21-02-2020, 08:47 AM
।।চত্বারিংশ পর্ব।।
সুনন্দা মুখার্জির অস্বাভাবিক মৃত্যু তীব্রভাবে আলোড়িত করে সুভদ্রাকে।কেউ না জানলেও সভদ্রা বুঝতে পেরেছে মাম্মী কেন চলে গেল? শ্বাশুড়ীর মর্যাদা নিয়ে এক ছাদের নীচে বৈদুর্যের সং বসবার করা সুনন্দার পক্ষে কত কঠিন সুভদ্রা অনুভব করতে পারে। বজ্রানন্দ একটা আভাস আগেই দিয়েছিল কিন্তু আঘাতটা এভাবে আসবে অনুমান করতে পারেনি।আবার মনে হয় মাম্মীতো আশির্বাদ করে গেছেন,ওর সম্পর্কে ছিল স্নেহ সিক্ত মন্তব্য। তাহলে হয়তো অতীতের সেই ঘটনার কথা ভেবে লজ্জায় নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। মনের মধ্যে নানা ভাবনার সমাবেশ।দিব্যেন্দুর চেষ্টায় এই অবস্থাতেও বাড়ী বিক্রি হয়ে যায়। সব আসবাব নিয়ে গেছে শুধু বাপির লাইব্রেরীর বই সহ চারটে আলমারি আর একটা সেক্রেটারিয়েট টেবিল খান কয়েক চেয়ার সুভদ্রা নিয়ে এসেছে রাজার হাট ফ্লাটে।রাতের একটা সীমা আছে,রাত ফুরায় আসে দিন। সুর্য ওঠে আবার ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।বৈদুর্যের চেহারা দেখে সুভদ্রা স্থির করে ওকে আইপিএস পরীক্ষায় বসাবে।মিমিদি যা বলবে তাতেই রাজি।শুয়ে বসে কেটেছে কটা দিন,নীরবে সেবা করে গেছে মিমদির।অনেকদিন হয়ে গেল এবার বেরোতে হয়।
এজলাসের দরজায় লেখা,সুভদ্রা মুখার্জি(সেন), সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। ''.ের মামলা চলছে। আসামীদের পক্ষে ডাক সাইটে এ্যাডভোকেট কেকে। তদন্ত রিপোর্ট পেশ হয়েছে। বারো বছরের একটি মেয়েকে একাধিক ব্যক্তি উপর্যুপরি পশুর মত বলাৎকার করে হাইমেন ফাটিয়ে দিয়েছে।কিছুক্ষণ পর সুভদ্রা চোখ তুলে তদন্তকারী অফিসারকে জিজ্ঞেস করেন,পুলিশে কতদিন আছেন?
–আজ্ঞে হুজুর বিশ বছর।
–আপনি কি গল্প লেখেন?
তদন্তকারী অফিসার হকচকিয়ে যান,মুখে কোনো কথা যোগায় না।
–কয়েকজন দুস্কৃতি তার মানে কি? দুজন না তিনজন?তাদের নাম কি? তারা ধরা পড়েনি? সনাক্তকরণ করিয়েছেন?
–আপনি বললে করাবো।
–আদালতকে সব বলতে হবে? তাহলে আপনি কি করবেন?
সরকারী কৌশুলি এগিয়ে এসে বললেন, মাই লার্ড আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আর কিছুদিন সময় দিন।
–আপনাকে কেউ প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে কি?
–না হুজুর।
–রিপোর্টে সব কিছু তথ্য সহ স্পেসিফিক্যালি মেনশন করতে হবে, কোনো কাহিনী বা গল্প আদালত শুনতে চায় না।আমি হতভাগ্য মেয়েটার জবানবন্দী শুনেছি,এত অল্প বয়সে যেভাবে পুংখ্যানুপুঙ্খ্য বর্ণনা করেছে তা ঐটুকু মেয়ের পক্ষে বানিয়ে বলা সম্ভব নয়।কোথায় বাস করছি আমরা?আসামীদের হাজির করুণ।
কুঞ্জকিশোর নাগ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন। আদালত চত্বরে একটা কথা প্রচলিত আছে, কেকে দিনকে অনায়াসে রাত করে দিতে পারেন। সেই কেকে চোখ তুলে সুভদ্রার দিকে তাকাতে পারেন না। সুভদ্রার কথাগুলো তার মর্মে গিয়ে আঘাত করে। পনের দিন পর আবার দিন পড়লো।
দূরে ছাপড়ার চাল একটা চায়ের দোকানে এক গেলাস চা নিয়ে বসে আছে কেকে।এদিকটায় উকিলরা বেশি আসে না,ভীড় কম।হঠাৎ সমরবাবু এসে বলল,আরে কুঞ্জদা এখানে একা একা?
–সারদার মেয়ের কথা ভাবছি।ম্লান হেসে বলল কেকে।কতই বা বয়স হবে আম্মার মেয়ের মতই হবে।
–সুভদ্রা সেনের কথা বলছেন?সবে তো এল কদিন যাক ধীরে ধীরে লাইনে এসে যাবে।হে-হে-হে।
সমরের হাসিটা ভাল লাগে না,কেকে অন্য কথা পাড়ে,আজ কোনো কেস নেই?
–শনিবার।এখন আবার কেস কি?
গাড়ীতে বসেও ঘুরে ফিরে আসছে মেয়েটির মুখ। নিজেকে সমাজের একজন হিসেবে ভাবতে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে আসে।মানুষ কিভাবে এমন পশুর মত কাজ করতে পারে? ওদের বাড়ীতে মা-বোন নেই,একবারও কি তাদের কথা মনে পড়ল না? শনিবার তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় আদালতের কাজ।
তিনতলায় উঠে কলিং বেল টিপে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ভ্রু কুচকে যায়,কি ব্যাপার কেউ নেই নাকি? চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে অবাক,কোথায় গেল বৈদুর্য? মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। চেঞ্জ করে রান্না ঘরে ঢুকলো চা করতে। একটা কাজের লোক রাখা দরকার। সোফায় বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে,এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। মনে হচ্ছে বাবু এলেন। দরজা খুলে বৈদুর্যকে দেখে বিষম খাবার অবস্থা।উস্কোখুস্কো বিধ্বস্ত চেহারা,জামা ছেড়া।বৈদুর্য ঢুকে বলল,তুমি এসে গেছো?বিস্কুট নেই।
–তোমার জামা ছিড়লো কিভাবে?
–মিমিদি একটূ চা দেবে? আচ্ছা আমি নিয়ে নিচ্ছি।
–তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি।
–সে অনেক ব্যাপার।
–আমি সেইটাই শুনতে চাই,কি ব্যাপার?
–সেইদিন এসেছিল না আনিস না কি নাম? আমি হাটতে হাটতে যাচ্ছি ওকে আমি কিছুই বলিনি বিশ্বাস করো, আমার কলার ধরে একটা বিশ্রী কথা বলল। আমি ভাল করে বললাম কলার ছেড়ে দিতে অমনি তোমার নাম করে গালি দিল।হাত মুচড়ে ঘা কতক দিতে বাছাধনের হাত থেকে ছাড়া পাই।
সুভদ্রা হাসবে না কাদবে,বুঝতে পারে না। এ কার পাল্লায় পড়লো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,তোমার পরীক্ষা দিয়ে কোনো লাভ নেই।
–একথা বলছো কেন?আমি কি পড়ছি না?
–এভাবে গুণ্ডামী করে বেড়ালে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে যাবে।
বৈদুর্য মনে মনে কি চিন্তা করে বলল,তুমি কথাটা ঠিক বলেছো। লোকটা থানায় ডায়েরী করতে পারে।জেল খাটাবার হুমকি দিচ্ছিল।
–ঠিক আছে মুখ হাত ধুয়ে পড়তে বোসো।আমি চা দিচ্ছি।যেই বেরিয়েছি অমনি মস্তানি করতে বেরিয়ে পড়লে। আমি কোথায় ভাবছি একা একা কি করছে,তাড়াতাড়ি চলে এলাম।ফিরে দেখি বাবুর পাত্তা নেই।
বৈদুর্য চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে কোনো কথা বলে না। সুভদ্রা বলল,হা করে দাঁড়িয়ে থাকলে কি বললাম কানে যায় নি?
বৈদুর্যকে চা দিয়ে সুভদ্রা খাবার করতে রান্না ঘরে ঢুকলো। বৈদুর্য বুঝতে পারে কাজটা ঠিক হয়নি।কিন্তু লোকটা গায়ে পড়ে গোলমাল করতে এল। মিমিদির দুঃখ পেয়েছে,বৈদুর্যর মন খারাপ।না বেরোলেই ভাল হত। পড়তে পড়তে মাথা ধরে গেছিল তাই ভাবলো একটু ঘুরে এলে হয়তো ভাল লাগবে।বিস্কুটও ফুরিয়ে গেছে।
সুভদ্রা খাবার নিয়ে এসে দেখলো গুম হয়ে বসে আছে বৈদুর্য। এত বলা ঠিক হয়নি। টেবিলে খাবার দিয়ে বলল, নেও খেয়ে নেও।
বৈদুর্যর মাথা বুকে চেপে জিজ্ঞেস করে,বকেছি বলে রাগ হয়েছে?
বৈদুর্য মুখ তুলে বলল,তুমি তো আমার ভালর জন্যই বকেছো।রাগ করবো কেন? মিমিদি আমি আর এরকম করবো না।
–লক্ষ্মী ছেলে।সুভদ্রা দুগাল ধরে চুমু খেল।
ফোন বাজছে,সুভদ্রা ফোন ধরতে গেল।রিসিভার কানে লাগাতে শুনতে পেল, দিদিভাই কাল তোমার ওখানে যাচ্ছি।
জিনি কাল আসবে,একটু মাংস আনা দরকার। ফ্রিজ খুলে দেখলো কি কি আছে। বৈদুর্যর কাছে গিয়ে বলল, খাওয়া দাওয়ার পর বের হবো,বাজার করতে হবে। কলিং বেল বেজে উঠলো।আবার কে এলো?
বৈদুর্য উঠতে যাচ্ছিল সুভদ্রা বলল,তুমি পড়ো,আমি দেখছি।
দরজা খুলে অবাক,দে-বাবু সঙ্গে একটি ছেলে নাকের উপর ব্যাণ্ডেড লাগানো।ছেলেটিকে মনে হল কোথায় দেখেছে।জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার দে-বাবু?
দে বাবু দাত বের করে বললেন,একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। ম্যাডাম এর নাম আনিস, স্যারের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছে।
–ওর নাকে কি হয়েছে?
–কিছু না,সামান্য কেটে গেছে। টিটেনাস ইঞ্জেকশন নিয়েছে।
সুভদ্রা বুঝতে পারে একেই শ্রীমান মেরেছে। জিজ্ঞেস করল,পুলিশে ডায়েরী করেনি?
–পাগল?গোবিন্দ শুনে খুব ক্ষেপে গেছে।ওইতো পাঠালো স্যারের কাছে ক্ষমা চাইতে,স্যার নেই?
–তুমি ওর কলার ধরেছিলে?
–আমি বুঝতে পারিনি,ভুল হয়ে গেছে।আমি উনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।
–ঠিক আছে আমাকে বললেই হবে। মিটে গেলেই ভাল।
ছেলেটি চলে যেতে আশুবাবুকে বলল সুভদ্রা,এভাবে যাকে তাকে আনবেন না।
–না ম্যাডাম গোবিন্দ এত করে বল্ল….।
গোবিন্দ কে,নামটা শোনা-শোনা লাগছে।যাকে মারলো সেই ক্ষমা চাইতে এসেছে ভেবে মজা লাগে সুভদ্রার।বাসায় ফিরে শাস্তি,ওর কথা ভেবে বাইরে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না আবার বাসায় ফিরে ওর থেকে দূরে দুরে থাকতে হয়।ও ঘরে গেলেই হাবিজাবি গল্প শুরু করবে।তবু মাঝে মাঝে পড়ানোর আছিলায় যায় না তা নয়।লক্ষ্য করেছে হা-করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কখনো গালে কি লেগেছে হাত দিয়ে মুছে দেয়,কখনো বিছানায় ছাই পড়বে দেখে এ্যাস্ট্রে এগিয়ে দেয়।সুভদ্রা দেখেছে ওর মেমারী খুব শার্প।সুভদ্রা কখনো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে কখনো লাইব্রেরি ঘরে বসে আইনের বই ঘাটাঘাটি করে কিন্তু মন পড়ে থাকে ঐ ঘরে যে ঘরে বৈদুর্য পড়ছে।
সুনন্দা মুখার্জির অস্বাভাবিক মৃত্যু তীব্রভাবে আলোড়িত করে সুভদ্রাকে।কেউ না জানলেও সভদ্রা বুঝতে পেরেছে মাম্মী কেন চলে গেল? শ্বাশুড়ীর মর্যাদা নিয়ে এক ছাদের নীচে বৈদুর্যের সং বসবার করা সুনন্দার পক্ষে কত কঠিন সুভদ্রা অনুভব করতে পারে। বজ্রানন্দ একটা আভাস আগেই দিয়েছিল কিন্তু আঘাতটা এভাবে আসবে অনুমান করতে পারেনি।আবার মনে হয় মাম্মীতো আশির্বাদ করে গেছেন,ওর সম্পর্কে ছিল স্নেহ সিক্ত মন্তব্য। তাহলে হয়তো অতীতের সেই ঘটনার কথা ভেবে লজ্জায় নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। মনের মধ্যে নানা ভাবনার সমাবেশ।দিব্যেন্দুর চেষ্টায় এই অবস্থাতেও বাড়ী বিক্রি হয়ে যায়। সব আসবাব নিয়ে গেছে শুধু বাপির লাইব্রেরীর বই সহ চারটে আলমারি আর একটা সেক্রেটারিয়েট টেবিল খান কয়েক চেয়ার সুভদ্রা নিয়ে এসেছে রাজার হাট ফ্লাটে।রাতের একটা সীমা আছে,রাত ফুরায় আসে দিন। সুর্য ওঠে আবার ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হয়ে যায়।বৈদুর্যের চেহারা দেখে সুভদ্রা স্থির করে ওকে আইপিএস পরীক্ষায় বসাবে।মিমিদি যা বলবে তাতেই রাজি।শুয়ে বসে কেটেছে কটা দিন,নীরবে সেবা করে গেছে মিমদির।অনেকদিন হয়ে গেল এবার বেরোতে হয়।
এজলাসের দরজায় লেখা,সুভদ্রা মুখার্জি(সেন), সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। ''.ের মামলা চলছে। আসামীদের পক্ষে ডাক সাইটে এ্যাডভোকেট কেকে। তদন্ত রিপোর্ট পেশ হয়েছে। বারো বছরের একটি মেয়েকে একাধিক ব্যক্তি উপর্যুপরি পশুর মত বলাৎকার করে হাইমেন ফাটিয়ে দিয়েছে।কিছুক্ষণ পর সুভদ্রা চোখ তুলে তদন্তকারী অফিসারকে জিজ্ঞেস করেন,পুলিশে কতদিন আছেন?
–আজ্ঞে হুজুর বিশ বছর।
–আপনি কি গল্প লেখেন?
তদন্তকারী অফিসার হকচকিয়ে যান,মুখে কোনো কথা যোগায় না।
–কয়েকজন দুস্কৃতি তার মানে কি? দুজন না তিনজন?তাদের নাম কি? তারা ধরা পড়েনি? সনাক্তকরণ করিয়েছেন?
–আপনি বললে করাবো।
–আদালতকে সব বলতে হবে? তাহলে আপনি কি করবেন?
সরকারী কৌশুলি এগিয়ে এসে বললেন, মাই লার্ড আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আর কিছুদিন সময় দিন।
–আপনাকে কেউ প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে কি?
–না হুজুর।
–রিপোর্টে সব কিছু তথ্য সহ স্পেসিফিক্যালি মেনশন করতে হবে, কোনো কাহিনী বা গল্প আদালত শুনতে চায় না।আমি হতভাগ্য মেয়েটার জবানবন্দী শুনেছি,এত অল্প বয়সে যেভাবে পুংখ্যানুপুঙ্খ্য বর্ণনা করেছে তা ঐটুকু মেয়ের পক্ষে বানিয়ে বলা সম্ভব নয়।কোথায় বাস করছি আমরা?আসামীদের হাজির করুণ।
কুঞ্জকিশোর নাগ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন। আদালত চত্বরে একটা কথা প্রচলিত আছে, কেকে দিনকে অনায়াসে রাত করে দিতে পারেন। সেই কেকে চোখ তুলে সুভদ্রার দিকে তাকাতে পারেন না। সুভদ্রার কথাগুলো তার মর্মে গিয়ে আঘাত করে। পনের দিন পর আবার দিন পড়লো।
দূরে ছাপড়ার চাল একটা চায়ের দোকানে এক গেলাস চা নিয়ে বসে আছে কেকে।এদিকটায় উকিলরা বেশি আসে না,ভীড় কম।হঠাৎ সমরবাবু এসে বলল,আরে কুঞ্জদা এখানে একা একা?
–সারদার মেয়ের কথা ভাবছি।ম্লান হেসে বলল কেকে।কতই বা বয়স হবে আম্মার মেয়ের মতই হবে।
–সুভদ্রা সেনের কথা বলছেন?সবে তো এল কদিন যাক ধীরে ধীরে লাইনে এসে যাবে।হে-হে-হে।
সমরের হাসিটা ভাল লাগে না,কেকে অন্য কথা পাড়ে,আজ কোনো কেস নেই?
–শনিবার।এখন আবার কেস কি?
গাড়ীতে বসেও ঘুরে ফিরে আসছে মেয়েটির মুখ। নিজেকে সমাজের একজন হিসেবে ভাবতে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে আসে।মানুষ কিভাবে এমন পশুর মত কাজ করতে পারে? ওদের বাড়ীতে মা-বোন নেই,একবারও কি তাদের কথা মনে পড়ল না? শনিবার তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় আদালতের কাজ।
তিনতলায় উঠে কলিং বেল টিপে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ভ্রু কুচকে যায়,কি ব্যাপার কেউ নেই নাকি? চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে অবাক,কোথায় গেল বৈদুর্য? মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। চেঞ্জ করে রান্না ঘরে ঢুকলো চা করতে। একটা কাজের লোক রাখা দরকার। সোফায় বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে,এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে। মনে হচ্ছে বাবু এলেন। দরজা খুলে বৈদুর্যকে দেখে বিষম খাবার অবস্থা।উস্কোখুস্কো বিধ্বস্ত চেহারা,জামা ছেড়া।বৈদুর্য ঢুকে বলল,তুমি এসে গেছো?বিস্কুট নেই।
–তোমার জামা ছিড়লো কিভাবে?
–মিমিদি একটূ চা দেবে? আচ্ছা আমি নিয়ে নিচ্ছি।
–তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি।
–সে অনেক ব্যাপার।
–আমি সেইটাই শুনতে চাই,কি ব্যাপার?
–সেইদিন এসেছিল না আনিস না কি নাম? আমি হাটতে হাটতে যাচ্ছি ওকে আমি কিছুই বলিনি বিশ্বাস করো, আমার কলার ধরে একটা বিশ্রী কথা বলল। আমি ভাল করে বললাম কলার ছেড়ে দিতে অমনি তোমার নাম করে গালি দিল।হাত মুচড়ে ঘা কতক দিতে বাছাধনের হাত থেকে ছাড়া পাই।
সুভদ্রা হাসবে না কাদবে,বুঝতে পারে না। এ কার পাল্লায় পড়লো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,তোমার পরীক্ষা দিয়ে কোনো লাভ নেই।
–একথা বলছো কেন?আমি কি পড়ছি না?
–এভাবে গুণ্ডামী করে বেড়ালে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে যাবে।
বৈদুর্য মনে মনে কি চিন্তা করে বলল,তুমি কথাটা ঠিক বলেছো। লোকটা থানায় ডায়েরী করতে পারে।জেল খাটাবার হুমকি দিচ্ছিল।
–ঠিক আছে মুখ হাত ধুয়ে পড়তে বোসো।আমি চা দিচ্ছি।যেই বেরিয়েছি অমনি মস্তানি করতে বেরিয়ে পড়লে। আমি কোথায় ভাবছি একা একা কি করছে,তাড়াতাড়ি চলে এলাম।ফিরে দেখি বাবুর পাত্তা নেই।
বৈদুর্য চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে কোনো কথা বলে না। সুভদ্রা বলল,হা করে দাঁড়িয়ে থাকলে কি বললাম কানে যায় নি?
বৈদুর্যকে চা দিয়ে সুভদ্রা খাবার করতে রান্না ঘরে ঢুকলো। বৈদুর্য বুঝতে পারে কাজটা ঠিক হয়নি।কিন্তু লোকটা গায়ে পড়ে গোলমাল করতে এল। মিমিদির দুঃখ পেয়েছে,বৈদুর্যর মন খারাপ।না বেরোলেই ভাল হত। পড়তে পড়তে মাথা ধরে গেছিল তাই ভাবলো একটু ঘুরে এলে হয়তো ভাল লাগবে।বিস্কুটও ফুরিয়ে গেছে।
সুভদ্রা খাবার নিয়ে এসে দেখলো গুম হয়ে বসে আছে বৈদুর্য। এত বলা ঠিক হয়নি। টেবিলে খাবার দিয়ে বলল, নেও খেয়ে নেও।
বৈদুর্যর মাথা বুকে চেপে জিজ্ঞেস করে,বকেছি বলে রাগ হয়েছে?
বৈদুর্য মুখ তুলে বলল,তুমি তো আমার ভালর জন্যই বকেছো।রাগ করবো কেন? মিমিদি আমি আর এরকম করবো না।
–লক্ষ্মী ছেলে।সুভদ্রা দুগাল ধরে চুমু খেল।
ফোন বাজছে,সুভদ্রা ফোন ধরতে গেল।রিসিভার কানে লাগাতে শুনতে পেল, দিদিভাই কাল তোমার ওখানে যাচ্ছি।
জিনি কাল আসবে,একটু মাংস আনা দরকার। ফ্রিজ খুলে দেখলো কি কি আছে। বৈদুর্যর কাছে গিয়ে বলল, খাওয়া দাওয়ার পর বের হবো,বাজার করতে হবে। কলিং বেল বেজে উঠলো।আবার কে এলো?
বৈদুর্য উঠতে যাচ্ছিল সুভদ্রা বলল,তুমি পড়ো,আমি দেখছি।
দরজা খুলে অবাক,দে-বাবু সঙ্গে একটি ছেলে নাকের উপর ব্যাণ্ডেড লাগানো।ছেলেটিকে মনে হল কোথায় দেখেছে।জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার দে-বাবু?
দে বাবু দাত বের করে বললেন,একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। ম্যাডাম এর নাম আনিস, স্যারের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছে।
–ওর নাকে কি হয়েছে?
–কিছু না,সামান্য কেটে গেছে। টিটেনাস ইঞ্জেকশন নিয়েছে।
সুভদ্রা বুঝতে পারে একেই শ্রীমান মেরেছে। জিজ্ঞেস করল,পুলিশে ডায়েরী করেনি?
–পাগল?গোবিন্দ শুনে খুব ক্ষেপে গেছে।ওইতো পাঠালো স্যারের কাছে ক্ষমা চাইতে,স্যার নেই?
–তুমি ওর কলার ধরেছিলে?
–আমি বুঝতে পারিনি,ভুল হয়ে গেছে।আমি উনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।
–ঠিক আছে আমাকে বললেই হবে। মিটে গেলেই ভাল।
ছেলেটি চলে যেতে আশুবাবুকে বলল সুভদ্রা,এভাবে যাকে তাকে আনবেন না।
–না ম্যাডাম গোবিন্দ এত করে বল্ল….।
গোবিন্দ কে,নামটা শোনা-শোনা লাগছে।যাকে মারলো সেই ক্ষমা চাইতে এসেছে ভেবে মজা লাগে সুভদ্রার।বাসায় ফিরে শাস্তি,ওর কথা ভেবে বাইরে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না আবার বাসায় ফিরে ওর থেকে দূরে দুরে থাকতে হয়।ও ঘরে গেলেই হাবিজাবি গল্প শুরু করবে।তবু মাঝে মাঝে পড়ানোর আছিলায় যায় না তা নয়।লক্ষ্য করেছে হা-করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কখনো গালে কি লেগেছে হাত দিয়ে মুছে দেয়,কখনো বিছানায় ছাই পড়বে দেখে এ্যাস্ট্রে এগিয়ে দেয়।সুভদ্রা দেখেছে ওর মেমারী খুব শার্প।সুভদ্রা কখনো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে কখনো লাইব্রেরি ঘরে বসে আইনের বই ঘাটাঘাটি করে কিন্তু মন পড়ে থাকে ঐ ঘরে যে ঘরে বৈদুর্য পড়ছে।