23-02-2020, 09:04 PM
(Update No. 7)
গত পাঁচ বছরে সে একবারও মন্তিকে চোখে দেখতে পায়নি। কিন্তু এই পাঁচ বছরের প্রতিটা দিন রোজ অনেক বার মন্তির সাথে তার ফোনে কথা হয়ে থাকে। তার ভাবতেও অবাক লাগে। যে মন্তিকে সে এক মূহুর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করতে চাইত না, তাকে পাঁচ বছরের মধ্যে একবারও সে না দেখে কী করে বেঁচে আছে! ছোট বেলা থেকেই তারা দু’জন যেন এক সূতোয় বাধা ছিল। পাঁচ বছর আগে মাধ্যমিক পাশ করবার পর সে আর মন্তি দু’জনেই একসাথে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছিল। কিন্তু দু’জনের গন্তব্য ছিল আলাদা। নিজেদের শহরেই কলেজ থাকা স্বত্বেও বাড়ির প্রায় সকলের মতের বিরূদ্ধে গিয়ে মন্তি তাদের শহর ছেড়ে জেলাশহরের এক কলেজে গিয়ে এগার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিল। আর মন্তির কথাতেই রতীশ দেরাদুনের একটি নামকরা আবাসিক কলেজে এগার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিল। তাই তাদের গন্তব্য ছিল আলাদা আলাদা। রতীশ ছোটবেলা থেকেই যোগচর্চা করত। তার সাথে সাথে মন্তিও করত। কিন্তু মন্তিই তাকে বুঝিয়েছিল যে দেরাদুনে রতীশকে সাধারণ পড়াশোনার পাশাপাশি যোগার উচ্চতর ডিগ্রীও হাসিল করতে হবে। ছোটবেলা থেকেই মন্তির কথাই রতীশের কাছে বেদবাক্য।
পাঁচ বছর দেরাদুনে কাটিয়ে সবে মাস দুয়েক হল সে ফিরে এসেছে বাড়ি। সঙ্গে এনেছে ইকনমিক্সে স্নাতক হবার ডিগ্রী সেই সাথে যোগা মাস্টার ডিগ্রী। আর মন্তি খুব ভাল মার্ক্স নিয়ে পলিটিকাল সায়েন্সে স্নাতক হয়ে এমএ তে ভর্তি হয়েছে। অবশ্য সে আর জেলাশহরে আগের মত একা নেই। রতীশের নিজের ছোট ভাই সতীশও গ্রামের কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে জেলাশহরে পড়তে যাবার সময় থেকে তার বড়দির সাথেই আছে। রতীশ আর সতীশের খুড়তুতো বোন মন্তি। বাড়ির সকলে মন্তি বলে ডাকলেও তার নাম রাখা হয়েছিল সীমন্তিনী। সতীশের চেয়ে প্রায় আড়াই বছরের বড় হলেও মন্তি রতীশের মাত্র ছ’মাসের ছোট। ছোটবেলা থেকেই রতীশ ছিল মন্তির সর্বক্ষনের সঙ্গী। হামাগুড়ি দেবার সময় থেকেই বা বলা ভাল মায়েদের কোলে থাকতেই রতীশ আর মন্তি একসাথে থাকতে শুরু করেছিল। একসাথে খেত, একসাথে ঘুমোত। রতীশের মা সরলাদেবী যখন ছেলেকে নিজের বুকের দুধ খাওয়াতেন, তখন মন্তি ছুটে এসে তার অন্য স্তনটা মুখে নিয়ে তার দুধ খেত। আবার উল্টোটাও দেখা যেত। মন্তির নিজের মা, রতীশ আর সতীশের মেজমা, সীমাদেবীও একসাথে তার স্তনভাণ্ড দুটো নিজের মেয়ে আর বড়-জার ছেলেকে ভাগ করে দিতে বাধ্য হতেন। নইলে তার নিজের মেয়েও তার বুকের দুধ খেতে চাইত না। আর একটু বড় হতে রতীশ আর মন্তি একই সাথে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। একই ক্লাসে। তখন থেকে কলেজে যাওয়া আসা, পড়াশোনা, খাওয়া দাওয়া, খেলাধুলো, ঘোরাফেরা সব সময়েই মন্তি যেন রতীশের শরীরের ছায়া হয়ে থাকত। রাতে শোবার সময় তাদের দুটো শরীর এক হয়ে যেত। আর রতীশও তার জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটিতেই ধীরে ধীরে মন্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল।
পাঁচ বছর অদর্শনের পরেও রতীশ মন্তির কথার অবহেলনা করতে পারেনি। মন্তি যে কেন তাকে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের দেখা করতে বলেছিল, সে কারনটাও তার জানা ছিল না। রতীশকে অবাক করে দিয়ে প্রিন্সিপ্যাল স্যার তাকে সাময়িক ভাবে কলেজের যোগা প্রশিক্ষক এবং স্পোর্টস টিচার হিসেবে কাজে বহাল করলেন। তবে তিনি এ’কথাও বললেন যে রতীশকে কলেজের স্পোর্টস টিচারের পাশাপাশি তাকে একজন ইকোনমিক্স
(Update No. 8)
টিচার হিসেবে পাকাপাকি ভাবে রাখতে তার যা কিছু করণীয়, তিনি তার সবটাই করবেন। রতীশ যেন শুধু মন দিয়ে কাজ করে যায়।
খুশী মনে বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে রতীশ মন্তির কথাই ভেবে যাচ্ছিল। কতদিন হয়ে গেল সে মন্তিকে দেখতে পায়নি। মাধ্যমিক পাশ করবার আগে সে একটা মূহুর্তও মন্তিকে ছেড়ে থাকতে পারত না। মন্তিও প্রায় ছায়ার মত তার সাথে থাকত। ছোটবেলা থেকেই সে মন্তির সাথে সাথে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। যেদিন মন্তি তাকে দেরাদুন যাবার কথা বলেছিল, সেদিন রতীশ সারা দিন সারা রাত ধরে কেঁদেছিল। সে কিছুতেই বুঝতে পাচ্ছিল না, মন্তি যদি জেলা শহরে গিয়ে পড়তে পারে, তাহলে তাকেও সেখানে নিয়ে যাচ্ছে না কেন? কেন তাকে বাড়ি ছেড়ে মন্তিকে ছেড়ে এতদুরে চলে যেতে বলেছিল? তারা দু’জনেই তো খুব ভালভাবে জানত, তারা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। প্রথম প্রথম দেরাদুনে হোস্টেলে রাতে শুয়ে সে ঘুমের ঘোরেই বিছানায় হাতরে হাতরে মন্তিকে খুঁজত। ছোটবেলা থেকে মন্তিকে বুকে জড়িয়ে ধরে শোয়াতেই সে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। মন্তিও ছোটবেলা থেকেই তার দাদাভাইকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোত। তাদের শরীরে যৌবনের আগমণ ঘটার পরেও তারা এতে কোন সঙ্কোচ বা দ্বিধাবোধ করত না। ক্লাস সিক্সে ওঠার পর হঠাতই মন্তির শরীরটা বদলে যেতে শুরু করেছিল। তার বুক, নিতম্ব আর ঊরু দুটো দিনে দিনে ভারী হয়ে উঠছিল। ছোট বয়স থেকেই মন্তি অসাধারণ সুন্দরী ছিল। কিন্তু দেহে যৌবনের ছোঁয়া লাগতেই সে যেন একেবারে স্বর্গের অপ্সরাদের মতই উদ্ভিন্ন যৌবনা হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। এলাকার ছোট বড় সকলের মুখেই মন্তির রূপের চর্চা ঘুরে বেড়াত। তখন মেজগিন্নী সীমাদেবী সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবেই সীমন্তিনী আর রতীশকে আলাদা আলাদা ঘরে শোয়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাগে রণচণ্ডী হয়ে ওঠা সীমন্তিনীকে কেউ বোঝাতে পারেনি। তখনই রতীশের মা সরলাদেবী তার আর মন্তির জন্য একটা আলাদা রুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বড়সড় সে রুমটাতেই তারা দু’জনে বসে পড়াশোনা করত, আর রাতেও সে রুমেই তারা ঘুমোত। গরমের রাতগুলোতে মন্তি তার বুকের সমস্ত আবরণ সরিয়ে দিয়ে রতীশের মুখটাকে নিজের খোলা বুকে চেপে ধরে সারা রাত ঘুমিয়ে থাকত। কোনও সঙ্কোচ বোধ করত না সে। মন্তির বুকে মুখ রেখে ঘুমোতে রতীশেরও খুব ভাল লাগত। মাঝে মধ্যে তারা দু’জনেই রাতে বিছানায় শুয়ে ঘুমোবার আগে পর্যন্ত একে অপরের শরীরটাকে নানা ভাবে আদর করত। রতীশ যা করতে চাইত, যেভাবে মন্তির শরীরটা নিয়ে খেলতে চাইত, মন্তি তাতে কখনও কোন বাঁধা দেয় নি। তার দাদাভাইয়ের সমস্ত চাহিদা সে খুশী মনে মেটাত। আর সেটা করে রতীশের চোখে মুখে খুশী দেখে সে নিজেও খুব শান্তি পেত। তবে রতীশের চাইতে সীমন্তিনী বোধ বুদ্ধিতে অনেক পরিণত ছিল। তাই সে নিজেকে একটা গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রেখেছিল বরাবর। আর তার দাদাভাইকেও একই সীমানার গণ্ডিতে রাখতে তার কোন কষ্টই হয় নি। কারন মন্তির কথাই ছিল রতীশের কাছে শেষ কথা।
______________________________
(Update No. 9)
সকালে ঘুম থেকে উঠে রতীশ আর মন্তি দু’জনে প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে যোগচর্চা করত। তারপর চা খেতে খেতেই দু’জনে পড়তে বসত। ন’টায় উঠে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে কলেজে যেত। কলেজেও সারাটা সময় তারা দু’জন একসাথেই থাকত। বিকেলে একই সাথে দু’জনে বাড়ি ফিরে আসত। হাল্কা কিছু একটা খেয়ে নিয়েই তারা আবার পাড়ার মাঠে খেলতে চলে যেত। কিন্তু সন্ধ্যের আগেই তারা আবার বাড়ি ফিরে এসে হাত মুখ ধুয়ে অন্যান্য ভাইবোন, মা কাকিমাদের সাথে একটু সময় কাটিয়েই তারা নিজেদের রুমে ঢুকে পড়ত। রাত দশটা সাড়ে দশটা পর্যন্ত একনাগাড়ে চলত পড়াশোনা। তারপর রাতের খাবার খেয়ে আবার তারা তাদের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় উঠে একে অপরকে আদর করতে শুরু করত। আর এ আদরের মাত্রা দিনে দিনে কম হবার বদলে বেড়েই যাচ্ছিল যেন। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছিল মন্তির রূপ সৌন্দর্য্য। কিন্তু সীমন্তিনী গণ্ডির ব্যাপারে সর্বদাই সজাগ ছিল।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার মাস ছয়েক আগে থেকেই মন্তি যেন মাঝে মাঝেই গভীর চিন্তায় ডুবে যেত। কিন্তু রতীশ জানতে চাইলে সে কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা পেড়ে বসত। রতীশ মন্তির ওপর কোন রকম জোরাজুরি করত না। তার আশেপাশে মন্তির উপস্থিতি টের পেলেই তার আর কিচ্ছুটির অভাব থাকত না যেন। মাধ্যমিক দেবার পরে একদিন রাতে বিছানায় গিয়ে রতীশকে প্রাণ ভরে আদর করবার পর মন্তি রতীশের বুকের ওপর শুয়ে বলেছিল রতীশকে দেরাদুনে গিয়ে এগার ক্লাসে ভর্তি হতে হবে। আর মন্তি নিজে তাদের জেলা শহরে চলে যাবে। কথাটা শুনেই রতীশ কাঁদতে শুরু করেছিল। তারপর থেকে রোজ রাতেই মন্তির বুকে মুখ চেপে ধরে নিজের চোখের জলে মন্তির বুক ভাসিয়ে দিত রতীশ। মন্তিকে বোঝাতে চেষ্টা করত যে সে তাকে ছেড়ে একা কিছুতেই থাকতে পারবে না। মন্তিও তাকে বলত, তার দাদাভাইকে ছেড়ে থাকতে তারও খুব কষ্ট হবে। কিন্তু দু’জনের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তাদের আলাদা আলাদা জায়গায় থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে।
ছোটবেলা থেকেই রতীশের ব্যাপারে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার যেন মন্তিই পুরোপুরি নিজের হাতে
তুলে নিয়েছিল। আর রতীশও মন্তির সব কথা নির্দ্বিধায় মেনে চলত। কারন ছোটবেলা থেকেই সে বুঝতে পেরেছিল যে মন্তিই তাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে। রতীশের জন্যে মন্তি নিজের যে কোন ক্ষতি স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকত। প্রয়োজনে হয়ত রতীশের জন্যে নিজের প্রাণটাও বিলিয়ে দিতে পারত সে। রতীশ লক্ষ্য করেছিল, তাদের বাড়ির গুরুজনেরাও মন্তির কথার বিরূদ্ধে যেতেন না। তারা সকলেই যে মন্তিকে একটু এড়িয়ে এড়িয়েই চলতেন, সেটা বুঝতে পারলেও রতীশ এর পেছনের কারনটাকে ওই বয়সে বুঝতে পারেনি। মন্তি খুব ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব রকমের জেদী আর রাগী। তবে তার জেদ আর রাগটা ছিল তার দাদাভাইয়ের চারপাশে একটা অদৃশ্য বৃত্তের মত। রতীশকে কেউ গালমন্দ করলে, রতীশের ওপর কেউ রাগ করলে, তার ওপর কেউ কোনও বিধি নিষেধ আরোপ করলেই মন্তির রাগ ফেটে বেরতো। আর তার ক্রোধের মুখোমুখি হবার সাহস বাড়ির বড় ছোট কেউ দেখাতে পারত না। একমাত্র রতীশের মা সরলাদেবী আর ছোটকাকু চন্দ্রকান্তবাবুই তাদের দু’জনের সাথে কথা বলতেন। আর মন্তির নিজের মা সীমাদেবী, যাকে রতীশ মেজমা বলে ডাকে, তিনি যেন কেমন বোবা চোখে তাদের দিকে চেয়ে থাকতেন মাঝে মাঝে।
______________________________
(Update No. 10)
দেরাদুন আসবার পর পর প্রথমদিকে দু’তিন মাস রতীশ রাতে ঠিকমত ঘুমোতেই পারত না। রোজ রাতে শুয়ে শুয়ে কাঁদত। ছোটবেলা থেকে যে শরীরটাকে বুকে জড়িয়ে শুতে সে অভ্যস্ত ছিল, সে শরীরটা তার হাতের নাগালের মধ্যে ছিল না। বাড়ি ছেড়ে যাবার আগে ছোটকাকু চন্দ্রকান্তবাবু মন্তি আর রতীশকে দুটো মোবাইল দিয়ে দিয়েছিলেন। সে মোবাইলের মাধ্যমে দিনে অসংখ্য বার রতীশ আর মন্তির কথা হত। মন্তি সব সময় রতীশকে নির্দেশ দিয়ে বুঝিয়ে দিত, রতীশ কি করবে না করবে। মন্তির কথাতেই সে কলেজের পড়াশোনার পাশাপাশি যোগা কলেজেও ভর্তি হয়েছিল। পয়সা কড়ির ভাবনাও রতীশকে ভাবতে হত না। মন্তির নির্দেশেই সে দেরাদুনে একটা ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলেছিল। আর সে একাউন্টে নিয়মিত বাড়ি থেকে পয়সা পাঠিয়ে দেওয়া হত। বাড়ি থেকে একমাত্র তার মা আর ছোটকাকুই মাঝে মধ্যে ফোন করে তার খবরাখবর নিতেন। আর তার কখন কি প্রয়োজন তার খবরাখবর একমাত্র মন্তিই রাখত।
বয়সে মন্তির থেকে মাস ছয়েকের বড় হলেও রতীশের স্বভাব একটা ছোট বাচ্চার মতই ছিল। সরল আর সিধেসাধা। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা তো দুরের কথা, কোনকিছু নিয়েই সে তেমন ভাবে ভাবত না। তার সমস্ত ভাবনা চিন্তা সে তার মন্তির ওপর ছেড়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত ছিল। কিন্তু মন্তি সে তুলনায় অনেক বেশী বাস্তববুদ্ধি সম্পন্না ছিল। আর প্রখর বিচার বুদ্ধির সাথে সাথে ভগবান তাকে অফুরন্ত রূপের ডালি দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। মন্তি ফোনে ফোনেই রতীশকে একটু একটু করে সব কিছু বুঝিয়েছিল। বুঝিয়েছিল যে তাদের ভাইবোনের স্বাভাবিক সম্পর্কটার সীমা তারা অনেক বছর আগেই পেরিয়ে এসেছিল। ধীরে ধীরে তারা প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে উঠেছিল। তাদের ভালবাসার শিকর মন্তির হৃদয়ে এমন গভীরভাবে গেঁড়ে বসেছিল যে মন্তির পক্ষে অন্য কোনও পুরুষকে তার জীবনে স্থান দেওয়ার কোন উপায় ছিল না। সে মনে মনে তার মন প্রাণ দেহ সবকিছুই তার দাদাভাইকে সঁপে দিয়েছে অনেক বছর আগে। তাই তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্য্যাদা দেবার অধিকার এ পৃথিবীতে একমাত্র রতীশেরই আছে। কিন্তু জেঠতুতো খুড়তুতো ভাই বোনের বিয়ে বাড়ির লোকেরা তো দুর, সমাজের কেউই স্বীকার করে নিতে পারবে না। রতীশ যদি তার নিজের জেঠতুতো ভাই না হত, তাহলে সে হয়ত সকলের কথার বিরূদ্ধে গিয়েই রতীশের সাথে পালিয়ে গিয়ে কোন মন্দিরে বা কোর্টে বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার পেতে বসবার কথা ভাবতে পারত। কিন্তু মাধ্যমিক দেবার অনেক আগে থেকেই মন্তি বুঝতে পেরেছিল যে তার ভালবাসার দাদাভাইকে বিয়ে করা, তার দাদাভাইকে চিরদিন নিজের করে ধরে রাখা, কোনমতেই সম্ভব নয়। আর রতীশ বাড়ির বড় ছেলে। তার ওপর পরিবারের সকলেরই অনেক আশা ভরসা আছে। বংশ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে রতীশকে ভবিষ্যতে অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করে সংসারী হতে হবেই। তাই তার মন থেকে মন্তির প্রভাবটাকে দুর করতে হলে তাদের মাঝে শারীরিক ব্যবধানটা দুর করা একান্তই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। তাই মন্তি পনেরো বছর বয়সেই তাকে নিজের কাছ থেকে অনেক দুরে ঠেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
______________________________
(Update No. 11)
মন মানতে না চাইলেও মন্তির কথার যথার্থতা রতীশ ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিল। পাঁচ বছরে মন্তির সুন্দর লোভনীয় শরীরটার মোহ তার মন থেকে একেবারেই সরে গিয়েছিল। এখন আর সে রাতে বিছানায় শুয়ে ছটফট করে না। কিন্তু ফোন যোগাযোগটা আগের মতই অক্ষুন্ন আছে তাদের। আজও রতীশের ভাল মন্দ সব কিছুর সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার একমাত্র তার ছোটবোন মন্তিরই। তাই মন্তির কথাতেই সে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছিল।
বাড়ির কাছাকাছি এসে সে মন্তিকে ফোন করে জানিয়ে দিল প্রিসিপ্যাল স্যারের সাথে তার কি কি কথা হয়েছে।
****************
গত পাঁচ বছরে সে একবারও মন্তিকে চোখে দেখতে পায়নি। কিন্তু এই পাঁচ বছরের প্রতিটা দিন রোজ অনেক বার মন্তির সাথে তার ফোনে কথা হয়ে থাকে। তার ভাবতেও অবাক লাগে। যে মন্তিকে সে এক মূহুর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করতে চাইত না, তাকে পাঁচ বছরের মধ্যে একবারও সে না দেখে কী করে বেঁচে আছে! ছোট বেলা থেকেই তারা দু’জন যেন এক সূতোয় বাধা ছিল। পাঁচ বছর আগে মাধ্যমিক পাশ করবার পর সে আর মন্তি দু’জনেই একসাথে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছিল। কিন্তু দু’জনের গন্তব্য ছিল আলাদা। নিজেদের শহরেই কলেজ থাকা স্বত্বেও বাড়ির প্রায় সকলের মতের বিরূদ্ধে গিয়ে মন্তি তাদের শহর ছেড়ে জেলাশহরের এক কলেজে গিয়ে এগার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিল। আর মন্তির কথাতেই রতীশ দেরাদুনের একটি নামকরা আবাসিক কলেজে এগার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিল। তাই তাদের গন্তব্য ছিল আলাদা আলাদা। রতীশ ছোটবেলা থেকেই যোগচর্চা করত। তার সাথে সাথে মন্তিও করত। কিন্তু মন্তিই তাকে বুঝিয়েছিল যে দেরাদুনে রতীশকে সাধারণ পড়াশোনার পাশাপাশি যোগার উচ্চতর ডিগ্রীও হাসিল করতে হবে। ছোটবেলা থেকেই মন্তির কথাই রতীশের কাছে বেদবাক্য।
পাঁচ বছর দেরাদুনে কাটিয়ে সবে মাস দুয়েক হল সে ফিরে এসেছে বাড়ি। সঙ্গে এনেছে ইকনমিক্সে স্নাতক হবার ডিগ্রী সেই সাথে যোগা মাস্টার ডিগ্রী। আর মন্তি খুব ভাল মার্ক্স নিয়ে পলিটিকাল সায়েন্সে স্নাতক হয়ে এমএ তে ভর্তি হয়েছে। অবশ্য সে আর জেলাশহরে আগের মত একা নেই। রতীশের নিজের ছোট ভাই সতীশও গ্রামের কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে জেলাশহরে পড়তে যাবার সময় থেকে তার বড়দির সাথেই আছে। রতীশ আর সতীশের খুড়তুতো বোন মন্তি। বাড়ির সকলে মন্তি বলে ডাকলেও তার নাম রাখা হয়েছিল সীমন্তিনী। সতীশের চেয়ে প্রায় আড়াই বছরের বড় হলেও মন্তি রতীশের মাত্র ছ’মাসের ছোট। ছোটবেলা থেকেই রতীশ ছিল মন্তির সর্বক্ষনের সঙ্গী। হামাগুড়ি দেবার সময় থেকেই বা বলা ভাল মায়েদের কোলে থাকতেই রতীশ আর মন্তি একসাথে থাকতে শুরু করেছিল। একসাথে খেত, একসাথে ঘুমোত। রতীশের মা সরলাদেবী যখন ছেলেকে নিজের বুকের দুধ খাওয়াতেন, তখন মন্তি ছুটে এসে তার অন্য স্তনটা মুখে নিয়ে তার দুধ খেত। আবার উল্টোটাও দেখা যেত। মন্তির নিজের মা, রতীশ আর সতীশের মেজমা, সীমাদেবীও একসাথে তার স্তনভাণ্ড দুটো নিজের মেয়ে আর বড়-জার ছেলেকে ভাগ করে দিতে বাধ্য হতেন। নইলে তার নিজের মেয়েও তার বুকের দুধ খেতে চাইত না। আর একটু বড় হতে রতীশ আর মন্তি একই সাথে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। একই ক্লাসে। তখন থেকে কলেজে যাওয়া আসা, পড়াশোনা, খাওয়া দাওয়া, খেলাধুলো, ঘোরাফেরা সব সময়েই মন্তি যেন রতীশের শরীরের ছায়া হয়ে থাকত। রাতে শোবার সময় তাদের দুটো শরীর এক হয়ে যেত। আর রতীশও তার জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটিতেই ধীরে ধীরে মন্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছিল।
পাঁচ বছর অদর্শনের পরেও রতীশ মন্তির কথার অবহেলনা করতে পারেনি। মন্তি যে কেন তাকে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের দেখা করতে বলেছিল, সে কারনটাও তার জানা ছিল না। রতীশকে অবাক করে দিয়ে প্রিন্সিপ্যাল স্যার তাকে সাময়িক ভাবে কলেজের যোগা প্রশিক্ষক এবং স্পোর্টস টিচার হিসেবে কাজে বহাল করলেন। তবে তিনি এ’কথাও বললেন যে রতীশকে কলেজের স্পোর্টস টিচারের পাশাপাশি তাকে একজন ইকোনমিক্স
(Update No. 8)
টিচার হিসেবে পাকাপাকি ভাবে রাখতে তার যা কিছু করণীয়, তিনি তার সবটাই করবেন। রতীশ যেন শুধু মন দিয়ে কাজ করে যায়।
খুশী মনে বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে রতীশ মন্তির কথাই ভেবে যাচ্ছিল। কতদিন হয়ে গেল সে মন্তিকে দেখতে পায়নি। মাধ্যমিক পাশ করবার আগে সে একটা মূহুর্তও মন্তিকে ছেড়ে থাকতে পারত না। মন্তিও প্রায় ছায়ার মত তার সাথে থাকত। ছোটবেলা থেকেই সে মন্তির সাথে সাথে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। যেদিন মন্তি তাকে দেরাদুন যাবার কথা বলেছিল, সেদিন রতীশ সারা দিন সারা রাত ধরে কেঁদেছিল। সে কিছুতেই বুঝতে পাচ্ছিল না, মন্তি যদি জেলা শহরে গিয়ে পড়তে পারে, তাহলে তাকেও সেখানে নিয়ে যাচ্ছে না কেন? কেন তাকে বাড়ি ছেড়ে মন্তিকে ছেড়ে এতদুরে চলে যেতে বলেছিল? তারা দু’জনেই তো খুব ভালভাবে জানত, তারা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। প্রথম প্রথম দেরাদুনে হোস্টেলে রাতে শুয়ে সে ঘুমের ঘোরেই বিছানায় হাতরে হাতরে মন্তিকে খুঁজত। ছোটবেলা থেকে মন্তিকে বুকে জড়িয়ে ধরে শোয়াতেই সে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। মন্তিও ছোটবেলা থেকেই তার দাদাভাইকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোত। তাদের শরীরে যৌবনের আগমণ ঘটার পরেও তারা এতে কোন সঙ্কোচ বা দ্বিধাবোধ করত না। ক্লাস সিক্সে ওঠার পর হঠাতই মন্তির শরীরটা বদলে যেতে শুরু করেছিল। তার বুক, নিতম্ব আর ঊরু দুটো দিনে দিনে ভারী হয়ে উঠছিল। ছোট বয়স থেকেই মন্তি অসাধারণ সুন্দরী ছিল। কিন্তু দেহে যৌবনের ছোঁয়া লাগতেই সে যেন একেবারে স্বর্গের অপ্সরাদের মতই উদ্ভিন্ন যৌবনা হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। এলাকার ছোট বড় সকলের মুখেই মন্তির রূপের চর্চা ঘুরে বেড়াত। তখন মেজগিন্নী সীমাদেবী সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা ভেবেই সীমন্তিনী আর রতীশকে আলাদা আলাদা ঘরে শোয়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাগে রণচণ্ডী হয়ে ওঠা সীমন্তিনীকে কেউ বোঝাতে পারেনি। তখনই রতীশের মা সরলাদেবী তার আর মন্তির জন্য একটা আলাদা রুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বড়সড় সে রুমটাতেই তারা দু’জনে বসে পড়াশোনা করত, আর রাতেও সে রুমেই তারা ঘুমোত। গরমের রাতগুলোতে মন্তি তার বুকের সমস্ত আবরণ সরিয়ে দিয়ে রতীশের মুখটাকে নিজের খোলা বুকে চেপে ধরে সারা রাত ঘুমিয়ে থাকত। কোনও সঙ্কোচ বোধ করত না সে। মন্তির বুকে মুখ রেখে ঘুমোতে রতীশেরও খুব ভাল লাগত। মাঝে মধ্যে তারা দু’জনেই রাতে বিছানায় শুয়ে ঘুমোবার আগে পর্যন্ত একে অপরের শরীরটাকে নানা ভাবে আদর করত। রতীশ যা করতে চাইত, যেভাবে মন্তির শরীরটা নিয়ে খেলতে চাইত, মন্তি তাতে কখনও কোন বাঁধা দেয় নি। তার দাদাভাইয়ের সমস্ত চাহিদা সে খুশী মনে মেটাত। আর সেটা করে রতীশের চোখে মুখে খুশী দেখে সে নিজেও খুব শান্তি পেত। তবে রতীশের চাইতে সীমন্তিনী বোধ বুদ্ধিতে অনেক পরিণত ছিল। তাই সে নিজেকে একটা গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রেখেছিল বরাবর। আর তার দাদাভাইকেও একই সীমানার গণ্ডিতে রাখতে তার কোন কষ্টই হয় নি। কারন মন্তির কথাই ছিল রতীশের কাছে শেষ কথা।
______________________________
(Update No. 9)
সকালে ঘুম থেকে উঠে রতীশ আর মন্তি দু’জনে প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে যোগচর্চা করত। তারপর চা খেতে খেতেই দু’জনে পড়তে বসত। ন’টায় উঠে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে কলেজে যেত। কলেজেও সারাটা সময় তারা দু’জন একসাথেই থাকত। বিকেলে একই সাথে দু’জনে বাড়ি ফিরে আসত। হাল্কা কিছু একটা খেয়ে নিয়েই তারা আবার পাড়ার মাঠে খেলতে চলে যেত। কিন্তু সন্ধ্যের আগেই তারা আবার বাড়ি ফিরে এসে হাত মুখ ধুয়ে অন্যান্য ভাইবোন, মা কাকিমাদের সাথে একটু সময় কাটিয়েই তারা নিজেদের রুমে ঢুকে পড়ত। রাত দশটা সাড়ে দশটা পর্যন্ত একনাগাড়ে চলত পড়াশোনা। তারপর রাতের খাবার খেয়ে আবার তারা তাদের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় উঠে একে অপরকে আদর করতে শুরু করত। আর এ আদরের মাত্রা দিনে দিনে কম হবার বদলে বেড়েই যাচ্ছিল যেন। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছিল মন্তির রূপ সৌন্দর্য্য। কিন্তু সীমন্তিনী গণ্ডির ব্যাপারে সর্বদাই সজাগ ছিল।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার মাস ছয়েক আগে থেকেই মন্তি যেন মাঝে মাঝেই গভীর চিন্তায় ডুবে যেত। কিন্তু রতীশ জানতে চাইলে সে কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা পেড়ে বসত। রতীশ মন্তির ওপর কোন রকম জোরাজুরি করত না। তার আশেপাশে মন্তির উপস্থিতি টের পেলেই তার আর কিচ্ছুটির অভাব থাকত না যেন। মাধ্যমিক দেবার পরে একদিন রাতে বিছানায় গিয়ে রতীশকে প্রাণ ভরে আদর করবার পর মন্তি রতীশের বুকের ওপর শুয়ে বলেছিল রতীশকে দেরাদুনে গিয়ে এগার ক্লাসে ভর্তি হতে হবে। আর মন্তি নিজে তাদের জেলা শহরে চলে যাবে। কথাটা শুনেই রতীশ কাঁদতে শুরু করেছিল। তারপর থেকে রোজ রাতেই মন্তির বুকে মুখ চেপে ধরে নিজের চোখের জলে মন্তির বুক ভাসিয়ে দিত রতীশ। মন্তিকে বোঝাতে চেষ্টা করত যে সে তাকে ছেড়ে একা কিছুতেই থাকতে পারবে না। মন্তিও তাকে বলত, তার দাদাভাইকে ছেড়ে থাকতে তারও খুব কষ্ট হবে। কিন্তু দু’জনের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তাদের আলাদা আলাদা জায়গায় থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে।
ছোটবেলা থেকেই রতীশের ব্যাপারে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার যেন মন্তিই পুরোপুরি নিজের হাতে
তুলে নিয়েছিল। আর রতীশও মন্তির সব কথা নির্দ্বিধায় মেনে চলত। কারন ছোটবেলা থেকেই সে বুঝতে পেরেছিল যে মন্তিই তাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে। রতীশের জন্যে মন্তি নিজের যে কোন ক্ষতি স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকত। প্রয়োজনে হয়ত রতীশের জন্যে নিজের প্রাণটাও বিলিয়ে দিতে পারত সে। রতীশ লক্ষ্য করেছিল, তাদের বাড়ির গুরুজনেরাও মন্তির কথার বিরূদ্ধে যেতেন না। তারা সকলেই যে মন্তিকে একটু এড়িয়ে এড়িয়েই চলতেন, সেটা বুঝতে পারলেও রতীশ এর পেছনের কারনটাকে ওই বয়সে বুঝতে পারেনি। মন্তি খুব ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব রকমের জেদী আর রাগী। তবে তার জেদ আর রাগটা ছিল তার দাদাভাইয়ের চারপাশে একটা অদৃশ্য বৃত্তের মত। রতীশকে কেউ গালমন্দ করলে, রতীশের ওপর কেউ রাগ করলে, তার ওপর কেউ কোনও বিধি নিষেধ আরোপ করলেই মন্তির রাগ ফেটে বেরতো। আর তার ক্রোধের মুখোমুখি হবার সাহস বাড়ির বড় ছোট কেউ দেখাতে পারত না। একমাত্র রতীশের মা সরলাদেবী আর ছোটকাকু চন্দ্রকান্তবাবুই তাদের দু’জনের সাথে কথা বলতেন। আর মন্তির নিজের মা সীমাদেবী, যাকে রতীশ মেজমা বলে ডাকে, তিনি যেন কেমন বোবা চোখে তাদের দিকে চেয়ে থাকতেন মাঝে মাঝে।
______________________________
(Update No. 10)
দেরাদুন আসবার পর পর প্রথমদিকে দু’তিন মাস রতীশ রাতে ঠিকমত ঘুমোতেই পারত না। রোজ রাতে শুয়ে শুয়ে কাঁদত। ছোটবেলা থেকে যে শরীরটাকে বুকে জড়িয়ে শুতে সে অভ্যস্ত ছিল, সে শরীরটা তার হাতের নাগালের মধ্যে ছিল না। বাড়ি ছেড়ে যাবার আগে ছোটকাকু চন্দ্রকান্তবাবু মন্তি আর রতীশকে দুটো মোবাইল দিয়ে দিয়েছিলেন। সে মোবাইলের মাধ্যমে দিনে অসংখ্য বার রতীশ আর মন্তির কথা হত। মন্তি সব সময় রতীশকে নির্দেশ দিয়ে বুঝিয়ে দিত, রতীশ কি করবে না করবে। মন্তির কথাতেই সে কলেজের পড়াশোনার পাশাপাশি যোগা কলেজেও ভর্তি হয়েছিল। পয়সা কড়ির ভাবনাও রতীশকে ভাবতে হত না। মন্তির নির্দেশেই সে দেরাদুনে একটা ব্যাঙ্ক একাউন্ট খুলেছিল। আর সে একাউন্টে নিয়মিত বাড়ি থেকে পয়সা পাঠিয়ে দেওয়া হত। বাড়ি থেকে একমাত্র তার মা আর ছোটকাকুই মাঝে মধ্যে ফোন করে তার খবরাখবর নিতেন। আর তার কখন কি প্রয়োজন তার খবরাখবর একমাত্র মন্তিই রাখত।
বয়সে মন্তির থেকে মাস ছয়েকের বড় হলেও রতীশের স্বভাব একটা ছোট বাচ্চার মতই ছিল। সরল আর সিধেসাধা। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা তো দুরের কথা, কোনকিছু নিয়েই সে তেমন ভাবে ভাবত না। তার সমস্ত ভাবনা চিন্তা সে তার মন্তির ওপর ছেড়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত ছিল। কিন্তু মন্তি সে তুলনায় অনেক বেশী বাস্তববুদ্ধি সম্পন্না ছিল। আর প্রখর বিচার বুদ্ধির সাথে সাথে ভগবান তাকে অফুরন্ত রূপের ডালি দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। মন্তি ফোনে ফোনেই রতীশকে একটু একটু করে সব কিছু বুঝিয়েছিল। বুঝিয়েছিল যে তাদের ভাইবোনের স্বাভাবিক সম্পর্কটার সীমা তারা অনেক বছর আগেই পেরিয়ে এসেছিল। ধীরে ধীরে তারা প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে উঠেছিল। তাদের ভালবাসার শিকর মন্তির হৃদয়ে এমন গভীরভাবে গেঁড়ে বসেছিল যে মন্তির পক্ষে অন্য কোনও পুরুষকে তার জীবনে স্থান দেওয়ার কোন উপায় ছিল না। সে মনে মনে তার মন প্রাণ দেহ সবকিছুই তার দাদাভাইকে সঁপে দিয়েছে অনেক বছর আগে। তাই তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্য্যাদা দেবার অধিকার এ পৃথিবীতে একমাত্র রতীশেরই আছে। কিন্তু জেঠতুতো খুড়তুতো ভাই বোনের বিয়ে বাড়ির লোকেরা তো দুর, সমাজের কেউই স্বীকার করে নিতে পারবে না। রতীশ যদি তার নিজের জেঠতুতো ভাই না হত, তাহলে সে হয়ত সকলের কথার বিরূদ্ধে গিয়েই রতীশের সাথে পালিয়ে গিয়ে কোন মন্দিরে বা কোর্টে বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার পেতে বসবার কথা ভাবতে পারত। কিন্তু মাধ্যমিক দেবার অনেক আগে থেকেই মন্তি বুঝতে পেরেছিল যে তার ভালবাসার দাদাভাইকে বিয়ে করা, তার দাদাভাইকে চিরদিন নিজের করে ধরে রাখা, কোনমতেই সম্ভব নয়। আর রতীশ বাড়ির বড় ছেলে। তার ওপর পরিবারের সকলেরই অনেক আশা ভরসা আছে। বংশ রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে রতীশকে ভবিষ্যতে অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করে সংসারী হতে হবেই। তাই তার মন থেকে মন্তির প্রভাবটাকে দুর করতে হলে তাদের মাঝে শারীরিক ব্যবধানটা দুর করা একান্তই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। তাই মন্তি পনেরো বছর বয়সেই তাকে নিজের কাছ থেকে অনেক দুরে ঠেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
______________________________
(Update No. 11)
মন মানতে না চাইলেও মন্তির কথার যথার্থতা রতীশ ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিল। পাঁচ বছরে মন্তির সুন্দর লোভনীয় শরীরটার মোহ তার মন থেকে একেবারেই সরে গিয়েছিল। এখন আর সে রাতে বিছানায় শুয়ে ছটফট করে না। কিন্তু ফোন যোগাযোগটা আগের মতই অক্ষুন্ন আছে তাদের। আজও রতীশের ভাল মন্দ সব কিছুর সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার একমাত্র তার ছোটবোন মন্তিরই। তাই মন্তির কথাতেই সে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছিল।
বাড়ির কাছাকাছি এসে সে মন্তিকে ফোন করে জানিয়ে দিল প্রিসিপ্যাল স্যারের সাথে তার কি কি কথা হয়েছে।
****************