23-02-2020, 09:08 PM
(Update No. 14)
রচনার কথায় সে যেন তার হুঁশ ফিরে পেল। রচনা সেই অপরূপার দিকে ঈশারা করে বলল, “দিদি, ইনি আমার মা” বলে তার মাকে বলল, “মা আমি তোমাকে বলেছিলাম না জলপাইগুড়িতে একজনের সাথে আমাদের কথা হয়েছিল। ইনিই সে। সীমন্তিনী দিদি”।
বিভাদেবীও মুগ্ধ হয়ে সীমন্তিনীকে দেখে যাচ্ছিলেন। রচনার কথায় সার পেয়ে তিনি এগিয়ে আসতেই সীমন্তিনী নিচু হয়ে বিভাদেবীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “মায়ের এমন রূপ আমি আর আগে কখনও দেখিনি মাসিমা”।
বিভাদেবী সীমন্তিনীর মাথায় আর চিবুকে হাত বুলিয়ে বললেন, “বেঁচে থেক মা। সুখে থেক। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুণ”।
রচনা তার মাকে বলল, “দেখেছ মা, দিদি বাড়িতে না ঢুকেই গেটের বাইরে থেকেই চলে যেতে চাইছিলেন। এবার তুমি বল, দিদিকে কি এভাবে আমরা ছেড়ে দিতে পারি”?
বিভাদেবী মাথা নিচু করে রচনার কথার জবাবে বললেন, “কি করবি রে মা। আমাদের যে সাধ আছে সাধ্য নেই। আমাদের এমন হার হাভাতে সংসারে এমন লক্ষী প্রতিমা কি আর বেশীক্ষণ থাকতে পারে রে? তাকে যে চলে যেতেই হবে। কী দিয়ে এ প্রতিমার পূজো করব আমরা”!
বিভাদেবীর মুখের কথাগুলো যেন সরাসরি সীমন্তিনীর হৃদয়ে এসে আঘাত হানল। সে বিভাদেবীর একটা হাত নিজের দু’হাতে মুঠো করে বলল, “মাসিমা, এমন করে বলে আমাকে কষ্ট দেবেন না দয়া করে। আসলে আমি একটা কাজে এসেছিলাম এখানে। আমাকে আবার জলপাইগুড়ি ফেরত যেতে হবে আজই। আর এখান থেকে পাঁচটার পর আর কোনও বাস নেই। তাই আমাকে যে সে বাসটাই ধরতে হবে মাসিমা”।
বিভাদেবী বললেন, “তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি মা আমি। কিন্তু তুমি তো ফিরে যাচ্ছ জলপাইগুড়ি। আলিপুরদুয়ার হলেও না হয় মানতুম যে সাতটার আগেই তুমি পৌঁছে যাবে। আলিপুরদুয়ার থেকেও তো তোমাকে বাসে কিংবা ট্রেণে যেতে হবে আরও অনেকটা পথ। কত রাত হবে কে জানে। আর তুমি একা যাচ্ছ বলেই মনটা ভাল লাগছে না। তাই বলছিলাম কি, আজ রাতটা এখানে থেকে যদি তুমি কাল সকালে যেতে তাহলে ভাল হত না মা”?
কথাগুলো বলতে বলতে বিভাদেবী সীমন্তিনীর একটা গালে এমন ভাবে হাত বোলালেন যেন অভিমানী মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সীমন্তিনী মনে করতে পারল না তার নিজের মা এভাবে তার গালে শেষ কবে হাত বুলিয়েছেন। কেমন একটা অদ্ভুত ভাল লাগার আমেজ যেন তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল। তার চোখ দুটো যেন আপনা আপনি বুজে আসছিল। বিভাদেবীর কথার জবাবে সে বলল, “মাসিমা, আমি যে নিরূপায়। ফিরতে যে আমাকে হবেই। নইলে ভাই খুব চিন্তা করবে”।
______________________________
(Update No. 15)
বিভাদেবী এবার কাবেরীকে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যারে কাবেরী, আমি তো অতশত বুঝিনা রে। আচ্ছা পাঁচটার বাসে গিয়ে ও কখন জলপাইগুড়ি গিয়ে পৌঁছবে, সেটা কি আন্দাজ করতে পারছিস”?
কাবেরী জবাব দিল, “কাকিমা আমিও তো খুব সঠিক বলতে পারছিনা। তবে রাত ন’টার আগে তো কোনভাবেই পৌঁছতে পারবে না, এটা বলতেই পারি। আর শুনেছি শেষ বাসটায় নাকি সময় আরও বেশী লাগে। কে জানে, হয়ত জলপাইগুড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে রাত দশটাও হতে পারে”?
বিভাদেবী সে’ কথা শুনে প্রায় আঁতকে উঠে বললেন, “ওমা, তাই নাকি রে? রাত দশটাও হতে পারে বলছিস! না না, এ কিছুতেই হতে পারে না। জেনে বুঝে তোমাকে আমি কিছুতেই আজ আর যেতে দিচ্ছি না আমি সীমন্তিনী” বলতে বলতে বিভাদেবী সীমন্তিনীর একটা হাত আঁকড়ে ধরলেন।
নিজের মনে মনে ভাবা ফন্দি মতই ঘটণাক্রম চলছে দেখে সীমন্তিনী মনে মনে খুশী হল। কিন্তু মুখে সে খুশীর ভাব ফুটিয়ে না তুলে সে বলল, “মাসিমা, আপনি মিছেমিছি এমন ভাবছেন। আমি তো কালচিনি সম্বন্ধে, এ’দিকের রাস্তাঘাট সম্বন্ধে কিছু জানতুম না। তাই সেদিন কাবেরী আর রচনার সাথে কথা বলে জেনে নিয়েছিলাম যে জলপাইগুড়ি থেকে সকালে এসে আবার ফিরে যেতে যেতে রাত হবেই। আর এখানেও থাকবার মত কোন জায়গা পাব না। কিন্তু না এসেও উপায় ছিল না আমার। তাই বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে। আর ভাইকেও সেভাবেই বলে এসেছি। ভাই আমাকে নিতে বাস স্ট্যাণ্ডে চলে আসবে”।
বিভাদেবী সীমন্তিনীর হাত ধরে একটা ঘরের বারান্দায় উঠতে উঠতে বলল, “খোকা, তোর পড়ার টেবিল থেকে চেয়ারটা নিয়ে আয় তো। দেখ, কেমন সুন্দর আরেকটা দিদি এসেছে তোদের ঘরে। এই রচু, তখন থেকে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রয়েছিস যে বড়। কাবেরী ওদেরকে বসতে দে, আমি আসছি” বলে রচনার হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেটটা নিয়ে একটু দুরের একটা ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
রচনা ঘরের ভেতর থেকে দুটো মোড়া আর একটা মাদুর এনে বারান্দায় বিছিয়ে দিল। ঘরের ভেতরের ছেলেটা একটা চেয়ার এনে বারান্দায় রাখতেই রচনা বলল, “দিদি ও আমার ভাই, কিংশুক”।
কিংশুকও খুব সুন্দর দেখতে। চোখ দুটো দেখেই বোঝা যায় বেশ বুদ্ধিদীপ্ত। সীমন্তিনী নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে চারটে চকলেটের প্যাকেট বের করে একটা প্যাকেট কিংশুকের হাতে দিয়ে বলল, “নাও ভাই”।
কিংশুক একটু ইতস্তত করে সীমন্তিনীর হাত থেকে চকলেটের প্যাকেটটা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল। সীমন্তিনী বাকি প্যাকেটগুলো রচনা, কাবেরী আর কাবেরীর ভাই শিবতোষের হাতে দিতে দিতে বলল, “আমি যদি জানতুম যে কালচিনি এসে এমন দুটো ছোট ভাইকে দেখতে পাব, তাহলে ওদের জন্য কিছু উপহার অবশ্যই আনতুম। কিন্তু আপাততঃ সঙ্গে যে এর বেশী কিছু আর দেবার নেই”।
______________________________
(Update No. 16)
রচনা বলল, “তাতে কি হয়েছে দিদি। আপনি যে আমার আর কাবেরীর কথা মনে রেখেছেন এটাই তো আমাদের কাছে অনেক। তার ওপর নিজে আমাদের বাড়ি এসে আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন, এটা ভেবেই তো আমার অহঙ্কার হচ্ছে। আচ্ছা দিদি, আপনার প্রোজেক্ট ওয়ার্কের কাজ কি শেষ হয়ে গেছে? না আপনাকে আবার আসতে হবে এখানে”?
সীমন্তিনী বলল, “ঘন্টা তিনেকের মধ্যে কিছু ডাটা নোট করে নিয়েছি। এখন এ’সব থেকে রিপোর্টটাকে কতটা সাজাতে পারি দেখা যাক। যদি কোনরকমে ছ’সাত পাতার একটা রিপোর্ট বানিয়ে ফেলতে পারি, তাহলে হয়ত আর আসবার প্রয়োজন হবে না। নইলে হয়ত আরেক দিন আসতে হবে” কথা বলতে বলতে সীমন্তিনী আড়চোখে লক্ষ্য করছিল যে কিংশুক প্যাকেটটা হাতে নিয়ে শুধু দেখেই যাচ্ছিল। অন্যদের মত প্যাকেটের মোড়ক খুলে খেতে শুরু করেনি।
কাবেরী সীমন্তিনীর কথা শুনে বলল, “দিদি, পরে যদি আবার কোনদিন আসেন সেদিন কিন্তু আমাদের বাড়ি আপনাকে যেতেই হবে। কিন্তু ইশ, রচুদের মত আমাদের বাড়িতেও তো ফোন নেই। আজ তো কলেজ ছুটি ছিল বলে ভাইকে নিয়ে কাকুর বাড়ি গিয়েছিলাম। ফেরার পথে হঠাৎ করেই আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল। কিন্তু পরে যেদিন আসবেন সেদিন হয়ত আমরা কলেজেই থাকব”।
সীমন্তিনী একবার নিজের হাতঘড়ির দিকে দেখে বলে উঠল, “ওমা, এ যে সাড়ে চারটে বেজে গেল! আমাকে তো এবার উঠতে হবে গো রচনা। মাসিমা কোথায় গেলেন, একটু ডাক না ভাই। তাকে আর একবার প্রণাম করে যাই”।
রচনা কিছু বলবার আগেই বিভাদেবী দু’হাতে দুটো প্লেট নিয়ে তাদের দিকে আসতে আসতে বললেন, “আজ আর আমি তোমায় যেতে দিচ্ছি না মা। আজ রাতটা এ গরীব মাসিমার বাড়িতে দুটো ডাল ভাত খেয়ে কাটিয়ে দাও। কাল সকালে আর তোমায় আটকাব না” বলতে বলতে সীমন্তিনীর কাছে এসে তার দিকে একটা প্লেট বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “এ মিষ্টিটুকু আপাততঃ মুখে দাও, নাও। নে কাবেরী” বলে অন্য প্লেটটা কাবেরীর হাতে দিয়ে বললেন, “রচু মা, রান্নাঘরে আরেকটা প্লেট সাজিয়ে রেখেছি। সেটা এনে শিবকে দে তো মা”।
তারপর সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করলেন, “সীমন্তিনী মা, তুমি চা খাও তো”?
সীমন্তিনী প্লেটটা হাতে নিয়ে দেখল, একটু আগে সে মিষ্টির দোকান থেকে যে মিষ্টিগুলো এনেছিল, সে গুলোই তার প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগন্তুক অতিথিকে খেতে দেবার মত ঘরে বোধ হয় আর কিছু ছিল না। বাড়ি ঘরের অবস্থা দেখে এতক্ষনে সে খুব ভাল ভাবেই বুঝে গেছে যে এদের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। সীমন্তিনী বিভাদেবীর কথার জবাবে বলল, “মাসিমা, যেতে যখন দেবেনই না, তখন আর তাড়াহুড়ো করবার তো আর দরকার নেই। তাই এসব না হয় একটু পরেই খাব। কিন্তু কাবেরী তুমি খেয়ে নাও ভাই। তোমার বাড়ি যেতে দেরী হলে তোমার বাড়ির লোকেরা তো আবার চিন্তা করবেন। আর
______________________________
(Update No. 17)
মাসিমা, আপনিও একটু বসুন না এখানে। আচ্ছা মাসিমা, মেসোমশাইকে দেখছি না তো। তিনি কি বাইরে কোথাও গেছেন”?
বিভাদেবী জবাবে বললেন, “হ্যা মা, উনি একটু বাজারে গেছেন। আর একটু বাদেই হয়ত এসে পড়বেন”।
সীমন্তিনী এবার তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিংশুকের একটা হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার ভাই? চকলেটটা তোমার পছন্দ হয়নি? খাচ্ছ না যে”?
কিংশুক একটু থতমত খেয়ে বলল, “না না দিদি। খুব পছন্দ হয়েছে আমার। আমি তো এমনি এমনি তোমায় দেখছিলাম একটু”।
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “আমায় দেখছিলে? কেন ভাই? আমাকে দেখে কি তোমার মনে হচ্ছে যে আমি ভিন গ্রহের বাসিন্দা? বা চিড়িয়াখানার কোন আজব জন্তু”?
কিংশুক সরল নিষ্পাপ কন্ঠে বলল, “তুমি না খুব সুন্দর। একেবারে সরস্বতী প্রতিমার মত দেখতে তুমি”।
সীমন্তিনী আদর করে কিংশুকের গাল টিপে দিয়ে বলল, “আর আমার এ ভাইটাও তো কার্তিকের মত সুন্দর। খুব মিষ্টি তুমি। কিন্তু চকলেটটা তুমি যেভাবে ধরে রেখেছ এভাবে বেশীক্ষণ হাতে ধরে রাখলে এটা তো নরম হয়ে যাবে ভাই। তুমি যদি এটা পরে খেতে চাও তাহলে ঘরের ভেতরে কোথাও রেখে এস”।
রচনা তখন আবার ফিরে এসে বসেছে। সীমন্তিনী নিজের প্লেট থেকে একটা মিষ্টি তুলে রচনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “নাও তো রচনা। আমার সাথে একটু শেয়ার কর। মাসিমা তো আমাকে প্লেট ভর্তি করে দিয়েছেন। এতটা আমি কিছুতেই খেতে পারব না”।
রচনা বলল, “না না দিদি, ওটুকু আপনাকে খেতেই হবে”।
সীমন্তিনী মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “হ্যা খাব তো বটেই। কিন্তু তোমাকে আর তোমার ভাইকে আমার প্লেট থেকে অন্ততঃ একটা একটা মিষ্টি নিতেই হবে। নইলে আমিও খাবনা কিন্তু”।
রচনা সীমন্তিনীর হাত থেকে মিষ্টিটা নিতে নিতে বলল, “ঠিক আছে দিদি। এই একটা নিয়ে আমি আর ভাই শেয়ার করে খাচ্ছি। বাকিগুলো আপনাকেই খেতে হবে”।
সীমন্তিনী আর কিছু না বলে মিষ্টি খেতে লাগল।
______________________________
(Update No. 18)
কিংশুক এবার রচনার কাছে গিয়ে বলল, “এই ছোড়দি, আমার চকলেটের মোড়কটা সুন্দর করে খুলে দিবি? একটুও যেন ছিঁড়ে না যায়”।
রচনা জিজ্ঞেস করল, “মোড়কটা ছিঁড়ে ফেলে দে না”।
কিংশুক বলল, “না না, ওটা একটা অন্য কাজে লাগবে আমার। তাই তো তোকে দিচ্ছি, মোড়কটা না ছিঁড়ে আস্তে করে খুলে দে না”।
সীমন্তিনী নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে মোবাইলটা বের করে বলল, “মাসিমা আমি একটু আমার ভাইকে ফোন করে জানিয়ে দিই যে আমি আজ এখানে থেকে যাচ্ছি” বলে বারান্দা থেকে নেমে উঠোনের একদিকে গিয়ে সতীশকে ফোন করে বলল, “হ্যা সতু”।
সতীশ জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার রে বড়দি। সারাটা দিন কেটে গেল একটা ফোনও করিস নি। আমার তো খুব চিন্তা হচ্ছিল রে। তুই এখন কোথায় আছিস, বল তো? কখন ফিরবি”?
সীমন্তিনী বলল, “শোন ভাই, আমি তো পাঁচটার বাসে এখান থেকে রওনা হব ভেবেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যেতে পারছিনা রে। তুই কিছু চিন্তা করিস না ভাই। আমি ঠিক আছি। এখন কালচিনিতেই আছি। আর ভাবিস না, ভাল জায়গাতেই আছি। কাল ফিরব আমি”।
সতীশ জিজ্ঞেস করল, “ওদের বাড়িটা খুজে পেয়েছিস? দেখা হয়েছে ওদের বাড়ির কারুর সাথে”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যারে ভাই, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলাম, তার অনেকটাই পূর্ণ হয়ে গেছে। বাকিটুকু নিজে চেষ্টা করলেই হয়ে যাবে বোধ হয়। আর শোন, তোকে সেদিন বললাম না? ডিস্ট্রিক্ট অডিটোরিয়ামে কাবেরী আর রচনা বলে কালচিনির দুটো মেয়ের সাথে আমার কথা হয়েছিল। ওই কাবেরীর সাথে হঠাৎ রাস্তায় দেখা হয়েছে আমার। কাবেরীই আমাকে নিয়ে এসেছে রচনাদের বাড়িতে। এখন ওদের বাড়িতেই আছি রে। আর মাসিমা, মানে রচনার মা-ই আমাকে আর যেতে দিচ্ছেন না। উনি খুব ভাল মানুষ রে। বলছেন রাতটা এখানে থেকে কাল চলে যেতে। তাই তুই কিচ্ছু ভাবিসনা। আমি একদম ঠিক আছি। আর শোন, বাড়িতে কাউকে কিছু বলিস না এখন। শুধু দাদাভাইকে ফোন করে বলে দিস যে আমার ফোন সুইচড অফ থাকবে আজ রাতে। কাল জলপাইগুড়ি গিয়ে আমি সকলের সাথে কথা বলব। ব্যাটারীর চার্জ থাকবে না মনে হচ্ছে। তাই সুইচ অফ করে রাখব। তুইও ভাবিস না, কেমন”।
সীমন্তিনীর ফোনে কথা বলার সময়ই বাড়ির গেট দিয়ে একজন ধুতি পাঞ্জাবী পড়া বয়স্ক লোক বাড়িতে ঢুকেছিলেন। তার হাতে একটা বাজারের ব্যাগ ধরা ছিল। সীমন্তিনী অনুমান করেছিল ইনিই বুঝি রচনার বাবা। ফোনের কথা শেষ করে বারান্দার দিকে এগোতেই রচনা বলল, “দিদি, এই যে আমাদের বাবা এসে গেছেন”।
______________________________
(Update No. 19)
সীমন্তিনী এগিয়ে গিয়ে বিধুবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। বিধুবাবু তার মাথায় আলতো করে হাত ছুইয়ে দিয়ে বললেন, “বেঁচে থেক মা, ভাল থেক। তুমি বস, আমি একটু ওর মায়ের সাথে একটা কথা সেরে নিই। তারপর হাত মুখ ধুয়ে তোমার সাথে কথা বলছি” বলে বিভাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে পাশের আরেকটা ঘরে ঢুকে গেলেন।
কাবেরী বলল, “এই রচু, এবার তো আমায় উঠতে হবে রে। আর শোন, সীমন্তিনীদি যদি কাল একটু বেলা করে বেরোন, তাহলে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাস একটু তাকে”।
সীমন্তিনী বলল, “ওমা? তুমি কাল যাবার কথা বলছ কাবেরী? আমি তো এখনই যাব ভাবছিলাম”।
কাবেরী খুব খুশী হয়ে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি বলছেন দিদি? আপনি যাবেন”?
সীমন্তিনী একটু দুষ্টুমি করে হেসে বলল, “তুমি নিয়ে যেতে না চাইলে আর যাব কি করে বল ভাই। কিন্তু তোমরা যদি আমার দুটো শর্ত মেনে নাও, তাহলে এখনই যাব তোমাদের বাড়ি”।
কাবেরী একটু অবাক হয়ে বলল, “ওমা এতে আবার শর্তের কথা আনছেন কেন দিদি”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “সেটা শর্তটা শুনলেই বুঝতে পারবে তোমরা। শোনো, তোমাদের এই মিষ্টি মিষ্টি ভাই বোন গুলোর মুখে আপনি আপনি শুনতে আমার আর ভাল লাগছে না। আর দ্বিতীয় শর্তটা হচ্ছে তোমার সাথে শুধু আমি একা নই রচনা আর কিংশুকও যাবে”।
কথাটা শুনেই কিংশুক লাফ মেরে সীমন্তিনীর কাছে এসে তার হাত ধরে বলল, “ঠিক বলেছ দিদি তুমি। তোমার মত এমন মিষ্টি একটা দিদিকে আপনি করে বলতে আমারও একদম ভাল লাগছেনা গো। কিন্তু তোমাকে কী বলে ডাকব বল তো? আমার তো বড়দি আর ছোড়দি আছে। তোমাকে কি দিদি বলব”?
সীমন্তিনী আদর করে কিংশুকের হাত ধরে বলল, “তোমার বড়দিও আছে বুঝি? তা বেশ, তোমার যখন
বড়দি ছোড়দি সবই আছে, তখন আমাকে না হয় বুড়িদিদি বলে ডেক তুমি”।
সবাই হো হো করে উঠল সীমন্তিনীর কথা শুনে। কিংশুক লজ্জা পেয়ে বলল, “ধ্যাত, তাই বলে কি ডাকা যায়? তুমি কি বুড়ি নাকি যে তোমাকে অমন নামে ডাকব? আমি তোমাকে দিদিভাই বলে ডাকব”।
কাবেরী বারান্দা থেকে নেমে বলল, “বেশ দিদি, তোমার শর্ত মেনে নিলাম আমরা। তাহলে রচু, আর দেরী না করে চল বেরিয়ে পড়ি আমরা। একটু বাদেই সন্ধ্যে হয়ে যাবে”।
______________________________
(Update No. 20)
রচনাও বারান্দা থেকে নামতে নামতে বলল, “দাঁড়া, মাকে বলে আসছি’ বলে যে ঘরে বিভাদেবী আর বিধুবাবু ঢুকেছিলেন, সে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। খানিক বাদেই রচনার সাথে বিভাদেবীও বাইরে এসে সীমন্তিনীকে বললেন, “তোমরা কাবেরীদের বাড়ি যাবে? বেশ তো, যাও একটু ঘুরে এস। তবে মা খুব বেশী রাত করো না। কেমন”?
কাবেরীদের বাড়িতে চা খেয়ে সীমন্তিনী রচনা আর কিংশুককে নিয়ে রাস্তায় এসে রচনাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমাদের এখানে আসল বাজারটা কোন দিকে গো রচনা”?
রচনা একদিকে ঈশারা করে বলল, “এই তো এদিকে, কাছেই”।
সীমন্তিনী কিংশুকের হাত ধরে যেতে যেতে বলল, “চল না, একটু বাজার দিয়ে ঘুরে যাই। অসুবিধে হবে কিছু”?
রচনা বলল, “না অসুবিধের কিছু নেই দিদি। কিন্তু মা তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে বলেছেন বলেই ভাবছি। তবে চল, ওদিকের রাস্তা দিয়েই চলে যাব বাড়ি”।
সীমন্তিনী এবার কিংশুককে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা কিংশুক, তোমাকে যদি তোমার এ দিদিভাই আজ কিছু একটা উপহার দিতে চায়, তাহলে তুমি কি নেবে”?
কিংশুক কিছু জবাব দেবার আগেই রচনা বলল, “না না দিদি, এসব কি বলছ তুমি? মা বাবা কিন্তু তাহলে আমাকেই বকবেন”।
সীমন্তিনী বলল, “কেউ তোমাকে বকবেন না। আচ্ছা রচনা, তুমি আমাকে একটা কথা বল তো ভাই। তোমার বড়দিকে তো দেখতে পাইনি। সে কোথায় গো”?
রচনা জবাব দিল, “দিদির তো বিয়ে হয়ে গেছে বছর তিনেক আগেই। সে তো তার শ্বশুর বাড়িতে। তাই তাকে দেখতে পাচ্ছ না”।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “ও তোমার চেয়ে বুঝি সে বয়সে বেশ বড় তাই না”?
রচনা সীমন্তিনীর প্রায় গা ঘেঁসে যেতে যেতে জবাব দিল, “ঠিক তা নয় গো দিদি। দিদি তো আমার চেয়ে মাত্র দু’বছরের বড়। কিন্তু মাধ্যমিক পাশ করবার কয়েক মাস পরেই এই বছর তিনেক আগে দিদির বিয়ে হয়েছে”।
______________________________
(Update No. 21)
সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “ওমা, সে কি কথা? ষোল সতের বছর বয়সেই তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে”?
রচনা বলল, “হ্যাগো দিদি, বলতে বা শুনতে যতই খারাপ লাগুক না কেন, সেটাই সত্যি। আসলে তুমি হয়ত আমাদের বাড়ির অবস্থা দেখে বুঝতেই পেরেছ যে আমরা খুব গরীব। কিন্তু জান দিদি, আমার দিদি আমার চাইতে অনেক সুন্দরী ছিল। পাড়ার সবাই বলত দিদি নাকি রাজরানীর মত রূপ নিয়ে জন্মেছিল। দিদি মাধ্যমিক পাশ করতেই এক ঘটক দিদির জন্যে এক পাত্রের খোঁজ এনেছিল। তাদের কোন দাবী দাওয়া নেই, বাড়ি ঘরের ভাল অবস্থা, পাত্র সরকারী কলেজে চাকরি করে, এসব শুনে বাবা মা দিদির বিয়ে দিয়ে দিল। দিদির শ্বশুর বাড়িও এখান থেকে কাছেই। সামান্য দুরে একটা গ্রামেই। কিন্তু বিয়ের পর দ্বিরাগমন সেরে যাবার পর থেকে সে দিদিকে আর চোখের দেখা দেখিনি আমরা কেউ। বাবা বেশ কয়েকবার দিদির শ্বশুর বাড়ি গেলেও তারা কেউ দিদির সাথে তাকে দেখা করতে দেয় নি। বলেছে, যে বাবা মেয়েকে বিয়ের সময় এক রত্তি সোনাও দিতে পারেনা, তার কোন যোগ্যতাই নেই তার মেয়ের মুখ দেখবার। অপমান করে, যথেচ্ছ গালিগালাজ করে বাবাকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল”।
সীমন্তিনী রচনার মুখে হাত চাপা দিয়ে তার কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “চুপ চুপ রচনা। আর কিছু বলনা এখন। ভাই এসব শুনে মন খারাপ করে ফেলতে পারে”।
রচনা নিজের চোখের কোল মুছতে মুছতে বলল, “আচ্ছা দিদি”।
বাজারে গিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই সন্ধ্যে হয়ে গেল। কিংশুকের পছন্দ মত একটা ব্যাটারি চালিত ভিডিও গেম আর বাড়ির জন্যে আরও কিছু মিষ্টি কিনে তারা আবার বাড়ির পথ ধরল। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। আশেপাশের সব বাড়িতে আলো জ্বললেও রচনাদের বাড়িটা অন্ধকার। বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে দেখে একটা ঘরের বারান্দায় একটা হ্যারিকেন লন্ঠন জ্বালিয়ে রাখা।
কিংশুক বাড়িতে ঢুকেই ছুটে মায়ের কাছে গিয়ে বলল, “মা মা, দেখ, দিদিভাই আমাকে এটা কিনে দিয়েছে, ভিডিও গেম”।
সীমন্তিনী কিংশুকের কাছে এসে বলল, “ভাই তোমার দিদিভাইয়ের একটা কথা রাখবে তুমি”?
কিংশুক খুশী হয়ে বলল, “হ্যা দিদিভাই, বলনা কি করতে হবে”।
সীমন্তিনী তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “শোনো ভাই, এটাকে শুধু ভিডিও গেম ভেব না। এটা কিন্তু তোমার প্রতি তোমার দিদিভাইয়ের ভালবাসাও, বুঝেছ? তাই দিদিভাইয়ের ভালবেসে দেওয়া এ উপহারের সাথে দিদিভাই তোমাকে দুটো কথাও বলবে। সেটা কিন্তু তোমাকে রাখতে হবে ভাই”।
____________________________________________________________
ss_sexy
রচনার কথায় সে যেন তার হুঁশ ফিরে পেল। রচনা সেই অপরূপার দিকে ঈশারা করে বলল, “দিদি, ইনি আমার মা” বলে তার মাকে বলল, “মা আমি তোমাকে বলেছিলাম না জলপাইগুড়িতে একজনের সাথে আমাদের কথা হয়েছিল। ইনিই সে। সীমন্তিনী দিদি”।
বিভাদেবীও মুগ্ধ হয়ে সীমন্তিনীকে দেখে যাচ্ছিলেন। রচনার কথায় সার পেয়ে তিনি এগিয়ে আসতেই সীমন্তিনী নিচু হয়ে বিভাদেবীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “মায়ের এমন রূপ আমি আর আগে কখনও দেখিনি মাসিমা”।
বিভাদেবী সীমন্তিনীর মাথায় আর চিবুকে হাত বুলিয়ে বললেন, “বেঁচে থেক মা। সুখে থেক। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুণ”।
রচনা তার মাকে বলল, “দেখেছ মা, দিদি বাড়িতে না ঢুকেই গেটের বাইরে থেকেই চলে যেতে চাইছিলেন। এবার তুমি বল, দিদিকে কি এভাবে আমরা ছেড়ে দিতে পারি”?
বিভাদেবী মাথা নিচু করে রচনার কথার জবাবে বললেন, “কি করবি রে মা। আমাদের যে সাধ আছে সাধ্য নেই। আমাদের এমন হার হাভাতে সংসারে এমন লক্ষী প্রতিমা কি আর বেশীক্ষণ থাকতে পারে রে? তাকে যে চলে যেতেই হবে। কী দিয়ে এ প্রতিমার পূজো করব আমরা”!
বিভাদেবীর মুখের কথাগুলো যেন সরাসরি সীমন্তিনীর হৃদয়ে এসে আঘাত হানল। সে বিভাদেবীর একটা হাত নিজের দু’হাতে মুঠো করে বলল, “মাসিমা, এমন করে বলে আমাকে কষ্ট দেবেন না দয়া করে। আসলে আমি একটা কাজে এসেছিলাম এখানে। আমাকে আবার জলপাইগুড়ি ফেরত যেতে হবে আজই। আর এখান থেকে পাঁচটার পর আর কোনও বাস নেই। তাই আমাকে যে সে বাসটাই ধরতে হবে মাসিমা”।
বিভাদেবী বললেন, “তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি মা আমি। কিন্তু তুমি তো ফিরে যাচ্ছ জলপাইগুড়ি। আলিপুরদুয়ার হলেও না হয় মানতুম যে সাতটার আগেই তুমি পৌঁছে যাবে। আলিপুরদুয়ার থেকেও তো তোমাকে বাসে কিংবা ট্রেণে যেতে হবে আরও অনেকটা পথ। কত রাত হবে কে জানে। আর তুমি একা যাচ্ছ বলেই মনটা ভাল লাগছে না। তাই বলছিলাম কি, আজ রাতটা এখানে থেকে যদি তুমি কাল সকালে যেতে তাহলে ভাল হত না মা”?
কথাগুলো বলতে বলতে বিভাদেবী সীমন্তিনীর একটা গালে এমন ভাবে হাত বোলালেন যেন অভিমানী মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সীমন্তিনী মনে করতে পারল না তার নিজের মা এভাবে তার গালে শেষ কবে হাত বুলিয়েছেন। কেমন একটা অদ্ভুত ভাল লাগার আমেজ যেন তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল। তার চোখ দুটো যেন আপনা আপনি বুজে আসছিল। বিভাদেবীর কথার জবাবে সে বলল, “মাসিমা, আমি যে নিরূপায়। ফিরতে যে আমাকে হবেই। নইলে ভাই খুব চিন্তা করবে”।
______________________________
(Update No. 15)
বিভাদেবী এবার কাবেরীকে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যারে কাবেরী, আমি তো অতশত বুঝিনা রে। আচ্ছা পাঁচটার বাসে গিয়ে ও কখন জলপাইগুড়ি গিয়ে পৌঁছবে, সেটা কি আন্দাজ করতে পারছিস”?
কাবেরী জবাব দিল, “কাকিমা আমিও তো খুব সঠিক বলতে পারছিনা। তবে রাত ন’টার আগে তো কোনভাবেই পৌঁছতে পারবে না, এটা বলতেই পারি। আর শুনেছি শেষ বাসটায় নাকি সময় আরও বেশী লাগে। কে জানে, হয়ত জলপাইগুড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে রাত দশটাও হতে পারে”?
বিভাদেবী সে’ কথা শুনে প্রায় আঁতকে উঠে বললেন, “ওমা, তাই নাকি রে? রাত দশটাও হতে পারে বলছিস! না না, এ কিছুতেই হতে পারে না। জেনে বুঝে তোমাকে আমি কিছুতেই আজ আর যেতে দিচ্ছি না আমি সীমন্তিনী” বলতে বলতে বিভাদেবী সীমন্তিনীর একটা হাত আঁকড়ে ধরলেন।
নিজের মনে মনে ভাবা ফন্দি মতই ঘটণাক্রম চলছে দেখে সীমন্তিনী মনে মনে খুশী হল। কিন্তু মুখে সে খুশীর ভাব ফুটিয়ে না তুলে সে বলল, “মাসিমা, আপনি মিছেমিছি এমন ভাবছেন। আমি তো কালচিনি সম্বন্ধে, এ’দিকের রাস্তাঘাট সম্বন্ধে কিছু জানতুম না। তাই সেদিন কাবেরী আর রচনার সাথে কথা বলে জেনে নিয়েছিলাম যে জলপাইগুড়ি থেকে সকালে এসে আবার ফিরে যেতে যেতে রাত হবেই। আর এখানেও থাকবার মত কোন জায়গা পাব না। কিন্তু না এসেও উপায় ছিল না আমার। তাই বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে। আর ভাইকেও সেভাবেই বলে এসেছি। ভাই আমাকে নিতে বাস স্ট্যাণ্ডে চলে আসবে”।
বিভাদেবী সীমন্তিনীর হাত ধরে একটা ঘরের বারান্দায় উঠতে উঠতে বলল, “খোকা, তোর পড়ার টেবিল থেকে চেয়ারটা নিয়ে আয় তো। দেখ, কেমন সুন্দর আরেকটা দিদি এসেছে তোদের ঘরে। এই রচু, তখন থেকে হাঁ করে দাঁড়িয়ে রয়েছিস যে বড়। কাবেরী ওদেরকে বসতে দে, আমি আসছি” বলে রচনার হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেটটা নিয়ে একটু দুরের একটা ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
রচনা ঘরের ভেতর থেকে দুটো মোড়া আর একটা মাদুর এনে বারান্দায় বিছিয়ে দিল। ঘরের ভেতরের ছেলেটা একটা চেয়ার এনে বারান্দায় রাখতেই রচনা বলল, “দিদি ও আমার ভাই, কিংশুক”।
কিংশুকও খুব সুন্দর দেখতে। চোখ দুটো দেখেই বোঝা যায় বেশ বুদ্ধিদীপ্ত। সীমন্তিনী নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে চারটে চকলেটের প্যাকেট বের করে একটা প্যাকেট কিংশুকের হাতে দিয়ে বলল, “নাও ভাই”।
কিংশুক একটু ইতস্তত করে সীমন্তিনীর হাত থেকে চকলেটের প্যাকেটটা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল। সীমন্তিনী বাকি প্যাকেটগুলো রচনা, কাবেরী আর কাবেরীর ভাই শিবতোষের হাতে দিতে দিতে বলল, “আমি যদি জানতুম যে কালচিনি এসে এমন দুটো ছোট ভাইকে দেখতে পাব, তাহলে ওদের জন্য কিছু উপহার অবশ্যই আনতুম। কিন্তু আপাততঃ সঙ্গে যে এর বেশী কিছু আর দেবার নেই”।
______________________________
(Update No. 16)
রচনা বলল, “তাতে কি হয়েছে দিদি। আপনি যে আমার আর কাবেরীর কথা মনে রেখেছেন এটাই তো আমাদের কাছে অনেক। তার ওপর নিজে আমাদের বাড়ি এসে আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন, এটা ভেবেই তো আমার অহঙ্কার হচ্ছে। আচ্ছা দিদি, আপনার প্রোজেক্ট ওয়ার্কের কাজ কি শেষ হয়ে গেছে? না আপনাকে আবার আসতে হবে এখানে”?
সীমন্তিনী বলল, “ঘন্টা তিনেকের মধ্যে কিছু ডাটা নোট করে নিয়েছি। এখন এ’সব থেকে রিপোর্টটাকে কতটা সাজাতে পারি দেখা যাক। যদি কোনরকমে ছ’সাত পাতার একটা রিপোর্ট বানিয়ে ফেলতে পারি, তাহলে হয়ত আর আসবার প্রয়োজন হবে না। নইলে হয়ত আরেক দিন আসতে হবে” কথা বলতে বলতে সীমন্তিনী আড়চোখে লক্ষ্য করছিল যে কিংশুক প্যাকেটটা হাতে নিয়ে শুধু দেখেই যাচ্ছিল। অন্যদের মত প্যাকেটের মোড়ক খুলে খেতে শুরু করেনি।
কাবেরী সীমন্তিনীর কথা শুনে বলল, “দিদি, পরে যদি আবার কোনদিন আসেন সেদিন কিন্তু আমাদের বাড়ি আপনাকে যেতেই হবে। কিন্তু ইশ, রচুদের মত আমাদের বাড়িতেও তো ফোন নেই। আজ তো কলেজ ছুটি ছিল বলে ভাইকে নিয়ে কাকুর বাড়ি গিয়েছিলাম। ফেরার পথে হঠাৎ করেই আপনার সাথে দেখা হয়ে গেল। কিন্তু পরে যেদিন আসবেন সেদিন হয়ত আমরা কলেজেই থাকব”।
সীমন্তিনী একবার নিজের হাতঘড়ির দিকে দেখে বলে উঠল, “ওমা, এ যে সাড়ে চারটে বেজে গেল! আমাকে তো এবার উঠতে হবে গো রচনা। মাসিমা কোথায় গেলেন, একটু ডাক না ভাই। তাকে আর একবার প্রণাম করে যাই”।
রচনা কিছু বলবার আগেই বিভাদেবী দু’হাতে দুটো প্লেট নিয়ে তাদের দিকে আসতে আসতে বললেন, “আজ আর আমি তোমায় যেতে দিচ্ছি না মা। আজ রাতটা এ গরীব মাসিমার বাড়িতে দুটো ডাল ভাত খেয়ে কাটিয়ে দাও। কাল সকালে আর তোমায় আটকাব না” বলতে বলতে সীমন্তিনীর কাছে এসে তার দিকে একটা প্লেট বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “এ মিষ্টিটুকু আপাততঃ মুখে দাও, নাও। নে কাবেরী” বলে অন্য প্লেটটা কাবেরীর হাতে দিয়ে বললেন, “রচু মা, রান্নাঘরে আরেকটা প্লেট সাজিয়ে রেখেছি। সেটা এনে শিবকে দে তো মা”।
তারপর সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করলেন, “সীমন্তিনী মা, তুমি চা খাও তো”?
সীমন্তিনী প্লেটটা হাতে নিয়ে দেখল, একটু আগে সে মিষ্টির দোকান থেকে যে মিষ্টিগুলো এনেছিল, সে গুলোই তার প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগন্তুক অতিথিকে খেতে দেবার মত ঘরে বোধ হয় আর কিছু ছিল না। বাড়ি ঘরের অবস্থা দেখে এতক্ষনে সে খুব ভাল ভাবেই বুঝে গেছে যে এদের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। সীমন্তিনী বিভাদেবীর কথার জবাবে বলল, “মাসিমা, যেতে যখন দেবেনই না, তখন আর তাড়াহুড়ো করবার তো আর দরকার নেই। তাই এসব না হয় একটু পরেই খাব। কিন্তু কাবেরী তুমি খেয়ে নাও ভাই। তোমার বাড়ি যেতে দেরী হলে তোমার বাড়ির লোকেরা তো আবার চিন্তা করবেন। আর
______________________________
(Update No. 17)
মাসিমা, আপনিও একটু বসুন না এখানে। আচ্ছা মাসিমা, মেসোমশাইকে দেখছি না তো। তিনি কি বাইরে কোথাও গেছেন”?
বিভাদেবী জবাবে বললেন, “হ্যা মা, উনি একটু বাজারে গেছেন। আর একটু বাদেই হয়ত এসে পড়বেন”।
সীমন্তিনী এবার তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিংশুকের একটা হাত ধরে জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার ভাই? চকলেটটা তোমার পছন্দ হয়নি? খাচ্ছ না যে”?
কিংশুক একটু থতমত খেয়ে বলল, “না না দিদি। খুব পছন্দ হয়েছে আমার। আমি তো এমনি এমনি তোমায় দেখছিলাম একটু”।
সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “আমায় দেখছিলে? কেন ভাই? আমাকে দেখে কি তোমার মনে হচ্ছে যে আমি ভিন গ্রহের বাসিন্দা? বা চিড়িয়াখানার কোন আজব জন্তু”?
কিংশুক সরল নিষ্পাপ কন্ঠে বলল, “তুমি না খুব সুন্দর। একেবারে সরস্বতী প্রতিমার মত দেখতে তুমি”।
সীমন্তিনী আদর করে কিংশুকের গাল টিপে দিয়ে বলল, “আর আমার এ ভাইটাও তো কার্তিকের মত সুন্দর। খুব মিষ্টি তুমি। কিন্তু চকলেটটা তুমি যেভাবে ধরে রেখেছ এভাবে বেশীক্ষণ হাতে ধরে রাখলে এটা তো নরম হয়ে যাবে ভাই। তুমি যদি এটা পরে খেতে চাও তাহলে ঘরের ভেতরে কোথাও রেখে এস”।
রচনা তখন আবার ফিরে এসে বসেছে। সীমন্তিনী নিজের প্লেট থেকে একটা মিষ্টি তুলে রচনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “নাও তো রচনা। আমার সাথে একটু শেয়ার কর। মাসিমা তো আমাকে প্লেট ভর্তি করে দিয়েছেন। এতটা আমি কিছুতেই খেতে পারব না”।
রচনা বলল, “না না দিদি, ওটুকু আপনাকে খেতেই হবে”।
সীমন্তিনী মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “হ্যা খাব তো বটেই। কিন্তু তোমাকে আর তোমার ভাইকে আমার প্লেট থেকে অন্ততঃ একটা একটা মিষ্টি নিতেই হবে। নইলে আমিও খাবনা কিন্তু”।
রচনা সীমন্তিনীর হাত থেকে মিষ্টিটা নিতে নিতে বলল, “ঠিক আছে দিদি। এই একটা নিয়ে আমি আর ভাই শেয়ার করে খাচ্ছি। বাকিগুলো আপনাকেই খেতে হবে”।
সীমন্তিনী আর কিছু না বলে মিষ্টি খেতে লাগল।
______________________________
(Update No. 18)
কিংশুক এবার রচনার কাছে গিয়ে বলল, “এই ছোড়দি, আমার চকলেটের মোড়কটা সুন্দর করে খুলে দিবি? একটুও যেন ছিঁড়ে না যায়”।
রচনা জিজ্ঞেস করল, “মোড়কটা ছিঁড়ে ফেলে দে না”।
কিংশুক বলল, “না না, ওটা একটা অন্য কাজে লাগবে আমার। তাই তো তোকে দিচ্ছি, মোড়কটা না ছিঁড়ে আস্তে করে খুলে দে না”।
সীমন্তিনী নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে মোবাইলটা বের করে বলল, “মাসিমা আমি একটু আমার ভাইকে ফোন করে জানিয়ে দিই যে আমি আজ এখানে থেকে যাচ্ছি” বলে বারান্দা থেকে নেমে উঠোনের একদিকে গিয়ে সতীশকে ফোন করে বলল, “হ্যা সতু”।
সতীশ জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার রে বড়দি। সারাটা দিন কেটে গেল একটা ফোনও করিস নি। আমার তো খুব চিন্তা হচ্ছিল রে। তুই এখন কোথায় আছিস, বল তো? কখন ফিরবি”?
সীমন্তিনী বলল, “শোন ভাই, আমি তো পাঁচটার বাসে এখান থেকে রওনা হব ভেবেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর যেতে পারছিনা রে। তুই কিছু চিন্তা করিস না ভাই। আমি ঠিক আছি। এখন কালচিনিতেই আছি। আর ভাবিস না, ভাল জায়গাতেই আছি। কাল ফিরব আমি”।
সতীশ জিজ্ঞেস করল, “ওদের বাড়িটা খুজে পেয়েছিস? দেখা হয়েছে ওদের বাড়ির কারুর সাথে”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যারে ভাই, যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলাম, তার অনেকটাই পূর্ণ হয়ে গেছে। বাকিটুকু নিজে চেষ্টা করলেই হয়ে যাবে বোধ হয়। আর শোন, তোকে সেদিন বললাম না? ডিস্ট্রিক্ট অডিটোরিয়ামে কাবেরী আর রচনা বলে কালচিনির দুটো মেয়ের সাথে আমার কথা হয়েছিল। ওই কাবেরীর সাথে হঠাৎ রাস্তায় দেখা হয়েছে আমার। কাবেরীই আমাকে নিয়ে এসেছে রচনাদের বাড়িতে। এখন ওদের বাড়িতেই আছি রে। আর মাসিমা, মানে রচনার মা-ই আমাকে আর যেতে দিচ্ছেন না। উনি খুব ভাল মানুষ রে। বলছেন রাতটা এখানে থেকে কাল চলে যেতে। তাই তুই কিচ্ছু ভাবিসনা। আমি একদম ঠিক আছি। আর শোন, বাড়িতে কাউকে কিছু বলিস না এখন। শুধু দাদাভাইকে ফোন করে বলে দিস যে আমার ফোন সুইচড অফ থাকবে আজ রাতে। কাল জলপাইগুড়ি গিয়ে আমি সকলের সাথে কথা বলব। ব্যাটারীর চার্জ থাকবে না মনে হচ্ছে। তাই সুইচ অফ করে রাখব। তুইও ভাবিস না, কেমন”।
সীমন্তিনীর ফোনে কথা বলার সময়ই বাড়ির গেট দিয়ে একজন ধুতি পাঞ্জাবী পড়া বয়স্ক লোক বাড়িতে ঢুকেছিলেন। তার হাতে একটা বাজারের ব্যাগ ধরা ছিল। সীমন্তিনী অনুমান করেছিল ইনিই বুঝি রচনার বাবা। ফোনের কথা শেষ করে বারান্দার দিকে এগোতেই রচনা বলল, “দিদি, এই যে আমাদের বাবা এসে গেছেন”।
______________________________
(Update No. 19)
সীমন্তিনী এগিয়ে গিয়ে বিধুবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল। বিধুবাবু তার মাথায় আলতো করে হাত ছুইয়ে দিয়ে বললেন, “বেঁচে থেক মা, ভাল থেক। তুমি বস, আমি একটু ওর মায়ের সাথে একটা কথা সেরে নিই। তারপর হাত মুখ ধুয়ে তোমার সাথে কথা বলছি” বলে বিভাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে পাশের আরেকটা ঘরে ঢুকে গেলেন।
কাবেরী বলল, “এই রচু, এবার তো আমায় উঠতে হবে রে। আর শোন, সীমন্তিনীদি যদি কাল একটু বেলা করে বেরোন, তাহলে আমাদের বাড়ি নিয়ে যাস একটু তাকে”।
সীমন্তিনী বলল, “ওমা? তুমি কাল যাবার কথা বলছ কাবেরী? আমি তো এখনই যাব ভাবছিলাম”।
কাবেরী খুব খুশী হয়ে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি বলছেন দিদি? আপনি যাবেন”?
সীমন্তিনী একটু দুষ্টুমি করে হেসে বলল, “তুমি নিয়ে যেতে না চাইলে আর যাব কি করে বল ভাই। কিন্তু তোমরা যদি আমার দুটো শর্ত মেনে নাও, তাহলে এখনই যাব তোমাদের বাড়ি”।
কাবেরী একটু অবাক হয়ে বলল, “ওমা এতে আবার শর্তের কথা আনছেন কেন দিদি”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “সেটা শর্তটা শুনলেই বুঝতে পারবে তোমরা। শোনো, তোমাদের এই মিষ্টি মিষ্টি ভাই বোন গুলোর মুখে আপনি আপনি শুনতে আমার আর ভাল লাগছে না। আর দ্বিতীয় শর্তটা হচ্ছে তোমার সাথে শুধু আমি একা নই রচনা আর কিংশুকও যাবে”।
কথাটা শুনেই কিংশুক লাফ মেরে সীমন্তিনীর কাছে এসে তার হাত ধরে বলল, “ঠিক বলেছ দিদি তুমি। তোমার মত এমন মিষ্টি একটা দিদিকে আপনি করে বলতে আমারও একদম ভাল লাগছেনা গো। কিন্তু তোমাকে কী বলে ডাকব বল তো? আমার তো বড়দি আর ছোড়দি আছে। তোমাকে কি দিদি বলব”?
সীমন্তিনী আদর করে কিংশুকের হাত ধরে বলল, “তোমার বড়দিও আছে বুঝি? তা বেশ, তোমার যখন
বড়দি ছোড়দি সবই আছে, তখন আমাকে না হয় বুড়িদিদি বলে ডেক তুমি”।
সবাই হো হো করে উঠল সীমন্তিনীর কথা শুনে। কিংশুক লজ্জা পেয়ে বলল, “ধ্যাত, তাই বলে কি ডাকা যায়? তুমি কি বুড়ি নাকি যে তোমাকে অমন নামে ডাকব? আমি তোমাকে দিদিভাই বলে ডাকব”।
কাবেরী বারান্দা থেকে নেমে বলল, “বেশ দিদি, তোমার শর্ত মেনে নিলাম আমরা। তাহলে রচু, আর দেরী না করে চল বেরিয়ে পড়ি আমরা। একটু বাদেই সন্ধ্যে হয়ে যাবে”।
______________________________
(Update No. 20)
রচনাও বারান্দা থেকে নামতে নামতে বলল, “দাঁড়া, মাকে বলে আসছি’ বলে যে ঘরে বিভাদেবী আর বিধুবাবু ঢুকেছিলেন, সে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। খানিক বাদেই রচনার সাথে বিভাদেবীও বাইরে এসে সীমন্তিনীকে বললেন, “তোমরা কাবেরীদের বাড়ি যাবে? বেশ তো, যাও একটু ঘুরে এস। তবে মা খুব বেশী রাত করো না। কেমন”?
কাবেরীদের বাড়িতে চা খেয়ে সীমন্তিনী রচনা আর কিংশুককে নিয়ে রাস্তায় এসে রচনাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমাদের এখানে আসল বাজারটা কোন দিকে গো রচনা”?
রচনা একদিকে ঈশারা করে বলল, “এই তো এদিকে, কাছেই”।
সীমন্তিনী কিংশুকের হাত ধরে যেতে যেতে বলল, “চল না, একটু বাজার দিয়ে ঘুরে যাই। অসুবিধে হবে কিছু”?
রচনা বলল, “না অসুবিধের কিছু নেই দিদি। কিন্তু মা তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে বলেছেন বলেই ভাবছি। তবে চল, ওদিকের রাস্তা দিয়েই চলে যাব বাড়ি”।
সীমন্তিনী এবার কিংশুককে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা কিংশুক, তোমাকে যদি তোমার এ দিদিভাই আজ কিছু একটা উপহার দিতে চায়, তাহলে তুমি কি নেবে”?
কিংশুক কিছু জবাব দেবার আগেই রচনা বলল, “না না দিদি, এসব কি বলছ তুমি? মা বাবা কিন্তু তাহলে আমাকেই বকবেন”।
সীমন্তিনী বলল, “কেউ তোমাকে বকবেন না। আচ্ছা রচনা, তুমি আমাকে একটা কথা বল তো ভাই। তোমার বড়দিকে তো দেখতে পাইনি। সে কোথায় গো”?
রচনা জবাব দিল, “দিদির তো বিয়ে হয়ে গেছে বছর তিনেক আগেই। সে তো তার শ্বশুর বাড়িতে। তাই তাকে দেখতে পাচ্ছ না”।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “ও তোমার চেয়ে বুঝি সে বয়সে বেশ বড় তাই না”?
রচনা সীমন্তিনীর প্রায় গা ঘেঁসে যেতে যেতে জবাব দিল, “ঠিক তা নয় গো দিদি। দিদি তো আমার চেয়ে মাত্র দু’বছরের বড়। কিন্তু মাধ্যমিক পাশ করবার কয়েক মাস পরেই এই বছর তিনেক আগে দিদির বিয়ে হয়েছে”।
______________________________
(Update No. 21)
সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “ওমা, সে কি কথা? ষোল সতের বছর বয়সেই তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে”?
রচনা বলল, “হ্যাগো দিদি, বলতে বা শুনতে যতই খারাপ লাগুক না কেন, সেটাই সত্যি। আসলে তুমি হয়ত আমাদের বাড়ির অবস্থা দেখে বুঝতেই পেরেছ যে আমরা খুব গরীব। কিন্তু জান দিদি, আমার দিদি আমার চাইতে অনেক সুন্দরী ছিল। পাড়ার সবাই বলত দিদি নাকি রাজরানীর মত রূপ নিয়ে জন্মেছিল। দিদি মাধ্যমিক পাশ করতেই এক ঘটক দিদির জন্যে এক পাত্রের খোঁজ এনেছিল। তাদের কোন দাবী দাওয়া নেই, বাড়ি ঘরের ভাল অবস্থা, পাত্র সরকারী কলেজে চাকরি করে, এসব শুনে বাবা মা দিদির বিয়ে দিয়ে দিল। দিদির শ্বশুর বাড়িও এখান থেকে কাছেই। সামান্য দুরে একটা গ্রামেই। কিন্তু বিয়ের পর দ্বিরাগমন সেরে যাবার পর থেকে সে দিদিকে আর চোখের দেখা দেখিনি আমরা কেউ। বাবা বেশ কয়েকবার দিদির শ্বশুর বাড়ি গেলেও তারা কেউ দিদির সাথে তাকে দেখা করতে দেয় নি। বলেছে, যে বাবা মেয়েকে বিয়ের সময় এক রত্তি সোনাও দিতে পারেনা, তার কোন যোগ্যতাই নেই তার মেয়ের মুখ দেখবার। অপমান করে, যথেচ্ছ গালিগালাজ করে বাবাকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল”।
সীমন্তিনী রচনার মুখে হাত চাপা দিয়ে তার কানে কানে ফিসফিস করে বলল, “চুপ চুপ রচনা। আর কিছু বলনা এখন। ভাই এসব শুনে মন খারাপ করে ফেলতে পারে”।
রচনা নিজের চোখের কোল মুছতে মুছতে বলল, “আচ্ছা দিদি”।
বাজারে গিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই সন্ধ্যে হয়ে গেল। কিংশুকের পছন্দ মত একটা ব্যাটারি চালিত ভিডিও গেম আর বাড়ির জন্যে আরও কিছু মিষ্টি কিনে তারা আবার বাড়ির পথ ধরল। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। আশেপাশের সব বাড়িতে আলো জ্বললেও রচনাদের বাড়িটা অন্ধকার। বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকে দেখে একটা ঘরের বারান্দায় একটা হ্যারিকেন লন্ঠন জ্বালিয়ে রাখা।
কিংশুক বাড়িতে ঢুকেই ছুটে মায়ের কাছে গিয়ে বলল, “মা মা, দেখ, দিদিভাই আমাকে এটা কিনে দিয়েছে, ভিডিও গেম”।
সীমন্তিনী কিংশুকের কাছে এসে বলল, “ভাই তোমার দিদিভাইয়ের একটা কথা রাখবে তুমি”?
কিংশুক খুশী হয়ে বলল, “হ্যা দিদিভাই, বলনা কি করতে হবে”।
সীমন্তিনী তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “শোনো ভাই, এটাকে শুধু ভিডিও গেম ভেব না। এটা কিন্তু তোমার প্রতি তোমার দিদিভাইয়ের ভালবাসাও, বুঝেছ? তাই দিদিভাইয়ের ভালবেসে দেওয়া এ উপহারের সাথে দিদিভাই তোমাকে দুটো কথাও বলবে। সেটা কিন্তু তোমাকে রাখতে হবে ভাই”।
____________________________________________________________
ss_sexy