17-02-2020, 09:14 PM
অষ্টাদশ পর্ব
সুতন্দ্রার সঙ্গে কথা বলার পর দিব্যেন্দু উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল। উকিলবাবু তেমন ভরসা দেওয়া দুরের কথা বরং আলাপ আলোচনায় জোর দিতে বলেছেন। এইসব মামলা সহজে মীমাংসা হয় না।দিব্যেন্দু স্থির করে মিমির সঙ্গে কথা বলবে। কথা বলায় দোষ কি? চেম্বারে যাবে না বাড়িতে এই নিয়ে দ্যোদুল্যমান ভাব মনে। চেম্বারে গেলে যদি উল্টোপাল্টা কিছু বলে দেয় বাড়িতে মাম্মীর সামনে তা পারবে না।সারাদিন টো-টো করা মেয়ে বাড়িতে গেলে দেখা নাও হতে পারে।দিব্যেন্দু ভেবে স্থির করে চেম্বারে যাবে সঙ্গে জিনিকেও নিয়ে যাবে।তিন্নিও স্বাভাবিকভাবে বাদ থাকবে না।এককথায় সপরিবারে যাওয়াই আপাতত সিদ্ধান্ত।
সুভদ্রা যেতেই শুনলো মি.দাগা তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।একটা জরুরী ডাক পেয়ে বেরিয়ে গেছেন। মনে এখন আর উদবেগের ব্যাপারটা নেই।সুভদ্রার রেজাল্ট বেরিয়েছে,মেয়েদের মধ্যে একমাত্র তারই নাম আছে।এখন ভাইবাটা পার হতে পারলেই তাকে দেখে কে?একবার বৈদুর্যর ছোয়া পাবার ইচ্ছে হয় মনে। বেয়ারা এসে খবর দিল সাহেব যাবার আগে বলে গেলেন, বাবাজীর সঙ্গে কথা বলতে।বাবাজী? তাকিয়ে দেখল,দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মহারাজ বজ্রানন্দ গোফের ফাক দিয়ে মিটমিট করে হাসছেন। সাধু সন্তরা এভাবেই হাসে।সুভদ্রা ইঙ্গিতে ভিতরে আসতে বলে।
মহারাজ ভিতরে ঢুকে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেন।এই ধরনের লোকরা একটু আয়েশী হয়।
--কেমন আছো মা?
মা? ভাগ্যিস বেটি বলেনি।কিন্তু তুমি-তুমি সম্বোধন ভাল লাগে না। সুভদ্রা মৃদু হেসে বলে,আপনারা তো অন্তর্যামী,তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন?
--হা-হা-হা।অট্টহাসিতে মহারাজের শরীর কাপতে থাকে।হাসি থামলে বলেন, এখন অনেক ভাল আছো।
--আমি কিন্তু ক্যাটস আই ধারণ করিনি।সুভদ্রা বলল।
সুভদ্রা ভেবেছিল কথাটা শুনে মহারাজ একটু মিইয়ে যাবেন।কিন্তু মহারাজের চোখমুখ দেখে তা মনে হল না।কিছুক্ষিন চুপ করে থেকে বললেন,ক্যাটস আইয়ের স্পর্শ অনেক সময় পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেও পাওয়া যায়।
সুভদ্রার মনে হল বাবাজিকে বৈদুর্যের কথা বলবে নাকি?মহারাজ আবার শুরু করেন, তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না,ক্যাটস আইয়ের স্পর্শে এমন কিছু ঘটতে পারে যা তোমার অভিপ্রেত নয় কিন্তু তাতেই তোমার মঙ্গল জানবে।
সুভদ্রা কথার মাথা মুণ্ডু কিছু বুঝতে পারে না।মানুষ অভিপ্রেত কিছু ঘটুক তাই চায়, অন্য রকম কিছু ঘটলে কি মঙ্গল হবে?সুভদ্রার হাতে সময় কম, দিব্যেন্দু আজ আসবে বলেছে।কি দরকার স্পষ্ট করে বলেনি।সুভদ্রা মহারাজকে জিজ্ঞেস করেন,বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?
মহারাজ মাথা নীচু করে কিছু একটা ভাবলেন,তারপর চোখ তুলে বললেন,তুমি মগনের কাছে সব শুনেছো।মগন বলল,তুমি আমার কেস স্টাডি করছো--তুমি বলো আমার কি করণীয়?
মগন মানে মগন লাল দাগা।সুভদ্রা বলল,আমি যা দেখলাম,কেস আপনার ফেভারে কিন্তু--।
--কিন্তু কি?
--দেওয়ানী মামলায় অনেক সময় লাগে।আপনার ইচ্ছে বিল্ডিং তুলে সামনের বছরে আশ্রম উদবোধন করতে চান।
--হ্যা আমি সেই রকম সব ব্যাবস্থা করেছি।
--আমার সাজেশন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের আরো কিছু টাকা দিয়ে আদালতের বাইরে মীমাংসা করে নিন।আপনি আমার সিনিয়ার মি.রুংতার সঙ্গেও আলাপ করতে পারেন।
মহারাজ ঠোটে ঠোট চেপে মাথা নাড়তে নাড়তে সুভদ্রাকে দেখেন।তারপর বললেন, আমিও সেই কথা ভেবেছি,রুংতার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই।
মহারাজ দাঁড়িয়ে পড়লেন।যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলেন,আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি তুমি অনেক দূর যাবে মা।
সাধু সন্তদের সুভদ্রার কোনো কালেই পছন্দ নয় কিন্তু বজ্রানন্দের কথায় আন্তরিকতার স্পর্শ পেয়ে ভাল লাগল।বৈদুর্যের একটা মোবাইল থাকলে ফোনে কথা বলা যেত।ব্যাটা বৈদুর্য মণি।চেম্বার থেকে বেরিয়ে সুভদ্রা বাথরুমে গেল।বেয়ারাকে বলে গেল কেউ এলে বসতে বোলো।
বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আয়নায় নিজেকে দেখে।পায়জামার দড়ি খুলে প্যাণ্টি নামিয়ে কমোডে বসতে চেপে রাখা হিসি তীব্র বেগে বেরোতে বেশ আরাম অনুভুত হয়।মনে পড়ল মহারাজের কথা,ক্যাটস আইয়ের প্রভাব অনেক সময় পারিপার্শ্বিকের ছোয়া থেকেও পাওয়া যায়।
বৈদুর্যর কথা কেন বারবার মনে পড়ছে?কি সব আবোল তাবোল ভাবছে সুভদ্রা? উঠে দাঁড়িয়ে ঘাড় নামিয়ে যোণীর দিকে তাকিয়ে থাকে।মাম্মীর দৃশ্যটা মনে পড়ল।বৈদুর্য বলছিল অন্যায় করলে মানুষ মিথ্যে বলে সে কেন মিথ্যে বলবে?ঠিকই হয়তো ওর কোনো দোষ নেই। মনে পড়ল দিব্যেন্দু আসার কথা।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এল। বাচ্চা কোলে মহিলা কে বসে আছে তার চেম্বারে?চেম্বারে ঢুকে অবাক হয়ে যায় বলে,কিরে জিনি তুই?দিব্যেন্দু আসেনি?
সুতন্দ্রা হেসে বলল,হ্যা এসেছে,সিগারেট ফুকছে এখুনি আসবে।
--এইটুকু বাচ্চাকে নিয়ে তোর কি দরকার ছিল আসার?
--দিদিভাই তুই ওকে কিছু বলিস না,এমন জোর করলো।
--ও বুঝেছি।সুভদ্রা গম্ভীর হয়ে যায়।দিব্যেন্দুর জিনিকে আনার পিছনে একটা মতলব ইমোশন্যাল প্রেশার তৈরী।জিনি মাথা নীচু করে বসে থাকে।সুভদ্রা বলল,জিনি তোকে একটা কথা বলি,তুই নিজেকে কখনো অসহায় একা ভাববি না।আমি তোদের সব খবর রাখি বোন।
--দিদিভাই আমি জানি...।জিনি কেদে ফেলে।
--কি হচ্ছে চোখ মোছ...দিব্যেন্দু আসছে।
জিনি চোখ মুছে হেসে ফেলে।সুভদ্রা তিন্নিকে নিজের কোলে নিল।তিন্নি ফিক করে হাসলো।জিনি বলল,দেখেছিস দিদিভাই মাসীকে ঠিক চিনেছে।
দিব্যেন্দু ঢুকতে ঢুকতে বলে,আমিই চিনতে পারলাম না।
সুভদ্রা মজা করে বলে,শিশুর মধ্যে দেবতার বাস।
--তুমি বলছো আমার মধ্যে শয়তানের বাস?
--তোমার মধ্যে কি আছে সে তুমিই জানো।কেমন আছো বলো?
--ভালো।দিদি কনগ্রাচুলেশন।
--বুঝলাম না।কি ব্যাপারে?সুভদ্রা অবাক হয়।
--সব খবর রাখি আপনি না বললে কি হবে।
সুভদ্রা বোনের দিকে তাকালো,জিনি মাথা নীচু করে অপরাধীর মত বসে থাকে।
--ফাইন্যাল হলে অবশ্যই বলবো।যাক কেন এসেছো বলো?
দিব্যেন্দু কিভাবে শুরু করবে কয়েকমুহুর্ত ভাবে।তারপর জিনিকে বলে,তুমি তিন্নিকে নেও।
--না না ঠিক আছে তুমি বলো,আমি শুনছি।সুভদ্রা আপত্তি করে।
--আমার চাকরি নেই জিনি আপনাকে নিশ্চয়ই বলেছে।আমি নানা জায়গায় চেষ্টা করছি কিন্তু আপনিতো জানেন এই বাজারে হুট করে একটা চাকরি পাওয়া আমার মত একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ারের পক্ষে সহজ নয়।তাই ভাবছি যতদিন না পাচ্ছি রিয়াল এষ্টেটের ব্যবসায় লেগে পড়ি।ভাল জমি পেয়েছি।কিন্তু--।দিব্যেন্দু কথা শেষ করে না।
তিন্নীকে টেবিলে বসিয়ে দিয়ে সুভদা বলে,প্রথমে একটা কথা বলি,আমাদের যা কিছু আছে সব মিসেস মুখার্জির নামে।তার টাকা তিনি কি করবেন সব তার সিদ্ধান্ত।আমি কিছু সাজেশন দিতে পারি সম্মত হলে মিসেস মুখার্জিকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবো।
--মাম্মী আপনার কথা ফেলতে পারবেন না আমি জানি।দিব্যেন্দু বলল।
--যাইহোক কতটা জমি কি দাম কাগজ পত্র নিয়ে আসবে।আর জমি কিনতে হবে জিনির নামে। ব্যাবসা হবে পার্টনারশিপে,তুমি হবে ওয়ার্কিং পার্টনার।যদি রাজি থাকো বলবে আমি মাম্মীকে বোঝাবার চেষ্টা করবো।
--ঠিক আছে আমি কদিন পরে কাগজ পত্তর নিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করছি।আচ্ছা দিদি টয়লেটটা কোথায়?
--বেরিয়ে বাদিকে চলে যাবে।
দিব্যেন্দু চলে যেতে সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে,তুই দিব্যেন্দুকে আমার পরীক্ষার কথা বলতে গেলি কেন?
--ভুল হয়ে গেছে।আমি আসলে জাজ হবে বলে একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।
--বোকা মেয়ে।জজদের চেয়ে উকিলদের ক্ষমতা অনেক বেশী।
দিব্যেন্দু ফিরে এসে বলল,দিদি আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না জানি। আপনি জেনে রাখবেন জিনি আর আমি আলাদা নই।আচ্ছা আমরা আজ আসি?
বেরোবার আগে জিনি দিদিভাইয়ের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে মৃদু হাসি বিনিময় করে।
বাইরে থেকে দিব্যেন্দু তাগাদা দিল,কি হল এসো।
--আসছি তিন্নিকে নিয়ে আসবো তো?জিনি উত্তর দিল।
দিব্যেন্দুর মধ্যে বদল লক্ষ্য করে সুভদ্রার ভাল লাগে।বিয়ের পর সব মেয়েই একটা নতুন জগতে প্রবেশ করে যেখানে সেই অধিশ্বর।মন প্রাণ দিয়ে আকড়ে ধরে স্বামীকে কিন্তু ধরতে গিয়ে যদি কাঁটার খোচা লাগে তা যে কত বেদনার বিয়ে না করলেও জিমি বেশ অনুভব করতে পারে।
হাতে কোনো কাজ নেই।এখন বৈদুর্য এলে বেশ গল্প করা যেতো।ছেলেটাকে দেখলে অবাক লাগে।সব সময় হাসি লেগে আছে,চোখে মুখে একটা নিষ্পৃহ ভাব।কেমন পরীক্ষা দিল কে জানে।ওর মুখে মিমিদি ডাক শুনতে বেশ লাগে।
রোদ পড়তে বিকেল বেলা বারান্দায় এসে বসলেন সুনন্দা মুখার্জী।শ্বেতী হবার কারণে সারা শরীর কাপড়ে ঢেকে থাকেন।অফিস ছুটী হয়ে গেছে।একটা ট্রেন আসে আর ঝাকে ঝাকে লোক নামে।সুনন্দা মুখার্জী পথ চলতি ভীড়ের দিকে তাকিয়ে কি যেন খোজেন।সেনেদের ছেলেটাকে এখন আর দেখা যায় না।শুনেছেন সে নাকি বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে।কোথায় গেল কি করছে কে জানে।
বেশ ছেলেটি তার উপর মায়া পড়ে গেছে।জিনির সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতে আসতো।জিনির বিয়ের পর অশান্তি শুরু হয়েছে।মিমি সব কথা খুলে বলে না।খালি বলে কোনো চিন্তা কোরনা।চিন্তা কোরোনা বললে মায়ের মন শুনবে।সকালে বেরিয়েছে সন্ধ্যে হতে চলল ফেরার নাম নেই।
সুতন্দ্রার সঙ্গে কথা বলার পর দিব্যেন্দু উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল। উকিলবাবু তেমন ভরসা দেওয়া দুরের কথা বরং আলাপ আলোচনায় জোর দিতে বলেছেন। এইসব মামলা সহজে মীমাংসা হয় না।দিব্যেন্দু স্থির করে মিমির সঙ্গে কথা বলবে। কথা বলায় দোষ কি? চেম্বারে যাবে না বাড়িতে এই নিয়ে দ্যোদুল্যমান ভাব মনে। চেম্বারে গেলে যদি উল্টোপাল্টা কিছু বলে দেয় বাড়িতে মাম্মীর সামনে তা পারবে না।সারাদিন টো-টো করা মেয়ে বাড়িতে গেলে দেখা নাও হতে পারে।দিব্যেন্দু ভেবে স্থির করে চেম্বারে যাবে সঙ্গে জিনিকেও নিয়ে যাবে।তিন্নিও স্বাভাবিকভাবে বাদ থাকবে না।এককথায় সপরিবারে যাওয়াই আপাতত সিদ্ধান্ত।
সুভদ্রা যেতেই শুনলো মি.দাগা তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।একটা জরুরী ডাক পেয়ে বেরিয়ে গেছেন। মনে এখন আর উদবেগের ব্যাপারটা নেই।সুভদ্রার রেজাল্ট বেরিয়েছে,মেয়েদের মধ্যে একমাত্র তারই নাম আছে।এখন ভাইবাটা পার হতে পারলেই তাকে দেখে কে?একবার বৈদুর্যর ছোয়া পাবার ইচ্ছে হয় মনে। বেয়ারা এসে খবর দিল সাহেব যাবার আগে বলে গেলেন, বাবাজীর সঙ্গে কথা বলতে।বাবাজী? তাকিয়ে দেখল,দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে মহারাজ বজ্রানন্দ গোফের ফাক দিয়ে মিটমিট করে হাসছেন। সাধু সন্তরা এভাবেই হাসে।সুভদ্রা ইঙ্গিতে ভিতরে আসতে বলে।
মহারাজ ভিতরে ঢুকে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসেন।এই ধরনের লোকরা একটু আয়েশী হয়।
--কেমন আছো মা?
মা? ভাগ্যিস বেটি বলেনি।কিন্তু তুমি-তুমি সম্বোধন ভাল লাগে না। সুভদ্রা মৃদু হেসে বলে,আপনারা তো অন্তর্যামী,তাহলে জিজ্ঞেস করছেন কেন?
--হা-হা-হা।অট্টহাসিতে মহারাজের শরীর কাপতে থাকে।হাসি থামলে বলেন, এখন অনেক ভাল আছো।
--আমি কিন্তু ক্যাটস আই ধারণ করিনি।সুভদ্রা বলল।
সুভদ্রা ভেবেছিল কথাটা শুনে মহারাজ একটু মিইয়ে যাবেন।কিন্তু মহারাজের চোখমুখ দেখে তা মনে হল না।কিছুক্ষিন চুপ করে থেকে বললেন,ক্যাটস আইয়ের স্পর্শ অনেক সময় পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেও পাওয়া যায়।
সুভদ্রার মনে হল বাবাজিকে বৈদুর্যের কথা বলবে নাকি?মহারাজ আবার শুরু করেন, তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না,ক্যাটস আইয়ের স্পর্শে এমন কিছু ঘটতে পারে যা তোমার অভিপ্রেত নয় কিন্তু তাতেই তোমার মঙ্গল জানবে।
সুভদ্রা কথার মাথা মুণ্ডু কিছু বুঝতে পারে না।মানুষ অভিপ্রেত কিছু ঘটুক তাই চায়, অন্য রকম কিছু ঘটলে কি মঙ্গল হবে?সুভদ্রার হাতে সময় কম, দিব্যেন্দু আজ আসবে বলেছে।কি দরকার স্পষ্ট করে বলেনি।সুভদ্রা মহারাজকে জিজ্ঞেস করেন,বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?
মহারাজ মাথা নীচু করে কিছু একটা ভাবলেন,তারপর চোখ তুলে বললেন,তুমি মগনের কাছে সব শুনেছো।মগন বলল,তুমি আমার কেস স্টাডি করছো--তুমি বলো আমার কি করণীয়?
মগন মানে মগন লাল দাগা।সুভদ্রা বলল,আমি যা দেখলাম,কেস আপনার ফেভারে কিন্তু--।
--কিন্তু কি?
--দেওয়ানী মামলায় অনেক সময় লাগে।আপনার ইচ্ছে বিল্ডিং তুলে সামনের বছরে আশ্রম উদবোধন করতে চান।
--হ্যা আমি সেই রকম সব ব্যাবস্থা করেছি।
--আমার সাজেশন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের আরো কিছু টাকা দিয়ে আদালতের বাইরে মীমাংসা করে নিন।আপনি আমার সিনিয়ার মি.রুংতার সঙ্গেও আলাপ করতে পারেন।
মহারাজ ঠোটে ঠোট চেপে মাথা নাড়তে নাড়তে সুভদ্রাকে দেখেন।তারপর বললেন, আমিও সেই কথা ভেবেছি,রুংতার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই।
মহারাজ দাঁড়িয়ে পড়লেন।যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলেন,আমি বেশ দেখতে পাচ্ছি তুমি অনেক দূর যাবে মা।
সাধু সন্তদের সুভদ্রার কোনো কালেই পছন্দ নয় কিন্তু বজ্রানন্দের কথায় আন্তরিকতার স্পর্শ পেয়ে ভাল লাগল।বৈদুর্যের একটা মোবাইল থাকলে ফোনে কথা বলা যেত।ব্যাটা বৈদুর্য মণি।চেম্বার থেকে বেরিয়ে সুভদ্রা বাথরুমে গেল।বেয়ারাকে বলে গেল কেউ এলে বসতে বোলো।
বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আয়নায় নিজেকে দেখে।পায়জামার দড়ি খুলে প্যাণ্টি নামিয়ে কমোডে বসতে চেপে রাখা হিসি তীব্র বেগে বেরোতে বেশ আরাম অনুভুত হয়।মনে পড়ল মহারাজের কথা,ক্যাটস আইয়ের প্রভাব অনেক সময় পারিপার্শ্বিকের ছোয়া থেকেও পাওয়া যায়।
বৈদুর্যর কথা কেন বারবার মনে পড়ছে?কি সব আবোল তাবোল ভাবছে সুভদ্রা? উঠে দাঁড়িয়ে ঘাড় নামিয়ে যোণীর দিকে তাকিয়ে থাকে।মাম্মীর দৃশ্যটা মনে পড়ল।বৈদুর্য বলছিল অন্যায় করলে মানুষ মিথ্যে বলে সে কেন মিথ্যে বলবে?ঠিকই হয়তো ওর কোনো দোষ নেই। মনে পড়ল দিব্যেন্দু আসার কথা।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এল। বাচ্চা কোলে মহিলা কে বসে আছে তার চেম্বারে?চেম্বারে ঢুকে অবাক হয়ে যায় বলে,কিরে জিনি তুই?দিব্যেন্দু আসেনি?
সুতন্দ্রা হেসে বলল,হ্যা এসেছে,সিগারেট ফুকছে এখুনি আসবে।
--এইটুকু বাচ্চাকে নিয়ে তোর কি দরকার ছিল আসার?
--দিদিভাই তুই ওকে কিছু বলিস না,এমন জোর করলো।
--ও বুঝেছি।সুভদ্রা গম্ভীর হয়ে যায়।দিব্যেন্দুর জিনিকে আনার পিছনে একটা মতলব ইমোশন্যাল প্রেশার তৈরী।জিনি মাথা নীচু করে বসে থাকে।সুভদ্রা বলল,জিনি তোকে একটা কথা বলি,তুই নিজেকে কখনো অসহায় একা ভাববি না।আমি তোদের সব খবর রাখি বোন।
--দিদিভাই আমি জানি...।জিনি কেদে ফেলে।
--কি হচ্ছে চোখ মোছ...দিব্যেন্দু আসছে।
জিনি চোখ মুছে হেসে ফেলে।সুভদ্রা তিন্নিকে নিজের কোলে নিল।তিন্নি ফিক করে হাসলো।জিনি বলল,দেখেছিস দিদিভাই মাসীকে ঠিক চিনেছে।
দিব্যেন্দু ঢুকতে ঢুকতে বলে,আমিই চিনতে পারলাম না।
সুভদ্রা মজা করে বলে,শিশুর মধ্যে দেবতার বাস।
--তুমি বলছো আমার মধ্যে শয়তানের বাস?
--তোমার মধ্যে কি আছে সে তুমিই জানো।কেমন আছো বলো?
--ভালো।দিদি কনগ্রাচুলেশন।
--বুঝলাম না।কি ব্যাপারে?সুভদ্রা অবাক হয়।
--সব খবর রাখি আপনি না বললে কি হবে।
সুভদ্রা বোনের দিকে তাকালো,জিনি মাথা নীচু করে অপরাধীর মত বসে থাকে।
--ফাইন্যাল হলে অবশ্যই বলবো।যাক কেন এসেছো বলো?
দিব্যেন্দু কিভাবে শুরু করবে কয়েকমুহুর্ত ভাবে।তারপর জিনিকে বলে,তুমি তিন্নিকে নেও।
--না না ঠিক আছে তুমি বলো,আমি শুনছি।সুভদ্রা আপত্তি করে।
--আমার চাকরি নেই জিনি আপনাকে নিশ্চয়ই বলেছে।আমি নানা জায়গায় চেষ্টা করছি কিন্তু আপনিতো জানেন এই বাজারে হুট করে একটা চাকরি পাওয়া আমার মত একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ারের পক্ষে সহজ নয়।তাই ভাবছি যতদিন না পাচ্ছি রিয়াল এষ্টেটের ব্যবসায় লেগে পড়ি।ভাল জমি পেয়েছি।কিন্তু--।দিব্যেন্দু কথা শেষ করে না।
তিন্নীকে টেবিলে বসিয়ে দিয়ে সুভদা বলে,প্রথমে একটা কথা বলি,আমাদের যা কিছু আছে সব মিসেস মুখার্জির নামে।তার টাকা তিনি কি করবেন সব তার সিদ্ধান্ত।আমি কিছু সাজেশন দিতে পারি সম্মত হলে মিসেস মুখার্জিকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবো।
--মাম্মী আপনার কথা ফেলতে পারবেন না আমি জানি।দিব্যেন্দু বলল।
--যাইহোক কতটা জমি কি দাম কাগজ পত্র নিয়ে আসবে।আর জমি কিনতে হবে জিনির নামে। ব্যাবসা হবে পার্টনারশিপে,তুমি হবে ওয়ার্কিং পার্টনার।যদি রাজি থাকো বলবে আমি মাম্মীকে বোঝাবার চেষ্টা করবো।
--ঠিক আছে আমি কদিন পরে কাগজ পত্তর নিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করছি।আচ্ছা দিদি টয়লেটটা কোথায়?
--বেরিয়ে বাদিকে চলে যাবে।
দিব্যেন্দু চলে যেতে সুভদ্রা জিজ্ঞেস করে,তুই দিব্যেন্দুকে আমার পরীক্ষার কথা বলতে গেলি কেন?
--ভুল হয়ে গেছে।আমি আসলে জাজ হবে বলে একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।
--বোকা মেয়ে।জজদের চেয়ে উকিলদের ক্ষমতা অনেক বেশী।
দিব্যেন্দু ফিরে এসে বলল,দিদি আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছেন না জানি। আপনি জেনে রাখবেন জিনি আর আমি আলাদা নই।আচ্ছা আমরা আজ আসি?
বেরোবার আগে জিনি দিদিভাইয়ের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে মৃদু হাসি বিনিময় করে।
বাইরে থেকে দিব্যেন্দু তাগাদা দিল,কি হল এসো।
--আসছি তিন্নিকে নিয়ে আসবো তো?জিনি উত্তর দিল।
দিব্যেন্দুর মধ্যে বদল লক্ষ্য করে সুভদ্রার ভাল লাগে।বিয়ের পর সব মেয়েই একটা নতুন জগতে প্রবেশ করে যেখানে সেই অধিশ্বর।মন প্রাণ দিয়ে আকড়ে ধরে স্বামীকে কিন্তু ধরতে গিয়ে যদি কাঁটার খোচা লাগে তা যে কত বেদনার বিয়ে না করলেও জিমি বেশ অনুভব করতে পারে।
হাতে কোনো কাজ নেই।এখন বৈদুর্য এলে বেশ গল্প করা যেতো।ছেলেটাকে দেখলে অবাক লাগে।সব সময় হাসি লেগে আছে,চোখে মুখে একটা নিষ্পৃহ ভাব।কেমন পরীক্ষা দিল কে জানে।ওর মুখে মিমিদি ডাক শুনতে বেশ লাগে।
রোদ পড়তে বিকেল বেলা বারান্দায় এসে বসলেন সুনন্দা মুখার্জী।শ্বেতী হবার কারণে সারা শরীর কাপড়ে ঢেকে থাকেন।অফিস ছুটী হয়ে গেছে।একটা ট্রেন আসে আর ঝাকে ঝাকে লোক নামে।সুনন্দা মুখার্জী পথ চলতি ভীড়ের দিকে তাকিয়ে কি যেন খোজেন।সেনেদের ছেলেটাকে এখন আর দেখা যায় না।শুনেছেন সে নাকি বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে।কোথায় গেল কি করছে কে জানে।
বেশ ছেলেটি তার উপর মায়া পড়ে গেছে।জিনির সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতে আসতো।জিনির বিয়ের পর অশান্তি শুরু হয়েছে।মিমি সব কথা খুলে বলে না।খালি বলে কোনো চিন্তা কোরনা।চিন্তা কোরোনা বললে মায়ের মন শুনবে।সকালে বেরিয়েছে সন্ধ্যে হতে চলল ফেরার নাম নেই।