24-02-2020, 11:46 AM
[৯]
বিয়ের পর থেকে দেবাযানীই গুঞ্জনকে সপ্তাহে একদিন স্নান করায়।অন্য দিন ভিজে গামছা দিয়ে গা-হাত-পা মুছিয়ে দেন। ঐ ভারী শরীর রোজ রোজ কি স্নান করানো সম্ভব।মনে পড়লো দুলু মেয়ে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, আমার এক প্রতিবন্ধি বোন আছে আমার সঙ্গে তাকেও দেখা শোনা করতে হবে।পাত্র যাতে না ফসকে যায় সেজন্য না ভেবে চিন্তেই দেবযানী ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন।এখন তার ঠেলা সামলাতে হচ্ছে। বুঝতে পারছেন দু-মণি বস্তা দেখাশোনা কি চারটিখানি কাজ?নাইটি তুলে গামছা দিয়ে রগড়াতে গিয়ে দেখেছেন রঙ যেন ফেটে পড়ছে।ননদের প্রতি তখন আর রাগ হয়না।ভগবান কেন যে ঠাকুর-ঝিকে এইশাস্তি দিলেন?নীরা যদি ঠাকুর-ঝির রঙের কণামাত্র পেত তাহলে আর বিয়ের জন্য চিন্তা করতে হত না। গুঞ্জনের গা মুছিয়ে এবার ওয়াকার থেকে চেয়ারে বসাতে হবে দেবযানী ছেলেকে ডাকলেন,সঞ্জু একবার এদিকে আয় তো বাবা।
সঞ্জয় আর দেবযানী ধরাধরি করে রাঙাপিসিকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিল। রাঙাপিসি বসতে বসতে জিজ্ঞেস করে,পলতু এতেচে?
দেবযানী ছেলের সঙ্গে চোখাচুখি করে মুচকি হাসলেন। লুলোটার সব দিকে খেয়াল আছে। ঘর থেকে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন দেবযানী,পল্টু এসেছিল?
--হ্যা চলে গেছে। পল্টুদা না অনেক বদলে গেছে।চুপচাপ বেশি কথা বলেনা।নীরা বলল।
--ওর বাবা কতবড় ডাক্তার, দেখবি পল্টুও একদিন ডাক্তার হবে।চা করেছিস? আমাকে একটু চা দে।
দেবযানী নিজের ঘরে চলে গেলেন। নীরার মনে হল মা কথাটা তাকে শুনিয়ে বলল। মনে মনে বলে,ডাক্তার হল তো বয়ে গেল।
পল্টু বাড়ী ফিরতে মনোরমা ফ্রিজ থেকে সরবত এনে দিল।সরবতের গেলাসে চুমুক দিচ্ছে মমের হাত তার ঘাড়ে মাথায় ঘুর ঘুর করছে। বেশ মজা লাগে, পল্টু কি সেই আগের মত ছোটোটি আছে?অথচ মম এমন ব্যবহার করে ভীষণ লজ্জা করে আবার ভালও লাগে। সরবতের গেলাস শেষ করে মমকে জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করে,মম তুমি ঐ সোফায় বোসো।আমি তোমার কোলে মাথা রেখে বিশ্রাম করবো।
মনোরমা সোফায় বসে হেসে বললেন,তুই কোনো দিন বড় হবি না?
মমের কোলে মাথা রেখে ফিক ফিক করে হাসে পল্টু। একটূ আগে এমন ভাবে গায়ে হাত বোলাচ্ছিল যেন সে বাচ্চা ছেলে।আর এখন বলছে তুই কি বড় হবিনা।
--পরীক্ষা হয়ে গেলেই জয়েণ্টের ফরম দেবে।তুই একটু খেয়াল রাখিস।
এইবার অন্য মম। ছেলেকে স্বামীর মত ডাক্তার করতে হবে।কলিং বেল বাজে নীচে।
--ওঠ বাবা,মনে হচ্ছে মিতা এল।
--মম তুমি বোসো,আমি দরজা খুলে দিয়ে আসছি।
মম ঠিকই বলেছে মিতা মাসী এসেছে। মিতা উপরে আসতে মম চাবি দিয়ে বলল, আগে খাবার করো।
--কি করবো?
--স্যাণ্ডুইচ করো তিনজনের।তুমি যাও,আমি আসছি।
মিতা চলে যেতে মনোরমা বলল,তুই কি বেরোবি?
--কেন কোনো দরকার আছে?
--যদি বাইরে যাস তাহলে গোবিন্দ ষ্টোর্সে বলে আসবি লিষ্ট পাঠিয়েছি জিনিসগুলো তো পাঠালো না? মাখন একদম নেই।
বাড়ীতে মালপত্তর পাঠিয়ে দেয় সামান্য সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে।গোবিন্দ ষ্টোরস বড় রাস্তার কাছে। পল্টু চা জলখাবার খেয়ে কলেজের পোষাক বদলে বের হল। দোকানদারকে কিছু বলার আগেই বললেন,এখনই ডাক্তারবাবুর মাল যাচ্ছে।
সন্ধ্যে হয় নি কয়েক সপ্তা পর পরীক্ষা বাড়ীর দিকে পা বাড়ালাম।সামনের মোড়ে দলবল নিয়ে আড্ডা মারছে দিলীপ।ওকে দেখে অন্য পথ ধরলাম।এই রাস্তা দিয়েও পাড়ায় যাওয়া যায় একটু সময় বেশি লাগে। প্রান্তিকের পাশ দিয়ে বাঁক নিয়ে আমাদের পাড়ার রাস্তা।হাপাতে হাপাতে দিলীপ এসে বলল,কিরে পল্টূ আজ এই পথে? আমাকে দেখে ঘুর পথ ধরলি?
হেসে বললাম,তোর ভয়ে।
দিলীপ এরকম উত্তর আশা করেনি বলল,আমি কি সেই কথা বললাম?
--কোন পথ আমার পছন্দ সেটা কি তুই ঠিক করে দিবি?
--বুঝেছি আমরা খারাপ ছেলে তাই এড়িয়ে যেতে চাইছিস।দিলীপের গলায় হতাশা।
--ভাল হতে কে বাঁধা দিয়েছে?ভাল হলেই পারিস।
--সে তুই বুঝবি না।একদিন তোকে সব বলবো। মণিকা আণ্টি একদিন মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছিল আজ শালা দিলীপ খারাপ হয়ে গেল। বুঝিনা এখন বড় গাছে নাও বেধেছে--।
--দিলীপ এসব আমার ভাল লাগছে না।তাছাড়া আমি শুনে কি করবো তুই বল?
--ঠিকই অন্যের ঝামেলায় কেউ চায় না নিজেকে জড়াতে।দিলীপের কথায় অভিমানের ছোয়া।
--দিলীপ রাগ করিস না,আমি তোকে খারাপ ভাবি না। তুই পড়াশুনা ছাড়লি কেন বল?
--আজ তুই ব্যস্ত তোকে পরে একদিন সব বলবো।পল্টু তোর উপর আমার কোনো রাগ নেই।দিলীপ আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
দিলীপের সঙ্গে একটু রুঢ় ব্যবহার করেছি ভেবে খারাপ লাগলো।উপর থেকে দেখে মানুষকে চেনা যায় না ভিতরে কত ভাঙচুর চলছে।অন্য মনষ্ক ভাবে হেটে চলেছি। মুখ তুলে তাকাতে দেখলাম সামনে তিন তলায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এক মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।মুখ ঘুরিয়ে নিলাম, পাগল নাকি?
ফ্লাটের নীচে আসতে শুনতে পেলাম ভদ্রমহিলা আমার নাম ধরে ডাকছেন। আমাকে চেনেন নাকি?
মুখ তুলে তাকাতে উনি ইশারা করলেন উপরে যেতে।দ্বিধায় পড়ে গেলাম উপরে যাওয়া কি ঠিক হবে? রাস্তাঘাটে লোকজন নেই,এই রাস্তায় লোক চলাচল কম। মুখ তুলে আবার উপরে তাকাতে চকিতে মনে পড়ল মিস অঞ্জু নয়তো?বছর দুই আগের কথা পিকনিকে দেখা হয়েছিল,এখনো নামটা মনে রেখেছেন?
সিড়ি ভেঙ্গে তিনতলায় উঠে দেখলাম দরজায় লেখা কে.এ.অঞ্জনা।কলিং বেলে চাপ দেবার আগেই দরজা খুলে গেল।এবার চিনতে অসুবিধে হল না,আসলে পিকনিকে সারাক্ষণ চোখে ছিল সানগ্লাস।
--এসো ভিতরে এসো।ফুলের মত হাসি দিয়ে আহবন জানালেন।
ভিতরে ঢুকতে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সোফায় বসতে বলে বললেন,এক মিনিট আমি আসছি।
বেশ ছিমছাম পরিপাটি করে সাজানো,একপাশে টেবিলে ফোন। দেওয়ালে ঝোলানো কয়েকটি অয়েল পেণ্টিং।কিছুক্ষণ পর মিস অঞ্জু একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল নিয়ে ঢুকলেন।
--ভেবেছিলাম তুমি আসবে।আজ না দেখলে হয়তো কোনোদিন আসতে না তাই না?
বোতলটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,আপনি খাবেন না?
--আমি তো রোজই খাচ্ছি।কতকাল পরে এখানে বসে অন্য একজনকে দিলাম।
--একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
--স্বচ্ছন্দে। তোমার যা ইচ্ছে তাই জিজ্ঞেস করতে পারো।
মিস অঞ্জনা আমার সামনে বসলেন। কথাটা জিজ্ঞেস করা সমীচীন হবে কিনা ভাবতে ভাবতে বলেই ফেললাম,দরজায় লেখা কে এ অঞ্জনা--আপনার পুরো নাম কি?
--খাদিজা আক্তার অঞ্জনা।
খাদিজা যেন কোথায় শুনেছি এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না কিন্তু সিওর নামটা আগে শুনেছি।মিস অঞ্জনা জিজ্ঞেস করলেন,কি ভাবছো?
--না কিছু না মানে আপনার নামটা--।
খিলখিল হেসে উঠলেন,আমি জিজ্ঞেস করলাম,মিস অঞ্জনা আমি কি বোকার মত কিছু বললাম?
--তা নয় তার আগে একটা কথা বলি তুমি আমাকে মিস মিস করবে না শুধু অঞ্জনা বলবে।কেন হাসলাম জানো?নামটা তোমার শোনা শোনা লাগছে।স্বাভাবিক ইতিহাসে পড়েছো হয়তো --নবী হযরতের(স) প্রথম বিবির নাম খাদিজা বেগম।
--হ্যা-হ্যা ঠিক বলেছেন।
--এর অর্থ অপরিপক্ক।তোমার কোনো ভাল নাম নেই?একটাই নাম?
--কলেজে আমার নাম অনঙ্গদেব সোম।
--অনঙ্গ মানে কি জানো?
--অঙ্গ নেই যার।
--মুলত পুরুষাঙ্গ বোঝানো হয়েছে।
আমি মাথা নীচু করি কি সব বলছেন অঞ্জনা।
--তোমাকে ঘটনাটা বলি,রতিপতি কামদেব মহাদেবের ধ্যান ভঙ্গ করলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে ভস্মীভুত করেন। তখন রতি মহাদেবকে তুষ্ট করলে তার স্বামীর অঙ্গটি ফিরিয়ে দেন।
--আপনি * মাইথলজিও পড়েন?
অঞ্জনা উঠে পল্টূর পাশে এসে বসে বললেন,তোমাকে আমি যদি দেব বলি তোমার আপত্তি আছে?
--ঠিক আছে ইচ্ছে হলে দেবই বলবেন।
অঞ্জনা আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,আমরা তাহলে বন্ধু হলাম? জানো দেব কলেজ থেকে ফিরে এত একা লাগে দম বন্ধ হয়ে আসে।আজ আমার খুব ভাল লাগছে তোমাকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে।তুমি কথা দাও মাঝে মাঝে আসবে।
--কদিন পর আমার পরীক্ষা।পরীক্ষার পর আসবো।
--আমাকে তোমার কেমন লেগেছে বলো?
--এক পলকের দেখায় খারাপ লাগেনি।তবে কি বাইরে থেকে দেখে মানুষকে বোঝা যায় না।
--তোমার স্পষ্ট কথা আমার ভাল লেগেছে।তোমার পরীক্ষা আমি তোমাকে আটকাবো না,তুমি কথা দিয়েছো পরীক্ষার পর মাঝে মাঝে বন্ধুর কাছে আসবে।
সত্যি কথা বলতে কি অঞ্জনাকে খুব ভাল লেগেছে।কেমন সুন্দর কথা বলেন। মহিলার অনেক পড়াশুনা আছে কথা বললে বোঝা যায়।শিক্ষিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেও মনের আরাম হয়।
বিয়ের পর থেকে দেবাযানীই গুঞ্জনকে সপ্তাহে একদিন স্নান করায়।অন্য দিন ভিজে গামছা দিয়ে গা-হাত-পা মুছিয়ে দেন। ঐ ভারী শরীর রোজ রোজ কি স্নান করানো সম্ভব।মনে পড়লো দুলু মেয়ে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, আমার এক প্রতিবন্ধি বোন আছে আমার সঙ্গে তাকেও দেখা শোনা করতে হবে।পাত্র যাতে না ফসকে যায় সেজন্য না ভেবে চিন্তেই দেবযানী ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন।এখন তার ঠেলা সামলাতে হচ্ছে। বুঝতে পারছেন দু-মণি বস্তা দেখাশোনা কি চারটিখানি কাজ?নাইটি তুলে গামছা দিয়ে রগড়াতে গিয়ে দেখেছেন রঙ যেন ফেটে পড়ছে।ননদের প্রতি তখন আর রাগ হয়না।ভগবান কেন যে ঠাকুর-ঝিকে এইশাস্তি দিলেন?নীরা যদি ঠাকুর-ঝির রঙের কণামাত্র পেত তাহলে আর বিয়ের জন্য চিন্তা করতে হত না। গুঞ্জনের গা মুছিয়ে এবার ওয়াকার থেকে চেয়ারে বসাতে হবে দেবযানী ছেলেকে ডাকলেন,সঞ্জু একবার এদিকে আয় তো বাবা।
সঞ্জয় আর দেবযানী ধরাধরি করে রাঙাপিসিকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিল। রাঙাপিসি বসতে বসতে জিজ্ঞেস করে,পলতু এতেচে?
দেবযানী ছেলের সঙ্গে চোখাচুখি করে মুচকি হাসলেন। লুলোটার সব দিকে খেয়াল আছে। ঘর থেকে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন দেবযানী,পল্টু এসেছিল?
--হ্যা চলে গেছে। পল্টুদা না অনেক বদলে গেছে।চুপচাপ বেশি কথা বলেনা।নীরা বলল।
--ওর বাবা কতবড় ডাক্তার, দেখবি পল্টুও একদিন ডাক্তার হবে।চা করেছিস? আমাকে একটু চা দে।
দেবযানী নিজের ঘরে চলে গেলেন। নীরার মনে হল মা কথাটা তাকে শুনিয়ে বলল। মনে মনে বলে,ডাক্তার হল তো বয়ে গেল।
পল্টু বাড়ী ফিরতে মনোরমা ফ্রিজ থেকে সরবত এনে দিল।সরবতের গেলাসে চুমুক দিচ্ছে মমের হাত তার ঘাড়ে মাথায় ঘুর ঘুর করছে। বেশ মজা লাগে, পল্টু কি সেই আগের মত ছোটোটি আছে?অথচ মম এমন ব্যবহার করে ভীষণ লজ্জা করে আবার ভালও লাগে। সরবতের গেলাস শেষ করে মমকে জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করে,মম তুমি ঐ সোফায় বোসো।আমি তোমার কোলে মাথা রেখে বিশ্রাম করবো।
মনোরমা সোফায় বসে হেসে বললেন,তুই কোনো দিন বড় হবি না?
মমের কোলে মাথা রেখে ফিক ফিক করে হাসে পল্টু। একটূ আগে এমন ভাবে গায়ে হাত বোলাচ্ছিল যেন সে বাচ্চা ছেলে।আর এখন বলছে তুই কি বড় হবিনা।
--পরীক্ষা হয়ে গেলেই জয়েণ্টের ফরম দেবে।তুই একটু খেয়াল রাখিস।
এইবার অন্য মম। ছেলেকে স্বামীর মত ডাক্তার করতে হবে।কলিং বেল বাজে নীচে।
--ওঠ বাবা,মনে হচ্ছে মিতা এল।
--মম তুমি বোসো,আমি দরজা খুলে দিয়ে আসছি।
মম ঠিকই বলেছে মিতা মাসী এসেছে। মিতা উপরে আসতে মম চাবি দিয়ে বলল, আগে খাবার করো।
--কি করবো?
--স্যাণ্ডুইচ করো তিনজনের।তুমি যাও,আমি আসছি।
মিতা চলে যেতে মনোরমা বলল,তুই কি বেরোবি?
--কেন কোনো দরকার আছে?
--যদি বাইরে যাস তাহলে গোবিন্দ ষ্টোর্সে বলে আসবি লিষ্ট পাঠিয়েছি জিনিসগুলো তো পাঠালো না? মাখন একদম নেই।
বাড়ীতে মালপত্তর পাঠিয়ে দেয় সামান্য সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে।গোবিন্দ ষ্টোরস বড় রাস্তার কাছে। পল্টু চা জলখাবার খেয়ে কলেজের পোষাক বদলে বের হল। দোকানদারকে কিছু বলার আগেই বললেন,এখনই ডাক্তারবাবুর মাল যাচ্ছে।
সন্ধ্যে হয় নি কয়েক সপ্তা পর পরীক্ষা বাড়ীর দিকে পা বাড়ালাম।সামনের মোড়ে দলবল নিয়ে আড্ডা মারছে দিলীপ।ওকে দেখে অন্য পথ ধরলাম।এই রাস্তা দিয়েও পাড়ায় যাওয়া যায় একটু সময় বেশি লাগে। প্রান্তিকের পাশ দিয়ে বাঁক নিয়ে আমাদের পাড়ার রাস্তা।হাপাতে হাপাতে দিলীপ এসে বলল,কিরে পল্টূ আজ এই পথে? আমাকে দেখে ঘুর পথ ধরলি?
হেসে বললাম,তোর ভয়ে।
দিলীপ এরকম উত্তর আশা করেনি বলল,আমি কি সেই কথা বললাম?
--কোন পথ আমার পছন্দ সেটা কি তুই ঠিক করে দিবি?
--বুঝেছি আমরা খারাপ ছেলে তাই এড়িয়ে যেতে চাইছিস।দিলীপের গলায় হতাশা।
--ভাল হতে কে বাঁধা দিয়েছে?ভাল হলেই পারিস।
--সে তুই বুঝবি না।একদিন তোকে সব বলবো। মণিকা আণ্টি একদিন মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছিল আজ শালা দিলীপ খারাপ হয়ে গেল। বুঝিনা এখন বড় গাছে নাও বেধেছে--।
--দিলীপ এসব আমার ভাল লাগছে না।তাছাড়া আমি শুনে কি করবো তুই বল?
--ঠিকই অন্যের ঝামেলায় কেউ চায় না নিজেকে জড়াতে।দিলীপের কথায় অভিমানের ছোয়া।
--দিলীপ রাগ করিস না,আমি তোকে খারাপ ভাবি না। তুই পড়াশুনা ছাড়লি কেন বল?
--আজ তুই ব্যস্ত তোকে পরে একদিন সব বলবো।পল্টু তোর উপর আমার কোনো রাগ নেই।দিলীপ আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
দিলীপের সঙ্গে একটু রুঢ় ব্যবহার করেছি ভেবে খারাপ লাগলো।উপর থেকে দেখে মানুষকে চেনা যায় না ভিতরে কত ভাঙচুর চলছে।অন্য মনষ্ক ভাবে হেটে চলেছি। মুখ তুলে তাকাতে দেখলাম সামনে তিন তলায় ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এক মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।মুখ ঘুরিয়ে নিলাম, পাগল নাকি?
ফ্লাটের নীচে আসতে শুনতে পেলাম ভদ্রমহিলা আমার নাম ধরে ডাকছেন। আমাকে চেনেন নাকি?
মুখ তুলে তাকাতে উনি ইশারা করলেন উপরে যেতে।দ্বিধায় পড়ে গেলাম উপরে যাওয়া কি ঠিক হবে? রাস্তাঘাটে লোকজন নেই,এই রাস্তায় লোক চলাচল কম। মুখ তুলে আবার উপরে তাকাতে চকিতে মনে পড়ল মিস অঞ্জু নয়তো?বছর দুই আগের কথা পিকনিকে দেখা হয়েছিল,এখনো নামটা মনে রেখেছেন?
সিড়ি ভেঙ্গে তিনতলায় উঠে দেখলাম দরজায় লেখা কে.এ.অঞ্জনা।কলিং বেলে চাপ দেবার আগেই দরজা খুলে গেল।এবার চিনতে অসুবিধে হল না,আসলে পিকনিকে সারাক্ষণ চোখে ছিল সানগ্লাস।
--এসো ভিতরে এসো।ফুলের মত হাসি দিয়ে আহবন জানালেন।
ভিতরে ঢুকতে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সোফায় বসতে বলে বললেন,এক মিনিট আমি আসছি।
বেশ ছিমছাম পরিপাটি করে সাজানো,একপাশে টেবিলে ফোন। দেওয়ালে ঝোলানো কয়েকটি অয়েল পেণ্টিং।কিছুক্ষণ পর মিস অঞ্জু একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল নিয়ে ঢুকলেন।
--ভেবেছিলাম তুমি আসবে।আজ না দেখলে হয়তো কোনোদিন আসতে না তাই না?
বোতলটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,আপনি খাবেন না?
--আমি তো রোজই খাচ্ছি।কতকাল পরে এখানে বসে অন্য একজনকে দিলাম।
--একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
--স্বচ্ছন্দে। তোমার যা ইচ্ছে তাই জিজ্ঞেস করতে পারো।
মিস অঞ্জনা আমার সামনে বসলেন। কথাটা জিজ্ঞেস করা সমীচীন হবে কিনা ভাবতে ভাবতে বলেই ফেললাম,দরজায় লেখা কে এ অঞ্জনা--আপনার পুরো নাম কি?
--খাদিজা আক্তার অঞ্জনা।
খাদিজা যেন কোথায় শুনেছি এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না কিন্তু সিওর নামটা আগে শুনেছি।মিস অঞ্জনা জিজ্ঞেস করলেন,কি ভাবছো?
--না কিছু না মানে আপনার নামটা--।
খিলখিল হেসে উঠলেন,আমি জিজ্ঞেস করলাম,মিস অঞ্জনা আমি কি বোকার মত কিছু বললাম?
--তা নয় তার আগে একটা কথা বলি তুমি আমাকে মিস মিস করবে না শুধু অঞ্জনা বলবে।কেন হাসলাম জানো?নামটা তোমার শোনা শোনা লাগছে।স্বাভাবিক ইতিহাসে পড়েছো হয়তো --নবী হযরতের(স) প্রথম বিবির নাম খাদিজা বেগম।
--হ্যা-হ্যা ঠিক বলেছেন।
--এর অর্থ অপরিপক্ক।তোমার কোনো ভাল নাম নেই?একটাই নাম?
--কলেজে আমার নাম অনঙ্গদেব সোম।
--অনঙ্গ মানে কি জানো?
--অঙ্গ নেই যার।
--মুলত পুরুষাঙ্গ বোঝানো হয়েছে।
আমি মাথা নীচু করি কি সব বলছেন অঞ্জনা।
--তোমাকে ঘটনাটা বলি,রতিপতি কামদেব মহাদেবের ধ্যান ভঙ্গ করলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে ভস্মীভুত করেন। তখন রতি মহাদেবকে তুষ্ট করলে তার স্বামীর অঙ্গটি ফিরিয়ে দেন।
--আপনি * মাইথলজিও পড়েন?
অঞ্জনা উঠে পল্টূর পাশে এসে বসে বললেন,তোমাকে আমি যদি দেব বলি তোমার আপত্তি আছে?
--ঠিক আছে ইচ্ছে হলে দেবই বলবেন।
অঞ্জনা আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,আমরা তাহলে বন্ধু হলাম? জানো দেব কলেজ থেকে ফিরে এত একা লাগে দম বন্ধ হয়ে আসে।আজ আমার খুব ভাল লাগছে তোমাকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে।তুমি কথা দাও মাঝে মাঝে আসবে।
--কদিন পর আমার পরীক্ষা।পরীক্ষার পর আসবো।
--আমাকে তোমার কেমন লেগেছে বলো?
--এক পলকের দেখায় খারাপ লাগেনি।তবে কি বাইরে থেকে দেখে মানুষকে বোঝা যায় না।
--তোমার স্পষ্ট কথা আমার ভাল লেগেছে।তোমার পরীক্ষা আমি তোমাকে আটকাবো না,তুমি কথা দিয়েছো পরীক্ষার পর মাঝে মাঝে বন্ধুর কাছে আসবে।
সত্যি কথা বলতে কি অঞ্জনাকে খুব ভাল লেগেছে।কেমন সুন্দর কথা বলেন। মহিলার অনেক পড়াশুনা আছে কথা বললে বোঝা যায়।শিক্ষিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেও মনের আরাম হয়।