18-02-2020, 10:18 PM
11
না আমি বিফল হই নি মোটেই। লেখা উদ্ধার করা গেল। আরও পুরোটা। আমার “হয়ে গেছে “ আওয়াজ টা পেয়েই ও ভেতরে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার পিঠের উপর। লেখা কিছুটা আবিস্কার হয়েছে ঠিকই কিন্তু সত্যি বলতে কি কিছুই আবিস্কার হয় নি। লেখা গুলো এখানে ছেপে দিলাম।
1. 73 jl s (k) f-23 (a 36) 66l
2. 128 ajcb (k) f-2 (a 29) 19l
3. 11 bpnd (k) f-G (a-55) 35l (?)
4. 12 fss-3 cross—(k) f-3 (a-41) 19l
(3-4)
5. bob-ac-(12230??jesus resurrection in PL(how many pl))-dep-82l
6. -S(22)
7. -A(23)
আমি বললাম “আমার হাতে যা এসেছে সেটা এই।“ ও অনেকক্ষণ ধরে কাগজ গুলো দেখে বলল “জানালা মানে গবাক্ষ। তুই এই লেখা ফুটিয়ে তোলার সাথে সাথে নিশ্চই ধাঁধা শলভ করাও শিখেছিস? তো লেগে পড়।“ আমি বললাম “শালা একটা লাইনেরও মানে বুঝতে পারছি না। কি করব। আর, না, আমি ওসব শিখিনি।“ ও যেন তেঁতে উঠলো, “শালা শিখিসনি তো মাটি ঘাঁটতে গেলি কেন। কি ভেবেছিলিস? আমাদের অরূপদা বাঙলায় আদ্যান্ত লিখে রেখে দিয়ে যাবে যাতে আমার আর তোর মতন গান্ডু সেটা একবারে পেনসিল ঘষে সব বুঝে উদ্ধার করে দেবে?” আমি এমনিতে ডানপিটে হলেও একটু নরম স্বভাবের, হঠাত করে এতগুলো ধমক খেয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছি সত্যি একটু যদি ধাঁধা শিখে রাখা যেত তাহলে মঙ্গল হত। আমি চুপ করে ফুটে ওঠা লেখা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে ও এসে আমার খোলা ঘাড়ে হাত রেখে বলল “ রাগ করিস না। আমিও তোর মতই ফেঁসে গেছি। চল আরেকবার পড়ে দেখি যদি কিছু বের করতে পারি।“ প্রায় দশ মিনিট ধরে তাকিয়ে থেকে আমি বললাম “কিছুই বুঝতে পারছি না তবে অনেক গুলো জায়গায় ব্র্যাকেটের মধ্যে “কে” দেওয়া আছে। ওটা কি “কোলকাতা”! মনে হচ্ছে... কলকাতা হলে খারাপ গেস নয়। কারণ যা বুঝলাম সবাই প্রায় ট্রেন ধরবে। আর ডাকাতি যদি হয় তবে কলকাতা ছাড়া আর কোথায় এত বড় হাত মারবে? “ অদিতি ফিস ফিস করে চিন্তিত স্বরে বলল “ কলকাতা ছাড়া যে কোথাও বড় হাত মারতে পারবে না তেমন কোনও কথা নেই যদিও, কিন্তু কলকাতা?” অদিতি যেন হঠাত উত্তেজিত হয়ে পড়েছে, আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বলল “ইয়েস ইয়েস ইয়েস। তুই কি পড়াশুনা ছাড়া কিছুই করিস নি? আরে আমি তো শুধু ওই “কে” টা বুঝতে পারছিলাম না বলেই আঁটকে ছিলাম। এখন জলের মতন পরিষ্কার। “ আমি ঠোঁট থেকে ওর ঠোঁটের স্বাদ মুছতে মুছতে বললাম “ না আমি কলকাতায় থাকি কিন্তু খুব ভালো চিনি না।“ ও আমার কাঁধ দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলল “ আরে আমারও অনেক আগে বোঝা উচিত ছিল, কিন্তু বুঝিনি। দ্বিতীয় লাইনটা দেখ। এ যে সি , জগদীশ বোস রোড। এবং সেটা কলকাতায়। একশো আঠাশ নম্বর বাড়িতে ডাকাতি বা লুট। সব কটাতে এফ রয়েছে। আমি ভাবছিলাম সেটা ফ্ল্যাট নাম্বার, যদি সেটা সত্যি ওই ভাবে ব্যবহার করে থাকে। এখন মনে হচ্ছে যে হয় ফ্ল্যাট নাম্বার বা ফ্লোর নাম্বার। “ আমি বললাম “ জায়গায় জায়গায় “এ” লেখার মানে কি? আর ওই “এল”?” ও বলল “মনে হচ্ছে যদি সাধারণ ব্যাপারটা ধরে নেওয়া যায় তাহলে কোথায়, কত নম্বর ফ্লোর, কে থাকবে আর কত টাকা আন্দাজ দখল করতে পারে সে নিয়েই ওদের ভাবনা। “ এ কথাটা তো আগে ভেবে দেখিনি। এই দু তিনদিনে এরা শুধু ছেলের বয়স বা স্বাস্থ্য, কত টাকা সেখানে আছে, আর কোথায়, সেটা নিয়েই (অবশ্য কোথায় বলতে হোটেল বা জায়গার নাম ছাড়া আমাদের কিছুই বলে নি) আমাদের গল্প শুনিয়েছে। আমি বললাম “এ মানে হল এইজ, মানে বয়স?” ও আমার গালে হাত বুলিয়ে বলল “ ইয়েস মাই লেডি লাভ। আর “এল” মানে লাখ। ভুল হতে পারে। তবে আপাতত সেটাই বিশ্বাস করতে হবে। কারন সকালে রাকা বলেছিল ওর সামনা সামনি যুদ্ধে যাচ্ছে। আর আজ ওদের বিশাল বড় দিন।“ আমি বললাম “ তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াল? “ প্রথমেই ধাক্কা খেয়ে থেমে যেতে হল। ও আমাকে বলল “তুই না একটা ইয়ে। জে এল। মানে হল জেমস লং আর পরের এস টা বাদ দিও না সোনা , সেটা হল সরণী, অর্থাৎ জেমস লং সরণী তে , এবং যেটা কোলকাতায়, সেখানে তিয়াত্তর নম্বর বাড়ির, (একটু থেমে বলল) ফ্লোর এক্ষেত্রে হওয়া মুশকিল কারণ ওই চত্বরে অত তলার বাড়ি এখন অন্তত নেই, আর তাই ফ্ল্যাট নাম্বার ধরে নিচ্ছি, তেইশ নম্বর ফ্ল্যাটে পরের ডাকাতি। বয়স ছত্রিশ, সম্ভবত পুরুষ, আর এল মানে যদি লাখ হয় তো সেখান থেকে ছেষট্টি লাখ লোটার প্ল্যান নিয়ে গেছে।“ ও বলে চলল “ পরেরটা আচার্য জগদীশ বোসের ওপর। বাড়ির নাম্বার একশ আঠাশ, তবে, এটা অবশ্য ফ্ল্যাট বা ফ্লোর দুই হতে পারে। ধরে নিচ্ছি ২ নম্বর ফ্লোর।মক্কেলের বয়স ঊনত্রিশ। আর সেখান থেকে উনিশ লাখ টাকা পাবে। পরের টা অবশ্য আমিও বুঝতে পারছি না।“ আমরা অনেকক্ষণ বাকি লাইনগুলোর দিকে তাকিয়ে হাল ছেড়ে উঠে পড়লাম। তবে ততক্ষণে আমাদের দুজনের মাথাতেই সংকেতগুলো ছাপা হয়ে গেছে। মাত্র দুই লাইনের মানে হয়ত উদ্ধার করতে পেরেছি। কিন্তু মাথার ভেতরে নিরবে অর্থহীন সংক্ষিপ্ত অক্ষর গুলো থেকে মানে বের করার প্রবল চেষ্টা চালিয়ে চলেছি। আমি হেঁসে বললাম “পি এন ডি মানে পোঁদ নয় তো?” অদিতি আমাকে বলল “সেটা হলে চাপ কম হত। চল দেখি বাইরে কি হচ্ছে। চল।“ কথায় বলে যেদিন ভগবান তোমার দিকে দাঁড়িয়ে আছেন সেদিন সব কিছু সোজা হয়ে যায়। আজ আমাদের সাথে তাই হল।
ট্রেনিং তখনও চলছে। অদিতি আমাকে বলল “ওই দিকে দেখেছিস?” ওর বাকি কথাটা শেষ হল না। আরও চার জন একটা কাটা পাঁঠার মতন ছটফট করতে থাকা মেয়েকে নিয়ে এলো। ট্রেনিং করতে গিয়ে কিসের ওপর পা পড়েছে। প্রথমে ওরা খেয়াল করে নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কিছুর একটা থেকে শরীরে বিষ ঢুকে গেছে। কলকাতা বা বড় হাঁসপাতাল হলে অনেক বড় বিভাগ থাকে এর জন্য। কিন্তু আমি আমার জ্ঞান অনুযায়ী ওষুধ আগের দিনই আনিয়ে রেখেছিলাম। বিছার কামড় খুব সম্ভবত। কেডস খুলে খালি পায়ে দৌড়াবার ফল। তবে ওষুধ একই। এর থেকে ভালো ওষুধ আমার জানা নেই, আর আমার সেই বিভাগে বেশী পড়াশুনাও নেই। তবে কাজ দিয়েছিল। একটা ইনজেকশন। অনেকক্ষণ পরে সে চাঙ্গা, যদিও রেস্টে। চারপাশে আমাদের জয় জয় কার। আমরা কেডস ছাড়া দৌড়াতে বারণ করে দিলাম। তবে তেমন বিছা হলে এই শস্তা কেডসে কিছু হবে বলে মনে হয় না। বিছা বা যাই হোক না কেন সেই ব্যাপারটা সারার পর আবার আমরা গেলাম অদিতির আগে দেখানো জায়গার দিকে। কেউ আমাদের দিকে কোনও লক্ষ্যই করছে না। রাকা (দি) ছিল কিন্তু সেও না। ওদের থেকে বেশীদূর যাওয়া ঠিক হবে না মনে করেই ফিরে এসে রাকা কেই জিজ্ঞাসা করলাম “ আচ্ছা ওখানে কি দীঘি আছে। আমাদের দুজনেরই সাঁতারের খুব শখ। “ ও একবার ওই দিকে তাকিয়ে বলল “পুকুর ওটা। সোনা মা আমাদের, ওখানে যেও না। সাপে কাটলে আর দেখতে হবে না।“ ওর কথা শেষ হল না, অদিতি আমার হাতটা চেপে ধরল। সরে যাওয়ার পর বলল “ বি পি এন ডি। বেনিয়া পুকুর । কলকাতাতেই আছে। পনড। হল পুকুর। ইচ্ছা করে “ও” টা বাদ দিয়ে দিয়েছে যাতে সাধারণ লোক বুঝতে না পারে। আই মীন হাতে কাগজটা পড়লেও যাতে একটু সময় নষ্ট হয়। “ সত্যি তো বুঝে ফেলা উচিৎ ছিল। “এগারো নম্বরে গিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে কাউকে লুটবে আর তার বয়স পঞ্চান্ন, আর শুধু তাই নয়, সে বিশাল বড় টাকার মালিক কারণ তার থেকে পয়ত্রিশ লাখ লুটবে এরা। “
আমার উত্তেজনা বেড়ে গেছে। আমি বললাম “ আর এফ এস এস? “ অদিতি বলল “জলের মতন সোজা। ওখানে থিয়েটার আর সিনেমা দেখতে যেতাম। ফ্রি কলেজ স্ট্রিট। ক্রসটা বোধহয় ক্রসিং। কত নাম্বার ক্রসিয়ে গিয়ে ওই বারো নম্বরের বাড়িটা পাবে তার সংকেত দেওয়া আছে। বাকি টা আর মুখে বলার দরকার নেই। কিন্তু তার পরের লাইনগুলো সত্যি ধোঁয়া। বড্ড সাংকেতিক হয়ে গেছে ওগুলো।“ উফফ এই বাজারে জেসাসের পুনর্জন্ম। ভগবান। আরেকটু তাকাও আমাদের দিকে। বুদ্ধি তো একেবারে তলানি তে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু আমরা হাল ছাড়লাম না। ভগবান আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন ঠিকই কিন্তু আরও কিছুক্ষণ পর। তবে তাতেও পুরো রহস্যের সমাধান হল না। আমি আমাদের ঘরের সামনে বসে বাসে বাকি লাইন কটার যত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি এমন সময় দেখলাম দুটো ইয়া বড় বড় ট্রাক এসে দাঁড়াল। এতক্ষন খেয়াল করিনি। এখন দেখলাম আলি রান্নার জায়গা থেকে ছুটতে ছুটতে ওই ট্রাকের দিকে এগিয়ে গেলো। ট্রাকের ড্রাইভারদের সাথে ও অনেকক্ষণ কথা বলল। ওদের হাত থেকে কাগজ নিয়ে কিছুক্ষণ পরীক্ষা করে দেখে আমাদের দিকে তাকাল। আমরাও ওই দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। হাতের ইশারায় আমাদের ডাক দিতেই আমরা অরূপদার ঘরের দিকে হাঁটা দিলাম। পথে অদিতি আমাকে ফিস ফিস করে বলল “ তিন আর চারের দুপাশে যে ব্র্যাকেট দিয়ে রেখেছে তার একটা মানে আমি বুঝতে পেরেছি। এই দুটো জায়গার দূরত্ব আহামুরি কিছু বেশী নয়। হয়ত একই দল গিয়ে ওই দুটো জায়গা লুট করবে।“ এই নিয়ে আর কথা বলা হল না। কারণ দুটো ড্রাইভার আর রাজুকে নিয়ে আলি এসে হাজির হয়েছে অরূপদার ঘরে। চারটে বিশাল বড় বড় লিস্ট আমাদের হাতে থামিয়ে দিয়ে রাজুকে নিয়ে চলে গেল মালের তদারকি করতে। ট্রেনিং করা ছেড়ে অনেক গুলো মেয়েও দৌড়ে ট্রাকের কাছে গিয়ে জড় হয়েছে মাল নামানোর জন্য। বুঝলাম এদের পয়সা করির ভালোই আমদানি হয়েছে শেষ কিছু দিনে। কারণ লাখ লাখ টাকার আনাজ পাতি, সব্জি, চাল, দাল, মাছ, মাংস, ডিম, মোমবাতি, আটা, লুস মশলাপাতি খরিদ করা হয়েছে। আর তার সাথে প্রচুর নতুন বন্দুক আর গুলি আর বোমার আমদানি করা হয়েছে। সাথে মেয়েদের কিছু পোশাকও এসেছে। সব মিলিয়ে বিল দিয়েছে প্রায় ছাপ্পান্ন লাখ টাকার। মেয়েদের ইন্সট্রাক্সান দিয়ে আলি আবার ফিরে এসেছে। অদিতি দেখলাম আমারই মতন অঙ্কে কাঁচা। কড় গুনে গুনে যোগ করতে হচ্ছে আমাদের দুজনকে। একটা পেন ছিল টেবিলে সেটা দিয়েই টিক কেটে কেটে যোগ গুলো মেলালাম। মেয়েরা আমাদের থেকে গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়া অব্দি জিনিস নামাচ্ছে না ট্রাক থেকে। আমাদের হিসাব মেলানোর পর লিস্ট চারটে নিয়ে গেলাম ট্রাক দুটোর দিকে। আলি আর অমল (এই প্রথম ছেলেটা কে দেখলাম, মানে দেখেছি আগেই, কিন্তু এই যে অমল সেটা এখন জানতে পারলাম) একটা ট্রাকে উঠে গেল। রাজু একটা মেয়েকে নিয়ে অন্যটায় উঠে পড়ল। আমি লিস্ট পড়তে শুরু করতে যাচ্ছি হঠাত একজন ড্রাইভার আমাকে থামিয়ে আলি কে হাত দেখিয়ে বলল “ আসল জিনিসটাই তো দি নি।“ ওর কথায় হিন্দি হিন্দি একটা টান আছে। পাঞ্জাবি তুলে নিজের পায়জামার কোমরের কাছ থেকে গোঁজা একটা জিনিস বার করে কপালে ঠেকিয়ে আলির দিকে উঁচিয়ে ধরল। আমি রিভলবার শুধু পুলিশদের কোমরেই গোঁজা অবস্থায় দেখেছি, জীবনে কোনও দিন হাতে নিয়ে দেখিনি, আর এই বিষয়েও আমার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। এখানে আসার পর অবশ্য দেখেছি কয়েকজনের হাতে। তবে এটা মনে হল একদম সেই ফিল্মি মার্কা সাহেবি পিস্তল। “এটার টাকা লাগবে না। এটা বেগমের কাছ থেকে সেলামি। লোডেড। কিন্তু আরও গুলি লাগলে পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। এটার ম্যাগাজিন ভর্তি। আসাম বর্ডার পার হয়ে এসেছে। অনেকগুলো এসেছে। লাগলে বলবেন। এত শস্তায় এ জিনিস আর কোথাও পাবেন না এই বলে দিলাম।“ মনে হল পুরো দেশটাই আগুনের গোলার ওপর বসে আছে।
না আমি বিফল হই নি মোটেই। লেখা উদ্ধার করা গেল। আরও পুরোটা। আমার “হয়ে গেছে “ আওয়াজ টা পেয়েই ও ভেতরে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার পিঠের উপর। লেখা কিছুটা আবিস্কার হয়েছে ঠিকই কিন্তু সত্যি বলতে কি কিছুই আবিস্কার হয় নি। লেখা গুলো এখানে ছেপে দিলাম।
1. 73 jl s (k) f-23 (a 36) 66l
2. 128 ajcb (k) f-2 (a 29) 19l
3. 11 bpnd (k) f-G (a-55) 35l (?)
4. 12 fss-3 cross—(k) f-3 (a-41) 19l
(3-4)
5. bob-ac-(12230??jesus resurrection in PL(how many pl))-dep-82l
6. -S(22)
7. -A(23)
আমি বললাম “আমার হাতে যা এসেছে সেটা এই।“ ও অনেকক্ষণ ধরে কাগজ গুলো দেখে বলল “জানালা মানে গবাক্ষ। তুই এই লেখা ফুটিয়ে তোলার সাথে সাথে নিশ্চই ধাঁধা শলভ করাও শিখেছিস? তো লেগে পড়।“ আমি বললাম “শালা একটা লাইনেরও মানে বুঝতে পারছি না। কি করব। আর, না, আমি ওসব শিখিনি।“ ও যেন তেঁতে উঠলো, “শালা শিখিসনি তো মাটি ঘাঁটতে গেলি কেন। কি ভেবেছিলিস? আমাদের অরূপদা বাঙলায় আদ্যান্ত লিখে রেখে দিয়ে যাবে যাতে আমার আর তোর মতন গান্ডু সেটা একবারে পেনসিল ঘষে সব বুঝে উদ্ধার করে দেবে?” আমি এমনিতে ডানপিটে হলেও একটু নরম স্বভাবের, হঠাত করে এতগুলো ধমক খেয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছি সত্যি একটু যদি ধাঁধা শিখে রাখা যেত তাহলে মঙ্গল হত। আমি চুপ করে ফুটে ওঠা লেখা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে ও এসে আমার খোলা ঘাড়ে হাত রেখে বলল “ রাগ করিস না। আমিও তোর মতই ফেঁসে গেছি। চল আরেকবার পড়ে দেখি যদি কিছু বের করতে পারি।“ প্রায় দশ মিনিট ধরে তাকিয়ে থেকে আমি বললাম “কিছুই বুঝতে পারছি না তবে অনেক গুলো জায়গায় ব্র্যাকেটের মধ্যে “কে” দেওয়া আছে। ওটা কি “কোলকাতা”! মনে হচ্ছে... কলকাতা হলে খারাপ গেস নয়। কারণ যা বুঝলাম সবাই প্রায় ট্রেন ধরবে। আর ডাকাতি যদি হয় তবে কলকাতা ছাড়া আর কোথায় এত বড় হাত মারবে? “ অদিতি ফিস ফিস করে চিন্তিত স্বরে বলল “ কলকাতা ছাড়া যে কোথাও বড় হাত মারতে পারবে না তেমন কোনও কথা নেই যদিও, কিন্তু কলকাতা?” অদিতি যেন হঠাত উত্তেজিত হয়ে পড়েছে, আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বলল “ইয়েস ইয়েস ইয়েস। তুই কি পড়াশুনা ছাড়া কিছুই করিস নি? আরে আমি তো শুধু ওই “কে” টা বুঝতে পারছিলাম না বলেই আঁটকে ছিলাম। এখন জলের মতন পরিষ্কার। “ আমি ঠোঁট থেকে ওর ঠোঁটের স্বাদ মুছতে মুছতে বললাম “ না আমি কলকাতায় থাকি কিন্তু খুব ভালো চিনি না।“ ও আমার কাঁধ দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলল “ আরে আমারও অনেক আগে বোঝা উচিত ছিল, কিন্তু বুঝিনি। দ্বিতীয় লাইনটা দেখ। এ যে সি , জগদীশ বোস রোড। এবং সেটা কলকাতায়। একশো আঠাশ নম্বর বাড়িতে ডাকাতি বা লুট। সব কটাতে এফ রয়েছে। আমি ভাবছিলাম সেটা ফ্ল্যাট নাম্বার, যদি সেটা সত্যি ওই ভাবে ব্যবহার করে থাকে। এখন মনে হচ্ছে যে হয় ফ্ল্যাট নাম্বার বা ফ্লোর নাম্বার। “ আমি বললাম “ জায়গায় জায়গায় “এ” লেখার মানে কি? আর ওই “এল”?” ও বলল “মনে হচ্ছে যদি সাধারণ ব্যাপারটা ধরে নেওয়া যায় তাহলে কোথায়, কত নম্বর ফ্লোর, কে থাকবে আর কত টাকা আন্দাজ দখল করতে পারে সে নিয়েই ওদের ভাবনা। “ এ কথাটা তো আগে ভেবে দেখিনি। এই দু তিনদিনে এরা শুধু ছেলের বয়স বা স্বাস্থ্য, কত টাকা সেখানে আছে, আর কোথায়, সেটা নিয়েই (অবশ্য কোথায় বলতে হোটেল বা জায়গার নাম ছাড়া আমাদের কিছুই বলে নি) আমাদের গল্প শুনিয়েছে। আমি বললাম “এ মানে হল এইজ, মানে বয়স?” ও আমার গালে হাত বুলিয়ে বলল “ ইয়েস মাই লেডি লাভ। আর “এল” মানে লাখ। ভুল হতে পারে। তবে আপাতত সেটাই বিশ্বাস করতে হবে। কারন সকালে রাকা বলেছিল ওর সামনা সামনি যুদ্ধে যাচ্ছে। আর আজ ওদের বিশাল বড় দিন।“ আমি বললাম “ তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াল? “ প্রথমেই ধাক্কা খেয়ে থেমে যেতে হল। ও আমাকে বলল “তুই না একটা ইয়ে। জে এল। মানে হল জেমস লং আর পরের এস টা বাদ দিও না সোনা , সেটা হল সরণী, অর্থাৎ জেমস লং সরণী তে , এবং যেটা কোলকাতায়, সেখানে তিয়াত্তর নম্বর বাড়ির, (একটু থেমে বলল) ফ্লোর এক্ষেত্রে হওয়া মুশকিল কারণ ওই চত্বরে অত তলার বাড়ি এখন অন্তত নেই, আর তাই ফ্ল্যাট নাম্বার ধরে নিচ্ছি, তেইশ নম্বর ফ্ল্যাটে পরের ডাকাতি। বয়স ছত্রিশ, সম্ভবত পুরুষ, আর এল মানে যদি লাখ হয় তো সেখান থেকে ছেষট্টি লাখ লোটার প্ল্যান নিয়ে গেছে।“ ও বলে চলল “ পরেরটা আচার্য জগদীশ বোসের ওপর। বাড়ির নাম্বার একশ আঠাশ, তবে, এটা অবশ্য ফ্ল্যাট বা ফ্লোর দুই হতে পারে। ধরে নিচ্ছি ২ নম্বর ফ্লোর।মক্কেলের বয়স ঊনত্রিশ। আর সেখান থেকে উনিশ লাখ টাকা পাবে। পরের টা অবশ্য আমিও বুঝতে পারছি না।“ আমরা অনেকক্ষণ বাকি লাইনগুলোর দিকে তাকিয়ে হাল ছেড়ে উঠে পড়লাম। তবে ততক্ষণে আমাদের দুজনের মাথাতেই সংকেতগুলো ছাপা হয়ে গেছে। মাত্র দুই লাইনের মানে হয়ত উদ্ধার করতে পেরেছি। কিন্তু মাথার ভেতরে নিরবে অর্থহীন সংক্ষিপ্ত অক্ষর গুলো থেকে মানে বের করার প্রবল চেষ্টা চালিয়ে চলেছি। আমি হেঁসে বললাম “পি এন ডি মানে পোঁদ নয় তো?” অদিতি আমাকে বলল “সেটা হলে চাপ কম হত। চল দেখি বাইরে কি হচ্ছে। চল।“ কথায় বলে যেদিন ভগবান তোমার দিকে দাঁড়িয়ে আছেন সেদিন সব কিছু সোজা হয়ে যায়। আজ আমাদের সাথে তাই হল।
ট্রেনিং তখনও চলছে। অদিতি আমাকে বলল “ওই দিকে দেখেছিস?” ওর বাকি কথাটা শেষ হল না। আরও চার জন একটা কাটা পাঁঠার মতন ছটফট করতে থাকা মেয়েকে নিয়ে এলো। ট্রেনিং করতে গিয়ে কিসের ওপর পা পড়েছে। প্রথমে ওরা খেয়াল করে নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কিছুর একটা থেকে শরীরে বিষ ঢুকে গেছে। কলকাতা বা বড় হাঁসপাতাল হলে অনেক বড় বিভাগ থাকে এর জন্য। কিন্তু আমি আমার জ্ঞান অনুযায়ী ওষুধ আগের দিনই আনিয়ে রেখেছিলাম। বিছার কামড় খুব সম্ভবত। কেডস খুলে খালি পায়ে দৌড়াবার ফল। তবে ওষুধ একই। এর থেকে ভালো ওষুধ আমার জানা নেই, আর আমার সেই বিভাগে বেশী পড়াশুনাও নেই। তবে কাজ দিয়েছিল। একটা ইনজেকশন। অনেকক্ষণ পরে সে চাঙ্গা, যদিও রেস্টে। চারপাশে আমাদের জয় জয় কার। আমরা কেডস ছাড়া দৌড়াতে বারণ করে দিলাম। তবে তেমন বিছা হলে এই শস্তা কেডসে কিছু হবে বলে মনে হয় না। বিছা বা যাই হোক না কেন সেই ব্যাপারটা সারার পর আবার আমরা গেলাম অদিতির আগে দেখানো জায়গার দিকে। কেউ আমাদের দিকে কোনও লক্ষ্যই করছে না। রাকা (দি) ছিল কিন্তু সেও না। ওদের থেকে বেশীদূর যাওয়া ঠিক হবে না মনে করেই ফিরে এসে রাকা কেই জিজ্ঞাসা করলাম “ আচ্ছা ওখানে কি দীঘি আছে। আমাদের দুজনেরই সাঁতারের খুব শখ। “ ও একবার ওই দিকে তাকিয়ে বলল “পুকুর ওটা। সোনা মা আমাদের, ওখানে যেও না। সাপে কাটলে আর দেখতে হবে না।“ ওর কথা শেষ হল না, অদিতি আমার হাতটা চেপে ধরল। সরে যাওয়ার পর বলল “ বি পি এন ডি। বেনিয়া পুকুর । কলকাতাতেই আছে। পনড। হল পুকুর। ইচ্ছা করে “ও” টা বাদ দিয়ে দিয়েছে যাতে সাধারণ লোক বুঝতে না পারে। আই মীন হাতে কাগজটা পড়লেও যাতে একটু সময় নষ্ট হয়। “ সত্যি তো বুঝে ফেলা উচিৎ ছিল। “এগারো নম্বরে গিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে কাউকে লুটবে আর তার বয়স পঞ্চান্ন, আর শুধু তাই নয়, সে বিশাল বড় টাকার মালিক কারণ তার থেকে পয়ত্রিশ লাখ লুটবে এরা। “
আমার উত্তেজনা বেড়ে গেছে। আমি বললাম “ আর এফ এস এস? “ অদিতি বলল “জলের মতন সোজা। ওখানে থিয়েটার আর সিনেমা দেখতে যেতাম। ফ্রি কলেজ স্ট্রিট। ক্রসটা বোধহয় ক্রসিং। কত নাম্বার ক্রসিয়ে গিয়ে ওই বারো নম্বরের বাড়িটা পাবে তার সংকেত দেওয়া আছে। বাকি টা আর মুখে বলার দরকার নেই। কিন্তু তার পরের লাইনগুলো সত্যি ধোঁয়া। বড্ড সাংকেতিক হয়ে গেছে ওগুলো।“ উফফ এই বাজারে জেসাসের পুনর্জন্ম। ভগবান। আরেকটু তাকাও আমাদের দিকে। বুদ্ধি তো একেবারে তলানি তে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু আমরা হাল ছাড়লাম না। ভগবান আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন ঠিকই কিন্তু আরও কিছুক্ষণ পর। তবে তাতেও পুরো রহস্যের সমাধান হল না। আমি আমাদের ঘরের সামনে বসে বাসে বাকি লাইন কটার যত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি এমন সময় দেখলাম দুটো ইয়া বড় বড় ট্রাক এসে দাঁড়াল। এতক্ষন খেয়াল করিনি। এখন দেখলাম আলি রান্নার জায়গা থেকে ছুটতে ছুটতে ওই ট্রাকের দিকে এগিয়ে গেলো। ট্রাকের ড্রাইভারদের সাথে ও অনেকক্ষণ কথা বলল। ওদের হাত থেকে কাগজ নিয়ে কিছুক্ষণ পরীক্ষা করে দেখে আমাদের দিকে তাকাল। আমরাও ওই দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। হাতের ইশারায় আমাদের ডাক দিতেই আমরা অরূপদার ঘরের দিকে হাঁটা দিলাম। পথে অদিতি আমাকে ফিস ফিস করে বলল “ তিন আর চারের দুপাশে যে ব্র্যাকেট দিয়ে রেখেছে তার একটা মানে আমি বুঝতে পেরেছি। এই দুটো জায়গার দূরত্ব আহামুরি কিছু বেশী নয়। হয়ত একই দল গিয়ে ওই দুটো জায়গা লুট করবে।“ এই নিয়ে আর কথা বলা হল না। কারণ দুটো ড্রাইভার আর রাজুকে নিয়ে আলি এসে হাজির হয়েছে অরূপদার ঘরে। চারটে বিশাল বড় বড় লিস্ট আমাদের হাতে থামিয়ে দিয়ে রাজুকে নিয়ে চলে গেল মালের তদারকি করতে। ট্রেনিং করা ছেড়ে অনেক গুলো মেয়েও দৌড়ে ট্রাকের কাছে গিয়ে জড় হয়েছে মাল নামানোর জন্য। বুঝলাম এদের পয়সা করির ভালোই আমদানি হয়েছে শেষ কিছু দিনে। কারণ লাখ লাখ টাকার আনাজ পাতি, সব্জি, চাল, দাল, মাছ, মাংস, ডিম, মোমবাতি, আটা, লুস মশলাপাতি খরিদ করা হয়েছে। আর তার সাথে প্রচুর নতুন বন্দুক আর গুলি আর বোমার আমদানি করা হয়েছে। সাথে মেয়েদের কিছু পোশাকও এসেছে। সব মিলিয়ে বিল দিয়েছে প্রায় ছাপ্পান্ন লাখ টাকার। মেয়েদের ইন্সট্রাক্সান দিয়ে আলি আবার ফিরে এসেছে। অদিতি দেখলাম আমারই মতন অঙ্কে কাঁচা। কড় গুনে গুনে যোগ করতে হচ্ছে আমাদের দুজনকে। একটা পেন ছিল টেবিলে সেটা দিয়েই টিক কেটে কেটে যোগ গুলো মেলালাম। মেয়েরা আমাদের থেকে গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়া অব্দি জিনিস নামাচ্ছে না ট্রাক থেকে। আমাদের হিসাব মেলানোর পর লিস্ট চারটে নিয়ে গেলাম ট্রাক দুটোর দিকে। আলি আর অমল (এই প্রথম ছেলেটা কে দেখলাম, মানে দেখেছি আগেই, কিন্তু এই যে অমল সেটা এখন জানতে পারলাম) একটা ট্রাকে উঠে গেল। রাজু একটা মেয়েকে নিয়ে অন্যটায় উঠে পড়ল। আমি লিস্ট পড়তে শুরু করতে যাচ্ছি হঠাত একজন ড্রাইভার আমাকে থামিয়ে আলি কে হাত দেখিয়ে বলল “ আসল জিনিসটাই তো দি নি।“ ওর কথায় হিন্দি হিন্দি একটা টান আছে। পাঞ্জাবি তুলে নিজের পায়জামার কোমরের কাছ থেকে গোঁজা একটা জিনিস বার করে কপালে ঠেকিয়ে আলির দিকে উঁচিয়ে ধরল। আমি রিভলবার শুধু পুলিশদের কোমরেই গোঁজা অবস্থায় দেখেছি, জীবনে কোনও দিন হাতে নিয়ে দেখিনি, আর এই বিষয়েও আমার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। এখানে আসার পর অবশ্য দেখেছি কয়েকজনের হাতে। তবে এটা মনে হল একদম সেই ফিল্মি মার্কা সাহেবি পিস্তল। “এটার টাকা লাগবে না। এটা বেগমের কাছ থেকে সেলামি। লোডেড। কিন্তু আরও গুলি লাগলে পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। এটার ম্যাগাজিন ভর্তি। আসাম বর্ডার পার হয়ে এসেছে। অনেকগুলো এসেছে। লাগলে বলবেন। এত শস্তায় এ জিনিস আর কোথাও পাবেন না এই বলে দিলাম।“ মনে হল পুরো দেশটাই আগুনের গোলার ওপর বসে আছে।