Thread Rating:
  • 19 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery গোপন কথা টি রবে না গোপনে ( পর্দাফাঁস ) by Daily Passenger
#29
26

আলি দা উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলার আগেই সবাই ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেল। আলিদা আমাদের বলল “এখানে ঘরের ও কান আছে। তোমরা এসো। আমরা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলব।“ অদিতি আমার হাতটা নিজের হাতে নিয়েই বেড়িয়েছে। আলিদা একটু আগে হাঁটছে। আমাকে বলল “একটাও কথা বলবি না।স্রেফ কালা সেজে থাকবি।“ আমরা আলিদার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। অদিতি বলল “ কেন ওদের সামনে কথাটা বললাম না জানো?” আলি দা একটু বিস্ময়ের স্বরে বলল “কেন? ওরা সবাই খুবই বিশ্বস্ত।“ অদিতি বলল “ সত্যি কি? কালকের ঘটনার পর আমি কিন্তু শুধু মাত্র রাজু, তোমাকে , আমাকে , রুমিকে আর অমলকে ছাড়া আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। “ আলিদাও দেখলাম ওর কথাটা উড়িয়ে দিল না। অদিতি বলে চলল “ বিশ্বাস না করার আরেকটা কারণ আছে। কিন্তু... সেটা এখন তোমাকে জানাতে পারব না। “ আলি দা বলল “বল কি বলতে চাইছ? “ ও বলল “এখন শুধু উত্তর চাই। আগে উত্তর দাও। তোমার কোনও প্রশ্ন থাকলে পরে করো। (একটু হেঁসে যোগ করল) কিন্তু তোমার প্রশ্ন শোনার পর সে প্রশ্নের উত্তর আমি নাও দিতে পারি। কারণ একটাই সোনা, আমি নবাগত। আমাদের সিকিওরিটি কেউ দেবে না। “ আলি দা বোধহয় ছাতি চিতিয়ে গলা চড়িয়ে বলতে যাচ্ছিল যে আমি দেব কিন্তু অদিতির মুখের দৃঢ় ভাব দেখে দমে গেল। আলিদা বলল “বেশ বল কি জানতে চাও। “ অদিতি বলল “জানতে তো চাই অনেক কিছু, কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না। “ তারপর একটু থেমে বলল “ আপাতাত একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। আর কথা দাও যে এই কথাটা তুমি কাউকেও বলতে পারবে না। অরূপদাকেও না। কারণ ও জানলে এখানে এসে একটা হুলুস্থুল বাঁধিয়ে দেবে। “ আলি দা বলল “সে আর বলতে। সীমা ছিল ওর একটা বুকের পাঁজর।“ অদিতি বলল “ যা করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। আর এখনই করতে হবে। কথা দিচ্ছ তাহলে?” ও বলল “ বলই না।“ অদিতি বলল “ অরূপ দার জীবন বিপন্ন।“ পরে আমাকে বলেছিল যে এটা না বললে নির্ঘাত ও গিয়ে অরূপদাকে এই কথাটা বলে দিত। আর সব ভণ্ডুল হয়ে যেত। অরূপদার স্বার্থের খাতিরেই আলিদা আজ চুপ থাকবে। কারণ ওর ধারণা ওই অরূপ যতদিন আছে তত দিন ওরা টিকে আছে। অদিতি বলে চলল “ তবে তারও আগে আরেকজনের জীবন বিপন্ন। আর আজই সে মারা যাবে। আর , (একটু থেমে বলল) তোমাকে আমি বিশ্বাস করতে পারি তো? তার নাম “এ” দিয়ে শুরু। “ ওর হাত ধরে বলল “তুমি আমাকে কথা দিয়েছ যে কাউকে এটা জানাবে না।“ আলিদা একটুও না ভেবে বলল “ তাই হবে। “এ” দিয়ে তো আমারও নাম শুরু। আর (কি যেন ভেবে বলল) আর... আর... তোমারও নাম শুরু।“ অদিতি বলল “ আমরা দুজন আজ তোমার আর রাজুর আর অমলের সাথে থাকব। আমাদের লাইফ সেফ। আজ কোনও খেলা নয়, শুধুই প্রতিক্ষা। আমার বন্ধুটা আমাকে বলেছিল যে এখান থেকে যাওয়ার আগে অন্তত একবার তোমাদের কিছু একটা দিয়ে যেতে চায়(এটা আমি রাজু আর অমলকে ওদের পেটের কথা বের করার জন্য বললেও ওর সামনে একবারও বলি নি। পুরো গুল মারল)। আমারও ইচ্ছে এখান থেকে যাবার আগে অরূপদাকে সেফ করে রেখে যাবো। “ আলিদা এসে আমাদের দুজনের কাঁধ খামচে ধরে বলল “ আমি কৃতজ্ঞ থাকবো সারা জীবন। কিন্তু অরূপদার জীবন যে বিপন্ন বা আজই “এ” দিয়ে নামের কেউ খুন হবে সেটা তোমরা জানলে কি করে? “ ওর ছোঁয়ায় কোনও জৈবিক কামনা পেলাম না, ছিল একটা আবেগ আর উত্তেজনা। মেয়েদের শরীর বোঝে। ও সত্যি ভালো। অদিতি বলল “সে প্রশ্নের উত্তর তুমি যথা সময়ে পাবে, এখন নয়। (একটু থেমে দৃঢ়তার সাথে বলল) তাহলে কি শেষ কথা? কাউকে এটা জানানো যাবে না। আমরা পাঁচ জন আজ এক ঘরে থাকবো। তুমি ভীষণ গোপনে গিয়ে যাদের যাদের নাম “এ” দিয়ে শুরু তাদের নামের লিস্ট বানিয়ে আমাদের দিয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, এই লিস্টটা যে আমাদের দিচ্ছ সেটা যেন কেউ না জানতে পারে। “ ওর এই অধিক সতর্কতা যে কারোর মনে সন্দেহের উদ্রেক করবে। আলিদা একটু চোখ তুলে তাকাতেই ও যেন কিছু না ভেবেই বলে দিল “অন্যথা হলে ঘোর সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি এখানে মরেই আছি। কিন্তু তোমাদের কমরেড মরে গেলে? “ আলিদা হাত তুলে বুঝিয়ে দিল যে ওকে আর কিছু বোঝাতে হবে না। ও চলে গেল। আমি বললাম “ওকে ফস করে এইসব না বললেই হচ্ছিল না। “ অদিতি বলল “উপায় নেই সোনা। লোকটা বড্ড ভালো। কাল ওর কোলে শুয়ে শুয়ে ওর সারা জীবনের গল্প শুনেছি। ও জাস্ট ফেঁসে গেছে। যদি কেউ লিডার হয় তো ওই একমাত্র যোগ্য। চল তোর গল্প শুনি। লাগানো ছাড়া আর কি কি করলি? একদম ডিটেলে বল। “ আমি ওকে সব কথা এক এক করে উগড়ে দিলাম। ও শুধু একটাই কথা বলল “সব শুনলি শুধু লোকটার নাম শুনলি না?” বললাম “কোন লোকটার?” বলল “হোটেল বয়টার। যাক সেসব পরে হবে। “ আমি ওকে বলতে যাচ্ছিলাম যে ও হোটেল বয় নয়, কিন্তু তার আগেই ও বলে উঠলো “ ও যেই হোক ওর নামটা, মানে অন্তত এরা যেটা জানে সেটা জেনে নেওয়া উচিত ছিল। বাট, ভেরি গুড ওয়ার্ক কমরেড।“ আমাদের কথা শেষ হল না। একটা মেয়েকে ধরাধরি করে আমাদের কর্মস্থলে নিয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা দুজনেই দৌড় মারলাম। মাঝে পথে একটা ছেলে এসে বলল “ অনেকগুল গুলি লেগেছে। “ ও আমাদের অনেক আগেই ছুটে চলে গেলো। অদিতি আমাকে বলল “ কাঁটা ছেঁড়া শেষ হওয়ার পর যদি মেয়েটা বেঁচে থাকে তো সবার আগে আমি কথা বলব ওর সাথে। হাই সিডেটিভ থাকবে। পরে কিছু মনে থাকবে না। চল। আগে বাঁচাই। আর ওকে বাঁচাতেই হবে। কারণ এই মেয়েটাও ওদের দলের সাথে কোলকাতায় গিয়েছিল সেদিন। দলছুট হল কেমন করে, কি দেখেছে, কে ওকে মেরেছে, আর বাকিরা কে কি হালে আছে সেসব কথা জানতে না পারলে চলবে না। একটা কথা ভুলিস না “আরতি”র নামও “এ” দিয়ে শুরু। “ আমার বুকটা ধড়াস করে উঠলো।

মেয়েটা ছয়টা গুলি খেয়েছে। গুলির রকমভেদ আমার জানা নেই। কিন্তু সারা শরীরের রক্ত বিষাক্ত হয়ে গেছে। ওকে সবার আড়ালে নিয়ে গিয়েই কাজ শুরু করলাম। এখন বাজে প্রায় নটা। যখন বিধ্বস্ত শরীরে বেরলাম তখন বাজে সাড়ে তিনটে। বড় বড় হাঁসপাতালে অনেক নার্স থাকে, অনেকে থাকে। কিন্তু এখানে শুধু আমরা দুজন। এদের কাউকে আমাদের সাথে না রাখার একটাই কারণ, কিছু না বুঝে যদি কিছু ছুঁয়ে ফেলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। ওখানে মুখের ঘাম মোছানোর লোক থাকে। এখানে নিজেদের নগ্ন ঘর্মাক্ত কাঁধের ওপর মুখ ঘষে ঘাম মুছে নিতে হয়। এটাই জীবন। অপারেশনের মাঝে আমার মনে হয়েছিল যে একে আর বাঁচানো যাবে না, কিন্তু অদ্ভুত ভাবে মেয়েটা বেঁচে গেল। অন্তত এখনকার মতন বেঁচে গেল। ওর এখন রক্তের প্রয়োজন, কিন্তু জানি না তার কি ব্যবস্থা করবে এরা। মেয়েটার নাম সঞ্চিতা। অদিতি ওকে জ্ঞানে নিয়ে আসার পর জিজ্ঞেস করল “কি করে হল এসব সঞ্চিতা।“ ও বলল “জানি না দিদি। আমাকে ছয়টা ছেলে ঘিরে ফেলেছিল। আমি সব দিক দেখেই গিয়েছিলাম। তবু। “ অদিতি বলল “ কোথায়?” ওর তখনও জ্ঞান আসেনি পুরো পুরি । কথাও জড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অদিতি ছাড়ার পাত্রী নয়।। ও বলল “ ফ্রি কলেজ স্ট্রিটে আমি একা গিয়েছিলাম। সব ঠিক ছিল। বেড়িয়ে আসার পর গাড়িতে উঠে দেখি সবাই ঘিরে ধরেছে। অরূপদাও নেই। কেউ নেই। ওদের কি খবর?” অদিতি সংক্ষেপে বলল “ওরা সবাই ভালো আছে। তোমার কথা বল।“ আমি ওকে বলতে যাচ্ছিলাম যে এইবার ওকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু অদিতি তার আগেই বলে বসল “এর আগে কি বেনিয়া পুকুর লেনে গেছিলে?” ওর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। মাথা নাড়িয়ে বোঝাল হ্যাঁ। ওর শরীর বাঁচিয়ে ওকে একটু জল খাইয়ে দিল অদিতি। ওর হাতে চকচক করছে একটা ইনজেকশন। কিন্তু সেটা নিজের শরীরের পিছনে ধরে রেখেছে। অদিতি গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো “সেখানে কি কোনও গোলমাল হয়েছিল?” ও সহজ বিশ্বাসে বলল “ ধরা পড়ে গেছিলাম। “ “ওখানে তো তোমরা একটা বাড়িতে গেছিলে তাই না? কিন্তু ধরা পড়লে কি করে?” ও মাথা নাড়িয়ে বলল “ না ওটা একটা হোটেল। আমরা দুজন গিয়েছিলাম ওখানে। বিনীতাদি আর আমি। আমাদের ওপর নির্দেশ ছিল এগারো নম্বর বাড়ির সামনে অপেক্ষা করতে। ওখানে এসে অরূপদা একটা হোটেল দেখিয়ে ঘরের নাম্বার বলে দেয়, এলিগ্যান্ট হোটেল। “ অদিতির চোখা প্রশ্ন “কত নম্বর ঘর? আর তোমরা দুজন গিয়েছিলে একসাথে? ” বলল “ ছয় নম্বর...বিনীতাদি আমাকে হোটেলের সামনে ছেড়ে অরূপদার সাথে চলে যায় স্টার হোটেলের দিকে। ” কিছু না জিজ্ঞেস করতেই মেয়েটা একটু দম নিয়ে খাবি খেতে খেতে বলল “ স্টার হোটেলে আমি আগেও গেছি। ওখানে ছাব্বিশ নম্বর ঘরেই যাওয়ার কথা ছিল বিনীতাদির। ওখানে থেকে খুব দূরে নয়। ওরা হেঁটেই গেছে।“ অদিতি বলল “বলে যাও। কিন্তু খুব সংক্ষেপে।“ সঞ্চিতা বলল “ সব ঠিক ছিল। ছেলেটাকে আমি কব্জা করে ফেলেছিলাম। ও যখন ঘুমাচ্ছিল তখন আমি উঠে পড়ি নিঃশব্দে। কিন্তু হঠাত খেয়াল হয় যে ছেলেটা নড়াচড়া করছে। তখনও ওর হাত পা বাঁধা হয় নি। ছেলেটার গায়ে ভালো জোর ছিল। আমি তাড়াতাড়ি রুমালে ক্লোরোফর্ম নিয়ে ওর দিকে যেতেই ও লাফিয়ে উঠে আমার হাত চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির সময় ও ডাকাত ডাকাত বলে চেঁচাচ্ছিল। কোনও মতে ওর তলপেটে লাথি মেরে ওকে মাটিতে ফেলে ওর টাকা ভর্তি ব্যাগটা উঠিয়ে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসি। “ অদিতি ওকে থামতে দেবে না পুরোটা না শুনে “তারপর?“ আবার আরেকটু জল খাওয়াতে হল ওকে। “তারপর, বেড়িয়ে এসে দেখি যে বেয়ারাটা আমাকে রুমে নিয়ে গিয়েছিল সে রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। অদ্ভুত লাগলো যে আমি ওর সামনে দিয়ে বেড়িয়ে লিফটের পথ ছেড়ে পেছনের সিঁড়ির দিকে দৌড় মারলাম কিন্তু লোকটা আমাকে আটকাল না। মনে হয় অরূপদার লোক, আমার সেফটির জন্য রেখেছিল। কিন্তু... ততক্ষণে লোকটার চিৎকার শুনে আসে পাশের ঘর থেকে লোক বেড়িয়ে এসেছে। আরও কয়েকজন বেয়ারা ছুটে এসেছে, সিঁড়ি দরজা খোলার আগে বুঝলাম অনেকে ওই ঘরে ঢুকে পড়েছে আর বুঝে গেছে যে কি হয়েছে। পুলিশ পুলিশ একটা শোরগোল পড়ে গেছে গোটা ফ্লোরে। দেখলাম দুজন আমার পেছনে ধাওয়া করেছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে পৌঁছে সদর গেটের দিকে না গিয়ে কিচেনের দরজা দিয়ে বেড়িয়ে এসে পাঁচিল টপকে সোজা রাস্তায়। কিছু দূরে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। গাড়িতে উঠেই বেড়িয়ে গেলাম।“ অদিতি বলল “ এরপর?” ও বলল “ পান্থশালায় গিয়ে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলাম। কথা ছিল টাকার ব্যাগ নিয়ে সোজা ফ্রি কলেজ স্ট্রিটের দিকে চলে আসব। ওখানে একটা বাড়িতে যেতে হবে। সব কাজ শেষ হতে কত সময় লাগে মোটামুটি একটা আন্দাজ আছে। তার আগেই অরূপদা ওখানে চলে আসবে বিনীতাদিকে নিয়ে। তারপর আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে যাবে ওখান থেকে। গা ঢাকা দেব আমরা।“ অদিতির পাল্টা প্রশ্ন “ফ্রি কলেজ স্ট্রিটের বাড়িটার বাইরে অরূপদাকে যে দেখতে পাওনি সেটা তো বললে। কিন্তু ড্রাইভার কোথায় ছিল?” ও মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল জানি না। “গাড়িতে এসে বসে দেখি ড্রাইভার নেই। কেউ নেই। খেয়াল হল ছয়টা ছেলে ঘিরে ধরেছে। যদিও গাড়ি থেকে সামান্য দূরে আছে। আমি তাড়াতাড়ি ড্রাইভারের সিটে বসে স্টার্ট নেবার আগেই জানলা দিয়ে গুলি চালিয়ে দিল। আমি জ্ঞান হারালাম। যখন চোখ খুললাম দেখি গাড়িটা অন্ধকার রাস্তার ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে। আগের ড্রাইভারটাই গাড়ি চালাচ্ছে। জানি না ঘটনার সময় ও কোথায় গিয়েছিল। কারণ কথা বলার মতন অবস্থায় ছিলাম না। কিছুদূরে গিয়ে আরেকটা গাড়িতে আমাকে চাপিয়ে দেয়। টাকার ব্যাগটা অরূপদা ওকেই রেখে দিতে বলেছে। পরের গাড়িটাই আমাকে এখানে নিয়ে আসে। “ অদিতির ভুরু কুঁচকে গেছে। বলল “ টাকার ব্যাগটা ছেলেগুলো তোমার জ্ঞান হারানর পর গাড়িতেই রেখে চলে গেল? (তারপর কি ভেবে বলল) সোনা অনেক যুদ্ধ করে এসেছ। এইবার ঘুমাও। আবার কাল কথা হবে। আমার এই বন্ধু তোমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পরের কয়েকদিন একদম ছোটাছুটি বা দস্যিপনা নয়।“ ওর হাতে ইঞ্জেকশন বিঁধিয়ে দিল। মেয়েটা আবার ঢলে পড়ল নেশাহীন জগতের কোনও এক কোণে। আমি কিছু বলার আগেই ও শ শ শ করে আমাকে থামিয়ে দিল। মেয়েটা যে বেঁচে গেছে, এই খবরটা বাইরে দিতেই যেন সবার মধ্যে নতুন জোশ ফিরে এলো। মেয়েটাকে ভীষণ আদর করে ধরাধরি করে ওর ঘরে নিয়ে যাওয়া হল।

আলিদাও দাঁড়িয়ে আছে ভিড়ের মধ্যে। আমাদের সাথে চোখা চুখি হতেই আমাদের আড়ালে চলে আসতে ইশারা করলো। আমরা সবার আলিঙ্গন বাঁচিয়ে সবার আন্তরিক ধন্যবাদ গায়ে মেখে ভিড় থেকে বেড়িয়ে এলাম। বেড়িয়ে আসার পর অদিতি একবার আমার দিকে আর তারপরেই একবার পিছন দিকে ফিরে বলল “এদের ছোঁয়া থেকে নিজেকে বাঁচাস না, অন্তত আজকের দিনে। একমাত্র এরাই সৎ। এদের শুভকামনাই আমাদের বাঁচতে সাহায্য করবে। এদের ভালোবাসা আমাদের কাছে বরদানের মত। কারণ কি জানিস? এদের কোনও স্বার্থ নেই।“ আলিদা আমাদের ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে নিজেই এগিয়ে এলো। চারপাশটা দেখে নিয়ে একটা কাগজ আমাদের হাতে গুঁজে দিয়ে যেন কিছুই হয় নি এইভাবে চলে গেলো। অদিতি চাপা স্বরে বলল “খাবার পরে এসো। সবাইকে বলে দিও যে সব ঠিক আছে। “ ঘরে ফিরে এসেই অদিতি কাগজটা মেলে ধরল। প্রায় বাইশটা মেয়ে আছে এখানে যাদের নামের আদ্যাক্ষর “এ” দিয়ে। অদিতি আমাকে বলল “তুই বস। “ আমি একটু ঘুরে আসছি। বেরনোর আগে কাগজটা আমার হাতে দিয়ে হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিল সেটা লুকিয়ে ফেলতে। এই কৌতূহল চাপা যায় না। আমিও অদিতির পেছন পেছন দৌড়াচ্ছি। হাঁপাতে হাঁপাতে ওর পাশে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ও চেঁচিয়ে একটা নাম ডেকে উঠলো। পাশে আলিদাও আছে। হাতে বন্দুক। আলিদার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই যে ও নিজেই এই নামের তালিকা আমাদের দিয়ে গেছে। একটা মেয়ে হাত তুলে বলল “হ্যাঁ দিদি।“ অদিতি হাত তুলে বলল “বেড়িয়ে এসো। “ পরের নামটা কিন্তু “এ” দিয়ে শুরু নয়। এরকম অনেক গুলো নাম ডেকে প্রায় ত্রিশটা মেয়েকে ও বাইরে বের করলো। “এ” “বি” “সি” সব মিশে গেছে। কিন্তু আমি, আলিদা আর অদিতি জানে কারা “এ”। পরে আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এতগুলো নাম তুই জানলি কি করে? ও বলেছিল “যেদিন প্রথম দিন দৌড়াতে গেছিলাম সেদিন যারা যারা পিছিয়ে পড়ছিল বা ফাঁকি মারছিল তাদের নাম ধরে রাকাদি ধমক দিচ্ছিল। তাই শুধু তাদের নামটাই মুখস্থ করে রেখেছি।“ আপাতত বর্তমানে ফিরে আসা যাক। ও আমাকে বলল “ স্যালাইন ইঞ্জেঙ্কস্ন দিয়ে দে। “ আমি তাই দিলাম। অদিতি বলে দিল যে “ তোমাদের এটা নেওয়া খুব দরকার ছিল। আগে ভাগে দিয়ে দিলাম। “ ওরা সবাই মাঠে ফিরে যাওয়ার পর আলিদা বলল “কি বুঝলে বলবে?” অদিতি বলল “একটা বিঁড়ি দেবে? সোনা?” আলিদা একটু লাজুক মুখে ওর দিকে একটা বিঁড়ি এগিয়ে দিল। অদিতি উত্তর দিল অনেকক্ষণ ভেবে। “একটু ভেবে দেখতে হচ্ছে। আগেই বলে নি কেন বলেছিলাম যে অরূপদার জীবন বিপন্ন। ক্যাম্পে যে কোনও চর আছে সেটা কালকের ঘটনার পর আমরা সবাই জানি। তার অর্থ আজ না হোক কাল ক্যাম্পের লিডারের ওপর যে হামলা করবে সেটা খুব সহজেই অনুমেয়।(ভালোই নাটক চালিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা, অদ্ভুত অকাট্য যুক্তি দিল।) শুরুটা করল একজন দুর্বল রুগ্ন মেয়েকে দিয়ে। সুজাতাকেও টার্গেট করতে পারত, কিন্তু হতে পারে ওর ঘরে হয়ত অন্য কেউ ছিল। ঠিক জানি না। অরূপদার সাথে এখন কেউ না কেউ তো থাকবেই। আর অরূপদা এখন নিশ্চই গা ঢাকা দিয়ে থাকবে। কালকের ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে যে খুনি আরও একজন সফট টার্গেট বাছবে আজ।(আলিদা বোধহয় আবার জানতে চাইত যে এই “এ” এর ব্যাপারটা আমরা জানলাম কি করে, কিন্তু তার আগেই অদিতি ওকে প্রায় পাত্তা না দিয়ে বলে উঠলো) আজ এই “এ” কে বাঁচাতেই হবে আমাদের।“ আমরা যা জেনেছি তারপর অরূপদাও টার্গেট এই কথাটা শুনে একটু হাঁসিই পেয়ে গেল। অদিতি কিছুক্ষণ শূন্য দৃষ্টিতে দূরে অনুশীলনরত মেয়েগুলোর দিকে শূন্য দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ চেয়ে থাকল। ওর মুখটা কেমন জানি বিষাদে ভরে গেল। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে আলিদার হাত আমার সামনেই চেপে ধরে বলল “একটা কথা দেবে? যদি কোনও দিন তেমন সুযোগ আসে তবে আমাকে একবার এইসব কাজে যাবার সুযোগ দেবে? চিন্তা করো না পালাব না। যাদের সাথে আছি তারা কতটা ঝুঁকি নেয় সেটা একবার নিজে অনুভব করতে চাই।“ আলিদা বলল “এসব জায়গায় যাদের পাঠানো হয় তারা সবাই বন্দুক চালাতে পারে। ছুরি চালাতে পারে। আত্মরক্ষা করতে সবাই পাকা। প্রয়োজন হলে অন্যের বুকে ছুরি বিঁধিয়ে দিতে বা কাউকে গুলি করে মেরে ফেলতেও তারা পিছপা হবে না। তবে নেহাত তেমন বিপদে পড়ে কোণঠাসা হয়ে না পড়লে অযথা খুন করা বারণ সবাইকে। ব্ল্যাকমানির ভয়ে কোনও একটা লোক মুখ বুজে থাকতে পারে, কিন্তু ঘরে ডেড বডি আবিষ্কার হলে সারা বাংলা সেই খবর জেনে যাবে। হুলস্থূল পড়ে যাবে।“

অদিতি তবুও বলল “আমরা বন্দুক চালাতে পারি না তো কি? সেদিন তুমি আমাদের সাথে যাবে।” ওর গলায় আন্তরিকতা ঝরে পড়ছে। আলিদা বলল “আমি যাবো। কিন্তু অদিতি, ঘরের মধ্যে সেই কাস্টোমারের সামনে একা তুমিই থাকবে। যদি তেমন কোনও বিপদ হয় তো তোমাকেই মোকাবিলা করতে হবে। “ অদিতি তবুও দমবার পাত্র নয়, “আলিদা এইগুলো বোকা বোকা যুক্তি। আমি যদি অরূপদার জায়গায় থাকতাম তাহলে কিন্তু অন্য রকম প্ল্যান করতাম।“ আলিদা একটু ভুরু কুঁচকে অদিতির দিকে তাকাল। অদিতি হেঁসে বলল “খুব সোজা একটা উপায় আছে। আমার ধারণা তাতে ঝুঁকি আরও কম। অন্তত সীমার মতন কেস হত না।“ “কি প্ল্যান করতে তুমি?” আলিদার গলায় অবজ্ঞার সুর। অদিতি বলল “ধরে নাও আমি মারামারি করতে পারি না। কিন্তু আমি গেছি ওরকম কোনও এক ঘরে কাস্টোমারের কাছে। অল্প কিছু আলাপের পর আমি কোনও একটা কিছুর অর্ডার দিতে বলব আমার কাস্টোমারকে, হয়ত কোনও পানীয় বা কোনও একটা খাবার। এইসব সময় ছেলেরা যে কোনও কিছুতেই আপত্তি করে না সেটা নিশ্চই তুমি জানো। আমি ঘরে যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘরের বাইরে গিয়ে হাজির হবে আমাদের দলের আরও দুজন। একটু সময় মেপে দরজায় টোকা। লোকটা ভাববে যে অর্ডার নিয়ে বেয়ারা এসেছে। দরজা খুলতেই দুজনে ঘরে ঢুকে কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে বশ করে তার সব জিনিস লুট করে নেবে। শেষে ছেলেটাকে বেঁধে রেখে অবশ করে চলে আসবে। ব্যস কেল্লা ফতে। ভেবে দেখ এক্ষেত্রে আমাকে ওই ছেলেটার সাথে শুতেও হল না, ছেলেটার দুর্বল মুহূর্তের জন্য অপেক্ষাও করতে হল না। যা হবে সোজাসুজি। আর এক জনের জায়গায় তিন জন থাকলে, আর তার মধ্যে যদি তোমার মত শক্তিশালী পুরুষ থাকে তাহলে রিস্ক অনেক কম।“ আলিদা হো হো করে হেঁসে উঠলো অদিতির কথা শুনে। আমার কিন্তু বেশ মনে ধরেছে অদিতির এই প্ল্যান। এই বেশ্যার মতন কারোর বিছানায় গিয়ে শোয়াটা আমার চোখেও খুব খারাপ। আলিদা মাথাটা দুপাশে নাড়তে নাড়তে অদিতি কে বলল “তুমি কি ভেবেছ এইসব আমরা কেউ কোনও দিনও ভেবে দেখি নি?তোমার মাথায় প্রথম এলো এই প্ল্যান?” আরও কিছুক্ষণ হো হো করে হেঁসে নিজেকে সামলে নিয়ে অদিতি কে বলল “তোমার প্ল্যানই যদি ধরে নেওয়া হয় তাহলে তার থেকেও সহজ উপায় আছে অনেকগুলো। বলি?” অদিতির এই তাচ্ছিল্য ভরা হাঁসিটা ঠিক পছন্দ হয় নি। একটু জেদের স্বরেই বলল “বলে ফেলো।“ আলিদা ওর মাথায় “একটু আদর করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “রাগ করো না। পুরো কথাটা আগে শুনে নাও। তোমার প্ল্যানের মত লুট করতে হলে কোনও একটা মেয়ে পাঠানোরই বা কি দরকার? দুজন ছেলে চলে যাবে, বা দুজন মেয়েও বন্দুক হাতে চলে যেতে পারে। দরজায় টোকা। লোকটা দরজা খুলবে। মাথায় বন্দুকের নল। ব্যস, বাকিটা তুমি যেমন বললে ঠিক তেমন হবে। কি ঠিক বলি নি?”
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোপন কথা টি রবে না গোপনে ( পর্দাফাঁস ) by Daily Passenger - by ronylol - 18-02-2020, 10:58 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)