18-02-2020, 11:53 PM
(This post was last modified: 18-02-2020, 11:56 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পঞ্চবিংশতি পর্ব
থমথমে মুখে ফিরে আসে নিজের চেম্বারে।টেবিলে ঢাকা জলের গেলাস এক নিঃশ্বাসে শেষ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে।সুভদ্রাকে খুব বিচলিত বোধ হয়। ওকালতি পেশা কি এত নির্মম।বিবেকবুদ্ধি ঔচিত্যবোধের কোনো মুল্য নেই?এক সরল প্রানা মহিলা গভীর বিশ্বাসে মা হবার লোভে নিজেকে সপে দিয়েছিল তার সুযোগ নিল ভণ্ড পাষণ্ড ছদ্মবেশী সাধু। তাকে মিথ্যে স্তোক দিয়ে উপভোগ করল,তার জন্য কোনো অনুতাপ নেই অনুশোচনা নেই বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবার নাকের ডগায়।মনে মনে হয়তো নতুন শিকার ফাদে ফেলার ছক কষছে।
--মি.সহায় একটু দেখবেন,আমার পুরানো ক্লায়েণ্ট।
-- সাধুমহারাজ আমাকে একটা পলা ধারণের পরামর্শ দিয়েছিলেন।ভাল ফল হয়েছে।
পার্টিশনের ওপাশ হতে সুভদ্রার কানে এল দাগা আর সহায় আঙ্কলের কথোপকথন।আচমকা সহায় আঙ্কল তার চেম্বারে ঢুকে বললেন,আসি। অনেকদিন তোমাদের বাড়ী যাওয়া হয় না।
--একদিন যাবেন,মাম্মী খুব খুশি হবেন।হেসে বলে সুভদ্রা।
বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এলেন সহায় আঙ্কল,কি একটা মনে করে বললেন, জয়ন্ত বলছিল তুমি বিজেএস পাস করেছো,ও বসেছিল--পারেনি।জয়ন্ত আমার জুনিয়ার বলে বলছি না--ছেলেটা ভাল।
জয়ন্তের কথা বললেন কেন? সুভদ্রা লক্ষ্য করেছে জয়ন্তের চোখে অন্য রকম দৃষ্টি।যদিও স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।জয়ন্ত ছেলেটা ভাল কিন্তু সুভদ্রা তাকে সহকর্মী ছাড়া অন্যভাবে দেখার কথা কখনো মনে হয়নি।
মি.দাগা সন্দিহান দৃষ্টিতে সুভদ্রাকে লক্ষ্য করেন।
--ভাইভা ভাল হয় নি।সুভদ্রা মৃদু স্বরে বলল।
--ভাইবা কিছু নয়।আচ্ছা আসি।
সুভদ্রা বুঝতে পারে সহায় আঙ্কল অজান্তে একটা গোল পাকিয়ে গেলেন।ব্যাপারটা দাগা ভালভাবে নেয়নি মুখ দেখে বুঝতে পেরেছে। বজ্রানন্দ বলেছিল বৈদুর্য মণির কথা,ব্যাটা বুজরুক।নিজের অজ্ঞাতসারে তার মনেও কেমন যেন বিশ্বাস জন্মে গেছিল ভেবে নিজের প্রতি রাগ হয়।বৈদুর্যের প্রতি তার কোনো রাগ নেই বরং তাকে ভাল লাগে।এমন সরল সাদাসিধে অকপট মানুষ এ যুগে দুর্লভ।মিমিদি নাবলে মিমি বলতে বলায় লজ্জায় একেবারে নুইয়ে পড়ে। কে জানে কেন এই মুহুর্তে বৈদুর্যের সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছে হয়। যদিও সুভদ্রা জানে কোনমতেই তা সম্ভব নয়। বেলা হল এবার উঠতে হয়।আবার পরীক্ষা দেবে সুভদ্রা, জাজ হবার আশা এখনই ছাড়ছে না।
চারুশশী বিকেলের টিফিন তৈরী করছে।বৈদুর্য রান্না ঘরের এককোনে বসে বইয়ে গভীরভাবে নিমগ্ন। চারুশশী আড়চোখে দেখে বিরক্ত হয়।পরীক্ষা হয়ে গেছে তা হলে এখন আবার কিসের পড়া?কোথায় কোথায় ঘোরে সারাদিন চারুমাসীর প্রতি আগের সেই টান নেই।লুচি ভাজা শেষ হলে চায়ের জল চাপিয়ে বৈদুর্যকে বলল,কি সব পড়ো ছাইপাশ?এবার ঘরে ঘরে দিয়ে আসো।
বৈদুর্য বই বন্ধ করে হাসে,চারুমাসীর কথায় কিছু মনে করে না।মনে মনে ভাবে কোথাও দেখিলে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই পাইলেও পাইতে পারো অমুল্য রতন।এসব কথা চারুমাসীকে বললে বুঝবে না।একগোছা প্লেট আর বাস্কেটে লুচি নিয়ে বৈদুর্য নীচে নেমে গেল।
মধুছন্দার ঘরে ঢুকতে চৈতালিদি এগিয়ে এসে দুটো প্লেট নিয়ে বলল,আজ লুচি হয়েছে?
বৈদুর্য তরকারি দিয়ে খান আষ্টেক লুচি দিল।চৈতালিদি জিজ্ঞেস করে,তুমি নীচ থেকে উপরে চলে গেলে,নীচে কি তোমার অসুবিধে হচ্ছিল?
--কর্তার ইচ্ছায় কর্ম,আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছের কি দাম আছে বলুন।
--সময় করে একদিন এসো অনেক কথা আছে।চৈতালিদি বলল।
মধুদি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে কথা শুনছিলেন,কোন ও কথা বললেন না।একেবারে শেষে ঝিনুকদিদের ঘর।ঘরে ঢুকতেই সোনালিদিদিমণি কানের কাছে মুখ এনে জিজ্ঞেস করলো,বৈদুর্য তুমি আমার উপর রাগ করেছো?
বৈদুর্য আড়চোখে ঝিনুককে দেখে বলল,আমি কারো উপর রাগ করি না।
--তোমার ভাল লাগেনি?
--আপনারা খুশী হলেই আমি খুশী।
--আপনারা মানে তুমি সবাইকে খুশী করতে চাও?
বৈদুর্যের কান লাল হয়।মনে হয় ঝিনুকদিকে সব বলেছে।এইসব আলাপ তার ভাল লাগে না বলে,আমি আসি দিদিমণি?
বৈদুর্যের তলপেটের নীচে ঝিনুকের সন্ধানী দৃষ্টি।সোনালির কাছে শুনেছে ঐটা নাকি খুব বড়। সোনালির কথা ঠিক বিশ্বাস হয় না আবার উড়িয়ে দিতেও পারে না।
বৈদুর্য চলে যেতে সোনালি জিজ্ঞেস করে,কিরে ঝিনুক বিশ্বাস হলতো?
সোনালির কাছে শুনে ঝিনুক পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি কিন্তু এখন যেভাবে আলাপ করল তাতে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।সোনালির উপর একটু বিরক্ত তাকে ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেছে সোনালি।ঝিনুক কি বাধা দিত?
--কিরে তোর আবার কি হল?সোনালি জিজ্ঞেস করে।
--কি আবার হবে?নিরীহ লোকটাকে নিয়ে এসব করা ঠিক হয়নি।
সোনালি কি ভাবে তারপর বলল,লোকটা নিরীহ অস্বীকার করছি না তবে তুই যদি দেখতিস তাহলে তুইও নিজেকে ঠিক রাখতে পারতিস না--।
--সেই জন্য আমাকে দেখার সূযোগ দিস নি?
--ও বুঝেছি।বিশ্বাস কর একদম ঠিক ছিল না।কি ভাবে কি হয়ে গেল---।
--থাক থাক আমি শুনতে চাইছি না।ঝিনুক বিরক্ত হয়ে বলল।
টিভিতে একটা ধারাবাহিক শেষ হয়ে আরেকটা শুরু হলেও সুনন্দা মুখার্জির সেদিকে মন নেই।একা একা কি যে করছে মেয়েটা,বিয়ে করল না তার উপর দিব্যেন্দু পিছনে লেগে রয়েছে।এত রাত তো করে না?সংবাদ চ্যানেল দেখেন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন যদি কোনো খবর পাওয়া যায়।সুরবালা রান্না শেষ করে বলল,আমি তাহলে আসি?
--তুমি যাবে? আচ্চছা যাও--শোনো মিমি এখনো ফেরেনি তুমি দরজা লক কোর না গ্রিল গেট টেনে দিয়ে যাও।
সুরবালা চলে যেতে সুনন্দা বাইরে ব্যালকনিতে এসে দাড়ালেন।রাস্তায় পথচারীর ভীড় দেখে বুঝলেন হয়তো কোনো ট্রেন এসেছে। ভীড়ের মধ্যে তীক্ষ্ণ নজর মেয়ে এই ট্রেনে ফিরল কিনা?একসময় রাস্তার ভীড় পাতলা হয়ে গেল,মিমির দেখা নেই। ঘরে ফিরতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লেন একটা গাড়ী আসছে বাড়ীর দিকে। বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে ওঠে গাড়ীটা বাড়ীর নীচে দাঁড়িয়ে পড়ল।উদ্গ্রীব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে,মিমির কিছু হল নাতো?গাড়ির দরজা খুলে নামল মিমি।নেমে গ্রিল গেট হাট করে খুলে আবার গাড়িতে গিয়ে বসল।গাড়ীটা তাদের মনে হচ্ছে? দস্যি মেয়েটা নিজে গাড়ী চালিয়ে এল নাকি? কিছু বলবেন না তিনি,ওর যা ইচ্ছে করুক। আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন সুনন্দা মুখার্জি।
সুভদ্রা মুখার্জি গাড়ী ভিতরে ঢুকিয়ে লক করে উপরে উঠে এল।মামীর ঘরে গিয়ে দেখল বলল,স্যরি মাম্মী।গাড়ীটা নিয়ে এলাম।
সুনন্দা মুখার্জি মেয়ের দিকে তাকালেন না।সুভদ্রা ব্যাগ থেকে ঘুমের ওষুধের একটা শিশি বের করে টেবিলে রেখে বলল,তোমার ওষুধ।মাম্মী তুমি ওষুধ ছাড়া একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো।এভাবে খেলে নেশা হয়ে যাবে।
--তুমি আমায় ঘুমোতে দিলে তো ঘুমাবো।সুনন্দা এবার সুযোগ পেয়ে মুখ খুললেন।
মাকে জড়িয়ে ধরে সুভদ্রা আদো আদো গলায় বলল,মাম্মী বলছি তো স্যরি।
সুনন্দা বললেন,ছাড়ো আমার ঘুমের কথা তোমায় ভাবতে হবে না। যেদিন শুনবো তুমি বিয়ে করেছো সেদিন আমি শান্তিতে ঘুমাবো।রাত হয়েছে এবার চেঞ্জ করে খেতে এসো।
সুভদ্রার ঠোটে এক চিলতে হাসি খেলে যায়।জিনির বিয়ে হয়ে একটা অশান্তি আর সে বিয়ে করলে দুই জামাইয়ে শুরু হবে কুরুক্ষেত্র।এই ভাল এদিক সেদিক করে দুটি প্রাণ চলে যাবে।
গোদেলিয়েভ গ্রামাফোন চালিয়ে দরজা বন্ধ করে নাচ করছেন। নাচ মানে সারাদিনের ক্লান্তির পর মনের বিশ্রাম আর শরীর চর্চা বলা যায়।পরণে প্যাণ্টি আর ব্রেসিয়ার।
বৈদুর্য শুনতে পেলেও কিছু দেখতে পাচ্ছে না।সিগমুণ্ড ফ্রয়েডের একটা বই কদিন আগে কিনেছিল বৈদুর্য। বইয়ের গভীরে ডুবে যাওয়া বৈদুর্যের কানে সংগীত পৌছাতে পারে না। বই পড়তে পড়তে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে বৈদুর্য।সরল মনে স্বপ্নরা বিঘ্ন সৃষ্টি করতে আসে না।আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল,চোখ মেলতে নজরে পড়ে অন্ধকারে গোদেলিয়েভ ম্যাম তাকের উপর কি হাতড়াচ্ছেন। বৈদুর্য ঘুমের ভান করে পড়ে থাকে।স্বল্প বাসের জন্য ম্যাম হয়তো লাইট জ্বালেন নি।একসময় বৈদুর্য উঠে বসে জিজ্ঞেস করে,ম্যাম কিছু খুজছেন?
--তুমি ঘুমাও নি?গোদেলিয়েভ লাইট জ্বেলে বললেন,এইখানে একটা অয়েণ্টমেণ্ট ছিল--কাধে একটু মোচড় লেগে গেল।
এতবয়স হয়েছে শরীরে কোনো টোল পড়েনি।মিমিদিকেও এরকম দেখতে, বৈদুর্যের নজরে পড়ে বইয়ের তাকের ফাকে একটা টিউব।মাশল পেন কিলার অয়েণ্টমেণ্ট। একদম চ্যাপ্টা ওষুধ আছে বলে মনে হয় না।টিউবটা নিয়ে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, ম্যাম এইটা?
--থ্যাঙ্ক ইউ।ও গড--এতো একদম ফিনিশ!
গোদেলিয়েভ টিউব টিপতে সামান্য একটু ক্রীম বের হল গোদেলিয়েভ পিছন ফিরে বসে বৈদুর্যকে বলল,একটু হেল্প করবে?এই কাধটায় লাগিয়ে দেবে?
বৈদুর্য তর্জনিতে ক্রীম কেকে নিয়ে ম্যামের বা-দিকের কাধে লাগাতে লাগাতে জিজ্ঞেস করে,একটু ম্যাসেজ করে দেবো?
গোদেলিয়েভ ঘুরে বৈদুর্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,তুমি ম্যাসাজ করতে জানো?
--না না তা নয়। শরীরের যেখানে যেখানে জোড়া সেখানে চাপ দিলে বেশ আরাম লাগে।
--জোড়া?
--এই যেমন কাধ হাটূ কুচকি কোমর--এই সব জায়গা---।
গোদেলিয়েভ হাসলেন,ইউ আর বেরি সিমপল।ওকে করো।
বৈদুর্য হাটুতে ভর দিয়ে গোদেলিয়েভের কাধে মোচড় দিতে লাগলো।নরম মাংসের মধ্যে আঙ্গুল ডুবে যেতে থাকে।
গোদেলিয়েভ আঃ-হা-আআআ শব্দে সুখানুভুতি প্রকাশ করেন। কিছুক্ষণ টিপে বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে,ম্যাম ব্যথা কমেছে?
--অনেক রিলিফ হয়েছে,থ্যাঙ্ক ইউ।তুমি ঘুমাও,গুদ নাইত।
--গুড নাইট ম্যাম।
বিদেশিনীদের লাইফ স্টাইল আলাদা।বৈদুর্য কিছু মনে করে না।চাদর ঢেকে শুয়ে পড়ল।
থমথমে মুখে ফিরে আসে নিজের চেম্বারে।টেবিলে ঢাকা জলের গেলাস এক নিঃশ্বাসে শেষ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে।সুভদ্রাকে খুব বিচলিত বোধ হয়। ওকালতি পেশা কি এত নির্মম।বিবেকবুদ্ধি ঔচিত্যবোধের কোনো মুল্য নেই?এক সরল প্রানা মহিলা গভীর বিশ্বাসে মা হবার লোভে নিজেকে সপে দিয়েছিল তার সুযোগ নিল ভণ্ড পাষণ্ড ছদ্মবেশী সাধু। তাকে মিথ্যে স্তোক দিয়ে উপভোগ করল,তার জন্য কোনো অনুতাপ নেই অনুশোচনা নেই বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সবার নাকের ডগায়।মনে মনে হয়তো নতুন শিকার ফাদে ফেলার ছক কষছে।
--মি.সহায় একটু দেখবেন,আমার পুরানো ক্লায়েণ্ট।
-- সাধুমহারাজ আমাকে একটা পলা ধারণের পরামর্শ দিয়েছিলেন।ভাল ফল হয়েছে।
পার্টিশনের ওপাশ হতে সুভদ্রার কানে এল দাগা আর সহায় আঙ্কলের কথোপকথন।আচমকা সহায় আঙ্কল তার চেম্বারে ঢুকে বললেন,আসি। অনেকদিন তোমাদের বাড়ী যাওয়া হয় না।
--একদিন যাবেন,মাম্মী খুব খুশি হবেন।হেসে বলে সুভদ্রা।
বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এলেন সহায় আঙ্কল,কি একটা মনে করে বললেন, জয়ন্ত বলছিল তুমি বিজেএস পাস করেছো,ও বসেছিল--পারেনি।জয়ন্ত আমার জুনিয়ার বলে বলছি না--ছেলেটা ভাল।
জয়ন্তের কথা বললেন কেন? সুভদ্রা লক্ষ্য করেছে জয়ন্তের চোখে অন্য রকম দৃষ্টি।যদিও স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।জয়ন্ত ছেলেটা ভাল কিন্তু সুভদ্রা তাকে সহকর্মী ছাড়া অন্যভাবে দেখার কথা কখনো মনে হয়নি।
মি.দাগা সন্দিহান দৃষ্টিতে সুভদ্রাকে লক্ষ্য করেন।
--ভাইভা ভাল হয় নি।সুভদ্রা মৃদু স্বরে বলল।
--ভাইবা কিছু নয়।আচ্ছা আসি।
সুভদ্রা বুঝতে পারে সহায় আঙ্কল অজান্তে একটা গোল পাকিয়ে গেলেন।ব্যাপারটা দাগা ভালভাবে নেয়নি মুখ দেখে বুঝতে পেরেছে। বজ্রানন্দ বলেছিল বৈদুর্য মণির কথা,ব্যাটা বুজরুক।নিজের অজ্ঞাতসারে তার মনেও কেমন যেন বিশ্বাস জন্মে গেছিল ভেবে নিজের প্রতি রাগ হয়।বৈদুর্যের প্রতি তার কোনো রাগ নেই বরং তাকে ভাল লাগে।এমন সরল সাদাসিধে অকপট মানুষ এ যুগে দুর্লভ।মিমিদি নাবলে মিমি বলতে বলায় লজ্জায় একেবারে নুইয়ে পড়ে। কে জানে কেন এই মুহুর্তে বৈদুর্যের সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছে হয়। যদিও সুভদ্রা জানে কোনমতেই তা সম্ভব নয়। বেলা হল এবার উঠতে হয়।আবার পরীক্ষা দেবে সুভদ্রা, জাজ হবার আশা এখনই ছাড়ছে না।
চারুশশী বিকেলের টিফিন তৈরী করছে।বৈদুর্য রান্না ঘরের এককোনে বসে বইয়ে গভীরভাবে নিমগ্ন। চারুশশী আড়চোখে দেখে বিরক্ত হয়।পরীক্ষা হয়ে গেছে তা হলে এখন আবার কিসের পড়া?কোথায় কোথায় ঘোরে সারাদিন চারুমাসীর প্রতি আগের সেই টান নেই।লুচি ভাজা শেষ হলে চায়ের জল চাপিয়ে বৈদুর্যকে বলল,কি সব পড়ো ছাইপাশ?এবার ঘরে ঘরে দিয়ে আসো।
বৈদুর্য বই বন্ধ করে হাসে,চারুমাসীর কথায় কিছু মনে করে না।মনে মনে ভাবে কোথাও দেখিলে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই পাইলেও পাইতে পারো অমুল্য রতন।এসব কথা চারুমাসীকে বললে বুঝবে না।একগোছা প্লেট আর বাস্কেটে লুচি নিয়ে বৈদুর্য নীচে নেমে গেল।
মধুছন্দার ঘরে ঢুকতে চৈতালিদি এগিয়ে এসে দুটো প্লেট নিয়ে বলল,আজ লুচি হয়েছে?
বৈদুর্য তরকারি দিয়ে খান আষ্টেক লুচি দিল।চৈতালিদি জিজ্ঞেস করে,তুমি নীচ থেকে উপরে চলে গেলে,নীচে কি তোমার অসুবিধে হচ্ছিল?
--কর্তার ইচ্ছায় কর্ম,আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছের কি দাম আছে বলুন।
--সময় করে একদিন এসো অনেক কথা আছে।চৈতালিদি বলল।
মধুদি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে কথা শুনছিলেন,কোন ও কথা বললেন না।একেবারে শেষে ঝিনুকদিদের ঘর।ঘরে ঢুকতেই সোনালিদিদিমণি কানের কাছে মুখ এনে জিজ্ঞেস করলো,বৈদুর্য তুমি আমার উপর রাগ করেছো?
বৈদুর্য আড়চোখে ঝিনুককে দেখে বলল,আমি কারো উপর রাগ করি না।
--তোমার ভাল লাগেনি?
--আপনারা খুশী হলেই আমি খুশী।
--আপনারা মানে তুমি সবাইকে খুশী করতে চাও?
বৈদুর্যের কান লাল হয়।মনে হয় ঝিনুকদিকে সব বলেছে।এইসব আলাপ তার ভাল লাগে না বলে,আমি আসি দিদিমণি?
বৈদুর্যের তলপেটের নীচে ঝিনুকের সন্ধানী দৃষ্টি।সোনালির কাছে শুনেছে ঐটা নাকি খুব বড়। সোনালির কথা ঠিক বিশ্বাস হয় না আবার উড়িয়ে দিতেও পারে না।
বৈদুর্য চলে যেতে সোনালি জিজ্ঞেস করে,কিরে ঝিনুক বিশ্বাস হলতো?
সোনালির কাছে শুনে ঝিনুক পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি কিন্তু এখন যেভাবে আলাপ করল তাতে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।সোনালির উপর একটু বিরক্ত তাকে ইচ্ছে করে এড়িয়ে গেছে সোনালি।ঝিনুক কি বাধা দিত?
--কিরে তোর আবার কি হল?সোনালি জিজ্ঞেস করে।
--কি আবার হবে?নিরীহ লোকটাকে নিয়ে এসব করা ঠিক হয়নি।
সোনালি কি ভাবে তারপর বলল,লোকটা নিরীহ অস্বীকার করছি না তবে তুই যদি দেখতিস তাহলে তুইও নিজেকে ঠিক রাখতে পারতিস না--।
--সেই জন্য আমাকে দেখার সূযোগ দিস নি?
--ও বুঝেছি।বিশ্বাস কর একদম ঠিক ছিল না।কি ভাবে কি হয়ে গেল---।
--থাক থাক আমি শুনতে চাইছি না।ঝিনুক বিরক্ত হয়ে বলল।
টিভিতে একটা ধারাবাহিক শেষ হয়ে আরেকটা শুরু হলেও সুনন্দা মুখার্জির সেদিকে মন নেই।একা একা কি যে করছে মেয়েটা,বিয়ে করল না তার উপর দিব্যেন্দু পিছনে লেগে রয়েছে।এত রাত তো করে না?সংবাদ চ্যানেল দেখেন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন যদি কোনো খবর পাওয়া যায়।সুরবালা রান্না শেষ করে বলল,আমি তাহলে আসি?
--তুমি যাবে? আচ্চছা যাও--শোনো মিমি এখনো ফেরেনি তুমি দরজা লক কোর না গ্রিল গেট টেনে দিয়ে যাও।
সুরবালা চলে যেতে সুনন্দা বাইরে ব্যালকনিতে এসে দাড়ালেন।রাস্তায় পথচারীর ভীড় দেখে বুঝলেন হয়তো কোনো ট্রেন এসেছে। ভীড়ের মধ্যে তীক্ষ্ণ নজর মেয়ে এই ট্রেনে ফিরল কিনা?একসময় রাস্তার ভীড় পাতলা হয়ে গেল,মিমির দেখা নেই। ঘরে ফিরতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লেন একটা গাড়ী আসছে বাড়ীর দিকে। বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে ওঠে গাড়ীটা বাড়ীর নীচে দাঁড়িয়ে পড়ল।উদ্গ্রীব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে,মিমির কিছু হল নাতো?গাড়ির দরজা খুলে নামল মিমি।নেমে গ্রিল গেট হাট করে খুলে আবার গাড়িতে গিয়ে বসল।গাড়ীটা তাদের মনে হচ্ছে? দস্যি মেয়েটা নিজে গাড়ী চালিয়ে এল নাকি? কিছু বলবেন না তিনি,ওর যা ইচ্ছে করুক। আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন সুনন্দা মুখার্জি।
সুভদ্রা মুখার্জি গাড়ী ভিতরে ঢুকিয়ে লক করে উপরে উঠে এল।মামীর ঘরে গিয়ে দেখল বলল,স্যরি মাম্মী।গাড়ীটা নিয়ে এলাম।
সুনন্দা মুখার্জি মেয়ের দিকে তাকালেন না।সুভদ্রা ব্যাগ থেকে ঘুমের ওষুধের একটা শিশি বের করে টেবিলে রেখে বলল,তোমার ওষুধ।মাম্মী তুমি ওষুধ ছাড়া একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো।এভাবে খেলে নেশা হয়ে যাবে।
--তুমি আমায় ঘুমোতে দিলে তো ঘুমাবো।সুনন্দা এবার সুযোগ পেয়ে মুখ খুললেন।
মাকে জড়িয়ে ধরে সুভদ্রা আদো আদো গলায় বলল,মাম্মী বলছি তো স্যরি।
সুনন্দা বললেন,ছাড়ো আমার ঘুমের কথা তোমায় ভাবতে হবে না। যেদিন শুনবো তুমি বিয়ে করেছো সেদিন আমি শান্তিতে ঘুমাবো।রাত হয়েছে এবার চেঞ্জ করে খেতে এসো।
সুভদ্রার ঠোটে এক চিলতে হাসি খেলে যায়।জিনির বিয়ে হয়ে একটা অশান্তি আর সে বিয়ে করলে দুই জামাইয়ে শুরু হবে কুরুক্ষেত্র।এই ভাল এদিক সেদিক করে দুটি প্রাণ চলে যাবে।
গোদেলিয়েভ গ্রামাফোন চালিয়ে দরজা বন্ধ করে নাচ করছেন। নাচ মানে সারাদিনের ক্লান্তির পর মনের বিশ্রাম আর শরীর চর্চা বলা যায়।পরণে প্যাণ্টি আর ব্রেসিয়ার।
বৈদুর্য শুনতে পেলেও কিছু দেখতে পাচ্ছে না।সিগমুণ্ড ফ্রয়েডের একটা বই কদিন আগে কিনেছিল বৈদুর্য। বইয়ের গভীরে ডুবে যাওয়া বৈদুর্যের কানে সংগীত পৌছাতে পারে না। বই পড়তে পড়তে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে বৈদুর্য।সরল মনে স্বপ্নরা বিঘ্ন সৃষ্টি করতে আসে না।আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল,চোখ মেলতে নজরে পড়ে অন্ধকারে গোদেলিয়েভ ম্যাম তাকের উপর কি হাতড়াচ্ছেন। বৈদুর্য ঘুমের ভান করে পড়ে থাকে।স্বল্প বাসের জন্য ম্যাম হয়তো লাইট জ্বালেন নি।একসময় বৈদুর্য উঠে বসে জিজ্ঞেস করে,ম্যাম কিছু খুজছেন?
--তুমি ঘুমাও নি?গোদেলিয়েভ লাইট জ্বেলে বললেন,এইখানে একটা অয়েণ্টমেণ্ট ছিল--কাধে একটু মোচড় লেগে গেল।
এতবয়স হয়েছে শরীরে কোনো টোল পড়েনি।মিমিদিকেও এরকম দেখতে, বৈদুর্যের নজরে পড়ে বইয়ের তাকের ফাকে একটা টিউব।মাশল পেন কিলার অয়েণ্টমেণ্ট। একদম চ্যাপ্টা ওষুধ আছে বলে মনে হয় না।টিউবটা নিয়ে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, ম্যাম এইটা?
--থ্যাঙ্ক ইউ।ও গড--এতো একদম ফিনিশ!
গোদেলিয়েভ টিউব টিপতে সামান্য একটু ক্রীম বের হল গোদেলিয়েভ পিছন ফিরে বসে বৈদুর্যকে বলল,একটু হেল্প করবে?এই কাধটায় লাগিয়ে দেবে?
বৈদুর্য তর্জনিতে ক্রীম কেকে নিয়ে ম্যামের বা-দিকের কাধে লাগাতে লাগাতে জিজ্ঞেস করে,একটু ম্যাসেজ করে দেবো?
গোদেলিয়েভ ঘুরে বৈদুর্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,তুমি ম্যাসাজ করতে জানো?
--না না তা নয়। শরীরের যেখানে যেখানে জোড়া সেখানে চাপ দিলে বেশ আরাম লাগে।
--জোড়া?
--এই যেমন কাধ হাটূ কুচকি কোমর--এই সব জায়গা---।
গোদেলিয়েভ হাসলেন,ইউ আর বেরি সিমপল।ওকে করো।
বৈদুর্য হাটুতে ভর দিয়ে গোদেলিয়েভের কাধে মোচড় দিতে লাগলো।নরম মাংসের মধ্যে আঙ্গুল ডুবে যেতে থাকে।
গোদেলিয়েভ আঃ-হা-আআআ শব্দে সুখানুভুতি প্রকাশ করেন। কিছুক্ষণ টিপে বৈদুর্য জিজ্ঞেস করে,ম্যাম ব্যথা কমেছে?
--অনেক রিলিফ হয়েছে,থ্যাঙ্ক ইউ।তুমি ঘুমাও,গুদ নাইত।
--গুড নাইট ম্যাম।
বিদেশিনীদের লাইফ স্টাইল আলাদা।বৈদুর্য কিছু মনে করে না।চাদর ঢেকে শুয়ে পড়ল।