Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#30
(Update No. 52 date. 26.7.2018)

রতীশ আর রচনার বিয়ের মাস তিনেক আগে সীমন্তিনীর এমএ ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল বের হয়েছিল। পলিটিকাল সায়েন্সে খুব ভাল নম্বর পেয়ে সে নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটির মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দখন করেছিল। সাফল্যের প্রথম খবরটা দিয়েছিল সে রচনাকে। তারপর তার দাদাভাইয়ের মাধ্যমে বাড়ির সকলকে খবর দিয়েছিল। রচনা তার দিদিভাইয়ের সাফল্যের খবর পেয়ে মা, বাবা আর ভাইকে সাথে নিয়ে শিলিগুড়ি গিয়ে সেবকেশ্বরী কালিবাড়িতে তার দিদিভাইয়ের নামে পূজো দিয়েছিল। তারপর সেখান থেকে জলপাইগুড়ি গিয়ে সীমন্তিনীর ভাড়া নেওয়া বাড়িতে গিয়ে উঠেছিল। সীমন্তিনীর ভাড়া করা ঘরটা সেদিন উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল। সতীশও সে উৎসবে সামিল হয়েছিল। সে দিনটার মত অমন আনন্দমুখর দিন সীমন্তিনীর জীবনে আগে আর কখনও আসেনি। তার মাস খানেক আগেই রচনার হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষার রেজাল্ট বেড়িয়েছিল। রচনা এবারেও জেলায় প্রথম হয়েছে। তাই দু’জনের এই সাফল্যে সকলেই প্রাণ ভরে আনন্দে হুল্লোরে মেতে উঠেছিল সেদিন।

সীমন্তিনীর বাড়ি থেকেও তার বড়মা, ছোটকাকু আর দাদাভাই সেদিন জলপাইগুড়ি আসতে চেয়েছিল। কিন্তু সীমন্তিনীর বাড়িতে সকলের শোবার জায়গার সংকুলান হয়ে উঠবে না বলেই তাদের আর আসা হয়নি। তাই সীমন্তিনী বাড়িতে খবর দিয়েছিল যে রচনা ওরা জলপাইগুড়ি থেকে ঘুরে যাবার পর সে-ও বাড়ি আসবে। গতকাল রচনারা সকলে বাড়ি ফিরে গেছে। এতদিনে রচনা রতীশদের বাড়ির সকলের সাথেই খুব সহজ হয়ে উঠেছে। তাই সীমন্তিনী আর দেরী না করে রতীশ আর রচনার বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লাগল।
 

আজ সকালের গাড়িতে সতীশের সাথে রওনা হয়ে সীমন্তিনী রাজগঞ্জ বাস স্ট্যাণ্ডের মাটিতে পা দিয়েছে সুদীর্ঘ আট বছর বাদে। বাসস্ট্যাণ্ড থেকে বেরিয়েই সতীশ একটা অটো ধরতে চেয়েছিল। সীমন্তিনী তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “ভাই একটু দাঁড়া না। কত বছর বাদে রাজগঞ্জের হাওয়ায় শ্বাস নিচ্ছি। একটু দাঁড়িয়ে যাই এখানে”।

সতীশও জানে আজ আট বছর বাদে তার দিদি নিজের জন্মস্থানের মাটিতে পা দিয়েছে। একটু ইমোশনাল তো হতেই পারে সে। সীমন্তিনী বুক ভরে শ্বাস নিতে নিতে এ’পাশে ও’পাশে তাকিয়ে দেখতে দেখতে বলল, “কিরে ভাই? রাজগঞ্জে এই ক’টা বছরের ভেতর এত দোকান পাট এত নতুন নতুন বাড়ি হয়েছে? আমি তো চিনতেই পাচ্ছি না রে। আমার চোখে তো আট বছর আগের ছবিগুলোই ভাসছে এখনও”।
 

সতীশ বলল, “এখানে আর কী দেখছিস? বাজারে গেলে তুই আরো অবাক হয়ে যাবি দিদি। অনেকগুলো
 
বড় বড় বিল্ডিং হয়েছে। অনেক নতুন নতুন দোকান হয়েছে। আর বাড়ি যাবার রাস্তায় দেখিস, ফাঁকা
 
জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। কত বাড়ি ঘর হয়েছে এ আট বছরের মধ্যে”।
 

সতীশের কথা শেষ হতেই পাশ থেকে কেউ বলে উঠল, “আরে বড়দি যে? উঃ কত বছর বাদে তোমায় দেখলাম গো”?

সীমন্তিনী মাথা ঘুরিয়ে দেখে একটা রিক্সাওয়ালা। কিন্তু তাকে ঠিক চিনতে পারল না সে। কৌতুহলী চোখে সতীশের দিকে চাইতেই সতীশ বলল, “চিনতে পারিস নি, তাই না দিদি? আরে এটা রতন। আমাদের ক্ষেতে যে চাষ করত কানাই কাকা, তার ছেলে রে”?
 

সীমন্তিনীর মনে পড়ল কানাই কাকার কথা। তাদের ক্ষেতে চাষবাসের কাজ করত। বছর পাঁচেক আগে সে মারা গেছে, এ খবরও পেয়েছিল সে। সে রিক্সাওয়ালার দিকে চেয়ে বলল, “তুই রতন? বাব্বা কত বড় হয়ে গেছিস রে? কি করে চিনব বল? আট বছরে তুই যে এমন হাট্টাকাট্টা হয়ে উঠতে পারিস, সেটা তো আমি ভাবিই নি রে? ভাল আছিস ভাই”?
 

রতন রিক্সা থেকে নেমে এসে সীমন্তিনীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল, “হ্যা গো বড়দি। তোমাদের আশীর্বাদে ভালই আছি। তা তোমরা বুঝি এইমাত্র বাইরে থেকে এলে? ইশ এতদিন বাদে তোমাকে দেখে আমার কি যে ভাল লাগছে না বড়দি। তা বাড়ি যাবে তো? এসো পৌঁছে দিচ্ছি তোমাদের”।
 

সীমন্তিনী খুশী হয়ে বলল, “তুই নিয়ে যাবি আমাদের? কিন্তু আমরা তো সোজা বাড়ি যাব না রে। আগে যে আমি আমাদের কলেজে যাব রে ভাই”।

সতীশ একটু অবাক হয়ে বলল, “কলেজে যাবি এখন”?

সীমন্তিনী বলল, “হ্যারে ভাই। এখন তো কলেজ খুলে গেছে। চল না, সুকোমল স্যারের সাথে একটু দেখা করে যাই। উনি বড্ড স্নেহ করতেন আমাকে। কিন্তু ভাই একটা কাজ কর না। আমি এখানেই দাঁড়াচ্ছি। তুই গিয়ে একটু মিষ্টি কিনে আন না ভাই। স্যারের কাছে খালি হাতে গিয়ে দাঁড়াতে ভাল লাগবে না। আর শোন বাড়ির জন্যেও কিছু নিস। একটু বেশী করে নিস। সকলে যেন খেতে পারে। আর স্যারের জন্য আলাদা আলাদা দুটো প্যাকেটা আনিস” বলে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট বের করে সতীশের হাতে দিল।
 

সতীশ নিজের আর সীমন্তিনীর ব্যাগদুটো রতনের হাতে দিয়ে বলল, “রতন এটা রাখ। আর তুই দিদির সাথেই থাকিস। আমি আসছি একটু”।

রতন বলল, “ঠিক আছে মেজদা, তুমি ভেব না। আমি আছি বড়দির সাথে”।
 

সীমন্তিনী রতনের সাথে কথায় কথায় রাজগঞ্জের অনেক কথা জেনে নিল। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন রিক্সা ওয়ালা আর অটো ড্রাইভার তাকে চিনতে পেরে এসে নমস্কার করে গেল। মিনিট দশেক বাদে সতীশ একটা ক্যারিব্যাগে তিনটে প্যাকেট নিয়ে আসবার পর তারা রিক্সায় উঠে বসল। বাসস্ট্যান্ড থেকে কলেজে পৌঁছতে প্রায় মিনিট দশেক সময় লাগল। কলেজের সামনে রিক্সা থেকে নেমে সীমন্তিনী সতীশকে বলল, “ভাই স্যারের প্যাকেট দুটো হাতে নিয়ে নে। আর রতন, এ প্যাকেটটা এখানেই রেখে যাচ্ছি। খেয়াল রাখিস। আর শোন। একটু দেরী হলে রাগ করিস না ভাই”।
 

রতন বলল, “তুমি নিশ্চিন্তে ঘুরে এস বড়দি। যখন খুশী এস। আর তোমাদের জিনিস পত্র নিয়েও কিছু ভেব না। আমি সব আগলে রাখব”।
 

কলেজ খোলা। কিন্তু ক্লাস চলছে বলে আপাততঃ কোন শোরগোল নেই। সীমন্তিনী আর সতীশ চেনা পথ দিয়ে হেঁটে প্রিন্সিপ্যালের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করে বলল, “মে উই কাম ইন স্যার”?

প্রিন্সিপ্যাল স্যারের অনুমতি পেয়ে তারা দু’জন ভেতরে ঢুকতেই শিক্ষক মহাশয় চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে বললেন, “একি রে মন্তি, সতু, তোরা? আয় আয় বাবা। আমি তো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিনে রে। কত বছর বাদে তোকে দেখতে পেলাম রে মন্তি। সেদিন কাগজে তোর রেজাল্টের খবরটা পড়লাম। খুব খুশী হয়েছি রে। তোর জন্যে গর্বে তো আমারই বুক ফুলে উঠেছে। আয় আয় মা”।

সীমন্তিনী আর সতীশ দু’জনেই সুকোমল স্যারের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে উনি দু’জনকে আশীর্বাদ করলেন। সীমন্তিনী মিষ্টির প্যাকেটদুটো স্যারের হাতে দিয়ে বললেন, “স্যার, এটা নিন। একটা প্যাকেট বাড়ি নিয়ে যাবেন। আর এটা কলেজে সবাই মিলে খাবেন”।
 

প্রিন্সিপ্যাল স্যার প্যাকেটদুটো হাতে নিয়ে বললেন, “এ তুই কী করেছিস মা? এত সব .... আচ্ছা আচ্ছা তোরা বস। আমি রতুকে ডেকে পাঠাচ্ছি। ও কি জানে যে তোরা এখানে এসেছিস”?
 

সীমন্তিনী একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “না স্যার, দাদাভাই জানে না যে আমরা এখানে এসেছি। আসলে আমি তো এখনও বাড়িই যাই নি। বাসস্ট্যাণ্ড থেকে সোজা আগে আপনার কাছে এসেছি”।

সুকোমল স্যার বললেন, “সে কি বলছিস মা? তুই বাড়ি না গিয়ে আগে এখানে এলি? আমার সাথে দেখা করতে? বড় খুশী হলাম রে মা। আচ্ছা দাঁড়া, আগে কাজটা সেরে নিই” বলে টেবিলের ওপর থাকা কলিং বেলে চাপ দিলেন।
 

একজন বিয়ারার এসে দাঁড়াতেই স্যার তাকে বললেন, “রতীশ স্যারকে খবর দাও। এখনই যেন আমার কেবিনে চলে আসে”। বিয়ারারটা চলে যেতেই স্যার আবার বললেন, “কত ছাত্র ছাত্রীকেই তো পড়ালাম রে মা সারাটা জীবন ধরে। আমার পুরোন ছাত্ররা কতজন কত উঁচু উঁচু পদে কাজ করছে। কত বড়বড় সরকারি অফিসার হয়েছে। তারা কেউ তো রাস্তায় দেখা হলেও আমাকে চিনতেই পারেনা বোধহয়। তুই যে আমার কথা মনে রেখেছিস, এটা জেনেই বড় খুশী হয়েছি রে। তা এবার কি করবি ভাবছিস”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “এবার আইপিএস দেব ভাবছি স্যার। আশীর্বাদ করুন। যেন ভাল ফল করতে পারি”।
 

সুকোমল স্যার খুশী হয়ে বললেন, “বাঃ বাঃ খুব ভাল। খুব ভাল। আমার আশীর্বাদ তো সব সময় তোর ওপর থাকবেই। তবে মা একটা কথা মনে রাখিস। আইপিএস হওয়া যতটা সহজ আইপিএসের দায়িত্বটা পালন করা কিন্তু ততটা সহজ নয়। তবে আমি জানি, তুই আর দশটা মেয়ের চেয়ে আলাদা। তুই পারবি, নিশ্চয়ই পারবি মা”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “স্যার আপনার বাড়ির সবাই ভাল আছে তো”?
 

সুকোমল স্যার বললেন, “হ্যারে মা ভগবানের কৃপায় সবাই ভাল আছি। ছেলেটা ব্যাঙ্গালোরে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। মেয়েটা এবার হায়ার সেকেণ্ডারী দেবে। ও আবার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়। দেখা যাক রেজাল্ট কি করে। আর আজকাল ভাল ইনস্টিটিউশনে চান্স পাওয়াও তো দিনে দিনে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। আরে হ্যা, ভাল কথা মনে পড়েছে। রতুকে জিজ্ঞেস করলে তো সব সময় এড়িয়ে যায়। তুই বল তো মা। কানাঘুষো রতুর বিয়ের কথা শুনছি। সত্যি নাকি”?
 

সীমন্তিনী বলল, “হ্যা স্যার। বিয়েটা তো ঠিকই হয়ে গেছে। শুধু ডেটটা এখনও ফাইনাল হয় নি। মনে হচ্ছে আগামী মাস দু’য়েকের ভেতরেই দিন স্থির করা হবে। দাদাভাই আর বাড়ির পক্ষ থেকে আমি আপনাকে আগাম নিমন্ত্রন জানিয়ে রাখছি স্যার। বাড়ির সবাইকে নিয়ে আসবেন কিন্তু বৌভাতের দিন”।
 

সুকোমল স্যার খুশী হয়ে বললেন, “সত্যি খুব ভাল খবর। অবশ্যই যাব মা। আরে এস রতু, ভেতরে এস”।

স্যারের কথা শুনেই সীমন্তিনী আর সতীশ ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে চাইল। রতীশ ঘরে ঢুকেই সীমন্তিনী আর সতীশকে দেখে চমকে উঠে বলল, “এ কিরে? তোরা এখানে? কখন এলি”?

সীমন্তিনী চেয়ার ছেড়ে উঠে রতীশের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে উঠে রতীশের মুখের দিকে চেয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। এক বছর বাদে সে তার প্রিয়তম পরুষটিকে চোখের সামনে দেখে সব বাকশক্তি যেন হারিয়ে ফেলল। রতীশও অবাক হয়ে অপলক চোখে সীমন্তিনীর মুখের দিকে চেয়ে রইল। সীমন্তিনীর ভেতর থেকে একটা কান্না উথলে উঠতে চাইছিল যেন। নিজেকে সামলে নিয়ে একটু পিছিয়ে আসতে সতীশও দাদাকে প্রণাম করল।

সীমন্তিনী নিজের চোখের কোল মুছতে মুছতে সুকোমল স্যারকে বলল, “সরি স্যার। কিছু মনে করবেন না। আসলে প্রায় আট বছর আগে এ কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে বেরোবার পর থেকে এতদিনের মধ্যে আর রাজগঞ্জের কাউকে চোখে দেখিনি আমি। আট বছর বাদে এ কলেজে এসে আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছিল। আচ্ছা স্যার, আমরা এখন উঠছি। রিক্সা দাঁড় করিয়ে রেখেছি। পরে আবার দেখা করব” বলে আবার তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে সতীশকে বলল, “চল ভাই”।
 

সুকোমল স্যার বললেন, “ঠিক আছে মা। আয়। তবে শোন, আইপিএস কোর্সের কিছু স্টাডি মেটেরিয়াল আমার কাছে আছে। ছেলেটাকে আইপিএস বানাবার ইচ্ছে ছিল আমার। তাই কিছু মেটেরিয়ালস কালেক্ট করেছিলাম। কিন্তু ও তো শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনেই গিয়ে ঢুকল। তাই তোর প্রয়োজন হলে এক সময় বাড়ি এসে ওগুলো নিয়ে যাস”।

সীমন্তিনী “আচ্ছা স্যার” বলে সতীশকে নিয়ে বেরিয়ে এল।

বাড়ির সামনে রিক্সা থেকে নেমে সতীশ ব্যাগদুটো নিয়ে বলল, “দিদি, মিষ্টির প্যাকেটটা তুই নিস” বলে বাড়ির গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল। রিক্সাওয়ালা রতন কিছুতেই তার বড়দির কাছ থেকে ভাড়া নেবে না। সীমন্তিনী অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওর হাতে জোর করে একশ’টা টাকা গুঁজে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে রতন, শোন ভাই। আমি তোকে ভাড়া দিচ্ছি না। কিন্তু এ টাকাটা তুই নে ভাই। বাড়ি যাবার সময় কাকিমার জন্য কিছু মিষ্টি নিয়ে তার হাতে দিয়ে বলিস যে আমি পাঠিয়েছি। লক্ষ্মী ভাই, আমার কথাটা রাখ”।
 

রতন টাকাটা হাতে নিয়ে আবার সীমন্তিনীকে প্রণাম করে রিক্সা নিয়ে ফিরে গেল। সীমন্তিনী বাড়ির গেটের দিকে ঘুরতেই সরলাদেবী ছুটে এসে তাকে বুকে চেপে ধরলেন। সীমন্তিনী নিজেও তার বড়মাকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে দেখতে পেল গেটের ভেতরে শাড়ি পড়া কেউ একজন লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখছে। তার বুঝতে বাকি রইল না কে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। সরলাদেবীর হাতের বাঁধন কিছুটা শিথিল করতেই সীমন্তিনী ঝুঁকে তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।
 

সরলাদেবী সীমন্তিনীর চিবুকে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে বলল, “ইশ, কি চেহারা বানিয়েছিস রে মা? জানি তো। একা থাকলে তুই বুঝি ঘরে রান্নাবান্না না করে বাইরের খাবার খেয়েই থাকিস। আর কিছু না হোক নিজের শরীরটার ওপর তো একটু যত্নবান হতে হয়। চল চল ভেতরে চল। আমি কখন থেকে তোর পথ চেয়ে বসে আছি রে মা। আয় আয়” বলে তার হাত ধরে টানতে লাগলেন।
 

গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে কাউকে দেখতে পেল না সীমন্তিনী। বুঝতে অসুবিধে হলনা, যিনি লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখছিলেন তিনি ভেতরে চলে গেছেন। সীমন্তিনী হাতের প্যাকেটটা সরলাদেবীর হাতে দিতে দিতে বলল, “বড়মা একটু ধর না এটা”।
 

সরলাদেবী প্যাকেটটা হাতে নিতেই সীমন্তিনী মাটিতে ঢুকে সেই জায়গাটায় হাত ছুঁইয়ে নিজের মাথায়
 
ছোঁয়াল। সরলাদেবী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এ কিরে? তুই এখানে প্রণাম করছিস কেন মা”?

সীমন্তিনী ভারী গলায় জবাব দিল, “আট বছর বাদে আমার জন্ম ভিটেয় ফিরে এলাম। তাই একটু আমার জন্মভিটেকে প্রণাম করলাম বড়মা। চল ঘরে যাই”।

সরলাদেবী সীমন্তিনীর হাত ধরে বললেন, “তোর বড়মার চোখেও ধুলো দিতে চাইছিস তুই? ভাবিস নে মা। এবার দেখিস, সব ঠিক হয়ে যাবে। আয়”।

ঘরের বারান্দায় উঠতেই আরেক ঘর থেকে চন্দ্রাদেবী ছুটে এলেন। সীমন্তিনী তাকেও প্রণাম করে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছ ছোটমা”?
 

চন্দ্রাদেবীও সীমন্তিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বললেন, “ভাল আছিরে মা। কিন্তু তুই এত শুকিয়ে গেছিস কেন রে? ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করিস না বুঝি, তাই না”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “ডায়েটিং করছি গো। বেশী খেলে যে মুটিয়ে যাব। তা বাড়ির আর সবাই কোথায়”?
 

সরলাদেবী বললেন, “এ সময়ে আর কে থাকে বাড়িতে? ছেলেমেয়েরা তো সবাই এখন কলেজে। তোর মা রান্নাঘরে আছে। আর কর্তারা তো সবাই যে যার দোকানে। চল ঘরে চল মা” বলে চন্দ্রাদেবীকে বললেন, “ছোটো, তুই রান্নাঘরের বাকি কাজটুকু সেরে ফেল বোন। আমি একটু বাদে আসছি”।
 

ছোটমা চলে যেতে সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কোন ঘরে যাব বড়মা? আমার ঘর যে আরেকজনকে ছেড়ে দিয়েছি আমি”।
 

সরলাদেবী বললেন, “মন খারাপ করিস নে মা। তুই যে ছোটবেলা থেকেই নীলকন্ঠ হয়ে উঠেছিস রে। তাই তুই চাইলে তোর দাদাভাইয়ের ঘরেও যেতে পারিস। আর সেটা না চাইলে তুই আমার ঘরে থাকবি”।

সীমন্তিনী বলল, “শেষবারের মত আজকের রাতটা আমাকে দাদাভাইয়ের ঘরে থাকতে দেবে বড়মা? তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পার। আর নতুন করে কোন জটিলতার সৃষ্টি আমি করব না। এখন আমার জীবনে শুধু দুটোই লক্ষ্য। আইপিএস হওয়া। আর দাদাভাই আর রচুর পাশে থাকা। আর আমার মনে হয় রচুর সাথে দাদাভাইয়ের বিয়ের আগে তাকে কয়েকটা কথা আমার ভাল করে বুঝিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাই আজকের রাতটা আমি তোমার কাছে ভিক্ষে চাইছি বড়মা। কাল থেকে আমি তোমার সাথে শোব রাতে”।
 

সরলাদেবী সীমন্তিনীকে নিয়ে রতীশের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, “ঠিক আছে, তুই যা চাইছিস, তা-ই হবে”।

সীমন্তিনী রতীশের ঘরের ভেতরে ঢুকে সরলাদেবীকে বলল, “আর শোনো বড়মা, আগামী পরশু দিন জেঠুকে কালচিনি যেতে হবে। খবরটা তাকে এখনই জানিয়ে দিও। তারও তো প্রস্তুতি নেবার দরকার আছে। অবশ্য দুপুরে যখন খেতে আসবে তখন কথাটা আমিও তাকে বলব। তবু তুমি আগে থেকে তাকে কথাটা জানিয়ে রাখো। আর ঘরে পাঁজি আছে তো? নইলে জেঠুকে বলে দাও দুপুরে বাড়ি আসবার সময় একখানা পাঁজি যেন নিয়ে আসেন। বিকেলেই সেটা আমার দরকারে লাগবে। আর আজ রাতে বাড়ির সব বড়দের সাথে আমার আলোচনা আছে। তাই বাবা, কাকু, জেঠু সবাইকে বলে দিও তারা যেন আটটা সাড়ে আটটার ভেতর বাড়ি ফিরে আসেন। দাদাভাই সেখানে না থাকলেও চলবে। তবে সতুকেও থাকতে হবে। কথাটা ওকেও জানিয়ে দিও”।

সরলাদেবী বললেন, “বেশ আমি সবাইকে এখনই জানিয়ে দিচ্ছি। তুই স্নান টান করে ফ্রেশ হয়ে নে মা”।


_________________________________________________________________________________________________________________
ss_sexy
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 25-02-2020, 08:51 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)