Thread Rating:
  • 53 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery কোন কূলে যে ভীড়লো তরী/কামদেব
#28
     [১৫]


         দুর্যোগ যখন আসে জানান নাদিয়ে নিঃশব্দ চরণে।নির্বিচারে নির্মমভাবে তছনছ করে দিয়ে যায় সব। মুহুর্তকাল আগেও কেউ ঘুণাক্ষরে পায় না আভাস।পল্টু রেষ্টুরেণ্ট থেকে বেরিয়ে ভাবছে অফিস থেকে ফেরার সময় এখন বাসে উঠে জায়গা পাওয়া অসম্ভব।দাঁড়িয়ে যাবে কিন্তু অঞ্জনা?কানে এল ডাকছে অঞ্জনা, এ্যাই দেব এদিকে এসো।
ডাক অনুসরণ করে নজরে পড়ে একটা ট্যাক্সির ভিতর থেকে মুখ বের করে হাত নেড়ে তাকেই ডাকছে অঞ্জনা।দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে উঠে বসলো।
--এখন বাসে উঠতে পারবে?
--তুমি না থাকলে আমি ঠিক ঠেলেঠুলে উঠে পড়তাম।কতলোক যাচ্ছে না?
জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে পল্টু।একসময় অঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বলল, চাওমিনটা বেশ তাই না?
অঞ্জনা হেসে বলল,তুমি আগে কখনো খাওনি?
--খেয়েছি বাড়ীতে মিতামাসী করে কিন্তু এরকম না। আমার বাপি বলেন,প্লেন লিভিং হাই থিঙ্কিং।এখন অধ্যয়নের কাল।বিলাসিতা নয় কৃচ্ছ সাধনের মাধ্যমে জীবনকে চিনতে বুঝতে এবং গড়তে সাহায্য করে।
অঞ্জনার মনে পড়ল ড.সোমের কথা।প্রথম দিকে মনে হয়েছিল ভদ্রলোক অত্যন্ত রুঢ়ভাষী দাম্ভিক।পরে ভুল ভেঙ্গেছে। উনি হার্টের ডাক্তার হলেও মানুষকে দেখেন সামগ্রীকভাবে।শরীরে প্রতিটী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরস্পর সম্পর্কিত,কোনোটি স্বতন্ত্র নয়।সুতরাং বিচার করতে হলে আনুসঙ্গিক দিক গূলোর কথা ভুলে গেলে যথার্থ ওষুধ নির্বাচন অসম্ভব।অঞ্জনা দেবের হাত তুলে নিল।
সন্ধ্যেবেলা কাজ থাকে না।সবিতা সময় পেলে বৌদির বাড়ী যায় ভিডিও দেখতে। দরজা খুলে দিল মৌপিয়া,সবিতাকে দেখে একটূ বিরক্ত।শরীরটা তার ভাল নেই। সবিতা ঢুকে টিভির সামনে মেঝতে গিয়ে বসলো।মৌপিয়া বলল,এখন টিভি চালাবো না,আমার মাথাটা ধরেছে।
সবিতা জিজ্ঞেস করলো,বৌদি মাথা টিপে দেবো?
মৌপিয়ার মনের বিরুপতা কেটে যায়।উঠে একটা কার্টুন ফিলম চালিয়ে দিয়ে বলল, ভিডিও দেখতে দেখতে মাথাটা টিপে দে।সবিতা ইতস্তত করছে দেখে বলল,তুই খাটে উঠে বোস।
সবিতা খুব খুশি,খাটে উঠে বৌদির মাথা টিপতে শুরু করে।নেংটি ইন্দুরটারে তাড়া করছে বিড়ালটা সেদিকে তাকিয়ে সবিতা বলল,বৌদি আপনে তো আমারে বকলেন শুধু শুধু আমি মিথ্যা বলি নাই।গরীবের কথা বাসি হইলে মিঠা হয়।
--আমি কখন বকলাম? কোন কথা বলছিস?
--আপনে কাউরে বলবেন না,লুলাটা সত্যিই পেকনেট হয়েছে।
মৌপিয়া তড়াক করে উঠে বসে বলে,আবার লুলা?আমি তোকে বলিনি লুলা বলবি না।
--তা না বললাম কিন্তু টেক্সি করে কোথায় নিয়ে গেল আপনে বলেন?
মৌপিয়া এতক্ষণে বুঝতে পারে সবিতা কি বলছে।জিজ্ঞেস করে,প্রেগন্যাণ্ট?সঞ্জুর পিসি প্রেগন্যাণ্ট তুই কি করে জানলি?চোখ বড় বড় করে বলল, কি করে হল?
--কারো ঘরের কথা অন্যেরে বলা সবিতার অপছন্দ। কিন্তু আপনের কথা আলাদা। পালবাবুর শালা আর ডাক্তারের বেটায় মিলা করছে।
--চুপ কর আমার ভাল লাগছে না। চুপচাপ বসে ভিডিও দেখ।মৌপিয়া আবার শুয়ে পড়ল।দুজনে মিলে মানে?ঝি-চাকরদের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলা ঠিক নয় কৌতুহল দমন করে।
 ট্যাক্সিতে বসে খাদিজা গুন গুন করে,সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে, ছুন্নত করলে হয় '. নারীর তবে কিসে প্রমাণ….।মনে মনে হাসে খাদিজা সত্যিই তো সে যে '. কি করে বুঝবে। পাড়ায় ঢোকার মুখে অঞ্জনা বলল, ড্রাইভার সাহেব এখানে দাড় করান।দেবের হাত ছেড়ে দিল।
ট্যাক্সি দাড়ালে পল্টুকে বলল,দেব এখানে নেমে যাও।
--তুমি নামবে না?
অঞ্জনা বিরক্ত হয়ে ট্যাক্সি হতে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বলল,তুমি চলে যাও।
--তুমি কোথায় যাবে?
--বোঝো না কেন কেউ দেখলে খারাপ ভাবতে পারে।
--ভাবুক যার যা খুশি।পল্টু জিদ ধরে।
অঞ্জনা রেগে গিয়ে বলল,তুমি আমার কথা শুনবে না?
পল্টু অবাক হয়ে অঞ্জনাকে দেখে।বেশ তো ছিল এর মধ্যে কি এমন হল?তারপর হাটতে শুরু করে।প্রান্তিক ছাড়িয়ে বাড়ীর কাছে এসে পড়ল। কয়েকজন লোক বাড়ীর সামনে ঘোরাঘুরি করছে। পল্টুকে তারা অদ্ভুত চোখে দেখছে কিন্তু কেউ কিছু বলল না।বাড়ীতে ঢুকতে মিতা মাসী বলল,দাদাবাবু তুমি এখন আসলা? ডাক্তারবাবু নাই।
কি বলছে মিতামাসী? পল্টু জিজ্ঞেস করে, বাপি কোথায়?
--মামাবাবু আনতে গেছে।মিতামাসী ফুপিয়ে কেদে ফেলে।
পল্টুর মনে হল চারদিক থেকে এক শূণ্যতা ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করছে। মুহুর্তে পৃথিবীটা যেন বদলে গেল। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে বাপির ঘরে উকি দিল।বাপি যে সোফাটায় বসতেন সেটি আকড়ে ধরে মেঝেতে বসে আছে মম। পল্টুকে দেখে ব্যস্ত হয়ে মিতাকে ডেকে বলল,ওকে খেতে দাও।
--আমার ক্ষিধে নেই আমি খেয়েছি।
--পল্টু তুই চিন্তা করিস না,আমি তো আছি।মনোরমা বলল।
চোখে জল নেই কি সব বলছে মম?মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?নীচু হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে পল্টূ বলল, মম তুমি এরকম করছো কেন?
--বাবা দেখতো তোর মামা এলো কিনা?সেই কখন গেছে?
প্রতিদিন খুব গল্পগুজব হতো তা নয় কিন্তু অনুভব করতো প্রতিমুহুর্ত বাপির উপস্থিতি। বাপি নেই ভাবতে পারে না পল্টু। মমের অদ্ভুত আচরণ আরো যন্ত্রণা দেয়।এর থেকে মম যদি হাউ-হাউ করে কাদতো এতো খারাপ লাগতো না।রাত প্রায় দশটা ড.সোমের গাড়ী এসে পৌছালো,গাড়ীতে ড.সোমের বদলে দেবব্রত সেনগুপ্ত এবং মিসেস রাও।মিশনারী সন্ন্যাসিনীর মত লাগছে মিসেস রাওকে। পিছনে কাঁচের গাড়ীতে শায়িত ড.সোম।খবর পেয়ে মনোরমা নেমে এল। কাঁচের গাড়ীর কাছে গিয়ে অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ড.সোমের মুখের দিকে।
পাড়ার ভেঙ্গে সবাই এসেছে।দিলীপকে দেখা গেল ভীড়ের মধ্যে। অঞ্জনাও ছিল একটু দূরে।মৌপিয়া লুঙ্গি পরে এসেছে তাকে দেখে কেউ কেউ বিরক্ত।ডাক্তারবাবু পাড়ায় কারো সঙ্গে মিশতেন না তা সত্ত্বেও এত জনপ্রিয় আগে বোঝেনি।দেবব্রত এগিয়ে গিয়ে মনোরমাকে বললেন,মনো চল।
দাদার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মনোরমা,কোথায় যাবো?
পল্টূ বলল,মম চলো।
--দেখলি পল্টু কেমন চুপি চুপি চলে গেল।আমাকে আগে কিচ্ছু বলে নি।মনোরমা ছেলেকে বলল।
পল্টু বলল,মিতামাসী মমকে নিয়ে যাও না।
মিতা এসে মনোরমাকে ধরে ধরে ভিতরে নিয়ে গেল।দেবব্রত বাবু মিসেস রাও আর পল্টুকে নিয়ে গাড়ীতে উঠলেন। লক্ষণদা নিচু হয়ে জিজ্ঞেস করলো,পল্টু কাশিমিত্তির ঘাট তো?ঠিক আছে আমরা যাচ্ছি।
 এত লোকের মধ্যে পল্টুর নিজেকে খুব একা বোধ হয়।অথচ সারাদিন বাপির সঙ্গে কটাই বা কথা হত? সারাক্ষণ পল্টূ নিজেকে সামলে রেখেছিল,পাটকাঠি জ্বেলে যখন দিলীপ পল্টুর হাতে দিল মুখে আগুণ দেবার জন্য 'হাউ-হাউ' করে কেদে ফেলে পল্টু। দাউ-দাউ করে চিতা জ্বলে ওঠে দিলীপ ধরে নিয়ে পল্টূকে এক জায়গায় বসিয়ে দিল।
পল্টু জিজ্ঞেস করে, লক্ষণদা এলো না তো?
দিলীপ চুপ করে থাকে।পল্টু বলল,লক্ষণদা বলেছিল আসবে।
--শালা আরেকটা ঘটনা ঘটেছে।যত সব ফালতু ব্যাপার।দিলীপ বলে।
--আবার কি হল?
--লায়লি বাড়ী ফেরেনি।আণ্টি এসে লক্ষণদাকে বলল। শালা নিজের মেয়েকে নিজে সামলাতে পারো না?
--দিলীপ বাপি তোর মাকে দেখেছিল?
--হ্যা মাসীমা আমাকে টাকাও দিয়েছে।মা এখন ভাল আছে।কত বড় ডাক্তার ছিল মাইরি।
অনেকে এসেছে শ্মশানে,লক্ষণদা আসেনি।এক সময় চিতার আগুন নিভে এল। মিসেস রাও পল্টুর কাছে এসে বলল,ইটস গ্রেট লস।আমি আসি?
--আপনাকে পৌছে দিচ্ছে।ড্রাইভার কোথায়?
--আমি ট্যাক্সি নিয়ে নেবো। দরকার হলে ফোন কোর।মিসেস রাও চলে গেল।


লক্ষণদা বিল্টুর বাড়ি গেছিল।বিল্টুর মা বলেছে মাসীর বাড়ী বেড়াতে গেছে। বারাসাত না কোথায় থাকে ওর মাসী।অনেক খোজাখুজির পর মণিকাকে নিয়ে থানায় যায় লক্ষণদা।রমেনবাবুও সঙ্গে গেছিল।
থানার বড়বাবু বললেন,বয়ফ্রেণ্ড আছে?
--স্যার ওর বাড়ী গেছিলাম,বাড়ী নেই মাসীর বাড়ী গেছে।লক্ষণ বলল।
--ফুর্তি হয়ে গেলে ফিরে আসবে।আজ রাতটা দেখুন।বড়বাবু বলল।
--আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?রমেনবাবু বলল।
বড়বাবু কয়েক পলক রমেনবাবুকে দেখে বলল,আপনি বাবা?
--না প্রতিবেশি।
--মেয়ের কেউ আসেনি?
মণিকা এগিয়ে যায়,তাকে দেখিয়ে রমেনবাবু বলল,ইনি মা।
বড়বাবু জিজ্ঞেস করে,আপনি মা?আপনার স্বামী নেই?তারপর রমেনবাবুকে লক্ষ্য করে বলল,বিধবা দেখলে দরদ উথলে ওঠে? শোনো লক্ষণ আজ রাতটা দেখো যদি না ফেরে কাল দেখা কোরো।
--আচ্ছা স্যার।থানা থেকে বেরিয়ে লক্ষণ বলল,আমি কথা বলছি তার মধ্যে আপনি কেন কথা বলতে যান?তারপর মণিকাকে বলে,বৌদি বাড়ী যান। কাল সকালে আমি খোজ নেবো।
থানা থেকে পাড়া মিনিট দশেকের হাটাপথ।রমেনবাবু আর মণিকা ঘেষাঘেষি করে পথ চলে।
--দাদা লায়লি ফিরবো তো?
--কেন ফিরবে না?আমি তো আছি মণি।
--লায়লিটা এত বুকা পলায়ে গিয়ে বিয়া করলো নাতো?
রমেনবাবু ডানহাত মণিকার কাধে তুলে দিয়ে বলল,মণি কেন এসব উল্টোপাল্টা ভাবছো?কিচছু চিন্তা কোরনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
কাধে মৃদু চাপ দিলেও মণিকা আপত্তি করে না। দুঃসময়ে এই লোকটা তার পাশে দাড়িয়েছে।রমেনবাবু কোমরের উন্মুক্ত জায়গায় হাত নামিয়ে নিয়ে আসে।মণিকা মৃদুস্বরে বলল,রাস্তায় কেউ দেখবো।
রমেনবাবু এদিক-ওদিক তাকিয়ে  হাত সরিয়ে নিল।কিভাবে মণিকাকে সান্ত্বনা দেওয়া যায় সেই চিন্তা এখন রমেনবাবুর।
যদি বিয়েই কইরা থাকে একবার কইল না?মায়ে কি তোর শত্তুর?মণিকা ভাবতে থাকে।আড়চোখে রমেনবাবুর দিকে তাকায় মানুষটা তার জন্য কম করতেছে না।
[+] 6 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কোন কূলে যে ভীড়লো তরী/কামদেব - by kumdev - 24-02-2020, 10:01 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)