24-02-2020, 09:10 PM
বিধুবাবু বললেন, “না মা আপত্তি কেন হবে। খণাই বলে গেছেন, মঙ্গলের ঊষা বুধে পা, যথা খুশী তথা যা। বুধবার সকালে রওনা হওয়া খুবই শুভ হবে”।
বিভাদেবী বললেন, “তাহলে তো তাদের ওখানে একটা খবর দেওয়া উচিৎ যে আমরা বুধবার তাদের বাড়ি যাচ্ছি”।
সীমন্তিনী বলল, “তাতে অসুবিধের কি আছে। তারা তো তাদের বাড়ির ফোন নাম্বার দিয়েই গেছেন। রচুর মোবাইলটা এনে এখনই ফোন করে বলে দাও না”।
বিভাদেবী উঠে অন্য ঘরে চলে গেলেন। একটু বাদে হাতে একটা কাগজ আর রচনার মোবাইলটা এনে সীমন্তিনীর হাতে দিয়ে বলল, “নে মা, ফোনটা তুইই কর”।
সীমন্তিনী কাগজটা হাতে নিয়ে দেখল। তার ছোটকাকা চন্দ্রকান্তবাবুর হাতের লেখা সে স্পষ্ট চিনতে পারল। চন্দ্রকান্তবাবু বাড়ির ল্যাণ্ডলাইন ফোন নাম্বারের সাথে সাথে তার পিসিওর নাম্বারটাও লিখে দিয়ে গেছেন। কিন্তু এত সকালে তার পিসিও হয়ত খোলেই নি। তাই বাড়ির ল্যাণ্ডলাইন আর ছোটকাকুর পিসিওর নাম্বার দুটো রচনার নতুন মোবাইলে সেভ করতে করতে বলল, “মেসো আমি লাইনটা ধরিয়ে দিচ্ছি। কথাটা তুমি নিজে মুখে বল। আমি এখন তাদের সাথে কথা বলতে চাইছি না”।
সীমন্তিনী ভাবল ফোনটা যদি সতীশ রিসিভ করে ফেলে, তাহলে একটু গড়বড় হয়ে যেতে পারে। তাই বুদ্ধি করে নিজেই বাড়ির নাম্বারটা ডায়াল করল। ও’পাশে কয়েকবার রিং হবার পরেই ছোটমার গলা শুনতে পেয়ে সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “হ্যালো, এটা কি রতিকান্ত ভট্টাচার্যির বাড়ি”?
ও’পাশ থেকে ছোটমা চন্দ্রাদেবী বললেন, “হ্যা। তা আপনি কে বলছেন”?
সীমন্তিনী বলল, “আপনি আমায় ঠিক চিনবেন না। আমি কালচিনি থেকে বলছি। নিন কথা বলুন” বলে ফোনের স্পীকারটা অন করে ফোনটা বিধুবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বিভাদেবীর কানে কানে ফিসফিস করে
বলল, “ছেলের ছোটকাকিমা ফোন ধরেছেন”।
বিধুবাবু ফোন হাতে নিয়ে চুপ করে আছেন দেখে সীমন্তিনী তাকে ঈশারায় কথা বলতে বলল। বিধুবাবু বললেন, “হ্যা আমি কালচিনি থেকে বিধূভূষণ চক্রবর্তী কথা বলছি। একটু রতিকান্তবাবু বা চন্দ্রকান্তবাবুর সাথে কথা বলতে পারি কি”?
ও’পাশ থেকে চন্দ্রাদেবী খুশীর সুরে বলে উঠলেন, “ওহ, আপনি রচনার বাবা তো? নমস্কার আমি রতীশের ছোটকাকিমা চন্দ্রা বলছি। আপনারা সবাই ভাল আছেন তো দাদা”?
বিধুবাবু বললেন “নমস্কার দিদি। হ্যা আমরা ভালই আছি। ওনারা কেউ কি বাড়ি আছেন এখন”?
চন্দ্রাদেবী বললেন, “ইশ দাদা, ওনারা তিন ভাই এইমাত্র বেরিয়ে গেলেন বাড়ি থেকে। আমি কি বড়দিকে মানে রতীশের মাকে ফোনটা দেব? বা আপনি চাইলে আমার সাথেও কথা বলতে পারেন”।
সীমন্তিনী ঈশারায় বিধুবাবুকে বলল ছেলের মায়ের সাথে কথা বলতে। বিধুবাবু বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে দিদি। ওনারা যখন বেরিয়েই গেছেন, তাহলে একটু রতীশের মাকেই ডেকে দিন না দয়া করে”।
চন্দ্রাদেবী জবাব দিলেন, “হ্যা হ্যা বড়দি আমার পাশেই আছেন। নিন কথা বলুন”।
সরলাদেবীর গলা শোনা গেল, “নমস্কার দাদা। আপনারা সবাই ভাল আছেন তো? রচনা কেমন আছে”?
বিধুবাবু বললেন, “হ্যা দিদি, আমরা সবাই ভগবানের কৃপায় ভালই আছি। তা দিদি বলছিলাম কি। আমরা মনস্থ করেছি আগামী বুধবার আপনাদের ওখানে যাব। আপনাদের কোন অসুবিধে হবে না তো”?
সরলাদেবী খুশী গলায় বলে উঠলেন, “সত্যি বলছেন দাদা? আপনারা বুধবার আসছেন? না না, অসুবিধে হবে কেন। আমরা সাগ্রহে আপনাদের জন্যে অপেক্ষা করব”।
বিধুবাবু বললেন, “তাহলে কথাটা রতিকান্তবাবু আর তাদের ভাইদের জানিয়ে দেবেন দয়া করে দিদি। আমরা সকাল সকালই এখান থেকে রওনা দেব”।
সরলাদেবী বললেন, “হ্যা দাদা। আপনি ফোন করাতে আমি যে কত খুশী হয়েছি, সেটা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না। আমি সবাইকেই এ সুখবরটা জানিয়ে দেব। তা দাদা, এটা কার ফোন থেকে আপনি কথা বলছেন? কোন পিসিও থেকে বলছেন কি”?
বিধুবাবু জবাব দিলেন, “না দিদি। এটা আমার মেয়ের ফোন থেকে করছি। কালই এটা পেয়েছে ও”।
সরলাদেবী বললেন “নতুন কিনেছে বুঝি? তা রচনা কোথায়? ওর সাথে একটু কথা বলা যাবে না দাদা”?
সীমন্তিনী বিভাদেবীর কানে কানে বলল, “তোমরা কথা বলতে থাক। আমি রচনাকে ডেকে আনছি” বলেই ছুটে রচনার ঘরের দিকে চলে গেল।
রচনা ঘরে জামা কাপড় গোছাচ্ছিল। সীমন্তিনী ওর হাত ধরে টানতে টানতে মা বাবার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল, “চল চল, তোর হবু শাশুড়ি মা তোর সাথে কথা বলতে চাইছেন। আয় শিগগীর”।
রচনা চমকে উঠে বলল, “না না দিদিভাই। আমি তাকে কী বলব এখন”?
সীমন্তিনী তাকে নিয়ে এগোতে এগোতে বলল, “তোকে কিছু বলতে হবে না। শুধু প্রণাম জানাবি। আর উনি তোকে যা জিজ্ঞেস করবেন শুধু তার জবাব দিস”।
বিধুবাবুর ঘরে ঢুকে দেখল বিভাদেবী ফোনে বলছেন, “হ্যা দিদি, সে’কথা আর বলতে? কিন্তু আমাদের অবস্থা তো সব দেখেই গেছেন আপনারা। আমার মেয়েটাকে যদি আপনাদের পায়ে একটু জায়গা দেন তাহলে মা হয়ে আমিও খুব সুখী হব। এই নিন দিদি। রচু এসে গেছে। ওর সাথে কথা বলুন” বলেই ফোনটা রচনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “কথা বল। রতীশের মা”।
রচনা হতভম্বের মত ফোনটা হাতে নিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল, “হ্যা হ্যালো। আমি র-রচনা। আমার প্রণাম নেবেন”।
সরলাদেবী খুশীতে উছলে উঠে বলল, “বেঁচে থাক মা। রাজরানী হও তুমি। তোমার গলাটা শুনে মনটা খুশীতে ভরে গেল মা গো। তা তুমি ভাল আছ তো মা”?
রচনা হাঁপাতে হাঁপাতে কোনরকমে জবাব দিল, “হ্যা হ্যা, ভাল আছি। আপনারা সবাই ভাল আছেন তো”?
সরলাদেবী বললেন, “কি করে ভাল থাকি বল তো মা? তোমাকে দেখার পর থেকেই যে তোমাকে নিজের মেয়ে করে নিতে ইচ্ছে করছে আমার। তুমি আমার কোলে না আসা পর্যন্ত কি আর ভাল লাগে আমার”?
রচনা লজ্জা পেয়ে বিভাদেবীর হাতে ফোনটা গুঁজে দিয়েই ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সীমন্তিনী ওর পেছন পেছন যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে গেল। বিভাদেবী তখন ফোনে বলছেন, “দিদি রচু লজ্জা পেয়ে চলে গেছে। আপনি কিছু মনে করবেন না দয়া করে”।
সরলাদেবী বললেন, “না না দিদি, সেটা আমিও বুঝেছি। ওর মিষ্টি গলাটা শুনতে পেয়েছি। তাতেই আমি খুশী। ওকে আমি দুর থেকেই আশীর্বাদ করছি। আমরা কিন্তু খুব আশায় রইলাম দিদি। আশা করি আমাদের আশা হত করবেন না আপনারা। বুধবার আপনাদের দেখা পাবো শুনে খুব ভাল লাগল”।
বিভাদেবী বললেন, “হ্যা দিদি, ভগবান সব কিছু ঠিক ঠাক রাখলে, সেদিন অবশ্যই আপনাদের সাথে দেখা হবে। আচ্ছা এখন রাখছি তাহলে দিদি। নমস্কার”।
সরলাদেবীও ওদিক থেকে নমস্কার জানিয়ে দিতে বিভাদেবী ফোনটা সীমন্তিনীর দিকে এগিয়ে দিতেই সীমন্তিনী চট করে ফোন ডিসকানেক্ট করে দিয়ে বলল, “কথা শেষ হয়ে গেলে সব সময় এই লাল বোতামটা টিপে দিয়ে লাইনটা কেটে দেবে মাসি। নইলে কিন্তু পয়সা কেটে যেতে পারে”।
বিভাদেবী বললেন, “দিনে দিনে কত কিছুই না দেখছি। একটা চিঠি পাঠালে সেটা হয়ত কতদিন পরে গিয়ে তাদের কাছে পৌঁছত। এখন এক মিনিটেই সব কাজ হয়ে গেল”!
সীমন্তিনী বলল, “ব্যাস, তাহলে কথা তো হয়েই গেল। তোমরা বুধবার সকালে এখান থেকে রওনা হচ্ছ। আমিও মঙ্গলবার বিকেলে এখানে এসে পড়ব। এবার তাহলে আমি রওনা হতে পারি তো মাসি”?
বিভাদেবী উঠতে উঠতে বলল, “ওমা যাচ্ছি বললেই হল নাকি? দাঁড়া, দুটো লুচি বানিয়ে দিচ্ছি তোকে। সেটা খেয়ে তবে যাবি”।
সীমন্তিনী রচনার ঘরে এসে দেখে রচনা বিছানায় চুপ করে বসে আছে। সীমন্তিনী প্রথমে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে নিজের মোবাইলটা বের করে সেটাকে সুইচ অফ করে ব্যাগে ভরে রেখে দিল। কারন সে জানে তার বড়মা হয়ত এখনই আবার তাকে ফোন করে সুখবরটা দিতে চাইবে। আর সীমন্তিনী সেটা এ মূহুর্তে চাইছে না। তারপর রচনার পাশে বসে তার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে দুষ্টুমি করে বলল, “কিরে মেয়ে? হবু শাশুড়ির সাথে কথা বলে দেখি একেবারে ঠাণ্ডা মেরে গেলি তুই”?
রচনা বলল, “তুমি না খুব দুষ্টু। ইশ, আমার বুকের ভেতরটা এখনও ধড়ফড় করছে। কি বলতে কি বলে ফেলেছি কে জানে”।
সীমন্তিনী হেসে রচনাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “তেমন কিছু তো বলিস নি। কিন্তু আরেকটু সময় কথা বললে ভদ্রমহিলা খুব খুশী হতেন। আচ্ছা সে না হয় পরে পূরণ হয়ে যাবে। তোর ফোন নাম্বার জেনে গেছেন উনি। দেখিস পরেও নিশ্চয়ই ফোন করবেন। তখন এত লজ্জা না পেয়ে ভালভাবে কথা বলিস”।
রচনা বলল, “আমি যে তাকে কী বলে সম্মোধন করব সেটাই তো বুঝতে পাচ্ছিলুম না দিদিভাই। তাই আরও বেশী ঘাবড়ে গিয়েছিলাম”।
সীমন্তিনী বলল, “এরপর যখন ফোন করবেন তখন কী বলে সম্মোধন করবি, সেটা আগে থেকেই ভেবে রাখ”।
রচনা বলল, “ইশ দিদিভাই, আমার যে খুব লজ্জা লাগছে গো। কী বলে ডাকব আমি তাকে বল তো? বিয়ের পর হলে তো অনায়াসেই মা বলে ডাকতে পারব। কিন্তু বিয়ের আগে তাকে কি বলব গো? মাসিমা না কাকিমা”?
সীমন্তিনী বলল, “তুই যখন বিয়েতে রাজি আছিস, তাহলে তো মোটামুটিভাবে বলাই যায় যে তোর বিয়ে রতীশের সাথেই হবে। শুধু আরেকটু সময়ের প্রয়োজন। মাসি মেসো ওখান থেকে ফিরে আসুন, আর আমি একবার রাজগঞ্জ থেকে ঘুরে এলেই ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে যাবে”।
রচনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি তাদের বাড়ি যাবে দিদিভাই”?
সীমন্তিনী জবাবে বলল, “যেতে তো হবেই রে। আমার এমন মিষ্টি বোনটাকে তাদের হাতে তুলে দেবার আগে আমাকে ভাল করে বাজিয়ে দেখতে হবে না? যদিও আমার মনে হয় নেতিবাচক কিছুই আমার কানে আসবে না। আমি তো আগে থেকেই ও পরিবারের প্রায় সকলকেই চিনি। তবু গত সাত আট বছরে তো তাদের বাড়ি যাওয়া হয়নি আমার। একটু ভাল করে সকলের বর্তমান অবস্থার খবরাখবর তো আমাকে নিতেই হবে। নইলে মেসোকে তোর বিয়ের পাকা কথা বলার কথা বলব কিকরে? মাসি মেসোরা তো সেখানে যাবার আগেই আমি তাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসব। আর তখন যদি দেখি সবকিছু ঠিকঠাক আছে, তাহলে তোকেই সবার আগে জানাব। আর তখন থেকেই তুই তোর শাশুড়িকে মা বলে ডাকতে পারবি। জানিস তো? ছেলের বৌ যদি শাশুড়িকে নিজের মায়ের জায়গায় বসাতে পারে, আর শাশুড়িও যদি ছেলের বৌকে নিজের মেয়ে করে নিতে পারে, তাহলে সে সংসারে সুখ শান্তি চিরদিন বজায় থাকে। আমি চাই তুই সারাটা জীবন যেন অমন সুখে থাকতে পারিস। তবে রতীশের মা-র সাথে আমি অনেকবার কথা বলেছি। উনি সত্যিই খুব ভাল মনের মানুষ”।
রচনা বলল, “আমার মনের ভেতরটা সেদিন থেকেই যে কেমন করছে না দিদিভাই। আমার খুব ভয় করছে গো। বার বার শুধু দিদির কথা মনে পড়ছে। আমার কপালটাও যদি দিদির মতই হয়”!
সীমন্তিনী রচনার মাথার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “একদম দুশ্চিন্তা করবি না তুই। তোর দিদির বিয়ের সময় তোদের সাথে আমার পরিচয় থাকলে এমনটা হয়ত হত না রে। ভবিতব্যকে তো না মেনে উপায় নেই। তোর দিদির এমন ভবিতব্যই বিধাতা লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মুখের কথার ওপর তুই ভরসা রাখতে পারিস। আমি খুব ভাল ভাবে খবর নিয়ে নিজে সন্তুষ্ট না হলে তোর বিয়ে হতেই দেব না আমি। সে পাত্র ওই রতীশই হোক বা অন্য কেউ। আমি তোকে কথা দিচ্ছি বোন”।
সীমন্তিনীর কথা শুনে রচনার চোখে জল এসে গেল। সীমন্তিনীর একটা হাত দু’হাতে ধরে নিজের গালের চেপে ধরে বলল, “তুমি আমার জন্যে যা কিছু করছ, তার জন্য আমাকে বোধ হয় সারা জীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকতে হবে গো দিদিভাই। জানিনা বিয়ের পরেও তোমার সাথে আমার কোন যোগাযোগ থাকবে কি না”।
সীমন্তিনী রচনাকে আদর করে বলল, “পাগলী মেয়ে তুই একটা। আমি না তোর দিদি? দিদি হয়ে তোর ভাল মন্দ দেখবার দায়িত্ব কি আমার নয়, যে এভাবে বলছিস? আর দেখিস, বিয়ের পরেও তুই যেখানেই থাকিস না কেন, আমার সাথে তোর যোগাযোগ থাকবেই। আমি সারা জীবন তোর পাশে থাকব। যেখানে যত দুরেই থাকি না কেন, আমি তোর দিদি হয়েই থাকব রে, দেখে নিস”।
****************
ss_sexy
বিভাদেবী বললেন, “তাহলে তো তাদের ওখানে একটা খবর দেওয়া উচিৎ যে আমরা বুধবার তাদের বাড়ি যাচ্ছি”।
সীমন্তিনী বলল, “তাতে অসুবিধের কি আছে। তারা তো তাদের বাড়ির ফোন নাম্বার দিয়েই গেছেন। রচুর মোবাইলটা এনে এখনই ফোন করে বলে দাও না”।
বিভাদেবী উঠে অন্য ঘরে চলে গেলেন। একটু বাদে হাতে একটা কাগজ আর রচনার মোবাইলটা এনে সীমন্তিনীর হাতে দিয়ে বলল, “নে মা, ফোনটা তুইই কর”।
সীমন্তিনী কাগজটা হাতে নিয়ে দেখল। তার ছোটকাকা চন্দ্রকান্তবাবুর হাতের লেখা সে স্পষ্ট চিনতে পারল। চন্দ্রকান্তবাবু বাড়ির ল্যাণ্ডলাইন ফোন নাম্বারের সাথে সাথে তার পিসিওর নাম্বারটাও লিখে দিয়ে গেছেন। কিন্তু এত সকালে তার পিসিও হয়ত খোলেই নি। তাই বাড়ির ল্যাণ্ডলাইন আর ছোটকাকুর পিসিওর নাম্বার দুটো রচনার নতুন মোবাইলে সেভ করতে করতে বলল, “মেসো আমি লাইনটা ধরিয়ে দিচ্ছি। কথাটা তুমি নিজে মুখে বল। আমি এখন তাদের সাথে কথা বলতে চাইছি না”।
সীমন্তিনী ভাবল ফোনটা যদি সতীশ রিসিভ করে ফেলে, তাহলে একটু গড়বড় হয়ে যেতে পারে। তাই বুদ্ধি করে নিজেই বাড়ির নাম্বারটা ডায়াল করল। ও’পাশে কয়েকবার রিং হবার পরেই ছোটমার গলা শুনতে পেয়ে সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “হ্যালো, এটা কি রতিকান্ত ভট্টাচার্যির বাড়ি”?
ও’পাশ থেকে ছোটমা চন্দ্রাদেবী বললেন, “হ্যা। তা আপনি কে বলছেন”?
সীমন্তিনী বলল, “আপনি আমায় ঠিক চিনবেন না। আমি কালচিনি থেকে বলছি। নিন কথা বলুন” বলে ফোনের স্পীকারটা অন করে ফোনটা বিধুবাবুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বিভাদেবীর কানে কানে ফিসফিস করে
বলল, “ছেলের ছোটকাকিমা ফোন ধরেছেন”।
বিধুবাবু ফোন হাতে নিয়ে চুপ করে আছেন দেখে সীমন্তিনী তাকে ঈশারায় কথা বলতে বলল। বিধুবাবু বললেন, “হ্যা আমি কালচিনি থেকে বিধূভূষণ চক্রবর্তী কথা বলছি। একটু রতিকান্তবাবু বা চন্দ্রকান্তবাবুর সাথে কথা বলতে পারি কি”?
ও’পাশ থেকে চন্দ্রাদেবী খুশীর সুরে বলে উঠলেন, “ওহ, আপনি রচনার বাবা তো? নমস্কার আমি রতীশের ছোটকাকিমা চন্দ্রা বলছি। আপনারা সবাই ভাল আছেন তো দাদা”?
বিধুবাবু বললেন “নমস্কার দিদি। হ্যা আমরা ভালই আছি। ওনারা কেউ কি বাড়ি আছেন এখন”?
চন্দ্রাদেবী বললেন, “ইশ দাদা, ওনারা তিন ভাই এইমাত্র বেরিয়ে গেলেন বাড়ি থেকে। আমি কি বড়দিকে মানে রতীশের মাকে ফোনটা দেব? বা আপনি চাইলে আমার সাথেও কথা বলতে পারেন”।
সীমন্তিনী ঈশারায় বিধুবাবুকে বলল ছেলের মায়ের সাথে কথা বলতে। বিধুবাবু বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে দিদি। ওনারা যখন বেরিয়েই গেছেন, তাহলে একটু রতীশের মাকেই ডেকে দিন না দয়া করে”।
চন্দ্রাদেবী জবাব দিলেন, “হ্যা হ্যা বড়দি আমার পাশেই আছেন। নিন কথা বলুন”।
সরলাদেবীর গলা শোনা গেল, “নমস্কার দাদা। আপনারা সবাই ভাল আছেন তো? রচনা কেমন আছে”?
বিধুবাবু বললেন, “হ্যা দিদি, আমরা সবাই ভগবানের কৃপায় ভালই আছি। তা দিদি বলছিলাম কি। আমরা মনস্থ করেছি আগামী বুধবার আপনাদের ওখানে যাব। আপনাদের কোন অসুবিধে হবে না তো”?
সরলাদেবী খুশী গলায় বলে উঠলেন, “সত্যি বলছেন দাদা? আপনারা বুধবার আসছেন? না না, অসুবিধে হবে কেন। আমরা সাগ্রহে আপনাদের জন্যে অপেক্ষা করব”।
বিধুবাবু বললেন, “তাহলে কথাটা রতিকান্তবাবু আর তাদের ভাইদের জানিয়ে দেবেন দয়া করে দিদি। আমরা সকাল সকালই এখান থেকে রওনা দেব”।
সরলাদেবী বললেন, “হ্যা দাদা। আপনি ফোন করাতে আমি যে কত খুশী হয়েছি, সেটা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না। আমি সবাইকেই এ সুখবরটা জানিয়ে দেব। তা দাদা, এটা কার ফোন থেকে আপনি কথা বলছেন? কোন পিসিও থেকে বলছেন কি”?
বিধুবাবু জবাব দিলেন, “না দিদি। এটা আমার মেয়ের ফোন থেকে করছি। কালই এটা পেয়েছে ও”।
সরলাদেবী বললেন “নতুন কিনেছে বুঝি? তা রচনা কোথায়? ওর সাথে একটু কথা বলা যাবে না দাদা”?
সীমন্তিনী বিভাদেবীর কানে কানে বলল, “তোমরা কথা বলতে থাক। আমি রচনাকে ডেকে আনছি” বলেই ছুটে রচনার ঘরের দিকে চলে গেল।
রচনা ঘরে জামা কাপড় গোছাচ্ছিল। সীমন্তিনী ওর হাত ধরে টানতে টানতে মা বাবার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল, “চল চল, তোর হবু শাশুড়ি মা তোর সাথে কথা বলতে চাইছেন। আয় শিগগীর”।
রচনা চমকে উঠে বলল, “না না দিদিভাই। আমি তাকে কী বলব এখন”?
সীমন্তিনী তাকে নিয়ে এগোতে এগোতে বলল, “তোকে কিছু বলতে হবে না। শুধু প্রণাম জানাবি। আর উনি তোকে যা জিজ্ঞেস করবেন শুধু তার জবাব দিস”।
বিধুবাবুর ঘরে ঢুকে দেখল বিভাদেবী ফোনে বলছেন, “হ্যা দিদি, সে’কথা আর বলতে? কিন্তু আমাদের অবস্থা তো সব দেখেই গেছেন আপনারা। আমার মেয়েটাকে যদি আপনাদের পায়ে একটু জায়গা দেন তাহলে মা হয়ে আমিও খুব সুখী হব। এই নিন দিদি। রচু এসে গেছে। ওর সাথে কথা বলুন” বলেই ফোনটা রচনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “কথা বল। রতীশের মা”।
রচনা হতভম্বের মত ফোনটা হাতে নিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল, “হ্যা হ্যালো। আমি র-রচনা। আমার প্রণাম নেবেন”।
সরলাদেবী খুশীতে উছলে উঠে বলল, “বেঁচে থাক মা। রাজরানী হও তুমি। তোমার গলাটা শুনে মনটা খুশীতে ভরে গেল মা গো। তা তুমি ভাল আছ তো মা”?
রচনা হাঁপাতে হাঁপাতে কোনরকমে জবাব দিল, “হ্যা হ্যা, ভাল আছি। আপনারা সবাই ভাল আছেন তো”?
সরলাদেবী বললেন, “কি করে ভাল থাকি বল তো মা? তোমাকে দেখার পর থেকেই যে তোমাকে নিজের মেয়ে করে নিতে ইচ্ছে করছে আমার। তুমি আমার কোলে না আসা পর্যন্ত কি আর ভাল লাগে আমার”?
রচনা লজ্জা পেয়ে বিভাদেবীর হাতে ফোনটা গুঁজে দিয়েই ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সীমন্তিনী ওর পেছন পেছন যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে গেল। বিভাদেবী তখন ফোনে বলছেন, “দিদি রচু লজ্জা পেয়ে চলে গেছে। আপনি কিছু মনে করবেন না দয়া করে”।
সরলাদেবী বললেন, “না না দিদি, সেটা আমিও বুঝেছি। ওর মিষ্টি গলাটা শুনতে পেয়েছি। তাতেই আমি খুশী। ওকে আমি দুর থেকেই আশীর্বাদ করছি। আমরা কিন্তু খুব আশায় রইলাম দিদি। আশা করি আমাদের আশা হত করবেন না আপনারা। বুধবার আপনাদের দেখা পাবো শুনে খুব ভাল লাগল”।
বিভাদেবী বললেন, “হ্যা দিদি, ভগবান সব কিছু ঠিক ঠাক রাখলে, সেদিন অবশ্যই আপনাদের সাথে দেখা হবে। আচ্ছা এখন রাখছি তাহলে দিদি। নমস্কার”।
সরলাদেবীও ওদিক থেকে নমস্কার জানিয়ে দিতে বিভাদেবী ফোনটা সীমন্তিনীর দিকে এগিয়ে দিতেই সীমন্তিনী চট করে ফোন ডিসকানেক্ট করে দিয়ে বলল, “কথা শেষ হয়ে গেলে সব সময় এই লাল বোতামটা টিপে দিয়ে লাইনটা কেটে দেবে মাসি। নইলে কিন্তু পয়সা কেটে যেতে পারে”।
বিভাদেবী বললেন, “দিনে দিনে কত কিছুই না দেখছি। একটা চিঠি পাঠালে সেটা হয়ত কতদিন পরে গিয়ে তাদের কাছে পৌঁছত। এখন এক মিনিটেই সব কাজ হয়ে গেল”!
সীমন্তিনী বলল, “ব্যাস, তাহলে কথা তো হয়েই গেল। তোমরা বুধবার সকালে এখান থেকে রওনা হচ্ছ। আমিও মঙ্গলবার বিকেলে এখানে এসে পড়ব। এবার তাহলে আমি রওনা হতে পারি তো মাসি”?
বিভাদেবী উঠতে উঠতে বলল, “ওমা যাচ্ছি বললেই হল নাকি? দাঁড়া, দুটো লুচি বানিয়ে দিচ্ছি তোকে। সেটা খেয়ে তবে যাবি”।
সীমন্তিনী রচনার ঘরে এসে দেখে রচনা বিছানায় চুপ করে বসে আছে। সীমন্তিনী প্রথমে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে নিজের মোবাইলটা বের করে সেটাকে সুইচ অফ করে ব্যাগে ভরে রেখে দিল। কারন সে জানে তার বড়মা হয়ত এখনই আবার তাকে ফোন করে সুখবরটা দিতে চাইবে। আর সীমন্তিনী সেটা এ মূহুর্তে চাইছে না। তারপর রচনার পাশে বসে তার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে দুষ্টুমি করে বলল, “কিরে মেয়ে? হবু শাশুড়ির সাথে কথা বলে দেখি একেবারে ঠাণ্ডা মেরে গেলি তুই”?
রচনা বলল, “তুমি না খুব দুষ্টু। ইশ, আমার বুকের ভেতরটা এখনও ধড়ফড় করছে। কি বলতে কি বলে ফেলেছি কে জানে”।
সীমন্তিনী হেসে রচনাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “তেমন কিছু তো বলিস নি। কিন্তু আরেকটু সময় কথা বললে ভদ্রমহিলা খুব খুশী হতেন। আচ্ছা সে না হয় পরে পূরণ হয়ে যাবে। তোর ফোন নাম্বার জেনে গেছেন উনি। দেখিস পরেও নিশ্চয়ই ফোন করবেন। তখন এত লজ্জা না পেয়ে ভালভাবে কথা বলিস”।
রচনা বলল, “আমি যে তাকে কী বলে সম্মোধন করব সেটাই তো বুঝতে পাচ্ছিলুম না দিদিভাই। তাই আরও বেশী ঘাবড়ে গিয়েছিলাম”।
সীমন্তিনী বলল, “এরপর যখন ফোন করবেন তখন কী বলে সম্মোধন করবি, সেটা আগে থেকেই ভেবে রাখ”।
রচনা বলল, “ইশ দিদিভাই, আমার যে খুব লজ্জা লাগছে গো। কী বলে ডাকব আমি তাকে বল তো? বিয়ের পর হলে তো অনায়াসেই মা বলে ডাকতে পারব। কিন্তু বিয়ের আগে তাকে কি বলব গো? মাসিমা না কাকিমা”?
সীমন্তিনী বলল, “তুই যখন বিয়েতে রাজি আছিস, তাহলে তো মোটামুটিভাবে বলাই যায় যে তোর বিয়ে রতীশের সাথেই হবে। শুধু আরেকটু সময়ের প্রয়োজন। মাসি মেসো ওখান থেকে ফিরে আসুন, আর আমি একবার রাজগঞ্জ থেকে ঘুরে এলেই ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে যাবে”।
রচনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি তাদের বাড়ি যাবে দিদিভাই”?
সীমন্তিনী জবাবে বলল, “যেতে তো হবেই রে। আমার এমন মিষ্টি বোনটাকে তাদের হাতে তুলে দেবার আগে আমাকে ভাল করে বাজিয়ে দেখতে হবে না? যদিও আমার মনে হয় নেতিবাচক কিছুই আমার কানে আসবে না। আমি তো আগে থেকেই ও পরিবারের প্রায় সকলকেই চিনি। তবু গত সাত আট বছরে তো তাদের বাড়ি যাওয়া হয়নি আমার। একটু ভাল করে সকলের বর্তমান অবস্থার খবরাখবর তো আমাকে নিতেই হবে। নইলে মেসোকে তোর বিয়ের পাকা কথা বলার কথা বলব কিকরে? মাসি মেসোরা তো সেখানে যাবার আগেই আমি তাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসব। আর তখন যদি দেখি সবকিছু ঠিকঠাক আছে, তাহলে তোকেই সবার আগে জানাব। আর তখন থেকেই তুই তোর শাশুড়িকে মা বলে ডাকতে পারবি। জানিস তো? ছেলের বৌ যদি শাশুড়িকে নিজের মায়ের জায়গায় বসাতে পারে, আর শাশুড়িও যদি ছেলের বৌকে নিজের মেয়ে করে নিতে পারে, তাহলে সে সংসারে সুখ শান্তি চিরদিন বজায় থাকে। আমি চাই তুই সারাটা জীবন যেন অমন সুখে থাকতে পারিস। তবে রতীশের মা-র সাথে আমি অনেকবার কথা বলেছি। উনি সত্যিই খুব ভাল মনের মানুষ”।
রচনা বলল, “আমার মনের ভেতরটা সেদিন থেকেই যে কেমন করছে না দিদিভাই। আমার খুব ভয় করছে গো। বার বার শুধু দিদির কথা মনে পড়ছে। আমার কপালটাও যদি দিদির মতই হয়”!
সীমন্তিনী রচনার মাথার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “একদম দুশ্চিন্তা করবি না তুই। তোর দিদির বিয়ের সময় তোদের সাথে আমার পরিচয় থাকলে এমনটা হয়ত হত না রে। ভবিতব্যকে তো না মেনে উপায় নেই। তোর দিদির এমন ভবিতব্যই বিধাতা লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মুখের কথার ওপর তুই ভরসা রাখতে পারিস। আমি খুব ভাল ভাবে খবর নিয়ে নিজে সন্তুষ্ট না হলে তোর বিয়ে হতেই দেব না আমি। সে পাত্র ওই রতীশই হোক বা অন্য কেউ। আমি তোকে কথা দিচ্ছি বোন”।
সীমন্তিনীর কথা শুনে রচনার চোখে জল এসে গেল। সীমন্তিনীর একটা হাত দু’হাতে ধরে নিজের গালের চেপে ধরে বলল, “তুমি আমার জন্যে যা কিছু করছ, তার জন্য আমাকে বোধ হয় সারা জীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকতে হবে গো দিদিভাই। জানিনা বিয়ের পরেও তোমার সাথে আমার কোন যোগাযোগ থাকবে কি না”।
সীমন্তিনী রচনাকে আদর করে বলল, “পাগলী মেয়ে তুই একটা। আমি না তোর দিদি? দিদি হয়ে তোর ভাল মন্দ দেখবার দায়িত্ব কি আমার নয়, যে এভাবে বলছিস? আর দেখিস, বিয়ের পরেও তুই যেখানেই থাকিস না কেন, আমার সাথে তোর যোগাযোগ থাকবেই। আমি সারা জীবন তোর পাশে থাকব। যেখানে যত দুরেই থাকি না কেন, আমি তোর দিদি হয়েই থাকব রে, দেখে নিস”।
****************
ss_sexy