24-02-2020, 09:04 PM
(Update No. 44)
পরদিন সকালেই চা খেতে খেতে সীমন্তিনী সতীশের নাম্বারে ফোন করতেই সতীশ ফোন ধরে বলল, “হ্যা বড়দি, বল”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা সতু, তোর মাথায় আর বুদ্ধি শুদ্ধি কবে হবে রে”?
সতীশ অবাক হয়ে বলল, “বারে, আমি আবার এমন কি করেছি”?
সীমন্তিনী রাগত স্বরে বলল, “যা করেছিস সেটা নিয়ে কিছু বলছি না। যা করিস নি সেটার কথাই বলছি রে হাঁদারাম”।
সতীশ বলল, “তুই যা যা বলেছিস, সে সব কথাই তো আমি সকলকে বলেছি। আর কি করা বাকি রেখেছি আমি”?
সীমন্তিনী বলল, “তোকে নিয়ে আর পারছিনা রে বাবা। মেয়ের বাড়িতে দাদাভাইয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাড়ির গুরুজনেরা গিয়েছিলেন এটা তো ঠিকই আছে। কিন্তু তুই একবার ভেবে দেখ তো কোনও মা বাবা কি ছেলেকে না দেখেই মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হবে? রচুর বাড়ির লোকেরাই বা সেটা কি করে করবে? দাদাভাইকে পাঠাবার কথা তো ছিল না। সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু বড়মা বা কাকু জেঠুদের হাতে দাদাভাইয়ের একটা ছবি পাঠিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিল না তোর? পাত্রকে না দেখে পাত্রের কোন ছবিও না দেখে কোন মেয়ের বাবা তার বিয়ে দিতে রাজি হবেন? বল তো”?
সতীশ বলল, “হ্যারে বড়দি সেটা তো ঠিকই বলেছিস। কিন্তু শোন বড়দি, কথাটা একবার আমার মনে এসেছিল ঠিকই। কিন্তু তুই এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলিসনি বলেই আর সে ব্যাপারে কোন কথা আমি
ওঠাঁইনি”।
সীমন্তিনী বলল, “আর রচুর সাথে আমার কি কি কথা হয়েছিল সে সবও তো পুরোপুরি বলিসনি বাড়ি গিয়ে। রচুর বিয়ের কোন সম্মন্ধ এলেই তারা চট করেই রাজি হবে না। আগে আমার সাথে কথা বলবেন তারপর তারা পাত্রপক্ষকে তাদের মতামত জানাবেন। এ’ কথাগুলো তুই জেঠুদের বলিস নি। রচুদের বাড়ি থেকে যে এমন জবাবই দেবে সেটা কি তোকে আমি বলিনি? জেঠুরা অমন জবাব পেয়েই মুখ ভার করে চলে এসেছেন। আরে এমনটাই তো হবার কথা ছিল”।
সতীশ আমতা আমতা করে বলল, “সত্যি রে বড়দি। তোর সাথে বৌদি আর বৌদির বাবার যে এ’সব কথা হয়েছিল, সে কথাগুলো বলতে ভুলে গিয়েছিলাম রে। আমাকে মাফ করে দিস সেজন্যে। কিন্তু বড়দি, এ জন্যেই কি বিয়েটা হচ্ছে না”?
সীমন্তিনী এবার একটু নরম সুরে বলল, “বিয়েটা হচ্ছে না, এ’কথা তোকে কে বলল? আচ্ছা শোন, ফোনটা বড়মাকে দে তো। আর তুইও বড়মার সাথে দাঁড়িয়ে স্পীকার অন করে আমার কথাগুলো শুনিস”।
একটু বাদে সরলাদেবী ফোন ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা বড়মা, তোমরা কি গো। ছেলের জন্যে মেয়ে দেখতে যাচ্ছ, মেয়ের মা বাবার মতামত জানতে চেয়েছ, আর নিজের ছেলের একটা ছবিও তোমরা সাথে নিয়ে যাওনি? আচ্ছা বড়মা, আজ কোন ছেলের মা বাবা যদি আমার সাথে তাদের ছেলের বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে আসে, তাহলে ছেলেকে না দেখে, ছেলের কোন ছবি না দেখেই তোমরা কি বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে”?
সরলাদেবী বললেন, “ওমা তাই আবার হয় নাকি? ছেলে দেখতে কেমন এটাই তো লোকে সবকিছুর আগে বিচার করে। ছেলেকে না দেখেই কি মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় নাকি”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “তাহলে তুমি নিজেই বল বড়মা। রচু বা রচুর বাবা তোমাদের যে জবাব দিয়েছেন, এ ছাড়া আর কি বলতে পারতেন তারা তোমাদের”?
সরলাদেবী বললেন, “হ্যারে, কথাটা তো ঠিকই বলেছিস। রতুর দু’একটা ছবি আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। সত্যিরে, কথাটা তো আমাদের কারুর মাথায়ই আসেনি। কিন্তু তুই এ’কথা কিকরে জানলি রে মা? আমি তো তোকে বলিনি”।
সীমন্তিনী মজা করে বলল, “আর কে বলবে? তোমার বড়ছেলের হবু বৌ নিজেই আমাকে এ’কথা বলেছে গো”।
সরলাদেবী প্রায় চিৎকার করে উঠে বললেন, “কী বলছিস তুই মন্তি? রচনা তোকে ফোন করেছিল? সত্যি
বলছিস”?
সীমন্তিনী বলল, “তোমাকে তো পরশু রাতেই বলেছিলুম বড়মা যে আমার ধারণা সত্যি হলে, আর রচুদের বাড়ির লোকেরা ভদ্র হলে কয়েকদিনের মধ্যেই আমার সাথে যোগাযোগ করবে। তোমরা যে রচনাকে দেখতে গিয়েছিলে, সে কথা অবশ্যই জানাবেন। দেখলে তো আমার কথাটা কত তাড়াতাড়ি ফলে গেল। কাল বিকেলেই রচু আমাকে ফোন করে সব কথা বলেছে গো”।
সরলাদেবী খুশী হয়ে বললেন, “তুই সত্যি বলছিস মন্তি? রচনা নিজে তোকে ফোন করেছিল”?
সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “হ্যাগো বড়মা, সত্যি বলছি। তবে ওরা কেউ তো আর এটা জানে না যে পাত্র আমার দাদাভাই। আর তোমরাও কেউ এখনই তাদের কাছে আমার আর সতুর নাম বোল না কিন্তু। তবে আরেকটা খবর দিতে পারি তোমাকে”।
সরলাদেবী উচ্ছ্বল গলায় বলে উঠলেন, “বল বল মা। আর কিছু বলেছে তোকে রচনা”?
সীমন্তিনী বলল, “সব কিছুই বলেছে। কিন্তু সেসব কথা তোমরা সকলেই জান। তবে একটা এমন কথা বলেছে যে তোমরা কেউই হয়ত বুঝতে পার নি। কী বলেছে জানো? বলেছে ওর হবু শাশুড়িকে ওর খুব পছন্দ হয়েছে। তুমি যখন ওর গালে হাত দিয়ে আদর করেছিলে তখন ওর খুব ভাল লেগেছিল”।
সরলাদেবী প্রায় চেঁচিয়ে বললেন, “ওমা তাই? ও সত্যি এমন কথা বলেছে? সত্যি এমন কথা বলেছে ও”?
সীমন্তিনী একটু অভিমানী গলায় বলল, “তুমি যদি আমার মুখের কথাও বিশ্বাস না কর, তাহলে আমি আর কী করতে পারি বল বড়মা। বারবার শুধু জিজ্ঞেস করছ সত্যি বলছিস। সত্যি বলছিস। আমি কবে তোমাকে মিথ্যে কথা বলেছি, সেটা একটু মনে করিয়ে দাও তো আমাকে”।
সরলাদেবী বললেন, “রাগ করিসনে মা। তোর কথা শুনে আনন্দে আমি বুঝি পাগল হয়ে গেছিরে। খুশীতেই আমি অমন উল্টোপাল্টা বলে ফেলছি রে। কিন্তু বলনা আর কি কি বলেছে রচনা”?
সীমন্তিনী বলল, “অনেক কথাই তো বলতে চেয়েছিল। ফোন ছাড়ছিলই না। কিন্তু ওর নিজের তো ফোন নেই। এক বন্ধুর মোবাইল থেকে আমাকে মিসকল দিয়েছিল। তারপর আমি ওকে কলব্যাক করে ওর সাথে কথা বলেছি। কিন্তু অনেকক্ষণ কথা বলার পর আমিই ওকে বোঝালাম যে যার ফোন থেকে ও আমার সাথে কথা বলছিল সে বিরক্ত হয়ে যাবে। তাই আমিই ওকে সেকথা বলে বুঝিয়ে, তখন লাইন কেটে দিয়েছিলুম”।
সরলাদেবী বললেন, “তাহলে এরপর আমরা আর কি করব বল তো”?
সীমন্তিনী বলল, “আপাততঃ তোমাদের আর কিছু করতে হচ্ছে না। তবে আমি আবার কালচিনি যাচ্ছি এ
শনিবারে”।
সরলাদেবী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তুই আবার যাচ্ছিস”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “যেতে তো হবেই বড়মা। তোমার হবু বেয়াই বেয়ান আর ছেলের বৌকে যে আমি কথা দিয়েছি, রচনার জন্যে কোন ছেলের সম্মন্ধ এলে সে ছেলের সম্বন্ধে খোঁজ খবর করে আমি তাদেরকে জানাব। আর আমার জবাব না পাওয়া অব্দি তারা ছেলেপক্ষের কারো সাথে যোগাযোগ করবেন না। তোমরা তো তোমাদের বাড়ির ঠিকানা ফোন নম্বর সব কিছু লিখে দিয়ে এসেছ তাদের হাতে। এখন সেই ঠিকানাটা এনে ছেলের সম্বন্ধে খোঁজ খবর নেবার দায়িত্ব যে আমার। তাই সেটা জানবার জন্যেই যে আমাকে যেতে হচ্ছে। এবার বুঝেছ তো আমি কতটা আটঘাট বেঁধে এগোচ্ছি”।
সরলাদেবী হাসতে হাসতে বললেন, “তার মানে তুই সে বাড়ি থেকে তোর বাড়ির ঠিকানা জেনে নিয়ে তোর দাদাভাইয়ের ব্যাপারে খোঁজ খবর করে তাদের জানাবি? হাঃ হাঃ হাঃ। তোর মাথায় এতসব বুদ্ধি কী করে আসে রে মা”?
সীমন্তিনী বলল, “তোমাকে দেওয়া কথা রাখতেই আমাকে এসব করতে হচ্ছে বড়মা। তবে তোমরাও আমাকে না জানিয়ে ওদিক থেকে কালচিনির কারো সাথে যোগাযোগ কোর না যেন। তাহলে কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে”।
সরলাদেবী বললেন, “ঠিক আছে রে মা। আমি সেদিকে খেয়াল রাখব। কিন্তু তোর কথা ভেবেই তো আমার ভয় হচ্ছে রে। তোর সাথে ও বাড়ির সকলের সাথেই যে খুব হৃদ্যতা হয়ে গেছে, সেটা তো বুঝতেই পারছি। তাই তো ভয় হচ্ছে, যেদিন তারা বুঝতে পারবেন যে তাদের সাথে এমন হৃদ্যতা করবার পেছনে তোর মনে একটা মতলব ছিল, তখন তাদের সামলাতে পারবি তো”?
সীমন্তিনী বলল, “আমাকে নিয়ে ভেবো না বড়মা। আমি তাদের কাছে খারাপ হলেও আমার তাতে কিছু এসে যাবে না। কিন্তু রচনার সাথে দাদাভাইয়ের বিয়ে দিতে আমাকে যদি আরও ছলনার আশ্রয় নিতে হয় আমি তাতেও পিছপা হব না। তোমরা শুধু আমার কথা মত চলে আমাকে সাপোর্ট দিও। তাহলেই আমি খুশী হব। তবে আমি মনে মনে যেসব কথা ভাবছি, সেভাবে সব কিছু করতে পারলে তুমি দেখে নিও বড়মা, রচনার বাড়ির সকলেই আমাকে তোমার মত করেই ভালবাসবে। কিন্তু বড়মা, তোমরা সকলে তো দেখেই এসেছ রচনাদের বাড়ির অবস্থা। ওদের তো প্রায় দিনান্তে পান্তা ফুরোবার মত অবস্থা। তাই আগে থেকেই তোমাকে একটা কথা বলে রাখছি। বিয়েতে কোন দান সামগ্রী যৌতুক তো তোমরা পাবেই না। উল্টে তোমরা যদি সামাজিক ভাবে ছেলের বিয়ে দিয়ে ঘরে বৌ তুলতে যাও, তাহলে কিন্তু বিয়ের সমস্ত খরচ খরচা তোমাদেরই বহন করতে হবে। তাতে তোমাদের কিন্তু বেশ পয়সা খরচ করতে হবে। তুমি জেঠু কাকুদের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করে আমাকে জানিও। নইলে আমাকে অন্য ভাবে প্ল্যান করে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করিয়ে রচনাকে তোমার হাতে পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ’কথাটা মাথায় রেখ, রচনাকে যদি আমরা আমাদের ঘরের বৌ করে তুলতে না পারি, তাহলে দাদাভাইকে আর অন্য কোন মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারব কিনা, সে বিষয়ে কিন্তু যথেষ্ট সন্দেহ থাকবে। তুমি সকলের সাথে বসে পরামর্শ করে তোমাদের সিদ্ধান্ত আমাকে জানিও দু’একদিনের মধ্যে”।
সরলাদেবী বললেন, “হ্যারে সেটা তো তুই ঠিকই বলেছিস। সেদিন বাড়ি ফেরবার সময় তোর বাবা আর কাকুর সাথে এ ব্যাপারে কথাও বলেছি। কিন্তু তখন তো জানতুম যে সম্মন্ধটা বুঝি ভেস্তেই যাচ্ছে। এখন তো তুই আবার আমাদের মনে আশা জাগিয়েছিস। ঠিক আছে দু’এক দিনের ভেতরেই তোর বাবা আর কাকুদের সাথে বসে আলোচনা করে এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেব”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যা বড়মা। তোমাদের ইচ্ছেটা না জানলে আমি পরের ব্যাপারগুলো সাজাতে পারব না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ ব্যাপারে তোমরা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছ সেটা আমাকে জানিও। আজ তাহলে রাখছি বড়মা। আমার কলেজে যেতে হবে আজ”।
সরলাদেবী বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে রে মা। তুই ভাল ভাবে থাকিস। ওহ, সতু তোকে কিছু একটা বলবে নে”।
সতীশ বলল, “বড়দি আমার ওপর রাগ করেছিস তুই”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “নারে ভাই। দিদিরা কি ভাইয়ের ওপর রাগ করে বেশীক্ষণ থাকতে পারে? কিন্তু ভাই কোথায় কি ভুল করছে, সেটাও তো বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। তাই তুইও আমার ওপর রাগ করিস নে”।
সতীশ বলল, “আচ্ছা বড়দি, তুই যে শনিবারে আবার কালচিনি যাচ্ছিস বললি। আমিও কি আসব? তুই না বলেছিলিস আমাকে সাথে নিয়ে কালচিনি যাবি”।
সীমন্তিনী বলল, “আমি যাকে যা কথা দিই, সেটা সব সময় রাখি। তোকেও সাথে করে কালচিনি অবশ্যই নিয়ে যাব। কিন্তু সেটা এবারে নয় ভাই। যেদিন আমাদের আসল পরিচয়টা ওদের জানাব সেদিন তোকে নিয়ে যাব। তুই মন খারাপ করিস না। এবার আসলে আমাকে আরও কিছু ট্রিক্স করতে হবে সেখানে গিয়ে। তাই তোকে নিচ্ছি না এবার। আচ্ছা ছাড়ছি এখন রে ভাই”।
*****************
পরদিন সকালেই চা খেতে খেতে সীমন্তিনী সতীশের নাম্বারে ফোন করতেই সতীশ ফোন ধরে বলল, “হ্যা বড়দি, বল”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা সতু, তোর মাথায় আর বুদ্ধি শুদ্ধি কবে হবে রে”?
সতীশ অবাক হয়ে বলল, “বারে, আমি আবার এমন কি করেছি”?
সীমন্তিনী রাগত স্বরে বলল, “যা করেছিস সেটা নিয়ে কিছু বলছি না। যা করিস নি সেটার কথাই বলছি রে হাঁদারাম”।
সতীশ বলল, “তুই যা যা বলেছিস, সে সব কথাই তো আমি সকলকে বলেছি। আর কি করা বাকি রেখেছি আমি”?
সীমন্তিনী বলল, “তোকে নিয়ে আর পারছিনা রে বাবা। মেয়ের বাড়িতে দাদাভাইয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাড়ির গুরুজনেরা গিয়েছিলেন এটা তো ঠিকই আছে। কিন্তু তুই একবার ভেবে দেখ তো কোনও মা বাবা কি ছেলেকে না দেখেই মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হবে? রচুর বাড়ির লোকেরাই বা সেটা কি করে করবে? দাদাভাইকে পাঠাবার কথা তো ছিল না। সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু বড়মা বা কাকু জেঠুদের হাতে দাদাভাইয়ের একটা ছবি পাঠিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিল না তোর? পাত্রকে না দেখে পাত্রের কোন ছবিও না দেখে কোন মেয়ের বাবা তার বিয়ে দিতে রাজি হবেন? বল তো”?
সতীশ বলল, “হ্যারে বড়দি সেটা তো ঠিকই বলেছিস। কিন্তু শোন বড়দি, কথাটা একবার আমার মনে এসেছিল ঠিকই। কিন্তু তুই এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলিসনি বলেই আর সে ব্যাপারে কোন কথা আমি
ওঠাঁইনি”।
সীমন্তিনী বলল, “আর রচুর সাথে আমার কি কি কথা হয়েছিল সে সবও তো পুরোপুরি বলিসনি বাড়ি গিয়ে। রচুর বিয়ের কোন সম্মন্ধ এলেই তারা চট করেই রাজি হবে না। আগে আমার সাথে কথা বলবেন তারপর তারা পাত্রপক্ষকে তাদের মতামত জানাবেন। এ’ কথাগুলো তুই জেঠুদের বলিস নি। রচুদের বাড়ি থেকে যে এমন জবাবই দেবে সেটা কি তোকে আমি বলিনি? জেঠুরা অমন জবাব পেয়েই মুখ ভার করে চলে এসেছেন। আরে এমনটাই তো হবার কথা ছিল”।
সতীশ আমতা আমতা করে বলল, “সত্যি রে বড়দি। তোর সাথে বৌদি আর বৌদির বাবার যে এ’সব কথা হয়েছিল, সে কথাগুলো বলতে ভুলে গিয়েছিলাম রে। আমাকে মাফ করে দিস সেজন্যে। কিন্তু বড়দি, এ জন্যেই কি বিয়েটা হচ্ছে না”?
সীমন্তিনী এবার একটু নরম সুরে বলল, “বিয়েটা হচ্ছে না, এ’কথা তোকে কে বলল? আচ্ছা শোন, ফোনটা বড়মাকে দে তো। আর তুইও বড়মার সাথে দাঁড়িয়ে স্পীকার অন করে আমার কথাগুলো শুনিস”।
একটু বাদে সরলাদেবী ফোন ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা বড়মা, তোমরা কি গো। ছেলের জন্যে মেয়ে দেখতে যাচ্ছ, মেয়ের মা বাবার মতামত জানতে চেয়েছ, আর নিজের ছেলের একটা ছবিও তোমরা সাথে নিয়ে যাওনি? আচ্ছা বড়মা, আজ কোন ছেলের মা বাবা যদি আমার সাথে তাদের ছেলের বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে আসে, তাহলে ছেলেকে না দেখে, ছেলের কোন ছবি না দেখেই তোমরা কি বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে”?
সরলাদেবী বললেন, “ওমা তাই আবার হয় নাকি? ছেলে দেখতে কেমন এটাই তো লোকে সবকিছুর আগে বিচার করে। ছেলেকে না দেখেই কি মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায় নাকি”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “তাহলে তুমি নিজেই বল বড়মা। রচু বা রচুর বাবা তোমাদের যে জবাব দিয়েছেন, এ ছাড়া আর কি বলতে পারতেন তারা তোমাদের”?
সরলাদেবী বললেন, “হ্যারে, কথাটা তো ঠিকই বলেছিস। রতুর দু’একটা ছবি আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। সত্যিরে, কথাটা তো আমাদের কারুর মাথায়ই আসেনি। কিন্তু তুই এ’কথা কিকরে জানলি রে মা? আমি তো তোকে বলিনি”।
সীমন্তিনী মজা করে বলল, “আর কে বলবে? তোমার বড়ছেলের হবু বৌ নিজেই আমাকে এ’কথা বলেছে গো”।
সরলাদেবী প্রায় চিৎকার করে উঠে বললেন, “কী বলছিস তুই মন্তি? রচনা তোকে ফোন করেছিল? সত্যি
বলছিস”?
সীমন্তিনী বলল, “তোমাকে তো পরশু রাতেই বলেছিলুম বড়মা যে আমার ধারণা সত্যি হলে, আর রচুদের বাড়ির লোকেরা ভদ্র হলে কয়েকদিনের মধ্যেই আমার সাথে যোগাযোগ করবে। তোমরা যে রচনাকে দেখতে গিয়েছিলে, সে কথা অবশ্যই জানাবেন। দেখলে তো আমার কথাটা কত তাড়াতাড়ি ফলে গেল। কাল বিকেলেই রচু আমাকে ফোন করে সব কথা বলেছে গো”।
সরলাদেবী খুশী হয়ে বললেন, “তুই সত্যি বলছিস মন্তি? রচনা নিজে তোকে ফোন করেছিল”?
সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “হ্যাগো বড়মা, সত্যি বলছি। তবে ওরা কেউ তো আর এটা জানে না যে পাত্র আমার দাদাভাই। আর তোমরাও কেউ এখনই তাদের কাছে আমার আর সতুর নাম বোল না কিন্তু। তবে আরেকটা খবর দিতে পারি তোমাকে”।
সরলাদেবী উচ্ছ্বল গলায় বলে উঠলেন, “বল বল মা। আর কিছু বলেছে তোকে রচনা”?
সীমন্তিনী বলল, “সব কিছুই বলেছে। কিন্তু সেসব কথা তোমরা সকলেই জান। তবে একটা এমন কথা বলেছে যে তোমরা কেউই হয়ত বুঝতে পার নি। কী বলেছে জানো? বলেছে ওর হবু শাশুড়িকে ওর খুব পছন্দ হয়েছে। তুমি যখন ওর গালে হাত দিয়ে আদর করেছিলে তখন ওর খুব ভাল লেগেছিল”।
সরলাদেবী প্রায় চেঁচিয়ে বললেন, “ওমা তাই? ও সত্যি এমন কথা বলেছে? সত্যি এমন কথা বলেছে ও”?
সীমন্তিনী একটু অভিমানী গলায় বলল, “তুমি যদি আমার মুখের কথাও বিশ্বাস না কর, তাহলে আমি আর কী করতে পারি বল বড়মা। বারবার শুধু জিজ্ঞেস করছ সত্যি বলছিস। সত্যি বলছিস। আমি কবে তোমাকে মিথ্যে কথা বলেছি, সেটা একটু মনে করিয়ে দাও তো আমাকে”।
সরলাদেবী বললেন, “রাগ করিসনে মা। তোর কথা শুনে আনন্দে আমি বুঝি পাগল হয়ে গেছিরে। খুশীতেই আমি অমন উল্টোপাল্টা বলে ফেলছি রে। কিন্তু বলনা আর কি কি বলেছে রচনা”?
সীমন্তিনী বলল, “অনেক কথাই তো বলতে চেয়েছিল। ফোন ছাড়ছিলই না। কিন্তু ওর নিজের তো ফোন নেই। এক বন্ধুর মোবাইল থেকে আমাকে মিসকল দিয়েছিল। তারপর আমি ওকে কলব্যাক করে ওর সাথে কথা বলেছি। কিন্তু অনেকক্ষণ কথা বলার পর আমিই ওকে বোঝালাম যে যার ফোন থেকে ও আমার সাথে কথা বলছিল সে বিরক্ত হয়ে যাবে। তাই আমিই ওকে সেকথা বলে বুঝিয়ে, তখন লাইন কেটে দিয়েছিলুম”।
সরলাদেবী বললেন, “তাহলে এরপর আমরা আর কি করব বল তো”?
সীমন্তিনী বলল, “আপাততঃ তোমাদের আর কিছু করতে হচ্ছে না। তবে আমি আবার কালচিনি যাচ্ছি এ
শনিবারে”।
সরলাদেবী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তুই আবার যাচ্ছিস”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “যেতে তো হবেই বড়মা। তোমার হবু বেয়াই বেয়ান আর ছেলের বৌকে যে আমি কথা দিয়েছি, রচনার জন্যে কোন ছেলের সম্মন্ধ এলে সে ছেলের সম্বন্ধে খোঁজ খবর করে আমি তাদেরকে জানাব। আর আমার জবাব না পাওয়া অব্দি তারা ছেলেপক্ষের কারো সাথে যোগাযোগ করবেন না। তোমরা তো তোমাদের বাড়ির ঠিকানা ফোন নম্বর সব কিছু লিখে দিয়ে এসেছ তাদের হাতে। এখন সেই ঠিকানাটা এনে ছেলের সম্বন্ধে খোঁজ খবর নেবার দায়িত্ব যে আমার। তাই সেটা জানবার জন্যেই যে আমাকে যেতে হচ্ছে। এবার বুঝেছ তো আমি কতটা আটঘাট বেঁধে এগোচ্ছি”।
সরলাদেবী হাসতে হাসতে বললেন, “তার মানে তুই সে বাড়ি থেকে তোর বাড়ির ঠিকানা জেনে নিয়ে তোর দাদাভাইয়ের ব্যাপারে খোঁজ খবর করে তাদের জানাবি? হাঃ হাঃ হাঃ। তোর মাথায় এতসব বুদ্ধি কী করে আসে রে মা”?
সীমন্তিনী বলল, “তোমাকে দেওয়া কথা রাখতেই আমাকে এসব করতে হচ্ছে বড়মা। তবে তোমরাও আমাকে না জানিয়ে ওদিক থেকে কালচিনির কারো সাথে যোগাযোগ কোর না যেন। তাহলে কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে”।
সরলাদেবী বললেন, “ঠিক আছে রে মা। আমি সেদিকে খেয়াল রাখব। কিন্তু তোর কথা ভেবেই তো আমার ভয় হচ্ছে রে। তোর সাথে ও বাড়ির সকলের সাথেই যে খুব হৃদ্যতা হয়ে গেছে, সেটা তো বুঝতেই পারছি। তাই তো ভয় হচ্ছে, যেদিন তারা বুঝতে পারবেন যে তাদের সাথে এমন হৃদ্যতা করবার পেছনে তোর মনে একটা মতলব ছিল, তখন তাদের সামলাতে পারবি তো”?
সীমন্তিনী বলল, “আমাকে নিয়ে ভেবো না বড়মা। আমি তাদের কাছে খারাপ হলেও আমার তাতে কিছু এসে যাবে না। কিন্তু রচনার সাথে দাদাভাইয়ের বিয়ে দিতে আমাকে যদি আরও ছলনার আশ্রয় নিতে হয় আমি তাতেও পিছপা হব না। তোমরা শুধু আমার কথা মত চলে আমাকে সাপোর্ট দিও। তাহলেই আমি খুশী হব। তবে আমি মনে মনে যেসব কথা ভাবছি, সেভাবে সব কিছু করতে পারলে তুমি দেখে নিও বড়মা, রচনার বাড়ির সকলেই আমাকে তোমার মত করেই ভালবাসবে। কিন্তু বড়মা, তোমরা সকলে তো দেখেই এসেছ রচনাদের বাড়ির অবস্থা। ওদের তো প্রায় দিনান্তে পান্তা ফুরোবার মত অবস্থা। তাই আগে থেকেই তোমাকে একটা কথা বলে রাখছি। বিয়েতে কোন দান সামগ্রী যৌতুক তো তোমরা পাবেই না। উল্টে তোমরা যদি সামাজিক ভাবে ছেলের বিয়ে দিয়ে ঘরে বৌ তুলতে যাও, তাহলে কিন্তু বিয়ের সমস্ত খরচ খরচা তোমাদেরই বহন করতে হবে। তাতে তোমাদের কিন্তু বেশ পয়সা খরচ করতে হবে। তুমি জেঠু কাকুদের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করে আমাকে জানিও। নইলে আমাকে অন্য ভাবে প্ল্যান করে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করিয়ে রচনাকে তোমার হাতে পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ’কথাটা মাথায় রেখ, রচনাকে যদি আমরা আমাদের ঘরের বৌ করে তুলতে না পারি, তাহলে দাদাভাইকে আর অন্য কোন মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারব কিনা, সে বিষয়ে কিন্তু যথেষ্ট সন্দেহ থাকবে। তুমি সকলের সাথে বসে পরামর্শ করে তোমাদের সিদ্ধান্ত আমাকে জানিও দু’একদিনের মধ্যে”।
সরলাদেবী বললেন, “হ্যারে সেটা তো তুই ঠিকই বলেছিস। সেদিন বাড়ি ফেরবার সময় তোর বাবা আর কাকুর সাথে এ ব্যাপারে কথাও বলেছি। কিন্তু তখন তো জানতুম যে সম্মন্ধটা বুঝি ভেস্তেই যাচ্ছে। এখন তো তুই আবার আমাদের মনে আশা জাগিয়েছিস। ঠিক আছে দু’এক দিনের ভেতরেই তোর বাবা আর কাকুদের সাথে বসে আলোচনা করে এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেব”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যা বড়মা। তোমাদের ইচ্ছেটা না জানলে আমি পরের ব্যাপারগুলো সাজাতে পারব না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ ব্যাপারে তোমরা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছ সেটা আমাকে জানিও। আজ তাহলে রাখছি বড়মা। আমার কলেজে যেতে হবে আজ”।
সরলাদেবী বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে রে মা। তুই ভাল ভাবে থাকিস। ওহ, সতু তোকে কিছু একটা বলবে নে”।
সতীশ বলল, “বড়দি আমার ওপর রাগ করেছিস তুই”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “নারে ভাই। দিদিরা কি ভাইয়ের ওপর রাগ করে বেশীক্ষণ থাকতে পারে? কিন্তু ভাই কোথায় কি ভুল করছে, সেটাও তো বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। তাই তুইও আমার ওপর রাগ করিস নে”।
সতীশ বলল, “আচ্ছা বড়দি, তুই যে শনিবারে আবার কালচিনি যাচ্ছিস বললি। আমিও কি আসব? তুই না বলেছিলিস আমাকে সাথে নিয়ে কালচিনি যাবি”।
সীমন্তিনী বলল, “আমি যাকে যা কথা দিই, সেটা সব সময় রাখি। তোকেও সাথে করে কালচিনি অবশ্যই নিয়ে যাব। কিন্তু সেটা এবারে নয় ভাই। যেদিন আমাদের আসল পরিচয়টা ওদের জানাব সেদিন তোকে নিয়ে যাব। তুই মন খারাপ করিস না। এবার আসলে আমাকে আরও কিছু ট্রিক্স করতে হবে সেখানে গিয়ে। তাই তোকে নিচ্ছি না এবার। আচ্ছা ছাড়ছি এখন রে ভাই”।
*****************