25-02-2020, 09:31 PM
[১৮]
লেকভিউ নার্সিং হোমের খোল নলচে বদলে দিয়েছে পার্বতী।সোম নার্সিং হোমকে কমার্সিয়ালি দেখতো না। এখন শুধু হার্ট নয় কাউন্সেলিং সহ আরো নানা ডাক্তার বসছেন।কিন্তু নাম সেই লেকভিউ।পার্বতী আর নার্সের কাজ করে না অফিস সামলায়।ছেলেকে ডাক্তার করার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সোমের সম্মান রাখতে তাকে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ভর্তি করেছে,উদ্দেশ্য বিজ্ঞানী হবে।
উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেরোবার পর পল্টু গেছিল সঞ্জয়ের বাড়ী, ও জানতো না সঞ্জয় জয়েণ্টে সুবিধে করতে পারে নি।মাসীমাকে খুব গম্ভীর মনে হল। সঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করলো,কিরে রাঙা পিসি নেই,দেখছি না?
--রাঙা পিসিকে তোমার কি দরকার?দেবযানী মুখ ঝামটা দিল।
কাকু বেরিয়ে এসে বললেন,আহা কি হচ্ছে কি? সঞ্জু তুই ওকে তোর ঘরে নিয়ে যা।তোমার মা কেমন আছেন?
পল্টু বলল,ঐ একরকম।
সঞ্জয়ের সঙ্গে ঘরে গিয়ে বসতে জিজ্ঞেস করলো,জয়েণ্টের রেজাল্ট বেরিয়েছে জানিস তো?
পল্টু উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,হ্যা ন্যাশনালে চান্স পেয়েছি,তুই?
সঞ্জয় ফ্যাকাশে হেসে বলল,কনগ্রাচুলেশন,তুই পারবি আমি জানতাম।পাস করে বাবার চেম্বারে বসবি।এবার আমার হল না।
--তুই অনেকদুর ভেবে ফেলেছিস।পল্টু জিজ্ঞেস করলো,তাহলে কি করবি?
--ভাবছি সামনের বছর আবার বসবো।
পল্টুর মন খারাপ হয়ে যায়। এই সময় কাউকে সান্ত্বনার বাক্য বলা তার অপছন্দ।
--তুই বোস,চা খেয়ে যাবি।
ঢুকতেই মাসীমার কাছে ঐ ব্যবহার তারপর সঞ্জয়ের মুখে এই সংবাদ পল্টুর এখানে বসে থাকার ইচ্ছেটাই নষ্ট হয়ে গেছে।আবার চলে যাওয়াও ভাল দেখায় না,একটা দো-টানা অবস্থায় পড়ে। সঞ্জয় চা নিয়ে ঢুকে বলল,তুই মায়ের কথায় কিছু মনে করিস না।আসলে আমার রেজাল্টের পরে মা খুব আপসেট।
--না না আমি কিছু মনে করিনি।এতো স্বাভাবিক।
--তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
পল্টু চায়ে চুমুক দিয়ে সঞ্জয়ের দিকে তাকালো।
--ভাল কিছু ঘটলে স্বাভাবিক আবার খারাপ কিছু ঘটলেও স্বাভাবিক।কোনটা তোর কাছে অস্বাভাবিক বলতো?
পল্টু হাসে,এত মেপে কেউ কথা বলে নাকি?বাপি বলতেন,আমরা প্রাণপণে আমাদের কাজ করে যাবো,কিন্তু ফলাফল প্রতিকূল বা অনুকূল যা ঘটার ঘটবে স্বাভাবিক নিয়মে।এসব কথা সে নিজেই ভাল করে বোঝেনি।যদি বলতে যায় আবার কি প্রশ্ন তুলবে ভেবে পল্টু আর বলে না।
--কিরে আমার কথার উত্তর দিলি নাতো?
--দেখ মায়ের মনে ছেলের জন্য আশা থাকা স্বাভাবিক--।
--আবার স্বাভাবিক?তোকে জিজ্ঞেস করলাম তোর কাছে অস্বাভাবিক কি?
একটা কথা মনে পড়তে পল্টুর মজা লাগে।লক্ষণদার সেই পায়ু মৈথুন।সঞ্জু গাছ ধরে উল্টো L অক্ষরের মত দাঁড়িয়ে আর লক্ষণদা মুখ খিচিয়ে কোমর নাড়ছে। কিন্তু সে কথা সঞ্জুকে বলা যায় না।
তারপর ভেবে বলল,দেখ আসলে অস্বাভাবিক বলে কিছু নেই।যখন কোনো কিছু ঘটে অভিজ্ঞতার বাইরে,আমরা তাকে বলি অস্বাভাবিক।সঞ্জয় হা করে চেয়ে থাকে।পল্টু আবার বলে,কার্য কারণ সুত্র যতক্ষণ মেলাতে পারি না ততক্ষন তা অস্বাভাবিক।আবার মেলাতে পারলেই স্বাভাবিক।
সঞ্জয় কিছুই বুঝতে পারে না, মনে হল পল্টুকে যত ঘাটাবে তত আবোল-তাবোল বকবে।তাই আর কথা বাড়ালো না।পল্টুর চা শেষ হতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আসি রে সঞ্জু?
দিলীপের খবর শুনে বেশ ভাল লেগেছিল,পাশ করেছে সেকেণ্ড ডিভিশনে,সঞ্জয়ের খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।নীরা দেখলেই 'পল্টুদা-পল্টূদা' করে কথা বলতে আসতো। সেও ইচ্ছে করে ঘর থেকে বের হল না। রাঙা পিসি কি বাড়ীতে নেই? কোনো সাড়া শব্দ পেল না।জয়েণ্টে পাস করেছে বলেই ওদের আচরণ বদলে গেল? কিন্তু সে তো আন্তরিকভাবে কামনা করেছিল সঞ্জু পাস করুক।মম খুশি হয়েছে। দেবমামা নানাভাবে জানার চেষ্টা করছে ব্যাঙ্কে কত টাকা আছে। সন্ধ্যেবেলা অঞ্জনাকে খবরটা দিতে হবে।অঞ্জনা শুনলে খুশি হবে পল্টু নিশ্চিত।
বাড়ী ফিরতেই হাসি খুশি ধরলো,পল্টুদা খাওয়াতে হবে কিন্তু।
--কেন খাওয়াতে যাবো কেন?
--আমরা পিসির কাছে সব শুনেছি।তুমিও পিসোর মত ডাক্তার হবে।
দুটোকে দেখে বুঝতে পারে না কে হাসি আর কে খুশি? জিজ্ঞেস করে,তুই কে বলতো হাসি না খুশি?
--হি-হি-হি।ওমা তুমি দেখে বুঝতে পারো না?হাসি কি আমার মত ফর্সা নাকি?
--আহা কি আমার ফর্সা রে?হাসি প্রতিবাদ করে।
পল্টূ বুঝতে পারে কথাটা হাসি বলছে।ভাল করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় খুশির তুলনায় হাসির রঙ একটু চাপা। পল্টু জিজ্ঞেস করে,কি খাবি বল?
ঠোটে ঠোট চেপে দু-বোন একটূ ভেবে বলল,বিরিয়ানি।
--ঠিক আছে দু-একদিনের মধ্যেই ব্যবস্থা করছি। পল্টু উপরে উঠে গেল।
মনোরমার ঘরে বসে চুপচাপ সোফা আকড়ে বসে আছে।মিতামাসীকে শেষ পর্যন্ত কাজ থেকে ছাড়াতে পারেনি।মমকে চা দিয়ে মিতা জিজ্ঞেস করে,দাদাবাবু তোমাকে চা দিতে হবে নাকি?
পল্টু তাকিয়ে হাসলো।মিতা বলল,আমি জানতাম।মিতামাসী চা আনতে চলে গেল। বহুকাল একজায়গায় কাজ করলে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পারস্পরিক ব্যবধান ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।মিতামাসী কাজের লোক হয়েও শাসনের ভঙ্গীতে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে না।
--মম একা একা কি ভাবছো?
--একটা কথা বললে তোরা হাসবি।মনোরমা বলল।
--কি কথা,কেন হাসবো কেন?পল্টু জিজ্ঞেস করে।
--আমি জানি অনু নেই কিন্তু মনে হয়ে সব সময় আমার পাশে পাশে আছে।
মিতামাসী চা দিয়ে বলল,চা খেয়ে স্নান করে নেও।আমার রান্না হয়ে গেছে।
পল্টুর মনে পড়ল অভ্যাসের কথা।নেড়া হবার কদিন তার প্রায় ভুল হত।স্নান করে চিরুণী নিয়ে চুল আচড়াতে গিয়ে খেয়াল হতো মাথায় চুল নেই। মমেরও হয়তো দীর্ঘকালের অভ্যাস বশত এই রকম ফিল করে।কিন্তু মমকে সে কথা বলে না, দুঃখ পেতে পারে।চা শেষ করে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো পল্টূ।
ভিডিও চালিয়ে মৌপিয়া চুপ করে শুনে যায় কিছু বলে না।সবিতা একা একাই নানা খবর উপযাচক হয়ে পরিবেশন করে যায়।মেয়ে মারা যাবার পর মণিকার সাজের বাহার নাকি বেড়েছে। ডাক্তারবাবুর ছেলে কি পরীক্ষা দিয়েছিল পাস করেছে কিন্তু ডিসী পালের ছেলে পাস করতে পারে নি।বর্ণালীর বিয়ে এই মাসে। ছেলের বড় বাজারে বিশাল দোকান। কলকাতায় নিজেদের বাড়ী আছে গাড়ী আছে।
মৌপিয়ার কানে কিছু যায় আবার কিছু যায় না।পিকনিকে মণীকার সঙ্গে কি করছিল বলে হীরুর বাবাকে কান ধরতে হয়েছিল,ঘটনাটা মনে পড়ল। একা একা ভাল লাগে না,তপনটা কবে যে আসবে কিছু জানায় নি।ও জানেও না ড.সোম মারা গেছেন। ভদ্রলোকের খুব নামডাক। পল্টু কি সত্যিই গুঞ্জনকে? সবিতা বুঝতে পারে বৌদির তার কথা মন দিয়ে শুনছে না। শ্রোতা না পেলে গান গেয়ে আনন্দ নেই।সবিতা জিজ্ঞেস করে,আমি যাই?
--যাবার সময় দরজাটা টেনে দিয়ে যাবি।পাশেই স্বপন নন্দীর মানে তার ভাসুরের ফ্লাট,তপনের ভাই-পো বছর তিন-চার বয়স বেশ ছটফটে তাকে দেখলেই কাকি-কাকি বলে আসতে চায়।কেন কে জানে ওর মায়ের পছন্দ নয়।ঘরে কতরকমের দম দেওয়া পুতুল আছে। একদিন বাচাটাকে নিয়ে খেলছিল অমনি ওর মা বেল টিপলো।বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দরজা খুলতে এমনভাবে ছিনিয়ে নিল যেন কোনো অচ্ছুতের ছোয়া লেগে গেছে।
মিতামাসীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে,চোখ মেলে পল্টূ দেখলো চা নিয়ে দাড়ীয়ে মিতামাসী। কটা বাজে,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে টিকটিক করে ছটার দিকে এগিয়ে চলেছে। চা শেষ করে দ্রুত তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়ল।এই একজন আছে যে তার রেজাল্টের কথা শুনে খুশি হবে।কিছুক্ষণের মধ্যে প্রান্তিকের নীচে এসে পৌছালো।চোখ তুলে উপরের দিকে দেখল বারান্দায় কেউ আছে কিনা? অঞ্জনা ফিরেছে তো?এপাশ ওপাশ দেখল কেউ দেখছে কিনা?সিড়ী বেয়ে একেবারে তিনতলায় উঠে বেল টিপতে ভেতর থেকে আওয়াজ এল,কে-এ-এ?
পল্টু সাড়া না দিয়ে সরে গেল আড়ালে যাতে আইহোলে চোখ রেখে তাকে দেখতে না পায়।দরজা খুলে গেল কিন্তু কেউ বের হলনা।তার মানে বুঝেছে কে এসেছে? পল্টু ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেখল অঞ্জনা নিজের ঘরে বিছানায় শুয়ে আছে।
পল্টু ধীরে ধীরে অঞ্জনার কাছে গিয়ে বলল,আমি ন্যাশনালে চান্স পেয়েছি।
--বাসী খবর।অঞ্জনা চোখ বুজেই বলল।
--তার মানে তুমি আগেই খবর পেয়েছো?
--কি করে পাবো?আমাকে কে খবর দেবে?শুয়ে শুয়েই বলল খাদিজা।
--তা হলে বাসী কেন বলছো?
--সকালের খবর সন্ধ্যে বেলা বাসী না তো কি তাজা খবর বলবো?
পল্টু বুঝতে পারে অঞ্জনার অভিমান। সকালে তুমি কলেজে ছিলে কি করে তোমাকে বলবো?
অঞ্জনা বিছানায় উঠে বসে বুকে কাপড় টেনে বলল, তোমার কাছে কলেজের ফোন নম্বর নেই?
পল্টু কি বলবে হকচকিয়ে যায়।কোমর জড়িয়ে কোলে মাথা রেখে বলল,ভুল হয়ে গেছে।
--ঠিক আছে ছাড়ো ছাড়ো।অঞ্জনা নিজেকে ছাড়িয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।
অঞ্জনা ফিরে এল হাতে মিষ্টির প্লেট।
--কি ব্যাপার আজ মিষ্টি?
--শুভ সংবাদে মিষ্টিমুখ করাতে হয়,আমাদের বাঙালি রীতি।
পল্টু মনে মনে হাসে তার মানে তার পাসের খবর অঞ্জনার অজানা নয়। আসলে সে বলে নি বলে অভিমান?শাস্ত্রে আছে স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা ন জানন্তি কুতঃ মনুষ্যা? পল্টু রসগোল্লা মুখে পুরে বলল,জানো অঞ্জনা বাপি নার্সিং হোম মিসেস রাওকে দিয়ে গেছে?
--কে মিসেস রাও?
--ঐ যে বাপির ওখানে নার্স ভদ্রমহিলা।শ্রাদ্ধের দিন বাড়ীতে এসেছিলেন।
--রাও ঠিক আছে কিন্তু উনি মিসেস তোমাকে কে বলল?
--ওর ছেলে আছে আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছে।পল্টু জোর দিয়ে বলে।
বোকা ছেলে বিয়ে না করলেও সন্তান হতে পারে অঞ্জনা ভাবে।সেসব এড়িয়ে বলল অঞ্জনা,আমি যতদুর জানি উনি মিস রাও।অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে এসেছেন।
--তুমি কি করে জানলে এত কথা?
--আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি।আমি ড.সোমকে একবার দেখাতে গিয়েছিলাম, তোমায় বলিনি।
পল্টু আর কথা বাড়ালো না।মমকে জিজ্ঞেস করতে হবে,অঞ্জনা না জেনে আন্দাজে কিছু বলবে না।
লেকভিউ নার্সিং হোমের খোল নলচে বদলে দিয়েছে পার্বতী।সোম নার্সিং হোমকে কমার্সিয়ালি দেখতো না। এখন শুধু হার্ট নয় কাউন্সেলিং সহ আরো নানা ডাক্তার বসছেন।কিন্তু নাম সেই লেকভিউ।পার্বতী আর নার্সের কাজ করে না অফিস সামলায়।ছেলেকে ডাক্তার করার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সোমের সম্মান রাখতে তাকে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ভর্তি করেছে,উদ্দেশ্য বিজ্ঞানী হবে।
উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেরোবার পর পল্টু গেছিল সঞ্জয়ের বাড়ী, ও জানতো না সঞ্জয় জয়েণ্টে সুবিধে করতে পারে নি।মাসীমাকে খুব গম্ভীর মনে হল। সঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করলো,কিরে রাঙা পিসি নেই,দেখছি না?
--রাঙা পিসিকে তোমার কি দরকার?দেবযানী মুখ ঝামটা দিল।
কাকু বেরিয়ে এসে বললেন,আহা কি হচ্ছে কি? সঞ্জু তুই ওকে তোর ঘরে নিয়ে যা।তোমার মা কেমন আছেন?
পল্টু বলল,ঐ একরকম।
সঞ্জয়ের সঙ্গে ঘরে গিয়ে বসতে জিজ্ঞেস করলো,জয়েণ্টের রেজাল্ট বেরিয়েছে জানিস তো?
পল্টু উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,হ্যা ন্যাশনালে চান্স পেয়েছি,তুই?
সঞ্জয় ফ্যাকাশে হেসে বলল,কনগ্রাচুলেশন,তুই পারবি আমি জানতাম।পাস করে বাবার চেম্বারে বসবি।এবার আমার হল না।
--তুই অনেকদুর ভেবে ফেলেছিস।পল্টু জিজ্ঞেস করলো,তাহলে কি করবি?
--ভাবছি সামনের বছর আবার বসবো।
পল্টুর মন খারাপ হয়ে যায়। এই সময় কাউকে সান্ত্বনার বাক্য বলা তার অপছন্দ।
--তুই বোস,চা খেয়ে যাবি।
ঢুকতেই মাসীমার কাছে ঐ ব্যবহার তারপর সঞ্জয়ের মুখে এই সংবাদ পল্টুর এখানে বসে থাকার ইচ্ছেটাই নষ্ট হয়ে গেছে।আবার চলে যাওয়াও ভাল দেখায় না,একটা দো-টানা অবস্থায় পড়ে। সঞ্জয় চা নিয়ে ঢুকে বলল,তুই মায়ের কথায় কিছু মনে করিস না।আসলে আমার রেজাল্টের পরে মা খুব আপসেট।
--না না আমি কিছু মনে করিনি।এতো স্বাভাবিক।
--তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
পল্টু চায়ে চুমুক দিয়ে সঞ্জয়ের দিকে তাকালো।
--ভাল কিছু ঘটলে স্বাভাবিক আবার খারাপ কিছু ঘটলেও স্বাভাবিক।কোনটা তোর কাছে অস্বাভাবিক বলতো?
পল্টু হাসে,এত মেপে কেউ কথা বলে নাকি?বাপি বলতেন,আমরা প্রাণপণে আমাদের কাজ করে যাবো,কিন্তু ফলাফল প্রতিকূল বা অনুকূল যা ঘটার ঘটবে স্বাভাবিক নিয়মে।এসব কথা সে নিজেই ভাল করে বোঝেনি।যদি বলতে যায় আবার কি প্রশ্ন তুলবে ভেবে পল্টু আর বলে না।
--কিরে আমার কথার উত্তর দিলি নাতো?
--দেখ মায়ের মনে ছেলের জন্য আশা থাকা স্বাভাবিক--।
--আবার স্বাভাবিক?তোকে জিজ্ঞেস করলাম তোর কাছে অস্বাভাবিক কি?
একটা কথা মনে পড়তে পল্টুর মজা লাগে।লক্ষণদার সেই পায়ু মৈথুন।সঞ্জু গাছ ধরে উল্টো L অক্ষরের মত দাঁড়িয়ে আর লক্ষণদা মুখ খিচিয়ে কোমর নাড়ছে। কিন্তু সে কথা সঞ্জুকে বলা যায় না।
তারপর ভেবে বলল,দেখ আসলে অস্বাভাবিক বলে কিছু নেই।যখন কোনো কিছু ঘটে অভিজ্ঞতার বাইরে,আমরা তাকে বলি অস্বাভাবিক।সঞ্জয় হা করে চেয়ে থাকে।পল্টু আবার বলে,কার্য কারণ সুত্র যতক্ষণ মেলাতে পারি না ততক্ষন তা অস্বাভাবিক।আবার মেলাতে পারলেই স্বাভাবিক।
সঞ্জয় কিছুই বুঝতে পারে না, মনে হল পল্টুকে যত ঘাটাবে তত আবোল-তাবোল বকবে।তাই আর কথা বাড়ালো না।পল্টুর চা শেষ হতে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আসি রে সঞ্জু?
দিলীপের খবর শুনে বেশ ভাল লেগেছিল,পাশ করেছে সেকেণ্ড ডিভিশনে,সঞ্জয়ের খবরটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।নীরা দেখলেই 'পল্টুদা-পল্টূদা' করে কথা বলতে আসতো। সেও ইচ্ছে করে ঘর থেকে বের হল না। রাঙা পিসি কি বাড়ীতে নেই? কোনো সাড়া শব্দ পেল না।জয়েণ্টে পাস করেছে বলেই ওদের আচরণ বদলে গেল? কিন্তু সে তো আন্তরিকভাবে কামনা করেছিল সঞ্জু পাস করুক।মম খুশি হয়েছে। দেবমামা নানাভাবে জানার চেষ্টা করছে ব্যাঙ্কে কত টাকা আছে। সন্ধ্যেবেলা অঞ্জনাকে খবরটা দিতে হবে।অঞ্জনা শুনলে খুশি হবে পল্টু নিশ্চিত।
বাড়ী ফিরতেই হাসি খুশি ধরলো,পল্টুদা খাওয়াতে হবে কিন্তু।
--কেন খাওয়াতে যাবো কেন?
--আমরা পিসির কাছে সব শুনেছি।তুমিও পিসোর মত ডাক্তার হবে।
দুটোকে দেখে বুঝতে পারে না কে হাসি আর কে খুশি? জিজ্ঞেস করে,তুই কে বলতো হাসি না খুশি?
--হি-হি-হি।ওমা তুমি দেখে বুঝতে পারো না?হাসি কি আমার মত ফর্সা নাকি?
--আহা কি আমার ফর্সা রে?হাসি প্রতিবাদ করে।
পল্টূ বুঝতে পারে কথাটা হাসি বলছে।ভাল করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় খুশির তুলনায় হাসির রঙ একটু চাপা। পল্টু জিজ্ঞেস করে,কি খাবি বল?
ঠোটে ঠোট চেপে দু-বোন একটূ ভেবে বলল,বিরিয়ানি।
--ঠিক আছে দু-একদিনের মধ্যেই ব্যবস্থা করছি। পল্টু উপরে উঠে গেল।
মনোরমার ঘরে বসে চুপচাপ সোফা আকড়ে বসে আছে।মিতামাসীকে শেষ পর্যন্ত কাজ থেকে ছাড়াতে পারেনি।মমকে চা দিয়ে মিতা জিজ্ঞেস করে,দাদাবাবু তোমাকে চা দিতে হবে নাকি?
পল্টু তাকিয়ে হাসলো।মিতা বলল,আমি জানতাম।মিতামাসী চা আনতে চলে গেল। বহুকাল একজায়গায় কাজ করলে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পারস্পরিক ব্যবধান ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।মিতামাসী কাজের লোক হয়েও শাসনের ভঙ্গীতে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে না।
--মম একা একা কি ভাবছো?
--একটা কথা বললে তোরা হাসবি।মনোরমা বলল।
--কি কথা,কেন হাসবো কেন?পল্টু জিজ্ঞেস করে।
--আমি জানি অনু নেই কিন্তু মনে হয়ে সব সময় আমার পাশে পাশে আছে।
মিতামাসী চা দিয়ে বলল,চা খেয়ে স্নান করে নেও।আমার রান্না হয়ে গেছে।
পল্টুর মনে পড়ল অভ্যাসের কথা।নেড়া হবার কদিন তার প্রায় ভুল হত।স্নান করে চিরুণী নিয়ে চুল আচড়াতে গিয়ে খেয়াল হতো মাথায় চুল নেই। মমেরও হয়তো দীর্ঘকালের অভ্যাস বশত এই রকম ফিল করে।কিন্তু মমকে সে কথা বলে না, দুঃখ পেতে পারে।চা শেষ করে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো পল্টূ।
ভিডিও চালিয়ে মৌপিয়া চুপ করে শুনে যায় কিছু বলে না।সবিতা একা একাই নানা খবর উপযাচক হয়ে পরিবেশন করে যায়।মেয়ে মারা যাবার পর মণিকার সাজের বাহার নাকি বেড়েছে। ডাক্তারবাবুর ছেলে কি পরীক্ষা দিয়েছিল পাস করেছে কিন্তু ডিসী পালের ছেলে পাস করতে পারে নি।বর্ণালীর বিয়ে এই মাসে। ছেলের বড় বাজারে বিশাল দোকান। কলকাতায় নিজেদের বাড়ী আছে গাড়ী আছে।
মৌপিয়ার কানে কিছু যায় আবার কিছু যায় না।পিকনিকে মণীকার সঙ্গে কি করছিল বলে হীরুর বাবাকে কান ধরতে হয়েছিল,ঘটনাটা মনে পড়ল। একা একা ভাল লাগে না,তপনটা কবে যে আসবে কিছু জানায় নি।ও জানেও না ড.সোম মারা গেছেন। ভদ্রলোকের খুব নামডাক। পল্টু কি সত্যিই গুঞ্জনকে? সবিতা বুঝতে পারে বৌদির তার কথা মন দিয়ে শুনছে না। শ্রোতা না পেলে গান গেয়ে আনন্দ নেই।সবিতা জিজ্ঞেস করে,আমি যাই?
--যাবার সময় দরজাটা টেনে দিয়ে যাবি।পাশেই স্বপন নন্দীর মানে তার ভাসুরের ফ্লাট,তপনের ভাই-পো বছর তিন-চার বয়স বেশ ছটফটে তাকে দেখলেই কাকি-কাকি বলে আসতে চায়।কেন কে জানে ওর মায়ের পছন্দ নয়।ঘরে কতরকমের দম দেওয়া পুতুল আছে। একদিন বাচাটাকে নিয়ে খেলছিল অমনি ওর মা বেল টিপলো।বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দরজা খুলতে এমনভাবে ছিনিয়ে নিল যেন কোনো অচ্ছুতের ছোয়া লেগে গেছে।
মিতামাসীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে,চোখ মেলে পল্টূ দেখলো চা নিয়ে দাড়ীয়ে মিতামাসী। কটা বাজে,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে টিকটিক করে ছটার দিকে এগিয়ে চলেছে। চা শেষ করে দ্রুত তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়ল।এই একজন আছে যে তার রেজাল্টের কথা শুনে খুশি হবে।কিছুক্ষণের মধ্যে প্রান্তিকের নীচে এসে পৌছালো।চোখ তুলে উপরের দিকে দেখল বারান্দায় কেউ আছে কিনা? অঞ্জনা ফিরেছে তো?এপাশ ওপাশ দেখল কেউ দেখছে কিনা?সিড়ী বেয়ে একেবারে তিনতলায় উঠে বেল টিপতে ভেতর থেকে আওয়াজ এল,কে-এ-এ?
পল্টু সাড়া না দিয়ে সরে গেল আড়ালে যাতে আইহোলে চোখ রেখে তাকে দেখতে না পায়।দরজা খুলে গেল কিন্তু কেউ বের হলনা।তার মানে বুঝেছে কে এসেছে? পল্টু ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেখল অঞ্জনা নিজের ঘরে বিছানায় শুয়ে আছে।
পল্টু ধীরে ধীরে অঞ্জনার কাছে গিয়ে বলল,আমি ন্যাশনালে চান্স পেয়েছি।
--বাসী খবর।অঞ্জনা চোখ বুজেই বলল।
--তার মানে তুমি আগেই খবর পেয়েছো?
--কি করে পাবো?আমাকে কে খবর দেবে?শুয়ে শুয়েই বলল খাদিজা।
--তা হলে বাসী কেন বলছো?
--সকালের খবর সন্ধ্যে বেলা বাসী না তো কি তাজা খবর বলবো?
পল্টু বুঝতে পারে অঞ্জনার অভিমান। সকালে তুমি কলেজে ছিলে কি করে তোমাকে বলবো?
অঞ্জনা বিছানায় উঠে বসে বুকে কাপড় টেনে বলল, তোমার কাছে কলেজের ফোন নম্বর নেই?
পল্টু কি বলবে হকচকিয়ে যায়।কোমর জড়িয়ে কোলে মাথা রেখে বলল,ভুল হয়ে গেছে।
--ঠিক আছে ছাড়ো ছাড়ো।অঞ্জনা নিজেকে ছাড়িয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।
অঞ্জনা ফিরে এল হাতে মিষ্টির প্লেট।
--কি ব্যাপার আজ মিষ্টি?
--শুভ সংবাদে মিষ্টিমুখ করাতে হয়,আমাদের বাঙালি রীতি।
পল্টু মনে মনে হাসে তার মানে তার পাসের খবর অঞ্জনার অজানা নয়। আসলে সে বলে নি বলে অভিমান?শাস্ত্রে আছে স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম দেবা ন জানন্তি কুতঃ মনুষ্যা? পল্টু রসগোল্লা মুখে পুরে বলল,জানো অঞ্জনা বাপি নার্সিং হোম মিসেস রাওকে দিয়ে গেছে?
--কে মিসেস রাও?
--ঐ যে বাপির ওখানে নার্স ভদ্রমহিলা।শ্রাদ্ধের দিন বাড়ীতে এসেছিলেন।
--রাও ঠিক আছে কিন্তু উনি মিসেস তোমাকে কে বলল?
--ওর ছেলে আছে আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছে।পল্টু জোর দিয়ে বলে।
বোকা ছেলে বিয়ে না করলেও সন্তান হতে পারে অঞ্জনা ভাবে।সেসব এড়িয়ে বলল অঞ্জনা,আমি যতদুর জানি উনি মিস রাও।অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে এসেছেন।
--তুমি কি করে জানলে এত কথা?
--আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছি।আমি ড.সোমকে একবার দেখাতে গিয়েছিলাম, তোমায় বলিনি।
পল্টু আর কথা বাড়ালো না।মমকে জিজ্ঞেস করতে হবে,অঞ্জনা না জেনে আন্দাজে কিছু বলবে না।