Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#58
রমা প্রচণ্ড ক্লান্ত ছিল। মুহূর্তের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু সারারাত আমার ঘুম এলনা। নতুন এক ভোরের অপেক্ষায় আমিও ছিলাম। কাল সকালে আলোড়ন পড়ে যাবে। চোখ দুটো বুজে নিলাম, আজ আর চোখের সামনে মেসমশাইএর সেই জ্বলন্ত শরীরটা নয়, সদা হাস্যময় মুখটা ভেসে এলো। আমি অপেক্ষায় ছিলাম কখন কাকগুলো ডেকে উঠবে, আমিও চোখে সানগ্লাস পড়ে তারিয়ে তারিয়ে এই সমাজ ব্যাবস্থার নগ্ন রূপটা দেখতে পাবো। অবশেষে গভীর কালো রাতের অবসান ঘটিয়ে এলো ভোরের সূর্যোদয়, নতুন এক দিগন্ত। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ভোর সাড়ে ৬ টা। কূপমণ্ডূকের মত আর এক ঘরের এক কোনে বসে থাকতে মন গেলনা। ত্রাউজারটা পড়ে বেরিয়ে পড়লাম। পাড়ার চা দোকানটায় আজ যে ঠিক কত বছর পর যাচ্ছি তার কোন ঠিক নেই। দোকানের সামনে বিশাল জটলা। প্রত্যেকেই একেকটা মাতব্বর। ‘আরে আপনি চুপ করুন মশাই, ক্যান্সার আমার এক দুঃসম্পর্কের ভাইএর ও হয়েছিল, কই সেতো হাতে পিস্তল নিয়ে মানুষ খুন করতে বেরিয়ে পড়েনি’ ‘আরে না না মশাই, সবই ওই গ্লোবালাইজেশন, দেখছেন না আমরা কেমন প্রতি মুহূর্তে আমেরিকাকে নকল করে চলেছি। আমাদের সংস্কৃতিটা ঠিক করে বুঝলে ওইসব সিরিয়াল কিলিং ফিলিং হতনা’ বেশ মজা লাগছিল, সামাজিক ব্যাবস্থার মধ্যে যে এতো বড় একটা ক্যান্সার লুকিয়ে আছে তা জানতাম কিন্তু সেটা যে এভাবে প্রকাশ্যে চলে আসবে তা সত্যিই বুঝতে পারিনি। ‘আরে বিপ্লবদা যে শুনেছেন, কোন এক ট্যাক্সি চালক হতাশগ্রস্ত হয়ে গিয়ে একের পর এক খুন করে কাল গভীর রাতে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে’ কিছুটা ন্যাকাচোঁদার মত মুখটা করে আমিও বললাম ‘সে কি?’ সঙ্গে সঙ্গে এক দিকগজের উত্তর এলো ‘আরে আপনিও তো ব্যাঙ্কেই চাকরি করেন। ভাবুন তো, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কেউ আপনাকে লোণ চাইল আর আপনি দিলেন না। ব্যাস, সিরিয়াল মার্ডার করতে হবে’ আমি শুধুই মুচকি মুচকি হাসলাম। এক রসিক মানুষ বলে উঠলেন ‘কাল বাংলা বন্ধ, একদিক থেকে ভালো হয়েছে, একটা ছুটি তো পাওয়া গেলো’
চায়ের পয়সা দিয়ে আমিও হাঁটা লাগালাম। আর কয়েকটা দিন পড়েই ২৫ শে মাঘ আসবে। বাবাই এর মৃত্যুদিন। এই ২৫ শে মাঘ আমার জীবনে বহুবার এসেছে আর প্রতিবারই কিছু না কিছু ঘটেছে। সেটা ছিল এমনই এক ২৫ শে মাঘ, আজ থেকে ঠিক ৩ বছর আগে। আমি অফিসে বসে মন দিয়ে নিজের কাজ করে চলেছি, হথাত বাইরে প্রচণ্ড চেঁচামিচির আওয়াজ। দেখছি একজন লোককে আমাদের ৩ জন সিকিউরিটি গার্ড মিলে প্রচণ্ড জোরে আঁটকে রেখেছে। বাকি স্টাফদের মত আমিও বাইরে বেরলাম। ‘ওই শালা বিপ্লব চিটিংবাজ মাল একটা, ওকে এক্ষুনি অফিস থেকে বার করে দিন’। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৩ জনকে ঠেলে ফেলে মনিরুল আমার দিকে দৌড়ে এলো। ‘আপনি কি ভাবেন আমি কুছি জানিনা, বিপ্লবদা আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে, কি করব আমি? কোথায় যাবো? বউ বাচ্চার কি হবে?’ কথা শেষ হতে না হতেই আমার গালে সপাটে তিনটে চড়। মাথাটা নীচু করে ছিলাম, ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। সিকিউরিটি ওকে ধাক্কা মারতে মারতে অফিসের বাইরে নিয়ে গেলো। অন্য একজন স্টাফ এসে আমায় একটু ব্যঙ্গ করে বলে উঠল ‘কত টাকা ঝাড়লেন বিপ্লবদা?’ লজ্জায় আর এক মুহূর্ত ওখানে দাঁড়াতে পারছিলাম না। দৌড়ে গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এক পা এক পা করে হাঁটছি আর পেছন থেকে ভেসে আসছে কিছু মানুষের বিদ্রুপ ‘ওই শালা বিপ্লব চোর’। কোথায় যাবো? বাড়িতে সেই অসুস্থ বউ, বাবা মা কবেই পর করে দিয়েছে। পকেট হাতড়ে দেখলাম ৫০০ টাকার একটা নোট পড়ে রয়েছে। ঢুকে পড়লাম রাস্তার পাশের সস্তার বারটায়।
একটার পর একটা পেগ শেষ করে চলেছি আর বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছেন মেসমশাই, মেসমশাইএর জ্বলন্ত দেহটা। এতদিন ভাবতাম মনিরুলরা বোধ হয় জানত না মেসমশাই কেন আত্মহত্যা করেছেন? মনিরুলের চড়টার চেয়েও বেশী লজ্জার এই ব্যাপারটা। কতবার ওদের বাড়িতে গেছি, মাসীমা চায়ের কাপ হাতে এগিয়ে এসেছেন, কাকুতি মিনতি করেছেন ‘দুটো মেয়েরই তো বিয়েটা ভেঙে গেলো, দেখনা তুমি যদি কোনরকমে মেয়েদুটোর কোন ব্যাবস্থা করতে পারো’। ওরা কেন আমায় কোন শাস্তি দিলনা। শুধু এই ভেবে ‘বিপ্লব যা করেছে তা নিজের ছেলের প্রান বাঁচানোর জন্য’। পাপবোধ চরম পাপবোধ, সারা শরীরটা পাপের বিষাক্ত দহনে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল। ‘রমার জন্য আমার সুস্থ স্বাভাবিক থাকা অত্যন্ত জরুরি’ এই একটাই চিন্তা এতদিন আমার মাথায় ছিল। কিন্তু মনিরুলদের পরিবারটা? এতোগুলো মানুষ শুধুই আমার জন্য রাস্তায় বসে পড়ল। বার থেকে অনেকক্ষন বেরিয়ে পড়েছিলাম। রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছিলাম। কিছুটা দূরে রাস্তার মোড়ে একটা কার্ল মার্ক্সের মূর্তি। কলেজ জীবনে মাথাটা বিগড়ে গেছিল, যখন এই লোকটার লেখা একখানা বই আমার হাতে এসে পড়ল। ‘শালা, দুনিয়া বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। অলীক একটা স্বপ্ন’, যদি এই লোকটা না থাকতো আমিও হয়ত বাকি দশজনের মতই হতাম। যেদিন প্রথম জেনেছিলাম মার্ক্সের বাচ্চা ছেলেটাও বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে অদ্ভুত লেগেছিল কিন্তু উপলব্ধি করতে পারিনি। সেদিন ওখানে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করছিলাম। আমি ও কার্ল দুজনেই এক কিন্তু ওকে সবাই সম্মান করে আর আমায় জোচ্চোর বলে।
সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল ওই পাথরের মূর্তিটার ওপর। পায়ের সামনেই একটা আধলা ইট পড়ে ছিল। ঠিক মার্ক্সের মাথা লক্ষ্য করে ছুঁড়ে দিলাম। লাগলো না। খেয়াল করিনি কিছুটা দুরেই একটা পুলিশের ভ্যান দাঁড়িয়ে ছিল। দৌড়ে দুখানা হাবিলদার আমার দিকে এসে কলার ধরে জিপের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করল। ‘শালা, মাতাল, কাকে পাথর মারছিস জানিস? ভাগ্যিস লাগেনি নয়ত এক্ষুনি রাজনৈতিক দাঙ্গা শুরু হয়ে যেত। চল শালা থানায়’ ওরা আমায় টানতে টানতে থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, আর আমার অবচেতন মনে বারবার একটাই প্রশ্ন আসছিল ‘ঢিলটা মার্ক্সের মাথায় কেন লাগলো না? তাহলে কি সত্যিই মার্ক্স চায় আমি হার না মানি, আমি লড়ে যাই। মার্ক্স তো বিপ্লবের দেবতা’।
‘স্যার, এই একটা মাতালকে ধরে এনেছি’, হাবিলদারটা প্রায় ধাক্কা মেরে আমায় ভেতরের ঘরটায় ঢুকিয়ে দিলো। সামনে বসে রাশভারী এক অফিসার। ‘ওহ, এই শহরের আনাচে কানাচে রেপিস্ত আছে, খুনী আছে, সমাজবিরোধী আছে আর তোমরা মাতাল ছাড়া আর কাউকেই পাওনা’ গলাটা শুনেই আমার বুকটা কেমন ধুকপুক করে উঠল, পুলিশের মার কখনো খাইনি। ‘কিরে তোরা কি ভদ্রভাবে সব স্বীকার করবি না আমাকে ভেতরের ঘরে নিয়ে যেতে হবে’ এতক্ষন খেয়াল করিনি, বিজয়দার ঠিক পাশে ৩ খানা ছেলে দাঁড়িয়ে প্রত্যেককেই ভদ্র বাড়ির ছেলে বলেই মনে হচ্ছে। তাদেরই মধ্যে একজন বলে উঠল ‘স্যার, তার আগেই আপনার ফোনটা বেজে উঠবে’। দেখলাম বিজয়দা, ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। সঙ্গে সঙ্গে কর্কশ স্বরে ফোনটাও বেজে উঠল। খ্যারখেরে গলায় বিজয়দা বলে উঠলেন ‘এই এদেরকে ভেতরের ঘরে নিয়ে যাও আর দেখো কোন আওয়াজ যেন না আসে’। সঙ্গে সঙ্গে একজন হাবিলদার ৩ জনকেই টানতে টানতে ভেতরের ঘরে নিয়ে চলে গেলো। আমি ওইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। ‘হ্যালো, ওহ হ্যাঁ স্যার বলুন! নাতো, না না আমি তো এরকম নামের কাউকে গ্রেফতার করিনি। ও বিজনেস ম্যানের ছেলে! কোন ব্যাপার নয়, মিসিং ডায়েরী করতে হবে? স্যার, ওই এরিয়াটা তো আমার নয়, আপনি পাশের থানায় খবর নিন’। ফোনটা রেখে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভীষণ বিশ্রী একটা হাঁসির সাথে বিজয়দা বললেন ‘একেই বলে চোরের ওপর বাটপাড়ি’। আমি কিছুই উত্তর দিলাম না।
‘আচ্ছা, এবার আপনার কেসটা বলুন তো? ওই এদিকে আসো। বল একে ধরে কেন আনলে?’ বিজয়দার উত্তরে আমি কিছুই বললাম না, ওই হাবিলদারটিই গড়গড় করে সব বলতে শুরু করে দিলো। ‘আর বলবেন না, শালা, মার্ক্সের মূর্তিতে ঢিল ছুঁড়েছে। মাতাল শালা’ সঙ্গে সঙ্গে রাশভারী গলায় বিজয়দার প্রশ্ন ধেয়ে এলো ‘কি ব্যাপার আপনি মার্ক্সেরে মূর্তিতে ঢিল মেরেছেন কেন? জানেন এর থেকে শহরের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। কি হোল উত্তর দিন’ মদের নেশাটা আমার তখনও কাটেনি। গড়গড় করে বলতে শুরু করলাম ‘এই শালা মার্ক্স ই আমায় লড়াই করতে সত্যের পথে চলতে শিখিয়েছিল। ওর ছেলের মত আমার ছেলেও বিনা চিকিৎসায় মারা গেলো, অথচ আমি জোচ্চোর আর ও দার্শনিক। তাই ভাবলাম ঢিল মেরে ওর মূর্তিটা ভেঙে ফেলি’ প্রচণ্ড জোরে একটা অট্টহাস্য। বিজয়দাকে ওইভাবে হাঁসতে দেখে হাবিলদারটাও ফিকফিক করে হেঁসে ফেলল। ‘আপনি তো মশাই ভেতরের আগুনটা এই বয়সেও পুষে রেখেছেন। আপনাকে খুব ভালো লাগলো। চলুন, আপনাকে আজ একটা নতুন রাস্তায় ঘুরিয়ে আনি’ ‘ওই দুটো বানচোঁদকে বার কর, ওদের আজ প্রসাদ খাওয়াবো। শালা, গরীবের মেয়েকে রেপ করেছে মাদারচোঁদগুলো’ বিজয়দার পেছন পেছন আমিও চলতে লাগলাম।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 03:22 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)