Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#15
(Update No. 31)

ভগবান এমন দুঃখ লিখেছিলেন বলেই ওর এমনটা হয়েছে। হয়তো ও ওর আগের কোন জন্মের কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছে। কিন্তু আপনাদের মত জীবনে অভিজ্ঞ অনেকেই বলে যে, যা হয় তা ভালর জন্যই হয়। ভগবান যা করেন তা নাকি ভাল জন্যে করেন। দেখবেন, চিরদিন এমন অবস্থা থাকবে না। আপনার বড় মেয়ের জীবনেও একদিন না একদিন সুদিন আসবেই”।

বিধুবাবু বললেন, “তোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুক মা। ঈশরের কাছ দু’বেলা তো শুধু সেই প্রার্থনাই করছি আমি। আমার অর্চুর কপালে একটু সুখ আসুক”।

সীমন্তিনী এবার বিভুবাবুর একটা হাত নিজের হাতে ধরে বলল, “মেসোমশাই, রচনার বিয়েটা এমনভাবে দেবেন না দয়া করে। ও লেখাপড়ায় এত ভাল। ওকে যতটা সম্ভব পড়তে দিন। আজকাল তো মেয়েরাও লেখাপড়া শিখে অনেকে অনেক কিছু করছে। ওকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিন”।

বিধুবাবু আহত গলায় জবাব দিলেন, “কোন বাবা মা কি চায় তার সন্তানেরা সুখ না পাক? আমরাও তা চাইনা মা। কিন্তু ওদের কাউকেই তো উচ্চশিক্ষা দেবার ক্ষমতা আমার নেই। রচুর কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ওকে দু’বছরের স্কলারশিপ দেওয়াতেই ওকে এখনও পড়াতে পারছি। কিন্তু বারো ক্লাস পেরিয়ে গেলে বোধ হয় আর স্কলারশিপও পাওয়া যাবে না। তখন ওকে কী করে পড়াব বল? পূজো আচ্চা করে যা দু’পয়সা হাতে আসে তাতে তো সংসারের খাওয়া পড়ার খরচই জুটিয়ে উঠতে পারিনা মা। রচুকে আরও পড়াবার কথা তো ছেড়েই দাও, খোকার ভবিষ্যতে কী হবে সেটা নিয়েও তো খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে আমার। গেলবার পূজোর সময় কাউকে একটা নতুন গামছাও কিনে দিতে পারিনি আমি। ছেলেমেয়ে দুটো পুরোন জামাকাপড় পড়েই প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে ঘুরে পূজো দেখেছে। রচু তো অনেক বুদ্ধিমতী। আমাদের অবস্থাটা ও বেশ ভাল ভাবেই বোঝে। মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলে না। কিন্তু অবুঝ খোকা একটা নতুন শার্ট নেবার জন্য কত কান্নাকাটিই না করল। বুকে পাথর চাপা দিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে ওর কান্না শুনে গিয়েছিলাম শুধু। একজন অপারগ বাবার পক্ষে এটা যে কত বড় দুঃখ, সে তুমি বুঝতে পারবে না মা। তাই আমাকে ক্ষমা কোর তুমি। রচনার লেখাপড়ার ব্যাপারে তোমাকে কোনও প্রতিশ্রুতি আমি দিতে পাচ্ছি না”।

বিধুবাবুর কথা শুনতে শুনতে সীমন্তিনীর চোখ দুটো আবার জলে ভরে এল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “মেসোমশাই, রচনাকে এ’টুকু সময়ে আমি আমার ছোটবোনের মত ভালবেসে ফেলেছি। তাই আপনার কাছে অনুরোধ করছি, রচনার জন্য কোন বিয়ের সম্মন্ধ এলে, কাউকে কোন প্রতিশ্রুতি দেবার আগে, আপনি আমাকে জানাবেন। আমি চাই না ওর দিদির মত ওর কপালেও কোন দুঃখ দুর্ভোগ নেমে আসুক। আর আমি নিজেও চেষ্টা করব ওর জন্য একটা ভাল পাত্র খুঁজে বের করতে। এ’টুকু কথা তো আপনি আমাকে দিতেই পারেন মেসোমশাই”।

বিধুবাবু নিজের চোখের কোনা মুছে সীমন্তিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “জানিনা মা, তোমার সাথে রচুর দেখা হবার পেছনে ভগবানের উদ্দেশ্য কী। তবে তোমাকে কথা দিচ্ছি, রচুর বিয়ের কোন প্রস্তাব এলে

______________________________
 
 
(Update No. 32)

সবার আগে আমি তোমাকে জানাব। কিন্তু মা, তুমি তো আর রোজ এখানে আসতে পারবে না। আর আমাদের ঘরে ফোন মোবাইল কিছুই নেই। কি করে তোমার কাছে খবর পাঠাব বল”?

সীমন্তিনী বলল, “আমি সে’সব রচনাকে বুঝিয়ে দেব মেসোমশাই। আর রচনার কাছে আমার ঠিকানাও লিখে দিয়ে যাব। যদি কোনভাবেই আমার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, তাহলে একটা চিঠি লিখে অন্ততঃ আমাকে জানাবেন”।

বিধুবাবু বললেন, “ঠিক আছে মা। আমার আরেকটা মেয়ের এ অনুরোধটুকু আমি রাখবার চেষ্টা করব”।

সীমন্তিনী খাট থেকে নেমে বিধুবাবুকে প্রণাম করে বলল, “আপনি যখন আমাকে আপনার আরেকটা মেয়ে বলে স্বীকার করলেন, তাহলে আমিও কিন্তু আজ থেকে এ বাড়িরই আরেকটা মেয়ে হয়ে গেলাম মেসোমশাই”।

বিধুবাবু সীমন্তিনীর মাথায় হাত রেখে বললেন, “অবশ্যই মা। তুমিও আজ থেকে আমার আরেকটা মেয়ে হলে”।

সীমন্তিনী বিধুবাবুকে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে প্রায় দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে বলল, “ও মাসি, এদিকে এস তো”।

বিভাদেবী চমকে উঠে বললেন, “ওমা! কি হল তোমার”?

সীমন্তিনী বিভাদেবীকে আর একটা প্রণাম করে বলল, “মেসো আমাকে তার আরেকটা মেয়ে বানিয়ে নিয়েছেন। তাই আমি তো তোমারও মেয়ে হয়ে গেলাম। তাই তোমাকে প্রণাম করে জানতে চাইছি আমি তোমারও মেয়ে হলাম তো আজ থেকে”?

বিভাদেবী সীমন্তিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “পাগলী মেয়ে তুমি একটা। আমি তো তোমাকে আগেই মেয়ে বলে ভেবে নিয়েছি গো। তাই তো আমার এ মেয়েটাকে রাত করে যেতে দিইনি আমি”।

সীমন্তিনী খুশীতে একটা ছোট বাচ্চার মত লাফাতে লাফাতে বলল, “তাহলে আমাকে আর তুমি তুমি করে বলছ কেন? রচুকে যেমন তুই তুই করে বল, আমাকেও তেমনি করে বল। আমিও কিন্তু আর তোমাকে বা মেসোকে আপনি আপনি করে বলব না”।

বিভাদেবী সীমন্তিনীর গালে হাত বুলিয়ে বললেন, “ঠিক আছে, তাই বলব”।

______________________________
 
 
(Update No. 33)

সীমন্তিনী এবার রচনার দিকে ঘুরে তার একটা হাত ধরে বলল, “এই যে রূপসী রচনা। এখন থেকে আমি তোমারও সত্যি সত্যি দিদি হলুম। আমি কিন্তু এখন থেকে তুই তোকারি করে কথা বলব তোর সাথে। আর কোন রকম বেচাল দেখলেই কিন্তু তোকে শাসন করব। মনে রাখিস”।

রচনা সীমন্তিনীর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “তোমার মত একটা দিদি পেয়ে আমিও খুব খুশী হলাম, তাই ভাইয়ের মত আমিও তোমাকে দিদিভাই বলে ডাকব এখন থেকে”।

সীমন্তিনী বলল, “শোন রচু, শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না। আমি যেমন মেয়ে হয়ে মাসি মেসোকে প্রণাম করলাম, তেমনি তোকেও কিছু একটা করে আমাদের দিদিবোনের সম্পর্কটাকে পাকা করে তুলতে হবে”।

রচনা হেসে জিজ্ঞেস করল, “ঠিক আছে, আমিও তোমাকে প্রণাম করছি” বলে নিচু হতেই সীমন্তিনী তাকে ধরে ফেলে বলল, “নারে, প্রণাম নয়, তোর কাছ থেকে আমি অন্য কিছু চাইব। তবে এখন নয়। রাতে ঘুমোবার আগে বলব। আর শোন আমি কিন্তু তোর সাথেই শোব রাতে”।

রচনা হেসে বলল, “তাছাড়া আর শোবার জায়গা কোথায় যে শোবে”?

রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে রচনার ঘরে এসে নিজের ব্যাগ থেকে রাইটিং প্যাড আর কলম বের করে তাতে নিজের নাম, ফোন নাম্বার আর জলপাইগুড়ির ঠিকানা লিখে কাগজটা রচনাকে দিয়ে সীমন্তিনী বলল, “এটা রাখ। ভাল করে রাখবি। হারিয়ে যেন না যায়। এতে আমার ফোন নাম্বার আর ঠিকানা লিখে দিলাম। যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে আমাকে ফোন করবি বা চিঠি লিখে জানাবি”।

চালাকি করে নিজের পদবী ছেড়ে শুধু নামটুকুই লিখে দিয়েছিল সীমন্তিনী সে কাগজটাতে। বিছানায় সীমন্তিনীকে পাশে নিয়ে শুয়ে রচনা জিজ্ঞেস করল, “তোমার বোনের কাছ থেকে কী চাইবে বলছিলে, বলবে না দিদিভাই”?

সীমন্তিনী রচনার একটা গালের ওপর নিজের একটা হাত আলতো করে রেখে জিজ্ঞেস করল, “তুই কি খুব মিথ্যে কথা বলিস”?

রচনা অবাক হয়ে উল্টে জিজ্ঞেস করল, “ওমা? আমি আবার কখন কি মিথ্যে কথা বললাম তোমার কাছে”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “সে’কথা বলছি না রে। জানতে চাইছি, তুই মিথ্যে কথা বলিস কি না”।

রচনা সরল গলায় বলল, “আমি কোনদিন কাউকে মিথ্যে কথা বলি না দিদিভাই। তবে হ্যা, প্রয়োজনে কারো কারো কাছে কিছু কথা লুকিয়ে যাই”।

______________________________
 
 
 
(Update No. 34)

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আমাকে তোর ভাল লেগেছে কিনা জানিনা। কিন্তু তোকে সেদিন প্রথম দেখেই আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম রে। তাই তো আজ এখানে আসবার পর থেকে মনটা তোকে দেখবার জন্য ছটফট করছিল। ভাগ্যিস কাবেরীর সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে গিয়েছিল। তাই তো তোর কাছে আসতে পেলাম। তোকে আরও বেশী ভাল লেগে গেল। আজকের দিনটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে রে”।

রচনা সীমন্তিনীর হাতটা নিজের গালের ওপর চেপে ধরে বলল, “আমারও তোমাকে খুব ভাল লেগেছে দিদিভাই। নইলে আমার মনের এতসব কথা তোমাকে খুলে বলতাম আমি”?

সীমন্তিনী রচনার কপালে আদর করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমার কাছেও কোন কথা লুকিয়ে যাবি”?

রচনা বলল, “তোমার সাথে যে সব প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছি, তাতে কিছুই লুকোইনি তোমার কাছে”?

সীমন্তিনী আবেগ ভরা গলায় বলল, “তাহলে আমাকে কথা দে, ভবিষ্যতেও আমাকে কোনদিন মিথ্যে কথা বলবি না। আমার কাছে কিচ্ছু লুকোবি না”।

রচনা সীমন্তিনীর মুখের দিকে শান্ত চোখে কয়েকমূহুর্ত চেয়ে থেকে বলল, “ঠিক আছে, কথা দিলাম। তুমি যদি আমার কোন গোপন কথা অন্য কারো সাথে শেয়ার না কর, তাহলে আমিও তোমার কাছে কক্ষনও কিছু লুকোব না দিদিভাই”।

সীমন্তিনী বলল, “তুই কিন্তু আমাকে ছুঁয়ে কথা দিলি। মনে রাখিস কোনদিন যদি আমাকে মিথ্যে বলিস আমি কিন্তু সেদিনই মরে যাব”।

রচনা শোয়া থেকে প্রায় লাফ দিয়ে উঠে সীমন্তিনীর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, “দিদিভাই। এমন কথা কিন্তু আর কক্ষনও বলবে না বলে দিচ্ছি”।

সীমন্তিনী শোয়া অবস্থাতেই রচনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা, আর বলব না। তবে কথাটা মনে রাখিস”।

রচনা প্রায় নিজের মনেই বলে উঠল, “আজ প্রথমবার আমার জীবনে এমন একজনকে পেলাম, যার সাথে আমি মন খুলে এত কথা বলতে পারছি। জানিনা কপালে কি আছে। কিন্তু তোমার ওপর সব কিছু ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে আমার দিদিভাই”।

______________________________
 
 
 
(Update No. 35)

সীমন্তিনী বলল, “আর দুটো বছর অপেক্ষা কর। আমাকে আইপিএস হতে দে। তারপর দেখিস তোর সব কিছুর ভার আমি নিয়ে নেব”।

রচনা উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আইপিএস হতে চাও দিদিভাই? কেন গো”?

সীমন্তিনী বলল, “সেটাই যে আমার জীবনের প্রথম টার্গেট বানিয়েছি রে। আচ্ছা এবার সত্যি করে একটা কথা বল তো রচু। তুই কোন ছেলেকে ভালবাসিস? লুকোবিনা কথা দিয়েছিস কিন্তু”।

রচনা হেসে বলল, “আমি জানতুম, দিদিভাই। এ প্রশ্নটা তুমি আমাকে করবেই”।

সীমন্তিনীও হেসে বলল, “তোর মত এত সুন্দরী, এতো লেখাপড়ায় ভাল একটা মেয়েকে অনেক ছেলেই যে প্রেম নিবেদন করবে সেটা তো জানা কথাই। কিন্তু আমি জানতে চাইছি তুই কাউকে মন দিয়েছিস কি না। যদি তেমন কেউ থাকে তো বল। আমি যেভাবেই হোক তার সাথেই তোর বিয়ে দেবার চেষ্টা করব”।

রচনা বলল, “নাগো দিদিভাই। এই তোমার গা ছুঁয়ে বলছি। আমার জীবনে সত্যি তেমন কেউ নেই। তবে তোমার কথাও ঠিক। প্রেম নিবেদন অনেকেই করেছে। কিন্তু আমি হাতজোড় করে তাদের সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি। তখন বললাম না তোমাকে? নিজে কাউকে পছন্দ করে মা বাবার মনে কষ্ট দিতে চাই না আমি। আর প্রেমের ব্যর্থতা নিয়ে নিজেই নিজের দুঃখ বাড়াতে চাই না”।

সীমন্তিনী বলল, “তাহলে তোর জন্যে তো আমাকেই ছেলে খুঁজতে হবে দেখছি। তা আমি যদি কাউকে তোর জন্য পছন্দ করি তাকে বিয়ে করবি তো? না আমার মুখ নষ্ট করবি”?

রচনা বলল, “তোমার পছন্দের ছেলেকে আমি না দেখেই বিয়েতে রাজি হয়ে যাব, দিদিভাই”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “এতখানি ভরসা করতে পারছিস আমার ওপর”?

রচনা বলল, “কারনটা জানতে চাইলে বলতে পারব না ঠিকই। কিন্তু জানিনা, এ’টুকু সময়েই কেন যেন তোমার ওপর চোখ মুদে ভরসা করতে পারছি”।

সীমন্তিনী রচনার হাতে আদর করে হাত বুলিয়ে বলল, “তাহলে এবার আমি আমার জিনিসটা চাইব তোর কাছে, দিবি তো”?

রচনা বলল, “আমার সাধ্যের বাইরের কিছু না হলে অবশ্যই দেব তোমাকে দিদিভাই। বল কী চাও”।

______________________________
 
 
(Update No. 36)

সীমন্তিনী রচনার একটা হাতের তালুর ওপর নিজের গাল পেতে ধরে বলল, “আমি শুধু তোর দিদি নয়, তোর বান্ধবীও হতে চাই। বল, আমার বান্ধবী হতে রাজি আছিস”?

রচনা হেসে সীমন্তিনীর মাথা জড়িয়ে ধরে বলল, “হ্যা গো দিদিভাই, আজ থেকে তুমি আমার দিদি হবার সাথে সাথে আমার বান্ধবীও হলে। কিন্তু তাই বলে তোমাকে তুই তোকারি করে কথা বলতে বোল না আবার। সেটা কিন্তু পারব না আমি”।

সীমন্তিনী রচনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ রচু সোনা আমার”।

*************
পরদিন সকালে কালচিনি থেকে রওনা হয়ে সীমন্তিনী জলপাইগুড়ি এসে পৌঁছল প্রায় বারোটা নাগাদ। সতীশ অধীর আগ্রহে তার জন্যে অপেক্ষা করেছিল। সীমন্তিনী ঘরে ঢুকতেই সতীশ তাকে একের পর এক অনেকগুলো প্রশ্ন করল। সীমন্তিনী সতীশের হাত ধরে তার বিছানায় বসতে বসতে বলল, “দাঁড়া দাঁড়া সতু। এত কথা তোকে বলার আছে যে কোনটা ছেড়ে কোনটা দিয়ে শুরু করি। দাঁড়া একগ্লাস জল খেয়ে নিই আগে। আচ্ছা রান্নাও তো করতে হবে রে, তাই না”?

সতীশ বলল, “তোর ফিরতে ফিরতে দুপুর হয়ে যাবে বলে আমি ডাল শব্জী করে রেখেছি। খাবার আগে ডিমের ওমলেট বানিয়ে নেব। হবে না”?

সীমন্তিনী খুশী গলায় বলল, “হবে না মানে? খুব ভাল করেছিস। তোকে সমস্ত ব্যাপারটা ভাল করে বুঝিয়ে বলতে পারব তাহলে” বলে ঢকঢক করে একগ্লাস জল খেয়ে বলল, “শোন ভাই, কালচিনির কথা তোকে পরে বলছি। তার আগে শোন, তুই তোর ব্যাগ গুছিয়ে নে। আজ সন্ধ্যের সময়ই তুই বাড়ি চলে যাবি। তোর মোবাইলে তো রচুর ছবি আছেই”।

সতীশ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “রচু? সে আবার কে”?

সীমন্তিনী বলল, “আরে রচনার কথা বলছি রে। ওর সাথে আমার ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। বাড়ির সকলে ওকে রচু বলে ডাকে বলে আমিও সেভাবেই ডাকতে শুরু করেছি”।

সতীশ খুশীতে প্রায় লাফিয়ে উঠে বলল, “তাহলে মেয়েটার সাথে আমাদের দাদাভাইয়ের বিয়েটা হচ্ছে”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “এখনও যদিও সে ব্যাপারে কোন কথাই হয় নি। তবে আমি তোকে বলছি, রচু দাদাভাইয়ের বৌ হয়ে আমাদের বাড়ি আসবেই আসবে। যে করেই হোক, আমি সেটা করবই। আচ্ছা তোকে বাড়ি গিয়ে কাকে কি বলতে হবে সেটা আগে ভাল করে শোন। আচ্ছা দাঁড়া, আগে তোর ফোনটা দে তো। আমার ফোনের ব্যাটারী ফুরিয়ে গেছে। বড়মার সাথে আগে একটু কথা বলে নিই” বলে নিজের মোবাইলটা চার্জে বসিয়ে দিল।

______________________________
 
 
(Update No. 37)

সতীশ নিজের মোবাইলটা দিদির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ইশ, বড়দি, তাড়াতাড়ি বল না ওদিকে কি কি হল? তুই তো এ’কথা সে’কথা বলেই সময় কাটাচ্ছিস শুধু। আমার ভেতরটা যে ছটফট করছে রে”।

সীমন্তিনী সতীশের মোবাইল থেকে বাড়ির ফোনে কল করে বলল, “আর একটা মিনিট দাঁড়া ভাই। আমিও তো তোকে কথাগুলো না বলা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না”।

ও’পাশ থেকে কেউ ফোন ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই সীমন্তিনী তার মায়ের গলা চিনতে পারল। কিন্তু তার মা যে তার সাথে কথা বলবেন না সেটা তার জানাই আছে। তাই সে বলল, “আমি মন্তি বলছি”।

ও’পাশ থেকে আর সাড়া নেই। কিন্তু তার মা যে বড়মাকে ডাকছেন সেটা বোঝা গেল। খানিক বাদেই সরলাদেবীর গলা শোনা গেল, “হ্যা, মন্তি বল। তোরা ভাল আছিস তো”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “হ্যা বড়মা, আমি আর ভাই দু’জনেই ভাল আছি। একটা সুখবর তোমাকে দেবার আছে”।

সরলাদেবী খুশী হয়ে বললেন, “সত্যি বলছিস মা? যাক তোর সুমতি হয়েছে তাহলে। আমি আজই মন্দিরে গিয়ে তোর নামে মদন মোহনকে পূজো দেব”।

সীমন্তিনী বলল, “পূজো তুমি দিও বড়মা। কিন্তু আমার নামে নয়। তোমার বড়খোকার নামে দিও”।

সরলাদেবী বললেন, “মানে? কী বলছিস তুই”?

সীমন্তিনী বলল, “তোমার বড়ছেলের জন্য আমি একটা মেয়ে পছন্দ করেছি গো বড়মা। আর সে মেয়েকে দেখে তোমরাও সবাই পছন্দ করবে। তবে ফোনে এত কথা বলা সম্ভব নয়। সতু সন্ধ্যের দিকে বাড়ি যাচ্ছে। ও গিয়ে তোমাদের সব কিছু খুলে বলবে। মেয়ের ছবি, তার বাড়ির ঠিকানা, আর মেয়ের বাড়ির সব কথা সতুর মুখ থেকেই শুনতে পারবে তোমরা। ও মেয়ের পেছনে নিশ্চয়ই অনেক ছেলে অনেক ছেলের মা বাবারা লেগে আছে। তুমি কাল বা পরশুর মধ্যেই জেঠুকে মেয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেবে। পাঁজি দেখে দিনক্ষণ মূহুর্ত দেখে সময় নষ্ট করা চলবে না। সম্ভব হলে কালই পাঠিয়ে দিও। নইলে পরশু অবশ্যই পাঠাবে। তারপর জেঠু ফিরে এলে আমায় খবর দিও। বুঝেছ”?

সরলাদেবী উৎফুল্ল গলায় বলে উঠলেন, “সত্যি বলছিস তুই মা? কিন্তু বড়খোকা কি এতে রাজি আছে”?

সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “তোমাকে বড়খোকা ছোটখোকা কোন খোকার কথাই ভাবতে হবে না বড়মা। আমি তোমায় কথা দিয়েছিলুম, তোমার বড়ছেলের সংসার বসিয়ে দেব। আজ সে সুযোগ পেয়েছি। আমি

______________________________
 
 
(Update No. 38)

নিজে মেয়েটাকে দেখেছি। অমন একটা মেয়ে যে ঘরে যাবে সে ঘরের কপাল খুলে যাবে গো বড়মা। তাই যে করেই হোক, এ মেয়েটাকেই আমি তোমার বড়ছেলের বৌ করে তোমার কাছে আনব। তুমি শুধু দেখ, আমি যেমনটা বলছি, বাড়ির সকলে যেন সেটা করে। বাকিটা তুমি আমার ওপর ছেড়ে দাও”।

সরলাদেবী খুশীতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, “আচ্ছা আচ্ছা শোননা মা। একটু কিছু তো বল মেয়েটার সম্বন্ধে। নইলে মনটা যে খুব ছটফট করবে রে আমার। অন্ততঃ এটুকু তো বল মেয়েটা ', কি না, দেখতে কেমন”?

সীমন্তিনী বেশ জোরে বলল, “', কিনা মানে? তুমি তো আমায় কথা দিয়েছিলে যে আমি যাকে পছন্দ করব সে মুচি মেথর যাই হোক তাকেই তুমি তোমার বড়ছেলের বৌ হিসেবে মেনে নেবে। তার জাতপাত নিয়ে তুমি কোন রকম প্রশ্ন ওঠাবে না। তাহলে এখন আবার এমন কথা বলছ কেন? কিন্তু শোন বড়মা। তুমি তো জানই তোমার এ নষ্টা মেয়েটা কতটা জেদী। আমি যখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তখন ওই মেয়েটার সাথেই আমার দাদাভাইয়ের বিয়ে হবে। তোমরা গুরুজনেরা মানলেও হবে, না মানলেও হবে”।

সরলাদেবী থতমত খেয়ে বললেন, “তুই রাগ করছিস কেন রে মা? তুই যা বলছিস তাই হবে। কিন্তু মনে হাজারটা প্রশ্ন উঠছে বলেই তোকে ওভাবে বলে ফেলেছি। কিছু মনে করিস না মা আমার”।

সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে, কথাটা মনে রেখ। এ মেয়ের সাথেই দাদাভাইয়ের বিয়ে হবে। সতুকে বাড়ি পাঠাচ্ছি। ওর মুখে সব শুনতে পাবে। তবে আপাততঃ এটুকু জেনে রাখ, মেয়েটার নাম রচনা চক্রবর্তী। কিন্তু খুবই গরীব ঘরের মেয়ে। বলতে গেলে তাদের দিন আনতে পান্তা ফুরোয়। কিন্তু সে জন্যে যেন সম্মন্ধ ভেঙে না যায় মনে রেখ। বিয়ের সমস্ত খরচ খরচা আমাদের হবে। বাকি সব সতু গিয়ে বলবে তোমাদের। এখন আমি রাখছি। সতু রওনা হবার আগে আগে ওকে সবকিছু খুলে বলতে হবে তো” বলে ফোন কেটে দিল।

একটা বড় শ্বাস নিয়ে সতীশের হাত ধরে সীমন্তিনী বিছানায় বসতে বসতে বলল, “ভাই শোন, আমার বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে রে। চল খেতে খেতে তোকে ধীরে ধীরে সব কিছু বলি”।

কালচিনি যাবার পর থেকে যা যা হয়েছে, কার কার সাথে কি কি কথা হয়েছে সব কিছু খুলে বলল সতীশকে সীমন্তিনী। তারপর খাওয়া শেষ করে উঠে বলল, “ভাই তুই তোর ব্যাগটা চটপট গুছিয়ে নে। আমি বাসনগুলো ধুয়ে তোকে বলছি বাড়িতে গিয়ে কি কি করবি”।

মিনিট দশেক বাদেই সব কাজ সেরে সীমন্তিনী সতীশকে বলল, “শোন ভাই। বড়মাকে তো ফোনে বলেই দিয়েছি আমি। তুই গিয়ে তাদের সবকিছু খুলে বলিস। জেঠু সঙ্গে বাবা বা কাকুকে নিয়ে কাল সম্ভব না হলেও পরশু যেন অবশ্যই কালচিনি যান। তবে একটা কথা তাদেরকে বুঝিয়ে দিস। আগে রচুদের বাড়িতে কোন খবরাখবর না দিয়ে হুট করে গিয়ে পৌঁছলে ওরা সকলের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে উদবিঘ্ন হয়ে

______________________________
(Update No. 39)

পড়তে পারে। তাই জেঠুকে বলিস, তারা যেন ওখানে গিয়ে কোন হোটেলে আগে খেয়ে নেন। ওদের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে অতিথি সৎকার করবার জন্য তাদের ঘরে এক প্যাকেট বিস্কুটও হয়ত থাকবে না। তাই জেঠুরা যেন কোন ভাবে তাদের বিব্রত না করেন। আর তাদের বাড়ি যাবার আগে যেন কিছু ফল মিষ্টি নিয়ে যান। তবে একটা কথা তাদের সবাইকে ভাল মত বুঝিয়ে দিবি। ওখানে গিয়ে যেন তারা আমার ব্যাপারে কোন কথা না বলেন। আমরা যে ডিস্ট্রিক্ট অডিটোরিয়ামে রচনাকে দেখেই প্ল্যান করে এসব করছি, সেটা রচুদের বাড়ির লোকেরা এখনই জেনে ফেলুক এটা আমি চাই নে। রচুর মা বাবাকে তো আমাদের বাড়ির কথা বলতেই হবে। সবটাই তারা বলুক। কিন্তু আমার আর তোর নাম যেন তারা কেউ মুখে না আনেন। আমি মেসোকে আর রচুকে বলে এসেছি যে রচুর জন্যে কোন পাত্রপক্ষ তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা যেন আমাকে ফোন করে জানায়। আমি সেটাও একটু পরীক্ষা করে দেখতে চাই। জেঠুরা যেন গিয়ে বলেন কোন এক পরিচিত লোকের মুখে তারা রচনার কথা শুনেই সেখানে গেছেন। বুঝেছিস”?

সতীশ খুব উৎসাহের সাথে বলল, “এই বড়দি, আমিও যাব বাবা কাকুদের সাথে। তুই বারণ করিস না প্লীজ”।

সীমন্তিনী মনে মনে একটু ভেবে নিয়ে বলল, “তুই তো ওকে দেখেছিসই সতু। তাহলে এখন আবার যেতে চাইছিস কেন? ডুয়ার্সের শোভা দেখতে”?

সতীশ সীমন্তিনীর হাত ধরে আব্দারের সুরে বলল, “লক্ষী দিদি আমার। তুই মানা করিস নে প্লীজ। বৌদিকে তো আমি তোর মত অত কাছে থেকে দেখিনি”।

সীমন্তিনী একটু কৌতুক করে বলল, “বারে ছেলে, এখনই সে তোর বৌদি হয়ে গেল”!

সতীশ হেসে বলল, “তুই যখন ওর পেছনে লেগেছিস, তাহলে আমাদের বৌদি না হয়ে ওর আর কোন উপায় আছে”?

সীমন্তিনী হেসে সতীশের মাথার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল, “তুইও একটা পাগল। কিন্তু ভাই, তুই গেলে যে আমার প্ল্যানটা ফেল হয়ে যাবে রে। তোর নাম শুনলেই তারা বুঝে ফেলবেন যে তুই আমার ভাই। কাল ওদের বাড়ি থেকে তোকে যখন ফোন করেছিলাম, তখন আমি তো তোকে নাম ধরে সতু বলে ডেকেছিলাম। ওরা সকলেই সেটা শুনে থাকবেন। তাই জেঠু বা কাকুরা যখন তোকে তাদের সামনে তোর নাম ধরে ডাকবেন তখন তো তারা বুঝে ফেলবেন। তাই তোর এখন যাওয়াটা একেবারেই ঠিক হবে না। তবে আমি তোকে কথা দিচ্ছি ভাই। আমি নিজে তোকে সাথে নিয়ে ওদের বাড়ি যাব। আর খুব শিগগীরই যাব”।

সতীশ সীমন্তিনীর হাত খামচে ধরে বলল, “সত্যি বড়দি? তুই কথা দিচ্ছিস”?

______________________________
 
 
 
(Update No. 40)

সীমন্তিনী স্নেহের হাঁসি হেসে বলল, “হ্যা রে পাগলা। তোর দিদি তোকে কথা দিচ্ছে। আর শোন, জেঠুরা কালচিনি থেকে ফিরে এলে সেখানে কি কথা হল তা সব কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ জেনে নিয়ে তুই আমাকে ফোন করবি। তখন তোকে বলে দেব কখন কি করতে হবে। আর ছোটকাকুকে বলিস, জেঠুরা যখন কালচিনি রওনা হবে তখন তাদের সাথে যেন একটা নতুন ভাল মোবাইল সেট দিয়ে দেন আমার জন্য। আর সেই সাথে একটা প্রিপেইড সিমও যেন পাঠান। আমি তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেব”।

সতীশ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুই আবার নতুন মোবাইল নিতে চাইছিস কেন? এটা কি খারাপ হয়ে গেছে”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “আমার জন্যে নয় সেটা। সেটা তোর হবু বৌদির জন্য, বুঝেছিস? ওর সাথে আমাদের যোগাযোগ রাখতে হবে না? তবে এ’কথাটা বাড়িতে কাউকে বলিস না। বাড়িতে যেন সবাই জানে যে এটা আমার জন্যেই নিচ্ছি আমি। একটা ভাল দামী সেট দিতে বলিস। আর এয়ারটেলের সিম দিতে বলিস। অবশ্য আমিও আজ রাতে বা কাল ছোটকাকুকে সব বুঝিয়ে বলব। আর শোন, এক রাতের ভেতরেই জেঠুরা পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিয়ে কাল সকালেই হয়ত রওনা হতে পারবেন না। পরশু যাওয়াই ভাল হবে। আর বলিস তারা যদি কালচিনি যাবার পথে আমার সাথে দেখা করতে এখানে আসতে চান, তাহলে কালচিনি গিয়ে পৌঁছতে দেরী হয়ে যাবে। তাই আমিই গিয়ে তাদের সাথে দেখা করব। আমাকে শুধু জানিয়ে দিস তাদের সাথে কোথায় গিয়ে দেখা করব আমি। আর শোন, শিলিগুড়ি থেকে কালচিনি যাবার অনেক পথ ও মাধ্যম আছে। জেঠুদের যেভাবে যেতে ইচ্ছে করে সেভাবেই তারা যেতে পারেন। জেঠুরা যদি জলপাইগুড়ি হয়ে যেতে চান, তাহলে আমি জলপাইগুড়ি ষ্টেশনেই তাদের সাথে দেখা করব। আমার নতুন ফোনটাও তখন কাকুর কাছ থেকে নিয়ে নেব। আর যদি তারা বাসে যেতে চান তাহলে আমি বাসস্ট্যাণ্ডে গিয়ে তাদের সাথে দেখা করব। কিন্তু আটটায় এখান থেকে আলিপুরদুয়ার যাবার বাসে চাপলে তারা আলিপুরদুয়ারে গিয়ে পৌছবেন বেলা প্রায় এগারটা নাগাদ। তারপর সেখান থেকে কালচিনির বাস ধরে গেলে তারা প্রায় বারোটায় গিয়ে পৌছবেন কালচিনি। আর কালচিনিতে নেমে তারা খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়ে দুটো আড়াইটে নাগাদ একটা অটো ভাড়া করে যেন ওদের বাড়ি যান। আমি তোকে কাগজে নক্সা করে লিখে বুঝিয়ে দেব সব। সেটা তুই জেঠুকে বুঝিয়ে দিস। তবু কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন করলেই হল। তবে একটা কথা তাদের সবাইকে খুব ভাল করে বুঝিয়ে দিবি, কালচিনিতে তাদের বাড়িতে গিয়ে তারা কেউ যেন তোর আর আমার নাম মুখে না আনেন, আর ওই বাড়িতে তারা যতক্ষন থাকবেন ততক্ষণ যেন তোর বা আমার মোবাইলে কোন ফোন না করেন”।

সতীশ বলল, “দাঁড়া দাঁড়া বড়দি। তুই এত সব ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছিস যে আমি বোধহয় সব গুলিয়েই ফেলব। দাঁড়া, আমি কাগজে নোট করে নিচ্ছি” বলে রাইটিং প্যাড আর কলম নিয়ে বসে লিখতে লিখতে বলতে লাগল, “মেয়ের নাম রচনা চক্রবর্তী। বাবার নাম শ্রী বিধূভূষন চক্রবর্তী। তারপর বাড়ির ঠিকানা। হ্যা হল। তারপর ট্রেন রুট। এনজেপি বা জলপাইগুড়ি রোড ষ্টেশন থেকে নিউ আলিপুরদুয়ারে পৌঁছবে,

______________________________
 
 
(Update No. 41)

তারপর সময় নষ্ট না করে অটো নিয়ে আলিপুরদুয়ার জংশন- সেখান থেকে কালচিনি, ঠিক আছে তো বড়দি”?

সীমন্তিনী বলল। “হ্যা ঠিক আছে। আর বাস রুটটাও নোট কর”।

সতীশ আবার লিখতে লখতে বলল, “বাসে গেলে জলপাইগুড়ি থেকে সকাল আলিপুরদুয়ার তিন ঘন্টা। তারপর আলিপুরদুয়ার থেকে বাস ধরে কালচিনি পৌঁছতে আরও একঘন্টা লাগবে। তারপর হোটেলে খাওয়া দাওয়া সেরে দুটো আড়াইটে নাগাদ অটো ভাড়া নিতে হবে। তারপর ওদের বাড়ির ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। ওঃ হ্যা, আরো আছে তো। তোর জন্যে মোবাইল সেট আর এয়ারটেলের সিম। তারপর তোর সাথে দেখা করার লোকেশান। আর ওদের বাড়ি গিয়ে তোর বা আমার নাম মুখে আনা যাবে না। আর ফিরবেন ক’টায় তারা”?

সীমন্তিনী বলল, “ওখান থেকে আলিপুরদুয়ারের লাস্ট বাস ছাড়ে বিকেল পাঁচটায়। তবে শেষ গাড়ি বলে আলিপুরদুয়ারে পৌঁছোতে দেরী হতে পারে। তারপর বাস বা ট্রেন কখন কি পাওয়া যায় সেটা আমার ঠিক জানা নেই। সেটা তারা খবর নিয়ে দেখবেন। তবে জলপাইগুড়ি আসতে রাত হয়ে গেলে সে রাতে আমাদের এখানে থেকে তারা পরদিন বাড়ি যেতে পারবেন। এছাড়া কোনও গাড়ি ভাড়া করেও যেতে পারেন। শুধু আমাকে জানিয়ে দিতে বলিস। তাহলে আমি প্রিপায়ার্ড থাকব। তাদের জন্য রান্নাও করতে পারব”।

সতীশ সব কিছু নোট করে বলল, “হ্যা হয়েছে। আর কিছু লিখতে হবে বড়দি”?

সীমন্তিনী বলল, “কাগজটা আমাকে দে, ওটাতে আমি কালচিনি ষ্টেশন থেকে রচুদের বাড়ি যাবার পথের নক্সা একে দিচ্ছি। তাহলে আর জেঠুদের কোন অসুবিধেই হবে না। তবে ভাই, যারা যাবেন তাদের কিন্তু ভাল করে বুঝিয়ে দিবি যে ওখানে গিয়ে তারা যেন ভুলেও তোর আর আমার নাম মুখে উচ্চারণ না করেন।
আর কে কে যাবেন সেটা তারাই ঠিক করুক। তবে আমার মনে হয় জেঠু, বাবা আর ছোটকাকুর সাথে বড়মাও যদি যান, তাহলে খুব ভাল হয়। আমি দাদাভাই আর ছোটকাকুর সাথে কাল কথা বলব। তবে তুই আজ রাতেই বাড়ির সকলকে একসাথে নিয়ে বসে কথাটা বলবি। দাদাভাই যদি কোন কারনবশতঃ সবার সাথে একসাথে বসতে না চায় তাহলে তাকে আলাদা ভাবেও বলতে পারিস। কিন্তু আমি কি উদ্দেশ্য নিয়ে কালচিনি গিয়েছিলাম এটা যেন সকলেই এখন রচুদের বাড়ির সকলের কাছে গোপন রাখেন, এ কথাটাও সবাইকেই ভাল করে বুঝিয়ে দিবি। অবশ্য ছোটকাকু গেলে আমার আর চিন্তা থাকবে না। অন্য কেউ মুখ ফস্কে কিছু বলে ফেললেও ছোটকাকু সেটা সামাল দিতে পারবেন”।

সীমন্তিনীর সব কথা হৃদয়ঙ্গম করে সতীশ সন্ধ্যে ছ’টার গাড়িতে বাড়ি চলে গেল।



*****************************************************************
ss_sexy
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 24-02-2020, 08:58 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)