Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#33
(Update No. 55 date. 26.7.2018)

সরলাদেবী বেরিয়ে যাবার পর রতীশ জিজ্ঞেস করল, “আমরা যা করছি, সেটা ঠিক করছি তো মন্তি”?

সীমন্তিনী নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, “দাদাভাই, একদিন দু’দিন নয় রে। আমি গত দশ বছর ধরে ভেবে ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর তুই আমার ওপর ভরসা রাখ। আমি বলছি সবটাই ঠিক হবে”।

রতীশ আরও কিছু বলতে যেতে সীমন্তিনী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “আর একটু অপেক্ষা কর দাদাভাই। এখন আর কিছু বলিস না প্লীজ। বড়মার সাথে কাজটা সেরে নিয়ে তাকে বিদেয় দিয়ে তোর সাথে কথা বলছি”।
 

মিনিট দুয়েক বাদেই সরলাদেবী একটা গয়নার বাক্স হাতে নিয়ে ঘরে এসে ঢুকলেন। কোনও কথা না বলে তিনি বাক্সটা সীমন্তিনীর হাতে তুলে দিলেন। সীমন্তিনী বাক্সটা বিছানায় রেখে সরলাদেবীর পায়ের ওপর ঝুঁকে পড়ে তাকে প্রণাম করে বলল, “অনেক ভাগ্য করে তোমার মত একটা মা পেয়েছি গো বড়মা। অনেক ভুল করেছি জীবনে। অনেকবার তোমার ক্ষমাও চেয়েছি। তুমিও বারবার আমাকে ক্ষমা করেছ। তবু আজ শেষ বারের মত বলছি, হাজার অপরাধে অপরাধী তোমার এ নষ্টা মেয়েটাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। তবে বড়মা, তোমার সাথে আমার যে কাজ ছিল, সেটা সারা হল। তুমি এখন চলে যাবার পর দাদাভাইয়ের সাথেও আমি কিছু কথা বলব। হয়ত অনেকটা সময় লাগবে। তাই তোমার কাছে আমি আজকের রাতটা ভিক্ষা চেয়েছি। এটাই আমার জীবনে দাদাভাইয়ের ঘরে শোবার শেষ রাত। তুমি যদি চাও, তুমিও থাকতে পারো, তবে আমার কাজে কোনও বাঁধা দিও না দয়া করে। আর যদি আমার ওপর বিশ্বাসের ছিটেফোঁটাও থাকে, তাহলে দাদাভাইয়ের কাছে আমাকে রেখে তুমি তোমার ঘরে চলে যেতে পারো। আমি তোমাকে আগেই বলেছি, নতুন করে আর কোনরকম জটিলতার সৃষ্টি হবে না”।

সরলাদেবী নিজের চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, “ঠিক আছে মা। তুই তোর দাদাভাইয়ের সাথে থাক। কিন্তু আমার একটা কথা শোন। নিজের বুকে পাথর চাপা দিয়ে তুই আমার আর বাড়ির সকলের কথা ভেবে আমার কথা রাখলি। আজ যদি আরেকটা কথা তোর কাছ থেকে চাই, সেটা তুই আমাকে দিবি না মা”?
 

সীমন্তিনী জবাব দিল, “আমি যে মিথ্যে কথা বলি না, তা তো তুমি জানো বড়মা। তাই তোমাকে মিথ্যে আশ্বাসও তো কিছু দিতে পারব না। আমি জানি, তুমি আমার কাছে আর কি চাইতে পারো। কিন্তু তোমায় সে’কথা দিতে আমি পারব না গো বড়মা। আমাকে ক্ষমা করো তুমি”।

সরলাদেবী মুখে আঁচল চাপা দিয়ে আবার ফুঁপিয়ে উঠল। সীমন্তিনী বড়মার কাছে এসে তার চোখ মুছিয়ে দিতে দিতে বলল, “কেঁদো না বড়মা। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে কথাটা আমি অনভাবে বলতাম। কিন্তু তোমাকে বলছি, এ জীবনে সবার সব আশা কি পূর্ণ হয়? আমারও একটা আশা অপূর্ণ থেকে যাবে। তোমারও এ আশাটা অপূর্ণই থেকে যাবে। আর তোমরাই না বল যে- অতি বড় ঘরনী না পায় ঘর, অতি বড় সুন্দরী না পায় বর। আমি না তোমার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে? তাহলে আমার ক্ষেত্রে আর ব্যতিক্রম কিছু হবে কেন”?

সরলাদেবী কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠলেন, “তাই বলে তুই ইচ্ছে করে সারাটা জীবন......”

সীমন্তিনী বড়মার মুখ চেপে ধরে তার কথা থামিয়ে দিয়ে বলল, “না আর কোন কথা নয়। তোমাকে আমার যা বলার ছিল তা বলে দিয়েছি। তবু তোমার শেষ প্রশ্নের জবাবে বলছি। আমার ভবিষ্যৎ নিয়েও আমি ভেবে রেখেছি। আর জীবনটাকে সেভাবেই সে পথেই চালিয়ে নেব। তুমি শুধু আমাকে আশীর্বাদ করো। এবার তুমি এস বড়মা। অনেক রাত হল। গিয়ে একটু ঘুমোও। আমি দাদাভাইয়ের সাথে কথাটুকু শেষ করি”।
 

সরলাদেবী আর কোন কথা না বলে নিজের চোখ মুছতে মুছতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। সীমন্তিনী দরজা বন্ধ করে ধীর পায়ে হেঁটে এসে বিছানা ঘেঁসে দাঁড়াল। রতীশ অপলক চোখে সীমন্তিনীর দিকে অনেকক্ষন চেয়ে থেকে খুব আস্তে করে বলল, “বোস”।
 

সীমন্তিনী বিছানায় বসে গয়নার বাক্সটা খুলে একে একে সবগুলো গয়না পড়তে লাগল। কানে ঝুমকো, নাকের ফুল, মাথায় টিকলি, গলায় তিন রকমের তিনটে হার, বাজুতে বাজুবন্ধ, হাতে মানতাসা, বালা, আর চুড়ি, কোমড়ে কটিবন্ধ, পায়ে পায়েল, পায়ের ও হাতের আঙুলে আংটি। এ’সব পড়ে বিছানার নিচে দাঁড়িয়ে ধীর শান্ত গলায় বলল, “একটু নেমে দাঁড়া তো দাদাভাই”।

রতীশ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াতেই সীমন্তিনী হাঁটু গেঁড়ে বসে রতীশের পায়ের পাতার ওপর মাথা নামিয়ে
 
দিয়ে প্রণাম করল। কিন্তু প্রণাম যেন তার আর শেষ হচ্ছে না। মিনিট খানেক বাদে সীমন্তিনী রতীশের দুটো পায়ের পাতায় চুমু খেতে শুরু করল। রতীশের অস্বস্তি হলেও সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। বেশ কয়েকবার করে পায়ের পাতা দুটোয় চুমু খাবার পর সীমন্তিনী আবার রতীশের পায়ের পাতায় নিজের কপাল ছোঁয়াতে শুরু করল। মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে থাকবার পর রতীশের মনে হল তার পায়ের পাতা দুটো যেন ভিজে উঠছে। সীমন্তিনী তার পায়ে মাথা রেখে কাঁদছে বুঝতে পেরেও রতীশ তাকে বাঁধা দিতে পারছে না।

আরও কিছুক্ষন বাদে সীমন্তিনী কান্না ভেজা গলায় বলে উঠল, “বিছানায় বসে পর দাদাভাই”।
 

রতীশ বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসতেই সীমন্তিনী রতীশের একটা পা উঁচু করে তুলে তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে নিজের সিঁথির জায়গাটা ঘসতে শুরু করল। তার দাদাভাইয়ের পায়ের আঙুলে লেগে থাকা তার নিজের চোখের জলই তার সিঁথি ভিজিয়ে দিল।

রতীশ আর চুপ করে থাকতে না পেরে বলে উঠল, “কি করছিস মন্তি? ওঠ এবার”।

সীমন্তিনী রতীশের পা ছেড়ে দিয়েও মাথা নিচু করে কিছু সময় হাঁটু গেঁড়ে বসেই রইল। তারপর রতীশের দুটো পায়ের পাতায় আরো একবার করে হাত বুলিয়ে উঠে রতীশের পাশে বসে বলল, “আমায় আশীর্বাদ কর দাদাভাই। আমি যেন সারা জীবন আমার শপথ মেনে চলতে পারি”।
 

রতীশ তার একটা হাত সীমন্তিনীর মাথায় রেখে বলল, “তোর কথার, তোর চাওয়ার বিরূদ্ধে কোনদিন কি আমি কিছু করেছি রে? আজও করব না। জানিনা, আমার পায়ে মাথা রেখে তুই কী শপথ নিয়েছিস। তবু
 
বলছি, তোর শপথ যেন অটুট থাকে”।

সীমন্তিনী কয়েক মূহুর্ত চোখ বুজে রইল। তারপর চোখ মেলে জিজ্ঞেস করল, “তোদের বিয়ের ব্যাপারে কি ফাইনাল ডিসিশন নেওয়া হল, শুনেছিস”?
 

রতীশ বলল, “মা একবার বলতে এসেছিলেন। কিন্তু আমি তাকে বলেছি যে সে’সব কথা আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই”।
 

সীমন্তিনী বলল, “আগামী পরশু দিন জেঠুরা গিয়ে রচুকে আশীর্বাদ করে আসবেন। তার দু’দিন বাদে মাসি মেসোরা এসে তোকে আশীর্বাদ করে যাবেন। আর বিয়েটা হচ্ছে মার্চের ন’ তারিখে। দশ তারিখে রচুকে বৌ করে এ বাড়িতে এনে দেবার পর আমার ডিউটি শেষ”।

রতীশ জিজ্ঞেস করল, “তুই নাকি পরশু দিনই চলে যাচ্ছিস”?
 

সীমন্তিনী বলল, “হ্যারে দাদাভাই। পরশুদিন জেঠুরা সকাল সকাল এখান থেকে রওনা হয়ে যাবেন। আমি বিকেলে এখান থেকে যাব। রাতটা জলপাইগুড়িতে থেকেই পরদিন ভোরের ট্রেন ধরে কালচিনি যাব। নইলে মাসি মেসোরা এখানে এসে তোকে আশীর্বাদ করবেন কিভাবে? রচু আর কিংশুক অত বড় বাড়িটাতে একা থাকবে, এটা তো হতে দেওয়া যায় না। আর তাছাড়া ওখানে আমাকে বিয়ের আয়োজন গুলোও তো করতে হবে। ওদের বাড়িতে বড় কোনও পুরুষ মানুষ যদি আর কেউ থাকত যে মেসোকে সব কাজে সাহায্য করত, তাহলে হয়ত আমার যাবার প্রয়োজন হত না। কিন্তু মেসোর একার পক্ষে এ বয়সে দৌড়ঝাঁপ করে সবদিক সামাল দেওয়া সম্ভব নয় রে। তাই আমাকে যে যেতেই হবে”।

রতীশ বলল, “তার মানে তুই এখন থেকে কন্যা পক্ষের লোক হয়ে গেলি”?
 

সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “সে কি আর আজ থেকে হলাম ভাবছিস তুই? প্রথম প্রোজেক্ট ওয়ার্ক করবার অছিলায় যেদিন রচুদের বাড়ি গিয়েছিলাম সেদিন থেকেই তো ও বাড়ির মেয়ে হয়ে গেছিরে দাদাভাই। নিজের মা বাবাকে ছোটবেলায় হারিয়ে ফেলে এতদিন বাদে আমি আবার কাউকে বাবা মা বলে ভাবতে শুরু করেছি। তোর বিয়ে উপলক্ষে এটা আমার সবচেয়ে বড় পাওনা। তাই ছোট বোনের বিয়েতে বড়বোন বাড়িতে না থাকলে চলে? তবে ভাবিস না দাদাভাই, কন্যাপক্ষের লোক হবার পেছনে আরো একটা উদ্দেশ্য আছে। সেটা হচ্ছে সুষ্ঠভাবে আমার দাদাভাইয়ের বিয়েটা সম্পন্ন করা”।

রতীশ আবার জিজ্ঞেস করল, “তার মানে আমাদের বিয়ের আগে তুই আর এ বাড়িতে আসছিস না”?
 

সীমন্তিনী আগের মতই হাসিমুখে বলল, “বিয়ের আগেই শুধু নয় রে দাদাভাই। বিয়ের পর তুই যখন রচুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসবি, আমি সেদিনও বাড়ি ফিরব না। তবে এগার তারিখ অবশ্যই আসব। সেদিন আমি পাত্রপক্ষের লোক হয়ে রচুর হাতের বৌভাত খেতে আসব। আচ্ছা শোন দাদাভাই। কাকু বলছিলেন তারা না কি তোদের হানিমুনে যাবার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি। তুই কাল কলেজে গিয়ে সুকোমল স্যারকে তোর বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যাবার কথাটা বলিস। আর বিয়ের জন্য তোকে মার্চের সাত তারিখ থেকে অন্ততঃ এক সপ্তাহের ছুটি তো নিতেই হবে। আর হানিমুনটা যদি সাথে সাথেই সেরে দিতে চাস, তাহলে কোথায় যাবি, কিভাবে যাবি, এসব ভেবে মোটামুটি একটা আন্দাজ করে তোকে ছুটি নিতে হবে। আর যদি বিয়ের সাথে সাথেই না গিয়ে কয়েকদিন পরে হানিমুনে যাবার ইচ্ছে হয়, তাহলে আপাততঃ সাত দিনের ছুটি নিলেই হবে। কি করবি সেটা একটু ভেবে দ্যাখ। কাল রাতে আমাকে বলে দিস। অবশ্য সে সিদ্ধান্তটা আমাকে না জানিয়ে সরাসরি রচুর সাথে কথা বলে নিলেই ভাল করতিস। কিন্তু তুই তো আজ অব্দি রচুর সাথে একদিনও ফোনে কথা বলিস নি। তাই বলছি, আমাকেই জানিয়ে দিস ডিসিশনটা। আমি রচুকে সেভাবে জানিয়ে দেব। কিন্তু দাদাভাই, সবার আগে আমাকে একটা কথা বল তো। বছর খানেক আগে থেকেই রচুর আর তোর বিয়ের ব্যাপারে দু’ বাড়ির সবাই খুশী মনে সম্মতি দিয়েছিল। তখন থেকেই সবাই জানত যে রচু হায়ার সেকেণ্ডারি পাশ করলেই বিয়েটা হবে। এতদিনের মধ্যে এ বাড়ির ও বাড়ির সকলের মধ্যেই নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। রচুর ফোন নাম্বার তোর কাছেও আছে। আর তোকে আমি যতটা সম্ভব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সব কিছু জানিয়েছি। কিন্তু তুই এতদিনের মধ্যে একটিবারও ও বাড়ির কারুর সাথে কথা বলিস নি। তাই মুখে না বললেও ওদের মনে কিন্তু কথাটা বাজছেই। তোর কি একবারও ইচ্ছে হয়নি রচুর সাথে একটু কথা বলতে”?

রতীশ জবাব দিল, “কথাটা আমিও ভেবেছি রে মন্তি। কিন্তু করব করব ভেবেও শেষ পর্যন্ত বলবার মত কোন কথা খুঁজে পাইনি আমি। খুব লজ্জা করছিল। তাই আর করিনি”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “সত্যি করে বল তো দাদাভাই? এ বিয়েতে তুই রাজি আছিস তো? তোর মনে কোন দ্বিধা কোন সংশয় নেই তো”?
 

রতীশ ম্লান হেসে বলল, “তোর কাছে আমি কখনো কিছু লুকিয়েছি রে? আমাদের ছাব্বিশ বছরের জীবনে তোর কাছে কখনও মিথ্যে কথা বলেছি আমি? তাহলে আজ এমন কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন? তুই আমি তো বটেই, এ বাড়ির প্রত্যেকটা লোক জানে যে তোর কথা ছাড়া আমি কখনও কিছু করি না। তোর কথা মানেই আমার কথা। তোর সম্মতি মানেই আমার সম্মতি, এটা তো সকলেই জানে”।

সীমন্তিনী বলল, “তাহলে আমার কথাটার সোজা উত্তর দিচ্ছিস না কেন দাদাভাই? তুই মন থেকে রচুকে নিজের স্ত্রী বলে ভাবতে পারছিস তো? প্লীজ দাদাভাই, আর কথা ঘোরাস না। এটাই কিন্তু শেষ মূহুর্ত। তোর মনে যদি তিলমাত্র দ্বিধা থাকে, তাহলে এখনই আমাকে বল। আশীর্বাদের পালা শুরু হবার আগে এটা জানা আমার পক্ষে খুব প্রয়োজন”।
 

রতীশ সীমন্তিনীর চোখে সরাসরি তাকিয়ে জবাব দিল, “হ্যারে মন্তি। আমি মানসিকভাবে এ বিয়ে করতে পুরোপুরি প্রস্তুত আছি ঠিকই। কিন্তু মনে একটুও যে দ্বিধা নেই, সেটাও জোর দিয়ে বলতে পাচ্ছি না”?

সীমন্তিনী খুব আগ্রহের সাথে বলল, “বল দাদাভাই, তোর মনের দ্বিধাটা কী নিয়ে সেটা আমাকে খুলে বল”।

রতীশ বলল, “বিয়ের পর তোর রচুকে আমি যথাযথ স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারব কি না, এটা নিয়েই মনে একটু সংশয় আছে। আসলে সেই ছোট্ট বেলা থেকে একটা মেয়েকেই তো সেভাবে সে চোখে দেখে এসেছি আমি। এখন থেকে নতুন একজনকে সে চোখে দেখতে হবে। সেটা আমি পারব তো”?
 

সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, রচুর মত এমন ভাল মনের মেয়ে আমি আর দুটি দেখিনি রে। আমি তোকে বলছি, ওর যা মিষ্টি স্বভাব, তাতে তুই মন থেকে ওকে ভাল না বেসে থাকতে পারবি না। তোর মনের এ দ্বিধাটা খুব অল্পদিনের মধ্যেই সরে যাবে দেখিস। ওকে আমি এই একটা বছরে এমন ভালবেসে ফেলেছি যে ওকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারছি না যেন। আজ বড়মার অনুমতি নিয়ে তোর ঘরে থাকতে এসেছি কেন জানিস? ছোটবেলা থেকে আমাকে তুই যতটা ভালবেসেছিস, সে ভালবাসার দাবী নিয়ে জীবনে শেষ বার, তোর কাছে কয়েকটা অনুরোধ করব। রাখবি তো দাদাভাই”?
 

রতীশ জবাব দিল, “তোকে অদেয় আমার কিছু নেই, তা কি আজ নতুন করে জানতে চাইছিস”?
 

সীমন্তিনী বলল, “নারে দাদাভাই। কোন কিছু জানতে চাইনে তোর কাছে। শুধু তোর কাছে ভালবাসার শেষ উপহারটা চাইছি আমি। রচুকে কখনও কোন কষ্ট দিস না দাদাভাই। রচুর বাহ্যিক চাহিদা খুব বেশী কিছু নেই। ও শুধু সবাইকে ভালবেসে সকলের কাছ থেকে ভালবাসা ছাড়া আর কিছু চায় না। তুই এতোগুলো বছর ধরে যেভাবে আমাকে ভালবেসে এসেছিস, রচুকেও সেভাবেই ভালবাসবি। ও সেটুকু পেলেই খুব খুশী হবে। আর একটা কথা জেনে রাখিস দাদাভাই। রচু কোন কষ্ট পেলে সেটা ওর বুকে যতটা বাজবে, তার চেয়ে হাজার গুন বেশী ব্যথা পাবো আমি। আমাকে তুই কখনো কোন কষ্ট দিস নি। ভবিষ্যতেও দিস না। ওকে তুই যথাযথ স্ত্রীর মর্যাদা দিতে না পারলে আমি কিন্তু কষ্ট পাবো। তাই বলছি, তোদের ঘণিষ্ঠ মূহুর্তে তুই ভাবিস, তোর কাছে রচু নয়, তোর এই বোনটা আছে। তুই আমাকে আদর করছিস ভেবেই রচুকে আদর করিস। রচুকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভাববি রচু নয়, আমিই তোর দুটো হাতের মধ্যে আছি। আর রচু যা কিছু করতে চাইবে, তাতে কোন রকম বাঁধা দিবি না। সব সময় ওর কথা মেনে চলবি। রচু কখনও তোর কাছে কোন অন্যায় আবদার করবে না, সেটা আমি জানি। তাই ওর আব্দার মেটাতে তোকে সত্যি কখনও খুব বেশী বেগ পেতে হবে না। তুই আমাকে ছুঁয়ে কথা দে, আমার এ দাবিটুকু তুই মেনে চলবি” বলে একটু কাছে এসে রতীশের একটা হাত টেনে নিয়ে নিজের গালে চেপে ধরল।

রতীশ সীমন্তিনীর গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “বেশ তোকে কথা দিচ্ছি, তোর সবটা অনুরোধ মেনে চলবার চেষ্টা করব। কিন্তু মন্তি, ছোটবেলায় তোর কাছে আমি অনেক আবদার করেছি, আর তুইও আমার সব আবদার পূরণ করেছিস। আজ আমিও যদি শেষবারের মত তোর কাছে কিছু চাই, তুই সেটা আমাকে দিবি না”?

সীমন্তিনী রতীশের হাতটা নিজের গালে চেপে ধরে বলল, “তোর জন্য তো আমি আমার প্রাণটাও উৎসর্গ করে দিতে পারি রে দাদাভাই। কিন্তু তুইও তো সেটাই বলতে চাইছিস, যেটা বড়মা খানিক আগে আমার কাছে চাইছিলেন। বড়মাকে কি জবাব দিয়েছি সেটা তো তুই শুনেছিসই। তোর কথার জবাবেও আমি সেই একই কথা বলছি। তবে কিছু কথা বড়মাকে খুলে বলতে পারিনি। কিন্তু তোকে সেটা বলতে বাঁধা নেই। জানিনা আমার সীমন্তিনী নামটা কে রেখেছিল। কিন্তু আজ থেকে আমি সত্যি সত্যি সীমন্তিনী হলাম রে। তোর পায়ের ধুলোর সাথে আমার চোখের জল মিশিয়ে আমি আমার সিঁথিতে ছুঁইয়ে নিয়েছি। তাই আমি আজ থেকে সত্যিকার অর্থে সীমন্তিনী হয়ে উঠলাম। কেউ জানবে না, কেউ দেখবে না, কিন্তু আমি জানবো আমার সিঁথিতে আমার চোখের জলের এমন সিঁদুর আজ আমি লাগিয়ে নিয়েছি, যা চিরস্থায়ী ভাবে অদৃশ্য হয়ে থাকলেও আমি নিজে সেটা সারা জীবন মনে মনে দেখতে পাব। আজ থেকে আমি বিবাহিতা সীমন্তিনী হয়ে উঠলুম। আমার জীবনের সব আশা আজ পূর্ণ হল। এখন শুধু একটা উদ্দেশ্য নিয়েই আমি বেঁচে থাকব। সারা জীবন তোর আর রচুর পাশে থাকব। আর কিছু বলবি না আমাকে। এখন জীবনের শেষবারের মত আমার কপালে একটু আদর করে বুঝিয়ে দে তুই আমার ইচ্ছেপূরন করলি”।
 

রতীশ কোন কথা না বলে সীমন্তিনীর মুখটা দু’হাতে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে তার কপালে ঠোঁট চেপে ধরল। সীমন্তিনী চোখ বুজে তার প্রেমাস্পদের শেষ চুম্বনের স্বাদ নিতে নিতে বুঝতে পারল তার বন্ধ দুটো চোখের থেকে জলের ধারা নেমে আসছে।
 

নিজেকে রতীশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের চোখ মুছতে মুছতে মুখে জোর করে হাঁসি টেনে এনে বলল, “দাদাভাই আরেকটা কথা শোন। রচু যে পড়াশোনায় কত ভাল, তা তো শুনেছিসই। আর ওর বয়সও খুব বেশী কিছু নয়। সবে আঠারো পেড়লো। তাই আমার মনে হয় ও বিয়ের পর গ্রাজুয়েশনটা করে নিতে পারলে খুব ভাল হয়। এখনই তো বলতে পারছিনা বিয়ের পর পরস্থিতি কেমন হবে। তবে রচুর সাথে কথা বলে দেখিস। সমস্যা একটাই। রচু এরই মধ্যে আমাদের এ বাড়ির সবাইকে ভালবেসে ফেলেছে। আর রচু জলপাইগুড়ি গিয়ে কলেজে ভর্তি হতে চাইবে কি না সেটা নিয়েও সমস্যা আছে। তবে আমি যদি আরও বছর তিন চার জলপাইগুড়িতে থাকতুম তাহলে যে কোন ভাবেই হোক আমি সেখানে ওকে নিয়ে যেতুম। কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে আগামী দু’ তিন মাসের মধ্যেই আমাকে জলপাইগুড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাই বিয়ের পর ওর সাথে কথা বলে দেখিস, যদি কোনভাবে ব্যাপারটাকে সম্ভবপর করে তোলা যায়। ও নাহয় এখানকার কোন কলেজেই পড়ুক। আর হ্যা আরেকটা কথা। রচুর বয়স কম, তোরও সবে ছাব্বিশ কমপ্লিট হল। তাই মা বাবা হবার জন্য তাড়াহুড়ো করবার দরকার নেই। দুটো বছর বাদে সেসব নিয়ে ভাবিস। কুড়ি বছরের আগে কোন মেয়ের পক্ষে মা হওয়া উচিৎ নয়”।

রতীশ চুপচাপ সীমন্তিনীর কথা শুনে যাচ্ছিল। সীমন্তিনী একটু শ্বাস নিয়ে আবার বলল, “দাদাভাই, আমার জন্য এখন একটা কাজ করবি তুই”?

রতীশ প্রশ্নসূচক দৃষ্টি তুলে তার মুখের দিকে চাইতেই সীমন্তিনী টেবিলের ওপর থেকে একটা জলের
 
বোতল তুলে নিয়ে বলল, “একটু বাথরুমে আয় না দাদাভাই”।

রতীশ কোন কথা না বলে সীমন্তিনীর পেছন পেছন এটাচড বাথরুমে ঢুকে গেল। সীমন্তিনী বোতলের জলটুকু বাথরুমের মেঝেয় ফেলে দিয়ে খালি বোতলটা হাতে নিয়ে বলল, “জলের ট্যাপটা খুলে তোর পায়ে জল ফেলবি। তোর পা বেয়ে নেমে আসা জল আমি এ বোতলে ভরে নেব দাদাভাই। বুঝেছিস”?

রতীশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এভাবে বোতলে জল ভরবি বলছিস কেন তুই”?

সীমন্তিনী রতীশের একটা হাত ধরে অনুনয়ের সুরে বলল, “প্লীজ দাদাভাই, কিচ্ছু জিজ্ঞেস করিস না। যেটা বলছি, শুধু সেটাই করে দে না। আর কিছু তোর কাছ চাইছি না তো। প্লীজ দাদাভাই”।

রতীশ আর কোন কথা না বলে সীমন্তিনীর কথা মত ট্যাপ খুলে নিজের পায়ের পাতার ওপর জল ফেলতে লাগল। আর সীমন্তিনীও রতীশের পায়ের বুড়ো আঙুলের ডগা দিয়ে গড়িয়ে নামা জলের ধারাকে বোতলের মধ্যে ভরে বোতলটাকে ভর্তি করে নিল। তারপর ট্যাপ বন্ধ করে রতীশকে নিয়ে বাথরুমের ভেতর থেকে ঘরে এসে বোতলের মুখটা আটকাতে আটকাতে বলল, “দাদাভাই, কাল সকালে এ’ঘরে বসেই তোর সাথে আমি চা খাব। তখন তুই রচুর সাথে ফোনে প্রথমবার কথা বলবি। আমি নিজে কানে শুনতে চাই সেটা। এবার শুয়ে পর। অনেক রাত হয়েছে। আমিও খুব টায়ার্ড হয়ে গেছি”।

রতীশকে শুইয়ে দিয়ে তার গায়ের ওপর ভালো করে ব্লাঙ্কেট বিছিয়ে দিয়ে বেড ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়ে ঘরের বড় আলোটা নিভিয়ে দিল। তারপর রতীশের ব্লাঙ্কেটের তলায় ঢুকে বেড ল্যাম্পটা নিভিয়ে দিয়ে রতীশের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। সে জানে, দাদাভাইয়ের বুকে মাথা রেখে শোয়ার সুযোগ ছোটবেলা থেকে আট ন’বছর আগে পর্যন্ত বহু বার পেলেও আজ এ’ রাতটার পর সে জীবনে আর কখনও এমন সুযোগ পাবে না।
 

*************

(To be cont'd .......)
______________________________
ss_sexy
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-02-2020, 08:56 PM



Users browsing this thread: 10 Guest(s)