21-02-2020, 08:47 AM
।।একচত্বারিশ পর্ব।।
সুভদ্রা দরজা বন্ধ করে পাশের ঘর থেকে বৈদুর্যকে আড়াল থেকে মুগ্ধ হয়ে দেখে।কেমন নিরীহ ভাবে বইতে ডুবে আছে গুণ্ডাটা। কিছুক্ষণ আগে মারামারি করে জামা ছিড়ে এসেছে দেখলে কে বলবে? সুভদ্রার ভুল হয় নি,একটাই দুশ্চিন্তা সারাদিন বাড়ীতে একা একা থাকে,কে ওকে সামলাবে? কড়া হতে হবে একদম প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।মনে মনে লজ্জা পেল এভাবে সব সময় নজরে নজরে রাখা যেন একটা বাচ্চা ছেলে। ঘড়ি দেখল আটটা বেজে গেছে,বেশি বেলা করলে বাজার উঠে যাবে। বৈদুর্যর পাশে গিয়ে দাড়ালো। মাথায় হাত রাখতে ঘুরে জড়িয়ে ধরে বৈদুর্য বলল,মিমিদি আমি আর এরকম করবো না।
–ঠিক আছে।এখন চলো বাজার করতে হবে।
বৈদুর্য উঠে তৈরী হতে থাকে। সুভদ্রার রাগ হয়,মানুষটা পাথর নাকি?নারীদেহ কি তাকে বিচলিত করে না? বাজার করতে যাবো বলতেই ওকে ছেড়ে দিয়ে অমনি জামা পরে বাজার যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে। সুভদ্রা বলল, আমাকে একটা চুমু দাও।সেদিনের মত ঠোট কামড়ে ছিড়ে দিও না।
–ঠিক আছে দিচ্ছি।সুভদ্রার দু-গাল ধরে আলতো করে ঠোট স্পর্শ করে।
–এ আবার কি? মনে হচ্ছে খুব তাড়া আছে?
–আচ্ছা ভাল করে দিচ্ছি।বৈদুর্য এবার সুভদ্রাকে জড়িয়ে ধরে ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে লাগলো। সুভদ্রা মনে মনে ভাবে এ কোন বলদকে নিয়ে তাকে কাটাতে হবে? সব কি ওকে বলে বলে করাতে হবে?নিজের কোনো ইছে-অনিচ্ছে থাকবে না?বয়স হচ্ছে অথচ ছেলে মানুষী গেল না। ঠোট ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, আচ্ছা তোমার ভাল লাগেনি?
বৈদুর্য কিছু না বলে মাথা নীচু করে মিটমিট করে হাসে।
–হাসির কি হল? কি জিজ্ঞেস করলাম শোন নি?
–হুউউম।
–তাহলে তুমি জোর করো না কেন?
–আমি জানি সময় হলেই তুমি দেবে তাই জোর করিনা।
সব কথার উত্তর ঠোটের ডগায় সাজানো।সুভদ্রার ভালই লাগে ছেলে মানুষ লোকটাকে নিয়ে বেশ সময় কাটে।সন্তান পালনের হাতে খড়ি যেন।
বাজারে গিয়ে পাঁঠার মাংস ভেটকি মাছেরফিলে আরও কিছু কেনাকাটা করে একটা হোশিয়ারী দোকানে ঢুকে কালো আর খয়েরী রঙের দুটো টি-শার্ট কিনলো।বৈদুর্যর যা ফিগার দারুণ মানাবে। তারপর ওষুধের দোকানে গিয়ে কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল কিনে গাড়ী স্টার্ট করতে বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে,মিমিদি তোমার শরীর খারাপ?
–কেন?
–তুমি ওষুধ কিনলে।তোমার শরীর খারাপ আমাকে বলোনি তো?অভিমানী সুরে বলল বৈদুর্য।
সুভদ্রা আড়চোখে দেখল মুখ গম্ভীর করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসি পেয়ে গেল,বা-হাতে গলা ধরে নিজের দিকে টেনে ফিসফিস করে বলে,তুমি কি জিজ্ঞেস করেছো কিসের ওষুধ?
–থাক আমি জানতে চাই না।বলতে হবে না।
–এ্যাই বোকা অত রাগ দেখাবে নাতো? যাতে সন্তান না এসে যায় সেই পিল।
বৈদুর্য চোখ বড় বড় করে মিমিদির দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে পড়ল সন্তানহীনতার জন্য গোদেলিয়েভ ম্যামের মনে কি হাহাকার।সুভদ্রা জিজ্ঞেস করলো, কি ভাবছো?
–তার মানে তুমি সন্তান চাও না?
–আমি তা বলিনি। আমার সন্তান জন্মে দেখবে তার বাবা বেকার সেটা আমি চাই না।তুমি পাস করো তারপর দেখা যাবে।
–এই ব্যাপার?আমাকে বললেই হতো,ওষুধ খাবার কোনো দরকার ছিল না।
–তোমার না থাক আমার দরকার আছে।আজ আমরা এক বিছানায় ঘুমাবো।
বৈদুর্যর অভিমান কেটে যায় এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,আজ আর তাহলে পড়বো না?
–আঃ কি হচ্ছে,এ্যাক্সিডেণ্ট করাবে নাকি? না পড়ার কি আছে?
বৈদুর্যের মন খুশিতে ভরপুর।আজ মিমিদির সঙ্গে ঘুমোবে।মিমিদির গায়ের গন্ধে এক অনির্বচনীয় মাতাল করা নেশা। মাতৃ গর্ভে শিশু যেমন নিরাপদ নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে মিমিদির সঙ্গে গায়ে লাগিয়ে থাকলে অন্ধকারে তেমন যেন মনে হয় কেউ বুঝি নিরাপত্তার চাদরে তাকে মুড়ে রেখেছে।
–মিমিদি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
–আবার কি কথা?
–মাছ কেটে কেটে আনলে কেন?
–ফিশ ফ্রাই করবো।ওকে ফিলে বলে।
–ফিশ ফ্রাই? আমার খুব ভাল লাগে।
–কাল করবো,আজ তৈরী করে রাখবো জিনি এলে সকালে ভাজবো।
গাড়ী চালাতে চালাতে সুভদ্রা কত কথা ভাবে। পাশে বসে আছে তার স্বামী ওর মধ্যে স্বামীত্ব ফলাবার চেষ্টা নেই বাধ্য ছেলের মত বসে আছে। বৈদুর্য যদি পাস করে সরকারী অফিসার হয় তাহলেও কি বদলাবে না? সেই ছবিগুলো মনে মনে কল্পনা করে সুভদ্রা বেশ আমোদ অনুভব করে। ছাত্র হিসেবে ও খুব ভাল,আগে যেমন দেখেছে পাস করার পরও সেই তেমনি আছে। ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করে।নিজেকে সংযত করে বেশি প্রশ্রয় দিলে পেয়ে বসবে। পাস না করা অবধি দমন করতে হবে ইচ্ছেকে।
বৈদুর্য সব জিনিসপত্র নামিয়ে রাখল ডাইনিং টেবিলের উপর। সুভদ্রা টি-শার্ট দুটো ওর হাতে দিয়ে বলল,পরে দেখো।
বৈদুর্য বাধ্য ছেলের মত জামা খুলে কালো টি-শার্ট গায়ে দিয়ে দেখলো মিমিদি তার দিকে তাকিয়ে মুখে দুষ্টু হাসি।
–হাসছো কেন?
–একেবারে হিরো–দারুণ লাগছে।সুভদ্রা খিলখিল করে হেসে উঠলো।
বৈদুর্য লজ্জা পায়।কাল জিনির আসার কথা।এক সময় জিনি তাকে হিরো বলে ঠাট্টা করত।একই কলেজে জিনির সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়তো। ক্লাশের বা-দিকের বেঞ্চে মেয়েরা আর ডানদিকে ছেলেরা বসতো।সব ছেলেই চাইতো বেঞ্চের বা-দিক ঘেষে বসতে। তাই নিয়ে চলতো নিত্য রেষারিষি।একমাত্র অনিমেষ কলেজে আসতো বাইক নিয়ে,ওর লক্ষ্য ছিল জিনি।শুভর ভাল লাগতো না কেননা জিনি ওদের পাড়ার মেয়ে।রমণী কত রমণীয় সে ব্যাপারে বৈদুর্যের কোনো ধারণা ছিল না। নিরীহ ভীতু প্রকৃতি,অবশ্য ক্ষেপে গেলে হিতাহিত জ্ঞান থাকতো না।
–হা করে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো? যাও পড়তে বোসো, রান্না হলে ডাকবো।
–মিমিদি একটা কথা বলবো?কিভাবে ফিশ ফ্রাই বানায় আমাকে শেখাবে?
সুভদ্রা বুঝতে পারে না পড়ার ছল। চোখ পাকিয়ে বলে,পরে শিখিয়ে দেবো,এখন পড়তে বোসো।
অগত্যা বৈদুর্য নিজের ঘরে গিয়ে বই নিয়ে বসলো।জিনি ছিল খুব ফাটুশ,কোনো ছেলেকে পাত্তা দিতনা।একদিন কলেজ ছুটির পর জিনি ওর বন্ধুদের সঙ্গে দল বেধে ফিরছে। কোথা থেকে অনিমেষ ফটফটিয়ে এসে বাইক নিয়ে জিনির পাশে দাঁড়িয়ে বলল,উঠে এসো বাড়ী পৌছে দিচ্ছি।বাইক থাকতে হেটে যাবে কেন?
পিছনে ছিল বৈদুর্যর সঙ্গে শুভ। ব্যাপারটা ঠিক খেয়াল করেছে,ছুটে গিয়ে বলল, এ্যাই অনি যেখানে যাচ্ছিস সেখানে যা।
শুভর এই আগ বাড়িয়ে যাওয়া বৈদুর্যের ভাল লাগে না। সে বিরত করার জন্য এগিয়ে গেল।
–তুই কেন এর মধ্যে নাক গলাচ্ছিস,যেখানে যাচ্ছিস সেখানে যা।অনিমেশ বলল।
–জিনি আমাদের পাড়ার মেয়ে।অনেকদিন ধরে দেখছি কিছু বলছি না।
–কি করবি তুই?ফোট বেশি ঝামেলা করিস না।
–না গেলে কি করবি তুই?
কথা শেষ হবার আগেই অনিমেষ এমন আচমকা ধাক্কা দিল শুভ টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেল।মেয়েগুলো খিলখিল করে হেসে উঠলো।কি হল বৈদুর্যর কে জানে,এগিয়ে গিয়ে বাইকে এক লাথি কষাতে অনিমেষ বাইক সমেত মাটিতে পড়ে গিয়ে একেবারে হতভম্ভ,বৈদুর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা বলার সাহস পেল না। মাটি থেকে উঠে বাইকে স্টার্ট দিয়ে দ্রুত চলে গেল। বৈদুর্য মাটি থেকে শুভকে তুলে বলল,কি দরকার ওদের সঙ্গে লাগতে যাওয়ার?
–কি রে হিরোগিরি দেখাবার জন্য অনিকে শিখিয়ে আনিস নি তো?
বৈদুর্য পিছনে তাকিয়ে দেখল কথাটা বলে জিনি খিলখিল করে হাসছে। জিনির বিয়ে ঠিক হলে কার্ড দিয়ে বলেছিল,এ্যাই হিরো আসবি কিন্তু।আজ মিমিদি সেই কথা বলল।কাল জিনি আসছে সেদিনের কথা হয়তো আজ তার মনে নেই।কাল যখন দেখবে খুব অবাক হবে।
সুভদ্রা ঘরে ঢুকে টেবিলে একটা ফিশ ফ্রাই প্লেটে করে এগিয়ে দিয়ে বলল, দেখো তো কেমন হয়েছে?
বৈদুর্য তাকিয়ে দেখল মিমিদির একটা ব্রেসিয়ার গায়ে কোমরে বাধা টাওয়াল।হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। সুভদ্রা কোমর জড়িয়ে ধরে বৈদুর্য জিজ্ঞেস করলো ,তুমি খাবে না?
–বললাম তো কাল করবো।সুভদ্রা সিগারেটে টান দিল।
–এখন শুধু আমার জন্য করেছো?
–উফস এত কথা বলে?খেয়ে বলো কেমন হয়েছে।
বৈদুর্য বুঝতে পারে তার জন্যই একটা ভেজেছে,ফিশ ফ্রাই তুলে মিমিদির মুখের কাছে ধরে বলল,তুমি এক কামড় খাও।
সুভদ্রা নীচু হয়ে সামান্য একটু কামড়ে বলল,তাড়াতাড়ি খেয়ে এসো।আমি ভাত বাড়ছি।
সুভদ্রা দরজা বন্ধ করে পাশের ঘর থেকে বৈদুর্যকে আড়াল থেকে মুগ্ধ হয়ে দেখে।কেমন নিরীহ ভাবে বইতে ডুবে আছে গুণ্ডাটা। কিছুক্ষণ আগে মারামারি করে জামা ছিড়ে এসেছে দেখলে কে বলবে? সুভদ্রার ভুল হয় নি,একটাই দুশ্চিন্তা সারাদিন বাড়ীতে একা একা থাকে,কে ওকে সামলাবে? কড়া হতে হবে একদম প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না।মনে মনে লজ্জা পেল এভাবে সব সময় নজরে নজরে রাখা যেন একটা বাচ্চা ছেলে। ঘড়ি দেখল আটটা বেজে গেছে,বেশি বেলা করলে বাজার উঠে যাবে। বৈদুর্যর পাশে গিয়ে দাড়ালো। মাথায় হাত রাখতে ঘুরে জড়িয়ে ধরে বৈদুর্য বলল,মিমিদি আমি আর এরকম করবো না।
–ঠিক আছে।এখন চলো বাজার করতে হবে।
বৈদুর্য উঠে তৈরী হতে থাকে। সুভদ্রার রাগ হয়,মানুষটা পাথর নাকি?নারীদেহ কি তাকে বিচলিত করে না? বাজার করতে যাবো বলতেই ওকে ছেড়ে দিয়ে অমনি জামা পরে বাজার যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে। সুভদ্রা বলল, আমাকে একটা চুমু দাও।সেদিনের মত ঠোট কামড়ে ছিড়ে দিও না।
–ঠিক আছে দিচ্ছি।সুভদ্রার দু-গাল ধরে আলতো করে ঠোট স্পর্শ করে।
–এ আবার কি? মনে হচ্ছে খুব তাড়া আছে?
–আচ্ছা ভাল করে দিচ্ছি।বৈদুর্য এবার সুভদ্রাকে জড়িয়ে ধরে ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে লাগলো। সুভদ্রা মনে মনে ভাবে এ কোন বলদকে নিয়ে তাকে কাটাতে হবে? সব কি ওকে বলে বলে করাতে হবে?নিজের কোনো ইছে-অনিচ্ছে থাকবে না?বয়স হচ্ছে অথচ ছেলে মানুষী গেল না। ঠোট ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, আচ্ছা তোমার ভাল লাগেনি?
বৈদুর্য কিছু না বলে মাথা নীচু করে মিটমিট করে হাসে।
–হাসির কি হল? কি জিজ্ঞেস করলাম শোন নি?
–হুউউম।
–তাহলে তুমি জোর করো না কেন?
–আমি জানি সময় হলেই তুমি দেবে তাই জোর করিনা।
সব কথার উত্তর ঠোটের ডগায় সাজানো।সুভদ্রার ভালই লাগে ছেলে মানুষ লোকটাকে নিয়ে বেশ সময় কাটে।সন্তান পালনের হাতে খড়ি যেন।
বাজারে গিয়ে পাঁঠার মাংস ভেটকি মাছেরফিলে আরও কিছু কেনাকাটা করে একটা হোশিয়ারী দোকানে ঢুকে কালো আর খয়েরী রঙের দুটো টি-শার্ট কিনলো।বৈদুর্যর যা ফিগার দারুণ মানাবে। তারপর ওষুধের দোকানে গিয়ে কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল কিনে গাড়ী স্টার্ট করতে বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে,মিমিদি তোমার শরীর খারাপ?
–কেন?
–তুমি ওষুধ কিনলে।তোমার শরীর খারাপ আমাকে বলোনি তো?অভিমানী সুরে বলল বৈদুর্য।
সুভদ্রা আড়চোখে দেখল মুখ গম্ভীর করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসি পেয়ে গেল,বা-হাতে গলা ধরে নিজের দিকে টেনে ফিসফিস করে বলে,তুমি কি জিজ্ঞেস করেছো কিসের ওষুধ?
–থাক আমি জানতে চাই না।বলতে হবে না।
–এ্যাই বোকা অত রাগ দেখাবে নাতো? যাতে সন্তান না এসে যায় সেই পিল।
বৈদুর্য চোখ বড় বড় করে মিমিদির দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে পড়ল সন্তানহীনতার জন্য গোদেলিয়েভ ম্যামের মনে কি হাহাকার।সুভদ্রা জিজ্ঞেস করলো, কি ভাবছো?
–তার মানে তুমি সন্তান চাও না?
–আমি তা বলিনি। আমার সন্তান জন্মে দেখবে তার বাবা বেকার সেটা আমি চাই না।তুমি পাস করো তারপর দেখা যাবে।
–এই ব্যাপার?আমাকে বললেই হতো,ওষুধ খাবার কোনো দরকার ছিল না।
–তোমার না থাক আমার দরকার আছে।আজ আমরা এক বিছানায় ঘুমাবো।
বৈদুর্যর অভিমান কেটে যায় এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,আজ আর তাহলে পড়বো না?
–আঃ কি হচ্ছে,এ্যাক্সিডেণ্ট করাবে নাকি? না পড়ার কি আছে?
বৈদুর্যের মন খুশিতে ভরপুর।আজ মিমিদির সঙ্গে ঘুমোবে।মিমিদির গায়ের গন্ধে এক অনির্বচনীয় মাতাল করা নেশা। মাতৃ গর্ভে শিশু যেমন নিরাপদ নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকে মিমিদির সঙ্গে গায়ে লাগিয়ে থাকলে অন্ধকারে তেমন যেন মনে হয় কেউ বুঝি নিরাপত্তার চাদরে তাকে মুড়ে রেখেছে।
–মিমিদি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
–আবার কি কথা?
–মাছ কেটে কেটে আনলে কেন?
–ফিশ ফ্রাই করবো।ওকে ফিলে বলে।
–ফিশ ফ্রাই? আমার খুব ভাল লাগে।
–কাল করবো,আজ তৈরী করে রাখবো জিনি এলে সকালে ভাজবো।
গাড়ী চালাতে চালাতে সুভদ্রা কত কথা ভাবে। পাশে বসে আছে তার স্বামী ওর মধ্যে স্বামীত্ব ফলাবার চেষ্টা নেই বাধ্য ছেলের মত বসে আছে। বৈদুর্য যদি পাস করে সরকারী অফিসার হয় তাহলেও কি বদলাবে না? সেই ছবিগুলো মনে মনে কল্পনা করে সুভদ্রা বেশ আমোদ অনুভব করে। ছাত্র হিসেবে ও খুব ভাল,আগে যেমন দেখেছে পাস করার পরও সেই তেমনি আছে। ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করে।নিজেকে সংযত করে বেশি প্রশ্রয় দিলে পেয়ে বসবে। পাস না করা অবধি দমন করতে হবে ইচ্ছেকে।
বৈদুর্য সব জিনিসপত্র নামিয়ে রাখল ডাইনিং টেবিলের উপর। সুভদ্রা টি-শার্ট দুটো ওর হাতে দিয়ে বলল,পরে দেখো।
বৈদুর্য বাধ্য ছেলের মত জামা খুলে কালো টি-শার্ট গায়ে দিয়ে দেখলো মিমিদি তার দিকে তাকিয়ে মুখে দুষ্টু হাসি।
–হাসছো কেন?
–একেবারে হিরো–দারুণ লাগছে।সুভদ্রা খিলখিল করে হেসে উঠলো।
বৈদুর্য লজ্জা পায়।কাল জিনির আসার কথা।এক সময় জিনি তাকে হিরো বলে ঠাট্টা করত।একই কলেজে জিনির সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়তো। ক্লাশের বা-দিকের বেঞ্চে মেয়েরা আর ডানদিকে ছেলেরা বসতো।সব ছেলেই চাইতো বেঞ্চের বা-দিক ঘেষে বসতে। তাই নিয়ে চলতো নিত্য রেষারিষি।একমাত্র অনিমেষ কলেজে আসতো বাইক নিয়ে,ওর লক্ষ্য ছিল জিনি।শুভর ভাল লাগতো না কেননা জিনি ওদের পাড়ার মেয়ে।রমণী কত রমণীয় সে ব্যাপারে বৈদুর্যের কোনো ধারণা ছিল না। নিরীহ ভীতু প্রকৃতি,অবশ্য ক্ষেপে গেলে হিতাহিত জ্ঞান থাকতো না।
–হা করে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো? যাও পড়তে বোসো, রান্না হলে ডাকবো।
–মিমিদি একটা কথা বলবো?কিভাবে ফিশ ফ্রাই বানায় আমাকে শেখাবে?
সুভদ্রা বুঝতে পারে না পড়ার ছল। চোখ পাকিয়ে বলে,পরে শিখিয়ে দেবো,এখন পড়তে বোসো।
অগত্যা বৈদুর্য নিজের ঘরে গিয়ে বই নিয়ে বসলো।জিনি ছিল খুব ফাটুশ,কোনো ছেলেকে পাত্তা দিতনা।একদিন কলেজ ছুটির পর জিনি ওর বন্ধুদের সঙ্গে দল বেধে ফিরছে। কোথা থেকে অনিমেষ ফটফটিয়ে এসে বাইক নিয়ে জিনির পাশে দাঁড়িয়ে বলল,উঠে এসো বাড়ী পৌছে দিচ্ছি।বাইক থাকতে হেটে যাবে কেন?
পিছনে ছিল বৈদুর্যর সঙ্গে শুভ। ব্যাপারটা ঠিক খেয়াল করেছে,ছুটে গিয়ে বলল, এ্যাই অনি যেখানে যাচ্ছিস সেখানে যা।
শুভর এই আগ বাড়িয়ে যাওয়া বৈদুর্যের ভাল লাগে না। সে বিরত করার জন্য এগিয়ে গেল।
–তুই কেন এর মধ্যে নাক গলাচ্ছিস,যেখানে যাচ্ছিস সেখানে যা।অনিমেশ বলল।
–জিনি আমাদের পাড়ার মেয়ে।অনেকদিন ধরে দেখছি কিছু বলছি না।
–কি করবি তুই?ফোট বেশি ঝামেলা করিস না।
–না গেলে কি করবি তুই?
কথা শেষ হবার আগেই অনিমেষ এমন আচমকা ধাক্কা দিল শুভ টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেল।মেয়েগুলো খিলখিল করে হেসে উঠলো।কি হল বৈদুর্যর কে জানে,এগিয়ে গিয়ে বাইকে এক লাথি কষাতে অনিমেষ বাইক সমেত মাটিতে পড়ে গিয়ে একেবারে হতভম্ভ,বৈদুর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে কোনো কথা বলার সাহস পেল না। মাটি থেকে উঠে বাইকে স্টার্ট দিয়ে দ্রুত চলে গেল। বৈদুর্য মাটি থেকে শুভকে তুলে বলল,কি দরকার ওদের সঙ্গে লাগতে যাওয়ার?
–কি রে হিরোগিরি দেখাবার জন্য অনিকে শিখিয়ে আনিস নি তো?
বৈদুর্য পিছনে তাকিয়ে দেখল কথাটা বলে জিনি খিলখিল করে হাসছে। জিনির বিয়ে ঠিক হলে কার্ড দিয়ে বলেছিল,এ্যাই হিরো আসবি কিন্তু।আজ মিমিদি সেই কথা বলল।কাল জিনি আসছে সেদিনের কথা হয়তো আজ তার মনে নেই।কাল যখন দেখবে খুব অবাক হবে।
সুভদ্রা ঘরে ঢুকে টেবিলে একটা ফিশ ফ্রাই প্লেটে করে এগিয়ে দিয়ে বলল, দেখো তো কেমন হয়েছে?
বৈদুর্য তাকিয়ে দেখল মিমিদির একটা ব্রেসিয়ার গায়ে কোমরে বাধা টাওয়াল।হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। সুভদ্রা কোমর জড়িয়ে ধরে বৈদুর্য জিজ্ঞেস করলো ,তুমি খাবে না?
–বললাম তো কাল করবো।সুভদ্রা সিগারেটে টান দিল।
–এখন শুধু আমার জন্য করেছো?
–উফস এত কথা বলে?খেয়ে বলো কেমন হয়েছে।
বৈদুর্য বুঝতে পারে তার জন্যই একটা ভেজেছে,ফিশ ফ্রাই তুলে মিমিদির মুখের কাছে ধরে বলল,তুমি এক কামড় খাও।
সুভদ্রা নীচু হয়ে সামান্য একটু কামড়ে বলল,তাড়াতাড়ি খেয়ে এসো।আমি ভাত বাড়ছি।