23-02-2020, 09:39 PM
আমি খুশিতে নেচে উঠেছিলাম প্রায় আমি কি বলে ওকে আমার মনের ভাব বুঝাব সেটা ভেবে পাইনা। আমি সংবাদ পেয়েছিলাম যে ও আমার সাথে কোন ভাবে সম্পর্ক করবে। আমি ওর হাত দুটি ধরে একটু নেচে উঠে বলি, “আমি রিতিকাকে ফোন করেছিলাম। ও রিতিকাকে ফোন করে জানিয়েছে যে বাবুর কথা এক বিন্দুও বিশ্বাস করেনি। ও আমার সাথে কিছু করে হোক সম্পর্ক করবে। আমি খুব খুশি জানিস আমার খুব নাচতে ইচ্ছে করছে। ও যে আমার ওপরে বিশ্বাস হারায়নি সেটা যেনে আমি খুব আনন্দিত কল্যাণী।”
কল্যাণী আমার কথা শুনে খুব আনন্দিত হয়েছিল। ওর চোখ দুটি চকচক করে উঠেছিল।
কল্যাণী, “হ্যাঁরে শয়তান মেয়ে, তুই খুব ইমসানাল। সত্যি তোর জীবন দেখে মনে হয় যেন এক বিশাল ঘূর্ণিবার্তা।”
আমি ওর হাথ থেকে “অপটিক্স নোটবুক” নিয়ে বুকের ওপরে চেপে ধরেছিলাম। মনে মনে ওই পাতার প্রত্যেক অক্ষর বুকের রক্তের সাথে মিলিয়ে নিতে চেয়েছিলাম আমি। কল্যাণী আমাকে জিজ্ঞেস করে, “তুই এই ডায়রি নিয়ে কি করবি?”
আমি ওকে জানাই, “আজ থেকে আমি এই ডায়রি লিখব, আমার কথা লিখব।”
সেইরাত থেকে আমি আমার কথা লেখা শুরু করি। ও ইংরাজিতে ভালো, আমি বাংলায় আমার মনের কথা লিখতাম। ও চলে জোয়ার পরে আমার দিন দমদমের বাড়িতে কেমন কেটেছে সেই সব লিখতাম। কেমন আমার কলেজের দিন কেটেছে সেইসব স্মৃতি লিখেছিলাম আমি। সারা রাত জেগে আমি গত এক বছরের সব স্মৃতি লিখে ফেলি আমি। প্রত্যেক বাক্যের পরে আমি নিজেকে বলেছিলাম যে যখন আমাদের বয়স হবে তখন আমরা দুজনে মিলে এই ডায়রির পাতা একসাথে বসে পড়ব। লিখতে লিখতে আমি আমার টেবিলের অপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে দরজায় একটা টোকা শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি চোখ খুলে দেখি যে আমি টেবিলে শুয়ে। তাড়াতাড়ি করে ডায়রি আমি লুকিয়ে ফেলেছিলাম। আমি চাইনি কেউ আমার মনের কথা জেনে ফেলুক আর আমাদের ভালোবাসার মাঝে এক নতুন বাঁধা হয়ে আসুক।
পার্বতী বৌদি চলে যাবার পরে সুমন্তদা একদম অন্য মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। খুব কম কথা বলতেন দাদা। দাদার কোন সন্তান ছিল না তাই ছোটবেলা থেকে দাদার সব ভালোবাসা দুষ্টুর ওপরে কেন্দ্রীভূত ছিল। প্রত্যেক দিন বিকেলে মাঠের থেকে ফেরার সময়ে সুমন্তদা দুষ্টুর জন্য ফল নাহয় মিষ্টি নিয়ে ফিরতেন। মাঝে মাঝে কাঁধে করে নিয়ে ঘুরে আসতেন মাঠের দিকে।
একরাতে আমি আমার ঘরে বসে কলেজের পড়াশুনা করতে ব্যাস্ত ছিলাম সেই সময়ে দাদা আমার ঘরে এসে ঢোকেন। দাদার হাতে একটা কাঠের বাক্স। আমি সেই বাক্স চিনতে পেরে যাই, বড় বউদির গয়নার বাক্স।
আমি দাদাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “এটা কি?”
দাদা আমকে বলেন, “তোর বৌদি এটা তোকে দিতে বলেছিলেন।”
আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত রাখে দাদা, চোখের কোলে জল এসে গিয়েছিল দাদার, নজর লুকিয়ে জল মুছে আমার হাথে ওই বাক্স ধরিয়ে দেন।
আমি অনাকে জিজ্ঞেস করি, “তুমি খুব ক্লান্ত দাদা, তুমি এখন কি করবে?”
দাদা মাথার ওপরে ঘুরন্ত পাখার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলেন, “জানিনা এখন তবে একটা কিছু ভেবে রেখেছি, তোর বিয়ের জন্য অপেক্ষা করছি তারপরে দেখি কি করি।”
আমি দাঁতে পেন ধরে দাদার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি যে দাদা কি করবেন, বাঁ কি ভেবে রেখেছেন নিজের জন্য।
দিন যায়, প্রায় প্রত্যেক দিন মা আমাকে ওর কথা জিজ্ঞেস করে। একদিন আমি আর থাকতে না পেরে মাকে জিজ্ঞেস করি মা এত কেন বিচলিত ওকে নিয়ে। মা উত্তর দিয়েছিলেন, “কেন আমি ওর জন্য চিন্তা করতে পারি না? আমার নাতি হয়। কিন্তু একটা কথা আমি বুঝতে পারছিনা, যত বার আমি ওর কথা তোকে জিজ্ঞেস করি ততবার তুই আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যাস, কেন বলত? সত্যি করে বল, অভি কোথায় আছে?”
আমি মায়ের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “ও এখন দিল্লীতে চাকরি করে।”
আমি খুব বিরক্ত বোধ করতাম যখন কেউ আমাকে বারে বারে ওর কথা জিজ্ঞেস করত। আমি কি করে জানব আমার ভালোবাসা কোথায়, আমি নিজেই ওকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াই আমার চারপাশে।
মা আমকে বললেন, “অনেক দিন ছেলেটার গলার আওয়াজ শুনিনি, মন কেমন করে ওঠে আমার। একবার ফোন করে দেখ না ওকে, আমি একটু কথা বলব?”
আমি ধন্ধে পরে গিয়েছিলাম, কি বলব মাকে, ধিরে ধিরে মায়ের দিকে জল ভরা চোখে তাকাই। মায়ের তীক্ষ্ণ নজর আমার হৃদয় ভেদ করে দেয়। আমি মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে উত্তর দিয়েছিলাম, “আসলে, মা, ও এখন দেশের বাইরে।”
আমার বিচলিত চোখমুখ দেখে মা আমার গালে হাত দিয়ে বলেন, “তুই সত্যি বলছিস না আমার কাছে কিছু লুকিয়ে রাখছিস।”
আমি প্রায় কেঁদে ফেলি, কিন্তু মন শক্ত করে নিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “না মা, আমি সত্যি কথা বলছি। পরের বার আমাকে যখন ফোন করবে আমি ওকে জানিয়ে দেব তোমাকে ফোন করতে।”
আমি সেইদিন জানতাম না, যে আদৌ ও আমার সাথে আর কোনদিন কথা বলবে কি না। আমি জানতাম না কি করে আমার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চলেছে। আমার সব থেকে বড় ভয় মায়ের প্রতিক্রিয়া কি হবে যখন মা জানতে পারবেন আমাদের ভালোবাসার সংবাদ, আমার মা কি আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবেন না ছোটমায়ের মতন আমার ভালোবাসা প্রত্যাখান করে দুরে সরিয়ে দেবেন। এই সময়ে ও যদি আমার কাছে থাকত, তাহলে নিশ্চয় কিছু না কিছু উপায় ভেবে আমাকে সাহায্য করত, কিন্তু বিধি যে বাম, ও যখন আমার পাশে নেই তখন আমাকেই ওর মতন ভেবে কাজ করতে হবে। আমার প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে করতে হবে যাতে আমি মায়ের মনের ভাব বুঝতে পারি। বুকের মাঝে দুকদুক করতে শুরু করে, আমি মাকে জড়িয়ে ধরি দুহাতে।
মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “কিরে তুই কি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাস?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বলেছিলাম, “হ্যাঁ মা।”
মা আমার মুখের পানে চেয়ে জিজ্ঞেস করেন, “তোর বাবুর সাথে অভিমন্যুর কি কোন কথা কাটাকাটি হয়েছে?”
মায়ের মুখে সেই প্রশ্ন শুনে আমি থমকে যাই, সত্যি তাহলে কি বাবু মাকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে?
বুকের মাঝে হৃদপিণ্ড যেন থমকে দাঁড়িয়ে পরে, আমি মাকে জিজ্ঞেস করি, “এই রকম প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করছ?”
মা, “অর্জুন কে আমি অভিমন্যুর কথা জিজ্ঞেস করাতে, তোর বাবু আমাকে ঠিক করে উত্তর দিল না। শুধু মাত্র আমাকে বলে যে অভি দিল্লীতে চাকরি করতে গেছে।”
আমি শ্বাস রুদ্ধ করে মায়ের কথা শুনি, কান লাল হয়ে ওঠে আমার। মনের উত্তাল তরঙ্গ কোন রকমে চেপে আমি মায়ের প্রশ্নের উত্তর দেই, “না মা, বাবুর সাথে ওর কোন ঝগড়া হয়নি। গ্রাজুয়েশানের পরে দিল্লীতে চাকরি খুঁজতে চলে গেছে।”
মুখে পান নিয়ে মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “কিন্তু কোলকাতায় চাকরি করতে পারত, দিল্লী কেন যেতে গেল?”
আমি মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, “ওসব তুমি বুঝবে না মা। কোলকাতায় কোন আইটি কম্পানি নেই তাই দিল্লী গেছে চাকরি খুঁজতে।”
আমার গালে হাত বুলিয়ে মা জিজ্ঞেস করেন, “তুই আমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করবি বলছিলি?”
আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমি কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম, আমি এমনি মাকে জিজ্ঞেস করি, “মা ও তোমাকে শেষের দিনে কি বলে গেছিল?”
মা ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “সে কথা তুই জেনে কি করবি?”
আমি মাথা নিচু করে নিয়েছিলাম, বুকের মাঝে ধুকধুক করে ওঠে প্রবল ভাবে। মা আমার চিবুকে হাত রেখে মাথা উঁচু করে ধরেন নিজের দিকে, আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলাম, চোখের পাতা জলে ভিজে গিয়েছিল। মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “সত্যি করে বলত আমায়, অভি শুধু মাত্র চাকরির খোঁজে দিল্লী চলে যায়নি তাই তো।”
কল্যাণী আমার কথা শুনে খুব আনন্দিত হয়েছিল। ওর চোখ দুটি চকচক করে উঠেছিল।
কল্যাণী, “হ্যাঁরে শয়তান মেয়ে, তুই খুব ইমসানাল। সত্যি তোর জীবন দেখে মনে হয় যেন এক বিশাল ঘূর্ণিবার্তা।”
আমি ওর হাথ থেকে “অপটিক্স নোটবুক” নিয়ে বুকের ওপরে চেপে ধরেছিলাম। মনে মনে ওই পাতার প্রত্যেক অক্ষর বুকের রক্তের সাথে মিলিয়ে নিতে চেয়েছিলাম আমি। কল্যাণী আমাকে জিজ্ঞেস করে, “তুই এই ডায়রি নিয়ে কি করবি?”
আমি ওকে জানাই, “আজ থেকে আমি এই ডায়রি লিখব, আমার কথা লিখব।”
সেইরাত থেকে আমি আমার কথা লেখা শুরু করি। ও ইংরাজিতে ভালো, আমি বাংলায় আমার মনের কথা লিখতাম। ও চলে জোয়ার পরে আমার দিন দমদমের বাড়িতে কেমন কেটেছে সেই সব লিখতাম। কেমন আমার কলেজের দিন কেটেছে সেইসব স্মৃতি লিখেছিলাম আমি। সারা রাত জেগে আমি গত এক বছরের সব স্মৃতি লিখে ফেলি আমি। প্রত্যেক বাক্যের পরে আমি নিজেকে বলেছিলাম যে যখন আমাদের বয়স হবে তখন আমরা দুজনে মিলে এই ডায়রির পাতা একসাথে বসে পড়ব। লিখতে লিখতে আমি আমার টেবিলের অপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে দরজায় একটা টোকা শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি চোখ খুলে দেখি যে আমি টেবিলে শুয়ে। তাড়াতাড়ি করে ডায়রি আমি লুকিয়ে ফেলেছিলাম। আমি চাইনি কেউ আমার মনের কথা জেনে ফেলুক আর আমাদের ভালোবাসার মাঝে এক নতুন বাঁধা হয়ে আসুক।
পার্বতী বৌদি চলে যাবার পরে সুমন্তদা একদম অন্য মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। খুব কম কথা বলতেন দাদা। দাদার কোন সন্তান ছিল না তাই ছোটবেলা থেকে দাদার সব ভালোবাসা দুষ্টুর ওপরে কেন্দ্রীভূত ছিল। প্রত্যেক দিন বিকেলে মাঠের থেকে ফেরার সময়ে সুমন্তদা দুষ্টুর জন্য ফল নাহয় মিষ্টি নিয়ে ফিরতেন। মাঝে মাঝে কাঁধে করে নিয়ে ঘুরে আসতেন মাঠের দিকে।
একরাতে আমি আমার ঘরে বসে কলেজের পড়াশুনা করতে ব্যাস্ত ছিলাম সেই সময়ে দাদা আমার ঘরে এসে ঢোকেন। দাদার হাতে একটা কাঠের বাক্স। আমি সেই বাক্স চিনতে পেরে যাই, বড় বউদির গয়নার বাক্স।
আমি দাদাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “এটা কি?”
দাদা আমকে বলেন, “তোর বৌদি এটা তোকে দিতে বলেছিলেন।”
আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত রাখে দাদা, চোখের কোলে জল এসে গিয়েছিল দাদার, নজর লুকিয়ে জল মুছে আমার হাথে ওই বাক্স ধরিয়ে দেন।
আমি অনাকে জিজ্ঞেস করি, “তুমি খুব ক্লান্ত দাদা, তুমি এখন কি করবে?”
দাদা মাথার ওপরে ঘুরন্ত পাখার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলেন, “জানিনা এখন তবে একটা কিছু ভেবে রেখেছি, তোর বিয়ের জন্য অপেক্ষা করছি তারপরে দেখি কি করি।”
আমি দাঁতে পেন ধরে দাদার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করি যে দাদা কি করবেন, বাঁ কি ভেবে রেখেছেন নিজের জন্য।
দিন যায়, প্রায় প্রত্যেক দিন মা আমাকে ওর কথা জিজ্ঞেস করে। একদিন আমি আর থাকতে না পেরে মাকে জিজ্ঞেস করি মা এত কেন বিচলিত ওকে নিয়ে। মা উত্তর দিয়েছিলেন, “কেন আমি ওর জন্য চিন্তা করতে পারি না? আমার নাতি হয়। কিন্তু একটা কথা আমি বুঝতে পারছিনা, যত বার আমি ওর কথা তোকে জিজ্ঞেস করি ততবার তুই আমার প্রশ্ন এড়িয়ে যাস, কেন বলত? সত্যি করে বল, অভি কোথায় আছে?”
আমি মায়ের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “ও এখন দিল্লীতে চাকরি করে।”
আমি খুব বিরক্ত বোধ করতাম যখন কেউ আমাকে বারে বারে ওর কথা জিজ্ঞেস করত। আমি কি করে জানব আমার ভালোবাসা কোথায়, আমি নিজেই ওকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াই আমার চারপাশে।
মা আমকে বললেন, “অনেক দিন ছেলেটার গলার আওয়াজ শুনিনি, মন কেমন করে ওঠে আমার। একবার ফোন করে দেখ না ওকে, আমি একটু কথা বলব?”
আমি ধন্ধে পরে গিয়েছিলাম, কি বলব মাকে, ধিরে ধিরে মায়ের দিকে জল ভরা চোখে তাকাই। মায়ের তীক্ষ্ণ নজর আমার হৃদয় ভেদ করে দেয়। আমি মনের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে উত্তর দিয়েছিলাম, “আসলে, মা, ও এখন দেশের বাইরে।”
আমার বিচলিত চোখমুখ দেখে মা আমার গালে হাত দিয়ে বলেন, “তুই সত্যি বলছিস না আমার কাছে কিছু লুকিয়ে রাখছিস।”
আমি প্রায় কেঁদে ফেলি, কিন্তু মন শক্ত করে নিয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, “না মা, আমি সত্যি কথা বলছি। পরের বার আমাকে যখন ফোন করবে আমি ওকে জানিয়ে দেব তোমাকে ফোন করতে।”
আমি সেইদিন জানতাম না, যে আদৌ ও আমার সাথে আর কোনদিন কথা বলবে কি না। আমি জানতাম না কি করে আমার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চলেছে। আমার সব থেকে বড় ভয় মায়ের প্রতিক্রিয়া কি হবে যখন মা জানতে পারবেন আমাদের ভালোবাসার সংবাদ, আমার মা কি আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবেন না ছোটমায়ের মতন আমার ভালোবাসা প্রত্যাখান করে দুরে সরিয়ে দেবেন। এই সময়ে ও যদি আমার কাছে থাকত, তাহলে নিশ্চয় কিছু না কিছু উপায় ভেবে আমাকে সাহায্য করত, কিন্তু বিধি যে বাম, ও যখন আমার পাশে নেই তখন আমাকেই ওর মতন ভেবে কাজ করতে হবে। আমার প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে করতে হবে যাতে আমি মায়ের মনের ভাব বুঝতে পারি। বুকের মাঝে দুকদুক করতে শুরু করে, আমি মাকে জড়িয়ে ধরি দুহাতে।
মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “কিরে তুই কি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাস?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বলেছিলাম, “হ্যাঁ মা।”
মা আমার মুখের পানে চেয়ে জিজ্ঞেস করেন, “তোর বাবুর সাথে অভিমন্যুর কি কোন কথা কাটাকাটি হয়েছে?”
মায়ের মুখে সেই প্রশ্ন শুনে আমি থমকে যাই, সত্যি তাহলে কি বাবু মাকে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে?
বুকের মাঝে হৃদপিণ্ড যেন থমকে দাঁড়িয়ে পরে, আমি মাকে জিজ্ঞেস করি, “এই রকম প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করছ?”
মা, “অর্জুন কে আমি অভিমন্যুর কথা জিজ্ঞেস করাতে, তোর বাবু আমাকে ঠিক করে উত্তর দিল না। শুধু মাত্র আমাকে বলে যে অভি দিল্লীতে চাকরি করতে গেছে।”
আমি শ্বাস রুদ্ধ করে মায়ের কথা শুনি, কান লাল হয়ে ওঠে আমার। মনের উত্তাল তরঙ্গ কোন রকমে চেপে আমি মায়ের প্রশ্নের উত্তর দেই, “না মা, বাবুর সাথে ওর কোন ঝগড়া হয়নি। গ্রাজুয়েশানের পরে দিল্লীতে চাকরি খুঁজতে চলে গেছে।”
মুখে পান নিয়ে মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “কিন্তু কোলকাতায় চাকরি করতে পারত, দিল্লী কেন যেতে গেল?”
আমি মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, “ওসব তুমি বুঝবে না মা। কোলকাতায় কোন আইটি কম্পানি নেই তাই দিল্লী গেছে চাকরি খুঁজতে।”
আমার গালে হাত বুলিয়ে মা জিজ্ঞেস করেন, “তুই আমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করবি বলছিলি?”
আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমি কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম, আমি এমনি মাকে জিজ্ঞেস করি, “মা ও তোমাকে শেষের দিনে কি বলে গেছিল?”
মা ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “সে কথা তুই জেনে কি করবি?”
আমি মাথা নিচু করে নিয়েছিলাম, বুকের মাঝে ধুকধুক করে ওঠে প্রবল ভাবে। মা আমার চিবুকে হাত রেখে মাথা উঁচু করে ধরেন নিজের দিকে, আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলাম, চোখের পাতা জলে ভিজে গিয়েছিল। মা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “সত্যি করে বলত আমায়, অভি শুধু মাত্র চাকরির খোঁজে দিল্লী চলে যায়নি তাই তো।”