18-02-2020, 10:35 PM
20
অরূপদার ঘরে ঢুকে দেখলাম অদিতি বিভিন্ন বই নেড়ে চেড়ে দেখার অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে। আমি ওকে পুরো রিপোর্ট পেশ করলাম। ও আমার কাঁধে হাত রেখে বলল “সাবাস
কমরেড। তিন দিন আগে এই কাণ্ড গ্রিন হোটেলের সেই আঠারো নম্বর ঘরে, আর তারই দুই তিন্ দিনের মধ্যে ওর অ্যাঁকাউন্টে বিরাশি লক্ষ্ টাকা কেউ জমা করবে, বা হয়ত
ইতিমধ্যে জমা করে দিয়েছে। আর এইবারও খুব সম্ভবত আহত লোকটা পুলিশের কাছে যাবার সুযোগ পায় নি বা কোনও কারণে যাবার সাহস করে নি। আর তার থেকেও
ইন্টারেস্টিং এই যে অরূপদার সেই হোটেলে যাবার সেদিন কোনও কথাই ছিল না। অন্তত আলিদা আর আরতির কথা শুনে সেরকমই মনে হয়েছিল। কিন্তু তবুও খবর পেয়ে সে
গিয়ে হাজির হয়। আর শুধু তাই নয় ঘটনার সময় সে হোটেলের ধারে কাছেই ছিল। কিন্তু রাত্রে সে ক্যাম্পে ফেরে নি আলি আর সীমার সাথে। খুব সম্ভবত ওদের আলাদা রওয়ানা
করে দিয়েছিল আর নিজে থেকে গেছিল ওখানেই। সেই রাতে যখন বিনীতাদির চিৎকার চলছিল রাজুর ঘরের ভেতরে তখন ও ছিল না এই ক্যাম্পে, আর সাক্ষী আমরা সবাই। ঠিক
আছে নে। এই ঘরটা একটু খুঁজে দেখা যাক। “ প্রায় দুপুরের লাঞ্চ হবার আগে পর্যন্ত খুঁজে আমরা আরও দুটো পাশ বই খুঁজে পেয়েছি। একটা ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আর
আরেকটা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার। অবশ্য এই দুটোই জয়েন্ট অ্যাঁকাউন্ট। অরূপ ঘোষাল আর বিনীতা ঘোষালের নামে। তিনটে পাশবুকেই ওদের যে অ্যাড্রেস আর ফোন নাম্বার
দেওয়া আছে সেগুল আমরা নোট করে নেওয়া আছে। সব কটা অ্যাড্রেস আর ফোন নাম্বারই মিলে যাচ্ছে। আমরা দুটো বই কাঁখে গুঁজে, ব্যাঙ্কের পাশ বই গুলো আবার যথাস্থানে
গুছিয়ে রেখে, সব ঠিক ঠাক করে পরিষ্কার করে রেখে আমাদের ঘরে ফিরে এলাম। আজ ডিম বরাদ্দ সবার জন্য। পথে একজন মেয়ের সাথে দেখা হওয়ায় ও বলল “ ওই দিকে
রজনী দি জিজ্ঞেস করেছে সেই দিনের পর থেকে আর তুমি রান্না করতে যাও নি কেন। ওঁত বড় হাতা খুন্তি নাড়তে গিয়ে কি হাতে ফসকা পড়ল না কি?” ও আওয়াজ দিয়ে হেঁসে
আমাদের পাশ কাটিয়ে স্নান করতে চলে গেল। অদিতি আসার আগে ওর প্যাডের আরও দুটো সাদা কাগজ আর একটা পেন নিয়ে এসেছিল নিজের সাথে। এইগুল ঘরে রেখে
যাওয়া চলে না। সমস্ত কাগজ আর কলম আর নোট করা পাতা গুলো ঘরের পিছন দরজা দিয়ে বেড়িয়ে বাইরে পাথরের তলায় চাপা দিয়ে এলাম সন্তর্পণে। অবশ্য বৃষ্টি নামলে কি
হবে বলা শক্ত কারণ বাইরে মেঘ করে আছে আর ভালো গুমোট হয়ে আছে। যাই হোক আমাদের ফিরে আসা অব্দি বৃষ্টি নামে নি। আজ দুপুরে দেখলাম অদিতিও আমার মতন
এদের খাবার খেতে শিখে গেছে। দুবার গিয়ে গিয়ে ভাত নিল। তবে প্রথম দিনের মতই আজও আমরা রাকার সাথে সবার খাওয়া হয়ে যাবার পর খেলাম। দূরে কোথাও থেকে লুটের
খবর এসেছে বলে একটা মেয়ে তৈরি হয়ে নাকি ইতিমধ্যে অভিসারে বেড়িয়ে পড়েছে দুগগা দুগগা বলে। রাকাই আমাদের খাবার সময় এই খবরটা দিল। রাজুও নাকি গেছে ওর
সাথে। অরূপদা আর বিনীতাদি নেই বলে আলিদার ওপরে কড়া নির্দেশ যে ওর বেস ছেড়ে যাওয়া চলবে না কিছুতেই। তাই ও চাইলেও মেয়েটার সাথে যেতে পারে নি। আমাদের
খাবার হয়ে গেলে রাকা আমাদের বলল “যাও তোমরা গিয়ে ভাত ঘুম দিয়ে নাও। এখন অব্দি তো তোমাদের হাতে তেমন কেস কিছু আসে নি। তবে তোমরা না থাকলে সুজাতা
বোধহয় বাঁচত না। এই মাসে একটা মৃত্যু অন্তত ঠেকানো গেল। “ আমি বললাম “ ওই পোকার কামড় খেয়েও মরতে পারে লোক জন। একটু সাবধানে থাকবে তোমরা সব।“
ও বলল “ থ্যাংকস ফর ইওর অ্যাডভাইস। “ আমরা ঘরে ফিরে এসে দুজনে বই খুলে বিছানার ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। অদিতি পেন আর কাগজ গুলো নিয়ে এসে
বইয়ের থাকে থাকে গুঁজে রেখেছে যাতে কেউ হঠাত করে চলে এলেই আমরা চট করে সে গুলো লুকিয়ে ফেলতে পারি। যা কিছু হিসাব করে বুঝলাম তার সারাংশ করে এই
দাঁড়ায় ঃ
১। ওদের দুজনের নামে তিনটে ব্যাঙ্ক অ্যাঁকাউন্ট আছে। (ব্যাংক অফ বরদা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক আর স্টেট ব্যাঙ্ক, এছারা আর থাকলে জানি না।)
২। ওদের পার্মানেন্ট ঠিকানা হিসাবে বেহালার একটা ফ্ল্যাটের ঠিকানা দেওয়া আছে।
৩। ওই বাড়ির কিনা সঠিক বুঝতে না পারা গেলেও, একটা ল্যান্ড লাইনের নাম্বার পাওয়া গেছে আর নাম্বারটা যে কলকাতার সেটা নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই।।
৪। দুটো হোটেলের খবর আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। (কলকাতার স্টার হোটেল (২৬ নম্বর ঘর), গ্রিন হোটেল (১৮ নম্বর ঘর)) সম্ভবত এই দুই হোটেলের এই দুই রুমে মেয়ে
পাঠানোর পর পরই এক একটা নতুন অ্যাঁকাউন্ট থেকে প্রথমে বিশাল বড় অঙ্কের টাকা এই অ্যাঁকাউন্ট গুলোতে ফেলা হয় আর তার পর থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত ভাবে নির্দিষ্ট
তারিখে একটা মাঝারি অঙ্কের টাকা জমা পড়ে ওই একই জায়গা থেকে। বাকি দুটো পাশবুকের এন্ট্রি মিলিয়েও একই জিনিস নজরে পড়েছে।
৫। এই মুহূর্তে সব মিলিয়ে প্রায় ষোল জন প্রতি মাসে নিয়মিত ভাবে এক লাখ, দুই লাখ বা তিন লাখ টাকা ফেলে থাকে। আমাদের আশঙ্কা সীমার লাস্ট লুটের পর ওদের
অ্যাঁকাউন্টে আরও বিরাশি লাখ টাকা যোগ হবে আর তার পর থেকে প্রতি মাসে সতের জনের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা পড়তে আরম্ভ করে দেবে। তবে শেষেরটা আমাদের যুক্তি
নির্ভর অনুমান। অনেক সময় ব্ল্যাক মেলের টাকা একবারেও মিটিয়ে দেওয়া যায়। ঠিক জানি না।
৬। তিনটে অ্যাঁকাউন্ট মিলিয়ে এই মুহূর্তে ওদের আর্থিক পরিমাণ হল তেইশ কোটি টাকা। (মোটামুটি , সাড়ে ছয় কোটি, নয় কোটি , সাড়ে সাত কোটি টাকা + আরও বিরাশি লাখ
যোগ হবে সাড়ে ছয় কোটির সাথে)
৭। ব্যাঙ্ক অফ বরদা আর ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের অ্যাঁকাউন্ট থেকে লাস্ট সাত মাসে কোনও টাকা ওঠানো হয় নি।
কিন্তু স্টেট ব্যাঙ্কের অ্যাঁকাউন্ট থেকে দুই মাস আগে সাতান্ন লাখ টাকা পে করা হয়েছিল চেকে কোনও কন্সট্রাক্সান কোম্পানি কে যাদের কোম্পানির নামের আদ্যাক্ষর “এ এ”।
এটা কিছুটা আন্দাজ, কারণ পাশ বুকে পেয়ির নাম খুব সাংকেতিক ভাবে লেখা থাকে। তবে এ এ কনস্ট্রাক্সনস কথাটা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
আর আগের মাসে ওই একই কোম্পানিকে আরও বারো লাখ টাকা চেকে পে করা হয়েছে।
এ ছাড়া আগের মাসে একটা অটো মোবাইলসের দোকানকে চেক কেটে সাড়ে নয় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এগুলো ছাড়া আছে মামুলি দুই তিনটে (কয়েক হাজার টাকার
ব্যাপার বলে মামুলি বললাম) ডিমান্ড ড্রাফ্*ট কোনও কলেজের নামে।
খাতায় নোট করতে করতে আমি অদিতি কে বললাম “বাপরে বাপ এই টাকাটা ঢোকার পর প্রায় চব্বিশ কোটি টাকার মালিক এরা। এত টাকা নিয়ে করবে কি?” ও বলল “
ওই যে কোথাও বাড়ি বানাচ্ছে। কোথাও বড় গাড়ি কিনছে। আর এরপর হয়ত বাকি টাকা জমিয়ে জমিয়ে সুদ গুনবে। খুব সম্ভবত ওদের একটা ছেলে বা মেয়ে আছে। যে বাইরে,
সম্ভবত কোলকাতায় কোনও একটা কলেজে পড়ে। সেখানে মাঝে মাঝে ফি ভরতে এই ডিম্যান্ড ড্রাফ্*ট। “ এই জিনিসটা অবশ্য ইতিমধ্যে আমিও বুঝতে পেরেছি।
৮। ওই হোটেলের রুম বয় কে? যে যে দিন ডাকাতি হয় সেই সেই দিন কি একই লোক থাকে?
৯। সংকেতের বাকি দুটো লাইনের মানেই বা কি?
আমরা উঠে যাচ্ছিলাম, কিন্তু ও শেষ মুহূর্তে আরেকটা লাইন লিখে দিল,
১০। এখানে ওর চর কে কে আছে?
আমি ওকে প্রশ্নটা করার আগেই ও আগ বাড়িয়ে বলে দিল “ সোনা, এত টাকার নয় ছয়। যদি লুট করা টাকা থেকেও কিছু সরিয়ে নিয়ে নিজেদের হাত খরচ চালিয়ে থাকে
তাতেও আমি খুব একটা আশ্চর্য হব না। যদিও আলিদার কথা অনুযায়ী ওদের হিসাবে প্রায় কোনও গড়মিল হয় না, তবু আমার বিশ্বাস বাইরে আর ভিতরে দুই জায়গাতেই
অরূপদা আর বিনীতাদির একজন করে অন্তত বিশ্বস্ত গুপ্তচর লোকানো থাকবে। এরা ব্লাইন্ড খেলার লোক নয়। “ সেইদিন সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি হওয়াতে নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগেই
ওদের ট্রেনিং ভাঙতে বাধ্য হল। শুনলাম রান্নাতেও নাকি ব্যাঘাত পড়েছে। আমি বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে কাগজটা বাইরে থেকে নিয়ে এলাম। তাতে আমি আরেকটা লাইন যোগ
করলাম,
১১। রত্নাদি কোথায়? ও কেন মায়া আর রমার সামনে অমন সন্ত্রস্ত হয়ে ছিল? (আমি অদিতিকে সব কথা খুলে বললাম রত্নাদির ব্যাপারে। এতদিন আমরা কেউ কাউকে বলিনি যে
আমাদের কি করে ধরে আনা হয়েছে। ডাক্তার যে আমার অসাড় অবস্থার সুযোগ নিয়ে আমাকে রেপ করেছে সেটা আগের দিনই ও শুনেছিল, যদিও অরূপদা সেটা মানতে চায় নি
সেদিন। ওকেও এরকম দু একজন মিলে ধরে এনেছে। তবে তাদের এখানে ক্যাম্পে দেখা যায়। রত্নাদির মতন ওরা কেউ পুরো পুরি গায়েব হয়ে যায় নি। )
অরূপদার ঘরে ঢুকে দেখলাম অদিতি বিভিন্ন বই নেড়ে চেড়ে দেখার অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে। আমি ওকে পুরো রিপোর্ট পেশ করলাম। ও আমার কাঁধে হাত রেখে বলল “সাবাস
কমরেড। তিন দিন আগে এই কাণ্ড গ্রিন হোটেলের সেই আঠারো নম্বর ঘরে, আর তারই দুই তিন্ দিনের মধ্যে ওর অ্যাঁকাউন্টে বিরাশি লক্ষ্ টাকা কেউ জমা করবে, বা হয়ত
ইতিমধ্যে জমা করে দিয়েছে। আর এইবারও খুব সম্ভবত আহত লোকটা পুলিশের কাছে যাবার সুযোগ পায় নি বা কোনও কারণে যাবার সাহস করে নি। আর তার থেকেও
ইন্টারেস্টিং এই যে অরূপদার সেই হোটেলে যাবার সেদিন কোনও কথাই ছিল না। অন্তত আলিদা আর আরতির কথা শুনে সেরকমই মনে হয়েছিল। কিন্তু তবুও খবর পেয়ে সে
গিয়ে হাজির হয়। আর শুধু তাই নয় ঘটনার সময় সে হোটেলের ধারে কাছেই ছিল। কিন্তু রাত্রে সে ক্যাম্পে ফেরে নি আলি আর সীমার সাথে। খুব সম্ভবত ওদের আলাদা রওয়ানা
করে দিয়েছিল আর নিজে থেকে গেছিল ওখানেই। সেই রাতে যখন বিনীতাদির চিৎকার চলছিল রাজুর ঘরের ভেতরে তখন ও ছিল না এই ক্যাম্পে, আর সাক্ষী আমরা সবাই। ঠিক
আছে নে। এই ঘরটা একটু খুঁজে দেখা যাক। “ প্রায় দুপুরের লাঞ্চ হবার আগে পর্যন্ত খুঁজে আমরা আরও দুটো পাশ বই খুঁজে পেয়েছি। একটা ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আর
আরেকটা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার। অবশ্য এই দুটোই জয়েন্ট অ্যাঁকাউন্ট। অরূপ ঘোষাল আর বিনীতা ঘোষালের নামে। তিনটে পাশবুকেই ওদের যে অ্যাড্রেস আর ফোন নাম্বার
দেওয়া আছে সেগুল আমরা নোট করে নেওয়া আছে। সব কটা অ্যাড্রেস আর ফোন নাম্বারই মিলে যাচ্ছে। আমরা দুটো বই কাঁখে গুঁজে, ব্যাঙ্কের পাশ বই গুলো আবার যথাস্থানে
গুছিয়ে রেখে, সব ঠিক ঠাক করে পরিষ্কার করে রেখে আমাদের ঘরে ফিরে এলাম। আজ ডিম বরাদ্দ সবার জন্য। পথে একজন মেয়ের সাথে দেখা হওয়ায় ও বলল “ ওই দিকে
রজনী দি জিজ্ঞেস করেছে সেই দিনের পর থেকে আর তুমি রান্না করতে যাও নি কেন। ওঁত বড় হাতা খুন্তি নাড়তে গিয়ে কি হাতে ফসকা পড়ল না কি?” ও আওয়াজ দিয়ে হেঁসে
আমাদের পাশ কাটিয়ে স্নান করতে চলে গেল। অদিতি আসার আগে ওর প্যাডের আরও দুটো সাদা কাগজ আর একটা পেন নিয়ে এসেছিল নিজের সাথে। এইগুল ঘরে রেখে
যাওয়া চলে না। সমস্ত কাগজ আর কলম আর নোট করা পাতা গুলো ঘরের পিছন দরজা দিয়ে বেড়িয়ে বাইরে পাথরের তলায় চাপা দিয়ে এলাম সন্তর্পণে। অবশ্য বৃষ্টি নামলে কি
হবে বলা শক্ত কারণ বাইরে মেঘ করে আছে আর ভালো গুমোট হয়ে আছে। যাই হোক আমাদের ফিরে আসা অব্দি বৃষ্টি নামে নি। আজ দুপুরে দেখলাম অদিতিও আমার মতন
এদের খাবার খেতে শিখে গেছে। দুবার গিয়ে গিয়ে ভাত নিল। তবে প্রথম দিনের মতই আজও আমরা রাকার সাথে সবার খাওয়া হয়ে যাবার পর খেলাম। দূরে কোথাও থেকে লুটের
খবর এসেছে বলে একটা মেয়ে তৈরি হয়ে নাকি ইতিমধ্যে অভিসারে বেড়িয়ে পড়েছে দুগগা দুগগা বলে। রাকাই আমাদের খাবার সময় এই খবরটা দিল। রাজুও নাকি গেছে ওর
সাথে। অরূপদা আর বিনীতাদি নেই বলে আলিদার ওপরে কড়া নির্দেশ যে ওর বেস ছেড়ে যাওয়া চলবে না কিছুতেই। তাই ও চাইলেও মেয়েটার সাথে যেতে পারে নি। আমাদের
খাবার হয়ে গেলে রাকা আমাদের বলল “যাও তোমরা গিয়ে ভাত ঘুম দিয়ে নাও। এখন অব্দি তো তোমাদের হাতে তেমন কেস কিছু আসে নি। তবে তোমরা না থাকলে সুজাতা
বোধহয় বাঁচত না। এই মাসে একটা মৃত্যু অন্তত ঠেকানো গেল। “ আমি বললাম “ ওই পোকার কামড় খেয়েও মরতে পারে লোক জন। একটু সাবধানে থাকবে তোমরা সব।“
ও বলল “ থ্যাংকস ফর ইওর অ্যাডভাইস। “ আমরা ঘরে ফিরে এসে দুজনে বই খুলে বিছানার ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। অদিতি পেন আর কাগজ গুলো নিয়ে এসে
বইয়ের থাকে থাকে গুঁজে রেখেছে যাতে কেউ হঠাত করে চলে এলেই আমরা চট করে সে গুলো লুকিয়ে ফেলতে পারি। যা কিছু হিসাব করে বুঝলাম তার সারাংশ করে এই
দাঁড়ায় ঃ
১। ওদের দুজনের নামে তিনটে ব্যাঙ্ক অ্যাঁকাউন্ট আছে। (ব্যাংক অফ বরদা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক আর স্টেট ব্যাঙ্ক, এছারা আর থাকলে জানি না।)
২। ওদের পার্মানেন্ট ঠিকানা হিসাবে বেহালার একটা ফ্ল্যাটের ঠিকানা দেওয়া আছে।
৩। ওই বাড়ির কিনা সঠিক বুঝতে না পারা গেলেও, একটা ল্যান্ড লাইনের নাম্বার পাওয়া গেছে আর নাম্বারটা যে কলকাতার সেটা নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই।।
৪। দুটো হোটেলের খবর আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। (কলকাতার স্টার হোটেল (২৬ নম্বর ঘর), গ্রিন হোটেল (১৮ নম্বর ঘর)) সম্ভবত এই দুই হোটেলের এই দুই রুমে মেয়ে
পাঠানোর পর পরই এক একটা নতুন অ্যাঁকাউন্ট থেকে প্রথমে বিশাল বড় অঙ্কের টাকা এই অ্যাঁকাউন্ট গুলোতে ফেলা হয় আর তার পর থেকে প্রতি মাসে নিয়মিত ভাবে নির্দিষ্ট
তারিখে একটা মাঝারি অঙ্কের টাকা জমা পড়ে ওই একই জায়গা থেকে। বাকি দুটো পাশবুকের এন্ট্রি মিলিয়েও একই জিনিস নজরে পড়েছে।
৫। এই মুহূর্তে সব মিলিয়ে প্রায় ষোল জন প্রতি মাসে নিয়মিত ভাবে এক লাখ, দুই লাখ বা তিন লাখ টাকা ফেলে থাকে। আমাদের আশঙ্কা সীমার লাস্ট লুটের পর ওদের
অ্যাঁকাউন্টে আরও বিরাশি লাখ টাকা যোগ হবে আর তার পর থেকে প্রতি মাসে সতের জনের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা পড়তে আরম্ভ করে দেবে। তবে শেষেরটা আমাদের যুক্তি
নির্ভর অনুমান। অনেক সময় ব্ল্যাক মেলের টাকা একবারেও মিটিয়ে দেওয়া যায়। ঠিক জানি না।
৬। তিনটে অ্যাঁকাউন্ট মিলিয়ে এই মুহূর্তে ওদের আর্থিক পরিমাণ হল তেইশ কোটি টাকা। (মোটামুটি , সাড়ে ছয় কোটি, নয় কোটি , সাড়ে সাত কোটি টাকা + আরও বিরাশি লাখ
যোগ হবে সাড়ে ছয় কোটির সাথে)
৭। ব্যাঙ্ক অফ বরদা আর ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের অ্যাঁকাউন্ট থেকে লাস্ট সাত মাসে কোনও টাকা ওঠানো হয় নি।
কিন্তু স্টেট ব্যাঙ্কের অ্যাঁকাউন্ট থেকে দুই মাস আগে সাতান্ন লাখ টাকা পে করা হয়েছিল চেকে কোনও কন্সট্রাক্সান কোম্পানি কে যাদের কোম্পানির নামের আদ্যাক্ষর “এ এ”।
এটা কিছুটা আন্দাজ, কারণ পাশ বুকে পেয়ির নাম খুব সাংকেতিক ভাবে লেখা থাকে। তবে এ এ কনস্ট্রাক্সনস কথাটা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
আর আগের মাসে ওই একই কোম্পানিকে আরও বারো লাখ টাকা চেকে পে করা হয়েছে।
এ ছাড়া আগের মাসে একটা অটো মোবাইলসের দোকানকে চেক কেটে সাড়ে নয় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এগুলো ছাড়া আছে মামুলি দুই তিনটে (কয়েক হাজার টাকার
ব্যাপার বলে মামুলি বললাম) ডিমান্ড ড্রাফ্*ট কোনও কলেজের নামে।
খাতায় নোট করতে করতে আমি অদিতি কে বললাম “বাপরে বাপ এই টাকাটা ঢোকার পর প্রায় চব্বিশ কোটি টাকার মালিক এরা। এত টাকা নিয়ে করবে কি?” ও বলল “
ওই যে কোথাও বাড়ি বানাচ্ছে। কোথাও বড় গাড়ি কিনছে। আর এরপর হয়ত বাকি টাকা জমিয়ে জমিয়ে সুদ গুনবে। খুব সম্ভবত ওদের একটা ছেলে বা মেয়ে আছে। যে বাইরে,
সম্ভবত কোলকাতায় কোনও একটা কলেজে পড়ে। সেখানে মাঝে মাঝে ফি ভরতে এই ডিম্যান্ড ড্রাফ্*ট। “ এই জিনিসটা অবশ্য ইতিমধ্যে আমিও বুঝতে পেরেছি।
৮। ওই হোটেলের রুম বয় কে? যে যে দিন ডাকাতি হয় সেই সেই দিন কি একই লোক থাকে?
৯। সংকেতের বাকি দুটো লাইনের মানেই বা কি?
আমরা উঠে যাচ্ছিলাম, কিন্তু ও শেষ মুহূর্তে আরেকটা লাইন লিখে দিল,
১০। এখানে ওর চর কে কে আছে?
আমি ওকে প্রশ্নটা করার আগেই ও আগ বাড়িয়ে বলে দিল “ সোনা, এত টাকার নয় ছয়। যদি লুট করা টাকা থেকেও কিছু সরিয়ে নিয়ে নিজেদের হাত খরচ চালিয়ে থাকে
তাতেও আমি খুব একটা আশ্চর্য হব না। যদিও আলিদার কথা অনুযায়ী ওদের হিসাবে প্রায় কোনও গড়মিল হয় না, তবু আমার বিশ্বাস বাইরে আর ভিতরে দুই জায়গাতেই
অরূপদা আর বিনীতাদির একজন করে অন্তত বিশ্বস্ত গুপ্তচর লোকানো থাকবে। এরা ব্লাইন্ড খেলার লোক নয়। “ সেইদিন সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি হওয়াতে নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগেই
ওদের ট্রেনিং ভাঙতে বাধ্য হল। শুনলাম রান্নাতেও নাকি ব্যাঘাত পড়েছে। আমি বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে কাগজটা বাইরে থেকে নিয়ে এলাম। তাতে আমি আরেকটা লাইন যোগ
করলাম,
১১। রত্নাদি কোথায়? ও কেন মায়া আর রমার সামনে অমন সন্ত্রস্ত হয়ে ছিল? (আমি অদিতিকে সব কথা খুলে বললাম রত্নাদির ব্যাপারে। এতদিন আমরা কেউ কাউকে বলিনি যে
আমাদের কি করে ধরে আনা হয়েছে। ডাক্তার যে আমার অসাড় অবস্থার সুযোগ নিয়ে আমাকে রেপ করেছে সেটা আগের দিনই ও শুনেছিল, যদিও অরূপদা সেটা মানতে চায় নি
সেদিন। ওকেও এরকম দু একজন মিলে ধরে এনেছে। তবে তাদের এখানে ক্যাম্পে দেখা যায়। রত্নাদির মতন ওরা কেউ পুরো পুরি গায়েব হয়ে যায় নি। )