Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#11
(Update No. 22)

কিংশুক এবার আস্তে করে বলল, “হ্যা দিদিভাই বল। আমি তোমার সব উপদেশ মানব”।

সীমন্তিনী বলল, “এই খেলনাটা নিয়ে যখন তখন খেলতে খেলতে পড়াশোনার কথা ভুলে গেলে কিন্তু ভাল হবে না ভাই। পড়াশোনাটা কিন্তু ঠিকঠাক করতে হবে তোমাকে। নইলে আমি কিন্তু খুব রাগ করব, খুব দুঃখ পাব। তুমি কি তোমার এ দিদিভাইকে দুঃখ দিতে চাও”?

কিংশুকের মুখে চোখে একটু হতাশার চিহ্ন এলেও সে মুখে বলল, “এত দামী উপহার আর কেউ কখনও দেয়নি আমাকে দিদিভাই। তাই তোমার গা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি আমি পড়াশোনায় কোন গাফিলতি করব না। রোজকার পড়াশোনা ভালভাবে সেরেই তবেই আমি এটা নিয়ে খেলতে বসব”।

সীমন্তিনী কিংশুকের মাথার চুলগুলো নেড়ে দিয়ে বলল, “লক্ষী ভাই আমার। এবার হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে গিয়ে পড়তে বসবে কেমন? আমি মা বাবা আর ছোড়দির সাথে কিছুক্ষন কথা বলে তোমার কাছে যাব। তখন তুমি আমার সামনে এটা নিয়ে প্রথমবার খেলবে। ঠিক আছে”?

কিংশুক মাথা নেড়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেল। বিভাদেবী সীমন্তিনীকে বললেন, “তুমি এক কাজ কর মা। সকাল থেকে তো এসবই পড়ে আছ তুমি। রচুর কোন কিছুই তো তোমার মাপের হবে না। আমি আমার
একটা শাড়ি দিচ্ছি। তুমি শাড়ি পড় তো”?

সীমন্তিনী বলল, “মাসিমা, আপনি ব্যস্ত হবেন না। আমার সাথে এক্সট্রা পোশাক আছে। ফেরার পথে যদি কোথাও রাতে আঁটকে যাই, একথা ভেবেই আমি রাতে পড়বার জন্যে একটা নাইটি সঙ্গে করে এনেছি। আমি সেটাই পড়ে নেব, ভাববেন না”।

বিভাদেবী রচনাকে বললেন, “রচু, তুই তাহলে দিদিকে তোর ঘরে নিয়ে যা। আর তোরা দু’জনেই হাত মুখ ধুয়ে নে। দিদিকে সব কিছু দেখিয়ে টেখিয়ে দিস। অন্ধকারে ওকে একা কোথাও যেতে দিস নে”।

রচনা সীমন্তিনীকে নিয়ে একটা ঘরে ঢুকে পড়ল। লন্ঠনের মৃদু আলোতে দেখল সে ঘরের ভেতর একটা পার্টিশান করে দুটো আলাদা আলাদা রুম করা হয়েছে। দেখেই বোঝা যায় প্রথম ভাগটা কিংশুকের। সেখানে একটা খাট ছাড়াও পড়ার টেবিল চেয়ার আছে। রচনার সাথে ভেতরের অংশে ঢুকে দেখে সেখানেও একই রকমের হলেও খাটটা একটু চওড়া। দু’জন অনায়াসে শোয়া যাবে। সেখানেও রচনার পড়ার টেবিল ছাড়াও একটা আলমারী আর আলনা দেখা গেল।

পোশাক চেঞ্জ করতে করতে সীমন্তিনী রচনাকে জিজ্ঞেস করল, “আমি থাকাতে তোমার নিশ্চয়ই পড়াশোনার ক্ষতি হবে। তোমার কলেজ কি এখন খোলা রচনা”?

______________________________
 
 
(Update No. 23)

রচনাও নিজের পোশাক পাল্টাতে পাল্টাতে বলল, “না দিদি, এখন তো আমাদের কলেজ বন্ধ। ইলেভেন ক্লাসের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। মাস দুয়েক বাদে বারো ক্লাসের পড়াশোনা আরম্ভ হবে। তাই এখন আর আপাততঃ পড়াশোনার ঝামেলা নেই তো”।

অন্ধকারে একহাতে লন্ঠন নিয়ে অন্যহাতে সীমন্তিনীর হাত ধরে রচনা বাড়ির রান্নাঘরের পেছন দিকে তাদের কলতলায় নিয়ে গেল। কলতলার পাশেই দড়মার ঘেরা দেওয়া ছোট একটা স্নানের জায়গা। তার ঠিক পাশেই একই রকমের দড়মায় বেড়া দিয়ে ঘিরে মেয়েদের ইউরিনাল বানানো হয়েছে। আর অনেকটা পেছন দিকে টালির চালা আর টিনের বেড়া দেওয়া একটা পায়খানা। এ ছাড়া বাড়িতে আর মোট তিনখানা ঘর আছে। সবগুলোরই ওপরে টালি আর চারপাশে বাঁশের বেড়া দেওয়া। সে তিনটের একটা হচ্ছে রান্নাঘর। একটা কিংশুক আর রচনার থাকবার ঘর। আর অন্যটা রচনার বাবা মায়ের থাকবার ঘর। সবগুলো ঘরের মেঝেই মাটির। কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর ভাবে মাটি দিয়ে লেপা।

হাত মুখ ধুয়ে ঘরে এসে দেখে কিংশুক লন্ঠনের আলোয় পড়তে শুরু করেছে। রচনার সাথেই সীমন্তিনী রান্নাঘরের বারান্দায় এসে জিজ্ঞেস করল, “মাসিমা, আমি কি এ ঘরে ঢুকতে পারি”?

বিভাদেবী তখন মাটির উনুনে কাঠের খড়ি জ্বালিয়ে রান্না শুরু করেছিলেন। সীমন্তিনীর গলা শুনেই চমকে উঠে বললেন, “ওমা। মেয়ের কথা শোন। এস এস মা। কিন্তু এসব দেখে তো তোমার ভাল লাগবে না মা। এমন রান্নাঘরের কল্পনাও হয়ত তোমরা করতে পারবে না। ওরে ও রচু, যা ও’ঘর থেকে একটা মোড়া এনে দিদিকে বসতে দে”।

সীমন্তিনী ঘরের কাঠের খুটির সাথে দু তিনটে পিড়ি দেখে রচনার হাত ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “কোত্থাও যেতে হবে না। এ পিড়িগুলোতেই তো বসা যাবে” বলে নিজেই একটা পিড়ি পেতে বিভাদেবীর পাশে বসে পড়ল। রচনাও তার পাশে বসল।

সীমন্তিনী দেখল রান্নাঘরটার ভেতরেও পার্টিশান করা আছে। মাটির উনোনের ওপরে একটা লোহার কড়াই চাপিয়ে কিছু একটা রান্না হচ্ছে। তা দেখে সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কি ডাল রান্না করছেন মাসিমা? গন্ধ শুনে তো মনে হচ্ছে মুগের ডাল বানাচ্ছেন, তাই না”?

বিভাদেবী বললেন, “হ্যা মা ঠিক ধরেছ তুমি। ডাল ভাত ছাড়া আর কিছু খাওয়াবার মত সামর্থ্য যে
তোমার এ গরীব মাসিমার নেই মা। তোমার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হবে খেতে”।

এমন সময় বিধুবাবু হাতে মোড়া নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে বললেন, “তোমরা সবাই এখানে? একা একা ও ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগছে না আমার। তাই এখানে চলে এলাম। সীমন্তিনী মায়ের সাথে তো আমার কথাই হল না”।

______________________________
 
 
 
(Update No. 24)

সীমন্তিনী বলল, “হ্যা মেসোমশাই, বসুন না এখানেই”।

বিধুবাবু মোড়ায় বসে বললেন, “তা মা, তুমি কি জলপাইগুড়িতেই থাকো”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “হ্যা মেসোমশাই, আমি আর আমার ভাই দু’জনেই জলপাইগুড়িতে থাকি। আমি এমএ পড়ছি। আর আমার ভাই বিএসসি ফাইনাল দিল এবার”।

বিধুবাবু আবার জিজ্ঞেস করলেন, “বাঃ বাঃ, বেশ ভাল। আর তোমাদের বাবা মা”?

সীমন্তিনী বলল, “তারা জলপাইগুড়ির কাছে আমাদের বাড়িতে আছেন। কিন্তু আমাদের ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস আর কলেজ থেকে বাড়ি বেশ দুরে বলে আমি আর আমার ভাই একসাথে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে জলপাইগুড়িতে আছি”।

বিভাদেবী তার স্বামীকে বললেন, “বাব্বা, তুমি দেখছি মেয়েটাকে জেরা করতে শুরু করলে গো। রচু আর কাবেরীর সাথে ওর জলপাইগুড়িতে দেখা হয়েছিল। আজ একটা কাজে এসেছিল এখানে। কাবেরীর সাথে রাস্তায় দেখা হল বলে কাবেরীই সাথে করে আমাদের বাড়ি নিয়ে এসেছে ওকে। ওর জলপাইগুড়ি ফিরে যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে বলে আমিই ওকে জোর করে রেখে দিয়েছি এখানে। একা একা এমন সোমত্ত একটা মেয়ে রাতের বেলায় এতটা পথ যাবে, এটা ভেবেই আমি.....”

বিধুবাবু একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, “আরে তুমি আমাকে এমন করে বলছ কেন? ওর সাথে তো আমার কথাই হয়নি। তাই একটু কথা বলতে এলাম। আর কথা বলতে গেলে তার পরিচয়টা তো জেনে নেওয়া দরকার। আর তুমি এটাকে জেরা বলে ভাবছ কেন? আমি কি একবারও বলেছি যে ও কোন দুরভিসন্ধি নিয়ে এখানে এসেছে। ওকে দেখেই তো বোঝা যায় ও খব ভদ্র ঘরের খুবই ভাল একটা মেয়ে। এমন মা লক্ষীর মত দেখতে মেয়েটার সাথে দুটো কথাও বলতে দেবেনা আমায়”?

রচনা কিছু একটা বলতে যেতেই সীমন্তিনী তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “মেয়েকে নিয়ে বাবা মার ভেতরে এমন ঝগড়া দেখে আমার তো বেশ লাগছে। মাসিমা আপনি একটু মেসোমশাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ান না। আমার মনের অনেকদিনের একটা সাধ পূর্ণ করে নিতে ইচ্ছে করছে আমার। একটুখানি সময়ের জন্য আসুন না, প্লীজ”।

বিভাদেবী উনোনের কাছ থেকে উঠে দাঁড়াতেই সীমন্তিনী তার হাত ধরে বিধুবাবুর দিকে এগোতে এগোতে বলল, “আপনিও উঠুন না মেসোমশাই”।

বিধুবাবু উঠে দাঁড়াতেই সীমন্তিনী তার পাশে বিভাদেবীকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিয়ে দু’পা পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের দু’জনের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগল। তার মনে পড়ে গেল নিজের বাবা মায়ের

______________________________
 
 
 
(Update No. 25)

কথা। ছোটবেলা থেকেই বাবা মার ভালবাসা সে হারিয়ে বসেছে। অবশ্য সীমন্তিনী নিজেই জানে, এতে তার মা বাবার কোন দোষ নেই। সব দোষ তার নিজের। অবোধাবস্থা থেকে নিজের দাদাভাইকে ভালবেসে সে আর সবার ভালবাসা হারিয়ে বসেছে। তার চোখের কোল দুটো ভিজে উঠল। নিজেকে সামলাতে না পেরে সে হাঁটু গেঁড়ে বিধুবাবু আর বিভাদেবীকে প্রণাম করল।

অনেকক্ষণ কেটে যাবার পরেও সীমন্তিনীকে উঠতে না দেখে বিভাদেবী, বিধুবাবু আর রচনা একে অপরের মুখের দিকে দেখতে লাগল। হঠাৎ বিধুবাবুর মনে হল তার পায়ের পাতাটা ভেজা ভেজা। তিনি চমকে উঠে বললেন, “রচু ওকে ওঠা শিগগীর। ও বোধহয় কাঁদছে রে”।

বিভাদেবী আর রচনা দু’জনে ধরাধরি করে সীমন্তিনীকে প্রায় টেনে ওঠাল। বিভাদেবী সীমন্তিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “একি মা? তুমি কাঁদছ কেন? শান্ত হও মা। ছিঃ ছিঃ। ও রচু, ওকে এক গ্লাস জল এনে দে তো মা”।

রচনা তাড়াতাড়ি করে ছুটে গিয়ে জলের কুজো থেকে জল এনে সীমন্তিনীর মুখের সামনে গ্লাসটা ধরে বলল, “ও দিদি, একটু জল খাও না, হাঁ কর”।

সীমন্তিনী দু’ঢোক জল খেয়ে গ্লাসটা সরিয়ে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে রচনা। সরি। তোমাদের সবাইকে অপ্রস্তুত করে ফেলেছি তাই না? কিন্তু মাসিমা আপনি আর মেসোমশাই আমার মাথায় হাত দিয়ে একটু আশীর্বাদ করবেন না”?

বিধুবাবু আর বিভাদেবী একই সাথে সীমন্তিনীর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। বিভাদেবী রচনাকে বললেন, “যা রচু, উনোন থেকে ধোয়া বেরচ্ছে। ওর কষ্ট হবে। তুই ওকে নিয়ে আমাদের ঘরে গিয়ে বসগে। খোকা পড়ছে, ওর পড়ায় ব্যাঘাত ঘটাস না”।

নিজের চোখ মুছতে মুছতে রচনার সাথে সীমন্তিনী এসে বিভাদেবীর ঘরে বসতেই পেছন পেছন বিধুবাবুও সে ঘরে ঢুকে বললেন, “কিরে রচু? ও ঠিক আছে তো? উঃ মেয়েটার কাণ্ড কারখানা দেখে তো আমি ঘাবড়ে গেছি রে”।

রচনাও উদবিঘ্ন ভাবে জিজ্ঞেস করল, “ও দিদিভাই, তুমি ঠিক আছ তো? বল না, তোমার কি শরীর খারাপ
লাগছে”?

সীমন্তিনী মাথা নিচু করে রচনাকে আশ্বস্ত করে বলল, “না রচনা। আমি ঠিক আছি। কিচ্ছু হয়নি আমার, ভেব না। মেসোমশাই আপনি বসুন না”।


______________________________
 ss_sexy
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 23-02-2020, 09:10 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)