23-02-2020, 09:14 PM
(Update No. 26)
বিধুবাবু খাটের এক কোনায় বসে বললেন, “যাক বাবা। আমাকে তো তুমি খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে মা। প্রণাম করতে গিয়ে কেঁদে পা ভাসিয়ে দিলে আমাদের? আমার জীবনেও আমি এমন ঘটণার কথা শুনিনি”।
সীমন্তিনী নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “আমি আপনাদের ভয় পাইয়ে দিতে চাইনি মেসোমশাই। আসলে জ্ঞান হবার পর থেকে নিজের বাবা-মাকে কখনও এভাবে প্রণাম করার সুযোগ পাইনি। তাই বোধহয় একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম আমি। সেজন্যে আমাকে ক্ষমা করবেন মেসোমশাই”।
বিধুবাবু বললেন, “ঠিক আছে ঠিক আছে মা। তুমি ও নিয়ে ভেব না। রচু, তোরা এ ঘরে বসেই কথা বল। আমি একটু ওদিকে দেখছি” বলে আবার বাইরে চলে গেলেন।
সীমন্তিনী প্রসঙ্গ পাল্টে রচনাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা রচনা, তুমি তো এবারেই বারো ক্লাসে উঠছ। তা বারো ক্লাসের পর কি করবে ভাবছ”?
রচনা বলল, “জানিনা গো দিদি। আমার কপালে যে কী আছে কে জানে। বাবা তো মাধ্যমিকের পরেই আমায় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। শুধু আমাদের কলেজের প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমার স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে বারো ক্লাস অব্দি পড়ার সুযোগটা পেয়েছি। এরপর হয়ত আবার একটা আধবুড়ো দোজবর পাত্র খুঁজে এনে বাবা দিদির মত করেই আমারও একটা বিয়ে দিয়ে দেবেন”।
সীমন্তিনী রচনার কথা শুনে চমকে উঠে বলল, “কী বলছ তুমি রচনা? মাসিমা মেসোমশাই তোমাকে আধবুড়ো দোজবরের সাথে বিয়ে দেবেন”?
রচনা মাথা নিচু করে বলল, “তাদের আর কি দোষ দেব দিদি? অভাবের সংসারে যখন দু’দুটো মেয়েকে বিয়ে দেবার বোঝা কাঁধে চেপে বসে, তখন সব কন্যাদায়গ্রস্ত মা বাবাই বুঝি এমন করতে বাধ্য হয়। নইলে আমার দিদির কি এমন পরিণতি হত”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যা, তখন তুমি রাস্তাতেও তোমার দিদির ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছিলে। আমি তো একজন বাইরের মেয়ে। তাই জিজ্ঞেস করাটা হয়ত ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু তোমার দিদির ব্যাপারে আমার জানতেও খুব ইচ্ছে করছে”।
রচনা বলল, “দিদির কথা মনে পড়লেই মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় গো দিদি। ঘটকের মিথ্যে কথায় বিশ্বাস
করেই বাবা দিদির বিয়েতে মত দিয়েছিলেন। ঘটক বলেছিল, পাত্র পক্ষের কোন দাবীদাওয়া নেই। তাদের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল। ভাল বাড়িঘর। অনেক জমিজমা সম্পত্তি আছে তাদের। বাবার মনে হয়েছিল তার মেয়ের জন্য যেচে আসা এ সম্মন্ধটাকে হাতছাড়া করা একেবারেই উচিৎ হবেনা। তাই সে পাত্রের সাথেই দিদির বিয়ে দিয়েছিলেন। দিদি যখন দ্বিরাগমনে এসেছিল তখনও আমি অতটা বুঝিনি। কিন্তু বিয়ের মাস দুয়েক বাদে অনেক কষ্টে শ্বশুর বাড়ির লোকদের চোখে ফাঁকি দিয়ে দিদি আমাদের গ্রামের একটা লোকের
______________________________
(Update No. 27)
হাতে আমার নামে একটা চিঠি পাঠিয়েছিল। তাতে লিখেছিল যে আমার জামাইবাবুর আগের পক্ষের যে দুটো ছেলে আছে, তাদের একজনের বয়স বারো, আর অন্যজনের দশ। আর জামাইবাবু রোজ রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে দিদিকে মারধর করে। সারাদিন শ্বশুর শাশুড়ি তার ওপর নাকি অকথ্য অত্যাচার করে। এমনকি তার সৎ ছেলে দুটোও নাকি কারনে অকারনে দিদির ওপর হাত ওঠায়। দিদির অপরাধ শুধু এটুকুই যে সে বাপের বাড়ি থেকে কোন দান সামগ্রী কোন যৌতুক নিয়ে যেতে পারেনি। আর এ অপরাধেই দিদিকে মুখ বুজে শ্বশুর বাড়ির সমস্ত অত্যাচার সয়ে যেতে হচ্ছে”।
রচনার কথা শুনে সীমন্তিনী আঁতকে উঠে বলল, “ইশ, কি বলছ তুমি রচনা”?
রচনা নিজের চোখের কোলে এসে জমা হওয়া জলগুলো হাতের চেটোয় মুছতে মুছতে বলল, “হায়ার সেকেণ্ডারির পর তো কলেজে যেতে হবে। তখন আর আমাকে স্কলারশিপ পাবার ব্যবস্থা কে করে দেবে। আর ইচ্ছে থাকলেও বাবা আর আমাকে পড়াতে পারবেন না, জানি। তখন তো আমাকেও তারা বিয়ে দিতে চেষ্টা করবেন। যৌতুক দান সামগ্রী দেবার সামর্থ্য তার এখনও নেই। তাই আমার কপালেও হয়ত দিদির মত পরিণতিই লেখা আছে” বলতে বলতে রচনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।
সীমন্তিনীর বুকের ভেতরটা রচনার কান্না দেখে যেন মোচড় দিয়ে উঠল। দু’হাতে রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। অনেকক্ষণ বাদে রচনার কান্না থামতে সীমন্তিনী বলল, “তুমি দেখতে এত সুন্দর! এমন মিষ্টি। তোমার নিশ্চয়ই ভাল বিয়ে হবে দেখ রচনা। ভেঙে পোরো না। ভগবান তোমার প্রতি এতটা নিষ্ঠুর কখনই হবেন না”।
রচনা ম্লান হেসে বলল, “এটা যে শুধুই সান্ত্বনার কথা দিদি, সেটুকু বোঝবার ক্ষমতা আমার আছে গো। আমার দিদি তো আমার চেয়েও ঢের বেশী সুন্দরী ছিল। তার কপালে কেন তাহলে এমনটা হল, বলতে পার”?
সীমন্তিনী রচনাকে আরো জোরে নিজের বুকে চেপে ধরল। তার চোখ দুটোও জলে ভরে গেল। নিজের গলা দিয়েও যেন আর কথা বেরোচ্ছিল না তার। আর রচনা। প্রচণ্ড জলস্রোতে ভেসে যাওয়া একটা পিঁপড়ে যেভাবে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়, সেও যেন তেমনি ভাবে সীমন্তিনীকে আঁকড়ে ধরেছে। অনেকক্ষণ বাদে সীমন্তিনী নিজের চোখ মুছে নিয়ে রচনার চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “তুমি তো দেখতে খুব সন্দরী। কোন একটা ছেলেকে নিজে পছন্দ করে নিতে পার নি”?
রচনা আবার আগের মতই ম্লান হেসে বলল, “এমনটাও যে ভাবিনি, তা নয় দিদি। কিন্তু তাতেও কি কোন নিশ্চয়তা আছে, বল? কতজনকে তো দেখলাম, বছরের পর বছর ধরে প্রেম করেও বিয়ের সময় দেনা পাওনা নিয়ে মিটমাট না হতে বিয়ে ভেঙে চলে যায়। এমনও তো দেখেছি, ভালবেসে বিয়ে করা সত্বেও এক দু’বছর যেতে না যেতেই স্বামী-স্ত্রীর ভেতরে ভালবাসার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট থাকে না। সংসারে রোজ অশান্তি, রোজ ঝামেলা। তাই এমনটা করে নিজের মনের ওপর ব্যথার বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলে লাভ কি
______________________________
(Update No. 28)
বল? আর তাছাড়া সে ছেলেটাকে যদি বাবা মা পছন্দ না করেন, তাহলে সংসারে তো নিত্য অশান্তি শুরু হবে। প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বাবা মার মনে দুঃখ দিতেও আমি পারব না। তাই ভাগ্যের স্রোতে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আমার সামনে আর কোন পথ নেই দিদি”।
সীমন্তিনী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সে নিজেও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল এবার। অনেকক্ষণ পর এবার রচনাই সীমন্তিনীকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বলল, “ওঠো দিদি। কার জন্যে কে আর কি করতে পারে বল? যার যার ভাগ্য নিয়েই তো আমরা সবাই জন্মেছি। তাই ভাগ্যে যা আছে সেটাই মেনে নিতে হবে। এ কথাগুলো মনের ভেতর চেপে রেখে একা একাই কষ্ট পেয়েছি এতদিন। কাউকে বলতে পারিনি কোনদিন। আজ কেন জানিনা, তোমার কাছে সবকিছু খুলে বলে ফেলে তোমাকেও কষ্ট দিয়ে ফেললুম। আমাকে সেজন্যে ক্ষমা কোর দিদি”।
সীমন্তিনী আরো কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মুখ তুলে বলল, “দেখ রচনা। আমাদের মধ্যে তো তেমন চেনাজানা হয়নি এখনও। বলতে গেলে আজই আমরা দু’জন দু’জনের সাথে প্রথম আলাপ করছি। কিন্তু তোমাকে এখন একটা কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। তুমি খারাপ ভাববে না তো”?
রচনা শান্ত ভাবে বলল, “বল দিদি, আমি কিচ্ছু মনে করব না”।
সীমন্তিনী বলল, “আমি তোমাকে আমার ফোন নাম্বারটা দিয়ে যাব। তুমি কোন পিসিও থেকে আমাকে মাঝে মধ্যে ফোন করতে পারবে”?
রচনা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “জানিনা দিদি। আমার হাতে তো একটা পয়সাও থাকে না। তোমাকে ফোন করতে পারব কিনা, সেটাও বলতে পারছি না”।
সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা তোমাদের বাড়ির আশেপাশে কারো বাড়িতে ফোন নেই? ধর আমি যদি তাদেরকে ফোন করে তোমাকে ডেকে দিতে বলি, তারা তোমায় ডেকে দেবে না”?
রচনা একটু ভেবে বলল, “আমাদের পাশের বাড়িতে ফোন অবশ্য আছে। কিন্তু তুমি ফোন করলে তারা আমাকে ডেকে দেবেন কি না সেটা ঠিক বলতে পারছিনে”।
সীমন্তিনী বলল, “তোমার কোন বন্ধু বান্ধবের কারুর নিজের মোবাইল নেই”?
রচনা বলল, “হ্যা তা তো আছে বেশ কয়েকজনের। কিন্তু তারা তো কেউ আমাদের বাড়ির কাছাকাছি থাকে না দিদি”।
______________________________
ss_sexy
বিধুবাবু খাটের এক কোনায় বসে বললেন, “যাক বাবা। আমাকে তো তুমি খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে মা। প্রণাম করতে গিয়ে কেঁদে পা ভাসিয়ে দিলে আমাদের? আমার জীবনেও আমি এমন ঘটণার কথা শুনিনি”।
সীমন্তিনী নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “আমি আপনাদের ভয় পাইয়ে দিতে চাইনি মেসোমশাই। আসলে জ্ঞান হবার পর থেকে নিজের বাবা-মাকে কখনও এভাবে প্রণাম করার সুযোগ পাইনি। তাই বোধহয় একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম আমি। সেজন্যে আমাকে ক্ষমা করবেন মেসোমশাই”।
বিধুবাবু বললেন, “ঠিক আছে ঠিক আছে মা। তুমি ও নিয়ে ভেব না। রচু, তোরা এ ঘরে বসেই কথা বল। আমি একটু ওদিকে দেখছি” বলে আবার বাইরে চলে গেলেন।
সীমন্তিনী প্রসঙ্গ পাল্টে রচনাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা রচনা, তুমি তো এবারেই বারো ক্লাসে উঠছ। তা বারো ক্লাসের পর কি করবে ভাবছ”?
রচনা বলল, “জানিনা গো দিদি। আমার কপালে যে কী আছে কে জানে। বাবা তো মাধ্যমিকের পরেই আমায় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। শুধু আমাদের কলেজের প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমার স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে বারো ক্লাস অব্দি পড়ার সুযোগটা পেয়েছি। এরপর হয়ত আবার একটা আধবুড়ো দোজবর পাত্র খুঁজে এনে বাবা দিদির মত করেই আমারও একটা বিয়ে দিয়ে দেবেন”।
সীমন্তিনী রচনার কথা শুনে চমকে উঠে বলল, “কী বলছ তুমি রচনা? মাসিমা মেসোমশাই তোমাকে আধবুড়ো দোজবরের সাথে বিয়ে দেবেন”?
রচনা মাথা নিচু করে বলল, “তাদের আর কি দোষ দেব দিদি? অভাবের সংসারে যখন দু’দুটো মেয়েকে বিয়ে দেবার বোঝা কাঁধে চেপে বসে, তখন সব কন্যাদায়গ্রস্ত মা বাবাই বুঝি এমন করতে বাধ্য হয়। নইলে আমার দিদির কি এমন পরিণতি হত”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যা, তখন তুমি রাস্তাতেও তোমার দিদির ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছিলে। আমি তো একজন বাইরের মেয়ে। তাই জিজ্ঞেস করাটা হয়ত ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু তোমার দিদির ব্যাপারে আমার জানতেও খুব ইচ্ছে করছে”।
রচনা বলল, “দিদির কথা মনে পড়লেই মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় গো দিদি। ঘটকের মিথ্যে কথায় বিশ্বাস
করেই বাবা দিদির বিয়েতে মত দিয়েছিলেন। ঘটক বলেছিল, পাত্র পক্ষের কোন দাবীদাওয়া নেই। তাদের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল। ভাল বাড়িঘর। অনেক জমিজমা সম্পত্তি আছে তাদের। বাবার মনে হয়েছিল তার মেয়ের জন্য যেচে আসা এ সম্মন্ধটাকে হাতছাড়া করা একেবারেই উচিৎ হবেনা। তাই সে পাত্রের সাথেই দিদির বিয়ে দিয়েছিলেন। দিদি যখন দ্বিরাগমনে এসেছিল তখনও আমি অতটা বুঝিনি। কিন্তু বিয়ের মাস দুয়েক বাদে অনেক কষ্টে শ্বশুর বাড়ির লোকদের চোখে ফাঁকি দিয়ে দিদি আমাদের গ্রামের একটা লোকের
______________________________
(Update No. 27)
হাতে আমার নামে একটা চিঠি পাঠিয়েছিল। তাতে লিখেছিল যে আমার জামাইবাবুর আগের পক্ষের যে দুটো ছেলে আছে, তাদের একজনের বয়স বারো, আর অন্যজনের দশ। আর জামাইবাবু রোজ রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে দিদিকে মারধর করে। সারাদিন শ্বশুর শাশুড়ি তার ওপর নাকি অকথ্য অত্যাচার করে। এমনকি তার সৎ ছেলে দুটোও নাকি কারনে অকারনে দিদির ওপর হাত ওঠায়। দিদির অপরাধ শুধু এটুকুই যে সে বাপের বাড়ি থেকে কোন দান সামগ্রী কোন যৌতুক নিয়ে যেতে পারেনি। আর এ অপরাধেই দিদিকে মুখ বুজে শ্বশুর বাড়ির সমস্ত অত্যাচার সয়ে যেতে হচ্ছে”।
রচনার কথা শুনে সীমন্তিনী আঁতকে উঠে বলল, “ইশ, কি বলছ তুমি রচনা”?
রচনা নিজের চোখের কোলে এসে জমা হওয়া জলগুলো হাতের চেটোয় মুছতে মুছতে বলল, “হায়ার সেকেণ্ডারির পর তো কলেজে যেতে হবে। তখন আর আমাকে স্কলারশিপ পাবার ব্যবস্থা কে করে দেবে। আর ইচ্ছে থাকলেও বাবা আর আমাকে পড়াতে পারবেন না, জানি। তখন তো আমাকেও তারা বিয়ে দিতে চেষ্টা করবেন। যৌতুক দান সামগ্রী দেবার সামর্থ্য তার এখনও নেই। তাই আমার কপালেও হয়ত দিদির মত পরিণতিই লেখা আছে” বলতে বলতে রচনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।
সীমন্তিনীর বুকের ভেতরটা রচনার কান্না দেখে যেন মোচড় দিয়ে উঠল। দু’হাতে রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। অনেকক্ষণ বাদে রচনার কান্না থামতে সীমন্তিনী বলল, “তুমি দেখতে এত সুন্দর! এমন মিষ্টি। তোমার নিশ্চয়ই ভাল বিয়ে হবে দেখ রচনা। ভেঙে পোরো না। ভগবান তোমার প্রতি এতটা নিষ্ঠুর কখনই হবেন না”।
রচনা ম্লান হেসে বলল, “এটা যে শুধুই সান্ত্বনার কথা দিদি, সেটুকু বোঝবার ক্ষমতা আমার আছে গো। আমার দিদি তো আমার চেয়েও ঢের বেশী সুন্দরী ছিল। তার কপালে কেন তাহলে এমনটা হল, বলতে পার”?
সীমন্তিনী রচনাকে আরো জোরে নিজের বুকে চেপে ধরল। তার চোখ দুটোও জলে ভরে গেল। নিজের গলা দিয়েও যেন আর কথা বেরোচ্ছিল না তার। আর রচনা। প্রচণ্ড জলস্রোতে ভেসে যাওয়া একটা পিঁপড়ে যেভাবে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়, সেও যেন তেমনি ভাবে সীমন্তিনীকে আঁকড়ে ধরেছে। অনেকক্ষণ বাদে সীমন্তিনী নিজের চোখ মুছে নিয়ে রচনার চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “তুমি তো দেখতে খুব সন্দরী। কোন একটা ছেলেকে নিজে পছন্দ করে নিতে পার নি”?
রচনা আবার আগের মতই ম্লান হেসে বলল, “এমনটাও যে ভাবিনি, তা নয় দিদি। কিন্তু তাতেও কি কোন নিশ্চয়তা আছে, বল? কতজনকে তো দেখলাম, বছরের পর বছর ধরে প্রেম করেও বিয়ের সময় দেনা পাওনা নিয়ে মিটমাট না হতে বিয়ে ভেঙে চলে যায়। এমনও তো দেখেছি, ভালবেসে বিয়ে করা সত্বেও এক দু’বছর যেতে না যেতেই স্বামী-স্ত্রীর ভেতরে ভালবাসার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট থাকে না। সংসারে রোজ অশান্তি, রোজ ঝামেলা। তাই এমনটা করে নিজের মনের ওপর ব্যথার বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলে লাভ কি
______________________________
(Update No. 28)
বল? আর তাছাড়া সে ছেলেটাকে যদি বাবা মা পছন্দ না করেন, তাহলে সংসারে তো নিত্য অশান্তি শুরু হবে। প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বাবা মার মনে দুঃখ দিতেও আমি পারব না। তাই ভাগ্যের স্রোতে নিজেকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আমার সামনে আর কোন পথ নেই দিদি”।
সীমন্তিনী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে সে নিজেও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল এবার। অনেকক্ষণ পর এবার রচনাই সীমন্তিনীকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বলল, “ওঠো দিদি। কার জন্যে কে আর কি করতে পারে বল? যার যার ভাগ্য নিয়েই তো আমরা সবাই জন্মেছি। তাই ভাগ্যে যা আছে সেটাই মেনে নিতে হবে। এ কথাগুলো মনের ভেতর চেপে রেখে একা একাই কষ্ট পেয়েছি এতদিন। কাউকে বলতে পারিনি কোনদিন। আজ কেন জানিনা, তোমার কাছে সবকিছু খুলে বলে ফেলে তোমাকেও কষ্ট দিয়ে ফেললুম। আমাকে সেজন্যে ক্ষমা কোর দিদি”।
সীমন্তিনী আরো কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মুখ তুলে বলল, “দেখ রচনা। আমাদের মধ্যে তো তেমন চেনাজানা হয়নি এখনও। বলতে গেলে আজই আমরা দু’জন দু’জনের সাথে প্রথম আলাপ করছি। কিন্তু তোমাকে এখন একটা কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। তুমি খারাপ ভাববে না তো”?
রচনা শান্ত ভাবে বলল, “বল দিদি, আমি কিচ্ছু মনে করব না”।
সীমন্তিনী বলল, “আমি তোমাকে আমার ফোন নাম্বারটা দিয়ে যাব। তুমি কোন পিসিও থেকে আমাকে মাঝে মধ্যে ফোন করতে পারবে”?
রচনা একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “জানিনা দিদি। আমার হাতে তো একটা পয়সাও থাকে না। তোমাকে ফোন করতে পারব কিনা, সেটাও বলতে পারছি না”।
সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা তোমাদের বাড়ির আশেপাশে কারো বাড়িতে ফোন নেই? ধর আমি যদি তাদেরকে ফোন করে তোমাকে ডেকে দিতে বলি, তারা তোমায় ডেকে দেবে না”?
রচনা একটু ভেবে বলল, “আমাদের পাশের বাড়িতে ফোন অবশ্য আছে। কিন্তু তুমি ফোন করলে তারা আমাকে ডেকে দেবেন কি না সেটা ঠিক বলতে পারছিনে”।
সীমন্তিনী বলল, “তোমার কোন বন্ধু বান্ধবের কারুর নিজের মোবাইল নেই”?
রচনা বলল, “হ্যা তা তো আছে বেশ কয়েকজনের। কিন্তু তারা তো কেউ আমাদের বাড়ির কাছাকাছি থাকে না দিদি”।
______________________________
ss_sexy