Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#16
(Update No. 42)

রাত আটটার সময় রতীশ ফোন করতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “দাদাভাই, সবটা শুনেছিস”?

রতীশ বলল, “আমি এখনও সব কিছু সেভাবে শুনিনি রে মন্তি। তবে তুই মাকে দুপুরবেলা ফোন করতেই বাড়িতে সোরগোল চলছে তখন থেকেই। মাকে তুই যা বলেছিস সেটুকু শুনেছি আমি। বাবা কাকুরা সবাই সতু আসবার প্রায় সাথে সাথেই বাড়ি চলে এসেছেন। বাবার ঘরে এখন বাড়ির সবাই মিলে বসেছে। সতু তাদের সব কিছু বলছে। কিন্তু মন্তি, আমি এখনও বুঝতে পাচ্ছি না রে আমরা ঠিক করছি কি না”।

সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, অনেক ভাগ্য করলে তবেই রচনার মত একটা বৌ পাওয়া যায় রে। আমি ওর সাথে পনের ষোল ঘন্টা কাটিয়ে এসেছি। আমি ওকে খুব ভাল করে স্টাডি করেছি। দেখিস আমাদের ঘরে সত্যি সত্যি মা লক্ষী আসছে রে দাদাভাই। আমি জানি, ওকে বিয়ে করে তুই খুব খুব সুখী হবি দাদাভাই”।

রতীশ কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “আমি ওই মেয়েটার ব্যাপারে কিছু বলছিনা রে মন্তি। আমরা যা করতে চাইছি, তা ঠিক হচ্ছে কিনা সেটাই বুঝতে পাচ্ছি না”।

সীমন্তিনী বলল, “আমরা যা করছি তা একদম ঠিক করছি। রচনা সত্যি খুব ভাল মেয়ে রে দাদাভাই। যেমন কথাবার্তা তেমন সুন্দর দেখতে, আর তেমনই সুন্দর ওর আচার ব্যবহার। আর কী সরল মনের মেয়ে। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই আমার সাথে এমন ফ্রি হয়ে গেছে যে কী বলব তোকে। রচনা আর ওর ছোটভাই কিংশুক তো আমাকে দিদিভাই বলে ডাকতে শুরু করেছে। আর ওর মা বাবাও খুবই ভদ্র আর অমায়িক মানুষ। কিন্তু ওরা নিতান্তই গরীব। ওদের ঘরের অবস্থা দেখেই বুঝেছি যে কখন কখনও বুঝি তাদের ঘরে দু’বেলা রান্নাও হয়না। কিন্তু তাদের তিনটি ছেলেমেয়েই খুব ভদ্র আর সুশীল। ছেলেমেয়েদের তারা খুব সংস্কারি করে তুলেছেন। রচনা আর ওর ছোটভাই দু’জনেই পড়াশোনায় খুব ভাল। বরাবর ক্লাসে প্রথম হয় ওরা। রচনা এবার ইলেভেন পাশ করছে। আর কিংশুক ক্লাস এইটে পড়ছে। আর ওদের মা-ও কি সুন্দর দেখতেরে দাদাভাই! ওর মা একটা লালপেড়ে পুরোন শাড়ি পড়ে ছিল। আমার তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে সাক্ষাৎ মা দুর্গা যেন গরীব গৃহবধূর বেশে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। আর ওর বাবাও একেবারে মাটির মানুষ। পয়সার অভাবেই এক ঘটকের মিথ্যে কথায় বিশ্বাস করে তাদের বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েটা শ্বশুর বাড়িতে খুব কষ্টে আছে বলে ওর বাবা খুব মনঃকষ্টে আছেন। আমার সাথে তারা সকলেই এমনভাবে কথা বলেছেন যে আমি যেন তাদের কত আপন। আমি যেন তাদের নিজের ঘরেরই আরেকটা মেয়ে। তাই বলছি দাদাভাই, তুই একদম ভাবিস না। রচনার মত একটা মেয়েকে জীবনসঙ্গী করতে পারলে তুই যে সত্যি খুশী হবি, সে বিষয়ে আমার মনে একেবারেই সন্দেহ নেই”।

রতীশ বলল, “আমাকে তুই এত কথা বলছিস কেন রে মন্তি? বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে মার মুখে ব্যাপারটা শুনেই আমি বুঝে ফেলেছিলাম যে মেয়েটাকে তোর পছন্দ হয়েছে। আর এটাও জানি, ওই মেয়ের সাথেই তুই আমার বিয়ে দিবি। কিন্তু দ্বিধাটা অন্য জায়গায় রে। তুই তো জানিসই সেই ছোটবেলা থেকে আমি কেবল একটা মেয়েকেই ধ্যানে জ্ঞানে জেগে ঘুমিয়ে আমার পাশে দেখতে চেয়েছিলাম। পাঁচ ছ বছর ধরে আমরা একে অপরকে ছেড়ে আছি। কিন্তু এখনও তুইই যে আমার সব। আমার মনের আয়নায় আমি এখনও তোকে সব সময় দেখতে পাই। অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করে আমি তার ক্ষতি করে ফেলব না তো? বিয়েটা তো কোন ছেলে খেলা নয়। বিয়ে করে আমি ওকে যদি পুরোপুরি ভাবে স্ত্রীর মর্য্যাদা দিতে না পারি? তুইই তো বললি, ওর দিদির বিয়ে হবার পর মেয়েটা সুখী হয়নি। আর মেয়ে সুখী হয়নি বলেই ওর বাবা মার মনেও দুঃখ আছে। ছোটমেয়ের বিয়ের পরেও তারা যদি আবার নতুন করে দুঃখ পান? তোকে যে আমি ভুলতে পারবনা। আমি কি সত্যিই মন থেকে ওকে স্ত্রী বলে মেনে নিতে পারব? এটা নিয়েই শুধু ভাবছি রে”।

সীমন্তিনী রতীশের কথা শুনে বলল, “দাদাভাই, আমরা দু’জনেই একটা ভুল করে ফেলেছিলাম রে ওই ছোট বয়সে। সেদিন তো বুঝিনি। কিন্তু ক্লাস এইটে ওঠবার পর থেকেই আমাকে বড়মা সব বুঝিয়েছিলেন। আমিও তার প্রতিটা কথা বুঝেছিলাম। কিন্তু ততদিনে আমি এমন একটা অবস্থায় গিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম যে আমরা দু’জন কেউ কাউকে বিয়ে করতে পারবনা বুঝেও তোকে জোর করে দুরে পাঠিয়ে দিয়ে তোর আর আমার শারীরিক সম্পর্কটায় ইতি টানতে পারলেও, তোকে আমার মন থেকে সরাতে পারিনি। আর আমি জানি, জীবনের বাকি দিনগুলোতেও হয়ত আমি সেটা করতে পারব না। তাই জীবনের লক্ষ্যটাকে একটু বদলে নিয়েছি। বড়মাকে দেওয়া কথা রাখবার পাশাপাশি তোকেও আমি সুখী দেখতে চাই সারাটা জীবন ধরে। দুরে থেকেও আমি সব সময় তোর আর তোর স্ত্রীর পাশে থাকব। তাই এমন একটা মেয়ে খুঁজে পাওয়া প্রয়োজন ছিল যাকে তোর ভাল লাগবে। ডিস্ট্রিক্ট অডিটোরিয়ামে রচনাকে দেখে মনে হয়েছিল, একেই বুঝি আমরা খুঁজছিলাম। আর কালচিনি গিয়ে বুঝতে পেরেছি ওর মত একটা মেয়েই তোকে সুখী রাখতে পারবে। তাই মন থেকে সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ ঝেড়ে ফেলে দে। তোকে বেশী কিছু করতে হবে না। সেই ছোটবেলা থেকে যে কাজটা করে এসেছিস, সেটাই করে যা। তোর মন্তি তোকে যা করতে বলেছে, এতদিন তুই তো শুধু সেটাই করে এসেছিস না? আজও নাহয় তাই করে যা। আমার কথাটা রাখ। ভবিষ্যতের সমস্ত দায়িত্ব আমার হাতে ছেড়ে দে। আমি সারাজীবন দুরে থেকে তোকে আগলে রাখব। তোর কাছে এটুকু চাইতে পারিনা আমি দাদাভাই”?

রতীশ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “ওই একটা কাজ করতেই তো আমি অভ্যস্ত রে। আমাকে সুখী করতে তুই নিজের পায়ে কুড়োল তো ছোট থাকতেই মেরে বসেছিস। এবার তো নিজের বুকে ছোড়া বেঁধাতে চাইছিস তুই। হয়ত আমিই তোকে এমনটা করতে বাধ্য করেছি। কিন্তু তোর নিজের কি হবে”?

রতীশের কথা শুনে সীমন্তিনীর বুকটা টনটন করে উঠল। তবু নিজেকে সংযত করে সে বলল, “আমার জীবন তো তুই অনেক আগেই পূর্ণ করে দিয়েছিস দাদাভাই। আমার যা কিছু কাম্য ছিল, যা কিছু পাবার ছিল, সে সব কিছু আমি পেয়ে গেছিরে। আর আমার নতুন করে কিচ্ছুটি পাবার নেই। কিন্তু একটা কথা শুধু তোকে বলছি। রচনার সঙ্গে বিয়ে তো তোর হবেই। তবে সেটা কিন্তু এখনই হবে না। বছর খানেক সময় লাগবে। আর তারপর যে রচনাকে তুই বিয়ে করবি, সে রচনার মধ্যে আমাকেও পাবি। রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তুই ভাববি তোর দু’হাতের মাঝে আবদ্ধ শরীরটা রচনার হলেও, সে শরীরটার ভেতর থাকব আমি। তুই চোখ বুজে সেটা বুঝতে চাইলেই বুঝতে পারবি। তুই শুধু আমাকে একটা কথা দে দাদাভাই। আমাকে যেমন ছোটবেলা থেকে তুই কোন কষ্ট দিসনি, রচনাকেও ঠিক সেভাবেই কোন কষ্ট দিবি না। আমার সব কথা যেমন তুই মেনে চলিস, তেমনি ওর সব কথাও তুই মেনে চলবি। এ কথাটুকু দিবি না আমাকে”?

রতীশ বলল, “তোর মুখের প্রত্যেকটা কথাই তো আমার কাছে একেকটা নিয়ম রে মন্তি। আজ অব্দি তোর কোন কথা আমি অমান্য করেছি? আজও করব না। তবে ভবিষ্যত নিয়ে তোর মনে যতটা জোর আছে, আমার যে ততটা নেই, এ তো তুই ভালভাবেই জানিস। তবে তোর কথা যে মেনে চলব, সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে রে”।

সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, কিচ্ছু ভাবিস না। যা হবে সব ভাল হবে। আচ্ছা শোন দাদাভাই। আমি এখন আর কথা বলছি না। রাতের রান্নাটা সেরে নিই। পরে তোর সাথে কথা বলব আবার, কেমন”?

ফোন কেটে দিয়ে নিজের চোখ বেয়ে নেমে আসা জলের ধারাকে মুছে নিয়ে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সীমন্তিনী। তার মনে পড়ে গেল অনেক বছর আগের একটা কথা। তখন তার দেহে যৌবনের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। দাদাভাইয়ের সাথে সে ছোটবেলা থেকেই একসাথে ঘুমোত। একদিন তার মা তাকে বলেছিলেন যে সীমন্তিনীর ওভাবে দাদাভাইকে জড়িয়ে ধরে শোয়াটা ঠিক নয়। সেদিনই মন্তি রেগে উঠে বলেছিল যে সে তার দাদাভাইয়ের বৌ। আর সব স্বামী স্ত্রীই একসাথে ঘুমোয়। সেও তাই তার দাদাভাইয়ের সাথেই ঘুমোবে রোজ। কেউ সেটা আটকাতে পারবে না। এ নিয়ে প্রচুর বাকবিতণ্ডা হলেও মার কোন কথাই সে শোনেনি। মার সাথে সাথে তার বড়মা-ও তাকে অনেক বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু সীমন্তিনী কারুর কথায় কর্ণপাত না করে রেগে গিয়ে ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে শুরু করেছিল। আর এমন ঘটণা শুধু একদিনের বা একবারের নয়। বহুবার এর পুনরাবৃত্তিও ঘটেছিল। কিন্তু জেদী, রাগী, উগ্র মন্তি কোনদিন কারুর কথা শোনেনি। তার বাবা আর মা তাকে প্রচুর মারধরও করেছিলেন ওই সময়ে। একদিন রাতে দাদাভাইয়ের বিছানায় শুতে যাবার সময় তার বাবা তাকে বেত দিয়ে এমন মার মেরেছিলেন যে তার দুটো পায়ের হাঁটুর কাছে অনেকটা করে ছড়ে গিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করেছিল। সে ক্ষতের চিহ্ন এখনও তার শরীরে বিদ্যমান রয়ে গেছে। এমন ক্ষতচিহ্ন তার শরীরে আরও আছে। ডানদিকের পাঁজরের নিচে কোমড়ের একটু ওপরে আর পিঠেও তার বাবার প্রহারের চিহ্ন এখনও আছে। কিন্তু এত কিছু সত্বেও তার জেদের কাছে তার বাবাকে হার মানতে হয়েছিল শেষ পর্যন্ত। তার দাদাভাই ছিল একেবারেই শান্ত স্বভাবের। তাকে যখন বাড়ির লোকেরা মারতেন, তখন তার দাদাভাই শুধু দুরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে সকলের কাছে মিনতি করত তারা যেন আর ব্যথা না দেয় মন্তিকে। কিন্তু তার কথা রেগে যাওয়া বাড়ির গুরুজনদের কানে গিয়ে হয়ত পৌঁছতই না। কিন্তু ক্লান্ত হয়ে তারা যখন মন্তিকে ছেড়ে দিতেন তখন দাদাভাই তার ক্ষত গুলোর ওপর মলম লাগিয়ে দিত। বড়মা নিজেই দুর থেকে মলমটা ছুঁড়ে দিতেন তাদের বিছানার ওপর। তার দাদাভাই যখন আদর করে তার ক্ষতগুলোর ওপর মলম লাগিয়ে দিত তখন তার মনে হত তার আর কোন কষ্ট নেই। বছর দুয়েক পর সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল। তারপর এক সময় বড়মা প্রায় বাধ্য হয়েই দাদাভাই আর তার জন্য আলাদা একটা শোবার ঘরের বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে কেউ আর তাকে মারধোর করতনা। কিন্তু তার বাবা আর মা মেয়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তখন থেকেই। ছোটমা তখন বাড়ির নতুন বৌ। তিনি সীমন্তিনীর ওপর হাত না তুললেও অনেক ভাবে তাকে বোঝাবার চেষ্টা করতেন। ছোটকাকু আর জেঠুও তাই করতেন। কিন্তু সীমন্তিনীর মনের ওপর কেউ কোন প্রভাব ফেলতে পারেন নি। খাবার টেবিলে সকলের সাথে তাদের দু’জনকে খেতে দেওয়াও হত না। বড়মা দু’জনের খাবার তাদের ঘরে দিয়ে যেতেন। তখন থেকে একমাত্র বড়মা সরলাদেবী আর ছোটকাকু চন্দ্রকান্ত ছাড়া বাড়ির আর কেউ সীমন্তিনীর সাথে কথা বলতেন না।

আর একটু বড় হবার পর সীমন্তিনী নিজেই বুঝতে পেরেছিল, যে মনে মনে সে তার দাদাভাইকে তার স্বামী বলে মানলেও তার দাদাভাইকে সে কখনও বিয়ে করতে পারবে না। বাড়ির গুরুজনেরা বা সমাজের অন্য কেউই তাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মেনে নিতে পারবে না। আর প্রশ্নটা পারা না পারার নয়। এ যে একেবারেই অসম্ভব সেটা তখন সে নিজেই বুঝতে হয়েছে। বড়মা রোজই শান্তভাবে তাদের দু’জনকে বোঝাতেন। কিন্তু রতীশের মুখে শুধু একটা কথাই ছিল। মন্তি যা চাইবে তা-ই হবে। ক্লাস টেনে পড়বার সময় মন্তি যখন চিন্তাধারায় পরিপক্ক হয়ে উঠেছিল, তখন বড়মাকে সে কথা দিয়েছিল যে তার বড়ছেলের কোন সর্বনাশ সে করবে না। সে ধীরে ধীরে তার দাদাভাইয়ের জীবন থেকে সরে আসবে। কিন্তু তার একটা কথাও বাড়ির সবাইকে মেনে নিতে হবে। আর সে দায়িত্ব নিতে হবে বড়মাকেই। বড়মা রাজি হওয়াতে সীমন্তিনী তাকে বলেছিল, দাদাভাইয়ের সাথে সে অন্য কোন মেয়ের বিয়ে দিয়ে তাকে সংসারী করে তুলবে। কিন্তু বাড়ির কেউ যেন কখনও সীমন্তিনীকে বিয়ে করতে না বলে। সে’কথা শুনে তার বাবা শশীকান্ত রেগে গিয়ে তার বড়মাকে বলেছিলেন যে মেয়েকে আইবুড়ো করে ঘরে বসিয়ে রেখে সে সারাজীবন তাকে খাওয়াতে পড়াতে পারবেন না। সীমন্তিনীও জবাবে বলেছিল, সে নিজেও সেটা চায় না। তার নিজের জীবনের চিন্তা সে নিজেই করবে। বাড়ির কাউকে তার ব্যাপারে কোন মাথা ঘামাতে হবে না। বাড়ির লোকেরা যদি তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য না করেন তাতেও তার কোন ক্ষোভ থাকবে না। তবে দাদাভাইকে বাড়ির কেউ কোন কিছু বলতে পারবে না, তার দাদাভাইয়ের ব্যাপারে কোন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হলে সেটা শুধু সে নিজেই নেবে। আর তার কথা বাড়ির সকলকে মেনে নিতে হবে। তার দাদাভাইকে কেউ শারীরিক বা মানসিক কষ্ট দিলে সীমন্তিনী কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।

বাড়ির সকলে নিরূপায় হয়েই সীমন্তিনীর কথা মেনে নিয়েছিলেন। বরং বলা ভাল, মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। মাধ্যমিক পাশ করবার পর মন্তি অনেক ভেবে চিন্তেই দাদাভাইকে দেরাদুন কলেজে পাঠিয়ে দিয়েছিল। নিজেও বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিল জলপাইগুড়ি। তারপর থেকে এতটা বছর এ ভাবেই চলছে। নিজের বাবা মা তার সাথে কথা বলেন না। তার পড়াশোনার ব্যাপারেও তারা কোন মাথা ঘামান না। তার সমস্ত প্রয়োজন মিটিয়ে যাচ্ছেন তার বড়মা আর ছোটকাকু। ধীরে ধীরে দাদাভাইয়ের মন থেকে তার শারীরিক মোহটা যে সে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে সে তা জানে। এখন রচনার মত একটা সুন্দর মিষ্টি মেয়েকে বিয়ে করলে ধীরে ধীরে রতীশ পুরোপুরিভাবেই তার মায়া কাটিয়ে উঠতে পারবে বলেই তার বিশ্বাস। আর রচনাকে যখন তার দাদাভাইয়ের ভাল লেগেছে, তখন রচনাই সেটা করতে পারবে। তাই যে কোন মূল্যে রচনার সাথে রতীশের বিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিল। তবে রচনার বয়স কম। সবে সতের চলছে। আর পড়াশোনার যেটুকু সুযোগ সে পেয়েছে সেটুকু পড়ে নিক। হায়ার সেকেণ্ডারী পাশ করবার পর ওদের বিয়ে নিয়ে ভাবা যাবে। ততদিনে রচনাও প্রাপ্ত বয়স্কা হয়ে উঠবে। তবে রচনাকে যেভাবেই হোক হাতে রাখতেই হবে। হাতছাড়া করা একেবারেই চলবে না।

হাতজোড় করে মনে মনে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করল “হে ঠাকুর আমার মনোবাঞ্ছা পূরন কোর তুমি”।

****************

রতীশদের বাড়ি থেকে রতিকান্তবাবু স্ত্রী সরলাদেবী আর ছোটভাই চন্দ্রকান্তকে নিয়ে কালচিনি গিয়েছিলেন। সীমন্তিনীর কথা মতই দুপুর পার করে তারা বিধুবাবুর বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। পরিচয় পর্ব সেরে রতিকান্তবাবু তাদের উদ্দেশ্য খুলে বলে বিধুবাবুর কাছে নিজের বড়ছেলের সাথে রচনার বিয়ের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। একেবারেই ঘরোয়া পোশাকে রচনাকে দেখে সকলেরই খুব পছন্দ হয়েছিল। বিধুবাবু আর বিভাদেবীও ছেলে পক্ষের কথাবার্তা শুনে খুব খুশী হয়েছিলেন। কিন্তু বাদ সাধল মেয়ে নিজেই। মৃদু গলায় সে বিনীতভাবে সবাইকে বলেছিল যে মা বাবার পছন্দ মতই সে বিয়ে করবে। কিন্তু তাকে ক’টা দিন ভাববার সময় দিতে হবে। আর হায়ার সেকেণ্ডারী পাশ না করা পর্যন্ত সে বিয়ে করতেও রাজি নয়। এ’কথা বলে ছেলের মা, বাবা আর কাকুকে সে শ্রদ্ধা ভরে প্রণাম করেছিল।

কালচিনি থেকে ফেরার পথে তারা কেউ আর সীমন্তিনীর সাথে দেখা করেন নি। জলপাইগুড়ি এসে হাতের সামনেই রাজগঞ্জের গাড়ি পেয়ে তারা সোজা বাড়ি চলে এসেছিলেন। বাড়ি পৌঁছেই সরলাদেবী সীমন্তিনীকে ফোন করলেন। সীমন্তিনীও সারা দিন নিজের কাজে ব্যস্ত থাকলেও বিকেল থেকেই কিছু একটা খবরের আশায় ছটফট করতে শুরু করেছিল। বড়মার ফোন আসতেই সে ফোন ধরে বলল, “তোমরা কোথায় আছ গো বড়মা? এখনও কি জলপাইগুড়ি এসে পৌঁছোও নি তোমরা”?

সরলাদেবী বললেন, “আর বলিসনে রে মা। জলপাইগুড়ি এসেই এদিকের একটা বাস পেয়ে যেতে তোর কাকু জেঠু আমাকে সে বাসেই তুলে নিয়ে বাড়ি চলে এলেন। এই তো মাত্র মিনিট পাঁচেক আগেই বাড়ি এসে ঢুকেছি। আর পোশাক আশাক খুলে হাত মুখ ধুয়েই তোকে ফোন করলুম আমি”।

সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “ওমা। তোমরা বাড়ি পৌঁছে গেছ? আর আমি অপেক্ষা করছি তোমাদের জলপাইগুড়ি আসার। তোমরা এলে রান্না বসাব বলে ভাবছি। তা ঠিক আছে। কালচিনিতে রচনার মা বাবার সাথে তোমাদের আলাপ কি হল? আর রচনাকে কেমন লাগল”?

সরলাদেবী খুব খুশী খুশী গলায় বললেন, “মেয়েটাকে তো আমাদের সকলেরই দারুণ পছন্দ হয়েছে রে। সতু আর তুই ঠিক বলেছিস। মেয়ে তো নয় যেন সাক্ষাৎ মা লক্ষী। কিন্তু হলে কি হবে রে। মেয়ের মা বাবা রাজি হলেও মেয়ে নিজেই তো সবকিছুর ওপর জল ঢেলে দিল”।

সীমন্তিনী চমকে উঠে বলল, “মানে? ও আবার কি করেছে? হঠাৎ করে কোন খবরাখবর না দিয়ে তোমরা সরাসরি গিয়ে তার বিয়ের কথা তুলেছ বলে তোমাদের কোন অপমান টপমান করেছে নাকি”?

সরলাদেবী বললেন, “আরে না না তেমন কিছু নয়। মেয়েটা তো যথেষ্ট ভদ্র আর শান্ত। কিন্তু খুব বিনয়ী হয়েই ও মা বাবার সামনেই আমাদের যে কথা বলল, তা শুনেই মনে একটু খটকা লেগেছে রে”।

সীমন্তিনী অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আরে ও বলেছেটা কি সেটা তো বল”।

সরলাদেবী বললেন, “মেয়েটা বলেছে যে ও ওর মা বাবার পছন্দ মতই বিয়ে করবে। কিন্তু তাকে ভেবে দেখবার জন্য ক’টা দিন সময় দিতে হবে। আর বারো ক্লাসের পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে বিয়ে করবে না”।

______________________________
 ss_sexy
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 24-02-2020, 09:00 PM



Users browsing this thread: 10 Guest(s)