25-02-2020, 11:55 AM
।। চতুশ্চত্বারিশ পর্ব।।
দীর্ঘ ন'-মাস সময় যেন মুহুর্তে কেটে গেল।বৈদুর্য সেন র্যাঙ্ক ভাল করতে না পারলেও ১৯৭৯ ব্যাচে সুযোগ পেয়েছে।পাস করার পর তিনমাস ট্রেনিং কিভাবে কেটেছে দিনগুলো ভাবলে কান্না পেয়ে যায়।রান্না বন্ধ হোটেল থেকে খেয়ে আসতো,একার জন্য রান্না করতে ভাল লাগে না। সুভদ্রার অবাক লাগে বৈদুর্য তার জীবনে যখন আসেনি তখন তো দিব্যি ছিল।মাঝে কয়েকবার জিনি এসেছিল।
--দিদিভাই এবার একটা পরিচয় দেবার মত কিছু হল?
সুভদ্রা বুঝতে পারে কি বলতে চাইছে জিনি।বৈদুর্য আইপিএস না হলেও দিব্যেন্দুর চেয়ে অনেক বড় মানুষ। যখন বিয়ে করেছি তখন ও বেকার ছিল,সে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে।বরং বৈদুর্য আপত্তি করেছিল। জিনিকে সে কথা বলে না।হেসে বলল,যখন বেকার ছিল তখনই ভাল ছিল সারাক্ষণ আমার সঙ্গে থাকতো।
সুভদ্রা কথাটা মজা করে বললেও অবচেতন মনের একটা আশঙ্কা ছিল না তা নয়।বড় চাকরি পেয়েছে এখন মিমিদিকে কি আগের মত দেখবে?আর পাঁচজন পুরুষের মত খবরদারি করবে নাতো?
--দিদিভাই একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু মনে করবি নাতো?
সুভদ্রা অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকায়।সুতন্দ্রা বলল,বৈদুর্য একদিন আইপিএস হবে তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না তবু তুই ওকে বিয়ে করলি--।
--বুঝেছি তুই কি বলতে চাস।জিনিকে থামিয়ে দিয়ে সুভদ্রা বলল,দ্যাখ আমি যা উপার্জন করি তাতে ও চাকরি না করলেও চলে যেত।আমি মানুষটাকে যতটা বুঝেছি ওর সঙ্গে সুখে থাকতে পারবো এই নিশ্চয়তা আমি পেয়েছি।
--ওভাবে বলা যায় না।অভাবে স্বভাব নষ্ট একটা কথা আছে--তুই তো মানবি?
সুভদ্রা হাসল বোনের কথা শুনে।
--তুই হাসছিস? আমি কি ভুল বললাম?
--ওর কোনো অভাব নেই।
--এখন না হয় নেই--।
--এখন নয় বিয়ের আগেও ছিল না।একদিন আমি বলেছিলাম তোমার বাবা সম্পত্তি সৎ মায়ের নামে লিখে দিচ্ছে, কি বলল জানিস?বলল যার জিনিস সে লিখে দিচ্ছে আমি কি করব?বিয়ের পর বাপের বাড়ী থেকে আমি কি পেলাম তা নিয়ে কোনো কৌতুহল প্রকাশ করতেও শুনিনি।কথাটা বলেই সুভদ্রার খেয়াল হয় কথাটা এভাবে বলা ঠিক হয়নি।
--তুই দিব্যেন্দুর কথা বলছিস?চাকরিটা চলে গেল মাথার উপর মেয়ে বউ তাতে কারও মাথার ঠিক থাকে?
--বিশ্বাস কর জিনি দিব্যেন্দুর কথা আমার মনেও আসেনি।আমি বৈদুর্যের কথা বলছি।ও তখন একটা মেয়েদের হোস্টেলে বলতে পারিস একজন চাকর,কত টাকাই বা পায়।আমি একদিন ওকে একশো টাকা দিতে গেলে বলেছিল,আমি নিতে পারব না।
প্রথমে রাগ হয়েছিল দেমাক দেখানো হচ্ছে।পরে ওর প্রতি আমার শ্রদ্ধা জন্মায়।
--আচ্ছা বাবা তোর বরকে নিয়ে আমি কিছু বলব না।তবে একটা কথা তোকে বলি তুই জানিস না ও একটা গুণ্ডা--।
সুভদ্রা খিলখিল করে হেসে ফেলে বলল,জানব না কেন?একদিন কি হয়েছে জানিস একটা মস্তান আমাকে একটা খারাপ কথা বলতে তাকে এমন তেড়ে গেছিল বেচারি পালাবার পথ পায়না।সুভদ্রা কিছুক্ষণ পর বলল,এইসব দেখেই ওকে আইপিএস-এ বসাবার কথা ভেবেছি।
ট্রেনিংযের পর বর্ধমানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার পদে এখন বহাল,ভাল গ্রেড থাকলে হয়তো কলকাতার কাছাকাছি কোথাও পোষ্টিং হতো।সুভদ্রার একবার মনে হয়েছিল উপর মহলে যোগাযোগ করে যদি কিছু করা যায় শেষ মুহুর্তে বিবেকের সাড়া না পেয়ে বাস্তবকে মেনে নিয়ে বিরত থেকেছে।একজন বারাসাত আরেকজন বর্ধমান ভাল লাগে? বৈদুর্যকে একা ছেড়ে রাখা এই মুহুর্তে সুভদ্রার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়।বৈদুর্য কি ছেলে মানুষ নাকি? না-হোক রাতে তাহলে সুভদ্রা ঘুমোতেই পারবে না।দরকার হলে চাকরি ছেড়ে বর্ধমান কোর্টে প্রাকটিশ করবে।এই সঙ্কটময় মুহুর্তে একটাই উপায়ের কথা মনে পড়ল।সুভদ্রা বর্ধমানে বদলি হবার আবেদন করবে, যতদিন না হয় ছুটি নিয়ে বৈদুর্যর কাছে চলে যাবে।যতক্ষণ বাড়ীতে থাকে বিড়ালের মত গায়ে গায়ে লেগে থাকতো।এখন দিনগুলো অসহ মনে হয় তার কাছে।সেই মিমিদি-মিমিদি ডাক শোনার জন্য আকুলতা তাকে কুরে কুরে খায় সর্বক্ষণ।
গত সপ্তাহে ৩৭৬ ধারায় মামলা সেই সঙ্গে ১২০বি, ২০্ ৩৪২ উপধারায় দলবদ্ধ ভাবে ;., খুন ও প্রমাণ লোপের চেষ্টায় অভিযুক্ত শেখ আনসার হাসান আলির যাবজ্জীবন এবং সুবল সর্দার আমিনুদ্দিন নূর মহম্মদের সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণার পর সিডিজেএম বীরেন্দ্র প্রতাপ সাবধানে চলাফেরা পরামর্শ দিয়েছেন।ওরা অবশ্য উচ্চ আদালতে গেছে রায়ের বিরোধীতা করে।সুভদ্রা এ সময় বৈদুর্যের অভাব বোধ করে।ভয়ে নয় তাহলে স্যারের নিরাপত্তা রক্ষীর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিত না।ফোন বাজছে সুভদ্রা রিসিভার তুলে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?
--ম্যাডাম সেন?অন্যপ্রান্ত থেকে মহিলা কণ্ঠ শোনা গেল।
--সুভদ্রা সেন,আপনি?
--স্যার আপনার সঙ্গে কথা বলবেন,একটু ধরুন।
সুভদ্রার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়।স্যার? নিজে ফোন করতে পারো না,দেখাচ্ছি মজা।
--তুমি কোর্টে যাওনি?ওখানে না পেয়ে এখানে ফোন করলাম।
--ঐ মহিলা কে? সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে।
--তোমার কি শরীর খারাপ?কোর্টে যাওনি কেন?
--আগে আমার কথার উত্তর দাও।ঐ মহিলা কে?
বৈদুর্য আড়চোখে মিস সরকারকে দেখে বলল,দেখা হলে বলবো।তুমি ভাল আছো তো?
--দেখা হলে বলবো।সুভদ্রা বলল।
--কেমন আছো মিমিদি? না বললে আমি কাজ করতে পারবো না।
সুভদ্রার মন ভরে গেল,বলল,আমি ভাল আছি খুব ভাল আছি।শোনো এবার কাজের কথা শোনো।কয়েকদিনের মধ্যে একটা পার্টির ব্যাবস্থা করছি।তুমি কি কাউকে বলবে?
--কে আমি?বৈদুর্য ভাবে কে আছে তার বলার মত? মনে পড়ল দেবী পার্বতী ছেলেদের পৃথিবী ঘুরে আসতে বললে কার্তিক পৃথিবী পরিভ্রমণে বেরিয়ে পড়ল।আর গণপতি তার জনণীকে একবার প্রদক্ষিণ করেছিল।মিমিদি ছাড়া তার কেই বা আছে।
--কি কেউ আছে?সুভদ্রা তাগাদা দিল।
--আমার মিমিদি থাকলেই সবার থাকা হবে।
সুভদ্রা বাম হাতের করতলে চোখ মোছে।
--হ্যালো?বৈদুর্য সাড়া না পেয়ে জিজ্ঞেস করে।
--আচ্ছা দিন ঠিক করে তোমাকে জানাবো।এখন রাখছি বলে ফোন কেটে দিল।
বৈদুর্য অবাক হয়,ফোন রেখে দিল কেন? কেউ কি এসেছে?সুভদ্রা সোফায় বসে পড়ে, আকাশের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত।চোখ ছাপিয়ে জল এল কেন? তার কি মনে হয়েছিল বৈদুর্য উচ্চ পদে নিযুক্ত হয়ে আর আগের মত নেই?অবচেতনে ছিল কি কোনো অপরাধবোধ? মনে মনে বলে তুমি আমার বৈদুর্য মণি একদম বদলাও নি আগের মতই উজ্জ্বল।
জিনি তো আছেই তাছাড়া অনেকে বিষয়টা সেলিব্রেট করার জন্য খুব ধরেছে।জয়ীদি বলছিল বিয়েতে ফাকি দিয়েছো। এবার ছাড়ছি না।চেম্বারে এসে কেকে অভিনন্দন জানিয়ে গেছেন। সুভদ্রা স্থির করে একটা পার্টি দেবে। সবাই ধরেছে বলে নয় বৈদুর্যর যাতে মনে না হয় তার মিমিদি এই উন্নতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না।সুভদ্রা জানে যে যাই বলুক যতক্ষণ তার মিমিদি কিছু না বলছে বৈদুর্যর মনে শান্তি নেই।
দেবাবুকে ফোন করলো সুভদ্রা।অফিসে নেই এলে জানাবে। কাগজ কলম নিয়ে একটা তালিকা করতে বসলো।ড্রিঙ্কের ব্যবস্থা রাখবে যদি কেউ খেতে চায়।মি.দাগা তো খান বিপি সিংও আছেন।বেশি ঝামেলা নয় বিরিয়ানি চিকেন চাপ আইস ক্রিম--।দেবাবুর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করবে ভেবে কলম বন্ধ করে রাখে।
রবিবার।আশুবাবু সকালে এসে কিছু জিনিস পত্র রেখে গেছেন।দিব্যেন্দু জিনিরা এখানেই খাওয়া দাওয়া করেছে। জনা কুড়ি-বাইশ লোকজনের আসার কথা সন্ধ্যে বেলা।সুভদ্রা ভাবছে যার জন্য এসব করা সে সময়মতো আসবে তো?সকালে ফোন করে শুনলো বাইরে বেরিয়েছে। ফিরলে যেন ফোন করে বলে দিয়েছিল কিন্তু আর কখন ফোন করবে?সন্ধ্যের একটু আগে জিনি এসে চুপি চুপি বলল,দিদিভাই ও কিন্তু একটূ খেতে পারে তুমি কিছু মনে কোর না।
বোনের দিকে তাকিয়ে হাসলেন সুভদ্রা। সবার প্রথমে এলেন জয়ন্তীদি।হেসে জড়িয়ে ধরে বললেন,কনগ্রাচুলেশন।একদিকে বোতল দেখে স্বামীকে বললেন,বীরু দোন্ত ক্রশ লিমিট।
বিপি সিং বোতলের লেবেল দেখে বললেন,মিসেস সেন এগূলো কি করে যোগাড় করলেন?
--একজন আমাকে খুব হেল্প করেছেন।
-- আমার কোনো প্রেজুদিস নাই দেশি-বিদেশিতে ফ্যারাক দেখি না। বিপি সিং স্রাগ করলেন।
গোদেলিয়েভ ম্যাম ঢুকতে সুভদ্রা এগিয়ে গিয়ে বললেন,আসুন মিসেস চ্যাটার্জি,খুব ভাল লাগলো।
--হয়ার ইজ বাইদুজ?
--ও এসে পড়বে।
--হি ইজ ভেরি নাইস গায় লাভিং অলসো।সোফায় বসতে বসতে গোদেলিয়েভ বললেন।
সেদিন দুপুরের কথাটা মনে পড়ে গেল। সুভদ্রা সময় মতো না পৌছালে লাইফটা স্পয়েল হয়ে যেতো। কেকে এলেন,শেষদিকে সুভদ্রার সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠোতা হয়েছিল। কেকে জিজ্ঞেস করলেন,আর জয়েন করবেন না চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত?
--কি করবো বলুন,তাহলে আমাদের আলাদা থাকতে হবে।
--আপনাকে খুব মিস করবো।
বিপি সিং আড়চোখে দেখেন একজন অর্ডিনারি এ্যাডভোকেটের সঙ্গে মিসেস সেন কথা বলছেন।তার খুব ভাল লাগে না। চারজন বয় ঘুরে ঘুরে সার্ভ করছে। রাত বাড়তে থাকে বৈদুর্যের দেখা নেই সুভদ্রা নিজেকে অপমানিত বোধ করেন। সিদ্ধান্ত করেন মনে মনে বৈদুর্য যদি না আসে তাহলে ছুটি বাতিল করে কালই তিনি আদালতে যাওয়া শুরু করবেন। মি.দাগার কি কাজ আছে দুঃখ প্রকাশ করে চলে গেলেন। কেকেও চলে গেলেন।
গোদেলিয়েভ জয়ন্তীদি ছাড়া সবাই রাত হচ্ছে দেখে একে একে চলে গেল।ঠিক সেই মুহুর্তে হাজির বৈদুর্য সেন। বিপি সিং জয়ন্তীদিকে নমস্কার করে বৈদুর্য বলল,আমি খুব দুঃখিত।একটা ঝামেলায় আটকে গেছিলাম।
--নো প্রবলেম।ঝামেলা তো জানান দিয়ে আসে না।আজ আসি মি.সেন আরেকদিন বরং আলাপ করা যাবে।
ওরা চলে যেতে বৈদুর্যর নজরে পড়ল গোদেলিয়েভ হাসি হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে, কাছে গিয়ে বলল,ম্যাম ভাল আছেন?
--তুমি আনেক দেরি করেছো।আয় এ্যাম ভেরি প্লিজড।আমি জানতাম তুমি একদিন সাইন করবে।
বৈদুর্য দেখল মিমিদি নেই।জিনিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,দিদিভাই কোথায়?
--ঘরে শুয়ে আছে,শরীর ভাল না।
--তোমরা আজ থাকবে?
--পাগল।তিন্নিকে নিয়ে শাশুড়ি মা একা রয়েছে।
--দিদিভাইয়ের কাছ থেকে গাড়ীর চাবিটা নিয়ে এসো।
দিব্যেন্দুকে ধরে ধরে নীচে নামালো বৈদুর্য।পিছনে দিব্যেন্দু আর জিনি সামনে বৈদুর্যের পাশে গোদেলিয়েভ ম্যাম।সল্ট লেকে জিনিদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ী চলল শেল্টারের দিকে। গেট অবধি গোদেলিয়ভকে এগিয়ে দিয়ে বৈদুর্য এবার রাজার হাটের পথে। মিমিদির শরীর খারাপ কি করবে এত রাতে?
সুভদ্রা সেন বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।বৈদুর্য পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, মিমিদি তোমার শরীর খারাপ লাগছে?
এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিয়ে সুভদ্রা বলল,গায়ে হাত দেবে না।রাত দুপুরে এসে দরদ দেখানো হচ্ছে।
বৈদুর্য হাত সরিয়ে নিল।বুঝতে পারে মিমিদি রাগ করেছে শরীর খারাপ একটা বাহানা। বৈদুর্য আপন মনে বিড় বিড় করে,এই মহিলা একজন বিচারক।রায়দানের আগে ফাঁসির আসামীর বক্তব্যও বিচারকের শোনা উচিত।তা নাহলে নিরপেক্ষ বিচার প্রহসনে রুপান্তরিত হতে বাধ্য।
সুভদ্রা ঘুরে বৈদুর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,শুনি ফাঁসির আসামীর বক্তব্য।
--আমি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে তদন্ত সেরে ফিরছি কেন না আমাকে জরুরী ডাকে উপস্থিত হতে হবে। দুপাশে ধান ক্ষেত মাঝখানে জাতীয় সড়ক ধরে ছুটে চলেছে আমার জিপ।একটি সুমো গাড়ী দ্রুত আমার গাড়ীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ড্রাইভার বলল স্যার এই গাড়ীটা একটা মোটর বাইককে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল, অনুসরণ করবো?এক মুহুর্ত সময় নিয়ে বললাম,মোটর বাইকের কাছে চলো।গাড়ী ঘুরিয়ে কিছুটা যেতে নজরে পড়ল ধান ক্ষেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে একটি পুরুষ একটী মহিলা কিছুটা দূরে একটি শিশু কন্যা।
--আ-হা রে! কত বয়স হবে?
--দুই কি তিন?
--ইস এতো দুধের শিশু।তুমি কি করলে?
--নীচে নেমে শিশুটিকে কোলে নিয়ে জিপে শুইয়ে দিলাম।ড্রাইভারের সহায়তায় অন্য দুজনকে জিপে তুলে রওনা হলাম কাছা কাছি হাসপাতালে।
--ব্যাস দায়িত্ব শেষ?বাড়ীর লোককে খবর দাওনি?
--এরা কারা কোথা থেকে আসছে কোথায় যাচ্ছিল জ্ঞান না ফেরা অবধি কিছুই জানার উপায় নেই।বাচ্চাটির খুব একটা লাগেনি--।
--থ্যাঙ্ক গড।সুভদ্রা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
--ওদের জ্ঞান ফিরলো সন্ধ্যের সময়।মাথায় হেলমেট ছিল তাই রক্ষে।ছেলেটি তার দিদিকে বাইকে করে শ্বশুরবাড়ী পৌছে দিচ্ছিল।বর্ধমান শহরে দিদির শ্বশুরবাড়ী।
--একটা ফোন করতে কি হয়েছিল?সুভদ্রা বলল।
--চারদিকে গাছপালা মাঠে ধান ক্ষেত বহুদুরে গ্রাম একটা দোকান নেই যে দোকানে গিয়ে ফোন করবো।
--বাজে কথা বোলো না বর্ধমান থেকে ফোন করতে পারতে?ইচ্ছে করছে ঠাষ করে এক চড় কষাই,খালি বানিয়ে বানিয়ে কথা।
বৈদুর্য এইক্ষণে স্বস্তি পায় মিমিদি ফর্মে এসেছে।
--সঙের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? চেঞ্জ করো,আমি বাথরুম থেকে ফিরে খাবার দিচ্ছি।সুভদ্রা বাথরুমে ঢুকে গেল।
দীর্ঘ ন'-মাস সময় যেন মুহুর্তে কেটে গেল।বৈদুর্য সেন র্যাঙ্ক ভাল করতে না পারলেও ১৯৭৯ ব্যাচে সুযোগ পেয়েছে।পাস করার পর তিনমাস ট্রেনিং কিভাবে কেটেছে দিনগুলো ভাবলে কান্না পেয়ে যায়।রান্না বন্ধ হোটেল থেকে খেয়ে আসতো,একার জন্য রান্না করতে ভাল লাগে না। সুভদ্রার অবাক লাগে বৈদুর্য তার জীবনে যখন আসেনি তখন তো দিব্যি ছিল।মাঝে কয়েকবার জিনি এসেছিল।
--দিদিভাই এবার একটা পরিচয় দেবার মত কিছু হল?
সুভদ্রা বুঝতে পারে কি বলতে চাইছে জিনি।বৈদুর্য আইপিএস না হলেও দিব্যেন্দুর চেয়ে অনেক বড় মানুষ। যখন বিয়ে করেছি তখন ও বেকার ছিল,সে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে।বরং বৈদুর্য আপত্তি করেছিল। জিনিকে সে কথা বলে না।হেসে বলল,যখন বেকার ছিল তখনই ভাল ছিল সারাক্ষণ আমার সঙ্গে থাকতো।
সুভদ্রা কথাটা মজা করে বললেও অবচেতন মনের একটা আশঙ্কা ছিল না তা নয়।বড় চাকরি পেয়েছে এখন মিমিদিকে কি আগের মত দেখবে?আর পাঁচজন পুরুষের মত খবরদারি করবে নাতো?
--দিদিভাই একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিছু মনে করবি নাতো?
সুভদ্রা অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকায়।সুতন্দ্রা বলল,বৈদুর্য একদিন আইপিএস হবে তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না তবু তুই ওকে বিয়ে করলি--।
--বুঝেছি তুই কি বলতে চাস।জিনিকে থামিয়ে দিয়ে সুভদ্রা বলল,দ্যাখ আমি যা উপার্জন করি তাতে ও চাকরি না করলেও চলে যেত।আমি মানুষটাকে যতটা বুঝেছি ওর সঙ্গে সুখে থাকতে পারবো এই নিশ্চয়তা আমি পেয়েছি।
--ওভাবে বলা যায় না।অভাবে স্বভাব নষ্ট একটা কথা আছে--তুই তো মানবি?
সুভদ্রা হাসল বোনের কথা শুনে।
--তুই হাসছিস? আমি কি ভুল বললাম?
--ওর কোনো অভাব নেই।
--এখন না হয় নেই--।
--এখন নয় বিয়ের আগেও ছিল না।একদিন আমি বলেছিলাম তোমার বাবা সম্পত্তি সৎ মায়ের নামে লিখে দিচ্ছে, কি বলল জানিস?বলল যার জিনিস সে লিখে দিচ্ছে আমি কি করব?বিয়ের পর বাপের বাড়ী থেকে আমি কি পেলাম তা নিয়ে কোনো কৌতুহল প্রকাশ করতেও শুনিনি।কথাটা বলেই সুভদ্রার খেয়াল হয় কথাটা এভাবে বলা ঠিক হয়নি।
--তুই দিব্যেন্দুর কথা বলছিস?চাকরিটা চলে গেল মাথার উপর মেয়ে বউ তাতে কারও মাথার ঠিক থাকে?
--বিশ্বাস কর জিনি দিব্যেন্দুর কথা আমার মনেও আসেনি।আমি বৈদুর্যের কথা বলছি।ও তখন একটা মেয়েদের হোস্টেলে বলতে পারিস একজন চাকর,কত টাকাই বা পায়।আমি একদিন ওকে একশো টাকা দিতে গেলে বলেছিল,আমি নিতে পারব না।
প্রথমে রাগ হয়েছিল দেমাক দেখানো হচ্ছে।পরে ওর প্রতি আমার শ্রদ্ধা জন্মায়।
--আচ্ছা বাবা তোর বরকে নিয়ে আমি কিছু বলব না।তবে একটা কথা তোকে বলি তুই জানিস না ও একটা গুণ্ডা--।
সুভদ্রা খিলখিল করে হেসে ফেলে বলল,জানব না কেন?একদিন কি হয়েছে জানিস একটা মস্তান আমাকে একটা খারাপ কথা বলতে তাকে এমন তেড়ে গেছিল বেচারি পালাবার পথ পায়না।সুভদ্রা কিছুক্ষণ পর বলল,এইসব দেখেই ওকে আইপিএস-এ বসাবার কথা ভেবেছি।
ট্রেনিংযের পর বর্ধমানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার পদে এখন বহাল,ভাল গ্রেড থাকলে হয়তো কলকাতার কাছাকাছি কোথাও পোষ্টিং হতো।সুভদ্রার একবার মনে হয়েছিল উপর মহলে যোগাযোগ করে যদি কিছু করা যায় শেষ মুহুর্তে বিবেকের সাড়া না পেয়ে বাস্তবকে মেনে নিয়ে বিরত থেকেছে।একজন বারাসাত আরেকজন বর্ধমান ভাল লাগে? বৈদুর্যকে একা ছেড়ে রাখা এই মুহুর্তে সুভদ্রার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়।বৈদুর্য কি ছেলে মানুষ নাকি? না-হোক রাতে তাহলে সুভদ্রা ঘুমোতেই পারবে না।দরকার হলে চাকরি ছেড়ে বর্ধমান কোর্টে প্রাকটিশ করবে।এই সঙ্কটময় মুহুর্তে একটাই উপায়ের কথা মনে পড়ল।সুভদ্রা বর্ধমানে বদলি হবার আবেদন করবে, যতদিন না হয় ছুটি নিয়ে বৈদুর্যর কাছে চলে যাবে।যতক্ষণ বাড়ীতে থাকে বিড়ালের মত গায়ে গায়ে লেগে থাকতো।এখন দিনগুলো অসহ মনে হয় তার কাছে।সেই মিমিদি-মিমিদি ডাক শোনার জন্য আকুলতা তাকে কুরে কুরে খায় সর্বক্ষণ।
গত সপ্তাহে ৩৭৬ ধারায় মামলা সেই সঙ্গে ১২০বি, ২০্ ৩৪২ উপধারায় দলবদ্ধ ভাবে ;., খুন ও প্রমাণ লোপের চেষ্টায় অভিযুক্ত শেখ আনসার হাসান আলির যাবজ্জীবন এবং সুবল সর্দার আমিনুদ্দিন নূর মহম্মদের সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণার পর সিডিজেএম বীরেন্দ্র প্রতাপ সাবধানে চলাফেরা পরামর্শ দিয়েছেন।ওরা অবশ্য উচ্চ আদালতে গেছে রায়ের বিরোধীতা করে।সুভদ্রা এ সময় বৈদুর্যের অভাব বোধ করে।ভয়ে নয় তাহলে স্যারের নিরাপত্তা রক্ষীর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিত না।ফোন বাজছে সুভদ্রা রিসিভার তুলে কানে লাগিয়ে বলল,হ্যালো?
--ম্যাডাম সেন?অন্যপ্রান্ত থেকে মহিলা কণ্ঠ শোনা গেল।
--সুভদ্রা সেন,আপনি?
--স্যার আপনার সঙ্গে কথা বলবেন,একটু ধরুন।
সুভদ্রার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়।স্যার? নিজে ফোন করতে পারো না,দেখাচ্ছি মজা।
--তুমি কোর্টে যাওনি?ওখানে না পেয়ে এখানে ফোন করলাম।
--ঐ মহিলা কে? সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে।
--তোমার কি শরীর খারাপ?কোর্টে যাওনি কেন?
--আগে আমার কথার উত্তর দাও।ঐ মহিলা কে?
বৈদুর্য আড়চোখে মিস সরকারকে দেখে বলল,দেখা হলে বলবো।তুমি ভাল আছো তো?
--দেখা হলে বলবো।সুভদ্রা বলল।
--কেমন আছো মিমিদি? না বললে আমি কাজ করতে পারবো না।
সুভদ্রার মন ভরে গেল,বলল,আমি ভাল আছি খুব ভাল আছি।শোনো এবার কাজের কথা শোনো।কয়েকদিনের মধ্যে একটা পার্টির ব্যাবস্থা করছি।তুমি কি কাউকে বলবে?
--কে আমি?বৈদুর্য ভাবে কে আছে তার বলার মত? মনে পড়ল দেবী পার্বতী ছেলেদের পৃথিবী ঘুরে আসতে বললে কার্তিক পৃথিবী পরিভ্রমণে বেরিয়ে পড়ল।আর গণপতি তার জনণীকে একবার প্রদক্ষিণ করেছিল।মিমিদি ছাড়া তার কেই বা আছে।
--কি কেউ আছে?সুভদ্রা তাগাদা দিল।
--আমার মিমিদি থাকলেই সবার থাকা হবে।
সুভদ্রা বাম হাতের করতলে চোখ মোছে।
--হ্যালো?বৈদুর্য সাড়া না পেয়ে জিজ্ঞেস করে।
--আচ্ছা দিন ঠিক করে তোমাকে জানাবো।এখন রাখছি বলে ফোন কেটে দিল।
বৈদুর্য অবাক হয়,ফোন রেখে দিল কেন? কেউ কি এসেছে?সুভদ্রা সোফায় বসে পড়ে, আকাশের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত।চোখ ছাপিয়ে জল এল কেন? তার কি মনে হয়েছিল বৈদুর্য উচ্চ পদে নিযুক্ত হয়ে আর আগের মত নেই?অবচেতনে ছিল কি কোনো অপরাধবোধ? মনে মনে বলে তুমি আমার বৈদুর্য মণি একদম বদলাও নি আগের মতই উজ্জ্বল।
জিনি তো আছেই তাছাড়া অনেকে বিষয়টা সেলিব্রেট করার জন্য খুব ধরেছে।জয়ীদি বলছিল বিয়েতে ফাকি দিয়েছো। এবার ছাড়ছি না।চেম্বারে এসে কেকে অভিনন্দন জানিয়ে গেছেন। সুভদ্রা স্থির করে একটা পার্টি দেবে। সবাই ধরেছে বলে নয় বৈদুর্যর যাতে মনে না হয় তার মিমিদি এই উন্নতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না।সুভদ্রা জানে যে যাই বলুক যতক্ষণ তার মিমিদি কিছু না বলছে বৈদুর্যর মনে শান্তি নেই।
দেবাবুকে ফোন করলো সুভদ্রা।অফিসে নেই এলে জানাবে। কাগজ কলম নিয়ে একটা তালিকা করতে বসলো।ড্রিঙ্কের ব্যবস্থা রাখবে যদি কেউ খেতে চায়।মি.দাগা তো খান বিপি সিংও আছেন।বেশি ঝামেলা নয় বিরিয়ানি চিকেন চাপ আইস ক্রিম--।দেবাবুর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করবে ভেবে কলম বন্ধ করে রাখে।
রবিবার।আশুবাবু সকালে এসে কিছু জিনিস পত্র রেখে গেছেন।দিব্যেন্দু জিনিরা এখানেই খাওয়া দাওয়া করেছে। জনা কুড়ি-বাইশ লোকজনের আসার কথা সন্ধ্যে বেলা।সুভদ্রা ভাবছে যার জন্য এসব করা সে সময়মতো আসবে তো?সকালে ফোন করে শুনলো বাইরে বেরিয়েছে। ফিরলে যেন ফোন করে বলে দিয়েছিল কিন্তু আর কখন ফোন করবে?সন্ধ্যের একটু আগে জিনি এসে চুপি চুপি বলল,দিদিভাই ও কিন্তু একটূ খেতে পারে তুমি কিছু মনে কোর না।
বোনের দিকে তাকিয়ে হাসলেন সুভদ্রা। সবার প্রথমে এলেন জয়ন্তীদি।হেসে জড়িয়ে ধরে বললেন,কনগ্রাচুলেশন।একদিকে বোতল দেখে স্বামীকে বললেন,বীরু দোন্ত ক্রশ লিমিট।
বিপি সিং বোতলের লেবেল দেখে বললেন,মিসেস সেন এগূলো কি করে যোগাড় করলেন?
--একজন আমাকে খুব হেল্প করেছেন।
-- আমার কোনো প্রেজুদিস নাই দেশি-বিদেশিতে ফ্যারাক দেখি না। বিপি সিং স্রাগ করলেন।
গোদেলিয়েভ ম্যাম ঢুকতে সুভদ্রা এগিয়ে গিয়ে বললেন,আসুন মিসেস চ্যাটার্জি,খুব ভাল লাগলো।
--হয়ার ইজ বাইদুজ?
--ও এসে পড়বে।
--হি ইজ ভেরি নাইস গায় লাভিং অলসো।সোফায় বসতে বসতে গোদেলিয়েভ বললেন।
সেদিন দুপুরের কথাটা মনে পড়ে গেল। সুভদ্রা সময় মতো না পৌছালে লাইফটা স্পয়েল হয়ে যেতো। কেকে এলেন,শেষদিকে সুভদ্রার সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠোতা হয়েছিল। কেকে জিজ্ঞেস করলেন,আর জয়েন করবেন না চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত?
--কি করবো বলুন,তাহলে আমাদের আলাদা থাকতে হবে।
--আপনাকে খুব মিস করবো।
বিপি সিং আড়চোখে দেখেন একজন অর্ডিনারি এ্যাডভোকেটের সঙ্গে মিসেস সেন কথা বলছেন।তার খুব ভাল লাগে না। চারজন বয় ঘুরে ঘুরে সার্ভ করছে। রাত বাড়তে থাকে বৈদুর্যের দেখা নেই সুভদ্রা নিজেকে অপমানিত বোধ করেন। সিদ্ধান্ত করেন মনে মনে বৈদুর্য যদি না আসে তাহলে ছুটি বাতিল করে কালই তিনি আদালতে যাওয়া শুরু করবেন। মি.দাগার কি কাজ আছে দুঃখ প্রকাশ করে চলে গেলেন। কেকেও চলে গেলেন।
গোদেলিয়েভ জয়ন্তীদি ছাড়া সবাই রাত হচ্ছে দেখে একে একে চলে গেল।ঠিক সেই মুহুর্তে হাজির বৈদুর্য সেন। বিপি সিং জয়ন্তীদিকে নমস্কার করে বৈদুর্য বলল,আমি খুব দুঃখিত।একটা ঝামেলায় আটকে গেছিলাম।
--নো প্রবলেম।ঝামেলা তো জানান দিয়ে আসে না।আজ আসি মি.সেন আরেকদিন বরং আলাপ করা যাবে।
ওরা চলে যেতে বৈদুর্যর নজরে পড়ল গোদেলিয়েভ হাসি হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে, কাছে গিয়ে বলল,ম্যাম ভাল আছেন?
--তুমি আনেক দেরি করেছো।আয় এ্যাম ভেরি প্লিজড।আমি জানতাম তুমি একদিন সাইন করবে।
বৈদুর্য দেখল মিমিদি নেই।জিনিকে দেখে জিজ্ঞেস করে,দিদিভাই কোথায়?
--ঘরে শুয়ে আছে,শরীর ভাল না।
--তোমরা আজ থাকবে?
--পাগল।তিন্নিকে নিয়ে শাশুড়ি মা একা রয়েছে।
--দিদিভাইয়ের কাছ থেকে গাড়ীর চাবিটা নিয়ে এসো।
দিব্যেন্দুকে ধরে ধরে নীচে নামালো বৈদুর্য।পিছনে দিব্যেন্দু আর জিনি সামনে বৈদুর্যের পাশে গোদেলিয়েভ ম্যাম।সল্ট লেকে জিনিদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ী চলল শেল্টারের দিকে। গেট অবধি গোদেলিয়ভকে এগিয়ে দিয়ে বৈদুর্য এবার রাজার হাটের পথে। মিমিদির শরীর খারাপ কি করবে এত রাতে?
সুভদ্রা সেন বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।বৈদুর্য পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, মিমিদি তোমার শরীর খারাপ লাগছে?
এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিয়ে সুভদ্রা বলল,গায়ে হাত দেবে না।রাত দুপুরে এসে দরদ দেখানো হচ্ছে।
বৈদুর্য হাত সরিয়ে নিল।বুঝতে পারে মিমিদি রাগ করেছে শরীর খারাপ একটা বাহানা। বৈদুর্য আপন মনে বিড় বিড় করে,এই মহিলা একজন বিচারক।রায়দানের আগে ফাঁসির আসামীর বক্তব্যও বিচারকের শোনা উচিত।তা নাহলে নিরপেক্ষ বিচার প্রহসনে রুপান্তরিত হতে বাধ্য।
সুভদ্রা ঘুরে বৈদুর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,শুনি ফাঁসির আসামীর বক্তব্য।
--আমি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে তদন্ত সেরে ফিরছি কেন না আমাকে জরুরী ডাকে উপস্থিত হতে হবে। দুপাশে ধান ক্ষেত মাঝখানে জাতীয় সড়ক ধরে ছুটে চলেছে আমার জিপ।একটি সুমো গাড়ী দ্রুত আমার গাড়ীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ড্রাইভার বলল স্যার এই গাড়ীটা একটা মোটর বাইককে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল, অনুসরণ করবো?এক মুহুর্ত সময় নিয়ে বললাম,মোটর বাইকের কাছে চলো।গাড়ী ঘুরিয়ে কিছুটা যেতে নজরে পড়ল ধান ক্ষেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে একটি পুরুষ একটী মহিলা কিছুটা দূরে একটি শিশু কন্যা।
--আ-হা রে! কত বয়স হবে?
--দুই কি তিন?
--ইস এতো দুধের শিশু।তুমি কি করলে?
--নীচে নেমে শিশুটিকে কোলে নিয়ে জিপে শুইয়ে দিলাম।ড্রাইভারের সহায়তায় অন্য দুজনকে জিপে তুলে রওনা হলাম কাছা কাছি হাসপাতালে।
--ব্যাস দায়িত্ব শেষ?বাড়ীর লোককে খবর দাওনি?
--এরা কারা কোথা থেকে আসছে কোথায় যাচ্ছিল জ্ঞান না ফেরা অবধি কিছুই জানার উপায় নেই।বাচ্চাটির খুব একটা লাগেনি--।
--থ্যাঙ্ক গড।সুভদ্রা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
--ওদের জ্ঞান ফিরলো সন্ধ্যের সময়।মাথায় হেলমেট ছিল তাই রক্ষে।ছেলেটি তার দিদিকে বাইকে করে শ্বশুরবাড়ী পৌছে দিচ্ছিল।বর্ধমান শহরে দিদির শ্বশুরবাড়ী।
--একটা ফোন করতে কি হয়েছিল?সুভদ্রা বলল।
--চারদিকে গাছপালা মাঠে ধান ক্ষেত বহুদুরে গ্রাম একটা দোকান নেই যে দোকানে গিয়ে ফোন করবো।
--বাজে কথা বোলো না বর্ধমান থেকে ফোন করতে পারতে?ইচ্ছে করছে ঠাষ করে এক চড় কষাই,খালি বানিয়ে বানিয়ে কথা।
বৈদুর্য এইক্ষণে স্বস্তি পায় মিমিদি ফর্মে এসেছে।
--সঙের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? চেঞ্জ করো,আমি বাথরুম থেকে ফিরে খাবার দিচ্ছি।সুভদ্রা বাথরুমে ঢুকে গেল।