20-02-2020, 10:35 AM
দ্বাত্রিংশতি পর্ব
রাজার হাট ফ্লাটের কাজ প্রায় সম্পুর্ণ।দিব্যেন্দুকে নিয়ে একদিন সুতন্দ্রা এসেছিল দেখতে।দিব্যেন্দুর মুখ দেখে কিছু বোঝা না গেলেও সুতন্দ্রা খুব খুশী,বিশেষ করে দক্ষিণ মুখো ব্যালকনি খুব পছন্দ হয়েছে।মাম্মীকে চেষ্টা করেও আনতে পারে নি,
একবারেই আসবেন সুনন্দা। বাড়ী বিক্রির খদ্দের ঠিক হয়ে গেছে, কাগজ পত্র তৈরী করার জন্য একজন উকিলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ভদ্রলোক দেবাবুর পরিচিত, উনিই ঠিক করেছেন।বারাসাত আদালতের কোনো এ্যাডভোকেটকে দায়িত্ব দিতে পারতো কিন্তু সামান্য ব্যাপারে সুভদ্রা কোনো অবলিগেশনে যেতে চায় না।দেখতে দেখতে দিন চলে যাচ্ছে। দাগা কোম্পানি থেকে চিঠি এসেছে,একদিন গিয়ে যেন পাওনা টাকা নিয়ে আসে।দু-তিন হাজার টাকা, সময় পেলে যাবে একদিন।পুরানো লোকজনের সঙ্গে দেখা হবে,মন্দ কি? এরমধ্যে জয়ন্ত চক্রবর্তী একদিন বারাসাতে এসেছিল কি কাজে।সুভদ্রার সঙ্গে দেখা করেছিল। . মহিলা কি যেন নাম? আশ্রমের সঙ্গে নাকি এখনো যোগাযোগ রাখে,খবরটা জয়ন্ত দিল।
ফোন বাজতে সুনন্দা উঠে ফোন ধরলেন,হ্যালো কে বলছেন?...ও দেবাবু?... হ্যা আছে দিচ্ছি।...একটু ধরুন।
মাম্মীর ডাকে সুভদ্রা উপরে গিয়ে ফোন ধরে বলল,কে দেবাবু?..বলুন।
--গুড মর্নিং ম্যাডাম।আমি আপনার ফোন থেকে ফোন করছি,নম্বরটা লিখে নিন।
সুভদ্রা হেসে বলল,কানেশন দিয়ে গেছে?ফোন চেপে ধরে মাম্মীকে বলল, একটা কাগজ দাও তো,আমাদের ফ্লাটে ফোন দিয়ে গেছে।দেবাবু সেই ফোন থেকে ফোন করেছেন, ভদ্রলোক খুব কাজের।
সুনন্দা কাগজ কলম দিতে সুভদ্রা বলল,বলুন।
সুভদ্রা নম্বরটা লিখে বলল,আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
--এতে ধন্যবাদের কি আছে ম্যাডাম?আমি আরেকটা কাজ করেছি আপনার অনুমতি না নিয়ে।
সুভদ্রার ভ্রু কুঞ্চিত হয়,আবার কি করলেন?
--একটা সুন্দর কার্পেট পেয়ে গেলাম সস্তায়,ডাইনিং রুমে পাতা যাবে।
--কত দাম নিল?
--সতেরশো টাকা।আপনি দেখলে বুঝতে পারবেন সতেরো শো টাকা কিছু নয়।
সুভদ্রা খিলখিল করে হেসে উঠলো,ঠিক আছে আপনি যখন কিনেছেন ভালই হবে। দেখা হলে টাকা দিয়ে দেবো।
--যখন সুবিধে হবে দেবেন,ব্যস্ত হবার কিছু নেই।
সুভদ্রা ফোন রেখে বলল,মাম্মী নম্বরটা লিখে রেখো।ফোনটা আমার নামে নিয়েছি।
বেরোবার জন্য প্রস্তুত হয় সুভদ্রা। আদালতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে এখন আর আগের মত টেনশন হয় না।
ইদানীং এক নতুন অশান্তি তৈরী হয়েছে।কিছুতেই স্বস্তি নেই সারাক্ষণ এক চিন্তা গোদেলিয়েভের,কদিন ধরে ম্যাসাজ করছে বাইদুজ,কাণ্ট বুবস নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে কিন্তু নো রিএ্যাকশন? কেমন করে সম্ভর? যতদিন যায় গোদেলিয়েভের জিদ তত বাড়তে থাকে। যে করেই হোক এ রহস্যের উন্মোচন তাকে করতেই হবে।ঘুম ভেঙ্গে গেল আচমকা,ধীরে ধীরে নামলেন খাট থেকে।খুট করে দরজা খুললেন গোদেলিয়েভ। বাইদুজ ঘুমোচ্ছে,একটা পা সোজা আরেকটা ভাজ করা। নত হয়ে গোদেলিয়েভ আলতো করে লুঙ্গি সরিয়ে ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে চমকে ওঠেন,ওহ গদ হাউ লার্জ ইত ইজ!তেরিবল সাইজ!
দ্রুত মুখ বের করে নিজের ঘরে চলে আসেন। চোখের সামনে ভাসছে নেতিয়ে পড়ে থাকা বাইদুজের পেনিস। ইতস লাইক আ হর্স।ইজ হি ইম্পোতেন্স? এখন আবার অন্যচিন্তা গোদেলিয়েভের মাথায় ঘুর ঘুর করে।আর দেরী সইছে না,কিছু একটা করা দরকার।
চারুশশীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে,বৈদুর্য ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল।রাতে ম্যামকে ম্যাসাজ করতে হয় বলে ভাল করে ঘুমোতে পারে না।ডাক্তার দেখাচ্ছেন না,ব্যথা বেশীদিন পুষে রাখা ভাল না।কথাটা ম্যামকে বুঝিয়ে বলতে হবে।চোখে মুখে জল দিয়ে ম্যামকে চা দিতে গেল।তাকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছেন ম্যাম।
--এখন কেমন আছেন ম্যাম?বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে।
--আয় অ্যাম নাউ বেতার। গোদেলিয়েভ নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বললেন।
আদালতে গিয়ে সুভদ্রা শুনলো বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্যামসুন্দরবাবু গতকাল রাতে মারা গেছেন। আদালতের কাজকর্ম বন্ধ,কিছুক্ষণের মধ্যে মৃতদেহ আদালতে আনা হবে,সবাই ব্যস্ত। সুভদ্রা নিজের চেম্বারে গিয়ে বেয়ারাকে ডেকে একটা মালা আনতে বলল।সত্যি কথা বলতে কি ভদ্রলোকের নাম শুনলেও কখনো চাক্ষুষ দেখা হয়নি।তাহলেও একটা মালা দিতে হয়। আচমকা ছুটি কোনো কাজে লাগে না।বেয়ারা মালা দিয়ে বলল,জজ সাহেব একবার দেখা করতে বললেন।
জজ সাহেব মানে বীরেন্দ্র প্রতাপ সিং ,কি কারণে ডাকলো কে জানে। মালাটা আলমারিতে তুলে রেখে রুমাল দিয়ে মুখ মুছে বিপিসিংযের ঘরে যেতে জিজ্ঞেস করলেন,মিস মুখার্জি এখন কোনো কাজ আছে?
--না স্যার।আমি তো জানতাম না আজ ছুটি হয়ে যাবে।
--চলুন আমার বাংলোয় ,জয়ী অনেকদিন থেকে বলছে।
--আমি ভাবছিলাম একবার পুরানো অফিসে যাবো--।
--কাছেই আমার বাংলো,জয়ীর সঙ্গে দেখা হবে।হার্ডলি আ আওয়ার।
--আচ্ছা স্যার দেখি এখান থেকে আগে বের হই?
--সে তো বটেই, শ্যাম সুন্দরবাবুর সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছিল?
--না স্যার নাম শুনেছি পরিচয় হয়নি।
--ভদ্রলোক রাজনীতি করতেন,বয়স হয়েছে খুব ধড়িবাজ টাইপ।
বাইরে হোই-চৈ শুনে মনে হচ্ছে মৃতদেহ এসে গেছে। একটু পরেই সুব্রত নাগ সহ কয়েকজন এসে বললেন,একবার আসুন স্যার।শ্যামদার বডি এসে গেছে।আসুন ম্যাডাম।
বিপিসিং যেতে একজন তার হাতে একটা মালা এগিয়ে দিলেন।তিনি মালা পরিয়ে দিয়ে খুব গম্ভীরভাবে শ্যামসুন্দরবাবু সম্পর্কে কিছু বললেন।শ্যাম সুন্দর বাবুর সততা নিষ্ঠা কর্ম দক্ষতার ভুয়সী প্রশংসা করলেন। তার শুণ্যস্থান নাকি পুরণ হবার নয় ইত্যাদি। সুভদ্রা অবাক হয়, একটু আগে উনি যাকে ধড়িবাজ বলছিলেন এখন কি বলছেন?জজ সাহেবের এই পরিচয় তার জানা ছিল না।যা মুখে আসে কেমন বেমালুম বলে গেলেন। সুভদ্রা ব্যাগ থেকে মালা বের করে পরিয়ে দিয়ে নমস্কার করলো। স্বল্প সময়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে শববাহী গাড়ী স্টার্ট করলো। মুঠি পাকিয়ে সবাই শ্লোগান দিল,কমরেড শ্যাম সুন্দর অমর রহে।
বীরেন্দ্র প্রতাপের ড্রাইভার আছে,সুভদ্রা পিছন থেকে সেই গাড়ী অনুসরণ করে মিনিট দশেকের মধ্যে বাংলোয় পৌছে গেল।
বারান্দায় চেয়ারে বসে একজন মহিলাকে দেখে স্বস্তি বোধ করে।মনে হচ্ছে উনিই জয়ীদি?দুটো গাড়ী দেখে মহিলা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকেন।সুভদ্রাকে নামতে দেখে মহিলা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন,তুমি মানে আপনি স্যারের মেয়ে না?
--আপনি জয়ীদি?
--তোমার বাবা কি বলে যেন ডাকতো?
সুভদ্রা হেসে ফেলে বলে,মিমি।
--উঃ কতদিন পরে তোমাকে দেখলাম।স্যারের মৃত্যুতে যেতে পারিনি বিহারে ছিলাম তখন।
--ওকে বসতে বলবে না?বিপি মনে করিয়ে দিলেন।
--ওমা দেখেছো কাণ্ড! এসো বোসো।স্যারের কাছে অনেক শিখেছি কোনোদিন ভুলতে পারবো না।তুমি তো জানো একজন পুরুষের কাছে জুনিয়ার হিসেবে একটি মেয়ের কাজ করা কত বিপদজনক?স্যার আমাকে নিজের মেয়ের মত স্নেহ করতেন।
--আই অবজেক্ট।কি সব যাতা বলছো?বিপি বললেন।
--অবজেশন ওভার রুল। তুমি কোথায় কি করেছো আমি জানতে গেছি? জয়ন্তী সুভদ্রাকে বললেন,মিমি একটু বোসো চা খাবে তো?
--চা ছাড়া আর কি আছে?
--আছে না? ওর বন্ধুরা তো চা খেতেই চায় না।এলেই বোতল নিয়ে বসবে।সেজন্যই তো বিজুকে বোর্ডিং দিতে হল।
--বিজু তোমার ছেলে?
--হ্যা বীজেন্দ্র প্রতাপ বাপের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখলে কি হবে বীজুর আইন সম্পর্কে খুব বিরক্তি।
--নিজেই বক বক করে যাচ্ছো তুমি ওকে একটু সুযোগ দাও।
--তোমরা কথা বলো।,আমি চা নিয়ে আসছি।
জয়ন্তী চলে যেতে একটা চেয়ার টেনে বসে বীরেন্দ্র জিজ্ঞেস করেন,খুব বোর লাগছে?
সুভদ্রা হাসে বলে,অনেকদিন পরে দেখা হল কিনা। আমার বাপি ওকে সত্যিই খুব স্নেহ করতেন।
চায়ের ট্রে নিয়ে জয়ন্তী ঢুকে বললেন, কি বলছিলে আমার নামে?
--আচ্ছা তুমি ওকে বলতো আমি ওর নাম উচ্চারণ করেছি?বিপি সুভদ্রাকে সাক্ষী মানেন।
--কেকের কথা ওর মুখে শুনেছি।জয়ীদি বসতে বসতে বললেন। তুমি ঠিক করেছো
--আদালতের কথা বাড়িতে আমার ভাল লাগে না।বিপি বিরক্তি প্রকাশ করেন।
--জয়ীদি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
জয়ন্তী অবাক হয়ে তাকালেন।
--তুমি প্রাকটিশ কেন ছেড়ে দিলে?
--সত্যি কথা বলবে?আমি কি কোনো প্রেশার দিয়েছি?
--না তুমি প্রেশার দিয়েছো বলবো না কিন্তু সত্যি বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।গম্ভীরভাবে জয়ন্তী বললেন।
--ও বুঝেছি। বিপি মাথা নীচু করে কি ভাবেন।
পরিবেশটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেল।সুভদ্রা আচমকা হেসে বলল,স্যার আজ আপনার ভাষণ খুব ভাল হয়েছে।
বিপি কিছু বললেন না জয়ন্তী জিজ্ঞেস করেন,আজ ভাষণ দিয়েছে নাকি?
বীরেন্দ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,তোমাকে একটা কথা বলি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেক কিছু আমাদের করতে হয়।সহজ মানুষদের পক্ষে এই পৃথিবীর পথ মসৃণ নয়।
বৈদুর্যের কথা মনে পড়ে গেল। স্যার যা বললেন হয়তো তাই।বেচারিকে ভগবান কেন যে এভাবে পাঠালো? সুভদ্রা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আজ আসি স্যার আর একদিন আসবো।
দাগার অফিসে যেতে হবে।দেরী করা বাঞ্ছনীয় হবেনা।দেবাবু বললেন কি একটা কার্পেট কিনেছেন।টাকাও মিটিয়ে দিতে হবে।সুভদ্রা গাড়ী স্টার্ট করল।
রাজার হাট ফ্লাটের কাজ প্রায় সম্পুর্ণ।দিব্যেন্দুকে নিয়ে একদিন সুতন্দ্রা এসেছিল দেখতে।দিব্যেন্দুর মুখ দেখে কিছু বোঝা না গেলেও সুতন্দ্রা খুব খুশী,বিশেষ করে দক্ষিণ মুখো ব্যালকনি খুব পছন্দ হয়েছে।মাম্মীকে চেষ্টা করেও আনতে পারে নি,
একবারেই আসবেন সুনন্দা। বাড়ী বিক্রির খদ্দের ঠিক হয়ে গেছে, কাগজ পত্র তৈরী করার জন্য একজন উকিলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।ভদ্রলোক দেবাবুর পরিচিত, উনিই ঠিক করেছেন।বারাসাত আদালতের কোনো এ্যাডভোকেটকে দায়িত্ব দিতে পারতো কিন্তু সামান্য ব্যাপারে সুভদ্রা কোনো অবলিগেশনে যেতে চায় না।দেখতে দেখতে দিন চলে যাচ্ছে। দাগা কোম্পানি থেকে চিঠি এসেছে,একদিন গিয়ে যেন পাওনা টাকা নিয়ে আসে।দু-তিন হাজার টাকা, সময় পেলে যাবে একদিন।পুরানো লোকজনের সঙ্গে দেখা হবে,মন্দ কি? এরমধ্যে জয়ন্ত চক্রবর্তী একদিন বারাসাতে এসেছিল কি কাজে।সুভদ্রার সঙ্গে দেখা করেছিল। . মহিলা কি যেন নাম? আশ্রমের সঙ্গে নাকি এখনো যোগাযোগ রাখে,খবরটা জয়ন্ত দিল।
ফোন বাজতে সুনন্দা উঠে ফোন ধরলেন,হ্যালো কে বলছেন?...ও দেবাবু?... হ্যা আছে দিচ্ছি।...একটু ধরুন।
মাম্মীর ডাকে সুভদ্রা উপরে গিয়ে ফোন ধরে বলল,কে দেবাবু?..বলুন।
--গুড মর্নিং ম্যাডাম।আমি আপনার ফোন থেকে ফোন করছি,নম্বরটা লিখে নিন।
সুভদ্রা হেসে বলল,কানেশন দিয়ে গেছে?ফোন চেপে ধরে মাম্মীকে বলল, একটা কাগজ দাও তো,আমাদের ফ্লাটে ফোন দিয়ে গেছে।দেবাবু সেই ফোন থেকে ফোন করেছেন, ভদ্রলোক খুব কাজের।
সুনন্দা কাগজ কলম দিতে সুভদ্রা বলল,বলুন।
সুভদ্রা নম্বরটা লিখে বলল,আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
--এতে ধন্যবাদের কি আছে ম্যাডাম?আমি আরেকটা কাজ করেছি আপনার অনুমতি না নিয়ে।
সুভদ্রার ভ্রু কুঞ্চিত হয়,আবার কি করলেন?
--একটা সুন্দর কার্পেট পেয়ে গেলাম সস্তায়,ডাইনিং রুমে পাতা যাবে।
--কত দাম নিল?
--সতেরশো টাকা।আপনি দেখলে বুঝতে পারবেন সতেরো শো টাকা কিছু নয়।
সুভদ্রা খিলখিল করে হেসে উঠলো,ঠিক আছে আপনি যখন কিনেছেন ভালই হবে। দেখা হলে টাকা দিয়ে দেবো।
--যখন সুবিধে হবে দেবেন,ব্যস্ত হবার কিছু নেই।
সুভদ্রা ফোন রেখে বলল,মাম্মী নম্বরটা লিখে রেখো।ফোনটা আমার নামে নিয়েছি।
বেরোবার জন্য প্রস্তুত হয় সুভদ্রা। আদালতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে এখন আর আগের মত টেনশন হয় না।
ইদানীং এক নতুন অশান্তি তৈরী হয়েছে।কিছুতেই স্বস্তি নেই সারাক্ষণ এক চিন্তা গোদেলিয়েভের,কদিন ধরে ম্যাসাজ করছে বাইদুজ,কাণ্ট বুবস নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে কিন্তু নো রিএ্যাকশন? কেমন করে সম্ভর? যতদিন যায় গোদেলিয়েভের জিদ তত বাড়তে থাকে। যে করেই হোক এ রহস্যের উন্মোচন তাকে করতেই হবে।ঘুম ভেঙ্গে গেল আচমকা,ধীরে ধীরে নামলেন খাট থেকে।খুট করে দরজা খুললেন গোদেলিয়েভ। বাইদুজ ঘুমোচ্ছে,একটা পা সোজা আরেকটা ভাজ করা। নত হয়ে গোদেলিয়েভ আলতো করে লুঙ্গি সরিয়ে ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে চমকে ওঠেন,ওহ গদ হাউ লার্জ ইত ইজ!তেরিবল সাইজ!
দ্রুত মুখ বের করে নিজের ঘরে চলে আসেন। চোখের সামনে ভাসছে নেতিয়ে পড়ে থাকা বাইদুজের পেনিস। ইতস লাইক আ হর্স।ইজ হি ইম্পোতেন্স? এখন আবার অন্যচিন্তা গোদেলিয়েভের মাথায় ঘুর ঘুর করে।আর দেরী সইছে না,কিছু একটা করা দরকার।
চারুশশীর ডাকে ঘুম ভাঙ্গে,বৈদুর্য ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল।রাতে ম্যামকে ম্যাসাজ করতে হয় বলে ভাল করে ঘুমোতে পারে না।ডাক্তার দেখাচ্ছেন না,ব্যথা বেশীদিন পুষে রাখা ভাল না।কথাটা ম্যামকে বুঝিয়ে বলতে হবে।চোখে মুখে জল দিয়ে ম্যামকে চা দিতে গেল।তাকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছেন ম্যাম।
--এখন কেমন আছেন ম্যাম?বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে।
--আয় অ্যাম নাউ বেতার। গোদেলিয়েভ নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বললেন।
আদালতে গিয়ে সুভদ্রা শুনলো বার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্যামসুন্দরবাবু গতকাল রাতে মারা গেছেন। আদালতের কাজকর্ম বন্ধ,কিছুক্ষণের মধ্যে মৃতদেহ আদালতে আনা হবে,সবাই ব্যস্ত। সুভদ্রা নিজের চেম্বারে গিয়ে বেয়ারাকে ডেকে একটা মালা আনতে বলল।সত্যি কথা বলতে কি ভদ্রলোকের নাম শুনলেও কখনো চাক্ষুষ দেখা হয়নি।তাহলেও একটা মালা দিতে হয়। আচমকা ছুটি কোনো কাজে লাগে না।বেয়ারা মালা দিয়ে বলল,জজ সাহেব একবার দেখা করতে বললেন।
জজ সাহেব মানে বীরেন্দ্র প্রতাপ সিং ,কি কারণে ডাকলো কে জানে। মালাটা আলমারিতে তুলে রেখে রুমাল দিয়ে মুখ মুছে বিপিসিংযের ঘরে যেতে জিজ্ঞেস করলেন,মিস মুখার্জি এখন কোনো কাজ আছে?
--না স্যার।আমি তো জানতাম না আজ ছুটি হয়ে যাবে।
--চলুন আমার বাংলোয় ,জয়ী অনেকদিন থেকে বলছে।
--আমি ভাবছিলাম একবার পুরানো অফিসে যাবো--।
--কাছেই আমার বাংলো,জয়ীর সঙ্গে দেখা হবে।হার্ডলি আ আওয়ার।
--আচ্ছা স্যার দেখি এখান থেকে আগে বের হই?
--সে তো বটেই, শ্যাম সুন্দরবাবুর সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছিল?
--না স্যার নাম শুনেছি পরিচয় হয়নি।
--ভদ্রলোক রাজনীতি করতেন,বয়স হয়েছে খুব ধড়িবাজ টাইপ।
বাইরে হোই-চৈ শুনে মনে হচ্ছে মৃতদেহ এসে গেছে। একটু পরেই সুব্রত নাগ সহ কয়েকজন এসে বললেন,একবার আসুন স্যার।শ্যামদার বডি এসে গেছে।আসুন ম্যাডাম।
বিপিসিং যেতে একজন তার হাতে একটা মালা এগিয়ে দিলেন।তিনি মালা পরিয়ে দিয়ে খুব গম্ভীরভাবে শ্যামসুন্দরবাবু সম্পর্কে কিছু বললেন।শ্যাম সুন্দর বাবুর সততা নিষ্ঠা কর্ম দক্ষতার ভুয়সী প্রশংসা করলেন। তার শুণ্যস্থান নাকি পুরণ হবার নয় ইত্যাদি। সুভদ্রা অবাক হয়, একটু আগে উনি যাকে ধড়িবাজ বলছিলেন এখন কি বলছেন?জজ সাহেবের এই পরিচয় তার জানা ছিল না।যা মুখে আসে কেমন বেমালুম বলে গেলেন। সুভদ্রা ব্যাগ থেকে মালা বের করে পরিয়ে দিয়ে নমস্কার করলো। স্বল্প সময়ের অনুষ্ঠান শেষ হতে শববাহী গাড়ী স্টার্ট করলো। মুঠি পাকিয়ে সবাই শ্লোগান দিল,কমরেড শ্যাম সুন্দর অমর রহে।
বীরেন্দ্র প্রতাপের ড্রাইভার আছে,সুভদ্রা পিছন থেকে সেই গাড়ী অনুসরণ করে মিনিট দশেকের মধ্যে বাংলোয় পৌছে গেল।
বারান্দায় চেয়ারে বসে একজন মহিলাকে দেখে স্বস্তি বোধ করে।মনে হচ্ছে উনিই জয়ীদি?দুটো গাড়ী দেখে মহিলা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকেন।সুভদ্রাকে নামতে দেখে মহিলা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন,তুমি মানে আপনি স্যারের মেয়ে না?
--আপনি জয়ীদি?
--তোমার বাবা কি বলে যেন ডাকতো?
সুভদ্রা হেসে ফেলে বলে,মিমি।
--উঃ কতদিন পরে তোমাকে দেখলাম।স্যারের মৃত্যুতে যেতে পারিনি বিহারে ছিলাম তখন।
--ওকে বসতে বলবে না?বিপি মনে করিয়ে দিলেন।
--ওমা দেখেছো কাণ্ড! এসো বোসো।স্যারের কাছে অনেক শিখেছি কোনোদিন ভুলতে পারবো না।তুমি তো জানো একজন পুরুষের কাছে জুনিয়ার হিসেবে একটি মেয়ের কাজ করা কত বিপদজনক?স্যার আমাকে নিজের মেয়ের মত স্নেহ করতেন।
--আই অবজেক্ট।কি সব যাতা বলছো?বিপি বললেন।
--অবজেশন ওভার রুল। তুমি কোথায় কি করেছো আমি জানতে গেছি? জয়ন্তী সুভদ্রাকে বললেন,মিমি একটু বোসো চা খাবে তো?
--চা ছাড়া আর কি আছে?
--আছে না? ওর বন্ধুরা তো চা খেতেই চায় না।এলেই বোতল নিয়ে বসবে।সেজন্যই তো বিজুকে বোর্ডিং দিতে হল।
--বিজু তোমার ছেলে?
--হ্যা বীজেন্দ্র প্রতাপ বাপের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখলে কি হবে বীজুর আইন সম্পর্কে খুব বিরক্তি।
--নিজেই বক বক করে যাচ্ছো তুমি ওকে একটু সুযোগ দাও।
--তোমরা কথা বলো।,আমি চা নিয়ে আসছি।
জয়ন্তী চলে যেতে একটা চেয়ার টেনে বসে বীরেন্দ্র জিজ্ঞেস করেন,খুব বোর লাগছে?
সুভদ্রা হাসে বলে,অনেকদিন পরে দেখা হল কিনা। আমার বাপি ওকে সত্যিই খুব স্নেহ করতেন।
চায়ের ট্রে নিয়ে জয়ন্তী ঢুকে বললেন, কি বলছিলে আমার নামে?
--আচ্ছা তুমি ওকে বলতো আমি ওর নাম উচ্চারণ করেছি?বিপি সুভদ্রাকে সাক্ষী মানেন।
--কেকের কথা ওর মুখে শুনেছি।জয়ীদি বসতে বসতে বললেন। তুমি ঠিক করেছো
--আদালতের কথা বাড়িতে আমার ভাল লাগে না।বিপি বিরক্তি প্রকাশ করেন।
--জয়ীদি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
জয়ন্তী অবাক হয়ে তাকালেন।
--তুমি প্রাকটিশ কেন ছেড়ে দিলে?
--সত্যি কথা বলবে?আমি কি কোনো প্রেশার দিয়েছি?
--না তুমি প্রেশার দিয়েছো বলবো না কিন্তু সত্যি বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।গম্ভীরভাবে জয়ন্তী বললেন।
--ও বুঝেছি। বিপি মাথা নীচু করে কি ভাবেন।
পরিবেশটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেল।সুভদ্রা আচমকা হেসে বলল,স্যার আজ আপনার ভাষণ খুব ভাল হয়েছে।
বিপি কিছু বললেন না জয়ন্তী জিজ্ঞেস করেন,আজ ভাষণ দিয়েছে নাকি?
বীরেন্দ্র গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,তোমাকে একটা কথা বলি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেক কিছু আমাদের করতে হয়।সহজ মানুষদের পক্ষে এই পৃথিবীর পথ মসৃণ নয়।
বৈদুর্যের কথা মনে পড়ে গেল। স্যার যা বললেন হয়তো তাই।বেচারিকে ভগবান কেন যে এভাবে পাঠালো? সুভদ্রা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আজ আসি স্যার আর একদিন আসবো।
দাগার অফিসে যেতে হবে।দেরী করা বাঞ্ছনীয় হবেনা।দেবাবু বললেন কি একটা কার্পেট কিনেছেন।টাকাও মিটিয়ে দিতে হবে।সুভদ্রা গাড়ী স্টার্ট করল।