভাবলুম, একটু ধাতস্থ হোক। পরে সব কিছু শোনা যাবে। চা খেতে খেতেই মামনির ফোন এল। মামনির সাথেও বেশী কথা বলেন নি। মামনিকেই বলছিলেন যে তিনি খুব টায়ার্ড, তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না বলে আমার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আমি মামনির সাথে কথা বলতে বলতেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন দেখে তাকে আর ডাকিনি আমি। মনে মনে ভাবলুম ঘন্টা খানেক ঘুমিয়ে নিক। তারপর উঠিয়ে খেতে দেব। তাই আমার সাথেও কথা একেবারেই কিছু হয়নি আজ। কিন্তু জানো দিদিভাই, আজ সকাল থেকেই আমার মনটা ভাল লাগছিল না গো। ভেতরটা কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছিল। এখন তোমার দাদাভাইয়ের অবস্থা দেখে আমার মনে খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে গো”।
 

সীমন্তিনী বলল, “তুই ভাবিসনে রচু। সোনা বোন আমার। আচ্ছা দাদাভাইয়ের শরীর ঠিক আছে তো রে? জ্বর টর আসেনি তো”?

রচনা জবাব দিল, “না দিদিভাই, শরীরের টেম্পারেচার ঠিকই আছে। আমি ওনার চুল আঁচরে দেবার সময় সেটা খেয়াল করেছি। কিন্তু কিছু একটা নিয়ে যে উনি খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সেটা বুঝতে পেরেছি আমি”।

সীমন্তিনী বলল, “শোন রচু। ওর যখন এমন অবস্থা, তাহলে ওকে ঘুমোতে দে। তুইও ওর কাছ থেকে কিছু জানবার জন্যে পিড়াপিড়ি করিস নে। জানি, তুই মনে মনে অনেক আবোল তাবোল কথা ভাববি সারাটা রাত ভরে। হয়ত আমিও তা-ই করব। কিন্তু ওকে ভাল করে ঘুমোতে দে। নিজেকে সামলে নিতে পারলে ও নিজেই তোকে সবকিছু খুলে বলবে। তাই বলছি, ওকে আজ আর জাগাস নে”।
 

রচনা বলল, “সেটা তো আমিও ভাবছিলুম দিদিভাই। কিন্তু দিনের বেলাতেও তো উনি প্রায় কিছুই খাননি। রোজ যেটুকু ভাত খান, আজ তার চার ভাগের এক ভাগও খাননি। তখনও কেন জানিনা আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলেনই না। তাই পেটে তো বলতে গেলে কিছুই নেই এখন। রাতে একটু খাওয়াতে না পেলে আমিও কি আর কিছু খেতে পারব”?
 

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। তবে অন্ততঃ একটা ঘন্টা ওকে ঘুমিয়ে থাকতে দে। তারপর না হয় ডেকে উঠিয়ে যতটা পারিস খাইয়ে দিস। তবে জোরাজুরি কিছু করিস না। আর নিজে থেকে কিছু না বললে তুইও কিছু জিজ্ঞেস করিস না আজ। কাল সকালে দেখা যাবে। আর ওর দিকে ভাল করে খেয়াল রাখবি কিন্তু। রাতে যদি এমন কিছু হয়, যে তোর কী করা উচিৎ, তা বুঝতে পাচ্ছিস না, তাহলে যত রাতই হোক আমাকে ফোন করবি। বুঝলি”?
 

রচনা বলল, “হ্যা দিদিভাই, ঠিক আছে”।
 

ফোনে কথা বলা শেষ হতে রচনা আবার বেডরুমে ফিরে এল। বিছানার ওপর রতীশ একইভাবে শুয়ে আছে উপুড় হয়ে। রচনা স্বামীর পাশে বসে তার পিঠে কাঁধে আলতো করে হাত বোলাতে বোলাতে একহাত বাড়িয়ে সাইড টেবিলের ওপর থেকে রতীশের মোবাইলটা হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখল, সেটা এখনও সুইচ অফ করাই রয়ে গেছে। মনে মনে ভাবল, থাক। যদিও আজ আর কেউ ফোন করবে বলে মনে হয় না। তবুও অন না করেই ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিল। তারপর ধীরে ধীরে উঠে আবার রান্নাঘরে চলে গেল।
 

নিজের মনে নানারকম দুশ্চিন্তা করতে করতে রান্না শেষ করে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সে রতীশকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল। রতীশও কোন কিছু না বলে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসল। বলতে গেলে সারাদিন ধরেই রতীশ অভুক্ত। তাই তেল মশলা খুব কম দিয়ে সে রাতের রান্না করেছে। রতীশ চুপচাপ খেতে খেতে কয়েকবার রচনার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বলতে গিয়েও সে কিছুই বলে উঠতে পারেনি। রচনাও সেটা খেয়াল করেছে। তবু সে কোন প্রশ্ন করে স্বামীকে বিব্রত করতে চায়নি। সে বুঝতে পেরেছে রতীশ এখনও নিজের মনকে পুরোপুরি তৈরী করতে পারেনি তার মনের ভেতরের কথাগুলো রচনাকে খুলে বলতে। তার মনের দ্বন্দ সে এখনও পরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।


______________________________
ss_sexy
[+] 3 users Like riank55's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 26-02-2020, 08:22 PM



Users browsing this thread: 9 Guest(s)