24-02-2020, 09:39 PM
[১৪]
খবর পেয়ে বড়দি দোলন ছোড়দি ঝুলন এসেছে। ডিসি পাল অফিস যায় নি। ভাইয়ের কাছে সব শুনে দোলন বলল,ছিঃ-ছিঃ পোড়ার মুখি আমাদের বংশের মুখে চুনকালি দিলি?।এত বয়স হল কই আমাদের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলতে পারবে?
--আঃ বড়দি এখন এসব কথা তুলে কি হবে?গুঞ্জনের কি করবে সেইটা ভাবো। ঝুলন বিরক্ত হয়।
--পুলিশে খবর দিয়েছিস? তদন্ত করলে কান টানলে দেখবি মাথা বেরিয়ে আসবে।
নিজের শালকের কথা ভেবে ডিসি পাল বলল,মাথা আসবে কি না জানি না কিন্তু আমাদের মাথা হেট হবে।
ঝুলন জিজ্ঞেস করল,সুখকে দেখছি না ওকে খবর দিস নি?
ডিসি পাল চোখ তুলে দেবযানীকে দেখে।
--দুলু তোর কি সাজেশন?ঝুলন জিজ্ঞেস করে।
দেবযানী উঠে গিয়ে সবিতাকে দেখে জিজ্ঞেস করে,তোমার বাসন মাজা হয়েছে?
--হ্যা এইবার ঘর মুছবো।সবিতা বলল।
--আজ আর ঘর মুছতে হবে না,এখন যাও।
ডিসি পাল একটু ভেবে বলল,দিদির বাড়ী বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে নার্সিং হোমে নিয়ে অপারেশন করিয়ে বড়দির ওখানে কদিন রেখে তারপর বাড়ীতে নিয়ে আসবো।
--তুই ক্ষেপেছিস?আমার মেয়েরা বড় হয়েছে শেষে বাপের বাড়ীর কীর্তি শ্বশুর বাড়ীতে জানাজানি হলে মুখ দেখাতে পারবো?দোলন ফুসে ওঠে।
ডিসিপাল অসহায় বোধ করে।দেবযানী কি বলতে যাচ্ছিল কিন্তু দুলুর মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল।
ঝুলন জিজ্ঞেস করল,কদিনের জন্য রাখতে হবে?
--কদিন আর অপারেশনের পর তিন-চারদিন বিশ্রাম করা দরকার।
--আছা চারদিন আমি রাখবো।দুলু তুই কিন্তু চারদিনের পর নিয়ে আসবি।
--সব কিছু অত কড়াকড়ি করলে হয় না।একটু সুস্থ হলেই নিয়ে আসবে।আগে থেকে কি করে বলবে?দোলন বলল।
--তুমি থামো বড়দি আমার ব্যাপার আমাকে ভাবতে দাও।দেবী তুমি বাড়ীতে থাকো একটু নজর রাখলে এরকম হত না।
--দিদি আমি তো সারাক্ষণ নজরে রাখি স্নান করানো খাওয়ানো আমিই সব করি।
দোলন বলল,তাহলেও গাফিলতি হয়েছে।এসব কাজে একটু সময় লাগে চোখের পলকে একজন ইয়ে করে দিয়ে চলে গেল তা কি সম্ভব? তুমি তো জানো একটু সময় লাগে না?
লজ্জায় দেবযানী তাকাতে পারে না চা নিয়ে আসার ছুতো করে উঠে গেল।
ঝুলন জিজ্ঞেস করে, দুলু সঞ্জুকে দেখছি না,ওর তো এখন ছুটি।
--জয়েণ্টে বসছে।আজ পরীক্ষা।
--নীরা তো সামনের বছর পরীক্ষা দেবে?পড়াশুনা করেতো ?আজকালর ছেলে মেয়ারা যা হয়েছে।
--বড়দি শুভ কি করছে?ঝুলন জিজ্ঞেস করে।
--অনার্স নিয়ে পড়ছে।ওকে বলেছিলাম জয়েণ্টে বসতে,ওর আবার ওসব পছন্দ নয়। শিক্ষার লাইনে থাকতে চায়।
ডিসি পাল বিরক্ত হয় এখন শিরে সংক্রান্তি আর এরা মেতেছে খোশ গল্পে। এমনভাব করছে গুঞ্জনের দায় যেন তার একার।বড় বড় কথা বাবা সময়মতো বিয়ে দিয়ে গেছেন সুখে কাটাচ্ছে দাম্পত্যজীবন।বিষয়টা কেউ গুঞ্জনের দিক থাকে ভাবছে না।ডিসি পালের মন ছোটো বোনটার জন্য কেদে উঠল।ঘর থেকে বেরিয়ে গুঞ্জনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,বড়দি মেজদি এসেছে--কথা বলবি?
--ওলা পাদি--ওলা পাদি।গুঞ্জন ঘাড় নাড়তে থাকে।
ডিসিপালের চোখে জল চলে আসে বলে,ছিঃ বড়দের ওরকম বলে না।
--তুই বালো পত্তু বালো।
পল্টু এসে ওকে চেয়ার থেকে ওয়াকারে তুলে দিত।কখনো চেয়ার ঠেলে বারান্দায় নিয়ে যেতো,কি ভেবে জিজ্ঞেস করে,সুখ রঞ্জন?
--থুক বালো।
ডিসিপাল ধন্দ্বে পড়ে যায়।পল্টু এরকম করবে বিশ্বাস হয় না,সুখ নিরীহ প্রকৃতি তাহলে কে হতে পারে? এমন কেউ হতে পারে যে সবার অগোচরে বাড়ীতে এসেছিল?দরজায় লক থাকে তা কি করে সম্ভব? যেই করুক একদিক দিয়ে ভাবলে গুঞ্জনের এই দিকটাও চিরকাল অনাস্বাদিত থাকলো না। কাগজে লেগে থাকা বীর্য পরীক্ষা করলে আসল লোককে ধরা অসুবিধে হত না কিন্তু তাতে কলঙ্ক মোচন হোতো কি?বরং জানাজানি হয়ে কেলেঙ্কারীর একশেষ।দেবীকে বলতে হবে সে যেন আগ বাড়িয়ে সুখকে কিছু বলতে না যায়। নীরার সঙ্গে বেশি মেশামিশি দেখে পল্টুকে ভাইফোটা দেবার কথা বলেছিল।খুশি হয়েই ফোটা নিতে সম্মত হয়েছিল,অস্বীকার করতেও পারতো।ছেলেটা খুব সরল।এত বড় ডাক্তারের ছেলে অথচ সে জন্য মনে কোনো দম্ভ নেই।
পরীক্ষা খারাপ হয়নি।পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে পল্টু অবাক। উল্টোদিকের ফুটপাথে একটা বাড়ীর নীচে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে অঞ্জনা।অঞ্জনা এখানে কলেজ যায়নি?কাছে যেতে জিজ্ঞেস করে,কেমন হল?
পল্টুর মুখটা ব্যাজার হয়ে যায় তাতে তোমার কি বাপু? বাড়ীতে গেলে মমও এই প্রশ্ন করবে।পল্টু দায়সারা গোছের উত্তর দিল,মোটামুটী।
--কিছু খাবে?
সত্যিই বেশ ক্ষিধে পেয়েছিল চারদিক তাকিয়ে দেখল একটা লোক শশা বিক্রি করছে, পল্টু জিজ্ঞেস করল,কিছু এনেছো?
অঞ্জনা পল্টুকে নিয়ে একটা চাইনিজ রেষ্টুরেণ্টে ঢুকলো।কেবিনে ঢুকে উল্টোদিকে চেয়ারে বসতে যাচ্ছিল অঞ্জনা বলল,আমার পাশে বোসো।বেয়ারা আসতে অঞ্জনা একটা প্রন চাউমিন আর চিলি চিকেনের ফরমাস দিল।পল্টু জিজ্ঞেস করে,তুমি খাবে না?
--আমি বেলায় খেয়েছি।তুমি কোন সকালে খেয়ে বেরিয়েছো।খাওয়া হলে একসঙ্গে কফি খাবো।
বেয়ারা খাবার দিয়ে গেল।সুন্দর গন্ধ বেরিয়েছে।জিভে জল এসে গেল।চামচ আর কাটা চামচ নিয়ে পল্টু খেতে শুরু করে।অঞ্জনা মমতামাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর খেয়াল হয় পাশে অঞ্জনা বসে আছে সেদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি একদম খাবে না?
--বলছি তো আরেক দিন খাবো।
পল্টু কাটা চামচে খানিকটা তুলে বলল,একটু খাও।
--ন না আমার ক্ষিধে নেই।
চামচ মুখের কাছে নিয়ে পীড়াপিড়ি করে ,একবার অঞ্জু একবার।
অগত্যা অঞ্জনা হা-করে।পল্টু মুখের মধ্যে চামচ পুরে দিল। তারপর এক টুকরো মাংস কাটায় বিধে বলল,আর এইটা আমি বলছি।
অঞ্জনা বাধ্য হয়ে টুকরোটা জিভ দিয়ে টেনে নিল।পল্টু অত্যন্ত পরিপাটি করে চাওমিন খেয়ে চলেছে।কোনোদিকে মন নেই।নিজের এটো চামচ অবলীলায় তার মুখে পুরে দিল আবার সেই চামচ দিয়ে নিঃসঙ্কোচে খেয়ে চলেছে।বিস্ময় বিমূঢ় চোখে চেয়ে থাকে অঞ্জনা।এত বছরের অভিজ্ঞতার সঙ্গে কিছুই মিলছে না, পিকনিকে দেখেছে এমন কি কলেজে শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গেও মিশেছে যত উদারই হোক কিছুটা স্বাতন্ত্র লক্ষ্য করেছে সব ক্ষেত্রে।পল্টুর খাওয়া শেষ মুখ তুলে অঞ্জনার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,দারুণ করেছে তাই না?
--তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?অঞ্জনা বলল।
পল্টু লজ্জা পেল,তার অঞ্জনাকে আরেকটু দেওয়া উচিত ছিল।
অঞ্জনা জিজ্ঞেস করল,তুমি যে আমার এটো খেলে কেউ যদি জানতে পারে?
--কি করে জানবে কেউ কি দেখেছে?
--ও,কেউ দেখলে খেতে না?
--বাঃ আমি একাই খেয়েছি নাকি?তুমিও তো আমার এটো খেয়েছো।পল্টু হেসে জবাব দেয়।
কি কথার কি উত্তর? কাকে কি বলছে অঞ্জনা মনে মনে ভাবে।
পল্টূ বলল,এবার আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
--কি জিজ্ঞেস করবে?
--আমার এটো চামচ দিয়ে তোমাকে দিয়েছি বলে তুমি রাগ করেছো?আচ্ছা বাবা স্যরি।
অঞ্জনা প্রশ্ন শুনে মনে মনে ভাবে দেব কি বোকা নাকি সরল? অঞ্জনা কি বলতে চাইছে দেব কি বুঝতে পারছে না?অঞ্জনা স্পষ্ট করে জিজ্ঞেস করে,শোনো দেব আমি একজন .।
পল্টু হতবাক ঘাড় ঘুরিয়ে অঞ্জনাকে দেখে।বিরক্ত হয়ে বলে,আচ্ছা তুমি কি সহজভাবে কথা বলতে পারো না? মাঝে মাঝে তুমি কি বলো আমি বুঝতে পারিনা।
অঞ্জনাও উষ্ণস্বরে বলে,আমি . তুমি বুঝতে পারো না?
--না পারি না।তুমি না বললে কোনোদিন বুঝতে পারতাম না।আমি ড.সোমের ছেলে পরিচয়ে নয় নিজের পরিচয়ে বাঁচতে চাই।তোমার ভাষা ব্যবহার শিক্ষা মানসিকতা তোমার পরিচয় তোমার আইডেণ্টিটি।অন্য কিছুর কোনো গুরুত্ব অন্তত আমার কাছে নেই।
অঞ্জনা বুকের মধ্যে অদ্ভুত অনুভুতি চোখে জল আসার উপক্রম। বেয়ারা কফি দিয়ে গেল,সঙ্গে বিল।পল্টু বিল নিয়ে মনযোগ দিয়ে দেখে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,দেখি এত টাকা আছে কিনা?
--তোমাকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না।অঞ্জনা পল্টুর হাত থেকে বিলটা নিয়ে নিল।
অঞ্জনা নীরবে কফিতে চুমুক দেয়।কত বয়স বড়জোর বাইশ-তেইশ কি সহজভাবে গভীর বিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বলল দেব।
--অঞ্জনা তোমার কাছে জানতে ইচ্ছে হয় আমি যদি কোনোদিন নাম বদলে তোমার কাছে আসি তুমি কি আমাকে অস্বীকার করবে?দরদভরা গলায় জিজ্ঞেস করে পল্টু।
অঞ্জনা কফির কাপ থেকে চোখ তোলে না পাছে পাছে দেব দেখে ফেলে জল জমেছে চোখের কোলে।বেয়ারাকে বিল মিটিয়ে টিপস দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলল অঞ্জনা,এখন চলো।খালি আজেবাজে প্রশ্ন।
সঞ্জয় বাড়ী ফিরতে দেবযানী জিজ্ঞেস করে, কিরে কেমন হল?
--যা পেরেছি লিখে দিয়েছি।রেজাল্ট বেরোলে বুঝতে পারবে।
জামা প্যাণ্ট বদলে রাঙা পিসির ঘর খালি দেখে জিজ্ঞেস করে, রাঙা পিসি কোথায় ,ঘরে নেই তো?
--তোর পিসিরা এসেছিল,মেজদি ওকে নিয়ে গেছে।দেবযানী বলল।
সঞ্জয় মায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে তারপর জিজ্ঞেস করে,মেজোপিসির ওখানে থাকবে? যাবার আগে একবার দেখা হল না?
--আবার ফিরে আসবে,দুদিনের জন্য বেড়াতে গেছে। ঐ ঝামেলা কেউ রাখে নাকি?
--কি ঝামেলা করলো?তুমি ঝামেলা বলছো কেন?
--কুটোটিও নাড়োনা খাওয়ানো চান করানো সব আমাকেই করতে হয়। মুখে মুখে দরদ দেখানো সহজ।
সঞ্জয় প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলে,আসতে না আসতে শুরু করলে।চা-টা দেবে?
খবর পেয়ে বড়দি দোলন ছোড়দি ঝুলন এসেছে। ডিসি পাল অফিস যায় নি। ভাইয়ের কাছে সব শুনে দোলন বলল,ছিঃ-ছিঃ পোড়ার মুখি আমাদের বংশের মুখে চুনকালি দিলি?।এত বয়স হল কই আমাদের দিকে কেউ আঙ্গুল তুলতে পারবে?
--আঃ বড়দি এখন এসব কথা তুলে কি হবে?গুঞ্জনের কি করবে সেইটা ভাবো। ঝুলন বিরক্ত হয়।
--পুলিশে খবর দিয়েছিস? তদন্ত করলে কান টানলে দেখবি মাথা বেরিয়ে আসবে।
নিজের শালকের কথা ভেবে ডিসি পাল বলল,মাথা আসবে কি না জানি না কিন্তু আমাদের মাথা হেট হবে।
ঝুলন জিজ্ঞেস করল,সুখকে দেখছি না ওকে খবর দিস নি?
ডিসি পাল চোখ তুলে দেবযানীকে দেখে।
--দুলু তোর কি সাজেশন?ঝুলন জিজ্ঞেস করে।
দেবযানী উঠে গিয়ে সবিতাকে দেখে জিজ্ঞেস করে,তোমার বাসন মাজা হয়েছে?
--হ্যা এইবার ঘর মুছবো।সবিতা বলল।
--আজ আর ঘর মুছতে হবে না,এখন যাও।
ডিসি পাল একটু ভেবে বলল,দিদির বাড়ী বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে নার্সিং হোমে নিয়ে অপারেশন করিয়ে বড়দির ওখানে কদিন রেখে তারপর বাড়ীতে নিয়ে আসবো।
--তুই ক্ষেপেছিস?আমার মেয়েরা বড় হয়েছে শেষে বাপের বাড়ীর কীর্তি শ্বশুর বাড়ীতে জানাজানি হলে মুখ দেখাতে পারবো?দোলন ফুসে ওঠে।
ডিসিপাল অসহায় বোধ করে।দেবযানী কি বলতে যাচ্ছিল কিন্তু দুলুর মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল।
ঝুলন জিজ্ঞেস করল,কদিনের জন্য রাখতে হবে?
--কদিন আর অপারেশনের পর তিন-চারদিন বিশ্রাম করা দরকার।
--আছা চারদিন আমি রাখবো।দুলু তুই কিন্তু চারদিনের পর নিয়ে আসবি।
--সব কিছু অত কড়াকড়ি করলে হয় না।একটু সুস্থ হলেই নিয়ে আসবে।আগে থেকে কি করে বলবে?দোলন বলল।
--তুমি থামো বড়দি আমার ব্যাপার আমাকে ভাবতে দাও।দেবী তুমি বাড়ীতে থাকো একটু নজর রাখলে এরকম হত না।
--দিদি আমি তো সারাক্ষণ নজরে রাখি স্নান করানো খাওয়ানো আমিই সব করি।
দোলন বলল,তাহলেও গাফিলতি হয়েছে।এসব কাজে একটু সময় লাগে চোখের পলকে একজন ইয়ে করে দিয়ে চলে গেল তা কি সম্ভব? তুমি তো জানো একটু সময় লাগে না?
লজ্জায় দেবযানী তাকাতে পারে না চা নিয়ে আসার ছুতো করে উঠে গেল।
ঝুলন জিজ্ঞেস করে, দুলু সঞ্জুকে দেখছি না,ওর তো এখন ছুটি।
--জয়েণ্টে বসছে।আজ পরীক্ষা।
--নীরা তো সামনের বছর পরীক্ষা দেবে?পড়াশুনা করেতো ?আজকালর ছেলে মেয়ারা যা হয়েছে।
--বড়দি শুভ কি করছে?ঝুলন জিজ্ঞেস করে।
--অনার্স নিয়ে পড়ছে।ওকে বলেছিলাম জয়েণ্টে বসতে,ওর আবার ওসব পছন্দ নয়। শিক্ষার লাইনে থাকতে চায়।
ডিসি পাল বিরক্ত হয় এখন শিরে সংক্রান্তি আর এরা মেতেছে খোশ গল্পে। এমনভাব করছে গুঞ্জনের দায় যেন তার একার।বড় বড় কথা বাবা সময়মতো বিয়ে দিয়ে গেছেন সুখে কাটাচ্ছে দাম্পত্যজীবন।বিষয়টা কেউ গুঞ্জনের দিক থাকে ভাবছে না।ডিসি পালের মন ছোটো বোনটার জন্য কেদে উঠল।ঘর থেকে বেরিয়ে গুঞ্জনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,বড়দি মেজদি এসেছে--কথা বলবি?
--ওলা পাদি--ওলা পাদি।গুঞ্জন ঘাড় নাড়তে থাকে।
ডিসিপালের চোখে জল চলে আসে বলে,ছিঃ বড়দের ওরকম বলে না।
--তুই বালো পত্তু বালো।
পল্টু এসে ওকে চেয়ার থেকে ওয়াকারে তুলে দিত।কখনো চেয়ার ঠেলে বারান্দায় নিয়ে যেতো,কি ভেবে জিজ্ঞেস করে,সুখ রঞ্জন?
--থুক বালো।
ডিসিপাল ধন্দ্বে পড়ে যায়।পল্টু এরকম করবে বিশ্বাস হয় না,সুখ নিরীহ প্রকৃতি তাহলে কে হতে পারে? এমন কেউ হতে পারে যে সবার অগোচরে বাড়ীতে এসেছিল?দরজায় লক থাকে তা কি করে সম্ভব? যেই করুক একদিক দিয়ে ভাবলে গুঞ্জনের এই দিকটাও চিরকাল অনাস্বাদিত থাকলো না। কাগজে লেগে থাকা বীর্য পরীক্ষা করলে আসল লোককে ধরা অসুবিধে হত না কিন্তু তাতে কলঙ্ক মোচন হোতো কি?বরং জানাজানি হয়ে কেলেঙ্কারীর একশেষ।দেবীকে বলতে হবে সে যেন আগ বাড়িয়ে সুখকে কিছু বলতে না যায়। নীরার সঙ্গে বেশি মেশামিশি দেখে পল্টুকে ভাইফোটা দেবার কথা বলেছিল।খুশি হয়েই ফোটা নিতে সম্মত হয়েছিল,অস্বীকার করতেও পারতো।ছেলেটা খুব সরল।এত বড় ডাক্তারের ছেলে অথচ সে জন্য মনে কোনো দম্ভ নেই।
পরীক্ষা খারাপ হয়নি।পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে পল্টু অবাক। উল্টোদিকের ফুটপাথে একটা বাড়ীর নীচে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে অঞ্জনা।অঞ্জনা এখানে কলেজ যায়নি?কাছে যেতে জিজ্ঞেস করে,কেমন হল?
পল্টুর মুখটা ব্যাজার হয়ে যায় তাতে তোমার কি বাপু? বাড়ীতে গেলে মমও এই প্রশ্ন করবে।পল্টু দায়সারা গোছের উত্তর দিল,মোটামুটী।
--কিছু খাবে?
সত্যিই বেশ ক্ষিধে পেয়েছিল চারদিক তাকিয়ে দেখল একটা লোক শশা বিক্রি করছে, পল্টু জিজ্ঞেস করল,কিছু এনেছো?
অঞ্জনা পল্টুকে নিয়ে একটা চাইনিজ রেষ্টুরেণ্টে ঢুকলো।কেবিনে ঢুকে উল্টোদিকে চেয়ারে বসতে যাচ্ছিল অঞ্জনা বলল,আমার পাশে বোসো।বেয়ারা আসতে অঞ্জনা একটা প্রন চাউমিন আর চিলি চিকেনের ফরমাস দিল।পল্টু জিজ্ঞেস করে,তুমি খাবে না?
--আমি বেলায় খেয়েছি।তুমি কোন সকালে খেয়ে বেরিয়েছো।খাওয়া হলে একসঙ্গে কফি খাবো।
বেয়ারা খাবার দিয়ে গেল।সুন্দর গন্ধ বেরিয়েছে।জিভে জল এসে গেল।চামচ আর কাটা চামচ নিয়ে পল্টু খেতে শুরু করে।অঞ্জনা মমতামাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর খেয়াল হয় পাশে অঞ্জনা বসে আছে সেদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি একদম খাবে না?
--বলছি তো আরেক দিন খাবো।
পল্টু কাটা চামচে খানিকটা তুলে বলল,একটু খাও।
--ন না আমার ক্ষিধে নেই।
চামচ মুখের কাছে নিয়ে পীড়াপিড়ি করে ,একবার অঞ্জু একবার।
অগত্যা অঞ্জনা হা-করে।পল্টু মুখের মধ্যে চামচ পুরে দিল। তারপর এক টুকরো মাংস কাটায় বিধে বলল,আর এইটা আমি বলছি।
অঞ্জনা বাধ্য হয়ে টুকরোটা জিভ দিয়ে টেনে নিল।পল্টু অত্যন্ত পরিপাটি করে চাওমিন খেয়ে চলেছে।কোনোদিকে মন নেই।নিজের এটো চামচ অবলীলায় তার মুখে পুরে দিল আবার সেই চামচ দিয়ে নিঃসঙ্কোচে খেয়ে চলেছে।বিস্ময় বিমূঢ় চোখে চেয়ে থাকে অঞ্জনা।এত বছরের অভিজ্ঞতার সঙ্গে কিছুই মিলছে না, পিকনিকে দেখেছে এমন কি কলেজে শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গেও মিশেছে যত উদারই হোক কিছুটা স্বাতন্ত্র লক্ষ্য করেছে সব ক্ষেত্রে।পল্টুর খাওয়া শেষ মুখ তুলে অঞ্জনার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,দারুণ করেছে তাই না?
--তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?অঞ্জনা বলল।
পল্টু লজ্জা পেল,তার অঞ্জনাকে আরেকটু দেওয়া উচিত ছিল।
অঞ্জনা জিজ্ঞেস করল,তুমি যে আমার এটো খেলে কেউ যদি জানতে পারে?
--কি করে জানবে কেউ কি দেখেছে?
--ও,কেউ দেখলে খেতে না?
--বাঃ আমি একাই খেয়েছি নাকি?তুমিও তো আমার এটো খেয়েছো।পল্টু হেসে জবাব দেয়।
কি কথার কি উত্তর? কাকে কি বলছে অঞ্জনা মনে মনে ভাবে।
পল্টূ বলল,এবার আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
--কি জিজ্ঞেস করবে?
--আমার এটো চামচ দিয়ে তোমাকে দিয়েছি বলে তুমি রাগ করেছো?আচ্ছা বাবা স্যরি।
অঞ্জনা প্রশ্ন শুনে মনে মনে ভাবে দেব কি বোকা নাকি সরল? অঞ্জনা কি বলতে চাইছে দেব কি বুঝতে পারছে না?অঞ্জনা স্পষ্ট করে জিজ্ঞেস করে,শোনো দেব আমি একজন .।
পল্টু হতবাক ঘাড় ঘুরিয়ে অঞ্জনাকে দেখে।বিরক্ত হয়ে বলে,আচ্ছা তুমি কি সহজভাবে কথা বলতে পারো না? মাঝে মাঝে তুমি কি বলো আমি বুঝতে পারিনা।
অঞ্জনাও উষ্ণস্বরে বলে,আমি . তুমি বুঝতে পারো না?
--না পারি না।তুমি না বললে কোনোদিন বুঝতে পারতাম না।আমি ড.সোমের ছেলে পরিচয়ে নয় নিজের পরিচয়ে বাঁচতে চাই।তোমার ভাষা ব্যবহার শিক্ষা মানসিকতা তোমার পরিচয় তোমার আইডেণ্টিটি।অন্য কিছুর কোনো গুরুত্ব অন্তত আমার কাছে নেই।
অঞ্জনা বুকের মধ্যে অদ্ভুত অনুভুতি চোখে জল আসার উপক্রম। বেয়ারা কফি দিয়ে গেল,সঙ্গে বিল।পল্টু বিল নিয়ে মনযোগ দিয়ে দেখে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,দেখি এত টাকা আছে কিনা?
--তোমাকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না।অঞ্জনা পল্টুর হাত থেকে বিলটা নিয়ে নিল।
অঞ্জনা নীরবে কফিতে চুমুক দেয়।কত বয়স বড়জোর বাইশ-তেইশ কি সহজভাবে গভীর বিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বলল দেব।
--অঞ্জনা তোমার কাছে জানতে ইচ্ছে হয় আমি যদি কোনোদিন নাম বদলে তোমার কাছে আসি তুমি কি আমাকে অস্বীকার করবে?দরদভরা গলায় জিজ্ঞেস করে পল্টু।
অঞ্জনা কফির কাপ থেকে চোখ তোলে না পাছে পাছে দেব দেখে ফেলে জল জমেছে চোখের কোলে।বেয়ারাকে বিল মিটিয়ে টিপস দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলল অঞ্জনা,এখন চলো।খালি আজেবাজে প্রশ্ন।
সঞ্জয় বাড়ী ফিরতে দেবযানী জিজ্ঞেস করে, কিরে কেমন হল?
--যা পেরেছি লিখে দিয়েছি।রেজাল্ট বেরোলে বুঝতে পারবে।
জামা প্যাণ্ট বদলে রাঙা পিসির ঘর খালি দেখে জিজ্ঞেস করে, রাঙা পিসি কোথায় ,ঘরে নেই তো?
--তোর পিসিরা এসেছিল,মেজদি ওকে নিয়ে গেছে।দেবযানী বলল।
সঞ্জয় মায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে তারপর জিজ্ঞেস করে,মেজোপিসির ওখানে থাকবে? যাবার আগে একবার দেখা হল না?
--আবার ফিরে আসবে,দুদিনের জন্য বেড়াতে গেছে। ঐ ঝামেলা কেউ রাখে নাকি?
--কি ঝামেলা করলো?তুমি ঝামেলা বলছো কেন?
--কুটোটিও নাড়োনা খাওয়ানো চান করানো সব আমাকেই করতে হয়। মুখে মুখে দরদ দেখানো সহজ।
সঞ্জয় প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলে,আসতে না আসতে শুরু করলে।চা-টা দেবে?