25-02-2020, 11:41 AM
।।ত্রয়োশ্চত্বারিশ পর্ব।।
মিমিদির দাগ দেওয়া চ্যাপটারগুলো প্রায় সবই পড়া হলেও বৈদুর্য সে কথা মিমিদিকে বলে না। কেন না বললেই আবার একগাদা দাগ দিয়ে দেবে। পরীক্ষা দেবে সে অথচ মিমিদি এমন করছে যেন তারই বেশি চিন্তা। বেকার স্বামীর জন্য মিমিদির মনে কোনো আক্ষেপ নেই তো? কথাটা মনে হতেই বৈদুর্য সঙ্কুচিত বোধ করে। সুভদ্রা দুটো প্লেটে ফিশ ফ্রাই আর কয়েক টুকরো স্যাকা রুটি নিয়ে ঢুকলো।পেয়াজ কুচি করে এনেছে। বৈদুর্য হেসে বলল, পেয়াজ এনেছো?
--আর কিছু নেই তো,পরে বেরিয়ে শশা নিয়ে আসতে হবে।সুভদ্রা সাফাই দিল।
--না মানে পেয়াজ খেলে মুখে গন্ধ হবে না?
একটু সময় নেয় সুভদ্রা তারপর কি বলতে চাইছে বৈদুর্য বুঝতে পেরে বলল,খুব বুদ্ধি? এই বুদ্ধি পড়াশোনায় দেখিও। প্লেট পাশে সরিয়ে রেখে সুভদ্রা উঠে বৈদুর্যর দুগাল চেপে ঠোট মুখে পুরে সবেগে চুষতে লাগলো। তারপর জিভ দিয়ে ঠোট মুছে বলল, খুশি?
--তুমি খুশি হলেই আমি খুশি। বৈদুর্য বলল।
সুভদ্রা কথাটা শুনে কেমন উদাস হয়ে যায়। তারপর আপন মনে খেতে থাকে। মিমিদির উদাসভাব ভাল লাগে না,বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে, মিমিদি তুমি কি ভাবছো?
বৈদুর্যের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল সুভদ্রা,তুমি পাস করলে আমি খুব খুশি হবো।
--আমি বেকার বলে তোমার খুব লজ্জা তাইনা?
সুভদ্রা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে বৈদুর্যকে তারপর বলে,এসব কথা তোমার মাথায় কে ঢোকালো? লজ্জা পাওয়ার মত কোনো কাজ আমি করিনা।ফের একথা যেন না শুনি।
মিমিদির মুখ দেখে ঘাবড়ে যায় বৈদুর্য,বুঝতে পারে মিমিদি বিরক্ত হয়েছে। একথা না বললেই ভাল হতো। হাল্কাভাবে বলা কথাটায় কেউ আহত হতে পারে ভাবেনি। বৈদুর্য উঠে সুভদ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,মিমিদি আমি এমনি বলেছি,তুমি রাগ কোর না।
সুভদ্রা হেসে ফেলে সত্যিই ছেলে মানুষ, কবে যে পরিণত হবে? সুভদ্রা বলল,আমার কথা ভাবিনা তোমার জন্যই বলছি।আমি পছন্দ করি মানুষের মত মানুষ।আর কিছু আমি চাই না।তোমার কথা ভেবেই যা করার করছি নিজের জন্য নয়।তুমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সবার সামনে মাথা উচু করে দাড়াও,আমি চাই।কেউ আমাকে অসম্মান করলে তোমার রাগ হয়।তোমাকে কেউ ছোটো করলে আমি কত কষ্ট পাই তুমি জানোনা? আমার কাছে তুমি যা তাই কিন্তু সবার বিচারের মানদণ্ড এক নয়।
বৈদুর্য বুঝতে পারে মিমিদি কি বলতে চাইছে। তার ধারণা ছিল মিমিদি খুব বড়,খুব উদার কিন্তু এত গভীর তা আগে বোঝেনি।মাটিতে বসে বৈদুর্য মিমিদির কোলে মাথা রেখে বলল,মিমিদি তোমাকে ছাড়া আমি বাচবো না। মা নেই,অনেক কষ্ট নিয়ে চলে গেছে আমার মা।কিন্তু তোমাকে আমি কিছুতেই কষ্ট পেতে দেব না।
বাইরে কলিং বেল বেজে উঠল। সুভদ্রা বলল, ছেলে মানুষী করে না ওঠো। দেখি মনে হচ্ছে জিনি এল।দরজা খুলে সুভদ্রা বলল, আরে আপনি?
আশুবাবু বললেন,ম্যাডাম কাল আমি কলেজ স্ট্রিটে গেছিলাম আপনি বলেছিলেন বইয়ের কথা।একটা বই এগিয়ে দিলেন। জেনারেল নলেজের বইটা হাতে নিয়ে সুভদ্রা বলল,সত্যি দেবাবু আপনি যা করছেন....।
--আহা তাতে কি হয়েছে,দরকার হলেই বলবেন। সাহেব আসার কথা একটু তাড়া আছে।আমি আসি ম্যাডাম?
সুভদ্রা দরজা বন্ধ করে ভিতরে গিয়ে বৈদুর্যকে বলল,শোনো ক্যাজুয়ালি এই বইটার উপর চোখ বোলাবে। কি হল মুখটা প্যাঁচার মত হয়ে গেল যে?
--লক্ষীর বাহন প্যাঁচা নাতো কি হাঁস হবে?
--তুমি আগে বলেছিলে সরস্বতি এখন লক্ষী হয়ে গেলাম? বৈদুর্যের অপ্রস্তুতভাব দেখে হেসে বলল,এখন মন দিয়ে পড়ো।
সুভদ্রা প্লেট দুটো তুলে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল।বেলা হল রান্না শুরু করতে হয়।এখন মাংসটা চাপিয়ে দেওয়া যাক।জিনিরা আসলে ভাত চাপানো যাবে।মাম্মী আজ নেই,তখন ভাল করে বোঝেনি আজ বুঝতে পারছে।মেয়েদের কি দরকার মুখ ফুটে বলার আগেই মাম্মী বুঝতে পারতো।বাপি সকাল বেলা বেরিয়ে যেত বাড়ীতে থাকলে আইনের বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকতো।সুনন্দা মুখারজির সেদিকেও ছিল তীক্ষ্ণ নজর।কে কি ভাবছে কে জানে, সুভদ্রার মনে কোনো আক্ষেপ নেই,সে তৃপ্ত।মনে হল কলিং বেল বাজলো বেরিয়ে দরজা খুলতে তিন্নি মাছি বলে জড়িয়ে ধরলো।সুভদ্রা তিন্নিকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,দিব্যেন্দু আসেনি?
--ও একটু পরে আসবে। ব্যাস এর মধ্যেই বেশ সাজিয়েছো দিদিভাই।
একবার ব্যালকনিতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,দারুণ হয়েছে।দিদিভাই তোমার বরকে দেখছি না,ও কোথায়?
সুভদ্রা জানে কলেজে বৈদুর্যর সঙ্গে পড়তো জিনি। কিভাবে নেবে ওকে কে জানে। মৃদু স্বরে বলল সুভদ্রা,ঐ কোনার ঘরে কি করছে কে জানে।তুই আগে চেঞ্জ কর।
--দাড়াও হিরোটা আমার দিদিভাইকে কি করে ফাসালো দেখি।
--ওকি কথা? দ্যাখ জিনি তুই আর ছেলে মানুষ না।দিব্যেন্দু আসবে তো?
ফোন বেজে উঠল।সুভদ্রা ফোন ধরতে অন্য দিক থেকে দিব্যেন্দুর গলা পাওয়া গেল। হ্যা একটু আগে এল,তুমি কখন আসছো?...এগারোটা?..ঠিক আছে দেরী কোরনা.. কথা বলবে?...আচ্ছা রাখছি?
মনে পড়ল মাংসের কথা।তিন্নিকে নামিয়ে দিয়ে বলল,যাও সোনা দেখো মা কোথায় গেল।
--আমি তোমার সঙ্গে নান্না করবো।তিন্নি মাসীকে ছাড়তে চায় না। অগত্যা তিন্নিকে নিয়ে রান্না ঘরে গেল সুভদ্রা। রান্না করছে নুন লঙ্কা হলুদ যখন যেটে দিতে হবে দিচ্ছে কিন্তু মন পড়ে আছে অন্যদিকে,কি করছে জিনি? মাংস নামিয়ে মাছ গুলো ভেজে গ্যাস নামিয়ে দেখল তিন্নি ব্যালকনিতে একা একা খেলা করছে।চুপি চুপি বৈদুর্যর ঘরের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করে কি করছে?
জিনিকে দেখতে পেয়ে বই না সরিয়ে বলল,ভিতরে এসো।
--কলেজে আমাকে দেখে তোর কেমন লাগতো?
--খারাপ লাগবে কেন?
--কলেজের দিনগুলো মনে আছে?আচ্ছ তোমার সঙ্গে থাকত কি নাম---শুভ সে এখন কি করে?
বৈদুর্য উদাসভাবে জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়।কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই।অস্পষ্টভাবে বলল, বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার করছে হয়তো।
--হয়তো?তার মানে কারো খবর রাখো না।আচ্ছা সেই বাইকওলা ছেলেটা কি যেন নাম?
--অমিতাভ--।
--না অমিতাভ নয় অনিমেষ--হি-হি-হি--।
--হ্যা অনিমেষ তুমি হাসছো কেন?
--তুমি ছেলেটাকে কেন মেরেছিলে--আমার জন্য?
--শুভকে অপমান করলো কেন? শুভ কি ওর গায়ে হাত দিয়েছিল?
--এ্যাই হিরো বই রাখোতো।আজ রবিবার কিসের এত পড়াশোনা?
--তোমার দিদিকে বল না সে কথা।
--তু্মি তো ওর স্বামী শাসন করতে পারো না?
--বহুকাল আগে থেকেই পুরুষরা মেয়েদের শাসন করে এসেছে তাতে কি ভাল হয়েছে? একটু অন্য রকম করে দেখি না কি হয়?তুমি কি দিব্যেন্দুকে শাসন করো?
সুভদ্রার চোখে জল চলে এল।সুতন্দ্রা ভাবে দিব্যেন্দুর কথা।মাতাল হয়ে মুখ খারাপ করে, একদিন তার গায়েও হাত তুলেছিল। বৈদুর্যর যা শক্তি তার কাছে দিব্যেন্দু কিছুই না। মুচকি হেসে বলল,তার চেয়ে বল না তুমি সুভদ্রা মুখার্জিকে ভয় পাও।
--ভয়? বৈদুর্য মুচকি হাসে।ভয় কিনা জানিনা তবে সব সময় চিন্তা করি আমার জন্য কখনো যেন ও অপমানিত বা অসম্মানিত না হয়।
--খুব সিনেমার ডায়লগ ঝাড়া হচ্ছে।
সুভদ্রা ঢুকে পড়ে বলল, জিনি আয় তোর জল খাবার করছি।
সুভদ্রার সঙ্গে বেরিয়ে গেল জিনি। কলেজে কেমন মেনিমুখো ছিল বুঝতেই পারে নি। বাইরে থেকে মানুষ চেনা সহজ নয়। দিদিভাই ওকে কিভাবে জোটালো? সুতন্দ্রা বলল, দিদিভাই তুমি বৈদুর্যকে ভালই ট্রেনিং দিয়েছো।
--তুই আমার বরকে নাম ধরে ডাকবি না।
--বারে ও তো আমার ক্লাস মেট। ওকে কি জামাইবাবু বলতে হবে নাকি?
--সম্পর্কে কে তো তাই হয়।দিব্যেন্দু আমাকে দিদি বলে।
--ঠিক আছে আমি বৈদুর্যকে জাম্বু বলবো--খুশি তো?
--খেয়ে দ্যাখ কেমন হয়েছে?সুভদ্রা ফিশ ফ্রাই ভেজে টেবিলে রাখে। তিন্নিকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিল।
তিন্নি বলল,মাছি আমি আলেকটা খাবো।
--দেবো আগে ওটা খেয়ে নেও। সুভদ্রা একটা প্লেটে ফ্রাই নিয়ে বৈদুর্যর ঘরে গেল।
--আবার?তুমি খাবে না?
--ফ্রিজে আছে,তুমি খাও।বইগুলো সরিয়ে রাখতে পারছো না।
বৈদুর্য দ্রুত বইগুলো সরিয়ে ফেলল।
--নেও এটা ধরো।
বৈদুর্য ফ্রাই তুলে মিমিদির মুখের সামনে নিয়ে বলল,এক কামড় খাও।
সুভদ্রা এদিক-ওদিক দেখে নীচু হয়ে ফিশ ফ্রাইয়ে কামড় দিয়ে উড়নি দিয়ে মুখ মুছে চলে গেল।
কলিং বেল বাজতে সুতন্দ্রা দরজা খুলে দিল।দিব্যেন্দুকে দেখে তিন্নি বলল,মাছি বাপি এসেছে বাপিকে দাও।
সুভদ্রা কলিং বেলের শব্দ শুনেছিল,তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে গিয়ে ফ্রাই ভেজে দিব্যেন্দুকে এগিয়ে দিতে দিব্যেন্দু বলল, টোষ্ট গুলো তুলে নিন।
সুভদ্রা টোষ্ট তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, কেমন আছো?
--প্রচণ্ড কাজের চাপ। সাইটে না গেলে কাজ হবে না,সব শালা ফাকিবাজ।কথাগুলো বলে দিব্যেন্দু এদিক-ওদিক দেখে জিজ্ঞেস করে, দিদি আপনার মিষ্টারকে দেখছি না।বাড়ীতে নেই নাকি?
সুভদ্রা বুঝতে পারে কৌতুহলের কারণ,কাকে বিয়ে করেছে,বিয়ে করে ঠকেছে কি না? স্মিত হাসি মিশিয়ে সুভদ্রা বলে, না বাড়ীতেই আছে,নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। গলা চড়িয়ে বলল,বৈদুর্য ফ্রি হলে একবার এদিকে আসবে?
দিব্যেন্দু অপেক্ষা করে কখন নাটকের পর্দা উঠবে?কিছুক্ষণের মধ্যে একমুখ হাসি নিয়ে বৈদুর্য এল।দিব্যেন্দুকে না চিনলেও অনুমানে বুঝতে অসুবিধে হয় না,জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছেন?
আচমকা এ প্রশ্নের জন্য সম্ভবত তৈরী ছিল না সামলে নিয়ে দিব্যেন্দু বলল,ভাল, আপনি ভাল আছেন?
সুতন্দ্রা অস্বস্তি বোধ করে দিব্যেন্দুকে বিশ্বাস নেই কি বলতে কি বলে।বৈদুর্যের প্রতি তার ধারণা খুব ভাল নয়।
--আপনি তো কিছু করেন না,আসুন না আমার ব্যবসায়।একজন বিশ্বাসী লোকের খুব দরকার।
সুতন্দ্রা এই ভয় পেয়েছিল আড়চোখে দিদিভাইয়ের দিকে দেখল।সুভদ্রা মজা উপভোগের মত দিব্যি মিটমিট করে হাসছে।বৈদুর্য হেসে ফেলে।
দিব্যেন্দু বলল,আপনি হাসছেন? আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি।
--ব্যাবসা করতে গেলে লোক চিনতে হয়।চিনলে আমাকে এই প্রস্তাব দিতেন না।
কথাটার মধ্যে একটা অন্য অর্থ আছে সেটা সুভদ্রার বুঝতে অসুবিধে হয় না।দিব্যেন্দু বুঝেছে বলে মনে হল না।
--কেন প্রস্তাবটা খারাপ কি?দিব্যেন্দু জিজ্ঞেস করে।
--আমি প্রস্তাব নয় মানুষটার কথা বলেছি।ব্যাবসায় আমার এলেম কতদুর আমি জানি। ছোটোখাটো একটা চাকরির চেষ্টায় আছি।
--হ্যা-হ্যা-হ্যা একেবারে আমার বিপরীত টিপিক্যাল বেঙ্গলি।আমার আবার বাধাধরা চাকরি গোলামি পোষায় না। কথাটা বলে দিব্যেন্দু বেশ তৃপ্তি বোধ করে।
--আর আমাকে বলছেন গোলামি করতে?বৈদুর্য মজা করে বলে।
শালা ট্যাকস-ট্যাকস কথা আছে? চেহারা দ্যাখো নব কাত্তিক,কাজ নেই কাম নেই বোকাচোদা বউয়ের পয়সায় বসে বসে গিলছে আবার লপচপানি, দিব্যেন্দুর গা জ্বালা করে। এত লেখাপড়া জেনেও দিদি কেন যে এমন ভুল করলো?একদিন টের পাবে তাতে দিব্যেন্দুর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে অনেক বেলা হয়ে গেল।সুভদ্রা ইতিমধ্যে তিন্নিকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
সুতন্দ্রা বেসিনে মুখ ধুতে ধুতে ভাবে ভালয় ভালোয় মিটলো কোনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। দিদিভাই যা ভাল বুঝেছে তাই করেছে দিব্যেন্দুর সব ব্যাপারে মাথা ঘামানোর দরকার কি? বৈদুর্যটা আগের মত ক্যাবলা নেই,কেমন বিজ্ঞের মত কথা বলছিল। সুভদ্রা বলল, এবার একটু গড়িয়ে নে জিনি।
--না দিদি,এবার বেরোতে হবে।অনেক কাজ জমে আছে। কথাটা বলল দিব্যেন্দু।
সুতন্দ্রা কিছু একটা বলতে গিয়েও দিব্যেন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে না।মনে মনে ভাবে কাজ না ছাই,খালি বড় বড় কথা। সুভদ্রার নজর এড়ায় না সে বলল, তাহলে চলো তোমাদের পৌছে দিয়ে আসি।
--হ্যা সেই ভাল।বৈদুর্য বলল।
সুভদ্রা অবাক হয়ে দেখল বাবু মুহুর্তের মধ্যে সেজে গুজে প্রস্তুত।প্যাণ্টের উপর কালো টি-শার্ট পরেছে বেশ লাগছে দেখতে। সুভদ্রা মজা করে জিজ্ঞেস করে,তুমি আবার কোথায় চললে?
--আমি যাবো না?বৈদুর্যের মুখটা কালো হয়ে যায়।
সুভদ্রা মনে মনে হাসে।খালি ফাকি দেবার ছল বলল,ঠীক আছে চলো।
সামনে বৈদুর্য আর গাড়ীর পিছনে দিব্যেন্দু আর ঘুমন্ত তিন্নিকে কোলে নিয়ে সুতন্দ্রা বসেছে। দিব্যেন্দু ভেবেছিল একান্তে দিদির সঙ্গে টাকা-পয়সা নিয়ে কিছু কথা বলবে সঙ্গে কাত্তিকটা আসায় বিরক্ত হয়।
সল্টলেকে নামিয়ে দিতে দিব্যেন্দু জিজ্ঞেস করে,দিদি নামবেন না?
--আজ না ভাই।বাসায় লোক আসার কথা আছে।
মিমিদির দাগ দেওয়া চ্যাপটারগুলো প্রায় সবই পড়া হলেও বৈদুর্য সে কথা মিমিদিকে বলে না। কেন না বললেই আবার একগাদা দাগ দিয়ে দেবে। পরীক্ষা দেবে সে অথচ মিমিদি এমন করছে যেন তারই বেশি চিন্তা। বেকার স্বামীর জন্য মিমিদির মনে কোনো আক্ষেপ নেই তো? কথাটা মনে হতেই বৈদুর্য সঙ্কুচিত বোধ করে। সুভদ্রা দুটো প্লেটে ফিশ ফ্রাই আর কয়েক টুকরো স্যাকা রুটি নিয়ে ঢুকলো।পেয়াজ কুচি করে এনেছে। বৈদুর্য হেসে বলল, পেয়াজ এনেছো?
--আর কিছু নেই তো,পরে বেরিয়ে শশা নিয়ে আসতে হবে।সুভদ্রা সাফাই দিল।
--না মানে পেয়াজ খেলে মুখে গন্ধ হবে না?
একটু সময় নেয় সুভদ্রা তারপর কি বলতে চাইছে বৈদুর্য বুঝতে পেরে বলল,খুব বুদ্ধি? এই বুদ্ধি পড়াশোনায় দেখিও। প্লেট পাশে সরিয়ে রেখে সুভদ্রা উঠে বৈদুর্যর দুগাল চেপে ঠোট মুখে পুরে সবেগে চুষতে লাগলো। তারপর জিভ দিয়ে ঠোট মুছে বলল, খুশি?
--তুমি খুশি হলেই আমি খুশি। বৈদুর্য বলল।
সুভদ্রা কথাটা শুনে কেমন উদাস হয়ে যায়। তারপর আপন মনে খেতে থাকে। মিমিদির উদাসভাব ভাল লাগে না,বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে, মিমিদি তুমি কি ভাবছো?
বৈদুর্যের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল সুভদ্রা,তুমি পাস করলে আমি খুব খুশি হবো।
--আমি বেকার বলে তোমার খুব লজ্জা তাইনা?
সুভদ্রা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে বৈদুর্যকে তারপর বলে,এসব কথা তোমার মাথায় কে ঢোকালো? লজ্জা পাওয়ার মত কোনো কাজ আমি করিনা।ফের একথা যেন না শুনি।
মিমিদির মুখ দেখে ঘাবড়ে যায় বৈদুর্য,বুঝতে পারে মিমিদি বিরক্ত হয়েছে। একথা না বললেই ভাল হতো। হাল্কাভাবে বলা কথাটায় কেউ আহত হতে পারে ভাবেনি। বৈদুর্য উঠে সুভদ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,মিমিদি আমি এমনি বলেছি,তুমি রাগ কোর না।
সুভদ্রা হেসে ফেলে সত্যিই ছেলে মানুষ, কবে যে পরিণত হবে? সুভদ্রা বলল,আমার কথা ভাবিনা তোমার জন্যই বলছি।আমি পছন্দ করি মানুষের মত মানুষ।আর কিছু আমি চাই না।তোমার কথা ভেবেই যা করার করছি নিজের জন্য নয়।তুমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সবার সামনে মাথা উচু করে দাড়াও,আমি চাই।কেউ আমাকে অসম্মান করলে তোমার রাগ হয়।তোমাকে কেউ ছোটো করলে আমি কত কষ্ট পাই তুমি জানোনা? আমার কাছে তুমি যা তাই কিন্তু সবার বিচারের মানদণ্ড এক নয়।
বৈদুর্য বুঝতে পারে মিমিদি কি বলতে চাইছে। তার ধারণা ছিল মিমিদি খুব বড়,খুব উদার কিন্তু এত গভীর তা আগে বোঝেনি।মাটিতে বসে বৈদুর্য মিমিদির কোলে মাথা রেখে বলল,মিমিদি তোমাকে ছাড়া আমি বাচবো না। মা নেই,অনেক কষ্ট নিয়ে চলে গেছে আমার মা।কিন্তু তোমাকে আমি কিছুতেই কষ্ট পেতে দেব না।
বাইরে কলিং বেল বেজে উঠল। সুভদ্রা বলল, ছেলে মানুষী করে না ওঠো। দেখি মনে হচ্ছে জিনি এল।দরজা খুলে সুভদ্রা বলল, আরে আপনি?
আশুবাবু বললেন,ম্যাডাম কাল আমি কলেজ স্ট্রিটে গেছিলাম আপনি বলেছিলেন বইয়ের কথা।একটা বই এগিয়ে দিলেন। জেনারেল নলেজের বইটা হাতে নিয়ে সুভদ্রা বলল,সত্যি দেবাবু আপনি যা করছেন....।
--আহা তাতে কি হয়েছে,দরকার হলেই বলবেন। সাহেব আসার কথা একটু তাড়া আছে।আমি আসি ম্যাডাম?
সুভদ্রা দরজা বন্ধ করে ভিতরে গিয়ে বৈদুর্যকে বলল,শোনো ক্যাজুয়ালি এই বইটার উপর চোখ বোলাবে। কি হল মুখটা প্যাঁচার মত হয়ে গেল যে?
--লক্ষীর বাহন প্যাঁচা নাতো কি হাঁস হবে?
--তুমি আগে বলেছিলে সরস্বতি এখন লক্ষী হয়ে গেলাম? বৈদুর্যের অপ্রস্তুতভাব দেখে হেসে বলল,এখন মন দিয়ে পড়ো।
সুভদ্রা প্লেট দুটো তুলে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল।বেলা হল রান্না শুরু করতে হয়।এখন মাংসটা চাপিয়ে দেওয়া যাক।জিনিরা আসলে ভাত চাপানো যাবে।মাম্মী আজ নেই,তখন ভাল করে বোঝেনি আজ বুঝতে পারছে।মেয়েদের কি দরকার মুখ ফুটে বলার আগেই মাম্মী বুঝতে পারতো।বাপি সকাল বেলা বেরিয়ে যেত বাড়ীতে থাকলে আইনের বইয়ে মুখ ডুবিয়ে বসে থাকতো।সুনন্দা মুখারজির সেদিকেও ছিল তীক্ষ্ণ নজর।কে কি ভাবছে কে জানে, সুভদ্রার মনে কোনো আক্ষেপ নেই,সে তৃপ্ত।মনে হল কলিং বেল বাজলো বেরিয়ে দরজা খুলতে তিন্নি মাছি বলে জড়িয়ে ধরলো।সুভদ্রা তিন্নিকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,দিব্যেন্দু আসেনি?
--ও একটু পরে আসবে। ব্যাস এর মধ্যেই বেশ সাজিয়েছো দিদিভাই।
একবার ব্যালকনিতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,দারুণ হয়েছে।দিদিভাই তোমার বরকে দেখছি না,ও কোথায়?
সুভদ্রা জানে কলেজে বৈদুর্যর সঙ্গে পড়তো জিনি। কিভাবে নেবে ওকে কে জানে। মৃদু স্বরে বলল সুভদ্রা,ঐ কোনার ঘরে কি করছে কে জানে।তুই আগে চেঞ্জ কর।
--দাড়াও হিরোটা আমার দিদিভাইকে কি করে ফাসালো দেখি।
--ওকি কথা? দ্যাখ জিনি তুই আর ছেলে মানুষ না।দিব্যেন্দু আসবে তো?
ফোন বেজে উঠল।সুভদ্রা ফোন ধরতে অন্য দিক থেকে দিব্যেন্দুর গলা পাওয়া গেল। হ্যা একটু আগে এল,তুমি কখন আসছো?...এগারোটা?..ঠিক আছে দেরী কোরনা.. কথা বলবে?...আচ্ছা রাখছি?
মনে পড়ল মাংসের কথা।তিন্নিকে নামিয়ে দিয়ে বলল,যাও সোনা দেখো মা কোথায় গেল।
--আমি তোমার সঙ্গে নান্না করবো।তিন্নি মাসীকে ছাড়তে চায় না। অগত্যা তিন্নিকে নিয়ে রান্না ঘরে গেল সুভদ্রা। রান্না করছে নুন লঙ্কা হলুদ যখন যেটে দিতে হবে দিচ্ছে কিন্তু মন পড়ে আছে অন্যদিকে,কি করছে জিনি? মাংস নামিয়ে মাছ গুলো ভেজে গ্যাস নামিয়ে দেখল তিন্নি ব্যালকনিতে একা একা খেলা করছে।চুপি চুপি বৈদুর্যর ঘরের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করে কি করছে?
জিনিকে দেখতে পেয়ে বই না সরিয়ে বলল,ভিতরে এসো।
--কলেজে আমাকে দেখে তোর কেমন লাগতো?
--খারাপ লাগবে কেন?
--কলেজের দিনগুলো মনে আছে?আচ্ছ তোমার সঙ্গে থাকত কি নাম---শুভ সে এখন কি করে?
বৈদুর্য উদাসভাবে জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়।কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই।অস্পষ্টভাবে বলল, বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার করছে হয়তো।
--হয়তো?তার মানে কারো খবর রাখো না।আচ্ছা সেই বাইকওলা ছেলেটা কি যেন নাম?
--অমিতাভ--।
--না অমিতাভ নয় অনিমেষ--হি-হি-হি--।
--হ্যা অনিমেষ তুমি হাসছো কেন?
--তুমি ছেলেটাকে কেন মেরেছিলে--আমার জন্য?
--শুভকে অপমান করলো কেন? শুভ কি ওর গায়ে হাত দিয়েছিল?
--এ্যাই হিরো বই রাখোতো।আজ রবিবার কিসের এত পড়াশোনা?
--তোমার দিদিকে বল না সে কথা।
--তু্মি তো ওর স্বামী শাসন করতে পারো না?
--বহুকাল আগে থেকেই পুরুষরা মেয়েদের শাসন করে এসেছে তাতে কি ভাল হয়েছে? একটু অন্য রকম করে দেখি না কি হয়?তুমি কি দিব্যেন্দুকে শাসন করো?
সুভদ্রার চোখে জল চলে এল।সুতন্দ্রা ভাবে দিব্যেন্দুর কথা।মাতাল হয়ে মুখ খারাপ করে, একদিন তার গায়েও হাত তুলেছিল। বৈদুর্যর যা শক্তি তার কাছে দিব্যেন্দু কিছুই না। মুচকি হেসে বলল,তার চেয়ে বল না তুমি সুভদ্রা মুখার্জিকে ভয় পাও।
--ভয়? বৈদুর্য মুচকি হাসে।ভয় কিনা জানিনা তবে সব সময় চিন্তা করি আমার জন্য কখনো যেন ও অপমানিত বা অসম্মানিত না হয়।
--খুব সিনেমার ডায়লগ ঝাড়া হচ্ছে।
সুভদ্রা ঢুকে পড়ে বলল, জিনি আয় তোর জল খাবার করছি।
সুভদ্রার সঙ্গে বেরিয়ে গেল জিনি। কলেজে কেমন মেনিমুখো ছিল বুঝতেই পারে নি। বাইরে থেকে মানুষ চেনা সহজ নয়। দিদিভাই ওকে কিভাবে জোটালো? সুতন্দ্রা বলল, দিদিভাই তুমি বৈদুর্যকে ভালই ট্রেনিং দিয়েছো।
--তুই আমার বরকে নাম ধরে ডাকবি না।
--বারে ও তো আমার ক্লাস মেট। ওকে কি জামাইবাবু বলতে হবে নাকি?
--সম্পর্কে কে তো তাই হয়।দিব্যেন্দু আমাকে দিদি বলে।
--ঠিক আছে আমি বৈদুর্যকে জাম্বু বলবো--খুশি তো?
--খেয়ে দ্যাখ কেমন হয়েছে?সুভদ্রা ফিশ ফ্রাই ভেজে টেবিলে রাখে। তিন্নিকে নিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিল।
তিন্নি বলল,মাছি আমি আলেকটা খাবো।
--দেবো আগে ওটা খেয়ে নেও। সুভদ্রা একটা প্লেটে ফ্রাই নিয়ে বৈদুর্যর ঘরে গেল।
--আবার?তুমি খাবে না?
--ফ্রিজে আছে,তুমি খাও।বইগুলো সরিয়ে রাখতে পারছো না।
বৈদুর্য দ্রুত বইগুলো সরিয়ে ফেলল।
--নেও এটা ধরো।
বৈদুর্য ফ্রাই তুলে মিমিদির মুখের সামনে নিয়ে বলল,এক কামড় খাও।
সুভদ্রা এদিক-ওদিক দেখে নীচু হয়ে ফিশ ফ্রাইয়ে কামড় দিয়ে উড়নি দিয়ে মুখ মুছে চলে গেল।
কলিং বেল বাজতে সুতন্দ্রা দরজা খুলে দিল।দিব্যেন্দুকে দেখে তিন্নি বলল,মাছি বাপি এসেছে বাপিকে দাও।
সুভদ্রা কলিং বেলের শব্দ শুনেছিল,তাড়াতাড়ি রান্না ঘরে গিয়ে ফ্রাই ভেজে দিব্যেন্দুকে এগিয়ে দিতে দিব্যেন্দু বলল, টোষ্ট গুলো তুলে নিন।
সুভদ্রা টোষ্ট তুলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, কেমন আছো?
--প্রচণ্ড কাজের চাপ। সাইটে না গেলে কাজ হবে না,সব শালা ফাকিবাজ।কথাগুলো বলে দিব্যেন্দু এদিক-ওদিক দেখে জিজ্ঞেস করে, দিদি আপনার মিষ্টারকে দেখছি না।বাড়ীতে নেই নাকি?
সুভদ্রা বুঝতে পারে কৌতুহলের কারণ,কাকে বিয়ে করেছে,বিয়ে করে ঠকেছে কি না? স্মিত হাসি মিশিয়ে সুভদ্রা বলে, না বাড়ীতেই আছে,নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। গলা চড়িয়ে বলল,বৈদুর্য ফ্রি হলে একবার এদিকে আসবে?
দিব্যেন্দু অপেক্ষা করে কখন নাটকের পর্দা উঠবে?কিছুক্ষণের মধ্যে একমুখ হাসি নিয়ে বৈদুর্য এল।দিব্যেন্দুকে না চিনলেও অনুমানে বুঝতে অসুবিধে হয় না,জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছেন?
আচমকা এ প্রশ্নের জন্য সম্ভবত তৈরী ছিল না সামলে নিয়ে দিব্যেন্দু বলল,ভাল, আপনি ভাল আছেন?
সুতন্দ্রা অস্বস্তি বোধ করে দিব্যেন্দুকে বিশ্বাস নেই কি বলতে কি বলে।বৈদুর্যের প্রতি তার ধারণা খুব ভাল নয়।
--আপনি তো কিছু করেন না,আসুন না আমার ব্যবসায়।একজন বিশ্বাসী লোকের খুব দরকার।
সুতন্দ্রা এই ভয় পেয়েছিল আড়চোখে দিদিভাইয়ের দিকে দেখল।সুভদ্রা মজা উপভোগের মত দিব্যি মিটমিট করে হাসছে।বৈদুর্য হেসে ফেলে।
দিব্যেন্দু বলল,আপনি হাসছেন? আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি।
--ব্যাবসা করতে গেলে লোক চিনতে হয়।চিনলে আমাকে এই প্রস্তাব দিতেন না।
কথাটার মধ্যে একটা অন্য অর্থ আছে সেটা সুভদ্রার বুঝতে অসুবিধে হয় না।দিব্যেন্দু বুঝেছে বলে মনে হল না।
--কেন প্রস্তাবটা খারাপ কি?দিব্যেন্দু জিজ্ঞেস করে।
--আমি প্রস্তাব নয় মানুষটার কথা বলেছি।ব্যাবসায় আমার এলেম কতদুর আমি জানি। ছোটোখাটো একটা চাকরির চেষ্টায় আছি।
--হ্যা-হ্যা-হ্যা একেবারে আমার বিপরীত টিপিক্যাল বেঙ্গলি।আমার আবার বাধাধরা চাকরি গোলামি পোষায় না। কথাটা বলে দিব্যেন্দু বেশ তৃপ্তি বোধ করে।
--আর আমাকে বলছেন গোলামি করতে?বৈদুর্য মজা করে বলে।
শালা ট্যাকস-ট্যাকস কথা আছে? চেহারা দ্যাখো নব কাত্তিক,কাজ নেই কাম নেই বোকাচোদা বউয়ের পয়সায় বসে বসে গিলছে আবার লপচপানি, দিব্যেন্দুর গা জ্বালা করে। এত লেখাপড়া জেনেও দিদি কেন যে এমন ভুল করলো?একদিন টের পাবে তাতে দিব্যেন্দুর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে অনেক বেলা হয়ে গেল।সুভদ্রা ইতিমধ্যে তিন্নিকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
সুতন্দ্রা বেসিনে মুখ ধুতে ধুতে ভাবে ভালয় ভালোয় মিটলো কোনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। দিদিভাই যা ভাল বুঝেছে তাই করেছে দিব্যেন্দুর সব ব্যাপারে মাথা ঘামানোর দরকার কি? বৈদুর্যটা আগের মত ক্যাবলা নেই,কেমন বিজ্ঞের মত কথা বলছিল। সুভদ্রা বলল, এবার একটু গড়িয়ে নে জিনি।
--না দিদি,এবার বেরোতে হবে।অনেক কাজ জমে আছে। কথাটা বলল দিব্যেন্দু।
সুতন্দ্রা কিছু একটা বলতে গিয়েও দিব্যেন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে না।মনে মনে ভাবে কাজ না ছাই,খালি বড় বড় কথা। সুভদ্রার নজর এড়ায় না সে বলল, তাহলে চলো তোমাদের পৌছে দিয়ে আসি।
--হ্যা সেই ভাল।বৈদুর্য বলল।
সুভদ্রা অবাক হয়ে দেখল বাবু মুহুর্তের মধ্যে সেজে গুজে প্রস্তুত।প্যাণ্টের উপর কালো টি-শার্ট পরেছে বেশ লাগছে দেখতে। সুভদ্রা মজা করে জিজ্ঞেস করে,তুমি আবার কোথায় চললে?
--আমি যাবো না?বৈদুর্যের মুখটা কালো হয়ে যায়।
সুভদ্রা মনে মনে হাসে।খালি ফাকি দেবার ছল বলল,ঠীক আছে চলো।
সামনে বৈদুর্য আর গাড়ীর পিছনে দিব্যেন্দু আর ঘুমন্ত তিন্নিকে কোলে নিয়ে সুতন্দ্রা বসেছে। দিব্যেন্দু ভেবেছিল একান্তে দিদির সঙ্গে টাকা-পয়সা নিয়ে কিছু কথা বলবে সঙ্গে কাত্তিকটা আসায় বিরক্ত হয়।
সল্টলেকে নামিয়ে দিতে দিব্যেন্দু জিজ্ঞেস করে,দিদি নামবেন না?
--আজ না ভাই।বাসায় লোক আসার কথা আছে।