Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete
#50
এইসব আতলামি করতে করতেই মগজটা হথাত অন্য অভিমুখে ঘুরে গেলো। অফিসের সামনে বিশাল ট্র্যাফিক জ্যাম হয়েছে। সার দিয়ে একের পর এক গাড়ি দাঁড়িয়ে। তারই মধ্যে একটা সাদা রঙের আম্বাসাডার গাড়ি। এই গাড়িটা আমি প্রচণ্ড ভালো করে চিনি। এটা শর্মাজীর। কাঁচটা সামান্যই নীচের দিকে নামানো। তাও বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে গাড়ির মধ্যে সাজুগুজু করা কোন এক সুন্দরী রমনী রয়েছে। কে সে? এইকি জুলি? একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম ওইদিকে। গাড়ির কাঁচটা ধীরে ধীরে নীচে নামছে। আমিও জানি আজ এই মুহূর্তেই হয়ত আমি এতো বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকা রহস্যের পর্দা ফাঁস করতে পারবো। গাড়ির কাঁচটা একটু একটু করে নীচে নামছে আর আমারও মনের সেই ইচ্ছেটা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। জুলি কে? হথাত গাড়িটা বেশ কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলো। আমি কিছু বোঝার আগেই সিগন্যালটা গ্রিন হয়ে গেলো ও গাড়িটা অনেক আগে এগিয়ে গেলো। জানি এই সুযোগ হয়ত আর জীবনে দ্বিতীয়বার পাবনা। রাস্তা বরাবর দৌড়াতে শুরু করলাম, সামনেই একটা নো রিফিউসাল ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে। অন্য কেউ চেপে বসার আগেই আমায় ওটায় চেপে বসতে হবে।
ভাগ্য আমারই পক্ষে ছিল। খুব সহজেই ট্যাক্সিটা পেয়ে গেলাম। ‘দাদা, ওই সামনের গাড়িটাকে ফলো করুন। টাকা নিয়ে ভাববেন না’। শালা টাকার লোভ কেই বা ছাড়তে পারে। আমার ট্যাক্সিটাও প্রচণ্ড বেগে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল। শত চেষ্টা করেও আমি গাড়ির ভেতরে যে মহিলা আছে তার মুখটা দেখতে পাচ্ছিনা। আমাদের গাড়িটা প্রচণ্ড স্পীডে শর্মাজীর গাড়িটাকে ফলো করতে শুরু করল। প্রায় আধ ঘণ্টা আমরা পিছু নিয়ে চলেছি। আবার বাঁধ সাধল সেই ট্রাফিক সিগন্যাল। শালা, এইবার ভাগ্য বিশাল জোরে একটা লাথি মারল। ওদের গাড়িটা সিগন্যাল রেড হওয়ার বেশ কিছু আগেই পার হয়ে গেছিল। মনে হয়না ৫ মিনিটের আগে আমরা এখান থেকে বেরোতে পারবো। সুতরাং জুলি কে সেই রহস্য আমার পক্ষে আর সমাধান করা সম্ভব নয়। রমাকি জুলি? না রমা জুলি নয়? রমার ডায়েরী বা রমার চিঠি এই দুটো থেকেই আমি বুঝেছি, রমা জুলি নয়, কিন্তু জুলি রমার পরিচিত কেউ। কিন্তু কে সে? এরকম নয়ত রমা ছলনা করছে। রমা আমায় ঠকাচ্ছে! নিজেরই মনে একবার বলে উঠলাম ‘না, রমা আমার সাথে এরকম করতে পারেনা’। জানি ওদের আর ধরতে পারবো না, কিন্তু রমাই কি জুলি? এই রহস্যটা সমাধান এখনো সম্ভব। যদি শর্মাজীর গাড়িতে রমা থেকে থাকে তাহলে ল্যান্ড লাইনে ফোন করলে ও কিছুতেই রিসিভ করতে পারবেনা।
যা ভাবা তাই কাজ, সঙ্গে সঙ্গে আমার ল্যান্ড লাইন নাম্বারটায় ফোন লাগিয়ে দিলাম। মনে সন্দেহ রয়েছে, দ্বিধা দ্বন্দ্ব রয়েছে কিন্তু হৃদয় বারবার করে বলে চলেছে ‘না রমা, বাড়িতেই আছে’। ক্রিং ক্রিং করে রিং হয়ে চলেছে। প্রতিটা রিং এর প্রতিধ্বনি আমার বুকের মধ্যে হচ্ছে। আমার হৃদয় বারবার করে বলে চলেছে ‘রমা তুমি ঘরের যে প্রান্তেই থাকো আগে ফোনটা রিসিভ কর’ অন্তত ২০ বার ক্রিং ক্রিং করে শব্দ হোল, কিন্তু কেউ ফোনটা রিসিভ করলনা। রমার দিদি মিতা কোথায়? ওরা দুই বোন মিলে আবার কোথাও বেরয়নি তো? এই শোকের পরিবেশে বাইরে ঘুরতে যাওয়াটা সত্যিই অস্বাভাবিক। আমি আবার একবার কল করলাম। কিন্তু বারবার রিং হওয়ার পরও কেউ ফোনটা রিসিভ করলনা। নিজেরই অজান্তে চেঁচিয়ে উঠলাম ‘রমা তুমি কোথায়?’ এদিকে সিগন্যালটা আবার গ্রীন হয়ে গেছে। ড্রাইভার গাড়িটা একটু বাঁদিক করে পার্ক করে আমায় জিজ্ঞেস করল ‘স্যার, এবার কোথায় যাবো’। হতাশায়, ভয়ে আমার দুই চোখ জলে ভোরে উঠেছে। ‘ঈশ্বর যেন আমার সন্দেহ সত্যি না হয়। যেন রমা বাড়িতেই থাকে’ মনে মনে বলে উঠলাম। দেখি ড্রাইভারটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ‘কিছু প্রবলেম হয়েছে স্যার?’ ওর কথায় আমার হুঁশ ফিরল। কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলাম ‘ভাই, আমি স্যার নই। তোমারই মত খেটে খাওয়া এক মানুষ। কলকাতার এই রাস্তাগুলো তুমি আমার চেয়ে অনেক ভালো বোঝ। ওই গাড়িটার মধ্যে আমার জীবন রয়েছে। ওই গাড়িটা খুঁজে না পেলে আমি বাঁচব না’ দেখলাম ড্রাইভারটা বেশ কিছুক্ষন আবেগপ্রবণ হয়ে রইল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল ‘চিন্তা করবেন না দাদা, এই রাস্তাটা সোজা বাইপাসের দিকে গেছে। আমি ওইদিকেই যাচ্ছি’ গাড়িটা আবার চলতে শুরু করল। শ্রান্ত শরীরে আমিও হেলান দিয়ে পড়ে থাকলাম।
সত্যিই কি রমার ওই চিঠি বা রমার ডায়েরী এসব শুধুই আমার চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য! বারবার করে নিজের মনে প্রশ্ন করতে লাগলাম। আমার হৃদয়ে রমার অংশই সর্বাধিক। ‘না রমা জুলি নয়’ এই কথাটাই তাই বারবার করে ভেসে আসতে লাগলো। আমার তো আর কলার আইডি নেই, তাই ল্যান্ড ফোনে কে ফোন করেছে তা ওর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। শেষ উপায় রমার মোবাইলে ফোন করা। যদি সত্যিই ও শর্মাজীর সাথে থেকে থাকে তাহলে আশেপাশের ট্রাফিকের আওয়াজেই আমি তা বুঝে যাবো। কল লাগালাম রমার মোবাইলে। সুইচড অফ। চোখদুটো হতাশায় বন্ধ করে নিলাম। মনিদা খুন হয়েছিল শুক্রবার। শুক্রবার অফিসে চরম ব্যস্ততা ছিল। ফিরতে একটু দেরী হবে এটা বলার জন্য ওকে ফোন করেছিলাম। একদম একি অবস্থা ছিল। ল্যান্ড ফোনে কেউ ফোন রিসিভ করেনি। রমার মোবাইলটা সুইচ অফ বলছিল। বাড়ি ফিরে দেখলাম বিছানার ওপর রমার ঘামে ভিজে প্যানটিটা পড়ে রয়েছে। সাধারনত সালোয়ার পরে বাইরে না বেরলে রমা প্যানটি ইউস করেনা। সঙ্গে সঙ্গে রমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ‘রমা, তুমিকি কোথাও গিয়েছিলে?’ কিছুটা চমকে উঠেছিল রমা। ও তারপর উত্তর দেয় ‘কই না তো’। আরও অনেক অনেক ঘটনা রয়েছে এবং তার সাথে যোগ হয়েছে রমার এই ফোন না ধরা। রমাকি সত্যিই আমায় ছলনা করে চলেছে। নিজের মনকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। আবার ল্যান্ড ফোনে একবার ফোন করলাম। সেই একি ক্রিং ক্রিং করে শব্দ হোল আর তারপর ফোনটা কেটে গেলো। হতাশা শুধুই হতাশা। চোখদুটো বন্ধ করে পড়ে রইলাম।
এইভাবে কতক্ষন গাড়িটা চলেছে খেয়াল নেই। বাইপাশের ঠাণ্ডা হাওয়া আর সারাদিনের ধকল; সবমিলিয়ে এতো ক্লান্তি এসেছিল কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই। ড্রাইভারের প্রচণ্ড জোরে একটা চিৎকারে ঘুমটা ভাঙল। ‘স্যার, ওই যে গাড়িটা’। চোখ খুলে দেখি, বাইপাশের একধারে গাড়িটা পার্ক করা আছে। আমাদের গাড়িটা ঠিক ওর পেছনে পার্ক করা হোল। আমরা দুজনেই দৌড়ে গাড়িটার কাছে গেলাম। আবার দুটো মৃতদেহ, শর্মাজী আর শর্মাজীর ড্রাইভার। আশপাশটা সম্পূর্ণ জনহীন। একজনকেও দেখা যাচ্ছেনা। খালি কয়েকটা গাড়ি প্রচণ্ড স্পীডে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বিপ্লব পোদ্দার- ব্যাংকার অফ দ্যা ইয়ার- complete - by samss400 - 09-02-2020, 03:15 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)