Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#37
(Update No. 59 date. 28.7.2018)

পরের সপ্তাহে সীমন্তিনীকে অফিসের কাজেই আলিপুরদুয়ার যাবার প্রয়োজন হল। তাই সে সকাল সকাল বেরিয়ে সকাল দশটার আগেই সেখানে পৌঁছে গেল। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে নিজের কাজ সেরেই নিজের সাথে যাওয়া টিমের সবাইকে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে বলে নিজেও হোটেলে খেয়ে নিল। তারপর বেলা দুটো নাগাদ রওনা হবার আগে পেছনের গাড়িতে বসে থাকা সিকিউরিটি টিমের কমাণ্ডিং অফিসারকে বলে বুঝিয়ে দিল যে তারা কালচিনিতে ঘন্টা খানেকের মত হল্ট করে তারপর নিজের অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে। কালচিনিতে সে তার মাসির বাড়িতে একটু দেখা করে যাবে।
 

দুপুর তিনটে নাগাদ পুলিশের গাড়ি দুটো বিধুবাবুর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতেই পাড়াপড়শি অনেকেই কৌতুহলী চোখে দু’গাড়ি ভর্তি পুলিশ দেখে একটু অবাক হল। পেছনের গাড়ির সিকিউরটিরা গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিকে একটু একটু তফাতে দাঁড়িয়ে এ কে ৪৭, স্টেনগান আর মেশিনগান নিয়ে পজিশন নেবার পর পেছনের গাড়ির কমান্ডিং অফিসার সীমন্তিনীর গাড়ির কাছে এসে ঈশারা করতেই সে গাড়ি থেকে বেরোল।
 

বাড়ির সামনে গাড়ি থামবার শব্দ পেয়ে ভেতর থেকে বিভাদেবীও কৌতুহলী হয়ে উঠেছিলেন। গেটের ভেতর থেকেই উঁকি দিয়ে দেখেই তিনি ছুটে নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত স্বামীকে ডেকে তুলে বললেন, “ওগো, শুনছ তুমি? শিগগীর ওঠো। দেখ আমাদের বাড়ির গেটের সামনে দুটো পুলিশের গাড়ি এসে থেমেছে। অনেক পুলিশ আমাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নেমেছে”।
 

বিধুবাবু দুপুরের খাবার খেয়ে রোজকার মতই একটু ঘুমিয়ে ছিলেন। স্ত্রীর কথা শুনেই বিছানা থেকে নামতে নামতে বললেন, “আমাদের বাড়ির সামনে পুলিশ? কী বলছ তুমি”।

এমন সময়েই টিনের গেটে কেউ জোরে কড়া নেড়ে বলল, “বাড়িতে কে আছেন? একটু দরজাটা খুলুন”।
 

বিধুবাবু ধুতি গেঞ্জী পড়া অবস্থাতেই ত্রস্ত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে গেট খুলে দিলেন। আর গেটের
 
বাইরে পুলিশের পোশাক পড়া সীমন্তিনীকে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন, “গিন্নী শিগগীর এস। দেখ কে এসেছে”?
 

সীমন্তিনী নিচু হয়ে বিধুবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছ মেসো? এ মা, তুমি এত রোগা হয়ে গেছ কেন গো”?
 

ততক্ষণে বিভাদেবীও স্বামীর পেছন থেকে চিৎকার করে উঠে বললেন, “ও মা মন্তি তুই”?

সীমন্তিনী এগিয়ে এসে নিচু হয়ে তাকে প্রণাম করবার আগেই বিভাদেবী তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। সীমন্তিনীও তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “রাস্তার সব লোক তোমার কান্না শুনে এখানে এসে ভিড় করবে মাসি। আমাকে কি ঘরে ঢুকতে দেবে না? না কি এখান থেকেই বিদেয় করবে”।

বিভাদেবী কাঁদতে কাঁদতেই সীমন্তিনীকে আঁকড়ে ধরে ভেতরের দিকে নিতে নিতে বললেন, “তুই যে আজ আসবি এ’কথাটা আগে জানাস নি কেন রে মা”?
 

সীমন্তিনী উঠোনে এসে বিভাদেবীকে প্রণাম করে জবাব দিল, “অফিসের কাজে একটু আলিপুরদুয়ার যেতে হয়েছিল মাসি। এমনিতে তো আমার আর এদিকে আসবার সুযোগ হয় না। তাই সেখানে কাজ শেষ করে ফেরার পথে ভাবলুম তোমাদের সাথে একটু দেখা করে যাই” বলতে বলতে নিজের পকেট থেকে পার্স বের করে দু’খানা পাঁচশ টাকার নোট বিধুবাবুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “মেসো আগে এটা ধর তো। ভাই তো বাড়ি নেই জানি। তাই একটু কষ্ট করে একটা পাঞ্জাবী পড়ে কাছের ওই মিষ্টির দোকনটা থেকে একটু মিষ্টি কিনে আনবে? আমার সাথে আরও আটজন আছে। তাদের সকলের আর তোমাদের জন্যেও এনো”।

বিধুবাবু টাকার দিকে চেয়ে বললেন, “তা ঠিক আছে। আমি এখনই গিয়ে আনছি। কিন্তু তোমাকে টাকা দিতে হবে না মা”।
 

সীমন্তিনী টাকাটা জোর করে বিধুবাবুর হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, “হ্যা ঠিক আছে। তোমার পয়সা দিয়েই এনো। তবে এটা রেখে দাও। ভাই আর তোমরা পরে আমার তরফ থেকে কিছু কিনে খেও। আসলে আমার নিজেরই আনা উচিৎ ছিল। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে এসেছি বলে ভুলে গিয়েছিলাম। তুমি তাড়াতাড়ি নিয়ে এস। আমি কিন্তু খুব বেশীক্ষণ বসতে পারব না”।
 

বিধুবাবু আর কিছু না বলে চলে যেতেই বাইরে থেকে একজন সিকিউরিটি গেটের ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে বাড়ির চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে দেখতে একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল।
 

বিভাদেবী সীমন্তিনীর হাত ধরে ঘরের বারান্দায় উঠে বললেন, “তুই একটু দাঁড়া মা। আমি একটু ঠাকুরঘর থেকে আসছি” বলেই চলে গেলেন। সীমন্তিনী বাড়ির চারদিক দেখতে দেখতেই বিভাদেবী এসে ঠাকুরের পুজোর ফুল সীমন্তিনীর মাথায় আর বুকে ছুঁইয়ে ফুলটা তার হাতে দিয়ে বললেন, “এটা তোর পকেটে করে নিয়ে যা মা। বাড়িতে গিয়ে একটা ভাল জায়গায় রেখে দিস”।
 

সীমন্তিনী ফুলটা নিয়ে একবার কপালে ঠেকিয়ে প্যান্টের পকেটে রাখতে রাখতে দেখল বিভাদেবী অপলক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। সীমন্তিনীকে দেখতে দেখতে বিভাদেবী খুশী ভরা গলায় বলে উঠলেন, “তোকে কি সুন্দর লাগছে রে মা পুলিশের পোশাকে! মনে হচ্ছে শুধু তাকিয়েই থাকি তোর দিকে। ইশ খোকাটা কলেজে। নইলে তোকে দেখতে পেত”।

সীমন্তিনী বিভাদেবীর হাত ধরে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলল, “নজর লাগিয়ে দিও না মাসি। একটু তোমার হাতের চা খাব বলেই এসেছি শুধু আজ। বেশী সময় হাতে নেই। তাই চল, চা বানাতে বানাতে আমার সাথে কথা বলো”।
 

বিভাদেবী রান্না ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, “তুই এ পোশাকে পিড়িতে বসতে পারবিনে তো মা। দাঁড়া, আমি ও ঘর থেকে একটা চেয়ার এনে দিচ্ছি তোকে”।
 

সীমন্তিনী বলল, “আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। তুমি উনোন ধরাতে থাক। আমি ও’ঘর থেকে কিছু একটা নিয়ে আসছি” বলে বিধুবাবুর ঘরে ঢুকে সেখান থেকে একটা মোড়া হাতে নিয়ে রান্নাঘরে এসে বসে বলল, “মাসি, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি গো অসময়ে এসে। একটু বেশী করে চা বানিও। আমার সাথে যে আটজন এসেছে ওদেরকেও তোমার হাতের চা একটু খাইয়ে দিও, নইলে ওরা সবাই ভাববে আমার মাসি ওদের কিছু খেতে না দিয়েই বিদেয় করে দিল”।

বিভাদেবী চায়ের জল উনোনে চাঁপাতে চাঁপাতে বললেন, “ওদেরকে ডেকে ভেতরে বসালি না কেন মা? ওরা সকলে কী ভাববে বল তো”?
 

সীমন্তিনী বিভাদেবীর পাশে এসে বসে বলল, “ওরা ভেতরে আসবে না মাসি। ওরা বাইরেই থাকবে। সেটাই ওদের ডিউটি। তুমি ভেব না” বলে একটু থেমেই পেছন থেকে বিভাদেবীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ইশ কতদিন বাদে তোমার গায়ের এ মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এল গো মাসি”।
 

বিভাদেবী নিজের কাজ করতে করতেই জবাব দিলেন, “তোর পাগলামী আর গেল না। তোর মাসি কি আর তোদের মত গায়ে কোন সুগন্ধী ক্রিম পাউডার এসব লাগায়, যে তার শরীর থেকে মিষ্টি ঘ্রাণ বেরোবে”?

সীমন্তিনী বিভাদেবীর কাঁধের পেছনে নিজের গালটা চেপে ধরে বলল, “সেটা তোমরা মায়েরা বুঝবে না গো। সেটা মায়েদের ছেলেমেয়েরা বোঝে। তা মাসি, রচু আর দাদাভাই কলকাতা চলে যাচ্ছে শুনে তোমরা মন খারাপ কর নি তো”?
 

বিভাদেবী বললেন, “জামাইয়ের সাথে থাকতেই তো যাচ্ছে রে মা। তাই কষ্ট পাচ্ছিনা ঠিকই। কিন্তু তোদের বাড়ির সবাই যে রচুকে কতটা ভালবাসে সে’কথাও তো জানি। রচু আর রতীশ চলে গেলে তোদের বাড়ির সকলেরই মন খারাপ হয়ে যাবে ভেবেই আমাদেরও মনটা একটু কেমন কেমন করছে রে মা। আচ্ছা মা, এমন কী হয়েছে যে রতীশ বাড়ি ছেড়ে কলকাতা চলে যেতে চাইছে”?
 

সীমন্তিনী বলল, “না না মাসি। বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে বলে ভাবছ কেন? আমাদের বাড়ির সকলের ভেতর আগে যত ভাব ভালবাসা ছিল সেটা দাদাভাইয়ের বিয়ের পর আরও বেশী মজবুত হয়েছে গো। রচু এখন ও বাড়ির ছোট থেকে বড় সকলের চোখের মণি। আর রচুকে ঘিরেই সকলের ভেতর মনের টান আরও বেড়ে গেছে সকলের। আর তুমি যে বললে বাড়ির সকলের খুব খারাপ লাগবে, সেটা ঠিকই বলেছ তুমি। বাড়ির সকলেই ওদের চলে যাবার সিদ্ধান্তে খুব মুষড়ে পড়েছে। কিন্তু দাদাভাই যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে সেটাকেও সমর্থন না জানিয়ে পারছে না কেউই। আসলে তুমি তো এতদিনে বুঝেই গেছ যে তোমার ছোট জামাই কত সরল মনের মানুষ। বিয়ের পর থেকে এতদিন বাবা কাকার সংসারে একসঙ্গে থাকতে থাকতে ওর মনের ওপর একটা বোঝা চেপে বসেছে। নিজের আর নিজের বৌয়ের সমস্ত খরচ খরচা বাবা কাকাদের ওপর দিয়ে চালিয়ে নিতে ও আর চাইছে না। তাছাড়া একটা যোগ শিক্ষাকেন্দ্র খুলবার স্বপ্ন ওর ছোটবেলা থেকেই ছিল। তাই দেরাদুনে পড়বার সময় ও যোগা-র অনেকগুলো বড় বড় ডিগ্রীও নিয়েছিল। এখন ও সেটা করতে চাইছে। আর রাজগঞ্জে বা জলপাইগুড়িতে এসব করে খুব একটা সুবিধের হবে না বলেই ও কলকাতা যেতে চাইছে। তাই রচনাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হবে জেনেও বাড়ির সবাই দাদাভাইয়ের কথাটা মেনে নিয়েছেন। আমিও তাই মত দিয়েছি। দাদাভাইয়ের সব ইচ্ছে পূর্ণ হোক, আমি তো এটাই চাই”।
 

এমন সময় বিধুবাবু মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, “বাড়ির সামনে তো হাটের লোক জড়ো হয়ে গেছে গো গিন্নী। আমাকে রাস্তায় কতজনে ঘিরে ধরে জানতে চাইল আমার বাড়িতে পুলিশ এসেছে কেন। সবাইকে জবাব দিতে দিতে আমার তো জেরবার অবস্থা। দু’একজন যারা মন্তিকে চেনে, তারা ভেতরে আসতে চাইছিল। কিন্তু পুলিশের লোকেরা তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয় নি”।

সীমন্তিনী উঠে দাঁড়িয়ে নিজের টুপিটা খুলে মোড়ার ওপর রেখে বলল, “মেসো, প্লেটগুলো আমাকে দাও। আমি সাজিয়ে দিচ্ছি। মাসি তুমি চা বানাতে থাক। আমি এদিকটা দেখছি”।

সীমন্তিনী প্লেট নিতে গিয়ে দেখে মোটে গোটা চারেক প্লেট আছে। তাই সে মনে মনে ভেবে বলল, “মেসো, এতদুর থেকে প্লেট সাজিয়ে নিয়ে যাবার দরকার নেই। আমি একটা প্লেটে আমাদের চারজনের জন্যে কিছুটা তুলে রাখছি। তারপর প্যাকেট সহ গিয়ে ওদেরকে হাতে হাতে দিয়ে দেব’খন” বলে একটা প্লেটে গোটা আটেক মিষ্টি তুলে রেখে মিষ্টির প্যাকেটটা আর একটা জগে জল ভরে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। গেটের বাইরে এসে একজন সিকিউরিটির হাতে প্যাকেটটা দিয়ে বলল, “শোন ভাই। আমার মাসি তোমাদের জন্যে মিষ্টি পাঠিয়েছেন। তোমরা একটু হাতে হাতে নিয়ে খেয়ে নাও। আর এই জলের মগটা থেকে জল খেয়ে নিও কেমন”?

বাইরে সত্যি অনেক লোকের ভিড়। কেউ একজন ভিড়ের মধ্যে থেকেই বলে উঠল, “ওমা! এ যে রচুর বড় ননদ গো”।

আরেকজন পাশ থেকে বলল, “হ্যা হ্যা, ঠিক বলেছেন। ইনিই তো নিজে হাতে রচুর বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে বিয়েটা দিয়েছিলেন। বাঃ বাঃ, আমাদের পরিচিত একটা মেয়ে পুলিশের এত বড় অফিসার, সেটা ভাবতেও ভাল লাগছে”।

পাশ থেকে আরেক মহিলা কন্ঠ বলে উঠল, “রচুকে তো এ মেয়েটা আগের থেকেই নিজের বোনের মত ভালবাসত। রচুর মা বাবা আর ভাইকেও বড় আপন করে নিয়েছে মেয়েটা। এমন মেয়েকে যে মা পেটে ধরেছেন তিনি সত্যিই রত্নগর্ভা”।
 

সীমন্তিনী কয়েকজনের দিকে হাতজোড় করে বলল, “আপনাদের কাউকে এরা ভেতরে ঢুকতে দেয়নি বলে আমাকে আপনারা মাফ করবেন। আসলে ওরা ওদের ডিউটিই করছে। আমি চাইলেও এসময় আপনাদের কাউকে ভেতরে ডেকে নিতে পারব না। তবে আমরা চলে যাবার পর আপনারা ভেতরে ঢুকে মাসি মেসোর সাথে কথা বলবেন। আর একটু মিষ্টি মুখ করে যাবেন দয়া করে”।

সীমন্তিনী ভেতরে আসতে আসতে ভাবতে লাগল, বাইরে চা দেবার ব্যবস্থা কি করে করা যায়। বাড়িতে তো বোধহয় কাপও নেই। রান্নাঘরে ঢুকে দেখে একটা থালায় সাত আটটা প্লাস্টিকের গ্লাস বসিয়ে চা ঢালছেন বিভাদেবী। চা ঢালা হয়ে গেলে সীমন্তিনী থালাটা হাতে নিতে নিতে বলল, “আমি এটা দিয়ে আসছি ওদের”।

চা দিয়ে এসে সীমন্তিনী বিভাদেবী আর বিধুবাবুর সাথে চা মিষ্টি খেতে খেতে বলল, “মেসো, তোমাদের অনুমতি না নিয়েই আমি একটা কাজ করে ফেলেছি গো। রাগ কোর না প্লীজ। শোনো না বাইরে তো বেশ কয়েকজন আছে যারা আমাকে আগে থেকে চেনে। আমি তাদের বলেছি, আমরা চলে যাবার পর তারা যেন এসে তোমাদের সাথে কথা বলেন, আর একটু মিষ্টি মুখ করে যান। কিন্তু ঘরে তো আর মিষ্টি নেই। তাই তোমাকে আরেকটু কষ্ট করতে হবে। আমি ফেরার পথে তোমাকে দোকানে নামিয়ে দিয়ে যাব। তুমি তোমার এ মেয়েটার জন্য আরেকটু কষ্ট কোর”।

বিধুবাবু বললেন, “কষ্টের কথা কেন বলছ মা। এ যে কত বড় সুখের দিন তুমি আমায় আজ উপহার দিলে, এ কথা আমার সারাটা জীবন মনে থাকবে। কিন্তু মা তুমি একটু আগে থেকে আমাদের জানিয়ে এলেনা কেন বল তো? তোমার জন্যে দুটো ডালভাত তো রেঁধে দিতে পারত তোমার মাসি। আমাদেরও মনটা একটু খুশী হত”।
 

সীমন্তিনী বলল, “মেসো, এমন করে বলছ কেন বল তো? আমি তো তোমাদেরই একটা মেয়ে। আমাদের সকলের খাবার বন্দোবস্ত আগে থাকতেই করা হয়েছিল। তাই মিটিং শেষে আলিপুরদুয়ারেই আমাদের খেতে হয়েছে। আচ্ছা সে’কথা ছাড়। ভাই কলেজ থেকে ফেরে কখন গো? আমাকে তো চারটের সময় রওনা হতেই হবে”।
 

বিধুবাবু বললেন, “ও তো চারটের দিকেই ফেরে সচরাচর। তবে আজ দেরী করবে কি না এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না”।
 

সীমন্তিনী চা খাওয়া শেষ করে বিভাদেবীকে বলল, “ও মাসি, তোমার চা খাওয়া হয়ে গেছে? তাহলে একটু ও ঘরে চল না গো। তোমার কোলে একটুখানি মাথা রেখে শোব আমি”।
 

বিভাদেবী সাথে সাথে উঠে সীমন্তিনীর হাত ধরে বললেন, “চল” বলে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুমি দরজাটা ভেজিয়ে এস। আমি আমার পাগলী মেয়েটাকে একটু আদর করে দিই” বলে সীমন্তিনীর হাত ধরে নিজেদের ঘরে এসে ঢুকলেন। বিছানায় বসেই সীমন্তিনীকে টেনে নিজের কোলের ওপর শুইয়ে দিয়ে তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “তুই আজ আমাদের এখানে এসেছিস, এ’কথা শুনে রচু বিশ্বাসই করবে না দেখিস”।

সীমন্তিনী দু’হাতে বিভাদেবীর কোমড় জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল, “এখন আর কোন কথা বোল না
 
মাসি। আমাকে প্রাণ ভরে একটু তোমার সোহাগ নিতে দাও”।
 

একটুবাদে বিধুবাবুর পায়ের শব্দ পেয়ে চোখ মেলে সীমন্তিনী বলল, “মেসো বসো। আর শোনো, ভাইকে বোলো, ও যেন ওর পড়াশোনা নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা না করে। ও যা পড়তে চায়, যে লাইনে যেতে চায়, সব করতে পারবে। ওর এই দিদিভাই ওর সব ইচ্ছে পূরণ করবে। আরেকটা কথা শোনো। এখন তুমি আর বাড়ি বাড়ি ঘুরে যজমানদের জন্যে পুজো আচ্চা করবে না। তোমার শরীরটা আগের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। তুমি থিতু হয়ে বসে কোন কাজ করতে পার কি না ভেবে দেখো। বাড়ির সামনে ছোটখাট কিছু একটা দোকান টোকান দিয়ে বসতে পার। টাকা পয়সা যা লাগবে আমি দেব। কিন্তু এ সপ্তাহেই তুমি ভাই আর মাসিকে নিয়ে আলিপুরদুয়ার গিয়ে একজন ভাল ডাক্তার দেখাবে। ডাক্তার যদি কোন টেস্ট ফেস্ট করতে বলে সে’সবও করাবে। আর যা যা ওষুধ দেয়, তা সব ওখান থেকেই নিয়ে আসবে। আর আমাকে সবটা জানাবে”।

বিধুবাবু বললেন, “তুমি এ’সব কী বলছ মা? ডাক্তারের কাছে গেলেই তো কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করতে হবে”।

সীমন্তিনী একটু রাগী গলায় বলল, “বলেছি তো সেসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার কথা যদি না শোনো, তাহলে এটাই তোমাদের কাছে আমার শেষ আসা। আর কখনও তোমাদের কাছে আমি আসব না বলে দিচ্ছি”।
 

বিধুবাবু বললেন, “এই দেখ দেখি। কেমন রেগে যাচ্ছে। আচ্ছা আচ্ছা রে মা, তুমি যা বলছ তা-ই করব। তুমি আমাদের ভুলে যেও না মা”।

সীমন্তিনী বলল, “এতদিনে আমি আর্থিক ভাবে সক্ষম হয়ে উঠেছি মেসো। আর ঠাকুরের আশীর্বাদে আমার নিজের বাবা মায়ের জন্য আমাকে ভাবতে হয় না। রচু, দাদাভাই আর তোমরাই তো আমার জীবনের সব। তোমাদের জন্যেও যদি আমি কিছু করতে না পারি, তাহলে আমার বেঁচে থাকার সার্থকতা কোথায় বল তো? আমি যে তোমাদের আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে চাই। তোমরা আমাকে নিজের মেয়ের মত কাছে টেনে নিয়ে এটুকু করবার সুযোগ আমাকে দেবে না”?
 

বিধুবাবু একটু এগিয়ে এসে স্ত্রীর কোলে শুয়ে থাকা সীমন্তিনীর মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “আগের জন্মে আমি বুঝি তোমার পেটেই জন্মেছিলাম। নইলে এ জীবনে তো এমন কোন পূণ্য আমি করতে পারিনি যে তোমার মত একটা মেয়েকে এভাবে কাছে পাব। ভাল থেক মা। ঈশ্বর যেন সব সময় তোমাকে সব বিপদ আপদ থেকে দুরে রাখেন”।

সীমন্তিনী নিজের হাতঘড়ির দিকে নজর দিয়ে বিভাদেবীর কোল থেকে উঠে বসতে বসতে বলল, “মাসি, আর বসতে পারব না গো। আমার দেরী হয়ে যাবে। সন্ধ্যের আগেই আমাকে অফিসে গিয়ে ঢুকতে হবে।
 
ভাইয়ের সাথে দেখা হল না। তুমি ওকে বোল, আমি পরে ওর সাথে ফোনে কথা বলব”।

বিভাদেবী বললেন, “আচ্ছা মা সে না হয় বলব। কিন্তু তোকে দেখলে খোকা খুব খুশী হত রে। তবে একটু দাঁড়া। তোর মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। আমি আঁচরে দিচ্ছি” বলে কোনার টেবিল থেকে চিরুণি হাতে নিয়ে সীমন্তিনীর চুলের খোঁপা খুলে দিলেন। একঢাল কাল চুল সীমন্তিনীর কোমড় অব্দি ঝুলে পড়ল। মিনিট পাঁচেক পর বিভাদেবী আবার সীমন্তিনীর চুল খোঁপা করে দিতে সীমন্তিনী উঠে দাঁড়াল। নিজের পকেটের ভেতর থেকে পার্স বের করে ভেতর থেকে চার হাজার টাকা বিধুবাবুর দিকে বাড়িয়ে ধরে বলল, “মেসো, এ টাকাটা রাখো। সামনের পূর্ণিমায় আমার নামে তোমাদের ঠাকুরকে ভোগ দিও একটা। আর সামনের সপ্তাহে আলিপুরদুয়ার গিয়ে একজন ভাল ডাক্তার দেখিয়ে এস। মাসি তুমি খেয়াল রেখ, মেসো যেন ভুলে না যান। আর এবার চল। আমি যাবার পথে তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাব বাজারে। সেখান থেকে আরও কিছু মিষ্টি এনে পাড়ার লোকদের খাইয়ে বোল, তারা যেন আমায় আশীর্বাদ দেন”।


_______________________________________
 ss_sexy
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-02-2020, 09:03 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)