19-02-2020, 12:00 AM
উপসংহার
কয়েকটা প্রশ্ন প্রশ্ন থাকাই ভালো কারণ এর সিকোয়েল আসছে। রুমি আর অদিতি আবার ফিরবে তাদের কাণ্ড কারখানা নিয়ে। একজন সফট আর আরেকজন ডানপিটে। কিন্তু দু
একটা প্রশ্নের উত্তর না দিলে সবাই ভাববে যে লেখিকার কাছে এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই তাই সে এড়িয়ে গেল। তাই শুধু দু একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সমাপ্তি টানছি। বাকি
প্রশ্নের উত্তর পরের গল্পের শুরুতে যে মদের ঠেকটা আছে তাতে পাবেন। সেই মদের ঠেকে আছে আলিদা, অদিতি, আর আপনাদের সবার রুমি। আর ঠেক বসেছে রুমির ফ্ল্যাটে।
১। অদিতি কি করে সব জানত? আর কি করে বাইরে সব খবর দিত?
উঃ আলোর সংকেতে। রুমি ঘুমিয়ে যাবার পর মোমবাতি নিয়ে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন আক্ষরিক সংকেত দিত। ওর বক্তব্যের প্রতিটা অক্ষর সে বাইরে পৌঁছে দিত। বাইরে
দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরা সেই অক্ষর গুলো কে একের পর এক বসিয়ে পুরো তথ্যটা বের করে নিত। অদিতি ঠিক একই প্রক্রিয়ায় সংবাদ পেত যে বাইরে কি হচ্ছে?
২। অদিতি কি করে এলো এই ক্যাম্পে?
উঃ রুমির আসাটা কাকতালীয় হলেও, অদিতিরটা নয়। ও কোনও দিন প্রকাশ করে নি, কিন্তু রত্নাদিকে ও নিজেও চিনত। রুমির ক্ষেত্রে রত্না দি গিয়ে আলাপ করেছিল। অদিতির
ক্ষেত্রে অদিতি নিজে গিয়ে আলাপ করেছিল।
৩। অদিতি কেন ওঁত পেতেছিল?
উঃ সরাসরি অদিতিদের সংস্থার অরূপের গোপন সংস্থার ব্যাপারে কোনও মাথা ব্যাথা ছিল না এরকম যে একটা সংস্থা আছে সেটাই তারা জানত না। অরূপের একটি মাত্র
অ্যাঁকাউন্টের ওপর সর্বপ্রথম নজর পড়ে আয় কর বিভাগের অডিটিং দপ্তরের। প্রথমে ঠিক হয়েছিল যে বড় মাপের আয়কর আদায় করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু মাসে মাসে
এরকম বড় মাপের টাকা ঢুকতে দেখে ওদের সন্দেহ হয় যে এই লোকটার আরও কোনও অ্যাঁকাউন্ট থাকতে পারে। আর সব থেকে বড় কথা হল যে সব অ্যাঁকাউন্ট থেকে অরূপের
অ্যাঁকাউন্টে টাকা ঢুকছে প্রত্যেকেই বড় ব্যবসাদার লোক। কিন্তু টাকা ঢুকছে তাদের কারেন্ট অ্যাঁকাউন্ট থেকে নয়। হয় তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত অ্যাঁকাউন্ট থেকে বা তাদের
কোনও জনৈক আত্মীয়ের অ্যাঁকাউন্ট থেকে। নিজেরা কোনও স্টেপ নেবার আগে ভালো করে জিনিসটা খতিয়ে দেখতে আরক্ষণ বিভাগে ব্যাপারটা জানানো হয়। এক্ষেত্রে বলা
ভালো শুধু অরূপ নয় এরকম আরও অনেকেরই অ্যাঁকাউন্ট নিয়ে খতিয়ে দেখার নির্দেশ থাকে আরক্ষণ বিভাগের ওপর। আরক্ষণ বিভাগ কে এই সব কথা জানানোর কারণ
একটাই। এই অঢেল আমদানির পেছনে বা আমদানি শেষের পর সেই টাকায় কোনও দেশদ্রোহিতা, সামাজিক চক্রান্ত বা ওই ধরণের কিছু জন সাধারণের বিপদের কারণ আছে
কিনা সেটা খতিয়ে দেখা। অরূপের ক্ষেত্রে এটা খুব সহজেই অনুমেয় যে ও কিছু লোক কে ব্ল্যাক মেইল করছে। তাদের দু-এক জন কে গোপনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু তারা
সেকথা এড়িয়ে যায়। তাদের থেকে প্রধান যে উত্তর পাওয়া যায় সেটা হল অরূপের কাছ থেকে তারা উপকৃত, কি ব্যাপারে উপকৃত সেটা তারা বলতে বাধ্য নয় কারণ সেটা তাদের
একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। সব ব্ল্যাকমেলের ক্ষেত্রেই সচরাচর এইরকম উত্তরই এসে থাকে। যাদের ব্ল্যাক মেইল করা হচ্ছে তার মন খুলে উত্তর দিতে পারে না হয় নিজের বা নিকট
জনের প্রানের ভয়ে, বা নিজের বা নিজের পরিবারের ব্যাপারে কোনও গোপন তথ্য বেড়িয়ে যাবার ভয়ে। কিন্তু এত বড় বড় ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানো অরূপের মতন লোকের পক্ষে
কি করে সম্ভব? আর তা ছাড়া সে করেই বা কি? হতে পারে তার মাথার ওপর আরও বড় কোনও লোকের বা দলের হাত আছে যাদের গায়ের জোড়ে অরূপ এই খেলা খেলে
চলেছে। তদন্ত যখন শুরু হয় তখন অরূপ লোকটাকে নজরবন্দী করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আরক্ষণ বিভাগের লক্ষ্য ছিল ওর পেছনে কার হাত আছে সেটা বোঝবার। ওদের
ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিল কারণ এক্ষেত্রে অরূপ নিজেই ছিল সব কিছুর হোতা। অনেকদিনের তদন্ত করার পর আর অরূপের ওপর নজর রাখার পর ওরা বুঝতে পারে যে কোথাও
গণ্ডগোল আছে, কিন্তু ওকে আইনি ভাবে(আয়করের ব্যাপার ছাড়া, আর সেক্ষেত্রে ওর আসল উদ্দেশ্যটাই আর হয় তো কোনও দিন জানা যাবে না) ঠিক বাগে পাওয়া ওদের
পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। ওরা সাহায্য নেয় সিক্রেট সার্ভিসের। গোপন গোয়েন্দা বিভাগের লোক অরূপকে নজর বন্দী করে। কিন্তু ওর অদ্ভুত চতুরতার জন্য ওকে ঠিক বাগে আনা
যাচ্ছিল না। উল্টে অরূপও বুঝতে পারে যে ওর পেছনে লোক লেগেছে। নিজের দলের বিশ্বস্ত লোকদের সাথে কোলকাতায় বা কলকাতার কাছে থাকা কালিন সে বিশেস ভাবে
সতর্ক হয়ে যায়। চোর পুলিশের খেলা চলতে থাকে। এদিকে ওর সামনেও উপস্থিত হয় মহা বিপদ।
একথা ভুললে চলবে না যে অরূপ ওর দলের মেয়েদের বুঝিয়েছে ওরা সমাজ সেবিকা। প্রশাসন যা করতে পারছে না বা করতে অবহেলা করছে সেটাই করে তারা সমাজের
শুদ্ধিকরণ করছে। একা একা এই কাজ করা যায় না। এই জন্য চাই সংগঠন। সংগঠন চালানর জন্য চাই অর্থ। অর্থ লোটার সবথেকে সোজা উপায় ডাকাতি, কিন্তু তাতে ক্ষয়
ক্ষতির সম্ভাবনা প্রচুর। সে মেয়েদের সামনে এমন ভাব করলো যে ডাকাতি করতে গিয়ে তার দলের লোকের প্রান হানি হয় এটা সেই কিছুতেই চায় না। তার থেকে অনেক সোজা
হল বেশ্যা বৃত্তি, মানে বেশ্যা সেজে গিয়ে কাউকে লুটে নেওয়া। একে সমাজ খারাপ চোখে দেখলেও ওদের লক্ষ্য কিছু কালোটাকার ব্যাপারি কে (কোনও সাধারণ মানুষকে নয়)
লুটে তাদের থেকে ব্ল্যাক মানি হাতিয়ে নেওয়া তাদের দুর্বল মুহূর্তের সুযোগ নিয়ে। আর এই কাজ তারা করছে সমাজের উপকারের জন্য, সুতরাং তাদের উদ্দেশ্য মহৎ। অনেক
ক্ষেত্রে এই সব ব্যাপারি দের অনেক সামাজিক কেলেঙ্কারিও থাকে। সেই সব কেলেঙ্কারির কথা মেয়েদের বলে তাদের উস্কানো ওর কাছে অনেক সহজ। কিন্তু সংগঠন চালানর জন্য
শুধু অর্থ সংগ্রহ করে থেমে গেলেও ওদের মনে সন্দেহ আসতে পারে, কারণ ওরা জানে ওরা সমাজকে পরিষ্কার করার জন্য যুদ্ধ করতে নেমেছে। তাই মাঝে মাঝে কোনও স্বার্থ
ছাড়াই বিভিন্ন জায়গায় দল পাঠানো হত কোনও অচেনা শোষিত মেয়েকে সাহায্য করার জন্য। এক কথায় আই অয়াশ। কিন্তু ডাকাতি হোক বা লুট হোক প্রান হানির আশঙ্কা
থেকেই যায়। বার বার আহত হতে শুরু করল ওর দলের মেয়ে, যাদের ও পুষছে আরও ফুলে ফেঁপে ওঠার তাগিদে। প্রতি মাসে বিনা চিকিৎসায় কারোর না কারোর মৃত্যু হচ্ছে।
মুশকিল হল রোজ রোজ তো আর নতুন মেয়ে পাওয়া যায় না, আর তাছাড়া সেই মেয়ে যে বিশ্বস্ত হবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। ওদের সামনে রত্নার মতন বিশ্বাস ঘাতকের নজির
বিদ্যমান। ও ঠিক করল ক্যাম্পে দুই জন অন্তত ভালো ডাক্তার বহাল করতে হবে। যদি এই “বেশ্যাদের” জীবনের ক্ষয় ক্ষতি কিছু মাত্র আটকানো যায়। কিন্তু দলের লোক কে
শহর থেকে ডাক্তার রিক্রুট করতে পাঠালে যদি তারা ধরে পড়ে যায় তো হিতে বিপরীত হবে। পাঠানো হল রত্নাকে। রত্না চাইলেও পালাতে পারবে না। কারণ সে কপর্দকহীন। আর
তার স্বামী ওদের কবলে। তবুও ওকে চোখে চোখে রাখা হয়েছিল গোপনে। অরূপের ওপর নজর রাখতে রাখতে গোয়েন্দারা রত্নার দেখা পায়। বুঝতে পারে কোনও না কোনও ভাবে
এই মহিলাও অরূপের সাথে কানেকটেড। আর ওদের গোপনীয়তা যে কারোর মনে সন্দেহের উদ্রেক ঘটাবে। ওরা রত্নার ওপর নজর রাখতে শুরু করে। ওরা লক্ষ্য করে যে রত্না
বিভিন্ন হাঁসপাতালে গিয়ে ভালো মেয়েদের ডাক্তারের খোঁজ করে বেড়াচ্ছে। দুই একদিন ওকে অনুসরণ করার পর ওরা বুঝতে পারে যে ও নিজের কোনও রোগের জন্য ডাক্তারের
খোঁজ করছে না।
ওর অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে। ও প্রথমেই গিয়ে মেয়েদের ডাক্তারের খোঁজ করে। তারপর বলে মেয়ে ডাক্তার হলে ভালো হয়। তার পর বলে একটু কম বয়স হলে আরও ভালো
হয়। যেন ডাক্তারদের ঠিকুজি তৈরি করে বেড়াচ্ছে। তবে এই সব কথা এত খোলা মেলা সে বলত না। হাঁসপাতালের বিভিন্ন লোকের সাথে বসে চা খেতে খেতে গল্পের ছলে বের করে
নিত। ওকে ওঠানো খুব সহজ কাজ ছিল। কিন্তু আরেকটা খটকা ছিল গোয়েন্দাদের। মাঝে মাঝেই এত সতর্কতা সত্ত্বেও অরূপ বা রত্না গায়েব হয়ে যেত শহর থেকে। ওদের
কোনও ট্রেস পাওয়া যেত না। এত দক্ষতা সাধারণ প্রতারকের হতে পারে না। ধীরে ধীরে বুঝতে পারল যে ওরা ট্রেইন্ড লোক। এইভাবে মাঝ রাস্তা থেকে ওদের তুলে নিয়ে ওদের
পেট থেকে হয়ত কোনও কথাই ওরা বের করতে পারবে না। উল্টে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। দল বা যেই ওদের পিছনে থেকে থাকুক তারা আরও সতর্ক হয়ে যাবে। অদিতি কে
পাঠানো হল রত্নার কাছে। অদিতি গিয়ে রত্নার সাথে এমন ভাবে কথা বলল যে রত্নার মনে হল আকস্মিক ও হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে। এই সহজ সরল মেয়েটাকে উঠিয়ে নিতে
পারলেই কেল্লা ফতে। অবশ্য তারপর ওর সাথে কাকতালীয় ভাবে রুমির আলাপ হয়। রিক্রুটমেন্ট শেষ হয়।
৪। অদিতির খোঁজ কেমন করে পেলো ওর দলের লোক জন(স্পেশাল আরক্ষণ বিভাগ)?
উঃ অদিতির পাঁজরের ফাঁকে গোঁজা ছিল একটি সুক্ষাতি সুক্ষ চিপ। ও যেখানেই যাবে সেখানেই ওদের নজর রাখা সম্ভব। আসলে অদিতি কে ওরা শুরু থেকে ফলো করছিল। কিন্তু
সত্যি সত্যি একসময় অরূপের দলের চতুরতার জন্য ও নজরের বাইরে চলে যায়।
৫। ক্যাম্পের সন্ধান পেয়েই কেন ওরা ক্যাম্পে আক্রমণ করল না?
উঃ ওদের উদ্দেশ্য ছিল কে এই ক্যাম্পের হোতা, কে এই ক্যাম্পকে টাকা দেয়, কে অনুপ্রেরনা (মানে যাকে বলে ব্রেন অয়াশ) যোগায়, কি তাদের লক্ষ্য এই সব কিছু খতিয়ে দেখা।
হতে পারে এই ক্যাম্পকে ট্রেস করতে গিয়ে আরও অনেক গোপন ক্যাম্পের ব্যাপারে তথ্য তারা পেয়ে যাবে। সুতরাং অদিতির ক্যাম্পের ভেতর উপস্থিতির সুযোগ নিয়ে এই সব তথ্য
ওরা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল। এদিকে অদিতিও ক্যাম্পে এসে প্রথম দিনেই বুঝতে পারে যে পুরা ডাল হি কালা হ্যায়। সুতরাং প্রথম রাতেই আলোর সংকেতে ওদের বুঝিয়ে দেয়
যে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে।
৬। ভেতরে কে ছিল যে সীমা কে খুন করেছিল আর কেন?
উঃ আমাদের আহত “সুজাতা”। সুজাতার পুরো নাম সুজাতা ঘোষাল। কেন খুন? খুব সোজা উত্তর, সীমার সাথে ওর ক্লায়েন্টের ধস্তাধস্তির সময় টিভিটা ভেঙ্গে যাওয়ায় হিডেন
ক্যামেরা বাইরে বেড়িয়ে পড়ে। সীমা নিজে সেটা না দেখলেও রুম বয় আর অরূপের ধারণা হয় যে সীমার চোখে সেটা পড়ে থাকলেও থাকতে পারে। এই ঘরে যে হিডেন ক্যামেরা
লাগানো থাকে সেটা যদি কোনও মেয়ে জানতে পারে তো খুব ক্ষতি হয়ে যাবে, তাদের প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটা কেউ জানে না। এইসব ব্যাপারে এই সব লোকেরা কোনও রিস্ক
নেয় না। উত্তরটা সাধারণ শোনালেও সত্যি। নিজেরাই ভেবে দেখুন যে এইসব ব্যাপারে সামান্যতম রিস্ক কি ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। অরূপের সীমার ওপর কোনও ব্যক্তিগত
আক্রোশ ছিল না। কিন্তু ও যদি সত্যি কিছু দেখে থাকে আর মুখ খুলে দেয় তো ওর সব কিছু বিপন্ন হতে পারে। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে পড়বে। তাই ওকে বেনিফিট অফ
ডাউটে জীবন দিতে হল।
৭। “এ” কে ছিল যার মৃত্যু হবার কথা ছিল তেইশ তারিখে?
উ? অদিতি। আর সেই জন্যেই রুমিকে অদিতির কাছ থেকে সরিয়ে তাকে একলা করে দেওয়া হয়েছিল।
৮। অদিতি কি করে বুঝতে পারে যে সুজাতাই আসল খুনি?
উঃ বাইশ তারিখ রাতে ওর দলের লোকের কাছে থেকে পাওয়া আলোর সংকেতের সাহায্যে ও জানতে পারে যে গ্রিন হোটেলের সেই অভিশপ্ত ঘরে আর তার চার পাশের ঘরে কিছু
শহুরে ছেলে এসেছে যারা হোটেলের চারপাশে শুহুরে স্টাইলিশ মেয়ের খোঁজ করছে। (সেই জন্যই সে আগ বাড়িয়ে পরের আলি কে বলেছিল একবার অন্তত সে অরূপের নেতৃত্বে
এরকম কাজে গিয়ে মেয়েদের ব্যথা দেখতে চায়।) ক্যাম্প এদিকে খালি মানে যেমন মেয়ে চাওয়া হচ্ছে সেরকম মেয়ে আপাতত ক্যাম্পে নেই। অদিতি আর রুমি এর আগে ওদের
শহুরে আদব কায়দা বা শয্যাসঙ্গিনী হিসাবে নৈপুণ্য শুধু দেখিয়েছিল আলি, রাজু আর অমলকে। সুজাতা আপাত ভাবে অসুস্থ। ওর এই সব কিছু জানার কথাই নয়। কিন্তু ও কি
করে অদিতি আর রুমির নাম উল্লেখ করল? (আর শুধু উল্লেখ করে নি, আলির কথা অনুযায়ী রাজু আর সুজাতা একই সাথে ওদের দুজনের নাম উল্লেখ করেছে।) শুধু মাত্র ওরা শহর
থেকে এসেছে বলে? সেক্ষেত্রে রাকা বা বাকি মেয়েদের মতন সুজাতা কেন ভেবে নিল না যে এরকম দুজন অসহায় মেয়েকে পাঠানোর কোনও মানে নেই এই রকম মিশনে।
সুজাতা কি ওদের দুজনের মধ্যে একজন কে বাইরে পাঠিয়ে দিতে চাইছে? তাতেই ওর সন্দেহ হয় প্রথম সুজাতার ওপর। একজন গেলে অন্য জন একলা। সে ভেতরেই খুন হোক
বা বাইরেই হোক, দুয়ের থেকে এক অনেক বেশী দুর্বল।
অনেক সময় অনেক সহজ ক্লু চোখের সামনে থাকে কিন্তু চোখে পড়ে না। সুজাতা আহত হয়ে আসার পরের দিনই ওরা জানতে পেরেছিল যে সুজাতার পুরো নাম কি। ঘোষাল
ঘোষাল যে রক্তের সম্পর্ক হতে পারে সেটা সে এতদিন ঠিক ভেবে দেখেনি। আর তাছাড়া সীমার ঘর সুজাতার ঠিক পাশের ঘর। আর সুজাতা যে একটা ভয়ানক মেয়ে সেটা সবাই
জানে এখানে। চাইলে প্রান দিতে পারে, আর দরকার হলে প্রান নিতেও পারে।
৯। কেন অদিতি?
উঃ অরূপ যাই প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকুক না কেন একবার ক্যাম্পে নিয়ে আসার পর কাউকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। সত্যি ছেড়ে দেওয়ার মতন পরিস্থিতি হলে ওদের মেরে ফেলা
ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প ভাবা অসম্ভব। কিন্তু দুদিনেই ওদের দুজনের সব ব্যাপারে মাথা গলানো ভাবটা ওর নজরে পড়েছিল। রুমির ব্যাপারটা দেখে অরূপ বুঝতে পেরেছিল যে
রুমি ফাঁদে পড়ে ছটফট করছে। বেচারির ক্যাম্পে এসে গোয়েন্দাগিরি করার মতন ক্ষমতা নেই। যদিও অরূপ তাকে অবসারভেশনে রেখেছিল। এইবার অদিতি, একজন ট্রেইনড
সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট যতই নাটক করে চলুক না কেন তার কথা বার্তা হাব ভাব চলা ফেরা সব কিছু লক্ষ্য করলে কিছু না কিছু ধরা পড়বেই। তাও অরূপের মনের কোণায়
অদিতিকে নিয়ে একটা সন্দেহ ছিল। সেই সন্দেহ কেটে গেল যখন বিনীতা অদিতির দৌড় থেকে ফিরে এসে বলল “এ মেয়ে সাধারণ মেয়ে নয়। সবার আগে আগে দৌড়ায়। এমন
ভাবে পাথর ডিঙ্গিয়ে শরীর বেঁকিয়ে এবড়ো খেবড়ো জায়গায় দৌড়ানো সাধারণ মেয়ের কম্ম নয়। খাল কেটে কুমীর নিয়ে আসা হয়েছে। “ ব্যস সিদ্ধান্ত হল ওকে মরতে হবে
কারণ এইসব ব্যাপারে রিস্ক নেওয়া যায় না।
৭। বাকি মেয়েদের কি হল?
৮। অদিতি ক্যাম্প থেকে বেরল কি করে?কার সাহায্যে?
উঃ আছে এইসব উত্তর আমার কাছে। কিন্তু এইসব উত্তর এখনই দিয়ে দিলে পরের গল্পের ভূমিকাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। প্রথম কিছুটা ভরাবো ঠিক করে রেখেছি এইসব প্রশ্নের উত্তর
দিয়ে। আর তাছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন আসতে পারে আপনাদের কাছ থেকে। অদিতির উত্তরে সে গুলো পরিষ্কার হবে। আর তারপর...।
তারপর, তারা এগিয়ে যাবে নতুন এক অভিযানে। ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।
সমাপ্তি
কয়েকটা প্রশ্ন প্রশ্ন থাকাই ভালো কারণ এর সিকোয়েল আসছে। রুমি আর অদিতি আবার ফিরবে তাদের কাণ্ড কারখানা নিয়ে। একজন সফট আর আরেকজন ডানপিটে। কিন্তু দু
একটা প্রশ্নের উত্তর না দিলে সবাই ভাববে যে লেখিকার কাছে এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই তাই সে এড়িয়ে গেল। তাই শুধু দু একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সমাপ্তি টানছি। বাকি
প্রশ্নের উত্তর পরের গল্পের শুরুতে যে মদের ঠেকটা আছে তাতে পাবেন। সেই মদের ঠেকে আছে আলিদা, অদিতি, আর আপনাদের সবার রুমি। আর ঠেক বসেছে রুমির ফ্ল্যাটে।
১। অদিতি কি করে সব জানত? আর কি করে বাইরে সব খবর দিত?
উঃ আলোর সংকেতে। রুমি ঘুমিয়ে যাবার পর মোমবাতি নিয়ে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন আক্ষরিক সংকেত দিত। ওর বক্তব্যের প্রতিটা অক্ষর সে বাইরে পৌঁছে দিত। বাইরে
দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরা সেই অক্ষর গুলো কে একের পর এক বসিয়ে পুরো তথ্যটা বের করে নিত। অদিতি ঠিক একই প্রক্রিয়ায় সংবাদ পেত যে বাইরে কি হচ্ছে?
২। অদিতি কি করে এলো এই ক্যাম্পে?
উঃ রুমির আসাটা কাকতালীয় হলেও, অদিতিরটা নয়। ও কোনও দিন প্রকাশ করে নি, কিন্তু রত্নাদিকে ও নিজেও চিনত। রুমির ক্ষেত্রে রত্না দি গিয়ে আলাপ করেছিল। অদিতির
ক্ষেত্রে অদিতি নিজে গিয়ে আলাপ করেছিল।
৩। অদিতি কেন ওঁত পেতেছিল?
উঃ সরাসরি অদিতিদের সংস্থার অরূপের গোপন সংস্থার ব্যাপারে কোনও মাথা ব্যাথা ছিল না এরকম যে একটা সংস্থা আছে সেটাই তারা জানত না। অরূপের একটি মাত্র
অ্যাঁকাউন্টের ওপর সর্বপ্রথম নজর পড়ে আয় কর বিভাগের অডিটিং দপ্তরের। প্রথমে ঠিক হয়েছিল যে বড় মাপের আয়কর আদায় করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু মাসে মাসে
এরকম বড় মাপের টাকা ঢুকতে দেখে ওদের সন্দেহ হয় যে এই লোকটার আরও কোনও অ্যাঁকাউন্ট থাকতে পারে। আর সব থেকে বড় কথা হল যে সব অ্যাঁকাউন্ট থেকে অরূপের
অ্যাঁকাউন্টে টাকা ঢুকছে প্রত্যেকেই বড় ব্যবসাদার লোক। কিন্তু টাকা ঢুকছে তাদের কারেন্ট অ্যাঁকাউন্ট থেকে নয়। হয় তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত অ্যাঁকাউন্ট থেকে বা তাদের
কোনও জনৈক আত্মীয়ের অ্যাঁকাউন্ট থেকে। নিজেরা কোনও স্টেপ নেবার আগে ভালো করে জিনিসটা খতিয়ে দেখতে আরক্ষণ বিভাগে ব্যাপারটা জানানো হয়। এক্ষেত্রে বলা
ভালো শুধু অরূপ নয় এরকম আরও অনেকেরই অ্যাঁকাউন্ট নিয়ে খতিয়ে দেখার নির্দেশ থাকে আরক্ষণ বিভাগের ওপর। আরক্ষণ বিভাগ কে এই সব কথা জানানোর কারণ
একটাই। এই অঢেল আমদানির পেছনে বা আমদানি শেষের পর সেই টাকায় কোনও দেশদ্রোহিতা, সামাজিক চক্রান্ত বা ওই ধরণের কিছু জন সাধারণের বিপদের কারণ আছে
কিনা সেটা খতিয়ে দেখা। অরূপের ক্ষেত্রে এটা খুব সহজেই অনুমেয় যে ও কিছু লোক কে ব্ল্যাক মেইল করছে। তাদের দু-এক জন কে গোপনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু তারা
সেকথা এড়িয়ে যায়। তাদের থেকে প্রধান যে উত্তর পাওয়া যায় সেটা হল অরূপের কাছ থেকে তারা উপকৃত, কি ব্যাপারে উপকৃত সেটা তারা বলতে বাধ্য নয় কারণ সেটা তাদের
একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। সব ব্ল্যাকমেলের ক্ষেত্রেই সচরাচর এইরকম উত্তরই এসে থাকে। যাদের ব্ল্যাক মেইল করা হচ্ছে তার মন খুলে উত্তর দিতে পারে না হয় নিজের বা নিকট
জনের প্রানের ভয়ে, বা নিজের বা নিজের পরিবারের ব্যাপারে কোনও গোপন তথ্য বেড়িয়ে যাবার ভয়ে। কিন্তু এত বড় বড় ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানো অরূপের মতন লোকের পক্ষে
কি করে সম্ভব? আর তা ছাড়া সে করেই বা কি? হতে পারে তার মাথার ওপর আরও বড় কোনও লোকের বা দলের হাত আছে যাদের গায়ের জোড়ে অরূপ এই খেলা খেলে
চলেছে। তদন্ত যখন শুরু হয় তখন অরূপ লোকটাকে নজরবন্দী করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু আরক্ষণ বিভাগের লক্ষ্য ছিল ওর পেছনে কার হাত আছে সেটা বোঝবার। ওদের
ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিল কারণ এক্ষেত্রে অরূপ নিজেই ছিল সব কিছুর হোতা। অনেকদিনের তদন্ত করার পর আর অরূপের ওপর নজর রাখার পর ওরা বুঝতে পারে যে কোথাও
গণ্ডগোল আছে, কিন্তু ওকে আইনি ভাবে(আয়করের ব্যাপার ছাড়া, আর সেক্ষেত্রে ওর আসল উদ্দেশ্যটাই আর হয় তো কোনও দিন জানা যাবে না) ঠিক বাগে পাওয়া ওদের
পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। ওরা সাহায্য নেয় সিক্রেট সার্ভিসের। গোপন গোয়েন্দা বিভাগের লোক অরূপকে নজর বন্দী করে। কিন্তু ওর অদ্ভুত চতুরতার জন্য ওকে ঠিক বাগে আনা
যাচ্ছিল না। উল্টে অরূপও বুঝতে পারে যে ওর পেছনে লোক লেগেছে। নিজের দলের বিশ্বস্ত লোকদের সাথে কোলকাতায় বা কলকাতার কাছে থাকা কালিন সে বিশেস ভাবে
সতর্ক হয়ে যায়। চোর পুলিশের খেলা চলতে থাকে। এদিকে ওর সামনেও উপস্থিত হয় মহা বিপদ।
একথা ভুললে চলবে না যে অরূপ ওর দলের মেয়েদের বুঝিয়েছে ওরা সমাজ সেবিকা। প্রশাসন যা করতে পারছে না বা করতে অবহেলা করছে সেটাই করে তারা সমাজের
শুদ্ধিকরণ করছে। একা একা এই কাজ করা যায় না। এই জন্য চাই সংগঠন। সংগঠন চালানর জন্য চাই অর্থ। অর্থ লোটার সবথেকে সোজা উপায় ডাকাতি, কিন্তু তাতে ক্ষয়
ক্ষতির সম্ভাবনা প্রচুর। সে মেয়েদের সামনে এমন ভাব করলো যে ডাকাতি করতে গিয়ে তার দলের লোকের প্রান হানি হয় এটা সেই কিছুতেই চায় না। তার থেকে অনেক সোজা
হল বেশ্যা বৃত্তি, মানে বেশ্যা সেজে গিয়ে কাউকে লুটে নেওয়া। একে সমাজ খারাপ চোখে দেখলেও ওদের লক্ষ্য কিছু কালোটাকার ব্যাপারি কে (কোনও সাধারণ মানুষকে নয়)
লুটে তাদের থেকে ব্ল্যাক মানি হাতিয়ে নেওয়া তাদের দুর্বল মুহূর্তের সুযোগ নিয়ে। আর এই কাজ তারা করছে সমাজের উপকারের জন্য, সুতরাং তাদের উদ্দেশ্য মহৎ। অনেক
ক্ষেত্রে এই সব ব্যাপারি দের অনেক সামাজিক কেলেঙ্কারিও থাকে। সেই সব কেলেঙ্কারির কথা মেয়েদের বলে তাদের উস্কানো ওর কাছে অনেক সহজ। কিন্তু সংগঠন চালানর জন্য
শুধু অর্থ সংগ্রহ করে থেমে গেলেও ওদের মনে সন্দেহ আসতে পারে, কারণ ওরা জানে ওরা সমাজকে পরিষ্কার করার জন্য যুদ্ধ করতে নেমেছে। তাই মাঝে মাঝে কোনও স্বার্থ
ছাড়াই বিভিন্ন জায়গায় দল পাঠানো হত কোনও অচেনা শোষিত মেয়েকে সাহায্য করার জন্য। এক কথায় আই অয়াশ। কিন্তু ডাকাতি হোক বা লুট হোক প্রান হানির আশঙ্কা
থেকেই যায়। বার বার আহত হতে শুরু করল ওর দলের মেয়ে, যাদের ও পুষছে আরও ফুলে ফেঁপে ওঠার তাগিদে। প্রতি মাসে বিনা চিকিৎসায় কারোর না কারোর মৃত্যু হচ্ছে।
মুশকিল হল রোজ রোজ তো আর নতুন মেয়ে পাওয়া যায় না, আর তাছাড়া সেই মেয়ে যে বিশ্বস্ত হবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই। ওদের সামনে রত্নার মতন বিশ্বাস ঘাতকের নজির
বিদ্যমান। ও ঠিক করল ক্যাম্পে দুই জন অন্তত ভালো ডাক্তার বহাল করতে হবে। যদি এই “বেশ্যাদের” জীবনের ক্ষয় ক্ষতি কিছু মাত্র আটকানো যায়। কিন্তু দলের লোক কে
শহর থেকে ডাক্তার রিক্রুট করতে পাঠালে যদি তারা ধরে পড়ে যায় তো হিতে বিপরীত হবে। পাঠানো হল রত্নাকে। রত্না চাইলেও পালাতে পারবে না। কারণ সে কপর্দকহীন। আর
তার স্বামী ওদের কবলে। তবুও ওকে চোখে চোখে রাখা হয়েছিল গোপনে। অরূপের ওপর নজর রাখতে রাখতে গোয়েন্দারা রত্নার দেখা পায়। বুঝতে পারে কোনও না কোনও ভাবে
এই মহিলাও অরূপের সাথে কানেকটেড। আর ওদের গোপনীয়তা যে কারোর মনে সন্দেহের উদ্রেক ঘটাবে। ওরা রত্নার ওপর নজর রাখতে শুরু করে। ওরা লক্ষ্য করে যে রত্না
বিভিন্ন হাঁসপাতালে গিয়ে ভালো মেয়েদের ডাক্তারের খোঁজ করে বেড়াচ্ছে। দুই একদিন ওকে অনুসরণ করার পর ওরা বুঝতে পারে যে ও নিজের কোনও রোগের জন্য ডাক্তারের
খোঁজ করছে না।
ওর অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে। ও প্রথমেই গিয়ে মেয়েদের ডাক্তারের খোঁজ করে। তারপর বলে মেয়ে ডাক্তার হলে ভালো হয়। তার পর বলে একটু কম বয়স হলে আরও ভালো
হয়। যেন ডাক্তারদের ঠিকুজি তৈরি করে বেড়াচ্ছে। তবে এই সব কথা এত খোলা মেলা সে বলত না। হাঁসপাতালের বিভিন্ন লোকের সাথে বসে চা খেতে খেতে গল্পের ছলে বের করে
নিত। ওকে ওঠানো খুব সহজ কাজ ছিল। কিন্তু আরেকটা খটকা ছিল গোয়েন্দাদের। মাঝে মাঝেই এত সতর্কতা সত্ত্বেও অরূপ বা রত্না গায়েব হয়ে যেত শহর থেকে। ওদের
কোনও ট্রেস পাওয়া যেত না। এত দক্ষতা সাধারণ প্রতারকের হতে পারে না। ধীরে ধীরে বুঝতে পারল যে ওরা ট্রেইন্ড লোক। এইভাবে মাঝ রাস্তা থেকে ওদের তুলে নিয়ে ওদের
পেট থেকে হয়ত কোনও কথাই ওরা বের করতে পারবে না। উল্টে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। দল বা যেই ওদের পিছনে থেকে থাকুক তারা আরও সতর্ক হয়ে যাবে। অদিতি কে
পাঠানো হল রত্নার কাছে। অদিতি গিয়ে রত্নার সাথে এমন ভাবে কথা বলল যে রত্নার মনে হল আকস্মিক ও হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে। এই সহজ সরল মেয়েটাকে উঠিয়ে নিতে
পারলেই কেল্লা ফতে। অবশ্য তারপর ওর সাথে কাকতালীয় ভাবে রুমির আলাপ হয়। রিক্রুটমেন্ট শেষ হয়।
৪। অদিতির খোঁজ কেমন করে পেলো ওর দলের লোক জন(স্পেশাল আরক্ষণ বিভাগ)?
উঃ অদিতির পাঁজরের ফাঁকে গোঁজা ছিল একটি সুক্ষাতি সুক্ষ চিপ। ও যেখানেই যাবে সেখানেই ওদের নজর রাখা সম্ভব। আসলে অদিতি কে ওরা শুরু থেকে ফলো করছিল। কিন্তু
সত্যি সত্যি একসময় অরূপের দলের চতুরতার জন্য ও নজরের বাইরে চলে যায়।
৫। ক্যাম্পের সন্ধান পেয়েই কেন ওরা ক্যাম্পে আক্রমণ করল না?
উঃ ওদের উদ্দেশ্য ছিল কে এই ক্যাম্পের হোতা, কে এই ক্যাম্পকে টাকা দেয়, কে অনুপ্রেরনা (মানে যাকে বলে ব্রেন অয়াশ) যোগায়, কি তাদের লক্ষ্য এই সব কিছু খতিয়ে দেখা।
হতে পারে এই ক্যাম্পকে ট্রেস করতে গিয়ে আরও অনেক গোপন ক্যাম্পের ব্যাপারে তথ্য তারা পেয়ে যাবে। সুতরাং অদিতির ক্যাম্পের ভেতর উপস্থিতির সুযোগ নিয়ে এই সব তথ্য
ওরা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল। এদিকে অদিতিও ক্যাম্পে এসে প্রথম দিনেই বুঝতে পারে যে পুরা ডাল হি কালা হ্যায়। সুতরাং প্রথম রাতেই আলোর সংকেতে ওদের বুঝিয়ে দেয়
যে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে।
৬। ভেতরে কে ছিল যে সীমা কে খুন করেছিল আর কেন?
উঃ আমাদের আহত “সুজাতা”। সুজাতার পুরো নাম সুজাতা ঘোষাল। কেন খুন? খুব সোজা উত্তর, সীমার সাথে ওর ক্লায়েন্টের ধস্তাধস্তির সময় টিভিটা ভেঙ্গে যাওয়ায় হিডেন
ক্যামেরা বাইরে বেড়িয়ে পড়ে। সীমা নিজে সেটা না দেখলেও রুম বয় আর অরূপের ধারণা হয় যে সীমার চোখে সেটা পড়ে থাকলেও থাকতে পারে। এই ঘরে যে হিডেন ক্যামেরা
লাগানো থাকে সেটা যদি কোনও মেয়ে জানতে পারে তো খুব ক্ষতি হয়ে যাবে, তাদের প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটা কেউ জানে না। এইসব ব্যাপারে এই সব লোকেরা কোনও রিস্ক
নেয় না। উত্তরটা সাধারণ শোনালেও সত্যি। নিজেরাই ভেবে দেখুন যে এইসব ব্যাপারে সামান্যতম রিস্ক কি ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। অরূপের সীমার ওপর কোনও ব্যক্তিগত
আক্রোশ ছিল না। কিন্তু ও যদি সত্যি কিছু দেখে থাকে আর মুখ খুলে দেয় তো ওর সব কিছু বিপন্ন হতে পারে। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে পড়বে। তাই ওকে বেনিফিট অফ
ডাউটে জীবন দিতে হল।
৭। “এ” কে ছিল যার মৃত্যু হবার কথা ছিল তেইশ তারিখে?
উ? অদিতি। আর সেই জন্যেই রুমিকে অদিতির কাছ থেকে সরিয়ে তাকে একলা করে দেওয়া হয়েছিল।
৮। অদিতি কি করে বুঝতে পারে যে সুজাতাই আসল খুনি?
উঃ বাইশ তারিখ রাতে ওর দলের লোকের কাছে থেকে পাওয়া আলোর সংকেতের সাহায্যে ও জানতে পারে যে গ্রিন হোটেলের সেই অভিশপ্ত ঘরে আর তার চার পাশের ঘরে কিছু
শহুরে ছেলে এসেছে যারা হোটেলের চারপাশে শুহুরে স্টাইলিশ মেয়ের খোঁজ করছে। (সেই জন্যই সে আগ বাড়িয়ে পরের আলি কে বলেছিল একবার অন্তত সে অরূপের নেতৃত্বে
এরকম কাজে গিয়ে মেয়েদের ব্যথা দেখতে চায়।) ক্যাম্প এদিকে খালি মানে যেমন মেয়ে চাওয়া হচ্ছে সেরকম মেয়ে আপাতত ক্যাম্পে নেই। অদিতি আর রুমি এর আগে ওদের
শহুরে আদব কায়দা বা শয্যাসঙ্গিনী হিসাবে নৈপুণ্য শুধু দেখিয়েছিল আলি, রাজু আর অমলকে। সুজাতা আপাত ভাবে অসুস্থ। ওর এই সব কিছু জানার কথাই নয়। কিন্তু ও কি
করে অদিতি আর রুমির নাম উল্লেখ করল? (আর শুধু উল্লেখ করে নি, আলির কথা অনুযায়ী রাজু আর সুজাতা একই সাথে ওদের দুজনের নাম উল্লেখ করেছে।) শুধু মাত্র ওরা শহর
থেকে এসেছে বলে? সেক্ষেত্রে রাকা বা বাকি মেয়েদের মতন সুজাতা কেন ভেবে নিল না যে এরকম দুজন অসহায় মেয়েকে পাঠানোর কোনও মানে নেই এই রকম মিশনে।
সুজাতা কি ওদের দুজনের মধ্যে একজন কে বাইরে পাঠিয়ে দিতে চাইছে? তাতেই ওর সন্দেহ হয় প্রথম সুজাতার ওপর। একজন গেলে অন্য জন একলা। সে ভেতরেই খুন হোক
বা বাইরেই হোক, দুয়ের থেকে এক অনেক বেশী দুর্বল।
অনেক সময় অনেক সহজ ক্লু চোখের সামনে থাকে কিন্তু চোখে পড়ে না। সুজাতা আহত হয়ে আসার পরের দিনই ওরা জানতে পেরেছিল যে সুজাতার পুরো নাম কি। ঘোষাল
ঘোষাল যে রক্তের সম্পর্ক হতে পারে সেটা সে এতদিন ঠিক ভেবে দেখেনি। আর তাছাড়া সীমার ঘর সুজাতার ঠিক পাশের ঘর। আর সুজাতা যে একটা ভয়ানক মেয়ে সেটা সবাই
জানে এখানে। চাইলে প্রান দিতে পারে, আর দরকার হলে প্রান নিতেও পারে।
৯। কেন অদিতি?
উঃ অরূপ যাই প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকুক না কেন একবার ক্যাম্পে নিয়ে আসার পর কাউকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। সত্যি ছেড়ে দেওয়ার মতন পরিস্থিতি হলে ওদের মেরে ফেলা
ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প ভাবা অসম্ভব। কিন্তু দুদিনেই ওদের দুজনের সব ব্যাপারে মাথা গলানো ভাবটা ওর নজরে পড়েছিল। রুমির ব্যাপারটা দেখে অরূপ বুঝতে পেরেছিল যে
রুমি ফাঁদে পড়ে ছটফট করছে। বেচারির ক্যাম্পে এসে গোয়েন্দাগিরি করার মতন ক্ষমতা নেই। যদিও অরূপ তাকে অবসারভেশনে রেখেছিল। এইবার অদিতি, একজন ট্রেইনড
সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট যতই নাটক করে চলুক না কেন তার কথা বার্তা হাব ভাব চলা ফেরা সব কিছু লক্ষ্য করলে কিছু না কিছু ধরা পড়বেই। তাও অরূপের মনের কোণায়
অদিতিকে নিয়ে একটা সন্দেহ ছিল। সেই সন্দেহ কেটে গেল যখন বিনীতা অদিতির দৌড় থেকে ফিরে এসে বলল “এ মেয়ে সাধারণ মেয়ে নয়। সবার আগে আগে দৌড়ায়। এমন
ভাবে পাথর ডিঙ্গিয়ে শরীর বেঁকিয়ে এবড়ো খেবড়ো জায়গায় দৌড়ানো সাধারণ মেয়ের কম্ম নয়। খাল কেটে কুমীর নিয়ে আসা হয়েছে। “ ব্যস সিদ্ধান্ত হল ওকে মরতে হবে
কারণ এইসব ব্যাপারে রিস্ক নেওয়া যায় না।
৭। বাকি মেয়েদের কি হল?
৮। অদিতি ক্যাম্প থেকে বেরল কি করে?কার সাহায্যে?
উঃ আছে এইসব উত্তর আমার কাছে। কিন্তু এইসব উত্তর এখনই দিয়ে দিলে পরের গল্পের ভূমিকাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। প্রথম কিছুটা ভরাবো ঠিক করে রেখেছি এইসব প্রশ্নের উত্তর
দিয়ে। আর তাছাড়া আরও অনেক প্রশ্ন আসতে পারে আপনাদের কাছ থেকে। অদিতির উত্তরে সে গুলো পরিষ্কার হবে। আর তারপর...।
তারপর, তারা এগিয়ে যাবে নতুন এক অভিযানে। ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।
সমাপ্তি