19-02-2020, 12:21 AM
ষড়বিংশতি পর্ব
খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গে,গোদেলিয়েভ অনুভব করেন কাধের ব্যথাটা নেই। কাল রাতের কথা মনে পড়ল নাচতে নাচতে আচমকা ঘাড়ে খিচ লেগে যায়।বাইদুজ ম্যাসেজ করে দেবার পর বেশ ভাল লাগছে।উঠে পাশের ঘরে গিয়ে দেখলেন হাত-পা ছড়িয়ে বাইদুজ চিত হয়ে শুয়ে আছে যেন ক্রুশ বিদ্ধ যীশু।নিজের ঘরে ফিরে এসে জানলায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা করেন।নরম রুপোলি রোদ এসে পড়েছে ঘরের মেঝেতে।
বৈদুর্যের ঘুম ভেঙ্গে যায়,ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে ঘড়ি দেখে ছটা বাজতে চলল। রান্না ঘরে চারুমাসীর শব্দ পাওয়া গেল।বাইরে বেরিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে রান্না ঘরে গেল।ঘরে ঘরে যেতে হবে ভাবলে বৈদুর্য সঙ্কুচিত বোধ করে।আগে এমন হত না।সোনালিদি যা করছিল ঝিনুকদি কি ভাবলো কে জানে।এখানে মনে হয় বেশীদিন থাকা সম্ভব হবে না কিন্তু যাবে কোথায়? আজ একবার মিমিদির কাছে যাবে কি না ভাবে।প্রতিটি মানুষ চেহারা প্রকৃতি মনসিকতায় শিক্ষা সামাজিক অবস্থানের করণে পরস্পর স্বতন্ত্র কারো সঙ্গে কারো মিল নেই।কিন্তু জৈবিক চাহিদার ব্যাপারে বস্তিবাসী চারুমাসী তেলেগুভাষী জয়া পার্বতী কলেজ শিক্ষয়ীত্রী সোনালিদি--সকলেই এক।অবশ্য মিমিদি অন্য রকম এদের থেকে আলাদা।
সকালের ব্রেক ফাষ্ট চায়ের সঙ্গে টোষ্ট। এই সময় ব্যস্ততা থাকে সে জন্য অন্য কিছু করার অবসর কম। মধুছন্দাদির দরজায় টোকা দিতে এলোমেলো পোষাকে দরজা খুলল চৈতালিদি।তাকে দেখে বুকের কাপড় টেনে দেবার প্রয়োজন বোধ করে না।বৈদুর্য টেবিলের উপর দু-কাপ চা টোষ্ট নামিয়ে রেখে দ্রুত বেরিয়ে এল।
দরজায় ধাক্কা শুনে সুভদ্রা বিছানা থেকে নেমে গায়ে গাউন চাপিয়ে দরজা খুলে দেখল সুরবালা মুখে হাসি লেপটে দাড়িয়ে,হাতে ধরা একটা ট্রেতে প্রাতরাশ। দেওয়ালে ঘড়ির দিকে তাকাল সুভদ্রা।বাবাঃ এত বেলা হয়ে গেছে?
--চা খেয়ে মা উপরে যেতে বললেন।সুরবালা চলে গেল।
সুভদ্রা জানে মাম্মীর মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে।মাম্মীর ঘরে যেতে বোঝা গেল তার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন সুনন্দা মুখার্জি।
--কাল ভাল ঘুম হয়েছিল তো?
--হ্যা ওষুধ না খেয়েই ঘুমিয়েছিলাম।
--তোমাকে বলেছিলাম না ওষুধ না খেয়ে চেষ্টা করো,তুমি তো আমার কথা শুনছিলে না--।
কথা শেষ না হতেই সুনন্দা বললেন,আর তুমি কারো কথা শুনবে না?
--তোমার কোন কথা শুনিনি বলো?
--ওসব থাক,যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে।দিব্যেন্দুর সঙ্গে কি কথা হল?
--ও এ বাড়িতে আসতে চায় না।সুতরাং বাড়ী বিক্রী করে চল্লিশ শতাংশ ওকে দিলে তোমার আমার ষাট শতাংশ থাকবে।
--আমরা কোথায় থাকবো?
--রাজার হাটে ফ্লাট কিনেছি। এই বাড়ীটার বন্দোবস্ত হলেই সেখানে চলে যাবো।
সুনন্দা মুখার্জি উদাস হয়ে যান।সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে,তুমি না চাইলে কিছুই হবে না। তুমি বলো তোমার অন্য কোনো প্লান আছে কি না?
--এই বাড়ী তোর বাবার স্মৃতি। তাছাড়া তুই ওদের চল্লিশ কেন সমানই তো হওয়া উচিত--।
--মাম্মী কোনো টাকাই দিব্যেন্দুকে দেওয়া হচ্ছে না।টাকা দিচ্ছি আমার বোন জিনিকে। তুমি বললে আরো বেশী আমার দিতে আপত্তি নেই।
--তুই যে কি পরীক্ষা দিলি তার কি হল?
--মনে হচ্ছে এবার হল না।আমি সামনের বছর আবার দেবো।
--তাহলে তুই কি বিয়ে করবি কবে?
সুভদ্রা মাথা নীচু করে হাসে।জয়ন্ত চক্রবর্তী সহায় আঙ্কেলের জুনিয়ার মনে হয়েছে একটু ইন্টারেষ্টেড এবার সেও পরীক্ষা দিয়েছিল।
কিন্তু সুভদ্রা সেভাবে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবেনি।মাম্মীকে বললে এক্ষুনি সহায় আঙ্কেলকে ফোন করবে।
--কিরে হাসছিস যে?কথার উত্তর দিলি না তো?সুনন্দা তাগাদা দিলেন।
--বাড়ির ঝামেলা মিটুক তারপর ভাববো।সুভদ্রা বিষয়টা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে।
সুনন্দা মুখার্জি বুঝতে পারেন মেয়ের কাছ থেকে আর কিছু জানতে পারবেন না।তবু মনে হল একটা কথা বলা দরকার,দ্যাখ মা সমাজে মেয়েদের শান্তিতে জীবন যাপন করতে হলে একজন পুরুষ সঙ্গী খুব দরকার।
সুভদ্রা চোখ তুলে তাকালো,সঙ্গী মানে কি বলতে চায় মাম্মী?মনে পড়ল বৈদুর্যের সঙ্গে সেদিনের কথা।সেই ঘটনার পর মাম্মীর মধ্যে দেখেছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস।
--যা ভাল বোঝ করবে আমি আর কি বলবো?সুনন্দা মুখার্জি অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
সুভদ্রাকে বেরোতে হবে,টাওয়াল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বজ্রানন্দ কেসের অভিযোগ কারিণির সঙ্গে আজ আলোচনা হবার কথা।
মি.দাগার পক্ষ হতে মহিলা হিসেবে সুভদ্রাকে উপস্থিত থাকতে হবে।সরকারী উকিলের সঙ্গে সহায় আঙ্কেলের কথা হয়েছে আদালতের বাইরে যাতে মীমাংসা করা যায়।দাগা এ্যাণ্ড কোম্পানীর সামনে গাড়ী থেকে নামার আগে একজন এসে বলল,ম্যাডাম আপনি রামদীন সহায়ের অফিসে চলে যান,স্যার আপনাকে সেখানে যেতে বলেছেন।
সুভদ্রা সহায় আঙ্কেলের চেম্বার চেনে,আবার গাড়িতে স্টার্ট দিল।চেম্বারে ঢোকার আগে সহায় আঙ্কেল মিসেস পুনম রাউতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।জয়ন্তও ছিল সেখানে। ভদ্রমহিলা মধ্য বয়সী,অবাঙ্গালি ধরণের দেখতে। কি ধরনের রফা হয়েছে বোঝার চেষ্টা করে সুভদ্রা।
মি.সহায় বললেন,আমার একটা হিয়ারিং আছে জয়ন্ত রইল।উয়িশ ইউ অল দা বেস্ট।
পুনম চেম্বারে ঢোকার আগে বোঝালো পুয়োর লেডি মামলা করে কোনো লাভ নেই,যদি কিছু কমপেনসেট করানো যায় সেটাই বেটার। সুভদ্রা বুঝতে পারে সহায়ের সঙ্গে ভালই আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং হয়েছে।
টেবিলে কনুইয়ের ভর দিয়ে সালোয়ার কামিজ পরা বছর চব্বিশ-পচিশের একমহিলা। তাদের দেখে সোজা হয়ে বসল। পুনম বলল,ওনাকে তোমার কথা বলো।
--আপনার নাম কি?সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে।
--জ্জ্বি আসিয়ানা আহমেদ পরী।
--আপনি কোথায় থাকেন?
পরী জিজ্ঞেস করে,গুড়ার থেকে বলবো?
--হ্যা বলুন।
--আমাদের বাড়ী আছিল বরিশালের ঝালকাটি গ্রামে।উনি আমারে নিয়ে পলায়ে * স্থানে এসে সাদি করেন।
--কতদিন আগের কথা?এখানে কোথায় থাকেন?
--তা প্রায় পাচ-ছ বছর হবে।মল্লিক পুরে তানার বাড়ী চার খান অটো আছে,নিজির গ্যারেজ আছে যন্ত্রপাতি সারাই করেন।
--শুনুন আপনাকে যা জিজ্ঞেস করবো শুধু সেইটুকু বলবেন।
--জ্বি,পোয়াতি হচ্ছি না দেখে তিনি আবার সাদির মতলব করতেছেন।একদিন টুনির মা আমারে বলল,--।
--টুনির মা কে?
--আমাদের তিন-চার ঘর পাশেই থাকে,* ।তার কথায় কাফেরের বাচ্চা আমারে নাপাক করছে।
--আদালতে এসব কথা বলবেন না।আপনি কতদিন আগে সাধুবাবার সঙ্গে মিলেছেন?
--দুই মাসের উপর হল।তারপর অনেকবার আমি তার সাথে মিলছি।
--তা নয় মানে সাধুবাবা মানে ইয়ে --।
পরী লজ্জা পেয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,কবে চুদছে?সেইটা মনে নাই তবে উনার আছ্রমে যাবার কদিন পর বললেন,যজ্ঞ হবে।আমারে কি য্যান খাওয়াইল।তারপর ঝাপাইয়া --।
--আপনার ইচ্ছেতে সাধুবাবা মিলিত হয়েছে?
--তোবা তোবা কি বলেন মেমসাব--আমি কি ব্যাশ্যা নিকি?হারামীটা কদিন পর কয় কি বাসী কাপড়ের জন্য ফল হইতেছে না।
--বুঝলাম না মানে?
--প্রেত্থম দিন কাপড় উঠাইয়া চুদছে।পরে বাসী কাপড় খুইল্যা একেবারে নাঙ্গা কইরা আমারে ফালা ফালা করছে।
--দুবার আপনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে?
--তিন বার।একদিন খুব হাতে পায়ে ধরল,পোয়াতি হবার লোভে আবার তারে সুযুগ দিলাম।
--তার মানে একবার আপনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা সত্বেও আপনি আবার আশ্রমে গেছিলেন?
--জ্বি ঐ যে বললাম,পোয়াতি হবার আশায়।
-- সম্মতিতে সব হয়েছে,বলাতকার বলা যায় না।পুণম পাশ থেকে বললেন।
--না আমি সম্মতি দিই নাই।
--কিন্তু বাধা দিয়েছিলেন কি?
--ঐ যে বললাম আশা ছিল যদি--।
--আপনার স্বামী এসব জানেন?
--জানলে আমারে খুন কইরা ফেলাইবো না?
--কিন্তু মামলা হলে তিনি তো সব জানবেন।
--সিটাই তো ভয়।মাথা নীচু করে বলে পরী।
--মামলা হবে প্রতারণার ,;., এ ক্ষেত্রে টিকবে না।এই যে আপনি পোয়াতি হলেন না,আপনার স্বামী কি আবার বিয়ে করবে?
--এখনই রাতে মাঝে মাঝে বাড়ি আসেনা।শুনতেছি ফতিমার ঘরে থাকে।ঝর ঝর করে কেদে ফেলে পরী। পুনমের সঙ্গে চোখাচুখি হতে ইশারা করে একটা আঙ্গুল দেখালেন। সুভদ্রা বিরক্ত হল,তার মানে একলাখ বলতে চাইছে পুণম।
--শুনুন আসিয়ানা,চোখের জল মুছুন।আপনার যা অবস্থা এখন আপনার টাকার দরকার। মামলা করে খুব একটা কিছু হবে না।এখন যদি মেডিক্যাল টেষ্ট হয় কিছুই ধরা পড়বে না,আপনি অনেক দেরী করেছেন।আমি আপনাকে একটা পরামর্শ দিচ্ছি আপনি ভাল করে ভেবে দেখুন।
--জ্বি?
--আপনাকে দু-লাখ টাকা দেওয়া হবে,যদি মামলা তুলে নেন।
সুমণ অবাক হল সুভদ্রার কথা শুনে। সুমণকে শোনাবার জন্য সুভদ্রা বলল,একজন নারীর ইজ্জত আমি মনে করি না দু-লাখ যথেষ্ট,আপনি ভাল করে ভেবে দেখুন কি করবেন।সব আপনার উপর নির্ভর করছে।
--মেমেসাব আপনে ভাল মানুষ আপনে যা বলেন তাই হবে।
--না না আপনি ভাবুন,আমি সবটা আপনাকে খুলে বললাম।
--দ্যান টাকা দ্যান।আমারে কি করতে হবে বলেন।
--টাকা সাধুর কাছ থেকে এনে দেওয়া হবে।টাকা হাতে না-পেয়ে আপনি কোনো কিছুতে সই করবেন না। আমি আসি ভাই।আসি মিসেস রাউথ।
লজ এখন ফাকা সবাই বেরিয়ে গেছে।বৈদুর্য স্বস্তির শ্বাস ফেলে।জয়াপার্বতী বলছিল রাতে দেখা করতে।বেরিয়ে পড়ল বৈদুর্য,অনেকদিন মিমিদির সঙ্গে দেখা হয়নি।মনে মনে ভেবে নিল কি বলবে মিমিদিকে।
দাগা কোম্পানিতে গিয়ে দেখল মিমিদির ঘর বন্ধ,বেয়ারাকে দেখে জিজ্ঞেস করে জানলো, আজ দেখা হবে না।ট্রামভাড়া বরবাদ,মন খারাপ হয়ে গেল।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবছে কোথায় যাবে এখন? ট্রাম ষ্টপেজে দাঁড়িয়ে আছে,কিন্তু ট্রামে ওঠার গরজ নেই।আচমকা সামনে একটা গাড়ী এসে দাড়ালো। নিজেকে বাচাতে বৈদুর্য সরে গেল।গাড়ীর দরজা খুলে মিমিদি বলল,এসো উঠে এসো।
বৈদুর্য অবাক হয়ে গেল,মিমিদিকে এভাবে দেখবে ভাবে নি।
--হা করে দাঁড়িয়ে কেন ভেতরে এসো।
গাড়ীতে উঠে জানলা ঘেষে বসে বৈদুর্য।আড়চোখে দেখল মিমিদি খুব গম্ভীর।
--মিমিদি তোমার মন খারাপ?
--কেন এরকম মনে হল?
--তোমাকে কেমন অসুখী-অসুখী দেখাচ্ছে।
সুভদ্রা ঘাড় ঘুরিয়ে তুমি আমাকে সুখী করতে পারবে?
--কেউ কাউকে সুখী করতে পারেনা,সুখী হওয়া জানতে হয়।
অদ্ভুত চোখে তাকালো সুভদ্রা তারপর বলল,এদিকে সরে এসো।আমার ছোয়া লাগলে তোমার জাত চলে যাবে নাকি?
বৈদুর্য অবাক হয় মিমিদির কথা বদলে গেছে।সামনের দিকে তাকিয়ে আছে বৈদুর্যকে দেখছে না।
--এসব কথা কোথায় শিখলে?
--আমার মনে হয় তাই বললাম।কেউ উপহার পেয়ে খুশী হয় আবার কেউ ভাবে অমুকের উপহার আরও ভালো।
--বেশী কথা বলো কেন?
বৈদুর্য গম্ভীর হয়ে যায়।মনে হল আজ কিছু হয়েছে মিমিদির মন খারাপ।
--কখন এসেছো?
--তা ঘণ্টা খানেক হবে।মিমিদি তুমি কি জজ হয়েছো?
বুদ্ধুটা বদলাবে না,সুভদ্রা মনে মনে ভাবে।আসিয়ানার ব্যাপারে মনটা খারাপ হয়েছিল বৈদুর্যকে দেখে বেশ লাগছে।
--না জজ হতে পারিনি।তোমাকে যে কথা বলেছিলাম তার কি হল?
--মিমিদি তুমি তো আমাকে এভাবে কথা বলতে না।
--আমার কথার জবাব দাও বিয়ের কি ঠিক করলে?
--বিয়ে করে তুমি কি করবে?
--গোদেলিয়েভের ওখানে যা করো তোমাকে দিয়ে আমার সব কাজ করাবো।
--সে তুমি বিয়ে না করলেও আমি করে দেবো।
--বিনে পয়সায় আমি করাবো কেন?
--বিনে পয়সায় কেন,মিমিদি টাকা না দিলে আমি খাবো কি?
মুখ টিপে হাসে সুভদ্রা,পোষা কুকুরকে যেমন আদর করে ইচ্ছে করছে বৈদুর্যকে সেভাবে আদর করে। একটা রেষ্টুরেণ্টের সামনে গাড়ী দাড়ীয়ে পড়ে।বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে,এখানে দাড়ালে,মিমিদি অফিস যাবে না?
--অফিস হয়ে গেছে আজ আর যাবো না।ক্ষিধে পেয়েছে,নামো।
গাড়ী লক করে দুজনে ভিতরে ঢুকে একটা কেবিনে বসলো।বৈদুর্যকে জিজ্ঞেস করে,কি খাবে বলো?
--মিমিদি তুমি খাও,আমি কিছু খাবো না।
সুভদ্রা কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখে বৈদুর্যকে তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,তা হলে চলো।
বৈদুর্য বুঝতে পারে মিমিদি রাগ করেছে,তাড়াতাড়ি সুভদ্রার কাধ ধরে চেপে বসিয়ে দিয়ে বলল,ঠিক আছে তুমি যা খাবে তাই খাবো।
সুভদ্রা চোখ নামিয়ে কাধের উপর রাখা বৈদুর্যর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে মুচকি হাসল।লজ্জায় বৈদুর্য হাত সরিয়ে নিল।সুভদ্রা বেল পুস করতে বেয়েরা এসে সেলাম জানালো।সুভদ্রা বলল,দু-প্লেট চিকেন স্যাণ্ডুইচ।
বেয়ারা চলে যেতে সুভদ্রা বলল,বলো আই লাভ ইউ।
মাথা নীচু করে বৈদুর্য বলল,আই লাভ ইউ।
--বলো,মিমি আই লাভ ইউ।
--ধ্যেৎ সে আমি বলতে পারবো না।
--তার মানে তুমি আমাকে ভালবাসো না।
--ওমা সে কথা আমি কখন বললাম?
--তাহলে আমাকে ভালো বাসো?
--তোমাকে সবাই ভালবাসবে।
--সবার কথা শুনতে চাই নি,তুমি ভালবাসো কি না তাই বলো।
বৈদুর্য মাথা নীচু করে মৃদু স্বরে বলে,ঠিক আছে বাসি।
--বাসি মানে?
--বলছি তো ভালবাসি।
সুভদ্রা দু-হাতে বৈদুর্যের দু-গালে হাত দিয়ে বলল,ওরে আমার মজনু রে।
বেয়ারা স্যাণ্ডুইচ নিয়ে আসতে সুভদ্রা গাল ছেড়ে দিয়ে বেয়ারাকে বলে,একটু পরে দু-কাপ কফি দিও।
স্যাণ্ডুইচ শেষ হতে বেয়ারা কফি দিয়ে গেল।বৈদুর্য বলল,আমি আগে কখনো কফি খাইনি।
--সব আস্তে আস্তে অভ্যেস করতে হবে।বৈদুর্য আমাকে একবার চুমু খাওতো।সুভদ্রা ঠোট সরু করে চোখ বুজলো।
--না আমি পারবো না।আমার শরীর কেমন করছে।
সুভদ্রা উঠে ঝুকে বৈদুর্যের মাথা ধরে সজোরে চুমু খেয়ে বলল,এবার কফি খাও।
বৈদুর্য নীরবে কফিতে চুমুক দিতে থাকে।সুভদ্রা চোখ তুলে বৈদুর্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,ভাল লাগেনি?
বৈদুর্য হেসে ফেলে বলে,ভাল লেগেছে।তোমায় একটা কথা বলবো?
--কি কথা?
--আমাকে একটা চাকরি দেখে দাও।ঐখানে আমার ভাল লাগছে না মিমিদি।
--তোমার জন্য আমি কিসসু করতে পারবো না। বললাম না মিমি বলতে।
--তুমি যা বলবে তাই বলবো।
--আমার কাছে এলে তোমার খালি চাকরির কথা মনে পড়ে?
--তুমি ছাড়া আমি কাকে বলবো বলো?
--ঠিক আছে কটা দিন একটু কষ্ট করে থাক।দেখি কি করা যায়।
কফি শেষ করে সুভদ্রা ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে কলম দিয়ে বলল,লেখো।
বৈদুর্য কাগজ নিয়ে কান খাড়া করে থাকি মিমি কি লিখতে বলছে।
সুভদ্রা বলল,প্রিয় মিমি....বৈদুর্য লিখলো...আমি তোমাকে ভালবাসি।বৈদুর্য চোখ তুলে মিমির দিকে তাকিয়ে কিছু বলার ভরসা পায় না,লেখে আমি তোমাকে ভাল বাসি।
সুভদ্রা বলল,এবার নীচে নিজের নাম লেখ।
নাম লেখা হলে সুভদ্রা কাগজটা টেনে নিয়ে ব্যাগে রেখে বলল,সত্যিই ভালবাসো নাকি আমি বললাম বলে লিখলে?
--সত্যিই বলছি,যখন আমার মন খুব খারাপ হয় তোমার কথা মনে পড়ে।
--এসো আমার কাছে এসো। বৈদুর্যের মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,তুমি আমার সোনা ছেলে।চলো তোমাকে তোমার লজে পৌছে দিয়ে যাই।
গাড়ীতে উঠে বৈদুর্য আড়চোখে সুভদ্রাকে দেখে।স্টিয়ারিং ধরে বুঝতে পারে বোকাটা হতভম্ব হয়ে গেছে।জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছো?
--একটা কথা বলবো?
--একটা কেন যত ইচ্ছে হয় বলো।
--না মানে তোমাকে কেউ নিন্দে করুক আমার ভাল লাগবে না।
--খালি খালি নিন্দে করবে কেন?
--সেটা ঠিক।বৈদুর্য মনে মনে কথা সাজায় কিভাবে কথাটা বলবে।তারপর বলল,না বলছিলাম কি আমার সঙ্গে তোমাকে ঠিক মানাবে না।
সুভদ্রা ঠোট টিপে হাসে।জিগেস করে,কেন মানাবে না?
--তুমি আজ বাদে কাল জজ হবে আর আমি চাল চুলো নেই--।
--এত যদি বোঝো তাহলে যাতে মানায় সেই চেষ্টা করো।
বৈদুর্য মাথা নীচু করে বসে থাকে।মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।সুভদ্রা হঠাৎ রাস্তার ধারে গাড়ী দাড় করিয়ে দিল।বৈদুর্য তাকিয়ে দেখল কলেজ স্ট্রীট, শেলটার আরও কিছুটা দুরে।এটুকূ সে হেটে যেতে পারবে।সুভদ্রা তার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, শোনো এখন থেকে আমি তোমাকে যা বলবো তাই করবে।কি করবে তো?
--কবে তোমার কথা শুনিনি বলো?
--যা বলছি তার উত্তর দাও।যা বলবে তাই করবে তো?
--হ্যা করবো।
--ব্যাস আর একদম বাজে কথা নয়।সুভদ্রা আবার গাড়ী স্টারট দিল।
খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গে,গোদেলিয়েভ অনুভব করেন কাধের ব্যথাটা নেই। কাল রাতের কথা মনে পড়ল নাচতে নাচতে আচমকা ঘাড়ে খিচ লেগে যায়।বাইদুজ ম্যাসেজ করে দেবার পর বেশ ভাল লাগছে।উঠে পাশের ঘরে গিয়ে দেখলেন হাত-পা ছড়িয়ে বাইদুজ চিত হয়ে শুয়ে আছে যেন ক্রুশ বিদ্ধ যীশু।নিজের ঘরে ফিরে এসে জানলায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা করেন।নরম রুপোলি রোদ এসে পড়েছে ঘরের মেঝেতে।
বৈদুর্যের ঘুম ভেঙ্গে যায়,ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে ঘড়ি দেখে ছটা বাজতে চলল। রান্না ঘরে চারুমাসীর শব্দ পাওয়া গেল।বাইরে বেরিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে রান্না ঘরে গেল।ঘরে ঘরে যেতে হবে ভাবলে বৈদুর্য সঙ্কুচিত বোধ করে।আগে এমন হত না।সোনালিদি যা করছিল ঝিনুকদি কি ভাবলো কে জানে।এখানে মনে হয় বেশীদিন থাকা সম্ভব হবে না কিন্তু যাবে কোথায়? আজ একবার মিমিদির কাছে যাবে কি না ভাবে।প্রতিটি মানুষ চেহারা প্রকৃতি মনসিকতায় শিক্ষা সামাজিক অবস্থানের করণে পরস্পর স্বতন্ত্র কারো সঙ্গে কারো মিল নেই।কিন্তু জৈবিক চাহিদার ব্যাপারে বস্তিবাসী চারুমাসী তেলেগুভাষী জয়া পার্বতী কলেজ শিক্ষয়ীত্রী সোনালিদি--সকলেই এক।অবশ্য মিমিদি অন্য রকম এদের থেকে আলাদা।
সকালের ব্রেক ফাষ্ট চায়ের সঙ্গে টোষ্ট। এই সময় ব্যস্ততা থাকে সে জন্য অন্য কিছু করার অবসর কম। মধুছন্দাদির দরজায় টোকা দিতে এলোমেলো পোষাকে দরজা খুলল চৈতালিদি।তাকে দেখে বুকের কাপড় টেনে দেবার প্রয়োজন বোধ করে না।বৈদুর্য টেবিলের উপর দু-কাপ চা টোষ্ট নামিয়ে রেখে দ্রুত বেরিয়ে এল।
দরজায় ধাক্কা শুনে সুভদ্রা বিছানা থেকে নেমে গায়ে গাউন চাপিয়ে দরজা খুলে দেখল সুরবালা মুখে হাসি লেপটে দাড়িয়ে,হাতে ধরা একটা ট্রেতে প্রাতরাশ। দেওয়ালে ঘড়ির দিকে তাকাল সুভদ্রা।বাবাঃ এত বেলা হয়ে গেছে?
--চা খেয়ে মা উপরে যেতে বললেন।সুরবালা চলে গেল।
সুভদ্রা জানে মাম্মীর মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে।মাম্মীর ঘরে যেতে বোঝা গেল তার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন সুনন্দা মুখার্জি।
--কাল ভাল ঘুম হয়েছিল তো?
--হ্যা ওষুধ না খেয়েই ঘুমিয়েছিলাম।
--তোমাকে বলেছিলাম না ওষুধ না খেয়ে চেষ্টা করো,তুমি তো আমার কথা শুনছিলে না--।
কথা শেষ না হতেই সুনন্দা বললেন,আর তুমি কারো কথা শুনবে না?
--তোমার কোন কথা শুনিনি বলো?
--ওসব থাক,যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে।দিব্যেন্দুর সঙ্গে কি কথা হল?
--ও এ বাড়িতে আসতে চায় না।সুতরাং বাড়ী বিক্রী করে চল্লিশ শতাংশ ওকে দিলে তোমার আমার ষাট শতাংশ থাকবে।
--আমরা কোথায় থাকবো?
--রাজার হাটে ফ্লাট কিনেছি। এই বাড়ীটার বন্দোবস্ত হলেই সেখানে চলে যাবো।
সুনন্দা মুখার্জি উদাস হয়ে যান।সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে,তুমি না চাইলে কিছুই হবে না। তুমি বলো তোমার অন্য কোনো প্লান আছে কি না?
--এই বাড়ী তোর বাবার স্মৃতি। তাছাড়া তুই ওদের চল্লিশ কেন সমানই তো হওয়া উচিত--।
--মাম্মী কোনো টাকাই দিব্যেন্দুকে দেওয়া হচ্ছে না।টাকা দিচ্ছি আমার বোন জিনিকে। তুমি বললে আরো বেশী আমার দিতে আপত্তি নেই।
--তুই যে কি পরীক্ষা দিলি তার কি হল?
--মনে হচ্ছে এবার হল না।আমি সামনের বছর আবার দেবো।
--তাহলে তুই কি বিয়ে করবি কবে?
সুভদ্রা মাথা নীচু করে হাসে।জয়ন্ত চক্রবর্তী সহায় আঙ্কেলের জুনিয়ার মনে হয়েছে একটু ইন্টারেষ্টেড এবার সেও পরীক্ষা দিয়েছিল।
কিন্তু সুভদ্রা সেভাবে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবেনি।মাম্মীকে বললে এক্ষুনি সহায় আঙ্কেলকে ফোন করবে।
--কিরে হাসছিস যে?কথার উত্তর দিলি না তো?সুনন্দা তাগাদা দিলেন।
--বাড়ির ঝামেলা মিটুক তারপর ভাববো।সুভদ্রা বিষয়টা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে।
সুনন্দা মুখার্জি বুঝতে পারেন মেয়ের কাছ থেকে আর কিছু জানতে পারবেন না।তবু মনে হল একটা কথা বলা দরকার,দ্যাখ মা সমাজে মেয়েদের শান্তিতে জীবন যাপন করতে হলে একজন পুরুষ সঙ্গী খুব দরকার।
সুভদ্রা চোখ তুলে তাকালো,সঙ্গী মানে কি বলতে চায় মাম্মী?মনে পড়ল বৈদুর্যের সঙ্গে সেদিনের কথা।সেই ঘটনার পর মাম্মীর মধ্যে দেখেছিল প্রাণের উচ্ছ্বাস।
--যা ভাল বোঝ করবে আমি আর কি বলবো?সুনন্দা মুখার্জি অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
সুভদ্রাকে বেরোতে হবে,টাওয়াল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বজ্রানন্দ কেসের অভিযোগ কারিণির সঙ্গে আজ আলোচনা হবার কথা।
মি.দাগার পক্ষ হতে মহিলা হিসেবে সুভদ্রাকে উপস্থিত থাকতে হবে।সরকারী উকিলের সঙ্গে সহায় আঙ্কেলের কথা হয়েছে আদালতের বাইরে যাতে মীমাংসা করা যায়।দাগা এ্যাণ্ড কোম্পানীর সামনে গাড়ী থেকে নামার আগে একজন এসে বলল,ম্যাডাম আপনি রামদীন সহায়ের অফিসে চলে যান,স্যার আপনাকে সেখানে যেতে বলেছেন।
সুভদ্রা সহায় আঙ্কেলের চেম্বার চেনে,আবার গাড়িতে স্টার্ট দিল।চেম্বারে ঢোকার আগে সহায় আঙ্কেল মিসেস পুনম রাউতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।জয়ন্তও ছিল সেখানে। ভদ্রমহিলা মধ্য বয়সী,অবাঙ্গালি ধরণের দেখতে। কি ধরনের রফা হয়েছে বোঝার চেষ্টা করে সুভদ্রা।
মি.সহায় বললেন,আমার একটা হিয়ারিং আছে জয়ন্ত রইল।উয়িশ ইউ অল দা বেস্ট।
পুনম চেম্বারে ঢোকার আগে বোঝালো পুয়োর লেডি মামলা করে কোনো লাভ নেই,যদি কিছু কমপেনসেট করানো যায় সেটাই বেটার। সুভদ্রা বুঝতে পারে সহায়ের সঙ্গে ভালই আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং হয়েছে।
টেবিলে কনুইয়ের ভর দিয়ে সালোয়ার কামিজ পরা বছর চব্বিশ-পচিশের একমহিলা। তাদের দেখে সোজা হয়ে বসল। পুনম বলল,ওনাকে তোমার কথা বলো।
--আপনার নাম কি?সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে।
--জ্জ্বি আসিয়ানা আহমেদ পরী।
--আপনি কোথায় থাকেন?
পরী জিজ্ঞেস করে,গুড়ার থেকে বলবো?
--হ্যা বলুন।
--আমাদের বাড়ী আছিল বরিশালের ঝালকাটি গ্রামে।উনি আমারে নিয়ে পলায়ে * স্থানে এসে সাদি করেন।
--কতদিন আগের কথা?এখানে কোথায় থাকেন?
--তা প্রায় পাচ-ছ বছর হবে।মল্লিক পুরে তানার বাড়ী চার খান অটো আছে,নিজির গ্যারেজ আছে যন্ত্রপাতি সারাই করেন।
--শুনুন আপনাকে যা জিজ্ঞেস করবো শুধু সেইটুকু বলবেন।
--জ্বি,পোয়াতি হচ্ছি না দেখে তিনি আবার সাদির মতলব করতেছেন।একদিন টুনির মা আমারে বলল,--।
--টুনির মা কে?
--আমাদের তিন-চার ঘর পাশেই থাকে,* ।তার কথায় কাফেরের বাচ্চা আমারে নাপাক করছে।
--আদালতে এসব কথা বলবেন না।আপনি কতদিন আগে সাধুবাবার সঙ্গে মিলেছেন?
--দুই মাসের উপর হল।তারপর অনেকবার আমি তার সাথে মিলছি।
--তা নয় মানে সাধুবাবা মানে ইয়ে --।
পরী লজ্জা পেয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,কবে চুদছে?সেইটা মনে নাই তবে উনার আছ্রমে যাবার কদিন পর বললেন,যজ্ঞ হবে।আমারে কি য্যান খাওয়াইল।তারপর ঝাপাইয়া --।
--আপনার ইচ্ছেতে সাধুবাবা মিলিত হয়েছে?
--তোবা তোবা কি বলেন মেমসাব--আমি কি ব্যাশ্যা নিকি?হারামীটা কদিন পর কয় কি বাসী কাপড়ের জন্য ফল হইতেছে না।
--বুঝলাম না মানে?
--প্রেত্থম দিন কাপড় উঠাইয়া চুদছে।পরে বাসী কাপড় খুইল্যা একেবারে নাঙ্গা কইরা আমারে ফালা ফালা করছে।
--দুবার আপনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে?
--তিন বার।একদিন খুব হাতে পায়ে ধরল,পোয়াতি হবার লোভে আবার তারে সুযুগ দিলাম।
--তার মানে একবার আপনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা সত্বেও আপনি আবার আশ্রমে গেছিলেন?
--জ্বি ঐ যে বললাম,পোয়াতি হবার আশায়।
-- সম্মতিতে সব হয়েছে,বলাতকার বলা যায় না।পুণম পাশ থেকে বললেন।
--না আমি সম্মতি দিই নাই।
--কিন্তু বাধা দিয়েছিলেন কি?
--ঐ যে বললাম আশা ছিল যদি--।
--আপনার স্বামী এসব জানেন?
--জানলে আমারে খুন কইরা ফেলাইবো না?
--কিন্তু মামলা হলে তিনি তো সব জানবেন।
--সিটাই তো ভয়।মাথা নীচু করে বলে পরী।
--মামলা হবে প্রতারণার ,;., এ ক্ষেত্রে টিকবে না।এই যে আপনি পোয়াতি হলেন না,আপনার স্বামী কি আবার বিয়ে করবে?
--এখনই রাতে মাঝে মাঝে বাড়ি আসেনা।শুনতেছি ফতিমার ঘরে থাকে।ঝর ঝর করে কেদে ফেলে পরী। পুনমের সঙ্গে চোখাচুখি হতে ইশারা করে একটা আঙ্গুল দেখালেন। সুভদ্রা বিরক্ত হল,তার মানে একলাখ বলতে চাইছে পুণম।
--শুনুন আসিয়ানা,চোখের জল মুছুন।আপনার যা অবস্থা এখন আপনার টাকার দরকার। মামলা করে খুব একটা কিছু হবে না।এখন যদি মেডিক্যাল টেষ্ট হয় কিছুই ধরা পড়বে না,আপনি অনেক দেরী করেছেন।আমি আপনাকে একটা পরামর্শ দিচ্ছি আপনি ভাল করে ভেবে দেখুন।
--জ্বি?
--আপনাকে দু-লাখ টাকা দেওয়া হবে,যদি মামলা তুলে নেন।
সুমণ অবাক হল সুভদ্রার কথা শুনে। সুমণকে শোনাবার জন্য সুভদ্রা বলল,একজন নারীর ইজ্জত আমি মনে করি না দু-লাখ যথেষ্ট,আপনি ভাল করে ভেবে দেখুন কি করবেন।সব আপনার উপর নির্ভর করছে।
--মেমেসাব আপনে ভাল মানুষ আপনে যা বলেন তাই হবে।
--না না আপনি ভাবুন,আমি সবটা আপনাকে খুলে বললাম।
--দ্যান টাকা দ্যান।আমারে কি করতে হবে বলেন।
--টাকা সাধুর কাছ থেকে এনে দেওয়া হবে।টাকা হাতে না-পেয়ে আপনি কোনো কিছুতে সই করবেন না। আমি আসি ভাই।আসি মিসেস রাউথ।
লজ এখন ফাকা সবাই বেরিয়ে গেছে।বৈদুর্য স্বস্তির শ্বাস ফেলে।জয়াপার্বতী বলছিল রাতে দেখা করতে।বেরিয়ে পড়ল বৈদুর্য,অনেকদিন মিমিদির সঙ্গে দেখা হয়নি।মনে মনে ভেবে নিল কি বলবে মিমিদিকে।
দাগা কোম্পানিতে গিয়ে দেখল মিমিদির ঘর বন্ধ,বেয়ারাকে দেখে জিজ্ঞেস করে জানলো, আজ দেখা হবে না।ট্রামভাড়া বরবাদ,মন খারাপ হয়ে গেল।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবছে কোথায় যাবে এখন? ট্রাম ষ্টপেজে দাঁড়িয়ে আছে,কিন্তু ট্রামে ওঠার গরজ নেই।আচমকা সামনে একটা গাড়ী এসে দাড়ালো। নিজেকে বাচাতে বৈদুর্য সরে গেল।গাড়ীর দরজা খুলে মিমিদি বলল,এসো উঠে এসো।
বৈদুর্য অবাক হয়ে গেল,মিমিদিকে এভাবে দেখবে ভাবে নি।
--হা করে দাঁড়িয়ে কেন ভেতরে এসো।
গাড়ীতে উঠে জানলা ঘেষে বসে বৈদুর্য।আড়চোখে দেখল মিমিদি খুব গম্ভীর।
--মিমিদি তোমার মন খারাপ?
--কেন এরকম মনে হল?
--তোমাকে কেমন অসুখী-অসুখী দেখাচ্ছে।
সুভদ্রা ঘাড় ঘুরিয়ে তুমি আমাকে সুখী করতে পারবে?
--কেউ কাউকে সুখী করতে পারেনা,সুখী হওয়া জানতে হয়।
অদ্ভুত চোখে তাকালো সুভদ্রা তারপর বলল,এদিকে সরে এসো।আমার ছোয়া লাগলে তোমার জাত চলে যাবে নাকি?
বৈদুর্য অবাক হয় মিমিদির কথা বদলে গেছে।সামনের দিকে তাকিয়ে আছে বৈদুর্যকে দেখছে না।
--এসব কথা কোথায় শিখলে?
--আমার মনে হয় তাই বললাম।কেউ উপহার পেয়ে খুশী হয় আবার কেউ ভাবে অমুকের উপহার আরও ভালো।
--বেশী কথা বলো কেন?
বৈদুর্য গম্ভীর হয়ে যায়।মনে হল আজ কিছু হয়েছে মিমিদির মন খারাপ।
--কখন এসেছো?
--তা ঘণ্টা খানেক হবে।মিমিদি তুমি কি জজ হয়েছো?
বুদ্ধুটা বদলাবে না,সুভদ্রা মনে মনে ভাবে।আসিয়ানার ব্যাপারে মনটা খারাপ হয়েছিল বৈদুর্যকে দেখে বেশ লাগছে।
--না জজ হতে পারিনি।তোমাকে যে কথা বলেছিলাম তার কি হল?
--মিমিদি তুমি তো আমাকে এভাবে কথা বলতে না।
--আমার কথার জবাব দাও বিয়ের কি ঠিক করলে?
--বিয়ে করে তুমি কি করবে?
--গোদেলিয়েভের ওখানে যা করো তোমাকে দিয়ে আমার সব কাজ করাবো।
--সে তুমি বিয়ে না করলেও আমি করে দেবো।
--বিনে পয়সায় আমি করাবো কেন?
--বিনে পয়সায় কেন,মিমিদি টাকা না দিলে আমি খাবো কি?
মুখ টিপে হাসে সুভদ্রা,পোষা কুকুরকে যেমন আদর করে ইচ্ছে করছে বৈদুর্যকে সেভাবে আদর করে। একটা রেষ্টুরেণ্টের সামনে গাড়ী দাড়ীয়ে পড়ে।বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে,এখানে দাড়ালে,মিমিদি অফিস যাবে না?
--অফিস হয়ে গেছে আজ আর যাবো না।ক্ষিধে পেয়েছে,নামো।
গাড়ী লক করে দুজনে ভিতরে ঢুকে একটা কেবিনে বসলো।বৈদুর্যকে জিজ্ঞেস করে,কি খাবে বলো?
--মিমিদি তুমি খাও,আমি কিছু খাবো না।
সুভদ্রা কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখে বৈদুর্যকে তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,তা হলে চলো।
বৈদুর্য বুঝতে পারে মিমিদি রাগ করেছে,তাড়াতাড়ি সুভদ্রার কাধ ধরে চেপে বসিয়ে দিয়ে বলল,ঠিক আছে তুমি যা খাবে তাই খাবো।
সুভদ্রা চোখ নামিয়ে কাধের উপর রাখা বৈদুর্যর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে মুচকি হাসল।লজ্জায় বৈদুর্য হাত সরিয়ে নিল।সুভদ্রা বেল পুস করতে বেয়েরা এসে সেলাম জানালো।সুভদ্রা বলল,দু-প্লেট চিকেন স্যাণ্ডুইচ।
বেয়ারা চলে যেতে সুভদ্রা বলল,বলো আই লাভ ইউ।
মাথা নীচু করে বৈদুর্য বলল,আই লাভ ইউ।
--বলো,মিমি আই লাভ ইউ।
--ধ্যেৎ সে আমি বলতে পারবো না।
--তার মানে তুমি আমাকে ভালবাসো না।
--ওমা সে কথা আমি কখন বললাম?
--তাহলে আমাকে ভালো বাসো?
--তোমাকে সবাই ভালবাসবে।
--সবার কথা শুনতে চাই নি,তুমি ভালবাসো কি না তাই বলো।
বৈদুর্য মাথা নীচু করে মৃদু স্বরে বলে,ঠিক আছে বাসি।
--বাসি মানে?
--বলছি তো ভালবাসি।
সুভদ্রা দু-হাতে বৈদুর্যের দু-গালে হাত দিয়ে বলল,ওরে আমার মজনু রে।
বেয়ারা স্যাণ্ডুইচ নিয়ে আসতে সুভদ্রা গাল ছেড়ে দিয়ে বেয়ারাকে বলে,একটু পরে দু-কাপ কফি দিও।
স্যাণ্ডুইচ শেষ হতে বেয়ারা কফি দিয়ে গেল।বৈদুর্য বলল,আমি আগে কখনো কফি খাইনি।
--সব আস্তে আস্তে অভ্যেস করতে হবে।বৈদুর্য আমাকে একবার চুমু খাওতো।সুভদ্রা ঠোট সরু করে চোখ বুজলো।
--না আমি পারবো না।আমার শরীর কেমন করছে।
সুভদ্রা উঠে ঝুকে বৈদুর্যের মাথা ধরে সজোরে চুমু খেয়ে বলল,এবার কফি খাও।
বৈদুর্য নীরবে কফিতে চুমুক দিতে থাকে।সুভদ্রা চোখ তুলে বৈদুর্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,ভাল লাগেনি?
বৈদুর্য হেসে ফেলে বলে,ভাল লেগেছে।তোমায় একটা কথা বলবো?
--কি কথা?
--আমাকে একটা চাকরি দেখে দাও।ঐখানে আমার ভাল লাগছে না মিমিদি।
--তোমার জন্য আমি কিসসু করতে পারবো না। বললাম না মিমি বলতে।
--তুমি যা বলবে তাই বলবো।
--আমার কাছে এলে তোমার খালি চাকরির কথা মনে পড়ে?
--তুমি ছাড়া আমি কাকে বলবো বলো?
--ঠিক আছে কটা দিন একটু কষ্ট করে থাক।দেখি কি করা যায়।
কফি শেষ করে সুভদ্রা ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে কলম দিয়ে বলল,লেখো।
বৈদুর্য কাগজ নিয়ে কান খাড়া করে থাকি মিমি কি লিখতে বলছে।
সুভদ্রা বলল,প্রিয় মিমি....বৈদুর্য লিখলো...আমি তোমাকে ভালবাসি।বৈদুর্য চোখ তুলে মিমির দিকে তাকিয়ে কিছু বলার ভরসা পায় না,লেখে আমি তোমাকে ভাল বাসি।
সুভদ্রা বলল,এবার নীচে নিজের নাম লেখ।
নাম লেখা হলে সুভদ্রা কাগজটা টেনে নিয়ে ব্যাগে রেখে বলল,সত্যিই ভালবাসো নাকি আমি বললাম বলে লিখলে?
--সত্যিই বলছি,যখন আমার মন খুব খারাপ হয় তোমার কথা মনে পড়ে।
--এসো আমার কাছে এসো। বৈদুর্যের মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,তুমি আমার সোনা ছেলে।চলো তোমাকে তোমার লজে পৌছে দিয়ে যাই।
গাড়ীতে উঠে বৈদুর্য আড়চোখে সুভদ্রাকে দেখে।স্টিয়ারিং ধরে বুঝতে পারে বোকাটা হতভম্ব হয়ে গেছে।জিজ্ঞেস করল,কি ভাবছো?
--একটা কথা বলবো?
--একটা কেন যত ইচ্ছে হয় বলো।
--না মানে তোমাকে কেউ নিন্দে করুক আমার ভাল লাগবে না।
--খালি খালি নিন্দে করবে কেন?
--সেটা ঠিক।বৈদুর্য মনে মনে কথা সাজায় কিভাবে কথাটা বলবে।তারপর বলল,না বলছিলাম কি আমার সঙ্গে তোমাকে ঠিক মানাবে না।
সুভদ্রা ঠোট টিপে হাসে।জিগেস করে,কেন মানাবে না?
--তুমি আজ বাদে কাল জজ হবে আর আমি চাল চুলো নেই--।
--এত যদি বোঝো তাহলে যাতে মানায় সেই চেষ্টা করো।
বৈদুর্য মাথা নীচু করে বসে থাকে।মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।সুভদ্রা হঠাৎ রাস্তার ধারে গাড়ী দাড় করিয়ে দিল।বৈদুর্য তাকিয়ে দেখল কলেজ স্ট্রীট, শেলটার আরও কিছুটা দুরে।এটুকূ সে হেটে যেতে পারবে।সুভদ্রা তার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, শোনো এখন থেকে আমি তোমাকে যা বলবো তাই করবে।কি করবে তো?
--কবে তোমার কথা শুনিনি বলো?
--যা বলছি তার উত্তর দাও।যা বলবে তাই করবে তো?
--হ্যা করবো।
--ব্যাস আর একদম বাজে কথা নয়।সুভদ্রা আবার গাড়ী স্টারট দিল।