Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#25
(Update No. 50)

বিভাদেবী কোন কথা না বলে সীমন্তিনীর মুখটাকে নিজের বুকে চেপে ধরলেন। এবার সতীশও সামনে এসে বিধুবাবু আর বিভাদেবীকে প্রণাম করতে বিধুবাবু হা হা করে উঠে বললেন, “আচ্ছা তোমরা দু’ভাইবোন মিলে কী শুরু করেছ বল তো? এতবার করে প্রণাম করছ কেন”?

সীমন্তিনী বিছানায় বসে কিংশুককে কাছে টেনে নিয়ে তার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল, “ভাই, আজ থেকে আমি তোমার সত্যি সত্যি দিদি হয়ে গেলাম। মনে রেখ”।

সতীশও বিধুবাবুর কথার জবাবে বলল, “এর আগে যখন প্রণাম করেছিলাম তখন আপনারা ছিলেন আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ গুরুজন। এখন থেকে আপনারা যে আমাদের আত্মীয় আমাদের আপন লোক হয়ে উঠলেন। এবারের প্রণামটা সে জন্যেই করলাম”।
 

এমন সময় রচনা দুধের গ্লাস নিয়ে ঘরে ঢুকে সীমন্তিনীর কাছে এসে ভারী গলায় বলল, “নাও দিদিভাই। এ দুধটুকু খেয়ে নাও”।
 

সীমন্তিনী রচনার মুখের দিকে চেয়েই বুঝতে পারল ও ভেতরে ভেতরে কাঁদছে। নিজের ভেজা চোখ মুছতে মুছতে বলল, “খাব, তবে এতটা নয়। তুই আর ভাই আগে একটু একটু খেয়ে কমিয়ে দে। তারপর নিজে হাতে বাকিটুকু আমায় খাইয়ে দে”।

রচনা কয়েক মূহুর্ত স্থির চোখে সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে রইল। তারপর কোন কথা না বলে দুধের গ্লাসটায় একটা চুমুক দিয়ে কিংশুকের মুখের সামনে গ্লাসটা তুলে ধরল। কিংশুকও বিনাবাক্যে একটুখানি দুধ খেয়ে নেবার পর সীমন্তিনীর ঠোঁটে গ্লাস ছুঁইয়ে রচনা বলল, “নাও”।
 

সীমন্তিনী আর কোন কথা না বলে দুধটুকু খেয়ে নিতেই রচনা দু’হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। সীমন্তিনীও রচনাকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলল, “জানি রে। আমি তোকেও খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আমাকে মাফ করে দে বোন। আর কক্ষনও তোর কাছে কোন মিথ্যে কথা বলব না”।

রচনা কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “তুমি সত্যিই খুব খুব খারাপ দিদিভাই। কাল রাত থেকে আমাকে এভাবে কষ্ট দিতে তোমার একটুও বাঁধল না”?

সীমন্তিনী বলল, “আজ তোদেরকে সত্যি কথাটা বলব বলেই তো অমনটা করেছিলুম রে। ছোটবেলা থেকে আমি কখনও মিথ্যে কথা বলিনি। জীবনে এই প্রথম আমি তোর কাছে, মাসি মেসোর কাছে মিথ্যে কথা বলেছিলাম। ভেবেছিলাম আমার দাদাভাইয়ের সুখের জন্য এটুকু মিথ্যে কথা বললে কোন দোষ হবে না। কিন্তু আর আমি এমনটা চালিয়ে যেতে পারছিলাম না রে। তোদের সকলের বিশ্বাস নিয়ে আর খেলা করতে পারছিলাম না। তাই তো আজ সব খুলে বললাম। আমাকে ক্ষমা করে দে বোন। লক্ষ্মী বোন আমার”।

বিভাদেবী দুই মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, “তোমরা দু’বোন সারাজীবন এমনি করেই দু’জন দু’জনকে ভালবেসো মা”।
 

সীমন্তিনী রচনাকে আরো জোরে নিজের বুকে চেপে ধরে বিভাদেবীর কথার জবাবে বলল, “আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি মাসি। তোমার মেয়েকে আমার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত এভাবেই আগলে রাখব আমি”।
 

বেশ কিছুক্ষণ বাদে রচনা নিজেকে সামলে নিয়ে সীমন্তিনীকে ছেড়ে দিয়ে বলল, “দিদিভাই তোমার যে সে ক্ষমতা আছে, তা তো আমি বুঝেই গেছি। কিন্তু জান তো? ভালবাসা গ্রহন করার যোগ্যতা না থাকলে তাকে কেউ সেভাবে ভালবাসা দিতেও পারে না। আমাকে তুমি তোমার ভালবাসা পাবার যোগ্য করে তুলো। আমাকে সব শিখিয়ে পড়িয়ে দিও তুমি”।

এবার সতীশ ঘরের আবহাওয়াটাকে খানিকটা হাল্কা করবার উদ্দেশ্যে কিংশুককে বলল, “ভাই তুমি একটু আমার কাছে এস তো। আমাকে একটু সাহায্য কর”।
 

কিংশুক সতীশের কথা মত প্যাকেটগুলো নিয়ে তার হাতে দিতেই সতীশ বিধুবাবুকে বলল, “মেসোমশাই, বৌদি ভাল রেজাল্ট করেছে শুনে আসবার সময় মা আপনাদের সকলের জন্য কিছু কিছু উপহার পাঠিয়ে দিয়েছেন। এটা আপনার” বলে একটা প্যাকেট বিধুবাবুর হাতে দিয়ে তাকে প্রণাম করল।

তারপর বিভাদেবীর হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে তাকেও নমস্কার করল। এরপর কিংশুকের হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলল, “ভাই, এটা তোমার জন্য”।

কিংশুক প্যাকেটটা হাতে নিয়েই ঢিপ করে সতীশকে প্রণাম করতেই সতীশ হা হা করে উঠে বলল, “আরে আরে এ কি করছ ভাই? থাক থাক। আমাকে প্রণাম করতে হবে না”।
 

কিংশুক প্রণাম সেরে উঠে বলল, “না দাদা, কেউ কোন উপহার দিলে, তাকে তো প্রণাম করতেই হয়। ছোটবেলা থেকেই মা বাবা এটা শিখিয়েছেন আমাদের”।
 

সতীশ সীমন্তিনীকে বলল, “এই বড়দি, এবার তুই আমাকে বাঁচা। বৌদির প্যাকেটটা তার হাতে তুইই তুলে দে। নইলে সেও আমাকে প্রণাম করে ফেলবে”।
 

সতীশের কথা শুনে ঘরের সকলেই হো হো করে হেসে উঠল। হাঁসি থামিয়ে সীমন্তিনী বলল, “দেওর হয়ে কেউ বৌদির প্রণাম পেয়েছে বলে কখনও শুনিনি রে ভাই। আজ তুই সেটা পেলে মন্দ হবে না। একটা বিশ্ব
 
রেকর্ড হয়ে যাবে। তাই তুইই দে ওটা তোর বৌদির হাতে”।
 

সবাই আরেক চোট হাসল। সতীশ খানিকটা দুরে গিয়ে লম্বা করে হাত বাড়িয়ে রচনার দিকে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ও বৌদি, প্লীজ ভাইয়ের মত তুমি কিন্তু ও’সব কোর না। নাও এটা”।
 

রচনা সতীশের মুখে বৌদি ডাক শুনে লজ্জায় দু’হাতে নিজের মুখ ঢাকল। সীমন্তিনী এগিয়ে এসে সতীশের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে রচনাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “এই মেয়ে, আর লজ্জা পেতে হবে না। বৌদিকে বৌদি বলবে না তো কি বলবে? নে, এটা তোর শাশুড়ি মায়ের প্রথম উপহার। তাই সতুকে বা আমাকে প্রণাম না করে এটা নিয়ে মনে মনে তাকেই একটা প্রণাম করিস তাহলেই হবে। অবশ্য তিনটের দিকে তোর শাশুড়ি নিজেই তোকে ফোন করবেন। তখন ফোনেও প্রণাম জানাতে পারবি”।
 

রচনা প্যাকেটটা হাতে নিয়ে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “কে কখন ফোন করবে, কে কখন ফোন ধরবে, তোমরা সব আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছ, না”?

সীমন্তিনী হেসে রচনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তোকে এত সহজে ছেড়ে দেব ভেবেছিস”?
 
*************

দুপুরের খাওয়া দাওয়া সারতে সারতে বেলা আড়াইটে বেজে গেল। রচনা মা-র সাথে হাতে হাত মিলিয়ে সব কাজ সারছিল। বিভাদেবী রচনাকে বললেন, “তোর বাবা তো এখন একটু ঘুমোবেন। তুই যা, সতু আর মন্তিকে তোর ঘরে নিয়ে তাদের সাথে একটু কথা বলগে যা। বাকিটুকু আমি সেরে নেব’খন। আর খোকাকে বল ও-ও যেন একটু ঘুমিয়ে নেয়”।
 

রচনা হাত ধুয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে তার বাবার ঘরে গিয়ে ঢুকল। বিধুবাবু সীমন্তিনী আর সতীশের সাথে গল্প করছিলেন। রচনা তার বাবাকে বলল, “বাবা তুমি তো ঘুমোবে এখন তাই না? তাহলে আমি দাদা আর দিদিভাইকে নিয়ে আমার ঘরে যাই” বলে সীমন্তিনীর হাত ধরে বলল, “চল দিদিভাই, আমরা ও ঘরে যাই। দাদা তুমিও এস”।
 

সীমন্তিনী রচনার সাথে তার ঘরে এসে জিজ্ঞেস করল, “হ্যারে রচু? মেসো বললেন। ছোলার ডালের রসাটা নাকি তুই নিজে বানিয়েছিস? সত্যি নাকি রে”?
 

রচনা বিছানায় সতীশ আর সীমন্তিনীকে বসতে বলে বলল, “ওটাই শুধু করেছি। বাকি সবকিছু মা নিজেই করেছেন। ভাল হয়নি বুঝি, তাই না দিদিভাই”?
 

সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “ভাল হয়নি মানে? দারুণ হয়েছে জিনিসটা। পেটে যদি জায়গা থাকত তাহলে আরো খানিকটা চেয়ে নিতুম। তুই এত সুন্দর রান্না করতে পারিস? আমার কথা বিশ্বেস না হলে সতুকে জিজ্ঞেস কর। দেখ ও কি বলে”?
 

রচনা আগ্রহ সহকারে সতীশকে জিজ্ঞেস করল, “দাদা, সত্যি করে বল তো? তোমার কেমন লেগেছে”?
 

সতীশ কোন কথা না বলে নিজের মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, “মানছি দিদির সাথে তোমার বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাই তাকে আদর করে দিদিভাই বলে ডাক তুমি। কিন্তু এতদিন আমি আসিনি বলেই আমাকে এভাবে দাদা বলে ডাকবে তুমি বৌদি? আমি না তোমার দেওর”?
 

রচনা বলল, “বারে, হলেই বা দেওর। কিন্তু তুমি আমার চেয়ে বয়সে তো বড়। তোমাকে আমি কখনোই নাম ধরে ডাকতে পারব না। দাদা বলেই ডাকব”।
 

সতীশ বলল, “তাহলে তোমার সাথে আজ থেকেই কথা বন্ধ করে দেব বলে দিচ্ছি। রাস্তা ঘাটে যেমন লোকেরা ‘ও দাদা ও দাদা’ বলে ডাকে তুমিও আমাকে সেভাবে ডাকবে বুঝি? ও’সব হবে না। তার চেয়ে তুমি নাম ধরে ডাকলেই আমার বেশী ভাল লাগবে। আর সেটা করতে না পারলে ডাকারও দরকার নেই আর কথা বলারও দরকার নেই”।

রচনা কাতর চোখে সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে বলল, “ও দিদিভাই, তুমি একটু বোঝাও না তোমার ভাইটাকে। নাহলে তুমি বলে দাও আমি ওনাকে কী বলে ডাকব”?
 

সীমন্তিনী বলল, “আমাদের ছোট ভাইবোনেরা সবাই ওকে মেজদা বলে ডাকে। তা ওর যখন দাদা ডাক শুনতে আপত্তি আছে, তাহলে তুই বরং ওকে শুধু মেজো বলে ডাকিস”।
 

রচনা বলল, “ধ্যাত। একদম বাজে লাগবে শুনতে। আর তাছাড়া তোমার বড়মা তো তোমার মাকে মেজো বলে ডাকেন। তার চেয়ে আমি বরং এ দাদাকে মেজদাভাই বলে ডাকব। চলবে তো”?
 

সতীশ লাফিয়ে উঠে বলল, “দারুণ বলেছ বৌদি। মেজদাভাই ডাকটা শুনতেও খুব ভাল লাগবে। আমাদের সকলের বড়দি তোমার দিদিভাই, আর আমি সকলের মেজদা হলেও তোমার মেজদাভাই। তবে ওই রসাটা কিন্তু সত্যি দারুন বানিয়েছ বৌদি। এমন সুস্বাদু জিনিস আগে কখনও খেয়েছি কিনা মনে করতে পারছি না। মা শুনে খুব খুশী হবেন”।
 

রচনা মাথা নিচু করে বলল, “যদি আমার মন রাখতে এ’কথা বলে থাক, তাহলে তো আর কিছু বলার থাকে না মেজদাভাই”।

সীমন্তিনী বলল, “না রে রচু, আমরা কেউ বাড়িয়ে বলছি না। সত্যি খব সুন্দর রেঁধেছিস তুই। তবে একটা কথা আমি এখনও বুঝতে পারছিনা রে। তুই কি করে ....”

সীমন্তিনীর কথার মাঝখানেই রচনার মোবাইল বেজে উঠল। সীমন্তিনী জানে, এটা বড়মার ফোন। রচনা ফোনের স্ক্রিন দেখেই সীমন্তিনীর দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “নাও দিদিভাই, তোমার বড়মার ফোন”।

সীমন্তিনী বলল, “বড়মা তো তোর ফোনে করেছেন। তার মানে তিনি তোর সাথে কথা বলতে চাইছেন। তুই না ধরে আমাকে দিচ্ছিস কেন? তাড়াতাড়ি রিসিভ কর নইলে টাইম আউট হয়ে যাবে”।
 

রচনা ফোনটা রিসিভ করে বলল, “প্রণাম নিও মামনি”। সীমন্তিনী হাত বাড়িয়ে ফোনের লাউডস্পীকার অন করে দিল।

সরলাদেবী জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যারে মা, ওদিকের খবর কিরে? সব ঠিকঠাক আছে তো? আমি তো সকাল থেকে বড় দুশ্চিন্তায় আছি রে”।

রচনা শান্ত গলায় জবাব দিল, “না মামনি, দুশ্চিন্তা করবার মত কিছু হয়নি। দিদিভাই আর মেজদাভাই সব কিছু সুন্দর ভাবে সামলে নিয়েছেন। এখন খাওয়া দাওয়া সেরে আমার ঘরে বসে তাদের সাথেই তো কথা বলছি। তা, তুমি ভাল আছ তো মামনি”?

সরলাদেবী একটু অবাক হয়ে বললেন, “এই সোনা, তোর এই দিদিভাই, মেজদাভাই এরা সব কারা রে মা? তোদের কোন আত্মীয় বুঝি”?

রচনা একটু লাজুকভাবে জবাব দিল, “হ্যা মামনি, আত্মীয়ই তো। পরম আত্মীয়। আমি তো তোমার এ’ দু’ ছেলেমেয়েকে ও’ নামেই ডাকি”।

সরলাদেবী রচনার কথা শুনে আশ্বস্ত হয়ে বললেন, “যাক রে মা। আমার চিন্তাটা দুর হল। ইশ সকাল থেকে কী যে টেনশন হচ্ছিল ভেতরে ভেতরে, কী বলব তোকে। আচ্ছা জিনিসগুলো তোদের পছন্দ হয়েছে মা? আমি ইচ্ছে করেই শাড়ি না পাঠিয়ে তোর জন্য দুটো চুড়িদার কিনে পাঠিয়েছি। বিয়ের পর থেকে তো শাড়িই পড়বি। এর আগের সময়টুকু চুড়িদার শালোয়ার কামিজ পড়ে নে চুটিয়ে। অবশ্য তুই চাইলে বিয়ের পরেও বাড়িতে ওসব ড্রেস পড়তে পারবি। আমরা তোকে বারণ করব না। তা তোর পছন্দ হয়েছে তো”?
 

রচনা বলল, “হ্যা হ্যা মামনি। খুব পছন্দ হয়েছে আমার। তোমার পছন্দ খুবই ভাল”।

সরলাদেবী খুশী হয়ে বললেন, “ঠিক আছে রে মা। আমার মন থেকে দুশ্চিন্তাটা কাটল। তাই তোকে আর বিরক্ত করব না। তুই ওদের সাথে কথা বল। কিন্তু তোর মা বাবা আর ভাই, ওদের জিনিসগুলো যদি মাপে ছোটবড় বা অপছন্দ হয়ে থাকে তাহলে সতুর সাথেই পাঠিয়ে দিস। এখান থেকে পাল্টে নিয়ে পরে আবার পাঠিয়ে দেব। তোর ভাইয়েরটা নিয়েই চিন্তায় আছি। যাহোক, তুই নিজে একটু দেখিস মা। আর প্রয়োজন হলে পাঠিয়ে দিস। কেমন”?

রচনা বলল, “ঠিক আছে মামনি। তোমরা ভাল থেক। প্রণাম নিও আমার। আর বাড়ির অন্য সবাইকেও আমার প্রণাম জানিও”।

সরলাদেবী বললেন, “তুইও ভাল থাকিস মা”।
 

ফোনে কথা বলা বন্ধ হতেই সতীশ সীমন্তিনীকে বলল, “বাব্বা, দেখেছিস বড়দি? আমরা এখানে আছি জেনেও মা আমাদের কারো সাথে কথাই বললেন না”!

সীমন্তিনী মুচকি হেসে বলল, “তাহলে দেখলি তো? আমার কথাটা কিভাবে ফলে গেল? আমি তোকে বলেছিলুম না? যে রচু আমাদের ঘরের বৌ হয়ে যাবার পর সবাই শুধু তাকে নিয়েই মাতামাতি করবে। তোর আমার আর আমাদের অন্য সব ভাইবোনেদের কদর এবার কমে যাবে”।

রচনাও সীমন্তিনীর রসিকতা বুঝে জবাব দিল, “ভেবনা দিদিভাই। তোমাদের বাড়িতে নতুন যে যাচ্ছে সে তোমাদের সব আদর কদর পুরো করে দেবে। কারুর ভাগে কিচ্ছুটি কম পরবে না দেখে নিও”।

সীমন্তিনী রচনাকে আদর করে জড়িয়ে ধরে বলল, “সে আশা আমাদের মনে আছে বলেই তো তোকে আমাদের ঘরে নিয়ে যাবার জন্য এত কাঠখড় পোড়াচ্ছি রে। তা হ্যারে রচু, তোর শাশুড়িকে মামনি বলে কে ডাকতে বলেছে তোকে”?
 

রচনা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “কেউ বলেনি গো। আমি নিজেই ও নামে ডেকেছি। আর মামনিও সেটা পছন্দ করেছেন”।
 

সতীশ জিজ্ঞেস করল, “কবে থেকে মাকে তুমি মামনি বলে ডাকছ বৌদিভাই”?
 

রচনা রতীশের মুখে ‘বৌদিভাই’ ডাক শুনে একটু যেন কেঁপে উঠল। কিন্তু পর মূহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “যেদিন বাবা মা তোমাদের ওখান থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন, তার পরের দিন থেকে”।

সীমন্তিনী এবার প্রসঙ্গ বদলে বলল, “আচ্ছা রচু, একটা কথা বল তো আমাকে। আমিই যে দাদাভাইয়ের বোন আর আমার ভাই বলে যাকে চিনতিস, সে-ই সতুই যে তোর বড় ঠাকুরপো, এটা তুই কবে বুঝতে পেরেছিস রে”?

রচনা ঠোঁট টিপে হেসে বলল, “আজই সেটা বুঝেছি দিদিভাই। তোমরা যখন বাড়ি এসেছ ঠিক তখনই
 
কথাটা প্রথম আমার মনে এসেছিল”।
 

সতীশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি করে বুঝে ফেললে তুমি”?
 

এমন সময় বিভাদেবী ট্রেতে করে তিন কাপ চা নিয়ে ঘরে এসে ঢুকে বললেন, “নাও মা। তোমরা একটু চা খাও”।

সতীশ উঠে বিভাদেবীর হাত থেকে ট্রেটা নিতে নিতে বলল, “আপনিও বসুন মাসিমা আমাদের সাথে”।

সকলের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে সতীশ রচনাকে বলল, “হ্যা বৌদিভাই, এবার বল তো? কি করে চোর ধরলে তুমি”?
 

রচনা হেসে বলল, “দিদিভাই প্রথম যেদিন আমাদের বাড়ি এসেছিল, সেদিনই আমার মনে প্রথম একটু সন্দেহ হয়েছিল। ডিস্ট্রিক্ট অডিটোরিয়ামে দেখা হবার ঠিক দু’দিন বাদেই তাকে আমাদের বাড়ি আসতে দেখেই সে সন্দেহটা হয়েছিল আমার। সেদিন রাতে যখন দিদিভাই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল যে আমি কোন ছেলের সাথে প্রেম করি কি না, তখন ধারণাটা আরও একটু পোক্ত হয়েছিল। কিন্তু তারপর যেভাবে দিদিভাই আমাদের সাথে সব কিছু নিয়ে কথা বলেছে, তাতে আমার মনে হয়েছিল যে সন্দেহটা বুঝি সত্যিই অমূলক। কিন্তু মা বাবা রাজগঞ্জ থেকে ফিরে যখন বললেন যে তারা ও বাড়িতে সবাইকেই দেখতে পেয়েছেন। শুধু বড়কাকুর বড় মেয়ে আর ছেলের ছোট ভাইকে দেখেন নি। তখন আমার মনে সন্দেহটা আবার দানা বেঁধেছিল। মা বাবার মুখেই শুনেছি যে তোমাদের বাড়ির সকলেই নাকি এ সম্মন্ধ নিয়ে খুব উৎসাহী। ছোট বড় সবার ভেতর এত উৎসাহ, আর ছেলের নিজের ছোটভাই আর সমবয়সী প্রায় বন্ধুর মত ছোটবোন সেখানে থাকবে না, এটা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারিনি আমি। এর আগে মামনি, বাবা আর ছোটকাকুরা যেদিন এখানে এসেছিলেন, তখন বাড়ির সকলের ব্যাপারে সব কিছু খুলে বললেও তোমাদের দু’জনের ব্যাপারে প্রায় কিছুই বলেননি তারা। শুধু আরেক ছেলে আর মেয়ে আছে, এটুকুই শুধু বলেছিলেন। আর বাবা মার সাথে তাদের দেখা না হবার ব্যাপারে বলেছিলেন যে তারা বাইরে লেখাপড়া করছে বলেই তারা সেদিন বাড়ি ছিল না। এসব শুনেই খটকাটা আরও বেশী হয়েছিল। তারপর গত কয়েকদিনের মধ্যে তোমাদের বাড়ির সকলেই আমার সাথে ফোনে কথা বলেছেন। তোমাদের সবচেয়ে ছোট বোন চন্দ্রিকা পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলেছে। কিন্তু শুধু ছেলের ভাই আর বোনই আমার সাথে ফোনে কথা বলেনি। ভাই বোন হিসেবে তোমাদের দাদার বিয়ের খবর পেয়ে খুশী হওয়া সত্বেও তোমরা কেউ আমাকে ফোন করনি দেখে আমার ধারণটা আরো খানিকটা দানা বেঁধেছিল। আর কাল মামনি যখন আমাদের কাছে বললেন যে আজ ছেলের সে ভাই আর বোন আমাদের বাড়ি আসছেন, তখন খবরটা দিদিভাইকে জানিয়ে দেবার পর থেকেই দিদিভাই আর আমার ফোন কল রিসিভ করছিল না। রাতে পাঁচ ছ’বার আর আজ সকালেও একবার কল করেছি আমি। প্রত্যেক বারই ফোনটা বেজে বেজে কল এন্ড হয়ে যাচ্ছিল। প্রথম প্রথম ভাবছিলাম যে হয়ত নেটওয়ার্কের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু রাতে ঘুমোবার সময় ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে কেন জানিনা মনে হল, দিদিভাই আর তুমিই ছেলের সে ভাই বোন। তবু একেবারে নিশ্চিত হতে পারছিলুম না। কয়েক দিন আগে মামনি ফোনে আমার পছন্দ অপছন্দের কথা জানতে চেয়েছিলেন। আর কাল মামনি বললেন যে আমি পরীক্ষায় ভাল করেছি বলে তিনি আমার জন্যে তোমাদের হাতে কিছু উপহার পাঠাবেন। কিন্তু মামনি তখনও তোমাদের দু’জনের নাম আমাদের কাউকে বলেন নি। সকালে তোমরা যখন প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে আমাদের বাড়ি এসে ঢুকলে, তখনই আমি বুঝে গেছিলুম যে তোমরা আসলে কারা। এবার বুঝেছ তো কিভাবে দুই দুইয়ে চার করতে পেরেছিলুম আমি”?

______________________________
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 24-02-2020, 09:15 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)