09-02-2020, 03:17 PM
আমাদের গাড়িটা ক্রমশ কলেজ স্ট্রিটের দিকে এগিয়ে চলেছে। বুকের মধ্যে একরাশ যন্ত্রণা যেমন রয়েছে এই ১০ বছর ধরে চেপে থাকা সমস্ত যন্ত্রণার একটা প্রতিশোধ নেওয়ার আনন্দও রয়েছে। ‘ভাই, আমার কিন্তু কয়েকটা শর্ত আছে। প্রথমত তুমি আরও ২-৩ জনকে জোগাড় কর। আর আন্যাল সেক্স ছাড়া অন্য কোনকিছু হবেনা। উফ জাস্ট ভাবতে পারছিনা। আপার ক্লাস কল গার্লকে আমরা সবাই মিলে পোঁদ মারব। ওর হাত পা দড়ি দিয়ে জানলার গরাদের সাথে বেঁধে রাখবো। সারা ঘর জুড়ে পানের পিকের দাগ। উফ জাস্ট ভাবতে পারছিনা’ ড্রাইভারটা কিছুটা নার্ভাস হয়েই উত্তর দিলো ‘দাদা, কোন প্রবলেম হবেনা তো? যদি...’ হয়ত ও ভাবতে পারেনি আমি এভাবে চেঁচিয়ে উথব। ‘মাদারচোঁদ ওই রেন্দিটার জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। ও মরে গেলেও আমার কোন কষ্ট নেই’ ও আর বেশী কথা বাড়াল না। আমাদের গাড়িটা মহানগরের বুক চিড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল। চোখ দুটো বুজে নিলাম। এই কলকাতাতেই আমি জন্মেছি, জীবনে প্রথম প্রেমে পড়েছি। কত হেঁটেছি এই রাস্তায়। দুচোখ মেলে দেখতে থাকলাম আমার স্বপ্ন সুন্দরীকে আর ভেসে এলো এক নিম্নবিত্তের চোখে দেখা কলকাতা শহর।
‘রমা, আর দুটো মাস সময় দিতে পারবে! তুমি তো জানোই আমার অঙ্কটা প্রচণ্ড স্ত্রং। খালি ইংলিশ আর জিকেটা একটু ঘষে মেজে নিতে হবে’ ‘না, বিপ্লব তুমি সত্যি আমায় ভালোবাসো না। আমায় ভালবাসলে এভাবে শুধু নিজের কথাটাই ভাবতে পারতে না। তুমি জানো, আজ এক ডাক্তারের সম্বন্ধ এসেছিল। তুমি কি বোঝ কত কষ্টে আমি ওই সম্বন্ধটা আঁটকে দিয়েছি। আমার বাবা মা দাদারাও তো চায় যে আমি তাড়াতাড়ি সেটেল হয়ে যাই’ ‘রমা, আমার বাবা আমায় প্রচুর কষ্ট করে পড়িয়েছে। তুমি তো জানো আমাদের ওই পানের দোকানটায় সেরম কোন আয় নেই। আমি যদি একটা গরমেনট জব পেয়ে যাই, তাহলে পুরো সংসারটাই দাঁড়িয়ে যাবে’ ‘তুমি কি করে এই কথাগুলো বলছ বিপ্লব। একবারও বুঝতে পারছ না আমার ওপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আর আমি তো তোমায় সারাজীবন প্রাইভেটে জব করে যেতে বলছি না। আগে আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর তুমি চেষ্টা করতে থাকো’
‘তুমি কি বিপ্লব, এখন আমরা সংসারী। তুমি জানো, একটা ছেলের বিয়ের পর কত দায় দায়িত্ব হয়। তুমি বলছ সরকারী চাকরির চেষ্টা করবে। একবারও তোমার হুঁশ আছে বিপ্লব, ৮০০০ টাকায় সংসারটা কিকরে চলবে?’ ‘দেখো রমা, আজকাল তো মেয়েরাও চাকরি করে। তুমিও যদি প্রাইভেটে একটা চাকরি করতে তাহলে আমিও পড়াশুনা করে একটা গরমেনট জবের জন্য চেষ্টা করতে পারি’ ‘তুমি কি বলছ বিপ্লব! জানো যদি বাবা সত্যি জানতে পারে টাকা রোজগারের জন্য আমি ওই প্রাইভেট এর নোংরা পরিবেশে গেছি, তাহলে সত্যিই হয়ত তোমাকে কখনো জামাই বলে মেনে নেবেনা’ ‘রমা কেন প্রতিটা কথায় তুমি তোমার বাবা, তোমার বাড়ি এগুলো টেনে নিয়ে আসো। তোমার বাবা মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছে আমি নই। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি রমা। টিউশন করে কলেজের খরচা তুলেছি। তোমার দাদা তো আমার সাথে পড়ত! ও জীবনে করেছে টা কি? বড়লোকের জানোয়ার ছেলে একটা। খালি ডাইলগবাজী আর দেখনদারী’ ‘বাহ বাহ চমৎকার। এই তো কলেজে শিখেছ। তোমাদের গোটা পৃথিবী সেই ৯০ এর দশকেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কেউ তোমাদের আর ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেনা। সেই গরীব, বড়লোক বিত্তের কচকচানি। তোমরা কবে বুঝবে বিপ্লব, যুগটা পাল্টাচ্ছে। এখন আর ওই থিওরি মানুষ খাচ্ছেনা। তোমার ক্যারিয়ার তোমার ওই বস্তাপচা তত্বই নষ্ট করেছে আমি নই’
‘বিপ্লব, তুমি কি মানুষ না পশু! কি হবে রঞ্জনদার কথাটা মেনে নিলে। ও তো বলেছে যে ওই কাজটায় ওর প্রায় ১৫ লাখের প্রফিট তার থেকে ১০ লাখ আমাদের ধার হিসেবে দিয়ে দেবে। কে আগে? আমাদের ছেলে না তোমার ওই বস্তাপচা আইডিওলজি?’ ‘রমা, বাবাইকে আমিও ভালোবাসি, নিজের প্রানের চেয়ে বেশী ভালোবাসি। কিন্তু ওকে বাঁচাতে অন্যকে আমি পথে বসাতে পারবো না। কোনমতেই পারবো না। আদর্শ বলে একটা জিনিষ আজও আমার মধ্যে রয়েছে, সে যতই আমি বড়লোকের মেয়ের চাকর হয়ে যাই না কেন!’ ‘চাকর! বাহ ভালো বলেছ তুমি। এই তোমার ভালোবাসা। বিপ্লব তুমি ভালোবাসার মধ্যেও রাজনীতির রং খুঁজে বেড়াও। নিজের ছেলেকে বাঁচানোর চেয়ে একটা গরীব মানুষকে বাঁচানো তোমার কাছে বেশী দামী হয়ে গেলো। কি পাবে, একটু নাম, লোকের প্রশংসা। আমি কিচ্ছু চাইনা আমি শুধু বাবাইকে দেখতে চাই’ ‘দেখো রমা, আমি তো বাবাইএর বদলে অন্যের ভালো করছিনা, আমি শুধু বাবাইএর ভালোর জন্য অন্যের ক্ষতি করতে চাইনা’ ‘তুমি মানুষ নয়, তুমি জানোয়ার। কেন আমায় ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়েছিলে। বাবা, ঠিকই বলত ছেঁড়া কাঁথার ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালিয়ে যায়। তুমি আমায় ভালোবাসো না বিপ্লব। তুমি বাবাইকেও ভালোবাসো না। তুমি শুধু নিজেকে ভালোবাসো। তুমি শুধু অন্যের মুখ থেকে নিজের ব্যাপারে ভালো ভালো কথা শুনতে চাও’ ‘আর এভাবে একটা মানুষকে শেষ করে দিওনা রমা। আমি জীবনে চুরিও করিনি, ডাকাতিও করিনি। তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তোমরা বড়লোক, তোমাদের বাড়িতে মানবে না এটা জেনেই তো আমরা ভালবেসেছিলাম। রমা, তোমায় বলিনি এতদিন। আমি কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকের মধ্যেই জানতে পেরে যাবো কবে যেতে হবে’ ‘বাহ, চমৎকার। আবার সেই চে গুএভারা হওয়ার ইচ্ছে। তোমাদের চে কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে। তুমি কিডনিটা বিক্রি করলে আমাদের হবে কি! একবারও ভেবেছ বিপ্লব। বিপ্লব বেরিয়ে আসো তোমার ওই বস্তাপচা তত্ব থেকে। এটা বিপননের দুনিয়া। তোমরা পিছিয়ে পড়েছ বিপ্লব’
‘রমা একটাবার মুখ ফুটে কথা বল। রমা রোজ অফিস থেকে এসে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি। রোজ ভাবি আজ তুমি ঠিক কথা বলবে। রমা কেন তুমি কথা বলনা। ডাক্তার আমাকে প্রচুর বকে, বারবার করে বলে একবারের জন্যও আমি চেষ্টা করছিনা। রমা বোঝ এইভাবে তুমি একটা মারাত্মক ব্যাধির দিকে চলে যাচ্ছ। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে রমা? আমি কি করে বাঁচব? তুমি ছাড়া তো আমার আর কিছুই নেই, কেউ নেই। সবাই দূরে সরিয়ে দিয়েছে। রমা, একটু জিভটা নাড়াও, চেষ্টা কর তুমি ঠিক পারবে’ ‘বিপ্লব তুমি খুনি। তুমি বাবাইকে মেরে ফেলেছ। তোমায় কক্ষনো ক্ষমা করব না বিপ্লব। তুমি সারা জীবন একটা বস্তাপচা তত্ব আঁকড়ে পড়ে থাকলে। একবারও আমাদের কথা ভাবলে না। আমায় একটু বিষ দাও বিপ্লব’ ‘আমায় তুমি এভাবেই শেষ করে দাও রমা, এভাবেই প্রতি মুহূর্তে নিজের চোখে ছোট ছোট হতে হতে আমি মরতে চাই। আমি আমার বাবা, মাকে দেখিনি। তোমার চোখেও কখনো নায়ক হয়ে উঠতে পারিনি। আমি তোমার থেকে এগুলোই শুনতে চাই রমা। কিন্তু রমা, তুমি বল, যা তোমার মনে আসে তাই বল। আজ ৬ মাস পর তুমি কিছু বললে। রমা আর তুমি নীরব হবেনা কোনোদিন। প্রতি মুহূর্তে আমায় দায়ী করে যাও...’
‘দাদা, কলেজ স্ট্রীট এসে গেছে’ শুনে যেন মনে হোল এক পৃথিবী থেকে অন্য এক পৃথিবীতে এসে নামলাম। গলা দিয়ে কোন কথা বেরোচ্ছে না, ড্রাইভারটা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নোনতা বিস্বাদ জলে আমার পুরো মুখ ভিজে যাচ্ছে। শুধু বাঁ হাতটা উঁচু করে অঙ্গভঙ্গি করে বোঝালাম ‘একটু জল, আমি একটু স্বাভাবিক হতে চাই’ ও নীচে নেমে দোকান থেকে একটু জল জোগাড় করতে গেলো। আমার শরীর আর পারছেনা। কোনরকমে মাথাটা সামনের ডেকটার ওপর রেখে দিলাম। চোখদুটো বন্ধ করে পরে থাকলাম। ‘একটা মানুষ জীবন্ত জ্বলে যাচ্ছে। দাউদাউ করে জ্বলছে। আমি জানলার রেলিং ধরে দেখছি। ভয়ঙ্কর একটা আর্তনাদ। ‘বিপ্লব তোমার ছেলে বাঁচবে না, বিপ্লব আমার অভিশাপ রইল তোমার ছেলে কষ্ট পেতে পেতে মরবে। এই টাকাটা আমার ৩ মেয়ের বিয়ের জন্য রেখেছিলাম। ওদের বিয়ে ভেঙে গেছে। বিপ্লব, তুমিও সেই নেতাদেরই মত যারা প্রতিদিন আদর্শকে ;., করে চলেছে। বিপ্লব তুমি যদি সাচ্চা হতে এতো কষ্টেও তুমি নিজেকে বিক্রি করতে না। বিপ্লব তোমার ছেলে মরবে এর চেয়েও বেশী কষ্ট পেয়ে মরবে। তুমি বাবাইকে বাঁচাতে পারবে না বিপ্লব। মিলিয়ে নিয়ো আমার কথাটা’
‘মেসোমশাই আমার কথাটা শুনুন’ প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উঠলাম আমি। দেখি ড্রাইভার ভাই হন্তদন্ত করে হাতে একটা জলের মগ নিয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। ‘কি হয়েছে দাদা? শরীর খারাপ লাগছে? নিন চোখে মুখে একটু জল দিন’
ওর দিকে একবার তাকালাম। না ওকে আমি বোঝাতে পারলাম না কেন প্রতি রাতে হথাত আমার ঘুম ভেঙে যায়। কেন আজ ১০ বছর ধরে স্বাভাবিক একফোঁটা ঘুম আমার জীবন থেকে চলে গেছে।
‘রমা, আর দুটো মাস সময় দিতে পারবে! তুমি তো জানোই আমার অঙ্কটা প্রচণ্ড স্ত্রং। খালি ইংলিশ আর জিকেটা একটু ঘষে মেজে নিতে হবে’ ‘না, বিপ্লব তুমি সত্যি আমায় ভালোবাসো না। আমায় ভালবাসলে এভাবে শুধু নিজের কথাটাই ভাবতে পারতে না। তুমি জানো, আজ এক ডাক্তারের সম্বন্ধ এসেছিল। তুমি কি বোঝ কত কষ্টে আমি ওই সম্বন্ধটা আঁটকে দিয়েছি। আমার বাবা মা দাদারাও তো চায় যে আমি তাড়াতাড়ি সেটেল হয়ে যাই’ ‘রমা, আমার বাবা আমায় প্রচুর কষ্ট করে পড়িয়েছে। তুমি তো জানো আমাদের ওই পানের দোকানটায় সেরম কোন আয় নেই। আমি যদি একটা গরমেনট জব পেয়ে যাই, তাহলে পুরো সংসারটাই দাঁড়িয়ে যাবে’ ‘তুমি কি করে এই কথাগুলো বলছ বিপ্লব। একবারও বুঝতে পারছ না আমার ওপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আর আমি তো তোমায় সারাজীবন প্রাইভেটে জব করে যেতে বলছি না। আগে আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর তুমি চেষ্টা করতে থাকো’
‘তুমি কি বিপ্লব, এখন আমরা সংসারী। তুমি জানো, একটা ছেলের বিয়ের পর কত দায় দায়িত্ব হয়। তুমি বলছ সরকারী চাকরির চেষ্টা করবে। একবারও তোমার হুঁশ আছে বিপ্লব, ৮০০০ টাকায় সংসারটা কিকরে চলবে?’ ‘দেখো রমা, আজকাল তো মেয়েরাও চাকরি করে। তুমিও যদি প্রাইভেটে একটা চাকরি করতে তাহলে আমিও পড়াশুনা করে একটা গরমেনট জবের জন্য চেষ্টা করতে পারি’ ‘তুমি কি বলছ বিপ্লব! জানো যদি বাবা সত্যি জানতে পারে টাকা রোজগারের জন্য আমি ওই প্রাইভেট এর নোংরা পরিবেশে গেছি, তাহলে সত্যিই হয়ত তোমাকে কখনো জামাই বলে মেনে নেবেনা’ ‘রমা কেন প্রতিটা কথায় তুমি তোমার বাবা, তোমার বাড়ি এগুলো টেনে নিয়ে আসো। তোমার বাবা মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছে আমি নই। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি রমা। টিউশন করে কলেজের খরচা তুলেছি। তোমার দাদা তো আমার সাথে পড়ত! ও জীবনে করেছে টা কি? বড়লোকের জানোয়ার ছেলে একটা। খালি ডাইলগবাজী আর দেখনদারী’ ‘বাহ বাহ চমৎকার। এই তো কলেজে শিখেছ। তোমাদের গোটা পৃথিবী সেই ৯০ এর দশকেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কেউ তোমাদের আর ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেনা। সেই গরীব, বড়লোক বিত্তের কচকচানি। তোমরা কবে বুঝবে বিপ্লব, যুগটা পাল্টাচ্ছে। এখন আর ওই থিওরি মানুষ খাচ্ছেনা। তোমার ক্যারিয়ার তোমার ওই বস্তাপচা তত্বই নষ্ট করেছে আমি নই’
‘বিপ্লব, তুমি কি মানুষ না পশু! কি হবে রঞ্জনদার কথাটা মেনে নিলে। ও তো বলেছে যে ওই কাজটায় ওর প্রায় ১৫ লাখের প্রফিট তার থেকে ১০ লাখ আমাদের ধার হিসেবে দিয়ে দেবে। কে আগে? আমাদের ছেলে না তোমার ওই বস্তাপচা আইডিওলজি?’ ‘রমা, বাবাইকে আমিও ভালোবাসি, নিজের প্রানের চেয়ে বেশী ভালোবাসি। কিন্তু ওকে বাঁচাতে অন্যকে আমি পথে বসাতে পারবো না। কোনমতেই পারবো না। আদর্শ বলে একটা জিনিষ আজও আমার মধ্যে রয়েছে, সে যতই আমি বড়লোকের মেয়ের চাকর হয়ে যাই না কেন!’ ‘চাকর! বাহ ভালো বলেছ তুমি। এই তোমার ভালোবাসা। বিপ্লব তুমি ভালোবাসার মধ্যেও রাজনীতির রং খুঁজে বেড়াও। নিজের ছেলেকে বাঁচানোর চেয়ে একটা গরীব মানুষকে বাঁচানো তোমার কাছে বেশী দামী হয়ে গেলো। কি পাবে, একটু নাম, লোকের প্রশংসা। আমি কিচ্ছু চাইনা আমি শুধু বাবাইকে দেখতে চাই’ ‘দেখো রমা, আমি তো বাবাইএর বদলে অন্যের ভালো করছিনা, আমি শুধু বাবাইএর ভালোর জন্য অন্যের ক্ষতি করতে চাইনা’ ‘তুমি মানুষ নয়, তুমি জানোয়ার। কেন আমায় ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়েছিলে। বাবা, ঠিকই বলত ছেঁড়া কাঁথার ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালিয়ে যায়। তুমি আমায় ভালোবাসো না বিপ্লব। তুমি বাবাইকেও ভালোবাসো না। তুমি শুধু নিজেকে ভালোবাসো। তুমি শুধু অন্যের মুখ থেকে নিজের ব্যাপারে ভালো ভালো কথা শুনতে চাও’ ‘আর এভাবে একটা মানুষকে শেষ করে দিওনা রমা। আমি জীবনে চুরিও করিনি, ডাকাতিও করিনি। তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তোমরা বড়লোক, তোমাদের বাড়িতে মানবে না এটা জেনেই তো আমরা ভালবেসেছিলাম। রমা, তোমায় বলিনি এতদিন। আমি কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজকের মধ্যেই জানতে পেরে যাবো কবে যেতে হবে’ ‘বাহ, চমৎকার। আবার সেই চে গুএভারা হওয়ার ইচ্ছে। তোমাদের চে কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে। তুমি কিডনিটা বিক্রি করলে আমাদের হবে কি! একবারও ভেবেছ বিপ্লব। বিপ্লব বেরিয়ে আসো তোমার ওই বস্তাপচা তত্ব থেকে। এটা বিপননের দুনিয়া। তোমরা পিছিয়ে পড়েছ বিপ্লব’
‘রমা একটাবার মুখ ফুটে কথা বল। রমা রোজ অফিস থেকে এসে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি। রোজ ভাবি আজ তুমি ঠিক কথা বলবে। রমা কেন তুমি কথা বলনা। ডাক্তার আমাকে প্রচুর বকে, বারবার করে বলে একবারের জন্যও আমি চেষ্টা করছিনা। রমা বোঝ এইভাবে তুমি একটা মারাত্মক ব্যাধির দিকে চলে যাচ্ছ। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে রমা? আমি কি করে বাঁচব? তুমি ছাড়া তো আমার আর কিছুই নেই, কেউ নেই। সবাই দূরে সরিয়ে দিয়েছে। রমা, একটু জিভটা নাড়াও, চেষ্টা কর তুমি ঠিক পারবে’ ‘বিপ্লব তুমি খুনি। তুমি বাবাইকে মেরে ফেলেছ। তোমায় কক্ষনো ক্ষমা করব না বিপ্লব। তুমি সারা জীবন একটা বস্তাপচা তত্ব আঁকড়ে পড়ে থাকলে। একবারও আমাদের কথা ভাবলে না। আমায় একটু বিষ দাও বিপ্লব’ ‘আমায় তুমি এভাবেই শেষ করে দাও রমা, এভাবেই প্রতি মুহূর্তে নিজের চোখে ছোট ছোট হতে হতে আমি মরতে চাই। আমি আমার বাবা, মাকে দেখিনি। তোমার চোখেও কখনো নায়ক হয়ে উঠতে পারিনি। আমি তোমার থেকে এগুলোই শুনতে চাই রমা। কিন্তু রমা, তুমি বল, যা তোমার মনে আসে তাই বল। আজ ৬ মাস পর তুমি কিছু বললে। রমা আর তুমি নীরব হবেনা কোনোদিন। প্রতি মুহূর্তে আমায় দায়ী করে যাও...’
‘দাদা, কলেজ স্ট্রীট এসে গেছে’ শুনে যেন মনে হোল এক পৃথিবী থেকে অন্য এক পৃথিবীতে এসে নামলাম। গলা দিয়ে কোন কথা বেরোচ্ছে না, ড্রাইভারটা ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নোনতা বিস্বাদ জলে আমার পুরো মুখ ভিজে যাচ্ছে। শুধু বাঁ হাতটা উঁচু করে অঙ্গভঙ্গি করে বোঝালাম ‘একটু জল, আমি একটু স্বাভাবিক হতে চাই’ ও নীচে নেমে দোকান থেকে একটু জল জোগাড় করতে গেলো। আমার শরীর আর পারছেনা। কোনরকমে মাথাটা সামনের ডেকটার ওপর রেখে দিলাম। চোখদুটো বন্ধ করে পরে থাকলাম। ‘একটা মানুষ জীবন্ত জ্বলে যাচ্ছে। দাউদাউ করে জ্বলছে। আমি জানলার রেলিং ধরে দেখছি। ভয়ঙ্কর একটা আর্তনাদ। ‘বিপ্লব তোমার ছেলে বাঁচবে না, বিপ্লব আমার অভিশাপ রইল তোমার ছেলে কষ্ট পেতে পেতে মরবে। এই টাকাটা আমার ৩ মেয়ের বিয়ের জন্য রেখেছিলাম। ওদের বিয়ে ভেঙে গেছে। বিপ্লব, তুমিও সেই নেতাদেরই মত যারা প্রতিদিন আদর্শকে ;., করে চলেছে। বিপ্লব তুমি যদি সাচ্চা হতে এতো কষ্টেও তুমি নিজেকে বিক্রি করতে না। বিপ্লব তোমার ছেলে মরবে এর চেয়েও বেশী কষ্ট পেয়ে মরবে। তুমি বাবাইকে বাঁচাতে পারবে না বিপ্লব। মিলিয়ে নিয়ো আমার কথাটা’
‘মেসোমশাই আমার কথাটা শুনুন’ প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উঠলাম আমি। দেখি ড্রাইভার ভাই হন্তদন্ত করে হাতে একটা জলের মগ নিয়ে আমার দিকে ছুটে আসছে। ‘কি হয়েছে দাদা? শরীর খারাপ লাগছে? নিন চোখে মুখে একটু জল দিন’
ওর দিকে একবার তাকালাম। না ওকে আমি বোঝাতে পারলাম না কেন প্রতি রাতে হথাত আমার ঘুম ভেঙে যায়। কেন আজ ১০ বছর ধরে স্বাভাবিক একফোঁটা ঘুম আমার জীবন থেকে চলে গেছে।