09-02-2020, 03:23 PM
গাড়িটা চলতে শুরু করল। সামনে আমি আর বিজয়দা। পেছনে ওই তিনটে কালপ্রিট আর এক হাবিলদার। ‘দেখলেন তো স্যার, সেই কষ্ট করে আপনাকে বাড়ি অবধি ছাড়তে যেতে হোল’ বিজয়দা শুধুই মুচকি হাসলেন। গাড়িটা ক্রমশ ইএম বাইপাশের দিকে যেতে শুরু করল। ‘একি আপনি বাইপাসের দিকে কেন নিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের বাড়ি তো সল্টলেকে’ ওদের উত্তরে বিজয়দা শুধুই হাসলেন। বেশ কিছুটা যাওয়ার পর গাড়িটা ক্যাঁচ করে শব্দ করে দাঁড়িয়ে গেলো। আমার নজর বিজয়দার পকেটের দিকে। একটা সাদা রুমাল, আর তাতে চাপা দিয়ে একটা পিস্তল। পেছন দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটে ছেলেরই কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছে। ‘স্যার, কত টাকা চান বলুন? কত টাকা চাই আপনার?’ মিষ্টি একটা হাঁসির সাথে বিজয়দা উত্তর দিলেন ‘এক টাকাও লাগবেনা, যা পালা!’ পরপর তিনটে গুলি, রাস্তার ধারে লুটিয়ে পড়ল তিনটে সামাজিক কীট। ভয়ে আমার জিভটা শুকিয়ে গেছিল, কেমন যেন বমি বমি পাচ্ছিল। আমার কাঁধে একটা আলতো চাপ আর আবার বিজয়দার কণ্ঠ ‘মশাই, মার্ক্স তো দার্শনিক, ওকি দোষ করল বলুন তো, আসল দোষী তো আমরাই। সবকিছু মুখ বুজে মেনে নিচ্ছি’। সেদিন আমার সাথে বিজয়দার আর কোন কথা হয়নি। এটাই ছিল আমাদের প্রথম আলাপ। এরপর যখন থানায় দেখা হোল, বেমালুম আমাকে চিনতে না পারার ভান করলেন। অনেক পরে বুঝেছি এটাই বিজয়দা, যেকোনো কেসকে উনি প্রথমে নিজে স্টাডি করেন ও তারপর পরিস্থিতি বুঝে ব্যাবস্থা নেন।
হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেছি খেয়াল করিনি। জানি রমা এখনো ঘুমাচ্ছে। ও ঘুমাক। ওকে আমি নতুন করে চিনেছি। কিছু যে একটা রহস্য রয়েছে তা আমি প্রথম বুঝেছিলাম মনিদার সাথে দেখা করতে গিয়ে। সেদিন ছিল শুক্রবার। অফিস থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরাচ্ছি দেখি মনিদা ল্যাগেজ নিয়ে আমাদের অফিসের উল্টো দিকের হোটেলটায় উঠছে। মনিদাকে একা পাবো এটা কখনো ভাবতেও পারিনি। অফিসে ফিরে গিয়ে প্ল্যান বানাচ্ছিলাম। শান আসলে কে? জুলি আসলে কে তা আমি কিছুই জানতাম না। একদিন হথাত রমার ডায়েরীটা হাতে পড়ল। আমি ভাবতাম আমি যে মেসমশাই এর ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছি তা রমা জানেনা। কিন্তু সেদিন বুঝলাম রমা অনেক কিছু জানে। ‘বিপ্লব, নিজেকে প্রতি মুহূর্তে ছোট মনে করে। ও ভাবে সবকিছুর জন্য ওই দায়ী। কিন্তু আসলে এর পেছনে শান’ সেদিন বুঝেছিলাম কোন একটা বিশাল বড় চক্র রয়েছে যারা দেহব্যাবসা ও কালোটাকা উভয়ের সাথেই যুক্ত। রমার ডায়েরী থেকেই প্রথম মনিদার নামটা জেনেছিলাম। ‘মনীন্দ্র বাবুর সাথে আমায় দেখা করতে হবে, উনি সব জানেন’ এটা পড়েই বুঝেছিলাম মনিদাই হোল সেই সিঁড়ি যাকে ব্যাবহার করে আমি মাথা অবধি পৌছাতে পারবো। কিন্তু রমা কেন এদের খোঁজ করছে তার কোন উত্তর আমার কাছে ছিলনা। আমি ভেবেছিলাম যে রমা হয়ত কোনভাবে মনিরুল বা অন্য কারুর থেকে মেসমশাইএর মৃত্যুর কারন জেনেছে এবং সেই ব্যাপারেই এতো চিন্তা করছে। যদিও এর পেছনে কোন লজিক ছিলনা।
প্রায় সন্ধ্যে ৮ টা নাগাদ একটা কালো কোর্টে সারা শরীর ঢেকে আমি হোটেলে পৌছাই। রুম নাম্বার আগে থেকেই জেনে গিয়েছিলাম। রুমের কিছুটা কাছে পৌঁছানোর পরই দেখি মনিদা কোথাও বেরচ্ছেন। এই প্রবল শীতের মধ্যেও ওর সারা শরীরে দরদর করে ঘাম দিচ্ছে। আমাকে দেখা মাত্র ছাদের দিকে দৌড় লাগালেন। আমিও পেছন পেছন ছুটলাম। ততক্ষনে শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পা পিছলে নীচে পড়ে যান মনিদা। আমি কোনরকমে লুকিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যাই। সেদিন কিছুই বুঝিনি, পরে থানায় গিয়ে জেনেছি মনিদার মৃত্যু আসলে বিষক্রিয়ায় হয়েছে। কিন্তু কে এই বিষ মেশাল? কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আর কেনই বা আমার আকাউন্তে ১০ লাখ টাকা পাঠানো হোল? তারও কোন উত্তর আমার কাছে ছিলনা। হুগলী ব্রিজের ওপর রঞ্জনকে কষ্ট দিয়ে মারার সময়ই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাই।
পুরোটাই ছিল রঞ্জনের ষড়যন্ত্র। রঞ্জন রমার ডায়েরীটা অনেক আগেই পড়ে ফেলেছিল। সেটা আমি জানতাম না, হয়ত রমাও জানত না। ও জানত আমি ঠিকই ওদের কাছাকাছি পৌঁছে যাবো। ওর মনে হয়ত এই দুশ্চিন্তাও ছিল যে রমার সমস্ত স্মৃতি মনে পড়ে যেতে পারে। সেইকারনেই মনিদাকে চাপ দিয়ে আমার আকাউন্তে টাকা পাঠানো ও পরে মনিদাকেই খুন করে দেওয়া জুলি অর্থাৎ মিতাকে পাঠিয়ে। ওদের ওই কোডগুলোও আমি উদ্ধার করতে পারিনি, হয়ত ওরা ওগুলোর সাহায্যেই ম্যাসেজ করত। রঞ্জন চেয়েছিল এই কেসটায় আমায় ফাঁসিয়ে দিতে। সেই ভেবেই বিজয়দাকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া ও আমায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া। না, এই কথা বিজয়দা আমায় কোনোদিন বলেননি। আমি মনিরুলের থেকে জেনেছি। বিজয়দা ছিলেন ওদের লোক, তাই প্রতি মুহূর্তে কি ঘটতে পারে তা বিজয়দা খুব ভালো করেই জানতেন। আর আমরাও সেইভাবেই প্রতিক্ষেত্রে বেঁচে গেছি। কিন্তু রমা কেন বারবার ওদের সন্ধান করছে তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না।
সব জানতে বা বুঝতে পারলাম রমার চিঠিটা আমার হাতে আসার পর। ওর চিঠিটার থেকেই আমি প্রথম জানতে পারলাম মিতা টাকাটা জোগাড় করার জন্য ওকে বাপের বাড়ি নয় নিয়ে গেছে মধুকর ভিলায়। যাদের যাদের কণ্ঠস্বর বা মুখ দেখে রমার কিছু মনে পড়েছে রমা তাদের প্রত্যেকেরই নাম ওই চিঠিটায় লিখে রেখেছিল। এর মধ্যে যেমন ফ্ল্যাটের গার্ড শান্তনু আছে তেমনই আছে শর্মাজী, চিন্ময়, রবি এবং রঞ্জন। মিতা রমাকে ১০ লাখ টাকার অজুহাতে এই ৫ টা জানোয়ারের হাতে তুলে দিয়েছিল। সেই ১০ লাখ টাকা আমাদের কোন কাজে লাগেনি, বাবাইকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। কিন্তু এই ১০ লাখ টাকাই রমাকে এক দুরারোগ্য রোগের দিকে ঠেলে দিলো। রমা কোনোদিন আমায় জানাতে পারতো না এই কথাগুলো। হয়ত সেই কারনেই চিঠিটা লিখেছিল, কিন্তু আমায় দিতে পারেনি।
রবি, চিন্ময় ও শরমাজী এই ৩ জনকেই রঞ্জন খুন করেছিল। শেষ দিকে যে টাকার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে রঞ্জন আর শর্মাজীর মধ্যে যথেষ্ট মনমালিন্য হচ্ছে তা আমি জানতাম। সেই কারনেই হয়ত শর্মাজীর দ্বিতীয় প্রপসাল এবং রঞ্জনের শর্মাজীকে খুন করা। চিন্ময় যে পুলিশের হয়ে কাজ করছে ও এর আগের একটা ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কেসে ফেঁসে আছে তা হয়ত রঞ্জন আগে জানত না। মধুকর ভিলা থেকে আমরা পালিয়ে যাওয়ার পরই জানতে পেরেছিল। রবি কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছিল, হয়ত ওর ভয় ছিল রবি সব বলে দিতে পারে। তাই রবি খুন হোল। ওরা ৩ জন যে খুন হবে আমিও সেটা জানতাম। আমি বাধা দিইনি। কেনই বা দিতাম, রঞ্জন না মারলে তো আমিই মেরে দিতাম। যেদিন মর্গে সেই মৃতদেহটা দেখেছিলাম সেদিনই জানতাম ওটা রঞ্জনের নয় ওটা শান্তনুর। মুখটাকে বিকৃত করে দিয়ে রঞ্জন নিজের মৃতদেহ বলে চালাতে চেষ্টা করেছে ও সবার চোখে ধোয়া দিয়েছে। খুন আমি শুধুই দুজনকে করলাম, রঞ্জন ও মিতা। এটা না করলে হয়ত মরেও শান্তি পেতাম না। রমার ওপর আমার সামান্য কোন রাগ নেই। কিন্তু খারাপ একটাই লাগলো যে শেষ দিন অবধিও ও নিজের দিদি মিতাকে নিজের অর্ধাঙ্গ মনে করে গেলো। অথচ ওর ওই দিদিই বিপদের দিনে ওকে দেহ ব্যাবসায় যুক্ত করেছিল।
হয়ত আমি খুনদুটো করতে পারতাম না। মনিরুল ই আমায় বলেছিল ‘দাদা, আমার বেঁচে থাকা মরে যাওয়া দুটোই সমান। শুধু মরার আগে যারা আমার আর আপনার পরিবারকে শেষ করে দিলো তাদের ওপর প্রতিশোধ চাই’। আমি মনিরুলের ছেলের ও পরিবারের দায়িত্ব নিলাম আর ও খুনের অভিযোগ নিজের কাঁধে চাপিয়ে নিল। আর বিজয়দা কেন সবকিছু মেনে নিল? সম্ভবত ও ভেবেছিল এরা এতটাই শক্তিশালী যে আইনের রাস্তায় এদের শাস্তি দেওয়া অসম্ভব।
THE END
হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেছি খেয়াল করিনি। জানি রমা এখনো ঘুমাচ্ছে। ও ঘুমাক। ওকে আমি নতুন করে চিনেছি। কিছু যে একটা রহস্য রয়েছে তা আমি প্রথম বুঝেছিলাম মনিদার সাথে দেখা করতে গিয়ে। সেদিন ছিল শুক্রবার। অফিস থেকে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরাচ্ছি দেখি মনিদা ল্যাগেজ নিয়ে আমাদের অফিসের উল্টো দিকের হোটেলটায় উঠছে। মনিদাকে একা পাবো এটা কখনো ভাবতেও পারিনি। অফিসে ফিরে গিয়ে প্ল্যান বানাচ্ছিলাম। শান আসলে কে? জুলি আসলে কে তা আমি কিছুই জানতাম না। একদিন হথাত রমার ডায়েরীটা হাতে পড়ল। আমি ভাবতাম আমি যে মেসমশাই এর ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছি তা রমা জানেনা। কিন্তু সেদিন বুঝলাম রমা অনেক কিছু জানে। ‘বিপ্লব, নিজেকে প্রতি মুহূর্তে ছোট মনে করে। ও ভাবে সবকিছুর জন্য ওই দায়ী। কিন্তু আসলে এর পেছনে শান’ সেদিন বুঝেছিলাম কোন একটা বিশাল বড় চক্র রয়েছে যারা দেহব্যাবসা ও কালোটাকা উভয়ের সাথেই যুক্ত। রমার ডায়েরী থেকেই প্রথম মনিদার নামটা জেনেছিলাম। ‘মনীন্দ্র বাবুর সাথে আমায় দেখা করতে হবে, উনি সব জানেন’ এটা পড়েই বুঝেছিলাম মনিদাই হোল সেই সিঁড়ি যাকে ব্যাবহার করে আমি মাথা অবধি পৌছাতে পারবো। কিন্তু রমা কেন এদের খোঁজ করছে তার কোন উত্তর আমার কাছে ছিলনা। আমি ভেবেছিলাম যে রমা হয়ত কোনভাবে মনিরুল বা অন্য কারুর থেকে মেসমশাইএর মৃত্যুর কারন জেনেছে এবং সেই ব্যাপারেই এতো চিন্তা করছে। যদিও এর পেছনে কোন লজিক ছিলনা।
প্রায় সন্ধ্যে ৮ টা নাগাদ একটা কালো কোর্টে সারা শরীর ঢেকে আমি হোটেলে পৌছাই। রুম নাম্বার আগে থেকেই জেনে গিয়েছিলাম। রুমের কিছুটা কাছে পৌঁছানোর পরই দেখি মনিদা কোথাও বেরচ্ছেন। এই প্রবল শীতের মধ্যেও ওর সারা শরীরে দরদর করে ঘাম দিচ্ছে। আমাকে দেখা মাত্র ছাদের দিকে দৌড় লাগালেন। আমিও পেছন পেছন ছুটলাম। ততক্ষনে শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পা পিছলে নীচে পড়ে যান মনিদা। আমি কোনরকমে লুকিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যাই। সেদিন কিছুই বুঝিনি, পরে থানায় গিয়ে জেনেছি মনিদার মৃত্যু আসলে বিষক্রিয়ায় হয়েছে। কিন্তু কে এই বিষ মেশাল? কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আর কেনই বা আমার আকাউন্তে ১০ লাখ টাকা পাঠানো হোল? তারও কোন উত্তর আমার কাছে ছিলনা। হুগলী ব্রিজের ওপর রঞ্জনকে কষ্ট দিয়ে মারার সময়ই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাই।
পুরোটাই ছিল রঞ্জনের ষড়যন্ত্র। রঞ্জন রমার ডায়েরীটা অনেক আগেই পড়ে ফেলেছিল। সেটা আমি জানতাম না, হয়ত রমাও জানত না। ও জানত আমি ঠিকই ওদের কাছাকাছি পৌঁছে যাবো। ওর মনে হয়ত এই দুশ্চিন্তাও ছিল যে রমার সমস্ত স্মৃতি মনে পড়ে যেতে পারে। সেইকারনেই মনিদাকে চাপ দিয়ে আমার আকাউন্তে টাকা পাঠানো ও পরে মনিদাকেই খুন করে দেওয়া জুলি অর্থাৎ মিতাকে পাঠিয়ে। ওদের ওই কোডগুলোও আমি উদ্ধার করতে পারিনি, হয়ত ওরা ওগুলোর সাহায্যেই ম্যাসেজ করত। রঞ্জন চেয়েছিল এই কেসটায় আমায় ফাঁসিয়ে দিতে। সেই ভেবেই বিজয়দাকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া ও আমায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া। না, এই কথা বিজয়দা আমায় কোনোদিন বলেননি। আমি মনিরুলের থেকে জেনেছি। বিজয়দা ছিলেন ওদের লোক, তাই প্রতি মুহূর্তে কি ঘটতে পারে তা বিজয়দা খুব ভালো করেই জানতেন। আর আমরাও সেইভাবেই প্রতিক্ষেত্রে বেঁচে গেছি। কিন্তু রমা কেন বারবার ওদের সন্ধান করছে তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না।
সব জানতে বা বুঝতে পারলাম রমার চিঠিটা আমার হাতে আসার পর। ওর চিঠিটার থেকেই আমি প্রথম জানতে পারলাম মিতা টাকাটা জোগাড় করার জন্য ওকে বাপের বাড়ি নয় নিয়ে গেছে মধুকর ভিলায়। যাদের যাদের কণ্ঠস্বর বা মুখ দেখে রমার কিছু মনে পড়েছে রমা তাদের প্রত্যেকেরই নাম ওই চিঠিটায় লিখে রেখেছিল। এর মধ্যে যেমন ফ্ল্যাটের গার্ড শান্তনু আছে তেমনই আছে শর্মাজী, চিন্ময়, রবি এবং রঞ্জন। মিতা রমাকে ১০ লাখ টাকার অজুহাতে এই ৫ টা জানোয়ারের হাতে তুলে দিয়েছিল। সেই ১০ লাখ টাকা আমাদের কোন কাজে লাগেনি, বাবাইকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। কিন্তু এই ১০ লাখ টাকাই রমাকে এক দুরারোগ্য রোগের দিকে ঠেলে দিলো। রমা কোনোদিন আমায় জানাতে পারতো না এই কথাগুলো। হয়ত সেই কারনেই চিঠিটা লিখেছিল, কিন্তু আমায় দিতে পারেনি।
রবি, চিন্ময় ও শরমাজী এই ৩ জনকেই রঞ্জন খুন করেছিল। শেষ দিকে যে টাকার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে রঞ্জন আর শর্মাজীর মধ্যে যথেষ্ট মনমালিন্য হচ্ছে তা আমি জানতাম। সেই কারনেই হয়ত শর্মাজীর দ্বিতীয় প্রপসাল এবং রঞ্জনের শর্মাজীকে খুন করা। চিন্ময় যে পুলিশের হয়ে কাজ করছে ও এর আগের একটা ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কেসে ফেঁসে আছে তা হয়ত রঞ্জন আগে জানত না। মধুকর ভিলা থেকে আমরা পালিয়ে যাওয়ার পরই জানতে পেরেছিল। রবি কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছিল, হয়ত ওর ভয় ছিল রবি সব বলে দিতে পারে। তাই রবি খুন হোল। ওরা ৩ জন যে খুন হবে আমিও সেটা জানতাম। আমি বাধা দিইনি। কেনই বা দিতাম, রঞ্জন না মারলে তো আমিই মেরে দিতাম। যেদিন মর্গে সেই মৃতদেহটা দেখেছিলাম সেদিনই জানতাম ওটা রঞ্জনের নয় ওটা শান্তনুর। মুখটাকে বিকৃত করে দিয়ে রঞ্জন নিজের মৃতদেহ বলে চালাতে চেষ্টা করেছে ও সবার চোখে ধোয়া দিয়েছে। খুন আমি শুধুই দুজনকে করলাম, রঞ্জন ও মিতা। এটা না করলে হয়ত মরেও শান্তি পেতাম না। রমার ওপর আমার সামান্য কোন রাগ নেই। কিন্তু খারাপ একটাই লাগলো যে শেষ দিন অবধিও ও নিজের দিদি মিতাকে নিজের অর্ধাঙ্গ মনে করে গেলো। অথচ ওর ওই দিদিই বিপদের দিনে ওকে দেহ ব্যাবসায় যুক্ত করেছিল।
হয়ত আমি খুনদুটো করতে পারতাম না। মনিরুল ই আমায় বলেছিল ‘দাদা, আমার বেঁচে থাকা মরে যাওয়া দুটোই সমান। শুধু মরার আগে যারা আমার আর আপনার পরিবারকে শেষ করে দিলো তাদের ওপর প্রতিশোধ চাই’। আমি মনিরুলের ছেলের ও পরিবারের দায়িত্ব নিলাম আর ও খুনের অভিযোগ নিজের কাঁধে চাপিয়ে নিল। আর বিজয়দা কেন সবকিছু মেনে নিল? সম্ভবত ও ভেবেছিল এরা এতটাই শক্তিশালী যে আইনের রাস্তায় এদের শাস্তি দেওয়া অসম্ভব।
THE END