Thread Rating:
  • 19 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery গোপন কথা টি রবে না গোপনে ( পর্দাফাঁস ) by Daily Passenger
#30
27

আমি সত্যি একটা গবেট। ওরা যে যা বলছে সেটাকেই আমি ঠিক বলে মেনে নিচ্ছি। সত্যি তো, তাহলে কোনও মেয়েকে ওই ঘরের ভেতর কল গার্লের মতন পাঠানোর দরকারই বা

কি? এমনি যে কেউ গিয়ে ঘরে ঢুকে লুট করে নিতে পারে। আলিদা আমার মনের কথাই যেন লুফে নিয়ে বলল “বোকার মতন কথা বলবে না অদিতি। তাহলে যে কোনও ঘরে যে

কাউকে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা লুট করে নিতে পারি। আর যখন করবই তখন শুধু একটা ঘরে কেন। একের পর এক সব কটা ঘরে গিয়ে সবাইকে লুট করে নেব একই বারে। কেউ

কিছু করতে পারবে না কারণ লুট করার আগে ঘরে যারা আছে তাদের সবাইকে হাত পা মুখ বেঁধে ফেলে রাখব। এক দিনে একটা হোটেলর একসাথে দশটা ঘরে ডাকাতি করে

আমরা রেকর্ড গড়ব।“ ওর গলায় ব্যাঙ্গের সুরটা ভীষণ জোরালো হয়ে উঠেছে। আবার হো হো করে হেঁসে লুটিয়ে পড়ল আলিদা। অদিতির আঁতে ঘা লেগেছে। ও মুখ বুজে

অপমান সহ্য করে চলেছে। আলিদা বলে চলল “ যদি এতই সহজ হয়, তাহলে হোটেল ব্যবসাই উঠে যাবে। কোনও হোটেলে গিয়ে কোনও গেস্ট থাকবে কেন? তাদের

সিকিওরিটি কোথায়?” একটু থেমে বলল “আর সত্যি যদি এই ভাবে লুট হওয়ার পর কেউ হোটেলের নামে কমপ্লেন করে তো সেই হোটেলের নামে যা বদনাম হবে সেটা নিশ্চই

তোমার মতন বোকাকেও বুঝিয়ে বলতে হবে না। হোটেলের ম্যানেজমেন্টকে যে খেসারদ দিতে হবে আর পুলিশি ঝামেলাও পোহাতে হবে সেটাও নিশ্চই খুব সহজে অনুমেয়।

(একটু থেমে আবার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আলিদা বলল) একটা জিনিস বুঝে নাও, হোটেলগুলো, শুধু তোমাকে মাথার ওপর ছাদ, শোয়ার বিছানা, স্নানের জায়গা আর

খাবার দিচ্ছে বলে তোমার থেকে পয়সা নিচ্ছে না। আরও একটা জিনিস তোমাকে দিচ্ছে ওরা, যেটা বিলে লেখা থাকে না। যেটা সব জায়গার নিয়ম। সেটা হল সিকিওরিটি। আর

হোটেল যত বড় তার সিকিওরিটির বন্দবস্ত তত কড়া। আর সে বন্দুক দেখিয়েই লুট করি বা এখন যেমন ভাবে করছি সেইভাবেই লুট করি, এই পুরো ব্যাপারটাতে যে ভয়ানক রিস্ক

আছে সেটা তো বোঝো? তাই খুব বড় মাল হাতে লাগার সম্ভাবনা না থাকলে আমরা রিস্ক নেব কেন? আর তেমন শাঁসালো খদ্দেররা যে বড় বড় বিশ্বস্ত হোটেলেই উঠবে সেটাও

নিশ্চই তোমার মতন বোকাকে বলে দিতে হবে না।“ অদিতির মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম যে দাঁতে দাঁত চেপে সব অপমান গিলে নিচ্ছে। এতবার “বোকা” কথাটা শোনার

পর আমার মাথাও ঠিক থাকতো কিনা কে জানে। অদিতি শুধু একটাই কথা বলল “তাহলে এই অপরিচিত মেয়েগুলোই বা যায় কি করে ঘরে?”

আলিদা বলল “ওদের চেনা জানা এজেন্ট থাকে। কখনও সখনও হোটেলের বেয়ারাদের মাধ্যমে কন্ট্যাক্ট করে এইসব এজেন্টদের সাথে। এজেন্টরা গিয়ে দেখা করে কেমন মেয়ে

লাগবে ইত্যাদি সব পাকা করে। এজেন্টদের ঘরে নিয়ে আসার পারমিশন সেই কাস্টোমারই দেবে, নইলে এজেন্টও সেই ঘরে যেতে পারবে না। মনে রেখো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফোনে

এইসব কথা ওরা বলে না। কারণ কেউ যদি ওপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনে ফেলে বা কল রেকর্ড করে নেয় তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। পরের দিনের খবরের কাগজে এই খবর

ফলাও করে ছাপা হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বলে রাখি, এজেন্ট বাইরে গিয়েও এইসব কথা লিক করতে পারে। কিন্তু তখন এজেন্টের হাতে কোনও প্রমাণ নেই। তাই কিছু প্রমাণ হবে

না। খবরের কাগজ এসব জিনিস ছাপালে ওদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়ে যাবে। তোমাদের এত বুঝিয়ে বলছি যাতে তোমরা বুঝতে পারো যে এইসব কাজের জটিলতা কত

বেশী।“ একটা বিঁড়ি ধরিয়ে টান দিয়ে আলিদা বলে চলল “এজেন্ট গিয়ে কেমন মেয়ে লাগবে, কেমন বাজেট সব জেনে আসে। বাইরে গিয়ে মেয়ে ঠিক করে আসে। তারপর

আবার হোটেলে গিয়ে দেখা করে লোকটাকে জানাবে যে মেয়ে রেডি। টাইম ফিক্স হয়ত আগেই করা থাকে বা তখন করে আসে। মনে রেখো এইবারও লোকটার অনুমতি পেয়েই

এজেন্ট ওর ঘরে যাওয়ার সুযোগ পায়। আর যতবারই যাবে ততবারই হোটেলের খাতায় গেস্ট হিসাবে তাকে সাইন করতে হয়। আর রিসেপসনে রাখা সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ওর

ছবি রেকর্ড করে রাখে। অবশ্য এইসব বড় বড় হোটেলে সিসিটিভি ক্যামেরা সর্বত্রই থাকে। “ আরেকটা টান দিয়ে অদিতির বিঁড়িটাতে অগ্নি সংযোগ করে দিয়ে আলিদা বলে

চলল “অচেনা কোনও লোক হোটেলে ঢুকলে তার ব্যাগ ইত্যাদি সব ভালো করে চেক করা হয়। সুতরাং বন্দুক, ছুরি এইসব নিয়ে ঢোকার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। আমরা সহজ

কথায় বলে দি যে এত নম্বর ঘরে যেতে হবে। কিন্তু আরেকটু খোলসা করে বলতে গেলে বলতে হয় যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, বা বলা ভালো শতকরা ৯৯.৯৯% ক্ষেত্রে এই কাস্টমাররা

নিজেরা নিচে নেমে এসে বা নিজেদের কোনও বডি গার্ড থাকলে তাকে হোটেলের নিচে পাঠিয়ে মেয়েটাকে রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে যায়, অবশ্য এজেন্টদের উপস্থিতিতে।

যেহেতু গেস্ট নিজেই বা তারই কোনও লোক মেয়েটাকে রিসিভ করে নিল তাই তাকে সাইন করতে হয় না। এতে আমাদের থেকে এদের বেশী স্বার্থ। মানে মেয়েটা যত কম লোকের

মুখোমুখি হয় ততই ওদের সুবিধা। তবে যদি কোনও ক্যামেরায় মেয়েটার ছবি উঠে গিয়ে থাকে তো কিছু করার নেই। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা বলা অবান্তর যদিও, তবুও বলে

রাখছি, বড় বড় হোটেলের সিকিঅরিটিগুলোর কাছে ভালো ভালো ফায়ার আর্মস থাকে যেগুলো আমাদের থেকে অনেক বেশী আধুনিক। “ আধ খাওয়া বিঁড়িটা ছুঁড়ে ফেলে

দিয়ে বলে চলল “এর পর থেকে মেয়েটা একা হয়ে যায়। অনেক সময় শুনে থাকবে ভেতরে আমাদের চেনা লোক মিশে থাকে, কিন্তু সমস্যা হল যতই বিপদে পড়ি না কেন ওকে

কিছুতেই সামনে আসতে দেওয়া যাবে না। তাহলে হোটেলের বেসটাই আমাদের ধসে যাবে। সে যতটা পারবে আড়ালে থেকে আমাদের সাহায্য করে, কিন্তু পারতপক্ষে নিজে

সামনে আসে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে। মেয়েরা কাজ হয়ে যাওয়ার পর যখন পালায় তখন তাদের দেখেও না দেখার ভান করে মাত্র, বা তাদের এক্সিট প্ল্যানে হেল্প করে। তবে কোনও

গরবর না হলে এদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনও ভূমিকাই থাকে না।“ আরেকটু থেমে নিয়ে বলল “আমাদের বন্দুক হাতে ওখানে ঢোকার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আর যদিও

ঢুকতেও পারি তাহলেও আরেকটা সমস্যা আছে। “ একটু থেমে হঠাত পাশে রাখা দোনলা বুন্দুকটা তুলে নিয়ে ও অদিতির কপালের ওপর ঠেকিয়ে ধরল। অদিতি আর আমি

দুজনেই কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি। কিন্তু তৎক্ষণাৎ অদিতি দেখলাম স্বাভাবিক রিফ্লেক্সে এক মুহূর্তে ওর বন্দুকের নলের মাথাটা উপরে তুলে নিজের কপালের ওপর থেকে

সরিয়ে চেপে ধরেছে। আলিদার হাত শিথিল হতে ও নিজেও হাত সরিয়ে নিল বন্দুকের নলের ওপর থেকে। আলিদা হেঁসে বলল “তুমি এক্ষুনি যেটা করলে সেটাই তার উত্তর।

একটা মানুষ দুর্বল হলেও সে নিজের প্রান বাঁচানোর তাগিদে আর সাধারণ রিফ্লেক্সের বশে কি করতে পারে সেটা আগে থেকে অনুমান করা বেশ শক্ত। যদি ঝাঁপিয়ে পড়ে, বা

আচমকা পালিয়ে যায়, বা চাপাচাপিতে আচমকা গুলি বেড়িয়ে যায়, মানে কি হবে কেউ জানে না। সেক্ষেত্রে সবাই ধরা পড়ে যাবে পালানোর আগেই। এখন আমরা যেভাবে

কাজ করি তাতে মেয়েরা গাড়ি চড়ে পুরো সেফ ডিসটেন্সে পৌঁছানো অব্দি বোধহয় কেউ জানতে পারবে না যে বন্ধ ঘরের মধ্যে কেউ হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। নইলে

আমাদের কোনও ইচ্ছে নেই এই মেয়েগুলোকে দিয়ে এইসব নোংরা কাজ করানোর। “ অদিতি ভুরু কুঁচকে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টে। আলিদা আমাকে বলল

“তোমার বন্ধু কিন্তু ঠাট্টায় খুব রেগে গেছে। কিন্তু তোমাদের কোনও দোষ নেই। আমিও অরূপদাকে বলেছিলাম এরকম প্ল্যানের কথা। তখন অরূপদা আমাকে ফিল্ডে নিয়ে গিয়ে

যখন দেখালেন তখন বুঝতে পারলাম যে ব্যাপারটা যতটা সোজা ভাবতাম ততটা সোজা নয় মোটেই। আমরা যখন কোনও কাজ করি তখন সব কিছুর পেছনে নিশ্চই একটা

বাস্তবিক কারণ আছে সেটা জেনে রেখো। এমনি এমনি কিছুই করি না আমরা। বাড়তি কাজ মানেই বাড়তি ভুল হবার সম্ভাবনা আর বাড়তি ভুল মানেই আমাদের ক্ষেত্রে বাড়তি

রিস্ক।“ আলিদা উঠে পড়ছিল, অদিতি আলিদার দিকে তাকিয়ে বলল “উঠছ?” আলিদা বলল “হ্যাঁ শুধু তোমাদের পরিস্থিতির জটিলতা বোঝালেই চলবে। অনেক কাজ

আছে আমার।“ অদিতি বলল “ আমি মোটেও তোমার ওপর রাগ করি নি। কিন্তু ব্যাপারটা সত্যি এত সোজা নয় সেটা এখন বুঝতে পেরেছি। তাও বলছি আমাদের একটু বন্দুক

চালানো শিখিয়ে দিও।“ আলিদা হেঁসে তৎক্ষণাৎ হাক পাড়ল “রাজু”।

না হল না আমাদের দ্বারা। না অদিতি না আমি কেউ বন্দুক চালানো শিখতে পারলাম না। আমার হাত এত কাঁপছে যে বন্দুক স্থির ধরে রাখতে পারছি না। আর অদিতি আমার

থেকে একটু বেশী কেত নিয়ে বন্দুকটা তুলেছে বটে কিন্তু ওই ছোট জিনিসটাকেও সে ঠিক বাগে আনতে পারছে না। আমাদের চারপাশে দাঁড়ানো মেয়েগুলো আমাদের দেখে

হেঁসেই চলেছে। এত সহজ জিনিস আমরা করতে পারছি না দেখে ওদের মশকরা করার অন্ত নেই। রাকা অনেক বার ওদের চুপ করতে বলল। কিন্তু ওদের থামানোই যায় না। আর

এতে কনফিডেনস আরও নেমে যায়। অদিতি হাত থেকে বন্দুক রেখে বলল “আলি দা অন্য কিছু শেখাও। “ এটা তেইশ তারিখের বিকেলের ঘটনা। আলি দা আমাদের হাতে

ধারালো ছোরা ধরিয়ে দিল। আমি ছুরি ধরেছি, কিন্তু এইটা? অদিতিকে দেখে তাও কিছুটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে রপ্ত করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু না। কিছুই যে শিখতে পারলাম না

সেটা বেশ বুঝতে পেরেছি। অদিতি কে বললাম “কিছু শিখলি?” ও মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল না। একটু থেমে আবার ওকে বলতে বাধ্য হলাম “আচ্ছা? আমাদের এইসবের মধ্যে

যাবার কি কোনও দরকার আছে?” ও আমার প্রশ্নটাকে এড়িয়ে গিয়ে এমন একটা অবান্তর কথা বলল যে আমি তার মাথা মুণ্ডু কিছুই বুঝতে উঠতে পারলাম না, ও বলল “নাহ।

আজ আমার ওপর আক্রমণ হলে আমি নিজেকে বাঁচাতে পারব না। কিন্তু আক্রমণটা যদি একটু অন্য জায়গায়, অন্য পরিস্থিতিতে হয় তো এক হাত নেওয়া যেত।“ আমি

বললাম “কি সব আজে বাজে বলছিস? “ ওর হুঁশ ফিরতে বলল “দূর। ভয় পাচ্ছি বলে এসব বলছি। “ একটু থেমে বলল “ আমরা যেতে চাইলেই যে যেতে দেবে সেটা

তোকে কে বলেছে? কিন্তু মন কি বলছে জানিস? একবার না একবার আমাদের মধ্যে কাউকে যেতেই হবে গ্রিন হোটেলের ঘরে। কোলকাতায় স্টার হোটেলে হয়ত আমাদের যাবার

সুযোগ হবে না। তাই আলিদাকে জানিয়ে রাখলাম যে আমাদের দুজনের কারোরই যাবার কোনও আপত্তি নেই।“ একটু থেমে জিভ কেটে বলল “সরি, আমি শুধু আমার কথাই

বলেছি। তোর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ তোর নিজস্ব। তবে এখান থেকে বেরোতে না পারলে পালাতেও পারব না। কিন্তু সমস্যা একটাই।“ সমস্যাটা যে কি সেটা ওকে জিজ্ঞেস করার

আগেই ও আমাকে বলল “তুই এখানেই বসে থাক বা গিয়ে ওদের ট্রেনিং দেখে কিছু শিখে নে। আমি আসছি। আমার পেছন পেছন আসিস না। সব সময় এইভাবে চোরের মতন

ঘুর ঘুর করাটা ভালো দেখায় না।“ প্রায় সাত মিনিট পরে ও ফিরে এলো। আর তার কিছুক্ষণ পরে আলিদা আবার ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে এসে আমাদের পাশে বসে পড়ল। আলিদার

গলা এইবার বেশ গম্ভীর শোনালো। “ “এ” দিয়ে যে কেউ মারা যাবে সেটা তোমরা জানলে কি করে এইবার কি আমাকে বলবে? কারণ সেটা না জানলে কি করে তাকে রক্ষা

করব সেটাই ঠিক বুঝতে পারছি না। আর খুন এখানে হবে ...।“ অদিতি হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিয়েছে। চাপা গলায় বলল “আমার সাথে এসো। “ আমি আর আলিদা ওর

পেছন পেছন আমাদের ঘরে ফিরে এলাম। ও চারপাশটা একবার দেখে নিয়ে শাড়ির আঁচলের ফাঁক দিয়ে একটা চিরকুটের মতন কাগজ বের করে আলিদার হাতে ধরিয়ে দিল।

“এটা আমার হাতের লেখা না।“ আলিদা আর অদিতি দুজনেই একসাথে বলল। আমি কাগজটার উপর ঝুঁকে পরে দেখে নিলাম যে কি লেখা আছে, তবে মুখে বললাম না যে

এটা আমারও হাতের লেখা নয় কারণ সেটা বলা অবান্তর। “বাঙলায় লেখা ২২ এ “স” আর তেইশে “এ”” লেখা আছে কাগজটাতে। আলিদা কাগজতা নিজের ফতুয়ার

পকেটে পুড়ে দিয়ে বলল “এটা পেলে কোথায়?” অদিতি বলল “আমি পাই নি। ও পেয়েছে।“ আমি তো রীতিমত থতমত খেয়ে গেছি। আমি অদিতির মতন এরকম মুখের

উপর মিথ্যে কথা বলতে পারি না। আর নাটকও করতে পারি না। অদিতিই বলে দিল “ও একদিন রান্নায় হেল্প করতে গিয়েছিল। সেদিনই ওখানে পাশে কুঁড়িয়ে পেয়েছে। আমরা

ভেবেছিলাম এটা কোনও গোপন সংকেত তাই এর মানে উদ্ধার করার চেষ্টা করছিলাম। কাল সীমার খুন দেখে বুঝতে পারলাম যে এর অর্থ হল বাইশ তারিখে “স” দিয়ে কেউ

খুন হবে। যদিও তখন আমি বলেছি যে সীমা না হয়ে সুজাতাও হতে পারত, তবে এখন বলছি যে আমার ধারণা নামটা আগেই ঠিক করে জানানো ছিল খুনিকে। শুধু কাকে কবে

খুন করবে সেটাই এই চিরকুটে লিখে দেওয়া হয়েছে।“ আলিদা আরও গম্ভীর ভাবে বলল “তাহলে একথা সেদিন বল নি কেন?” অদিতি এক ফোঁটাও না ঘাবড়ে বলল

“সীমার মৃত্যুর আগে অব্দি আমাদের পালানোর ইচ্ছে ছিল। এখনও যে একেবারে নেই তেমনটা একবারও বলছি না। কিন্তু সীমাকে আমরা বাঁচিয়েছিলাম। ওর সাথে আমাদের

ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল। ওর সাথে যা হল সেটা আমাদের খুব গায়ে লেগে গেছে। এর আগে আমরা নিজেদেরই স্বার্থে যেখানে যা দেখতে পাচ্ছিলাম সে গুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা

করছিলাম। আর কিছুই না। আর তাছাড়া এটা যে সাংকেতিক কথা সেটা তো নিশ্চিত। ভেবেছিলাম এটাতে নিশ্চই কোনও সিরিয়স কিছু লেখা আছে। মানে উদ্ধার করতে পারলে

যদি আমাদের লাভ হয়। কিন্তু সরি, এটা জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।“ আলিদা ওর হাত চেপে ধরে বলল “তোমাদের কোনও দোষ আমি দেখি না। তোমরা জানো না এখানে

সবাই তোমাদের খুব ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছে। তোমরা চলে গেলে আমরা দুঃখই পাব। কিন্তু এটাও সত্যি আরও দুজন খুঁজে পেলেই তোমাদের সেফ কোথাও গিয়ে রেখে দিয়ে

আসব আমরা। এখন এইসব অযথা চেষ্টা করে নিজেদের বিপদ ডেকে এনো না। আর তোমাদের সরি হওয়ার কোনও কারণ নেই। যদি রুমির জায়গায় আমিও এই কাগজটা পেতাম

আমিও হয়ত এর কোনও মানে উদ্ধার করতে পারতাম না। লাফালাফি করতাম আর তাতে হয়ত খুনি আরও সতর্ক হয়ে যেত। সীমার মৃত্যু তাতে আটকানো যেত কি না সেটা বলা

অসম্ভব, হয়ত এত লাফালাফি সত্ত্বেও ওকে মরতে হত। আর তাছাড়া কি নিয়ে সতর্ক হতে হবে সেটাই তো বুঝতে পারতাম না। তোমরা আর এই নিয়ে কিছু ভেব না। অরূপদা

আসার পর ওকে সব কথা খুলে বলতে হবে।“ অদিতি ফস করে বলল “আগে যদিও বলেছি যে অরূপদাকে এখন জানালে ও যদি বাড়তি কিছু করে বসে তো সব গরবর হয়ে

যেতে পারে, মানে খুনি সতর্ক হয়ে যেতে পারে, কিন্তু রাতের দিকে যত এগোচ্ছি ততই যেন মনে হচ্ছে লিডারকে এই কথাটা না জানিয়ে বোধহয় আমরা খুব ভুল করছি।

অরূপদাকে পারলে এখনই ফোন করে জানিয়ে দাও।“ আলিদা হেঁসে বলল “তোমার কি মনে হয় যে তুমি বারণ করেছ বলে আমি অরূপদাকে জানাচ্ছি না? দূর পাগল। আমি

আগেই জানিয়ে দিতাম। কিন্তু নিয়ম হল ফিল্ডে যারা গেছে তারা নিজেরা অবস্থা বুঝে ফোন না করলে এখান থেকে ফোন করা হবে না। সবার সিকিওরিটির কথা ভেবে এই

ব্যবস্থা।“ অদিতি বলল “আজ রাতের জন্য একটা কিছু প্ল্যান করতেই হবে।“ সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। কিন্তু আজও আকাশে মেঘ থাকায় যেন একটু আগেই অন্ধকার হয়ে

গেল। আলিদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “আজও মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলে যে কি করব বুঝতে পারছি না। তবে একটা কিছু করতেই হবে। ভেবে দেখি দাঁড়াও।“

আলিদা ঘর থেকে বাইরে পাও ফেলেনি, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। খুব জোড়ে না হলেও জলের ফোঁটাগুলো বেশ বড় বড়। বুঝতে পারলাম হয়ত আর কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি নামবে।

মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলাম। এখানে ঘরের ভেতরগুলো অদ্ভুত রকমের গুমোট। নইলে বাইরে এত হাওয়া দিলে জানলা খোলা রাখলে ঘরের ভেতর মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা মুশকিল

হত। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে দেখেছি, মোমবাতির আলো কিছুটা কাঁপলেও কোনও মতে ঠিক জ্বলে থাকে। অনেক বার মনে হয়েছে যে এই বুঝি নিভে গেল, কিন্তু না শেষ পর্যন্ত ওরা

নেভে না। আলিদা ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতেই আমি ওকে বললাম “তোর মতন ক্যালাস মেয়ে আমি জীবনে দেখি নি। এত সব কথা বলার কি দরকার ছিল? আর অরূপদাকে

নিজের ডাকাতির প্ল্যান বোঝাতে গিয়ে আচ্ছাসে বোকা বনেছিস। ভালো খিল্লি উড়িয়েছে তোর।“ ও আমার কথায় কোনও পাত্তা না দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল অশ্লীল ভাবে

ঠ্যাঙের ওর ঠ্যাঙ তুলে। শাড়ির ফাঁক দিয়ে খাটো শাড়ির ভিতরে যে সব কিছু দেখা যাচ্ছে সে দিকে ওর কোনও হুঁশই নেই।

“আমার মন কি বলছে জানিস? আজকেই একটা কিছু হেস্ত নেস্ত হবে।“ অদিতির মুখে এই কথা শুনে আমার মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে গেল। বললাম “কিন্তু আলিদাকে এসব

বলে কি তুই ঠিক করেছিস? পরে যদি আমাদের সন্দেহ করে। আর এখন লোকটা পুরো পুরি হোশে আছে সেটা ভুলে যাস না। আগের দিন মহুয়া আর আমাদের দুজনের শরীরের

উত্তাপের মাঝে সেঁকতে সেঁকতে ওর হাল বেহাল হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আজ...” ও আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল “আহ, তুই না একটা ইয়ে। কিছু না বুঝে বড্ড বাজে বকিস।“

বললাম “মানে?” ও বলল “মানে অনেক কিছু। আপাতত এই যে, আমার ডাকাতির প্ল্যান ওর সামনে বলার কোনও প্রয়োজন ছিল না। ওটা যে ভীষণ ছেলেমানুষি আর

ইমপ্র্যাক্টিকাল একটা প্ল্যান সেটা বোঝার জন্য আলিদার অতগুলো জ্ঞ্যানের দরকার হয় না। যা বলেছি জেনে বুঝেই বলেছি। শুধু বুঝে নিলাম গ্রিন হোটেলের ভেতরে কে কে যেতে

পারে মেয়েদের সাথে আর পুরো প্রসেসটা কেমন হয়। একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হলাম যে অরূপদা ডিল করে আড়ালে থেকে। ওই এজেন্ট বা বেয়ারাটাই ডিল পাকা করে। আরেকটা

কথা বুঝতে পেরেছি, মানে অনুমান করেছি, সেটা তোর এখন না জানলেও চলবে। আচ্ছা, তাছাড়া আরেকটা জিনিস জেনে খুব নিশ্চিন্ত হলাম যে আলিদা চাইলেও এখন

অরূপদাকে এই কথাটা বলতে পারবে না। তবে সত্যি বলতে কি মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যে অরূপদা ব্যাপারটা জানুক, যে আলিদা আমি আর তুই ব্যাপারটা জেনে গেছি আর

ওকে আমরা কেউ সন্দেহ করছি না।“ ওকে বললাম “একটু খুলে বললে কি তোর খুব পেট ব্যথা হয়?” ও বিছানা থেকে তড়াক করে উঠে পড়ে বলল “অনেক কাজ বাকি

এখন। একটা কাজ কর, ঠিক কটা বাজে একবার জেনে এসে বলত।“ দেখলাম এই ভর সন্ধ্যা বেলায় ও আমাদের ব্যাগ খুলে রেজারটা বের করেছে। আমাকে বলল “হাঁ করে

দাঁড়িয়ে থাকিস না। গিয়ে দেখ কটা বাজে। ঠিক কটা বাজে সেটা জানতে হবে। লোকের আন্দাজে বলা সময় শুনে ফিরে আসিস না। রাকাদি কে খুঁজে বের কর। ওর হাতে ঘড়ি

আছে দেখেছি। (নিজের বা হাতটা মাথার উপর তুলে বগলের ওপর একবার হাত বুলিয়ে নিয়ে বলল) জায়গাগুলো নোংরা হয়ে যাচ্ছে এদের মতন। বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টির জলে আমি

ততক্ষণ শেভ করে নি। এখনও তেমন লোম গজায়নি। শুধু জলেই কাজ চলে যাবে।“ মেয়েটাকে নিয়ে সত্যি পারা যায় না। এখানে সবাই আন্দাজে মোটামুটি ঠিক ঠাক সময় বলে

দিতে পারে। কিন্তু অদিতির কথা মতন আমি বৃষ্টি মাথায় করে বেরলাম রাকাদির খোঁজে। বেড়িয়ে যাওয়ার আগে শুনলাম ও বলছে “আর শোন। আলিদা বা কেউ যদি জিজ্ঞেস

করে কোথায় যাচ্ছ বৃষ্টির মধ্যে তখন কি বলবি ভেবে রেখেছিস?” আমার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া অবস্থা দেখে ও বলল “শোন, ভালো করে বুঝে নে, সবার সামনে কথা বলবি

ভীষণ ক্যাজুয়াল। ঘর থেকে বেড়িয়ে প্রথমেই পাশের ঘরে যাবি। একদম স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করবি যে ওদের কাছে শ্যাম্পু আছে কি না। ওরা বলবে না। তুই তার পাশের ঘরে

গিয়ে একই কথা জিজ্ঞেস করবি। মেয়েগুলো তোর খিল্লি ওড়াতে পারে, জাস্ট ইগনোর করবি। আলিদা জিজ্ঞেস করলেও লাজুক লাজুক মুখে বলবি ওই একই কথা। ও হ্যাঁ,

রাজুকেও ওই একই কথা জিজ্ঞেস করবি যাবার আগে। এইবার ভালো করে শোন, রাকাদিকে দেখতে পেলে সাথে সাথে ওর সামনে গিয়ে হাজির হবি না। ওর সামনে তখনই যাবি

যখন ওর ধারে কাছে কেউ আছে। রাকাদির আগে ওদের কে জিজ্ঞেস করবি সেই একই কথা আর এমন ভাবে করবি যেন রাকাদিও সেই কথা শুনতে পায়। (বোধহয় আমার মুখে

বিরক্তি ফুটে উঠতে দেখে বলল) খুব বাজে আর বোকা বোকা লাগছে শুনতে, কিন্তু বোকাদের এখানে কেউ সন্দেহ করে না। তাই বোকা সেজে বোকা বোকা কথা বল। রাকাদিও

হয়ত না বলে দেবে। তখন হতাশ হয়ে একথা সেকথা বলার পর জিজ্ঞেস করবি যে এখন কটা বাজে গো? এখানে তো সময়ের কোনও জ্ঞানই থাকে না। ব্যস সরে পড়বি।“ আমি

আবার পা বাড়াতে যাচ্ছি আবার শুনলাম ওর আওয়াজ “কেউ যদি বলে যে এখানে কারোর কাছে শ্যাম্পু নেই, তাই খুঁজে কোনও লাভ নেই, তখন সাথে সাথে মুখটা বাংলার

পাঁচের মতন করে ওকে ইগনোর করে আবার পরের লোকটাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবি। এক কথায় সবাই কে বুঝিয়ে দিস যে তুই একটা ইয়ে...।“
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোপন কথা টি রবে না গোপনে ( পর্দাফাঁস ) by Daily Passenger - by ronylol - 18-02-2020, 11:12 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)