Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#20
 
(Update No. 46)

বিধুবাবু সীমন্তিনীর কথা শুনে এতটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন যে তার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল। নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে তিনি সীমন্তিনীর একটা হাত নিজের দু’হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে ধরা গলায় বললেন, “তোমার কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছি না মাগো। কে তুমি? কেন এমন অযাচিত ভাবে তুমি আমাদের বাড়ি এসেছ? তুমি কি ছদ্মবেশী মা অন্নপূর্ণা হয়ে আমাদের মনের আকাঙ্ক্ষা পূরন করতেই এসেছ মা? এতো পূণ্যও আমি কখনও করেছি যে আমার ঘরে মা অন্নপূর্ণা স্বয়ং এসে ......” নিজের কথা শেষ করবার আগেই বিধুবাবুর ধরা গলা পুরোপুরি রূদ্ধ হয়ে গেল।
 

সীমন্তিনী খাট থেকে নামবার চেষ্টা করতেই রচনাও তাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে ‘দিদিভাই’ বলে তার কোলে মুখ চেপে ধরে কেঁদে ফেলল। আর বিভাদেবীও সীমন্তিনীর মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলেন। সীমন্তিনী যেন মহা ফাঁপরে পড়ল। সে কাকে ছেড়ে কাকে সামলাবে! মা, বাপ বেটি তিনজনে মিলেই তো একসঙ্গে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে!
 

অনেকক্ষণের চেষ্টায় তাদের সবাইকে শান্ত করে রচনাকে নিজের বুকে চেপে ধরে তার কপালে চুমু খেয়ে তাকে শান্ত করতে করতে বলল, “রচু, সোনা বোন আমার। আমাকে ছাড় একটু বোন। মাকে আর বাবাকে সামলা এখন” বলে নিজে খাট থেকে নেমে বিধুবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে তার চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে বলল, “মেসো, তোমরা এভাবে কান্নাকাটি করলে আমি কিন্তু এখনই চলে যাব, বলছি। মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে, একটা ভাল ছেলের সম্মন্ধ এসেছে। এমন খুশীর কথা শুনে কেউ এভাবে কাঁদে বল তো”?

রচনাও ততক্ষনে নিজের মাকে সান্ত্বনা দিতে শুরু করেছে। কয়েক মিনিট বাদে বিধুবাবু নিজেকে সামলে নিয়ে সীমন্তিনীর হাত দুটো ধরে বললেন, “মাগো। মন্তি মা আমার। আমার একটা কথা রাখবে মা”?
 

সীমন্তিনী বলল, “এমন করে বলছ কেন মেসো। বলোনা কি করতে হবে আমাকে”।

বিধুবাবু বললেন, “আজ রাতটা তুমি থেকে যাও মা। আজ যেও না লক্ষী মা আমার”।
 

সীমন্তিনী মিষ্টি করে হেসে বলল, “ঠিক আছে মেসো। তুমি যা বলছ তাই করব। এবার শান্ত হয়ে বস তো প্লীজ”।

বিভাদেবী নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “হ্যারে মা। তুই যা বললি তা না হয় মানলুম। তা আমরা ফোন করে তাদের কি বলব, সেসব একটু ভাল করে বুঝিয়ে দে তোর মেসোকে”।
 

সীমন্তিনী বলল, “মাসি। ছেলেদের বাড়ির লোকেরা এসে মেয়েকে দেখে গেছেন। মেয়েকে তারা পছন্দ করেছেন। এবার তো তোমরা যাবে ছেলেকে দেখতে। ছেলেকে না দেখেই কি আমরা বিয়েতে রাজি হব নাকি? তুমি আর মেসো তো যাবেই, সঙ্গে তোমাদের আরো দু’ একজন নিকটাত্মীয়কেও নিতে পার। তোমরা তাদের আগে থেকে জানিয়ে দেবে কবে তোমরা সেখানে যাচ্ছ। তারপর সেখানে গিয়ে ছেলেটাকে দেখবে, তার সাথে কথা বলবে, তার বাড়ি ঘর দেখবে। বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলে তাদের আচার ব্যবহার আন্তরিকতা এসব বুঝবার চেষ্টা করবে। আর হাতে কিছু সময় থাকলে বাইরের দু’ চারজন লোকের কাছেও তাদের বাড়ির ব্যাপারে বা ছেলের ব্যাপারে খবরাখবর নেবে। দেখবে আমি তোমাদের যা যা বললাম সে’সব সত্যি কি না। তারপর সব কিছু দেখে শুনে তোমরা খুশী হলে তাদের সেভাবে বোল। তবে ভবিষ্যতে যাতে কোন রকম ভুল বোঝাবুঝি না হয়, সেজন্যে প্রথমেই তাদের সকলকে পরিস্কার করে বলে দেবে যে তোমরা যৌতুক একেবারেই দিতে পারবে না। তবে তোমাদের সাধ্যমত কিছু দান সামগ্রী মেয়েকে তোমরা অবশ্যই দেবে। আর বিয়েটা কিন্তু বছর খানেক পরেই হবে। রচনার বারো ক্লাসের পরীক্ষা শেষ হবার আগে বিয়ে কিছুতেই হবে না। তোমাদের কথা শুনে তারা রাজি না হলে তোমরা তোমাদের অপারগতার কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে আসবে। আর যদি আমাদের শর্তে রাজি হয়ে যায়, তাহলে বলবে যে এদের বিয়ের ব্যাপারে তোমরাও রাজি আছ। তবে এখনই কোন আশীর্বাদ টাশীর্বাদ করবে না তোমরা। তারা যদি বলেনও যে আপনারা আজই ছেলেকে আশীর্বাদ করে যান, তাহলে তোমরা বলবে যে এখন আশীর্বাদ করবে না। এক বছর আগেই আশীর্বাদ সেরে ফেলবার তো কোন দরকার নেই। এক বছরের মধ্যে কত কীই তো হতে পারে। এখন থেকেই কোন বাধ্য বাধকতার ভেতরে যাবার তো দরকার নেই। তবে তারা যদি চান, তাহলে মাসে দু’মাসে তারা কেউ তোমাদের এখানে এসে রচুর সাথে, তোমাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে যোগাযোগটা অক্ষুন্ন রাখতে পারে। আর তাদের ছেলে আর আমাদের রচুও মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে সময় পাবে। ব্যস। আর কিছু করবার দরকার নেই এখন”।

বিধুবাবু বললেন, “তুমি কি সুন্দর করে আমাদের সবটা বুঝিতে দিলে মা। কিন্তু মা, আমাদের নিকটাত্মীয় বলতে এখানে তেমন কেউ তো নেই। আজ তো মনে হচ্ছে তুমিই আমাদের সবচেয়ে বড় আত্মীয়। তুমিই চল না মা আমাদের সাথে”।

সীমন্তিনী মিষ্টি করে হেসে বলল, “মেসো, আমাকে নিয়ে একদম ভেব না। আর তাছাড়া আমি তো বললামই যে ও বাড়ির সকলেই আমাকে চেনেন। আর আমিও ও বাড়ির প্রায় সকলের ব্যাপারেই সবকিছু জানি। আমি তো সে বাড়িতে যাবই। হয়ত খুব শিগগীরই যাব। কিন্তু তোমাদের সাথে যাব না। আমি আলাদাভাবে গিয়ে তাদের পরিবারের সকলের মতামত জানব। তাদের পরিবারের ভেতরের কিছু কথা জানতে চেষ্টা করব। যেটা তারা তোমাদের সামনে হয়ত স্পষ্ট করে বলতে চাইবেন না। তাই আমার মনে হয় আমার এখনই সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আর তাছাড়া আরো একটা ব্যাপার আছে। তুমি আর মাসি যখন যাবে তখন এ বাড়িতে তো রচু আর ভাই ছাড়া আর কেউ থাকবে না। তোমাদের হয়ত রাতে সেখানে থাকতেও হতে পারে। রচু আর ভাইকে রাতে একা এ বাড়িতে রাখা কি ঠিক হবে? তাই আমি ভাবছি, যেদিন তোমরা রাজগঞ্জ যাবে সেদিন আমি এসে এখানে থাকব। সেটা ভাল হবে না? আর তুমি দেখো, তোমরা যাবার আগেই আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করব। তাই তোমাদের সেখানে কোন কষ্ট হবে না। আমি সব খবর রাখবার চেষ্টা করব। আর যদি তেমন কিছু হয় যে তোমরা জবাব দিতে পারছ না, তবে তাদের কাছ থেকে একটু সময় চেয়ে নিয়ে সেখান থেকেই রচুর ফোনে একটা ফোন কোর, আমি তোমাদের বুঝিয়ে দেব সব কিছু”।

বিধুবাবু অবাক হয়ে বললেন, “রচুর ফোনে ফোন করব মানে? ওর কি ফোন আছে নাকি”?
 

সীমন্তিনী হেসে বলল, “সে’ কথাটা তো বলতেই ভুলে গেছি আমি মেসো। এই রচু ওদিকে আমার ব্যাগটা আছে। দে তো একটু আমার হাতে”।
 

রচু ব্যাগটা সীমন্তিনীর হাতে দিতেই ব্যাগের ভেতর থেকে মোবাইল সেটের প্যাকেটটা বের করে রচনার হাতে দিয়ে বলল, “এই নে তোর মোবাইল। আজ থেকে আর ফোন করবার জন্যে তোকে অন্য কোথাও যেতে হবে না। যে কোন সময় যে কোন জায়গা থেকেই প্রয়োজন হলে সকলের সাথে কথা বলতে পারবি। তোকে সব কিছু শিখিয়ে দেব আজ রাতেই। এটা প্রিপেইড ফোন। মাঝে মাঝে স্টার ওয়ান টু থ্রি হ্যাস লিখে ডায়াল করলেই কত টাকা ব্যালেন্স আছে সেটা দেখাবে। যখন ব্যালেন্স শেষ হয়ে আসবে তখন আমাকে জানিয়ে দিবি। আমি ওখান থেকেই রিচার্জ করে দেব। নে”।
 

রচনা চুড়ান্ত অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বলল, “কী বলছ তুমি দিদিভাই? আমার জন্যে তুমি নতুন একটা মোবাইল কিনে এনেছ”?
 

সীমন্তিনী হেসে বলল, “কিনে এনেছি না চুরি করে এনেছি, তাতে তোর কি রে মেয়ে? তবে এটা পুরোনো নয়। একেবারে নতুন। আর এটা ঠিক তোর জন্যে নয়। এটা কার জন্যে কিনেছি সেটা তোকে এখন বলব না। তবে এখন থেকে তুই যতদিন এ বাড়িতে থাকবি ততদিন তুই এটা ব্যবহার করবি। তারপর তুই রাখতে না চাইলে এটা আমাকে ফিরিয়ে দিস। ততদিন তুই আর মাসি মেসো কারো সাথে কথা বলতে চাইলে এটা থেকেই করবি। আমারও তো তোর সাথে মাসি মেসোর সাথে অনেক কথা বলার দরকার হবে। সব সময় কি পড়াশোনা ফেলে ছুটে আসতে পারব আমি তোর কাছে? নে রাখ এটা তোর কাছে”।
 

রচনা হতভম্ব হয়ে সীমন্তিনীর হাত থেকে মোবাইলটা নেবার পর সীমন্তিনী বলল, “তোর ফোনের নম্বর ৯৮........। মেসো তোমরা এ নম্বরটাই দিয়ে আসবে ছেলের বাড়িতে। তারা প্রয়োজন হলে তোমাদের সাথে ফোনে কথা বলতে পারবেন। তবে বিয়েতে রাজি হলেই শুধু দিও। বিয়েতে রাজি না হলে দেবার দরকার নেই”।
 

বিভাদেবী ধরা গলায় বলে উঠলেন, “তুই আমাদের জন্যে এত কিছু করছিস। এর প্রতিদানে তোকে আমরা কী দেব রে মা”?
 

সীমন্তিনী বিভাদেবীর কোলে মাথা পেতে শুয়ে বলল, “আপাততঃ শুধু আমাকে তোমার একটা মেয়ে ভেবে একটু আদর করে দাও। তাতেই হবে গো মাসি। কত বছর হয়ে গেছে আমি নিজের মায়ের কোলে মাথা
 
পেতে শুতে পারিনি। একটু আদর করবে না আমাকে”?
 

বিধুবাবু তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “এ মেয়েটা আমাদের সবাইকে সারা জীবনের জন্য বেঁধে রাখতে চাইছে গো গিন্নী। তোমার এই অপদার্থ গরীব স্বামী তোমাকে একটা দিনের জন্যেও সুখী করতে পারেনি। আজ তোমার কপাল খুলেছে। সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা মা তোমার কোলে মাথা পেতে শুয়েছে। দাও দাও, মেয়েটার মাথায় একটু আদর করে হাত বুলিয়ে দাও গো”।
 

বিভাদেবী ঝুঁকে সীমন্তিনীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে তার মাথায় আদর করে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ গো। এ যে সত্যি আমাদের মা অন্নপূর্ণা গো। না চাইতেই আমাদের সব ইচ্ছে পূর্ণ করে চলছে ও”।

সীমন্তিনী বিভাদেবীর কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে রইল। রচনাও কিছুটা এগিয়ে এসে সীমন্তিনীর একটা হাতের ওপর নিজের গাল চেপে ধরল। বিধুবাবু উঠে বললেন, “আমি উঠছি গো। বেরোতে হবে আমাকে। নইলে ওদের বাড়ি পৌঁছতে দেরী হয়ে যাবে। মন্তি মা, তুমি একটু বিশ্রাম নিয়ে নাও। ফিরে এসে আবার তোমার সাথে কথা বলব”।

বিভাদেবী খানিকক্ষণ বাদে সীমন্তিনীকে ছেড়ে দিয়ে রচনাকে বলল, “এই রচু, দিদিভাইকে একটা প্রণাম করলি না যে তুই? দিনে দিনে মা বাবা যা কিছু শিখিয়েছে সব ভুলতে বসেছিস নাকি”?

সীমন্তিনী প্রায় আঁতকে উঠে বলল, “না না মাসি। এ কী বলছ তুমি? আমি ওর প্রণাম নিয়ে নিজের পাপ বাড়াতে চাইনে গো। ও তো আমার ছোটবোন গো। না না রচু, থাম ভাই”।
 

রচনা ততক্ষন খাট থেকে নেমে গিয়ে মেঝেয় দাঁড়িয়ে সীমন্তিনীর হাত ধরে টানতে টানতে বলল, “তোমাকে আজ একটা প্রণাম না করলে যে আমার পাপ হবে দিদিভাই। কারুর কাছ থেকে উপহার পেলে তাকে তো প্রণাম না করলে পাপ হয়। এস, নেমে এস প্লীজ”।
 

সীমন্তিনী বলল, “না না তোরা ',। আমি তোর প্রণাম নিতে পারিনা। আচ্ছা শোন বোন। তুই মুখে বলেছিস এতেই হয়েছে। আমি তোর প্রণাম স্বীকার করে নিলুম। আর কিছু করতে হবে না। বোস এখানে”।
 

রচনা তবু জোর করেই সীমন্তিনীকে নামাবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “দেখ দিদিভাই, প্রণামটা হচ্ছে একটা শ্রদ্ধার জিনিস। আমরা ও’সব ', অ', মানি না। বয়সে বড় হলে, আর কাউকে প্রণাম করে শ্রদ্ধা জানাতে ইচ্ছে করলে সেটা করতে কোন দোষ নেই”।

সীমন্তিনী রচনাকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলল, “বেশ ঠিক আছে। তুই একটু আমাকে আদর করে দে তাতেই হবে। তোকে আমি কিছুতেই আমার পায়ে হাত দেব না। তুই যে আমার বুকের মধ্যে বাসা বেঁধে
 
বসে গেছিস রে পাগলী। আয়”।
 
***************

রাতে শোবার আগে রচনাকে সীমন্তিনী মোবাইলের ফিচার গুলো বুঝিয়ে দিয়ে বলল, “অপ্রয়োজনে, শুধু নেহাত কথা বলার জন্য কাউকে নিজে থেকে ফোন করবি না। আর কারো সাথে কথা বলার সময় কথাটা যত তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলা যায় সে চেষ্টা করবি। নইলে একদিকে যেমন পয়সা বেশী খরচ হয়ে যাবে তা-ই শুধু নয়। অন্য কেউ তোর সাথে জরুরী কোন কথা বলতে চাইলেও সেটা করতে পারবে না। তোর ফোন এনগেজড পাবে। আর টকটাইম ব্যালেন্স কত রইল সেটা এভাবে নাম্বারটা লিখে ডায়াল করলেই সেটা দেখতে পাবি। ব্যালেন্স পাঁচ দশ টাকায় নেমে এলেই আমাকে জানিয়ে দিবি। আমি আবার রিচার্জ করে দেব। তাই এখন তোর আর মাসি মেসোর কারো সাথে কথা বলতে অসুবিধে হবে না। তবে মনে রাখিস আজেবাজে কথা বলে সময় আর পয়সা কোনটাই নষ্ট করবি না”।

রচনা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “তুমি আমাদের জন্যে এতসব করে আমায় লজ্জায় ফেলে দিচ্ছ দিদিভাই”।

সীমন্তিনী হেসে বলল, “তোকে লজ্জা দেবার জন্যে আমি কিছু করছিনা রে পাগলী। আসলে আমিও যে তোর সাথে কথা না বলে থাকতে পারবনা রে। তাই তো তোকে মোবাইলটা দিলাম। এখন আমি যেমন রোজ তোর সাথে কথা বলতে পারব, তুই আর মাসি মেসোরাও ইচ্ছে হলেই আমার সাথে বা অন্যদের সাথে কথা বলতে পারবি। বন্ধুদের মোবাইল থেকে কি সব সময় কথা বলা ভাল দেখাবে? ওদেরও তো অসুবিধে হতে পারে। আর শোন, তোর যতদিন বিয়ে না হয় ততদিন ফোন সব সময় তোর কাছে রাখবি। তোর যখন বিয়ে হয়ে যাবে, তখন এটা এ বাড়িতেই রেখে যাবি। তাতে তুইও এ নাম্বারে ফোন করে মা বাবা ভাইদের সাথে কথা বলতে পারবি। আর যেখানেই বিয়ে হোক না কেন, তোর বর তোকে একটা মোবাইল কিনে দেবেই। তা হ্যারে, একটা কথা বলবি? সত্যি সত্যি জবাব দিবি কিন্তু। রাজগঞ্জের রতীশ বা তার পরিবারের কথা যা শুনলি আমার মুখে, তাতে তুই এ বিয়েতে রাজি আছিস তো”?
 

রচনা আরো লজ্জা পেয়ে বলল, “আমার লজ্জা করছে দিদিভাই”।

সীমন্তিনী রচনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “দুর বোকা মেয়ে, এখানে কি আর কেউ আছে নাকি? আর আমি না তোর বান্ধবী হয়ে গেছি। বান্ধবীর কাছে আর দিদির কাছে সব সিক্রেট খুলে বলা যায়, জানিস না? বল না বোন। নইলে আমিও তো নিশ্চিন্তে ব্যাপারটা নিয়ে এগোতে পারব না”।
 

রচনা সীমন্তিনীর কোলে নিজের মুখ লুকিয়ে প্রায় অস্ফুট গলায় বলল, “আমার অমত নেই”।

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি বলছিস? রতীশকে না দেখেই তুই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলি”?
 

রচনা একই ভাবে সীমন্তিনীর কোলে মুখ চেপে ধরে বলল, “তুমি তো তাকে ভাল ভাবেই দেখেছ। আর
 
তুমি তাকে ভাল ছেলে বলছ। আর আমার দেখার কি দরকার”?
 

সীমন্তিনী রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, “আমার মুখের কথা শুনেই তুই রাজি হয়ে গেলি”?

রচনা বলল, “তোমার মুখের কথার চেয়ে বড় আর কিছু নেই আমার কাছে দিদিভাই। এখন তুমি আর বাবা মা যা চাইবেন, তা-ই হবে”।
 

সীমন্তিনী রচনাকে আরো জোরে বুকে চেপে ধরে বলল, “আমার ওপর যে ভরসা করছিস, সেটা আমিও নষ্ট হতে দেব না রে বোন। এখন থেকে সব সময় আমি তোর পাশে আছি। এ’কথা মনে রাখিস। যখনই তোর কোন সমস্যা হবে, তুই সব কিছু খুলে আমাকে বলিস। আমি তোর সব সমস্যার সমাধান করে দেব, দেখিস”।

পরদিন সকালে চা খেতে খেতে সীমন্তিনী আবার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বিধুবাবুকে জিজ্ঞেস করল, “মেসো, রাজগঞ্জের ব্যাপারটা নিয়ে কিছু ভাবলে”?

বিধুবাবু কিছু বলার আগে বিভাদেবীই বলে উঠলেন, “পাত্রের বাড়ির লোকেরা যেদিন আমাদের এখানে এসেছিলেন সেদিনই তো তাদের কথা বার্তা আর ব্যবহার দেখে আমাদের ভাল লেগেছিল মা। কিন্তু তোর সাথে আগে কথা না বলে আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। এখন তোর মুখে থেকে ছেলেটার ব্যাপারে আর তাদের বাড়ি ঘরের লোকজন আর সংসারের অবস্থার কথা শুনে তো বেশ ভালই লাগছে”।

বিধুবাবুও বললেন, “হ্যা মন্তিমা। কাল রাতেও আমি আর তোমার মাসি এ ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমার মনে হয়, তুমি যেমনটা বলেছিলে, তাদের একটা খবর পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া উচিৎ যে আমরা তাদের ওখানে যাচ্ছি”।
 

সীমন্তিনী খুশী হয়ে বলল, “তাহলে তো খুব ভাল কথা। কিন্তু মেসো, আমার কয়েকটা কথা কিন্তু তোমাদের রাখতে হবে”।

বিধুবাবু বললেন, “হ্যা হ্যা মা। বল না। তুমিও তো আমাদের একটা মেয়ে। আর রচুকে তো তুমিও যথেষ্ট ভালবাস। বলনা কি বলবে”?

সীমন্তিনী বলল, “রচনা হায়ার সেকেণ্ডারী পাশ না করা অব্দি কিন্তু বিয়ে হবে না, আর ছেলেপক্ষকে যৌতুকের ব্যাপারে কী বলবে, সে’কথা তো কালই বলেছি। সেভাবেই কথা বোল তোমরা। এখন আরেকটা কথা বলছি। তোমাদের সাথে যে আমার পরিচয় আছে সেটা আপাততঃ তাদের জানতে দিও না। আমি তো প্রায় আট ন’বছর বাড়ি ছাড়া। এ সময়ের মধ্যে ওদের সংসারে বা ওদের সামাজিক মর্যাদায় কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা, সে খবরটা আমাকে নিতে হবে। তোমরা যদি আগে থেকেই তাদের জানিয়ে দাও যে আমি তোমাদের পরিচিত অথবা ঘনিষ্ঠ তাহলে সে কাজটা করা আমার পক্ষে একটু কষ্টকর হয়ে উঠবে। তাই রাজগঞ্জ গিয়ে তোমরা আমার নাম একেবারেই মুখে আনবে না কিন্তু। তারা কেউ যেন কোনভাবে আমার কথা জানতে না পারে সেদিকে তোমরা খুব সচেতন থাকবে। ব্যাপারটা যদি শেষ পর্যন্ত স্থির হয়েই যায়, তাহলে আমি নিজেই সবাইকে যথাসময়ে সব কিছু খুলে বলে দেব”।

বিধুবাবু বললেন, “ঠিক আছে মা। তোমার কথা আমরা মনে রাখব। তুমি আমাদের জন্যে যা করছ, তাতে তোমার কথা না রেখে কি পারি আমরা”?
 

সীমন্তিনী বলল, “কেউ কারো জন্যে কিছুই করতে পারে না মেসো। যার কপালে যা আছে তা-ই হয়ে থাকে। তাহলে তোমরা কবে যাবে বল তো? সেদিন তো আবার আমাকে আসতে হবে এখানে”।

বিভাদেবী জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা মা, এখান থেকে রাজগঞ্জ গিয়ে পৌঁছতে কতক্ষন সময় লাগবে রে? আমরা কি সেদিনই ফিরে আসতে পারব না”?
 

সীমন্তিনী জবাব দিল, “এখান থেকে ট্রেন বা বাস ধরে আলিপুরদুয়ার চলে গেলে সেখান থেকে ট্রেনে দু’ ঘন্টাতেই পৌঁছে যাবে জলপাইগুড়ি রোডে। ষ্টেশন থেকে অটো বা রিক্সা ধরে জলপাইগুড়ি বাস স্ট্যান্ডে চলে গেলে সেখান থেকে পনের কুড়ি মিনিট বাদে বাদেই রাজগঞ্জের এক একেকটা বাস ছাড়ে। তাই তোমরা যদি সকাল সাতটায় এখান থেকে রওনা হয়ে যাও তাহলে দুপুর বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ রাজগঞ্জ পৌঁছে যাবে। তোমরা অবশ্য আলিপুরদুয়ার থেকে ট্রেনে শিলিগুড়িও যেতে পার। কিন্তু শিলিগুড়ি থেকে তোমাদের উল্টোদিকের বাস ধরে রাজগঞ্জ পৌঁছাতে হবে। তাতে সময় একটু বেশী লাগবে। তাই জলপাইগুড়ি হয়ে গেলেই ভাল। আর রাজগঞ্জে নেমে যে কোন রিক্সায় চেপে তাদের তিন ভাইয়ের যে কোন একজনের নাম করলেই দশ মিনিটের মধ্যে তাদের বাড়ি পৌঁছে যাবে তোমরা। কিন্তু তোমরা যদি সেদিনই ফিরে আসতে চাও, তাহলে বেশী সময় সেখানে থাকতে পারবে না। একটা দেড়টার মধ্যেই তোমাদের ফিরতি বাস ধরতে হবে। তাহলে হয়ত সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় এখানে এসে পৌছবে। কিন্তু আমি চাই, তোমরা একটা রাত সেখানে থেকেই এস। দেখ মাসি, বারবার তো আর যাওয়া আসা সম্ভব হবে না। তাই বিকেলের দিকে একটু তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজার টাজার দেখে নিও। আর দু’চার জনের কাছ থেকে তাদের ব্যাপারে ভাল মন্দ খবরও নিতে পারবে। সেখানকার সব লোকই তাদের সবাইকে চেনে। তাই অনায়াসেই তোমরা খবর নিতে পারবে। আর বাড়ির জন্যে তো ভাবতে হবে না তোমাকে। আমি তো তোমরা যাবার আগের দিন বিকেলেই চলে আসব। আর তোমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত রচু আর ভাইকে দেখে শুনে রাখব। আর রাতটা তাদের বাড়িতে কাটালে পরিবারের ভেতরের ব্যাপার স্যাপারগুলোও তুমি অনেক কিছু আন্দাজ করতে পারবে। পরিবারের ছোট বড় সকলের সাথেই একটু একটু আলাপ করতে পারবে। আর তারাও নিশ্চয়ই তোমাদের অবহেলা করবেন না”।

বিভাদেবী শুনে বললেন, “নিজের পড়াশোনার ক্ষতি করে তুই আবার আসবি মা”?

সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “এ কী বলছ তুমি মাসি? আমার বোনের বিয়ের ব্যাপারে দুটো দিন পড়াশোনা না করলে এমন কী ক্ষতি হবে আমার? শোনো, সামনের সপ্তাহে আমাদের কলেজের বার্ষিক খেলাধুলো হবে। তাই কোন ক্লাস হবে না। আমি মঙ্গলবার সন্ধ্যেয় এখানে এসে পড়ব। তোমরা বুধবার রাজগঞ্জ যেও। তারপর তোমরা বৃহস্পতি বার চলে এলে আমি শুক্রবার ফিরে যাব। তোমাদের বুধবার যেতে কি আপত্তি আছে”?
 
[+] 3 users Like riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 24-02-2020, 09:09 PM



Users browsing this thread: 15 Guest(s)