18-02-2020, 11:14 PM
28
অদিতির কথা মতন মাথার চুলে জট লেগে গেছে এই অজুহাত দেখিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকলাম যে কার কাছে পাওয়া যায় সেই ভয়ানক বস্তুটা। তবে কারোর না
কারোর কাছে পাওয়া যাবে সেটা জানি কেন না এখান থেকে মেয়েদের কারোর ঘরে পাঠানোর আগে মাথায় শ্যাম্পু করানো হয়। তবে বুঝলাম কারোর কাছে শ্যাম্পু নেই। খুব
বেশীক্ষণ লাগলো না, তিন নম্বর ঘরের থেকে বাইরে বেরোতেই রাকাদির দেখা পেলাম। উদাস ভাবে বাইরের দিকে চেয়ে বসে আছে একটা ঘরের সামনে। এখানে ওর ধারে কাছে
কেউ নেই, আর তার ওপর ও আমাকে দেখেই আমাকে ডেকে কাছে আসতে বলেছে। ওকেও গিয়ে সেই একই কথা বললাম। শ্যাম্পু ওর কাছেও নেই। খুব প্রয়োজন ছাড়া শ্যাম্পু
এখানে কেউ তেমন ব্যবহার করে না। তারপর অদিতি যেমন শিখিয়েছিল ঠিক তেমন ভাবে একথা সেকথা বলে হঠাত জিজ্ঞেস করলাম যে কটা বাজে। ও কিছু না ভেবেই সময়
বলে দিল ঘড়ি দেখে। একটা কথা বলে রাখা ভালো যে আমরা নিজেদের ব্যাগ ফেরত পেয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু তাতে কোনও ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল না। মোবাইল যে ছিল না
সেটা তো আগেই বলেছি। তার সাথে ঘড়ি অয়াক্ম্যান সব গায়েব ছিল। আরও কয়েক মিনিট একথা সেকথা বলে উঠবার সময় বললাম “এই কটা বাজে বললে যেন?” রাকাদি
আবার সময় দেখে টাইমটা বলে দিল। “ছটা বেজে দুই।“ আমি হেঁসে ওর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ঘরে এসে দেখি অদিতি হাত বগল তলপেট সব শেভ করা শেষ করে এখন
পা শেভ করছে আস্তে আস্তে। পা হয়ে যাওয়ার পর নির্লজ্জের মতন আমার সামনেই নগ্ন হয়ে বসে নিজের যোনীদেশের ওপর দিয়ে ভালো করে রেজার চালিয়ে দিল। মাঝে মাঝে
জানলার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জল হাতে করে নিয়ে এসে জায়গাগুলোকে ভিজিয়ে নিচ্ছিল। নগ্ন ভাবে আমার সামনে দু হাত তুলে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল
কোথাও কোনও লোম দেখছিস? আমি ভালো করে দেখে নিয়ে বললাম “না পরিষ্কার একদম।“ ও শাড়িটা গায়ে আলগা ভাবে জড়িয়ে নিয়ে চলে গেল কল পাড়ে। না স্নান
করতে যায় নি। ভালো ভাবে রেজারটা ধুয়ে নিয়ে এসে বলল “যা তুইও পরিষ্কার হয়ে নে। আজ সময় পেয়েছিস। কাজে লাগা।“ আমি ওকে বললাম “তোর মতন এইভাবে
বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জলে আমি করতে পারব না। আমার র*্যাশ বেড়িয়ে যাবে।“ তবে সুযোগ পেয়েছি যখন তখন করে নেওয়াই ভালো। ও আমাকে বলল “যা গিয়ে কল
পাড়ে বসে ওই নোংরা সাবান গুলোর ফ্যানা লাগিয়ে করে আয় তাহলে।“ আমি ওকে বললাম “গুড আইডিয়া। কিন্তু আমি স্নান করার সময় করব। এখন না।“ ও বলল “যা
না কল পাড়ে গিয়ে বসে করে নে। ওখান থেকে অঞ্জনার ঘরটা ভালো দেখা যায়। একটু নজরও রাখতে পারবি যে কেউ ওর ঘরের সামনে ঘুর ঘুর করছে কি না। আর আমি একটু
রান্নার দিকে যাব। হ্যাঁ একটা কথা, শুধু অঞ্জনা নয়, একটু খেয়াল করার চেষ্টা করবি যে কেউ তোর মতন বাইরে ঘোরাঘুরি করছে কি না।“ বললাম “তুই কি আমাকে অবসার্ভ
করতে পাঠাচ্ছিস?” বলল “হ্যাঁ। যা দেরী করিস না। তবে কাজ হয়ে গেলে বৃষ্টিতে বসে থাকার মানে নেই, ফিরে আসিস ঘরেই।“ বললাম “শালা তুই নিজেও তো গিয়ে
করতে পারতিস।“ বলল “সোনা আমার আজ অনেক কাজ। এখন মাথা খাস না। যা তো যা বলছি কর। যদি পালাতে চাস তো মুখ খুলিস না।“ আমি কিছুই বুঝতে পারছি
না যে ও ঠিক কি প্ল্যান করে রেখেছে। আজই কি আমরা পালাবো? না কি আমাকে ফেলে রেখে ও একাই পালাতে চাইছে? কিন্তু পালাবেই বা কি করে? কিছুই মাথায় আসছে
না। ও দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করছিল। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল “কি?” বললাম “তোকে আজ পুরো হেয়ালির মতন লাগছে।
তোকে তখন জিজ্ঞেস করতে পারি নি, একটা কথা বল ওই কাগজটা তুই কখন পেয়েছিস?” ও বলল “কোন কাগজটা?” তারপর ভেবে বলল “তুই না সত্যি একটা ইয়ে। ওটা
অরূপদারই প্যাডের কাগজে ভাঙ্গা ভাঙ্গা অক্ষরে, মানে যেন অন্য কেউ লিখছে সেই ভাবে কথাগুলো লিখে নিয়েছিলাম। মনে পড়ছে? তোকে বলেছিলাম যে একটা সমস্যা আছে।
সেই সমস্যাটা হল আমরা আলিদাকে অরূপদার প্যাডের কাগজটা দেখাতে পারতাম না। কিন্তু ও এইবার চেপে ধরবেই। সেটাই বুঝে তোকে ওখানে বসিয়ে রেখে আমি ঘরে এসে
একটা ছেঁড়া চিরকুটে কথাগুলো লিখে নিলাম। এটা তোর বোঝা উচিত ছিল।“ মনে মনে বললাম আমার সেটাই মনে হয়েছিল, কিন্তু এখন তোর হাব ভাব দেখে মনে সন্দেহ
আসছে।
ও তাড়া দিয়ে বলল “যা দাঁড়িয়ে থাকিস না। বাইরে গিয়ে বসে একটু পরিষ্কার হয়ে নে আর সব কিছুর ওপর একটু নজর রাখিস। তবে বেশীক্ষণ বসে বসে বৃষ্টিতে ভিজিস না।“
আমি আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম। হঠাত ও এসে আমার ঘাড়ের ওপর হাত রেখে বলল “সব ঠিক থাকলে আজই আমাদের শেষ রাত এখানে। কিন্তু...।“ মুখে আঙুল
ঠেকিয়ে বলে দিল যে আমি যেন কোনও আওয়াজ না করি। আমাকে আশ্বস্ত করে বলল “আমি একা পালাবো না। তোকে নিয়েই যাব সে কথা দিচ্ছি। তবে এখন কিছু বলবি না।
পরিস্থিতি যেমন চলছে তেমনই চলুক। যদি মনে হয় ফেঁসে যাচ্ছিস, তবুও কোনও কিছুতে বাঁধা দিবি না। জাস্ট মুভ উইথ দা উইন্ড। ঠিক বের করে নেব। তবে মনে রাখিস একটা
কথা, আমরা যদি সত্যি না পালাতে পারি তো এমন কিছু করা চলবে না যাতে এদের চোখে আমরা বিশ্বাসঘাতক হয়ে যাই। এরা ভীষণ সন্দেহপ্রবন। তাই বলছি ক্যাজুয়াল থাক
আর হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চল। বিশ্বাস রাখ আমার ওপর। ভালো খারাপ অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু যা করার অরূপদা ফেরার আগেই করতে হবে। আর আজকেই
করতে হবে। “ ওর কথায় যেন একটা নির্ভেজাল বন্ধুত্ব আর আশ্বাসের স্বাদ পেলাম। মনটা অনেকটা হালকা হল। আমি এগিয়ে চললাম কল পাড়ের দিকে হাতে রেজার। ওই
নোংরা সাবান দিয়েই আমাকে পরিষ্কার হতে হল। তবে সাবানের ফ্যানা থাকায় কোনও অস্বস্তি ফিল করি নি। তবে শেভ করার সময় নজর রেখে চলেছি চার পাশে। অমল একবার
আমার কাছে এসে শেভ করছি দেখে মুচকি হেঁসে চলে গেল। তবে মনের কোণায় একটা ব্যথা রয়েই গেল। একটা মেয়ে খুন হয়ে গেল, আজ কি হবে জানি না, অরূপদা যে একটা
ভণ্ড সেটা আমরা জানি, কিন্তু তাও মেয়ে হয়ে এতগুলো মেয়েকে অন্ধকারে রেখে দিয়ে চলে যাব। যতই ভাবছি ততই যেন নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাচ্ছি। আমি কোনও দিন
পুলিশ নিয়ে এসে এদের ধরিয়ে দিতে পারব না। অবশ্য সে প্রশ্ন উঠছে যদি আমি আদপেও জানতে পারি যে আমরা এখন কোথায় আছি। অরূপদার কথা ঠিক হলে হয়ত কোনও
দিন জানতেই পারব না যে এই পূজার দিন গুলো আমরা কোথায় কাটিয়ে গেলাম। কিন্তু অদিতির কথা ঠিক হলে আমরা পালাতে পারব। মাথায় আসছে না যে কি করে কি হবে।
তবে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি যে ওর টার্গেট স্থির। কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না যে যদি এমন হয় যে আলিদা বা বাকিরা ওর প্ল্যানের ব্যাপারে সব কিছু জানে, আর
শুধু ওঁত পেতে আছে যে আমরা একটা ভুল কদম ওঠাই আর সাথে সাথে আমাদের শেষ করে দেবে। না সত্যি মাথায় কিছু ঢুকছে না। শেভ করে ঘরে ফিরে এসে দেখলাম যে
অদিতিও ঘরে ফিরে এসেছে। পিছনের বা দিকের জানলার ধারে মোমবাতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে পিছনে ঘুরে এসে মোমবাতিটা টেবিলে লাগিয়ে রাখল।
বিছানায় সেই আগের মতন অশ্লীল ভাবে পায়ের ওপর পা তুলে শুয়ে পড়ল। ওর মুখে একটা এক্সপ্রেশন দেখলাম যেটাতে মিশে আছে আশা, উত্তেজনা,সম্ভাবনা আর প্রতিক্ষা।
আমি ওর পাশে বসে বললাম “ আচ্ছা সব কিছু জেনে এদের জন্য কিছু একটা না করে এইভাবে চলে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?” একটু থেমে বললাম “আর আমরা যে
পালাতে পারবো সেটা কত পারসেন্ট সিওর তুই?” ও কোনও কথা না বলে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল।
আমিও শুয়ে পড়লাম ওর পাশে। জানি না কতক্ষণ এইভাবে শুয়ে ছিলাম কিন্তু হঠাত পায়ের আওয়াজ পেয়ে উঠে বসলাম। অদিতিও উঠে বসেছে। ঘরে ঢুকল রাকাদি, আলিদা
আর রাজু আর মায়া। আলিদা বলল “গ্রিন হোটেলে একটা ফিল্ড ওয়ার্ক এসেছে। অরূপদা ফোন করেছিল। কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন করবে। আঠাশ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে
পরিষ্কার, মার্জিত, সুন্দরি, মাঝারি গড়নের মেয়ে চাই। মডার্ন হওয়া চাই। শহুরে আদব কায়দা জানা চাই। ক্লায়েন্টের বিচিত্র চাহিদা থাকতে পারে, সে গুলো বুঝে মেটানো চাই।
আর সময় বুঝে যেটা করার সেটা করা চাই। বিশাল বড়লোক বাপের ছেলে এসেছে গোপনে ডিল করতে। দুই ব্যাগ বোঝাই টাকা।“ অদিতির দিকে তাকিয়ে বলল “রাজু আর
সুজাতা দুজনেই তোমাদের কথা বলেছে। সব শুনে আমারও তোমাদেরই কথা মনে হয়েছে। তোমরা পরিষ্কার আর টিপটপ। কিন্তু এই ব্যাপারে তোমাদের আমরা বাধ্য করতে পারি
না। কারণ তোমরা আমাদের চিকিৎসা করতে এসেছ। শহুরে মেয়েরা বিছানায় কেমন কি করে(বুঝলাম আমাদের যৌন ব্যাভিচার নিয়ে এইসব কথা হচ্ছে), তাদের এইসব ক্ষেত্রে
আদব কায়দা কেমন রাখতে হয়(আমরা বেডরুমে সেক্স করি, কিন্তু আমরা তো আর কল গার্ল নই। কিন্তু পরে মনে হল বিছানায় আর কতরকম ভ্যারাইটি হতে পারে। হয়ত
আমাদের সাথে শোয়ার পর ওদের এরকম মনে হয়েছে।), এসব কিছু যারা জানে তাদের সকলে প্রায় বাইরে। আর যারা আছে তাদের বয়স হয় অনেক কম বা অনেক বেশী।
এইসব জায়গায় আমরা রিস্ক নি না। দরকার হলে ডিলটা আমরা নেব না। একটু ভেবে বলবে। আবারও বলছি কোনও জোর জবরদস্তি নেই। পাঁচ মিনিট ভেবে নাও।“ অদিতি
ফস করে বলে উঠল “একে টেলিপ্যাথি ছাড়া আর কি বলবে আলি দা। আজ কিন্তু আমিই তোমাকে বলেছিলাম যে আমি যাওয়ার আগে অন্তত একবার এই মেয়েরা কতটা রিস্ক
নেয় সেটা দেখতে চাই। আর দেখো আজই এখানে মেয়ের অভাব। অন্তত তেমন মেয়ের অভাব যেমন তোমরা চাও।“ রাকাদি আর আলিদা এর ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করল।
আমার হঠাত মনে হল যে অদিতি একটা বিশ্বাসঘাতক। ও কি আগে থেকে জানত যে আজ এমন কিছু একটা হবে? কিন্তু ও কি করে জানবে? নেহাতই কাকতালীয় না কি? বার
বার একই প্রশ্ন মাথায় আসছে যে ও কি করে জানবে যে আজ এমন কিছু একটা হবে? ও কি ওদের একজন? দূর তাহলে আমার সাথেই বা এইভাবে আছে কেন? আমার পেটে তো
এমন কোনও কথা নেই যা ও জানে না। তাহলে এতদিন ধরে এখানে বসে ছল করার মতন মেয়ে তো ওকে দেখে মনে হয় নি। আর তাছাড়া বারবার ওকে দেখে মনে হয়েছে যে ও
যেন ওঁত পেতে আছে পালানোর। ও একাই পালাতে চাইছে? না ওকে একা পালাতে দেওয়া যাবে না। কিছুতেই না। ও একটা বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু ও কি করে জানবে যে, ও কি
অরূপদার সাথে মিলে...না ভাবতে পারছি না। ক্যাম্পের বাইরে গেলে একটা কিছু হতে পারে। তবে যদি সব কিছু পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক হয় তো আমাকে যেতেই দেবে না, ওই
যাবে। কিছু না ভেবেই বলে ফেললাম “আমিও যেতে প্রস্তুত। তবে সিকিওরিটির কি ব্যাবস্থা সেটা জানিয়ে দিলে ভালো হবে।“ ওরা বেড়িয়ে গেল। আমি অদিতির সাথে কোনও
কথা না বলে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। অদিতিও শুয়ে পড়ল।
আরও দশ মিনিট কেটে গেল। ঘরে এলো আলিদা আর রাকাদি। আমরা বিছানা থেকে সন্ত্রস্ত ভাবে উঠে দাঁড়ালাম। আলিদা বিছানায় কেমন জানি হতাশা নিয়ে বসে পড়ল।
রাকাদিরও মুখ নিচু। আলিদা বলল “সত্যি বলছি আমি জানি না কিভাবে অরূপদা এমন সিদ্ধান্ত নিলো।“ আমি আড়চোখে দেখলাম অদিতির চোখ চকচক করছে উত্তেজনায়।
আলিদা বলল “আমরা ট্রেনিং ছাড়া কাউকে পাঠাই না। কিন্তু যেমন মেয়ে চাইছে তেমন আর সত্যি আমাদের কাছে নেই। আর তোমরা তো জানো যে এরা ঠিক মতন পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন ভাবেও থাকে না। (আমরা দুজনেই বুঝতে পারলাম যে পরিষ্কার ইত্যাদি বলতে কি বলতে চাইছে।) এদের রেডি হতে অনেক সময় লাগবে। আর তাছাড়া... থাক সংক্ষেপে
বলছি অরূপদা রুমিকে যেতে বলেছে।“ রাকাদি বলল “না আলিদা যেতে বলেনি। অনেক বড় হাত বলে যেতে অনুরোধ করেছে যদি ওর আপত্তি না থাকে।“ অদিতির মুখের
ওপর পরপর কয়েকটা অভিব্যক্তি খেলে গেল। প্রথমটা হতাশা, তারপরেরটা আশঙ্কা (ভয় নয়), আর সবশেষে একটা ক্রূর হাঁসি। রাকাদি আমার কাঁধে হাত রেখে বলল “তুমি কি
প্রস্তুত?” অদিতির হাতটা ওদের সবার অলক্ষ্যে আমার হাতটা ছুঁয়ে গেল। মনে পড়ল ও বলেছিল যে যদি মনে হয় যে তুই ফেঁসে গেছিস, আমার ওপর বিশ্বাস রাখিস। হাওয়ার
সাথে বয়ে যা। কি হবে জানি না। তবে আজই এখানে শেষ রাত। ও কি আমার হাতে ছুঁয়ে সেটাই বোঝাতে চাইল? না কি? আমি বাইরে যাওয়ার পর আমাকে মেরে ফেলবে? কিছু
করার নেই। যা হবার হবে। বললাম “হ্যাঁ আমি রেডি।“ আরেকটা অদ্ভুত কাকতালীয় ব্যাপার আমি অদিতির কথায় শ্যাম্পু চাওয়ার নাটক করে বেড়াচ্ছিলাম, এখন রাকাদি
নিজে এসে আমার হাতে শ্যাম্পুর একটা শিশি দিয়ে চলে গেল। “কুড়ি মিনিট। তৈরি হয়ে নাও। তবে উগ্র সাজ করে যেও না যাতে লোকে সন্দেহ করে।“ রাকাদি চলে গেল।
অদিতি আমার হাত থেকে শ্যাম্পুর শিশিটা কেড়ে নিয়ে বলল “চল শ্যাম্পু করিয়ে দিচ্ছি।“ আমি বিরক্তির সাথে বাঁধা দিতে যাচ্ছি দেখে প্রায় ধমকে উঠলো। “আহ। সময় কম।
ছেলেমানুষী করিস না। চল। মুখ বন্ধ রাখ। শুধু শুনে যা।“ দেখলাম আরও কয়েকজন ঘরের বাইরে বেড়িয়ে এসেছে। ওরাও বোধহয় বুঝতে পারছে না যে আমার মতন একটা
মেয়েকে কি করে পাঠাচ্ছে এই অভিযানে, যে বন্দুকটাও ভালো করে ধরতে শেখেনি। কল পাড়ে গিয়ে বুঝলাম ও হাতে রেজারটা নিয়ে এসেছে। ভালো করে পিঠে একবার বুলিয়ে
দিল। আমি নগ্ন হয়ে বসে স্নান শুরু করে দিয়েছি। ও আমার মাথায় শ্যাম্পু করে দিচ্ছে। হঠাত কাঁধের ওপর ঝাঁকুনি খেয়ে সম্বিত ফিরে পেলাম। “শুনছিস কি বলছি?” মাথা
নেড়ে বললাম “হ্যাঁ।“ ও বলল “মন দিয়ে শোন যা বলে যাচ্ছি। প্রশ্ন করিস না। অন্ধের মতন তাই করবি যা বলব।“
আমি কান খাড়া করে ওর কথা শুনে চললাম “শোন। হোটেলে ঢোকার পর তোকে বুঝতে হবে না, তোকে খুঁজতেও হবে না, কেউ না কেউ এসে তোর হ্যান্ড ব্যাগে একটা কাগজ
রেখে দিয়ে যাবে। আবার বলছি তোকে খুঁজতে হবে না কাউকে। সেটা করলেই তুই ফেঁসে যাবি। হ্যান্ড ব্যাগটা তোর ডান হাতে ঝুলিয়ে ক্যাজুয়ালি হাঁটবি। আর হ্যাঁ সেটার চেইনটা
খুলে রাখিস। ব্যস তাতেই হবে। আঠারো নম্বর ঘর ফার্স্ট ফ্লোরে। ওই হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে লিফটের পাশেই একটা অয়াশরুম আছে। যদি দেখিস লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে দাঁড়িয়ে
আছে তো কিছু ভাবে সময় নষ্ট করবি। জুতো ঠিক করবি, পাশে আয়না থাকলে একবার মুখ দেখে নিবি, মানে যে করেই হোক, লিফট যেন গ্রাউন্ড ফ্লোরের থেকে অনেক উপরে
থাকে। লিফট যখন থার্ড কি ফোর্থ ফ্লোরে তখন গিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়াবি। আর খুব ক্যাজুয়ালি হঠাত বলবি এক মিনিটের জন্য তোকে অয়াশরুম যেতে হবে। কারোর কথা
শুনবি না। সোজা অয়াশরুমের দিকে চলে যাবি। মনে রাখিস তুই একটা মেয়ে। পাবলিক প্লেসে ওরা তোকে অয়াশ রুমে যেতে বাঁধা দিতে পারে না। গায়ে হাত দিতেও পারে না।
হয়ত দেবেও না। কিন্তু বলতে পারে যে আর তো দু মিনিট, ঘরে গিয়ে অয়াশরুম যেও ইত্যাদি। কিন্তু তুই ওদের সম্পূর্ণভাবে ইগনোর করে, আর্জ দেখিয়ে এক মিনিটের জন্য
অয়াশরুমে যাবি। গিয়ে কাগজটা পড়বি। কাগজ তোর ব্যাগেই থাকবে। আই রিপিট কে দিচ্ছে কখন দিচ্ছে এইসব নিয়ে তোর ভাবনার কোনও কারণ নেই। ওখানে যা লেখা থাকবে
সেই অনুযায়ী কাজ করবি। আবারও বলছি যদি মনে হয় যে পুরো ফেঁসে গেছিস। কিছু করবি না। যেমন চলছে তেমন চলতে দিবি। কাগজে যা লেখা আছে তার বাইরে যাবি না।
ওখানে তোকে গার্ড করার জন্য লোকের অভাব নেই। কিন্তু এইটা মনে রাখিস। চোর কে শুধু চুরি করার সময় বা চুরির জিনিসের সাথেই ধরা যায়। আচ্ছা এখন তোর প্রশ্নের উত্তর
দিচ্ছি। আজ তোর ওপর এদের ভাগ্য নির্ভর করছে। হয়ত ওই লোকটার সাথে তোকে শুতে হবে। শুতে হলে শুয়ে নিবি। এই একটাই কারণে আমি যেতে চাইছিলাম। কারণ শুনেছি
যে... হয়ত ওরা একা নয়।“ আমি বললাম “শুনেছিস মানে?” ও বলল “বললাম না প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করিস না। আজ হয়ত তোকে একটু ব্যাথা পেতে হবে। কিন্তু এটা না
হলে কিছু করা যেত না। ভণ্ডটাকে হাতে নাতে ধরা সম্ভব হত না। আচ্ছা পরের কথা শোন, সে একজনই হোক বা দুই জনই হোক, তুই ওদের সাথে পাঙ্গা নিয়ে কিছু করতে পারবি
না। তাই সেই চেষ্টাও করবি না। মাল লুট করা তোর টার্গেট নয়। ওদের সাথে শুয়ে বা কাগজে যেমন লেখা আছে তেমনটা অন্ধের মতন ফলো করে সুস্থ শরীরে বেড়িয়ে আসবি। ব্যস
তোর কাজ শেষ। টাকা হাতে না বেরোলে কি কৈফিয়ত দিবি সেটা কাগজেই লেখা থাকবে। আর যদি নিতান্তই না লেখা থাকে তো বলবি, আমার সর্বস্ব নিয়ে আমাকে ঘরের বাইরে
বের করে দেওয়া হয়েছে। মনে রাখিস অরূপদা আজ এক ঢিলে দুই পাখী মারবে। ওখানে অরূপদা চলে এসেছে ইতিমধ্যে। তুই আরও ঘণ্টা দুয়েক পরে গিয়ে পৌছাবি। খুব
ক্যাজুয়াল আর সেক্সি থাকবি যাতে কারোর তোর ওপর কোনও সন্দেহ না হয়।“ আমার স্নান করা শেষ। আমি অদিতির সাথে ঘরে ফিরে এলাম। প্রায় সবাই সবার ঘরের বাইরে
এসে দাঁড়িয়েছে। আজ আর সেই রকম শাড়ি নয়। ব্যাগ থেকে বের করে নিলাম আমার রেগুলার ড্রেস। একটা টাইট স্লিভলেস টপ, আর টাইট জিন্স। ডিওটা ব্যাগে ছিল। বগলে আর
ঊরুসন্ধিতে স্প্রে করে নিলাম। হালকা লিপস্টিক মেখে চুল ঠিক করে বেড়িয়ে এলাম। অদিতিই চুল আঁচড়ে দিয়েছিল। বেরনোর আগে ও আবার বলল “সব শুনেছিস?” মাথা
নাড়িয়ে বললাম “হ্যাঁ।“ ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল “চিন্তা করিস না। আমি তোর ঠিক পেছন পেছন আসছি। ক্যাজুয়াল থাকবি। “ আলিদা এসে বলল “তাড়াতাড়ি
চলো। অলরেডি লেট। অরূপদা আর এক ঘণ্টার মধ্যে ওখানে পৌছাবে বলেছে।“ আমি অদিতির দিকে তাকালাম কারণ ও একটু আগে বলেছিল যে অরূপদা আগেই পৌঁছে
গেছে। অদিতি চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিল যে যা হচ্ছে হতে দে। চেপে যা। আমি ক্যাজুয়াল মুখ করে তাড়াতাড়ি এগিয়ে চললাম। একটা সাদা রঙের বড় গাড়ি এসে থেমেছে
মাঠে। রাকাদি এসে আমাকে বলল “ওই হোটেল আমাদের জন্য লাকি ছিল। কিন্তু সীমার এইসব হওয়ার পর থেকে কেন জানি না মন বলছে খুব বিপদ হবে। সাবধানে থেকো।
অরূপদা যা বলবে সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। তাহলে কিছু হবে না। “ এর কোনও উত্তর হয় না। ও হ্যাঁ আমার ছোট ঝোলানো হ্যান্ডব্যাগটা আমি ডান হাতে নিয়ে
নিয়েছিলাম বেরনোর আগে।
আমি গাড়িতে চড়ে বসতেই গাড়ি ছেড়ে দিল। রাজু ড্রাইভারের সামনে এসে বসেছে। আমাকে কোনও ছোরা বা পিস্তল কিছুই দেয় নি ওরা। কারণ ওগুলো ব্যবহার করা যে আমার
দ্বারা হবে না সেটা ওরা ভালো ভাবেই জানে। উল্টে ধরা পড়লে হয়ত প্রাণটা বেঘোরে চলে যাবে। কি যে হবে। রাজু বলল “দিদি একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে রাখি। আমি
হোটেলের ভিতরে যেতে পারব না। তবে পালানোর চেষ্টা করবে না কারণ আগেই বলেছিলাম যে এজেন্ট আছে। সেক্ষেত্রে ধরা পড়লে তোমাকে শেষ করে দিতে বাধ্য হব।“ আমি
কোনও কথা না বলে ওর কথা শুনে যাচ্ছি। বললাম “বলে যাও।“ ও বলল “আর কিছু বলার নেই। মাল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে আমরা ছেড়ে দেব না।“ আমি হেঁসে
কাঁধে হাত রেখে বললাম “আর যদি মাল না নিয়ে পালিয়ে যাই?” ও বলল “সে যেতেই পারো। তবে আমার ওপর দায়িত্ব যে তুমি বাইরে বেড়িয়ে আসার পর যাতে কোনও
বিপদ না হয় সেটা লক্ষ্য রাখার। মাল না নিয়ে পালিয়ে গেলে, অরূপদা যা বলবে তাই করতে হবে। তোমাকে তো কিছুদিন পর ছেড়েই দিত। হয়ত কিছুই করবে না। তবে
সাবধানে থেকো। আর ওখানে ঢোকার আগেই পালিয়ে গেলে আমি তোমার পিছু নেব সেটা জানিয়ে রাখছি। কারণ তোমার ডিউটি মাল লুট করার। লুট না করতে পেরে পালিয়ে
গেলে অন্য কথা। জানি না অরূপদা কি বলবে।“ আমি বললাম “বারবার একই কথা বলতে হবে না। দেখাই যাক না যে কি করতে পারি।“ গাড়িটা একটা জায়গায় এসে
সাইড করা হল। রাজু পিছনে এসে কোনও কথা না বলে একটা মোটা রুমাল দিয়ে আমার হাত পিছনে বেঁধে দিল। আর চোখ দুটো বেঁধে দিল। বলল “কিছুই না। যাতে তুমি
জায়গা চিনতে না পারো তার জন্য এই ব্যবস্থা।“ হুম এইটুকু সতর্কতার জন্য ওদের দোষ দিতে পারি না। হাত যে খুব জোড়ে বেঁধেছে তা নয়। তবে নাড়ানো যাচ্ছে না। পিছনের
সিটে আমি শুয়ে আছি। কেউ কোনও কথা বলছে না। প্রায় দেড় ঘণ্টা কেটে গেল। জানি না ক্যাম্পে এখন কি হচ্ছে। হঠাত শুনলাম রাজু বলল “বা দিক করে রেখে দাও। আর
এগিও না।“ গাড়ি থামল। রাজু ঝট করে পিছনে এসে আমার হাত আর চোখের বাঁধন খুলে দিল। একটা অন্ধকার জায়গায় গাড়ি দাঁড় করানো আছে। সামনে চোখ পড়তেই
দেখলাম বিশাল শরীর নিয়ে সারা গায়ে ঝলমলে আলোর রঙ মেখে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিন হোটেল। হোটেলের সামনে আর ভেতরে বিভিন্ন নাম না জানা বড় বড় গাড়ি পার্ক করে
রাখা।
অদিতির কথা মতন মাথার চুলে জট লেগে গেছে এই অজুহাত দেখিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকলাম যে কার কাছে পাওয়া যায় সেই ভয়ানক বস্তুটা। তবে কারোর না
কারোর কাছে পাওয়া যাবে সেটা জানি কেন না এখান থেকে মেয়েদের কারোর ঘরে পাঠানোর আগে মাথায় শ্যাম্পু করানো হয়। তবে বুঝলাম কারোর কাছে শ্যাম্পু নেই। খুব
বেশীক্ষণ লাগলো না, তিন নম্বর ঘরের থেকে বাইরে বেরোতেই রাকাদির দেখা পেলাম। উদাস ভাবে বাইরের দিকে চেয়ে বসে আছে একটা ঘরের সামনে। এখানে ওর ধারে কাছে
কেউ নেই, আর তার ওপর ও আমাকে দেখেই আমাকে ডেকে কাছে আসতে বলেছে। ওকেও গিয়ে সেই একই কথা বললাম। শ্যাম্পু ওর কাছেও নেই। খুব প্রয়োজন ছাড়া শ্যাম্পু
এখানে কেউ তেমন ব্যবহার করে না। তারপর অদিতি যেমন শিখিয়েছিল ঠিক তেমন ভাবে একথা সেকথা বলে হঠাত জিজ্ঞেস করলাম যে কটা বাজে। ও কিছু না ভেবেই সময়
বলে দিল ঘড়ি দেখে। একটা কথা বলে রাখা ভালো যে আমরা নিজেদের ব্যাগ ফেরত পেয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু তাতে কোনও ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল না। মোবাইল যে ছিল না
সেটা তো আগেই বলেছি। তার সাথে ঘড়ি অয়াক্ম্যান সব গায়েব ছিল। আরও কয়েক মিনিট একথা সেকথা বলে উঠবার সময় বললাম “এই কটা বাজে বললে যেন?” রাকাদি
আবার সময় দেখে টাইমটা বলে দিল। “ছটা বেজে দুই।“ আমি হেঁসে ওর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ঘরে এসে দেখি অদিতি হাত বগল তলপেট সব শেভ করা শেষ করে এখন
পা শেভ করছে আস্তে আস্তে। পা হয়ে যাওয়ার পর নির্লজ্জের মতন আমার সামনেই নগ্ন হয়ে বসে নিজের যোনীদেশের ওপর দিয়ে ভালো করে রেজার চালিয়ে দিল। মাঝে মাঝে
জানলার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জল হাতে করে নিয়ে এসে জায়গাগুলোকে ভিজিয়ে নিচ্ছিল। নগ্ন ভাবে আমার সামনে দু হাত তুলে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল
কোথাও কোনও লোম দেখছিস? আমি ভালো করে দেখে নিয়ে বললাম “না পরিষ্কার একদম।“ ও শাড়িটা গায়ে আলগা ভাবে জড়িয়ে নিয়ে চলে গেল কল পাড়ে। না স্নান
করতে যায় নি। ভালো ভাবে রেজারটা ধুয়ে নিয়ে এসে বলল “যা তুইও পরিষ্কার হয়ে নে। আজ সময় পেয়েছিস। কাজে লাগা।“ আমি ওকে বললাম “তোর মতন এইভাবে
বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা জলে আমি করতে পারব না। আমার র*্যাশ বেড়িয়ে যাবে।“ তবে সুযোগ পেয়েছি যখন তখন করে নেওয়াই ভালো। ও আমাকে বলল “যা গিয়ে কল
পাড়ে বসে ওই নোংরা সাবান গুলোর ফ্যানা লাগিয়ে করে আয় তাহলে।“ আমি ওকে বললাম “গুড আইডিয়া। কিন্তু আমি স্নান করার সময় করব। এখন না।“ ও বলল “যা
না কল পাড়ে গিয়ে বসে করে নে। ওখান থেকে অঞ্জনার ঘরটা ভালো দেখা যায়। একটু নজরও রাখতে পারবি যে কেউ ওর ঘরের সামনে ঘুর ঘুর করছে কি না। আর আমি একটু
রান্নার দিকে যাব। হ্যাঁ একটা কথা, শুধু অঞ্জনা নয়, একটু খেয়াল করার চেষ্টা করবি যে কেউ তোর মতন বাইরে ঘোরাঘুরি করছে কি না।“ বললাম “তুই কি আমাকে অবসার্ভ
করতে পাঠাচ্ছিস?” বলল “হ্যাঁ। যা দেরী করিস না। তবে কাজ হয়ে গেলে বৃষ্টিতে বসে থাকার মানে নেই, ফিরে আসিস ঘরেই।“ বললাম “শালা তুই নিজেও তো গিয়ে
করতে পারতিস।“ বলল “সোনা আমার আজ অনেক কাজ। এখন মাথা খাস না। যা তো যা বলছি কর। যদি পালাতে চাস তো মুখ খুলিস না।“ আমি কিছুই বুঝতে পারছি
না যে ও ঠিক কি প্ল্যান করে রেখেছে। আজই কি আমরা পালাবো? না কি আমাকে ফেলে রেখে ও একাই পালাতে চাইছে? কিন্তু পালাবেই বা কি করে? কিছুই মাথায় আসছে
না। ও দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করছিল। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল “কি?” বললাম “তোকে আজ পুরো হেয়ালির মতন লাগছে।
তোকে তখন জিজ্ঞেস করতে পারি নি, একটা কথা বল ওই কাগজটা তুই কখন পেয়েছিস?” ও বলল “কোন কাগজটা?” তারপর ভেবে বলল “তুই না সত্যি একটা ইয়ে। ওটা
অরূপদারই প্যাডের কাগজে ভাঙ্গা ভাঙ্গা অক্ষরে, মানে যেন অন্য কেউ লিখছে সেই ভাবে কথাগুলো লিখে নিয়েছিলাম। মনে পড়ছে? তোকে বলেছিলাম যে একটা সমস্যা আছে।
সেই সমস্যাটা হল আমরা আলিদাকে অরূপদার প্যাডের কাগজটা দেখাতে পারতাম না। কিন্তু ও এইবার চেপে ধরবেই। সেটাই বুঝে তোকে ওখানে বসিয়ে রেখে আমি ঘরে এসে
একটা ছেঁড়া চিরকুটে কথাগুলো লিখে নিলাম। এটা তোর বোঝা উচিত ছিল।“ মনে মনে বললাম আমার সেটাই মনে হয়েছিল, কিন্তু এখন তোর হাব ভাব দেখে মনে সন্দেহ
আসছে।
ও তাড়া দিয়ে বলল “যা দাঁড়িয়ে থাকিস না। বাইরে গিয়ে বসে একটু পরিষ্কার হয়ে নে আর সব কিছুর ওপর একটু নজর রাখিস। তবে বেশীক্ষণ বসে বসে বৃষ্টিতে ভিজিস না।“
আমি আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম। হঠাত ও এসে আমার ঘাড়ের ওপর হাত রেখে বলল “সব ঠিক থাকলে আজই আমাদের শেষ রাত এখানে। কিন্তু...।“ মুখে আঙুল
ঠেকিয়ে বলে দিল যে আমি যেন কোনও আওয়াজ না করি। আমাকে আশ্বস্ত করে বলল “আমি একা পালাবো না। তোকে নিয়েই যাব সে কথা দিচ্ছি। তবে এখন কিছু বলবি না।
পরিস্থিতি যেমন চলছে তেমনই চলুক। যদি মনে হয় ফেঁসে যাচ্ছিস, তবুও কোনও কিছুতে বাঁধা দিবি না। জাস্ট মুভ উইথ দা উইন্ড। ঠিক বের করে নেব। তবে মনে রাখিস একটা
কথা, আমরা যদি সত্যি না পালাতে পারি তো এমন কিছু করা চলবে না যাতে এদের চোখে আমরা বিশ্বাসঘাতক হয়ে যাই। এরা ভীষণ সন্দেহপ্রবন। তাই বলছি ক্যাজুয়াল থাক
আর হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চল। বিশ্বাস রাখ আমার ওপর। ভালো খারাপ অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু যা করার অরূপদা ফেরার আগেই করতে হবে। আর আজকেই
করতে হবে। “ ওর কথায় যেন একটা নির্ভেজাল বন্ধুত্ব আর আশ্বাসের স্বাদ পেলাম। মনটা অনেকটা হালকা হল। আমি এগিয়ে চললাম কল পাড়ের দিকে হাতে রেজার। ওই
নোংরা সাবান দিয়েই আমাকে পরিষ্কার হতে হল। তবে সাবানের ফ্যানা থাকায় কোনও অস্বস্তি ফিল করি নি। তবে শেভ করার সময় নজর রেখে চলেছি চার পাশে। অমল একবার
আমার কাছে এসে শেভ করছি দেখে মুচকি হেঁসে চলে গেল। তবে মনের কোণায় একটা ব্যথা রয়েই গেল। একটা মেয়ে খুন হয়ে গেল, আজ কি হবে জানি না, অরূপদা যে একটা
ভণ্ড সেটা আমরা জানি, কিন্তু তাও মেয়ে হয়ে এতগুলো মেয়েকে অন্ধকারে রেখে দিয়ে চলে যাব। যতই ভাবছি ততই যেন নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাচ্ছি। আমি কোনও দিন
পুলিশ নিয়ে এসে এদের ধরিয়ে দিতে পারব না। অবশ্য সে প্রশ্ন উঠছে যদি আমি আদপেও জানতে পারি যে আমরা এখন কোথায় আছি। অরূপদার কথা ঠিক হলে হয়ত কোনও
দিন জানতেই পারব না যে এই পূজার দিন গুলো আমরা কোথায় কাটিয়ে গেলাম। কিন্তু অদিতির কথা ঠিক হলে আমরা পালাতে পারব। মাথায় আসছে না যে কি করে কি হবে।
তবে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি যে ওর টার্গেট স্থির। কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না যে যদি এমন হয় যে আলিদা বা বাকিরা ওর প্ল্যানের ব্যাপারে সব কিছু জানে, আর
শুধু ওঁত পেতে আছে যে আমরা একটা ভুল কদম ওঠাই আর সাথে সাথে আমাদের শেষ করে দেবে। না সত্যি মাথায় কিছু ঢুকছে না। শেভ করে ঘরে ফিরে এসে দেখলাম যে
অদিতিও ঘরে ফিরে এসেছে। পিছনের বা দিকের জানলার ধারে মোমবাতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে পিছনে ঘুরে এসে মোমবাতিটা টেবিলে লাগিয়ে রাখল।
বিছানায় সেই আগের মতন অশ্লীল ভাবে পায়ের ওপর পা তুলে শুয়ে পড়ল। ওর মুখে একটা এক্সপ্রেশন দেখলাম যেটাতে মিশে আছে আশা, উত্তেজনা,সম্ভাবনা আর প্রতিক্ষা।
আমি ওর পাশে বসে বললাম “ আচ্ছা সব কিছু জেনে এদের জন্য কিছু একটা না করে এইভাবে চলে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?” একটু থেমে বললাম “আর আমরা যে
পালাতে পারবো সেটা কত পারসেন্ট সিওর তুই?” ও কোনও কথা না বলে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল।
আমিও শুয়ে পড়লাম ওর পাশে। জানি না কতক্ষণ এইভাবে শুয়ে ছিলাম কিন্তু হঠাত পায়ের আওয়াজ পেয়ে উঠে বসলাম। অদিতিও উঠে বসেছে। ঘরে ঢুকল রাকাদি, আলিদা
আর রাজু আর মায়া। আলিদা বলল “গ্রিন হোটেলে একটা ফিল্ড ওয়ার্ক এসেছে। অরূপদা ফোন করেছিল। কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন করবে। আঠাশ থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে
পরিষ্কার, মার্জিত, সুন্দরি, মাঝারি গড়নের মেয়ে চাই। মডার্ন হওয়া চাই। শহুরে আদব কায়দা জানা চাই। ক্লায়েন্টের বিচিত্র চাহিদা থাকতে পারে, সে গুলো বুঝে মেটানো চাই।
আর সময় বুঝে যেটা করার সেটা করা চাই। বিশাল বড়লোক বাপের ছেলে এসেছে গোপনে ডিল করতে। দুই ব্যাগ বোঝাই টাকা।“ অদিতির দিকে তাকিয়ে বলল “রাজু আর
সুজাতা দুজনেই তোমাদের কথা বলেছে। সব শুনে আমারও তোমাদেরই কথা মনে হয়েছে। তোমরা পরিষ্কার আর টিপটপ। কিন্তু এই ব্যাপারে তোমাদের আমরা বাধ্য করতে পারি
না। কারণ তোমরা আমাদের চিকিৎসা করতে এসেছ। শহুরে মেয়েরা বিছানায় কেমন কি করে(বুঝলাম আমাদের যৌন ব্যাভিচার নিয়ে এইসব কথা হচ্ছে), তাদের এইসব ক্ষেত্রে
আদব কায়দা কেমন রাখতে হয়(আমরা বেডরুমে সেক্স করি, কিন্তু আমরা তো আর কল গার্ল নই। কিন্তু পরে মনে হল বিছানায় আর কতরকম ভ্যারাইটি হতে পারে। হয়ত
আমাদের সাথে শোয়ার পর ওদের এরকম মনে হয়েছে।), এসব কিছু যারা জানে তাদের সকলে প্রায় বাইরে। আর যারা আছে তাদের বয়স হয় অনেক কম বা অনেক বেশী।
এইসব জায়গায় আমরা রিস্ক নি না। দরকার হলে ডিলটা আমরা নেব না। একটু ভেবে বলবে। আবারও বলছি কোনও জোর জবরদস্তি নেই। পাঁচ মিনিট ভেবে নাও।“ অদিতি
ফস করে বলে উঠল “একে টেলিপ্যাথি ছাড়া আর কি বলবে আলি দা। আজ কিন্তু আমিই তোমাকে বলেছিলাম যে আমি যাওয়ার আগে অন্তত একবার এই মেয়েরা কতটা রিস্ক
নেয় সেটা দেখতে চাই। আর দেখো আজই এখানে মেয়ের অভাব। অন্তত তেমন মেয়ের অভাব যেমন তোমরা চাও।“ রাকাদি আর আলিদা এর ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করল।
আমার হঠাত মনে হল যে অদিতি একটা বিশ্বাসঘাতক। ও কি আগে থেকে জানত যে আজ এমন কিছু একটা হবে? কিন্তু ও কি করে জানবে? নেহাতই কাকতালীয় না কি? বার
বার একই প্রশ্ন মাথায় আসছে যে ও কি করে জানবে যে আজ এমন কিছু একটা হবে? ও কি ওদের একজন? দূর তাহলে আমার সাথেই বা এইভাবে আছে কেন? আমার পেটে তো
এমন কোনও কথা নেই যা ও জানে না। তাহলে এতদিন ধরে এখানে বসে ছল করার মতন মেয়ে তো ওকে দেখে মনে হয় নি। আর তাছাড়া বারবার ওকে দেখে মনে হয়েছে যে ও
যেন ওঁত পেতে আছে পালানোর। ও একাই পালাতে চাইছে? না ওকে একা পালাতে দেওয়া যাবে না। কিছুতেই না। ও একটা বিশ্বাসঘাতক। কিন্তু ও কি করে জানবে যে, ও কি
অরূপদার সাথে মিলে...না ভাবতে পারছি না। ক্যাম্পের বাইরে গেলে একটা কিছু হতে পারে। তবে যদি সব কিছু পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক হয় তো আমাকে যেতেই দেবে না, ওই
যাবে। কিছু না ভেবেই বলে ফেললাম “আমিও যেতে প্রস্তুত। তবে সিকিওরিটির কি ব্যাবস্থা সেটা জানিয়ে দিলে ভালো হবে।“ ওরা বেড়িয়ে গেল। আমি অদিতির সাথে কোনও
কথা না বলে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। অদিতিও শুয়ে পড়ল।
আরও দশ মিনিট কেটে গেল। ঘরে এলো আলিদা আর রাকাদি। আমরা বিছানা থেকে সন্ত্রস্ত ভাবে উঠে দাঁড়ালাম। আলিদা বিছানায় কেমন জানি হতাশা নিয়ে বসে পড়ল।
রাকাদিরও মুখ নিচু। আলিদা বলল “সত্যি বলছি আমি জানি না কিভাবে অরূপদা এমন সিদ্ধান্ত নিলো।“ আমি আড়চোখে দেখলাম অদিতির চোখ চকচক করছে উত্তেজনায়।
আলিদা বলল “আমরা ট্রেনিং ছাড়া কাউকে পাঠাই না। কিন্তু যেমন মেয়ে চাইছে তেমন আর সত্যি আমাদের কাছে নেই। আর তোমরা তো জানো যে এরা ঠিক মতন পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন ভাবেও থাকে না। (আমরা দুজনেই বুঝতে পারলাম যে পরিষ্কার ইত্যাদি বলতে কি বলতে চাইছে।) এদের রেডি হতে অনেক সময় লাগবে। আর তাছাড়া... থাক সংক্ষেপে
বলছি অরূপদা রুমিকে যেতে বলেছে।“ রাকাদি বলল “না আলিদা যেতে বলেনি। অনেক বড় হাত বলে যেতে অনুরোধ করেছে যদি ওর আপত্তি না থাকে।“ অদিতির মুখের
ওপর পরপর কয়েকটা অভিব্যক্তি খেলে গেল। প্রথমটা হতাশা, তারপরেরটা আশঙ্কা (ভয় নয়), আর সবশেষে একটা ক্রূর হাঁসি। রাকাদি আমার কাঁধে হাত রেখে বলল “তুমি কি
প্রস্তুত?” অদিতির হাতটা ওদের সবার অলক্ষ্যে আমার হাতটা ছুঁয়ে গেল। মনে পড়ল ও বলেছিল যে যদি মনে হয় যে তুই ফেঁসে গেছিস, আমার ওপর বিশ্বাস রাখিস। হাওয়ার
সাথে বয়ে যা। কি হবে জানি না। তবে আজই এখানে শেষ রাত। ও কি আমার হাতে ছুঁয়ে সেটাই বোঝাতে চাইল? না কি? আমি বাইরে যাওয়ার পর আমাকে মেরে ফেলবে? কিছু
করার নেই। যা হবার হবে। বললাম “হ্যাঁ আমি রেডি।“ আরেকটা অদ্ভুত কাকতালীয় ব্যাপার আমি অদিতির কথায় শ্যাম্পু চাওয়ার নাটক করে বেড়াচ্ছিলাম, এখন রাকাদি
নিজে এসে আমার হাতে শ্যাম্পুর একটা শিশি দিয়ে চলে গেল। “কুড়ি মিনিট। তৈরি হয়ে নাও। তবে উগ্র সাজ করে যেও না যাতে লোকে সন্দেহ করে।“ রাকাদি চলে গেল।
অদিতি আমার হাত থেকে শ্যাম্পুর শিশিটা কেড়ে নিয়ে বলল “চল শ্যাম্পু করিয়ে দিচ্ছি।“ আমি বিরক্তির সাথে বাঁধা দিতে যাচ্ছি দেখে প্রায় ধমকে উঠলো। “আহ। সময় কম।
ছেলেমানুষী করিস না। চল। মুখ বন্ধ রাখ। শুধু শুনে যা।“ দেখলাম আরও কয়েকজন ঘরের বাইরে বেড়িয়ে এসেছে। ওরাও বোধহয় বুঝতে পারছে না যে আমার মতন একটা
মেয়েকে কি করে পাঠাচ্ছে এই অভিযানে, যে বন্দুকটাও ভালো করে ধরতে শেখেনি। কল পাড়ে গিয়ে বুঝলাম ও হাতে রেজারটা নিয়ে এসেছে। ভালো করে পিঠে একবার বুলিয়ে
দিল। আমি নগ্ন হয়ে বসে স্নান শুরু করে দিয়েছি। ও আমার মাথায় শ্যাম্পু করে দিচ্ছে। হঠাত কাঁধের ওপর ঝাঁকুনি খেয়ে সম্বিত ফিরে পেলাম। “শুনছিস কি বলছি?” মাথা
নেড়ে বললাম “হ্যাঁ।“ ও বলল “মন দিয়ে শোন যা বলে যাচ্ছি। প্রশ্ন করিস না। অন্ধের মতন তাই করবি যা বলব।“
আমি কান খাড়া করে ওর কথা শুনে চললাম “শোন। হোটেলে ঢোকার পর তোকে বুঝতে হবে না, তোকে খুঁজতেও হবে না, কেউ না কেউ এসে তোর হ্যান্ড ব্যাগে একটা কাগজ
রেখে দিয়ে যাবে। আবার বলছি তোকে খুঁজতে হবে না কাউকে। সেটা করলেই তুই ফেঁসে যাবি। হ্যান্ড ব্যাগটা তোর ডান হাতে ঝুলিয়ে ক্যাজুয়ালি হাঁটবি। আর হ্যাঁ সেটার চেইনটা
খুলে রাখিস। ব্যস তাতেই হবে। আঠারো নম্বর ঘর ফার্স্ট ফ্লোরে। ওই হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে লিফটের পাশেই একটা অয়াশরুম আছে। যদি দেখিস লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে দাঁড়িয়ে
আছে তো কিছু ভাবে সময় নষ্ট করবি। জুতো ঠিক করবি, পাশে আয়না থাকলে একবার মুখ দেখে নিবি, মানে যে করেই হোক, লিফট যেন গ্রাউন্ড ফ্লোরের থেকে অনেক উপরে
থাকে। লিফট যখন থার্ড কি ফোর্থ ফ্লোরে তখন গিয়ে লিফটের সামনে দাঁড়াবি। আর খুব ক্যাজুয়ালি হঠাত বলবি এক মিনিটের জন্য তোকে অয়াশরুম যেতে হবে। কারোর কথা
শুনবি না। সোজা অয়াশরুমের দিকে চলে যাবি। মনে রাখিস তুই একটা মেয়ে। পাবলিক প্লেসে ওরা তোকে অয়াশ রুমে যেতে বাঁধা দিতে পারে না। গায়ে হাত দিতেও পারে না।
হয়ত দেবেও না। কিন্তু বলতে পারে যে আর তো দু মিনিট, ঘরে গিয়ে অয়াশরুম যেও ইত্যাদি। কিন্তু তুই ওদের সম্পূর্ণভাবে ইগনোর করে, আর্জ দেখিয়ে এক মিনিটের জন্য
অয়াশরুমে যাবি। গিয়ে কাগজটা পড়বি। কাগজ তোর ব্যাগেই থাকবে। আই রিপিট কে দিচ্ছে কখন দিচ্ছে এইসব নিয়ে তোর ভাবনার কোনও কারণ নেই। ওখানে যা লেখা থাকবে
সেই অনুযায়ী কাজ করবি। আবারও বলছি যদি মনে হয় যে পুরো ফেঁসে গেছিস। কিছু করবি না। যেমন চলছে তেমন চলতে দিবি। কাগজে যা লেখা আছে তার বাইরে যাবি না।
ওখানে তোকে গার্ড করার জন্য লোকের অভাব নেই। কিন্তু এইটা মনে রাখিস। চোর কে শুধু চুরি করার সময় বা চুরির জিনিসের সাথেই ধরা যায়। আচ্ছা এখন তোর প্রশ্নের উত্তর
দিচ্ছি। আজ তোর ওপর এদের ভাগ্য নির্ভর করছে। হয়ত ওই লোকটার সাথে তোকে শুতে হবে। শুতে হলে শুয়ে নিবি। এই একটাই কারণে আমি যেতে চাইছিলাম। কারণ শুনেছি
যে... হয়ত ওরা একা নয়।“ আমি বললাম “শুনেছিস মানে?” ও বলল “বললাম না প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করিস না। আজ হয়ত তোকে একটু ব্যাথা পেতে হবে। কিন্তু এটা না
হলে কিছু করা যেত না। ভণ্ডটাকে হাতে নাতে ধরা সম্ভব হত না। আচ্ছা পরের কথা শোন, সে একজনই হোক বা দুই জনই হোক, তুই ওদের সাথে পাঙ্গা নিয়ে কিছু করতে পারবি
না। তাই সেই চেষ্টাও করবি না। মাল লুট করা তোর টার্গেট নয়। ওদের সাথে শুয়ে বা কাগজে যেমন লেখা আছে তেমনটা অন্ধের মতন ফলো করে সুস্থ শরীরে বেড়িয়ে আসবি। ব্যস
তোর কাজ শেষ। টাকা হাতে না বেরোলে কি কৈফিয়ত দিবি সেটা কাগজেই লেখা থাকবে। আর যদি নিতান্তই না লেখা থাকে তো বলবি, আমার সর্বস্ব নিয়ে আমাকে ঘরের বাইরে
বের করে দেওয়া হয়েছে। মনে রাখিস অরূপদা আজ এক ঢিলে দুই পাখী মারবে। ওখানে অরূপদা চলে এসেছে ইতিমধ্যে। তুই আরও ঘণ্টা দুয়েক পরে গিয়ে পৌছাবি। খুব
ক্যাজুয়াল আর সেক্সি থাকবি যাতে কারোর তোর ওপর কোনও সন্দেহ না হয়।“ আমার স্নান করা শেষ। আমি অদিতির সাথে ঘরে ফিরে এলাম। প্রায় সবাই সবার ঘরের বাইরে
এসে দাঁড়িয়েছে। আজ আর সেই রকম শাড়ি নয়। ব্যাগ থেকে বের করে নিলাম আমার রেগুলার ড্রেস। একটা টাইট স্লিভলেস টপ, আর টাইট জিন্স। ডিওটা ব্যাগে ছিল। বগলে আর
ঊরুসন্ধিতে স্প্রে করে নিলাম। হালকা লিপস্টিক মেখে চুল ঠিক করে বেড়িয়ে এলাম। অদিতিই চুল আঁচড়ে দিয়েছিল। বেরনোর আগে ও আবার বলল “সব শুনেছিস?” মাথা
নাড়িয়ে বললাম “হ্যাঁ।“ ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল “চিন্তা করিস না। আমি তোর ঠিক পেছন পেছন আসছি। ক্যাজুয়াল থাকবি। “ আলিদা এসে বলল “তাড়াতাড়ি
চলো। অলরেডি লেট। অরূপদা আর এক ঘণ্টার মধ্যে ওখানে পৌছাবে বলেছে।“ আমি অদিতির দিকে তাকালাম কারণ ও একটু আগে বলেছিল যে অরূপদা আগেই পৌঁছে
গেছে। অদিতি চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিল যে যা হচ্ছে হতে দে। চেপে যা। আমি ক্যাজুয়াল মুখ করে তাড়াতাড়ি এগিয়ে চললাম। একটা সাদা রঙের বড় গাড়ি এসে থেমেছে
মাঠে। রাকাদি এসে আমাকে বলল “ওই হোটেল আমাদের জন্য লাকি ছিল। কিন্তু সীমার এইসব হওয়ার পর থেকে কেন জানি না মন বলছে খুব বিপদ হবে। সাবধানে থেকো।
অরূপদা যা বলবে সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। তাহলে কিছু হবে না। “ এর কোনও উত্তর হয় না। ও হ্যাঁ আমার ছোট ঝোলানো হ্যান্ডব্যাগটা আমি ডান হাতে নিয়ে
নিয়েছিলাম বেরনোর আগে।
আমি গাড়িতে চড়ে বসতেই গাড়ি ছেড়ে দিল। রাজু ড্রাইভারের সামনে এসে বসেছে। আমাকে কোনও ছোরা বা পিস্তল কিছুই দেয় নি ওরা। কারণ ওগুলো ব্যবহার করা যে আমার
দ্বারা হবে না সেটা ওরা ভালো ভাবেই জানে। উল্টে ধরা পড়লে হয়ত প্রাণটা বেঘোরে চলে যাবে। কি যে হবে। রাজু বলল “দিদি একটা কথা পরিষ্কার জানিয়ে রাখি। আমি
হোটেলের ভিতরে যেতে পারব না। তবে পালানোর চেষ্টা করবে না কারণ আগেই বলেছিলাম যে এজেন্ট আছে। সেক্ষেত্রে ধরা পড়লে তোমাকে শেষ করে দিতে বাধ্য হব।“ আমি
কোনও কথা না বলে ওর কথা শুনে যাচ্ছি। বললাম “বলে যাও।“ ও বলল “আর কিছু বলার নেই। মাল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে আমরা ছেড়ে দেব না।“ আমি হেঁসে
কাঁধে হাত রেখে বললাম “আর যদি মাল না নিয়ে পালিয়ে যাই?” ও বলল “সে যেতেই পারো। তবে আমার ওপর দায়িত্ব যে তুমি বাইরে বেড়িয়ে আসার পর যাতে কোনও
বিপদ না হয় সেটা লক্ষ্য রাখার। মাল না নিয়ে পালিয়ে গেলে, অরূপদা যা বলবে তাই করতে হবে। তোমাকে তো কিছুদিন পর ছেড়েই দিত। হয়ত কিছুই করবে না। তবে
সাবধানে থেকো। আর ওখানে ঢোকার আগেই পালিয়ে গেলে আমি তোমার পিছু নেব সেটা জানিয়ে রাখছি। কারণ তোমার ডিউটি মাল লুট করার। লুট না করতে পেরে পালিয়ে
গেলে অন্য কথা। জানি না অরূপদা কি বলবে।“ আমি বললাম “বারবার একই কথা বলতে হবে না। দেখাই যাক না যে কি করতে পারি।“ গাড়িটা একটা জায়গায় এসে
সাইড করা হল। রাজু পিছনে এসে কোনও কথা না বলে একটা মোটা রুমাল দিয়ে আমার হাত পিছনে বেঁধে দিল। আর চোখ দুটো বেঁধে দিল। বলল “কিছুই না। যাতে তুমি
জায়গা চিনতে না পারো তার জন্য এই ব্যবস্থা।“ হুম এইটুকু সতর্কতার জন্য ওদের দোষ দিতে পারি না। হাত যে খুব জোড়ে বেঁধেছে তা নয়। তবে নাড়ানো যাচ্ছে না। পিছনের
সিটে আমি শুয়ে আছি। কেউ কোনও কথা বলছে না। প্রায় দেড় ঘণ্টা কেটে গেল। জানি না ক্যাম্পে এখন কি হচ্ছে। হঠাত শুনলাম রাজু বলল “বা দিক করে রেখে দাও। আর
এগিও না।“ গাড়ি থামল। রাজু ঝট করে পিছনে এসে আমার হাত আর চোখের বাঁধন খুলে দিল। একটা অন্ধকার জায়গায় গাড়ি দাঁড় করানো আছে। সামনে চোখ পড়তেই
দেখলাম বিশাল শরীর নিয়ে সারা গায়ে ঝলমলে আলোর রঙ মেখে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিন হোটেল। হোটেলের সামনে আর ভেতরে বিভিন্ন নাম না জানা বড় বড় গাড়ি পার্ক করে
রাখা।